রবিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

কারা সিয়াম পালন করবে, কারা করবে না

কারা সিয়াম পালন করবে, কারা করবে না



 সিয়াম পালন যাদের ওপর ফরজ
প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্কসুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্নমুকিমসামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য সিয়াম পালন ফরজ। যে ব্যক্তি এ শর্তাবলির অধিকারী তাকে অবশ্যই রমযান মাসে সিয়াম পালন করতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
﴿ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُۖ ﴾ [البقرة: ١٨٥
সুতরাং তোমাদের মাঝে যারা এ মাস পাবে তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে। {সূরা বাকারা : ১৮৫}

রাসূলুল্লাহ () বলেছেন :
« إِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَصُومُوا ».
যখন তোমরা রমযানের চাঁদ দেখবে তখন সিয়াম পালন করবে।’ [বুখারী : ১৯০০মুসলিম : ২৫৫৬]

এ বিষয়ে সকল মুসলিমের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত।
দশ প্রকার মানুষের মাঝে সিয়াম পালনের এ সকল শর্ত অনুপস্থিত। তারা হল :
 প্রথম. কাফের বা অমুসলিম : কারণ তারা ইবাদত করার যোগ্যতা রাখে না। ইবাদত করলেও ইসলামের অবর্তমানে তা সহী হবে নাকবুলও হবে না। যদি কোন কাফের রমযানে ইসলাম গ্রহণ করে তবে পিছনের সিয়ামের কাজা আদায় করতে হবে না। কারণ আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন :
﴿ قُل لِّلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ إِن يَنتَهُواْ يُغۡفَرۡ لَهُم مَّا قَدۡ سَلَفَ ﴾ [الانفال: ٣٨
যারা কুফরি করে তাদেরকে বল, ‘যদি তারা বিরত হয় তবে যা অতীতে হয়েছে আল্লাহ তা ক্ষমা করবেন।’ {সূরা আনফাল : ৩৮}
তবে রমযানে দিনের বেলা ইসলাম গ্রহণ করলে ঐ দিনের বাকি অংশটা পানাহার থেকে বিরত থাকবে।

 দ্বিতীয়. অপ্রাপ্ত বয়স্ক : অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির জন্য বয়োপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সিয়াম পালন ফরজ নয়। রাসূলুল্লাহ () বলেছেন :
«رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلَاثَةٍ، عَنِ الْمَجْنُونِ الْمَغْلُوبِ عَلَى عَقْلِهِ حَتَّى يَفِيقَ، وَعَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ، وَعَنِ الصَّبِيِّ حَتَّى يَحْتَلِمَ»
তিন ব্যক্তি থেকে কলমকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। নিদ্রামগ্ন ব্যক্তি যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়। কম বয়সী ব্যক্তি যতক্ষণ না সে প্রাপ্ত বয়স্ক হয়। পাগল ব্যক্তি যতক্ষণ না সে সুস্থ হয়।’ [আবু দাউদ : ৪৪০১]

যদিও অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক-বালিকাদের ওপর সিয়াম পালন ফরজ নয় তবে অভিভাবকরা অভ্যস্ত করার জন্য তাদের সিয়াম পালন করতে বলবেন। সাহাবায়ে কেরাম তাদের বাচ্চাদের সিয়াম পালনে অভ্যস্ত করেছেন। তাই আমাদের জন্য মোস্তাহাব হল আমরাও আমাদের অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের সিয়াম পালনে উদ্বুদ্ধ করবযদি সিয়াম পালন তাদের কোন ক্ষতি না করে।

 অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ে কখন বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হয় ?
যদি কোন অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক বা বালিকার মাঝে তিনটি আলামতের কোন একটি পরিলক্ষিত হয় তখন তাকে প্রাপ্তবয়স্ক বলে ধরা হবে। আলামত তিনটি হল :
(১) স্বপ্নদোষ অথবা অন্য কোন কারণে বীর্যপাত হলে।
(২) যৌনাঙ্গে কেশ দেখা দিতে শুরু করলে।
(৩) বয়স পনেরো বছর পূর্ণ হলে।

ছেলেদের মাঝে যখন এ তিনটি আলামতের কোন একটি পরিলক্ষিত হবে তখন তাদের পূর্ণবয়স্ক বলে ধরা হবে। অবশ্য মেয়েদের জন্য চতুর্থ একটি আলামত রয়েছেতা হল মাসিক দেখা দেয়া। যদি দশ বছর বয়সী কিশোরীদেরও মাসিক দেখা দেয় তাহলে তাদের পূর্ণবয়স্ক বলে ধরতে হবে। এবং শরিয়তের সকল আদেশ-নিষেধ তার জন্য অবশ্য পালনীয় বলে গণ্য হবে। কোন কিশোর বা কিশোরী রমযান মাসের দিনের বেলা যদি সাবালক হয় তবে তাকে দিনের অবশিষ্ট অংশ পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। এ দিনের সওম তার কাজা করতে হবে না। পিতা-মাতার কর্তব্য হল এ বিষয়ে সতর্ক থাকা ও সন্তানকে সচেতন করা। সাথে সাথে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তার ওপর যে সকল ধর্মীয় দায়িত্ব-কর্তব্য আছে তা পালনে দিক-নির্দেশনা দেয়া। পাক-পবিত্রতা অর্জনের নিয়ম-নীতিগুলো সে জানে কি না বা মনে রাখতে পেরেছে কিনা তার প্রতি খেয়াল রাখা।

 তৃতীয়. পাগল : পাগল বলতে বুঝায় যার জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। যার কারণে ভাল-মন্দের মাঝে পার্থক্য করতে পারে না। এর জন্য সিয়াম পালন ফরজ নয়। যেমন পূর্বের হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। পাগল যখনই সুস্থ হয়ে যাবে তখনই সে সিয়াম পালন শুরু করে দেবে। যদি এমন হয় যে দিনের কিছু অংশ সে সুস্থ থাকে কিছু অংশ অসুস্থ তাহলে সুস্থ হওয়া মাত্রই সে পানাহার থেকে বিরত থাকবে। সিয়াম পূর্ণ করবে। পাগলামি শুরু হলেই তার সিয়াম ভঙ্গ হবে নাযদি না সে সিয়াম ভঙ্গের কোন কাজ করে।

 চতুর্থ. অশীতিপর বৃদ্ধ যে ভাল-মন্দের পার্থক্য করতে পারে না : যার বয়সের কারণে ভাল-মন্দ পার্থক্য করার অনুভূতি চলে গেছে সে শিশুর মতই। শিশু যেমন শরিয়তের নির্দেশমুক্ত তেমনি সেও। তবে অনুভূতি ফিরে আসলে সে পানাহার থেকে বিরত থাকবে। যদি তার অবস্থা এমন হয় যে কখনো অনুভূতি আসে আবার কখনো চলে যায় তবে অনুভূতি থাকাকালীন সময়ে তার ওপর স্বলাতসিয়াম ফরজ হবে।

 পঞ্চম. যে সিয়াম পালনের সামর্থ্য রাখে না : এমন অক্ষম ব্যক্তি যার সিয়াম পালনের সামর্থ্য ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। যেমন অত্যধিক বৃদ্ধ অথবা এমন রোগী যার রোগ মুক্তির সম্ভাবনা নেইআল্লাহর কাছে আমরা এ ধরনের রোগ-ব্যধি থেকে আশ্রয় চাই। এ ধরনের লোকদের সিয়াম পালন জরুরি নয়। কারণ সে এ কাজের সামর্থ্য রাখে না।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
﴿ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ ﴾ [البقرة: ٢٨٦
আল্লাহ কারো ওপর এমন কোন কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না যা তার সাধ্যাতীত। {সূরা আল-বাকারা : ২৮৬}

কিন্তু এমন ব্যক্তির ওপর সিয়ামের ফিদয়া প্রদান ওয়াজিব। সিয়ামের ফিদয়া হলপ্রতিটি দিনের পরিবর্তে একজন মিসকিন (অভাবী) লোককে খাদ্য প্রদান করবে।
 কিভাবে মিসকিনকে খাদ্য প্রদান করবে ?
মিসকিনদের দুভাবে খাদ্য প্রদান করা যায় :
(১) খাদ্য তৈরি করে সিয়ামের সংখ্যা অনুযায়ী সমসংখ্যক মিসকিনকে আপ্যায়ন করাবে। (২) মিসকিনদের প্রত্যেককে এক মুদ পরিমাণ ভাল আটা দেবে। এক মুদ হল ৫১০ গ্রাম। (তবে হানাফী ফিকাহ অনুযায়ী দুই মুদ বা এক কেজি বিশ গ্রাম আটা বা সমপরিমাণ টাকা দেয়া যেতে পারে।)

 ষষ্ঠ. মুসাফির : মুসাফিরের জন্য সিয়াম পালন না করা জায়েজ আছে। সফরকে যেন সিয়াম পালন না করার কৌশল হিসেবে ব্যবহার না করা হয়। আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন :
﴿ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَر  فَعِدَّة  مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۗ يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ ١٨٥ ﴾ [البقرة: ١٨٥
যে কেউ অসুস্থ থাকে বা সফরে থাকে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চানযা কষ্টকর তা চান না। {সূরা বাকারা : ১৮৫}

সুতরাং যে ব্যক্তি সফরে থাকে তার জন্য সিয়াম ভঙ্গের অনুমতি আছে এবং সফর শেষে সে সিয়াম আদায় করবে। তবে সে যদি সফরাবস্থায় সিয়াম পালন করে তা আদায় হবে। তবে উত্তম কোনটি,সফরকালীন সময়ে সিয়াম পালন করানা সিয়াম ত্যাগ করাযেটা সহজ মুসাফির সেটা করবেন। যদি তিনি দেখেন সফরকালীন সময়ে তার সিয়াম পালন বাড়িতে থাকাকালীন সময়ের মতই মনে হয় তবে সফরে তার সিয়াম পালন করা উত্তম। আর যদি দেখেন সফরে সিয়াম পালন করলে অতিরিক্ত কষ্ট হয় তবে সিয়াম ত্যাগ করা তার জন্য উত্তম। বরং বেশি কষ্ট হলে সিয়াম পালন মাকরূহ হবে। যেমন রাসূলে করিম ()-এর সাথে একদল সাহাবি সফরে থাকাকালে সিয়াম পালন করে খুব কষ্ট সহ্য করেছিলেনরাসূলুল্লাহ () তাদের লক্ষ্য করে বললেন :
«أُولَئِكَ الْعُصَاةُ، أُولَئِكَ الْعُصَاةُ»
তারাইতো অবাধ্য ! তারাইতো অবাধ্য !!’ [মুসলিম : ]

সফরে কেউ সিয়াম পালন শুরু করলপরে দেখা গেল সিয়াম সম্পন্ন রাখতে তার কষ্ট হচ্ছে তখন সে সিয়াম ভঙ্গ করে ফেলবে। এখন কথা হল এক ব্যক্তি সারা জীবনই সফরে থাকেন এবং সফরাবস্থায় সিয়াম পালন তার জন্য কষ্টকর সে কীভাবে সিয়াম পালন করবেন ?তিনি শীতকালে ছোট দিনগুলোতে সিয়াম পালন করতে পারেন।

 সপ্তম. যে রোগী সুস্থ হওয়ার আশা রাখে : যে রোগাক্রান্ত ব্যক্তির সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তার অবস্থা তিনটির যে কোন একটি হয়ে থাকে :
এক: এমন রোগী যার পক্ষে সিয়াম পালন কষ্টসাধ্য নয় এবং সিয়াম তার কোন ক্ষতি করে না। এমন ব্যক্তির সিয়াম পালন অপরিহার্য।
দুই: এমন রোগী সিয়াম পালন যার জন্য কষ্টকর। এমন ব্যক্তির সিয়াম পালন বিধেয় নয়মাকরূহ। সিয়াম পালন করলে আদায় হয়ে যাবে তবে মাকরূহ হবে। ইসলামি শরিয়তের উদ্দেশ্য মানুষকে কষ্ট দেয়া নয় বরং শরিয়তের উদ্দেশ্য হল মানুষের সমস্যাকে হালকা করা।
তিন: এমন রোগী যে সিয়াম পালন করলে রোগ বেড়ে যাবে। এ অবস্থায় তার সিয়াম ত্যাগ করাই ওয়াজিব বা অপরিহার্য।

 অষ্টম. যে নারীর মাসিক চলছে : ঋতুকালীন সময়ে নারীর জন্য সওম পালন জায়েজ নয় বরং নিষেধ। যদি সওম পালন করা অবস্থায় মাসিক দেখা দেয় তাহলে তার সওম ভেঙে যাবে যদি সূর্যাস্তের এক মুহূর্ত পূর্বেও দেখা যায়। পরবর্তীতে এ সওমের কাজা করতে হবে। মাসিক অবস্থায় রমযানের দিনের বেলা কোন মহিলার মাসিক বন্ধ হয়ে গেল তাহলে তাকে ঐ দিনের বাকি সময়টা খাওয়া-দাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পরে এটাও কাজা করতে হবে। যদি সুবহে সাদিকের এক মুহূর্ত পূর্বে মাসিক বন্ধ হয়ে যায় তাহলে ঐ দিনের সওম পালন অপরিহার্য। এমন ভাবা ঠিক নয় যেগোসল করা হয়নি তাই সওম পালন থেকে বিরত থাকতে হবে। সওমর নিয়ত করে নিবে। গোসল পরে করলে সমস্যা নেই। সিয়াম আদায়ের ক্ষেত্রে সদ্য প্রসূতি নারীর বিধান ঋতুবতী নারীর অনুরূপ। ঋতুবতী ও সদ্য প্রসূতি নারীরা সুস্থ হয়ে সিয়ামের কাজা আদায় করবে। তবে তাদের স্বলাতের কাজা আদায় করতে হবে না। আয়েশা রা.-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল যেঋতুবতী নারী স্বলাতের কাজা আদায় করবে নাকিন্তু তাদের সিয়ামের কাজা আদায় করতে হবে কেন তিনি উত্তরে বললেনআমাদের এ অবস্থায় শুধু সিয়ামের কাজা আদায় করতে রাসূলুল্লাহ () নির্দেশ দিয়েছেনস্বলাতের কাজা আদায়ের নির্দেশ দেননি। {বুখারি ও মুসলিম}
এটা আল্লাহ রাববুল আলামিনের এক বিরাট অনুগ্রহ যে তিনি মহিলাদের হায়েজ ও নিফাস চলাকালীন সময়ের স্বলাত মাফ করে দিয়েছেন।

 নবম. গর্ভবতী ও দুগ্ধ দানকারী নারী : যদি গর্ভবতী বা দুগ্ধ দানকারী নারী সিয়ামের কারণে তার নিজের বা সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা করে তবে সে সিয়াম ভঙ্গ করতে পারবে। পরে নিরাপদ সময়ে সে সিয়ামের কাজা আদায় করে নিবে। রাসূলুল্লাহ () বলেছেন :
إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى وَضَعَ عَنِ المُسَافِرِ الصَّوْمَ، وَشَطْرَ الصَّلَاةِ، وَعَنِ الحَامِلِ أَوِ المُرْضِعِ الصَّوْمَ أَوِ الصِّيَامَ
আল্লাহ রাববুল আলামীন মুসাফিরের অর্ধেক স্বলাত কমিয়ে দিয়েছেন এবং গর্ভবতী ও দুগ্ধ দানকরী নারীর সিয়াম না রেখে পরে আদায় করার অবকাশ দিয়েছেন।’ {তিরমিযী : ৭১৫}

 দশম. যে অন্যকে বাঁচাতে গিয়ে সিয়াম ভেঙে ফেলতে বাধ্য হয় : যেমন কোন বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিপানিতে পড়ে যাওয়া মানুষকে অথবা আগুনে নিপতিত ব্যক্তিকে কিংবা বাড়িঘর ধসে তার মাঝে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করতে গিয়ে সিয়াম ভঙ্গ করল। এতে অসুবিধা নেই। যদি এমন হয় যে সিয়াম ভঙ্গ করা ব্যতীত এমন বিপন্ন মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না তাহলে সিয়াম ভঙ্গ করে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত হওয়া অপরিহার্য হয়ে পড়বে। কেননা জীবনের প্রতি হুমকি সৃষ্টি হয়েছে এমন বিপদগ্রস্ত মানুষকে উদ্ধার করা ফরজ। এমনিভাবে যে ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রুদের বিরুদ্ধে আল্লাহর পথে জিহাদে নিয়োজিত সে সিয়াম ভঙ্গ করে শক্তি অর্জন করতে পারবে।
এ দশ প্রকার মানুষ যাদের জন্য সিয়াম ভঙ্গ করার অনুমতি দেয়া হল তারা যেন প্রকাশ্যে পানাহার না করে সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। কারণ এতে অনেক অজানা লোকজন খারাপ ধারণা পোষণ করবে যা ব্যক্তি ও সমাজের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
                       ----------------------------------------------------------------------------------
                       '' শুধু নিজে শিক্ষিত হলে হবেনা, প্রথমে বিবেকটাকে শিক্ষিত করুন। ''

দারসুল কুরআন - বিষয়: ঈমানের অগ্নি পরীক্ষা দিয়ে জান্নাতে যেতে হবে

দারসুল কুরআন
বিষয়: ঈমানের অগ্নি পরীক্ষা দিয়ে জান্নাতে যেতে হবে


সূরা আনকাবুত ২-৩


“মানুষ কি মনে করে নিয়েছে যে, আমরা ঈমান এনেছি এ কথাটুকু বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? অথচ আমি তাদের পূর্ববর্তীদের সকলকেই পরীক্ষা করে নিয়েছি। আল্লাহ তা’য়ালা অবশ্যই দেখবেন কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যুক।”
নামকরণ
সূরা আনকাবুতের চতুর্থ রুকুর ৪১ নম্বর আয়াতের আনকাবুত শব্দ হতে এই সূরার নামকরণ করা হয়েছে। আনকাবুত শব্দটির অর্থ ‘মাকড়সা’। সূরার এই নামকরণ করা হয়েছে কোনো শিরোনাম হিসেবে নয়। অন্যান্য সূরার ন্যায় এটিও প্রতীকি নামকরণ। তবে এই নামকরণে অবশ্যই ওহীর নির্দেশ রয়েছে। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নিজস্ব কোনো চিন্তা থেকে সূরাসমূহের নামকরণ করেননি।
নাজিলের সময়কাল
সূরাটি মক্কী সূরা। যদিও সূরার প্রথম দিকে মুনাফিকদের প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে বিধায় প্রথম দশটি আয়াত মাদানী বলে কোনো কোনো তাফসীরকারক মনে করেন। কেননা মুনাফিক ছিল মক্কাতে নয়; মদীনাতে। তবে অধিকাংশের মতে যেসব মুনাফিক লোকের কথা বলা হয়েছে তারা সে সকল মুনাফিক যারা মক্কার কাফিরদের জুলুম নির্যাতন থেকে বেঁচে থাকার জন্য মুনাফিকী অবলম্বন করেছিল। এ সূরাতে মুসলমানদের হিজরত করতে বলা হয়েছে বলে কোনো কোনো তাফসীরকারক একে মক্কী জীবনের শেষ দিকের সূরা বলেছেন। এসব ধারণাবশত বক্তব্যের মূলে কোনো হাদিসের প্রমাণ নেই। সূরাটি উল্লিখিত বিষয় ও বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করেই এসব ধারণা প্রকাশ করা হয়েছে। (আল্লাহপাকই ভালো জানেন)
শানে নুযুল বা অবতরণের কারণ
মক্কায় মুসলমানদের ওপর চরম নির্যাতন চলছিল। কাফেররা পূর্ণশক্তিতে ইসলামের বিরোধিতা করছিল। যেই ইসলাম কবুল করে রাসূলের (সা) দলে যোগদান করতেন তার ওপরই চরম বিপদ-আপদ ও জুলুম-নির্যাতনের স্টিম রোলার চলতো। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা’য়ালা এ সূরাটি নাজিল করেন। এ সূরার মাধ্যমে আল্লাহ তা’য়ালা প্রকৃত নিষ্ঠাবান ঈমানদারদের দৃঢ়সংকল্প, অনড় মনোবল, সাহস-হিম্মত ও অনমনীয় মনোবল সৃষ্টি করতে চেয়েছেন। সাথে সাথে দুর্বল ঈমানদার লোকদেরকে লজ্জা দিতে চেয়েছেন। একই সাথে মক্কার কাফেরদেরকে কঠোর ভাষায় শাসন করা হয়েছে। তাছাড়া অতীতের নবী রাসূলদের ওপর অমানষিক জুলুম নির্যাতনের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে এ সূরায়। নির্যাতন সহ্য করে যারা সত্য ঈমানের বলে বলীয়ান হয়ে টিকে ছিলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে সাহয্য করা হয়েছে। কঠিন পরীক্ষার একটা পর্যায় অতিক্রম করার পরই আল্লাহর সাহায্য আসবে। ঈমানের সেই অগ্নি পরীক্ষা দিয়েই আল্লাহর জান্নাতে যেতে হবে। এ কথাটি মক্কার মুসলমানসহ যুগে যুগে সকল মুমিন মুসলমানদেরকে শিক্ষা দিতেই এ সূরার অবতারণা।
আলোচ্য আয়াতদ্বয়ের মূল বক্তব্য
মুখে মুখে ঈমানের দাবি করলেই ঈমানদার হওয়া যায় না। ঈমানের দাবি পূরণ করতে সদা-সর্বদা তৈরি থাকতে হবে। আল্লাহ পাক ঈমানদারদের অবশ্যই পরীক্ষা করবেন। পূর্বের নবী-রাসূল এবং ঈমানদারদেরকেও আল্লাহ পরীক্ষা করেছেন। ঈমানের প্রকৃত দাবিদার কারা এ ব্যাপারে সত্য-মিথ্যা যাচাই করার প্রয়োজন রয়েছে। ঈমান যত বড় পরীক্ষা তত বড় হবে এটা জেনেই ঈমানের দাবি করতে হবে। পূর্বেকার সকল নবী-রাসূল এবং ঈমানদারদের থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
ব্যাখ্যা
এখন আলোচ্য আয়াতের সংক্ষিপ্ত ব্যাখার দিকে মনোযোগ দেয়া যাক।
২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলছেন, “মানুষ কি মনে করে নিয়েছে যে, আমরা ঈমান এনেছি এ কথাটুকু বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না?” এ আয়াতের ব্যাখ্যা জানার আগে জেনে নেয়া ভালো আল্লাহ তা’য়ালা যখন এ আয়াত নাজিল করেছিলেন তখনকার অবস্থা। ইসলাম গ্রহণকারীরা যদি গরিব কিংবা দাস-দাসী হতো তা হলে তাদের ওপর নির্যাতনের পাহাড় ভেঙে পড়তো। ছোট ব্যবসায়ী, কারিগর হলে রুজি রোজগারের সকল পথ বন্ধ করে দেয়া হতো। আর প্রভাবশালী হলে নানাভাবে কষ্ট ক্লেশ অপপ্রচার মিথ্যা অভিযোগ এমনকি তার গোটা পরিবার ধ্বংস করে দেয়া হতো। এ রূপ অবস্থায় মক্কা নগরীর গোটা পরিবেশই ভয় আর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল। এই অবস্থায়ও মজবুত ঈমানদার লোকদের মানবীয় প্রকৃতির স্বাভাবিক দাবিতে তাদেরও প্রায় কঠিনভাবে প্রাণ কেঁপে উঠতো, যদিও তারা ঈমান ছাড়েননি।
নবীর (সা) সাহাবী হযরত খাব্বাব ইবনে আরাত (রা) পেশায় ছিলেন সামান্য কর্মকার। এমনই একজন পাক্কা মুমিনের অবস্থা বর্ণনা করলে পরিষ্কার হয়ে যাবে মুমিনদের অবস্থা কী হয়েছিল। হযরত খাব্বাব বলেন, যে সময় কাফের মুশরিকদের অত্যাচার জুলুম নির্যাতনে আমাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল, তখন একদিন আমি রাসূলে কারীম (সা)-এর সামনে উপস্থিত হলাম। হুজুর তখন কা’বা ঘরের দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে ছিলেন। আমি বললাম, আপনি কি আমাদের জন্য দোয়া করবেন না? (আলা তাদ’উ লানা আও আলা তাসতানসিরু লানা)
আমার এ কথা শোনা মাত্রই হুজুর (সা) উঠে বসলেন। তখন তাঁর চেহারা মুবারক রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো। নবীজি বললেন, শোনো খাব্বাব! তোমাদের ওপর সেই কষ্ট অত্যাচার এখনো আসেনি যা তোমাদের পূর্বেকার নবী-রাসূল ও ঈমানদারদের ওপর করা হয়েছে। কাউকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুতে করাত দিয়ে দ্বি-খণ্ডিত করা হয়েছে। আবার কারো হাড়ের গোশত লোহার চিরুনি দিয়ে চেঁছে ফেলা হয়েছে। এসবের কারণ ঈমানদারদেরকে ঈমানের পথ থেকে ফিরিয়ে রাখা। কিন্তু প্রকৃত ঈমানদার জীবন দেবে তবুও ঈমানের পথ থেকে ফিরে যাবে না। পাক্কা মুসলমান কখনো মাথা নত করতে জানে না। বাতিলের হুংকার, রক্তচক্ষু ভয় করে না মজবুত ঈমানদারেরা।
মুসলমানদের অভিভাবক হলেন আল্লাহ। মুসলমানদের নেতা হলেন নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা)। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন। আর যারা কুফুরি করে, তাগুত (শয়তান) তাদের অভিভাবক। তারা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারের দিকে বের করে আনে। এরাই হলো জাহান্নামী। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।” (সূরা বাকার : ২৫৭)
সুতরাং আল্লাহ অভিবাবক হলে মুসলামানদের ভয় কিসের? দৈহিক নির্যাতন, মানসিক অস্থিরতা এবং কাতর অবস্থাকে ধৈয্য ও সহিষ্ণুতার পানি দিয়ে ঠাণ্ডা করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা’য়ালা যুগে যুগে সকল ঈমানদারদের এই বার্তা দিয়ে বুঝাচ্ছেন যে, “লোকেরা কি মনে করেছে যে, ঈমান এনেছি বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে অথচ পরীক্ষা করা হবে না?”
দুনিয়া আখেরাতের সফলতা সম্পর্কে যেসব ওয়াদা রয়েছে, তা ঈমানের মৌখিক দাবি দ্বারা পাওয়া যায় না। এজন্য প্রয়োজন ঈমানের অগ্নি পরীক্ষা। অগ্নি পরীক্ষা দিয়েই ঈমানের সত্যতার প্রমাণ পেশ করতে হবে। জান্নাতে যেতে হলে ঈমানের অগ্নি পরীক্ষা বড় শর্ত। জান মালের ক্ষতি স্বীকার করতে হবে। শত অন্যায়, জুলুম-নির্যাতন সহ্য করতে হবে। বিপদ-আপদ, ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হবে। একদিকে থাকবে ভয় ও অপরদিকে লালসা- এসবের মধ্যেই ঈমানদারের পরীক্ষা হবে। তদুপরি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য অতি প্রিয় জিনিস কুরবান করতে হবে। আল্লাহ বলেন, “লান তানালুল র্বিরা হাত্তা তুনফিকু মিম্মা তুহিব্বুন।” পরীক্ষার সময়ে ধৈয্য হারা না হয়ে আল্লাহকে খুশি করতে সর্বপ্রকার ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।
বর্তমান সময়ে এ আয়াতের আলোকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় শয়তানের প্ররোচনায় যারা আল্লাহ, কুরআন, নবী (সা)-কে নিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলছে তারা নবীর ওয়ারিশ এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকেও বিভিন্নভাবে ভয় দেখাতে চাচ্ছে। ঈমানদারদের কাছে এসব কিছুই না। তারা এর পরোয়া করে না। তারা বিশ্বাস করে এক আল্লাহর ওপর।
তবে একথা সত্য যে, হামলা মামলা নির্যাতন অপপ্রচার মিথ্যা অভিযোগ হয়রানি থাকবে কারণ এ অবস্থা সৃষ্টি হলেই প্রকৃত মুমিন চেনা যায়। আল্লাহ বলেন, “এ সময় ও অবস্থাটি তোমাদের ওপর এজন্য আনা হয়েছে যে, আল্লাহ দেখতে চান তোমাদের মধ্যে সাচ্চা মুমিন কে? আর তিনি তোমাদের শহীদ হিসেবে কবুল করতে চান।” (সূরা আল ইমরান : ১৪১)
পরের আয়াতে আল্লাহ বলছেন, “অথচ আমি তাদের পূর্ববর্তীদের সকলকেই পরীক্ষা করে নিয়েছি। আল্লাহ তা’য়ালা অবশ্যই দেখবেন কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যুক।”
আমরা যারা ঈমানের দাবিদার, একটু নিজেকে প্রশ্ন করি, আমরা কি খাঁটি মুমিনদের ন্যায় পরীক্ষার সম্মুখিন হয়েছি? মাত্রাতিরিক্ত চরম জুলুম-নির্যাতনের স্বীকার হয়েছি? মানসিক, দৈহিক নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছি? ব্যবসা-বাণিজ্য, আয়-রোজগারের পথ কি রুদ্ধ হয়ে গেছে ? পরিবার ও বংশ থেকে কি সম্পর্কচ্ছেদ করতে হয়েছে? একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে পেরেছি? আমাদের প্রিয় জিনিসগুলোকে কুরবান করতে পেরেছি?
আমাদের জানা উচিত, ঈমানের দাবি করলেই প্রতিটি পরতে পরতে পরীক্ষা দিতে হবে। কিন্তু ঈমানের দাবি করে তার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কোনো পরীক্ষা দিতে আমরা রাজি নই। সস্তা ঈামানের দাবি করে ঝুঁকি মুক্ত কিছু সস্তা আমলের দ্বারা লোভনীয় জান্নাতে যেতে চাই। আল কুরআন যেখানে ঈামানের কথা বলেছে সেখানেই পরীক্ষার পয়গাম দিয়েছে। তাগুতের অপশক্তি আর মুসলামানদের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা মুনাফিকদের শয়তানি ও দুষ্কৃতির কারণে ভেঙে না পড়ে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে। আল্লাহর ওয়াদাকৃত জান্নাত পেতে সদাসর্বদা দুনিয়ার জীবনে ঈমানের অগ্নি পরীক্ষা দিতে তৈরী থাকতে হবে। ভরসা রাখতে হবে মহান রবের সাহায্যের ওপর।
মুমিনরা সব সময় আল্লাহর ওপর ভরসা করেন কারণ বান্দার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আলাইছাল্লাহু বি কাফফিন আবদাহ।
মুমিন যখনই কোনো বিপদ দেখে তখন সে আল্লাহর ওপর ভরসা করে। তাই তাকে কেউ পরাজিত করতে পারে না।
শিক্ষা
১. মুখে মুখে ঈমানের দাবি করার কোনো মূল্য নেই, কুরবানির মাধ্যমে ঈমানের পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
২. আল্লাহ পরীক্ষার মাধ্যমে ঈমানের দাবিদারকে খাঁটি ঈমানদার হিসেবে বাছাই করবেন।
৩. পূর্বেকার সকল নবী-রাসূল ও তাঁদের অনুসারীদেরকে পরীক্ষা করা হয়েছে।
                            ----------------------------------------------------------------------------------
                            '' শুধু নিজে শিক্ষিত হলে হবেনা, প্রথমে বিবেকটাকে শিক্ষিত করুন। ''

দারসুল কুরআন -সুরা আল ইমরান,আয়াতঃ১০২-১০৪

দারসুল কুরআন
-সুরা আল ইমরান,আয়াতঃ১০২-১০৪



يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ (৩:১০২) وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ (৩:১০৩) وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (৩:১০৪)
(৩:১০২) হে ঈমানদারগণ ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করো৷ মুসলিম থাকা অবস্থায় ছাড়া যেন তোমাদের মৃত্যু না হয়৷ ৮২ (৩:১০৩) তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রুজ্জু ৮৩ মজবুতভাবে আকঁড়ে ধরো এবং দলাদলি করো না৷ আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন সে কথা স্মরণ রেখো৷ তোমরা ছিলে পরস্পরের শক্র ৷ তিনি তোমাদের হৃদয়গুলো জুড়ে দিয়েছেন৷ ফলে তাঁর অনুগ্রহ ও মেহেরবানীতে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেছো৷ তোমরা একটি অগ্নিকুণ্ডের কিনারে দাঁড়িয়ে ছিলে৷ আল্লাহ সেখান থেকে তোমাদের বাঁচিয়ে নিয়েছেন ৷ ৮৪ এভাবেই আল্লাহ তাঁর নির্দশনসমূহ তোমাদের সামনে সুস্পষ্ট করে তুলেন ৷ হয়তো এই নিদর্শনগুলোর মাধ্যমে তোমরা নিজেদের কল্যাণের সোজা সরল পথ দেখতে পাবে৷ ৮৫ (৩:১০৪) তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক অবশ্যি থাকতে হবে, যারা নেকী ও সৎকর্মশীলতার দিকে আহবান জানাবে, ভালো কাজের নির্দেশ দেবে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে৷ যারা এ দায়িত্ব পালন করবে তারাই সফলকাম হবে ৷
-আল কুরআন
নামকরনঃ 
সুরার ৩৩ নং আয়াতে উল্লিখিত শব্দকে কেন্দ্র করে সুরার নামকরন করা হয়েছে।
নাযিলের সময়কালঃ
এই সুরায় ৪টি ভাষণ সন্নিবেশিত
প্রথম ভাষণঃ প্রথম থেকে ৪র্থ রুকুর ২য় আয়াত পর্যন্ত, বদরযুদ্ধ কালীন সময়ে।
দ্বিতীয় ভাষণঃ ৪র্থ রুকুর ৩য় আয়াত থেকে শুরু করে ৬ষ্ঠ রুকুর শেষ পর্যন্ত ৯ম হিজরীতে অবতীর্ণ হয়।
তৃতীয় ভাষণঃ ৭ম রুকুর শুরু থেকে ১২তম রুকুর শেষ পর্যন্ত। প্রথম ভাষণের সমসাময়িক বলে মনে হয়।
চতুর্থ ভাষণঃ ১৩তম রুকু থেকে শেষ পর্যন্ত। ওহুদ যুদ্ধের পর।
ফজিলতঃ
দোররে মনসুর কিতাবে হযরত কাব বলেছেন- সুরা বাকারা এবং সুরা আল ইমরান, উভয় নিজ নিজ পাঠকদের সম্পর্কে বলবে হে আল্লাহ
এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই।
খোলাসাতুত তাফসীরের ১ম খন্ডের ২৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, নবী (সাঃ) বলেছেন যে ব্যক্তি সুরা বাকারা ও সুরা আল ইমরান জুমার রাতে পাঠ করবে আল্লাহ তাকে সাত জমীন থেকে সাত আসমান পর্যন্ত সওয়াব দান করবেন। (নূরুল কোরআন)
ইসমে আযমঃ ইবনে আবু শায়বা তাবারানী ইবনে মারদওয়াহ, আবু উমামা (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত মারফু হাদীসে উল্লেখ করেন যে তিনটি সুরায়
আল্লাহর ইসমে আযম রয়েছে। বাকারা, আল ইমরান ও ত্বহা।
সুরা বাকারা ও আল ইমরানের মাঝে সামঞ্জস্যঃ
১· সুরা বাকারায় তৌহিদের সত্যতার উপর দলিল পেশ করা হয়েছে। আল ইমরানে এ পর্যায়ে সকল সন্দেহ দুরীভুত করা হয়েছে।
২· বাকারায় মানবজাতি সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে আল ইমরানে মানুষকে তার মাতৃগর্ভে আকৃতি দানের কথা বলা হয়েছে।
৩· বাকারায় আদম সৃষ্টির ইতিকথা বর্ণিত হয়েছে আল ইমরানে আদম সন্তান সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। (নূরুল কুরআন)
বিষয়বস্তুঃ 
দুটি দলকে সম্বোধন করে বক্তব্য পেশ-
১· আহলে কিতাব (ইহুদী ও খৃষ্টান)
২· ঈমানদারগণ
উভয়পক্ষের কাছেই সুরা বাকারায় যে ভাষণ ছিল তা জোরদার করা হয়েছে।
- প্রথম দল আকীদাগত ভ্রষ্টতা।
- দ্বিতীয় দল শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা।
ঐতিহাসিক পটভূমিঃ
বদরের যুদ্ধের পর মুসলমানদের নিরন্তর ভীতি ও অস্থিরতার মধ্যে বসবাস বদরের যুদ্ধ ছিল ভীমরুলের চাকে ঢিল মারার মতো।
বহুসংখ্যক মুহাজিরের আগমনে মদীনার অর্থনৈতিক অবস্থার উপর বিরুপ প্রতিক্রিয়া
মদীনার আশে পাশে ইহুদী গোত্রের শত্রুতা।
বদর যুদ্ধে পরাজয়ের পর কুরাইশদের প্রতিশোধ স্পৃহা ও ওহুদ যুদ্ধ।
ওহুদ যুদ্ধের সময় মুসলমানদের দ্বারা কৃত ভুল সমূহের সংশোধন।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাঃ 
আয়াতঃ ১০২
ইসলামী জীবনের কেন্দ্রীয় চরিত্র হলো ঈমান ও ভাতৃত্ব মুসলমানদের জাতীয় শক্তির উৎসের প্রথমটি হলো তাকওয়া ঐক্যবদ্ধ জীবনযাপন|
অনেকে তাকওয়া বলতে বাহ্যিক বেশভুষা মনে করেন। তাকওয়ার সংগে সুরা হাশর-৭, আহযাব-১, মুলক-১২
একবার তাকওয়া সম্পর্কে বক্তব্য দিতে গিয়ে রাসূল (সাঃ) তার বুকের দিকে ইশারা দিয়ে ৩বার বললেন ‘তাকওয়া হওলা এখানে’। অর্থাৎ অন্তরে ভয় থাকলে সব কাজে প্রভাব পড়ে।
এ সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেন “আমি কি তোমাদের উত্তম লোকদের সম্পর্কে বলব? গাহাবীরা বললেন জি হ্যা বলুন হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)। তিনি বললেন- তোমাদের মধ্যে তারাই উত্তম যাদের (আমল) দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়।” (ইবনে মাযা, রাবী আসমা বিনতে ইয়াজিদ)
এ গুনের অভাবে একটি সমাজ জাহেলী সমাজের রুপ নিতে পারে।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাকওয়া ও তার মর্যাদাঃ 
সুরা হুজুরাত-১৩,হাশর-১৮,সুরা নাহল-১২৮,সুরা নূর-৫২
রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে তাকওয়া ও তার ফলঃ 
সুরা আরাফ-৯৬
জামায়াতী জিন্দেগীর ক্ষেত্রে তাকওয়াঃ
তওবা-১১৯,ফাতির-২৮
জিহাদের ক্ষেত্রে তাকওয়াঃ
আল ইমরান-২০০,মায়েদা-৩৫
আত্নীয়-স্বজনের ব্যাপারে তাকওয়াঃ
নিসা-১
পরকালের ব্যাপারে তাকওয়াঃ
বাকারা-১২৩
হাদীসঃ তাকওয়ার সংজ্ঞা 
১· আতিয়া আস-সাদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন কোন ব্যক্তি পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ার আশংকায় যেসব কাজে গুনাহ নেই তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত খোদাভীরু লোকদের শ্রেণীভুক্ত হতে পারেনা। (তিরমিযী ও ইবনে মাযা)
২· হাসার ইবনে আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রাসূল (সাঃ) এর জবান মুবারক হতে এ কথা মুখস্থ করে নিয়েছি, যে জিনিস সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেয় তা পরিত্যাগ করে যা সন্দেহের উর্ধ্বে তা গ্রহ কর। কেননা সততাই শান্তির বাহন এবং মিথ্যাচার সন্দেহ সংশয়ের উৎস। (তিরমিযী)
তাকওয়ার হক কি? 
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, রবী কাতাদাহ ও হাসান বসরী (রাঃ) বলেন, তাছাড়া রাসূল (সাঃ) নিজেও বলেছেনঃ তাকওয়ার হক হলো, প্রতিটি কাজে আল্লাহর আনুগত্য করা আনুগত্যের বিপরীত কোন কাজ না করা, আল্লাহকে সার্বক্ষণিক মনের মধ্যে স্মরণ রাখা, কখনও ভুলে না যাওয়া এবং সবসময়ই তার শোকরিয়া আদায় করা এবং অকৃতজ্ঞ না হওয়া। (বাহরে মুহীত)
সুরা হজ্জের শেষ আয়াতে ‘তোমরা আল্লাহর জন্য জিহাদ করো জিহাদের হক আদায় করে।’
আল্লামা সুদী (রঃ) বলেন এর অর্থ এমনভাবে তার আনুগত্য ও বাধ্যতা স্বীকার করতে হবে যেখানে কখনও কোন নাফরমানী ও অবাধ্যতা থাকবেনা। তাকে এমন একনিষ্ঠভাবে স্মরণ করতে হবে যেখানে তাকে ভুলে যাবার কোন অবকাশ থাকবেনা। তার প্রতি এমন আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে যেখানে কোন অকৃতজ্ঞতার প্রশ্ন উঠবেনা। (তাবারী)
অন্যান্য তাফসীরকারকগণ বলেন ইবাদতের ক্ষেত্রে বুঝানো হয়েছে। বস্তুত আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে করতে হবে যা আদায়ের ব্যাপারে কোন বিরুদ্ধাচারীর বিরোধীতার দিকে ভ্রুক্ষেপ করা যাবেনা।
তাকওয়ার তিনটি স্তরঃ
১) সর্বনিম্ন স্তর কুফর বা শিরক থেকে বিরত থাকা
২) অপছন্দনীয় বিষয় থেকে বিরত থাকা
৩) সর্বোচ্চ স্তর হাদীস পূর্বে বর্ণিত উদাঃ গরু চরানো আইল পর্যন্ত বৈধ কিন্তু অন্যের জমিতে মুখ দেবে ভয়ে আইন থেকে অনেক দূরে।
হযরত উমর (রাঃ) বলেন- কন্টাকাকীর্ণ রাস্তায় চলাচলের সময় যেমন কাপড় চোপড় গুটিয়ে আটো সাটো হয়ে চলতে হয়। তেমটি দুনিয়ার জীবনে পাপ থেকে বাচবার জন্য একজন মুত্তাকী ব্যক্তিকে সতর্কতার সাথে বেছে বেছে চলতে হয়।
আর মুসলমান না হয়ে মৃতুø বরণ করোনা “মুসলমান না হয়ে মরার অর্থ হচ্ছে তোমার এমন কোন মুহুর্ত যেন না কাটে যখন তুমি ইসলামে প্রতিষ্ঠিত নও। কেননা তখন যদি মৃতুø আসে তবে, তা হবে ইসলামে বিহীন মৃতুø। (মাযহাবী)
তাকওয়ার স্তরঃ
হযরত উমর (রাঃ) বলেন হারামে জড়িয়ে যাবার ভয়ে আমরা হালাল জিনিসের দশ ভাগের নয় ভাগই পরিত্যাগ করে থাকি।
হযরত জাবের (রাঃ) বলেন আমি রাসূল (সাঃ) এর মৃতুøর তিনদিন আগে তার মুখে বলতে শুনেছিঃ দেখ তোমরা মৃতুøর সময় আল্লাহর প্রতি ভালো ধারনা রাখবে। (মুসলিম) মুসনাদে বাযযার এ রয়েছে রাসূল (সাঃ) এক আনসারী রোগীকে দেখতে গেলেন। সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন অবস্থা কিরুপ। তিনি বললেন আল হামদুলিল্লাহ ভালই আছি। আল্লাহর দয়ায় আশা করছি এবং তার শাস্তির ভয় করছি। রাসূল (সাঃ) বললেন জেনে রেখো এরুপ অবস্থায় যার অন্তরে আশা-ভয় দুটোই থাকে আল্লাহ তার আকাঙ্খার জিনিস প্রদান করেন এবং ভয় থেকে রক্ষা করেন।
রাসূল (সাঃ) দোয়া করতেন। “হে আমাদের দিলকে পরিবর্তকারী, আমাদের দিলসমুহকে তোমার দ্বীনের উপর রাখ।”
“হে আমাদের দিলসমূহকে উলট-পালটকারী, আমাদের দিলসমূহকে তোমার আনুগত্যের দিকে ঘুরিয়ে দাও।” (মুসলিম)
রাসূল (সাঃ) বলেন “তোমাদের হাশর তেমন হবে যেমন তোমাদের মৃতুø হবে।”
মুসনাদে আহমাদ
আব্বাস (রাঃ) সাথে ছিলেন। নবী (সাঃ) উক্ত আয়াত তেলাওয়াত করে বলেন- যদি জাক্কুমের একটি ফোটা পৃথিবীতে নিক্ষেপ করা হয় তবে পৃথিবীর যাবতীয় খাদ্যদ্রব্য বিনষ্ট হয়ে যাবে। অতএব তোমরা চিন্তা কর দোযখীদের অবস্থা যাদের পানাহার হবে জাক্কুম। (নূরুল কোঃ মাযহাবী)
আয়াতঃ ১০৩
শানে নুযুলঃ 
ইবনে কাসীর তাফসীরে ৩টি ঘটনা উল্লেখ করেন-
১· আউস ও খাযরায় গোত্র ইসলাম গ্রহণ করে ভ্রাতৃ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। একবার এক ইহুদী আউস ও খাযরাজ গোত্রের সম্মিলিত সমাবেশের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তাদের মহব্বত দেখে সে ঈর্ষান্বিত হয়। চক্রান্তের জন্য সে একজনকে ঐ সমাবেশে পাঠায় এবং দুই গোত্রের মধ্যে পুরাতন শত্রুতা জগাতে সক্ষম হয়। ফলে হারারা নামক স্থানে দুই গোত্রের প্রায় যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হয়। রাসূলের উপস্থিতিতে শান্ত হয়।
২· হুনায়েন যুদ্ধের গনিমতের মাল রাসূল কমবেশি করে বন্টন করছিলেন। তা দেখে কেউ একজন কটুক্তি করে। ফলে রাসূল (সাঃ) একটি ভাষণ দেন- “হে আনসার দল, তোমরা কি পথভ্রষ্ট ছিলেনা অতপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে সুপথে এনেছেন ----------
৩· হযরত ইকরামা (রাঃ) বলেন হযরত আয়েশা (রাঃ) কে যখন মুনাফিকরা মিথ্যা দোষারোপ করছিল এবং আল্লাহ এ প্রেক্ষিতে আয়াত নাযিল করলেন তখন মুসলমানেরা একে অপরের বিরুদ্ধে লেগে পড়ছিল তখন এ আয়াত নাযিল হয়।
আয়াতে পারস্পরিক ঐক্যের বিষয়টি আলোচিত হয়েছে-
পরস্পর ঐক্যের বন্ধন
বিচ্ছিন্ন না হওয়া
আল্লাহর রজ্জু অর্থ- 
দ্বীন ইসলাম , আল্লাহর কিতাব
হযরত যায়েদ ইবনে আরকামের বর্ণনায় “আল্লাহর রজ্জু হলো কুরআন।” (ইবনে কাসীর)
হাদীসে এসেছে
“আল্লাহর কিতাব আকাশ হতে যমীন পর্যন্ত প্রলম্বিত এক রজ্জু।”
ইসলামী ঐক্য ‘হাবলুল্লাহ’। জাতি, বর্ণ, গোত্র ভিত্তি নয়।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন ৩টি কাজে আল্লাহ খুশি হন ৩টি কাজে বেজার হন
তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর। তার সাথে কিছু শরীক করোনা।
আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধর পরস্পর দলাদলি করোনা।
মুসলমানদে রাষ্ট্র নায়কদের কল্যাণ কামনা কর ও সহযোগীতা কর।
বেজার হন যে তিনটি কাজে
বাজে ও অনর্থক কথা বলা
বেশী বেশী প্রশ্ন করা
সম্পদ ধ্বংস করা।
(সহীহ মুসলিম, ইবনে কাসীর)
জামায়াতী জিন্দেগীঃ 
আল ইমরান-১০১ সত্য পথের জন্য ছফ-৪
আয়াতে এরপর দুটি নেয়ামতের কথা বলা হয়েছেঃ
প্রথম নেয়ামতঃ
ভাতৃত্ব। একে অপরের দুশমন ছিল।
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন- “তিনিই সেই আল্লাহ যিনি নিজ মদদে এবং মুমিনদের সাহায্য দ্বারা তোমাকে শক্তিশালী করেছেন এবং তাদের অন্তরে প্রেম প্রীতি পয়দা করে দিয়েছেন। (আনফাল ৬১-৬২)
দৃষ্টান্ত মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত। আনছারদের ত্যাগ।
আউস ও খাযরাজ গোত্র শুধু ইসলামের কারণে বিরোধ নিষ্পত্তি
ইয়ারমুকের যুদ্ধে পানি পানের ঘটনা
দ্বিতীয় অনুগ্রহঃ 
“হে মুমিনগন, তোমরা একেবারে অগ্নিকুন্ডের পাড়ে অবস্থান করছিলে। সেখান থেকে আল্লাহ তোমাদের উদ্ধার করেছেন।”
মুফাসসিরগণ এর দু’রকম অর্থ করেছেন
একঃ শত্রুতা ও হানাহানির আগুনে ভরা গভীর খাদের কিনারায়। আউস ও খাযরাজ গোত্র (সাইয়েদ কুতুব শহীদ)
দুইঃ তোমরা দোযখের আগুনের ধারে পৌছে গিয়েছিলে এবং তোমাদের কুফরী তোমাদের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে দি। সেখান থেকে বাচা। (ইবনে কাসীর)
আয়াতঃ ১০৪
তোমাদের মধ্যে এমন একটি ----- তারাই সফলকাম।
হযরত যাহ্‌হাক- এই দল হতে ভাবার্থ হচ্ছে বিশিষ্ট সাহারা (রাঃ) ও বিশিষ্ট হাদীস বর্ণনাকারীগণ অর্থøাৎ মুজাহিদ ও আলেমগন। (ইবনে কাসীর
রাসূল (সাঃ) তেলাওয়াত করে বলেছিলেন এ সম্প্রদায় হলো বিশেষ করে সাহাবা কেরামের দল (ইবনে কাসীর)
এখন সাহাবাদের অনুসারীরাই, সেই দল। কারন কোরআনের নির্দেশ সার্বজনীন।
এই সুরার ১১০ নং আয়াত সুরা আছর
সত্যনিষ্ঠ দলের কাজঃ 
প্রথম কাজঃ মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকা। দাওয়াতের এ কাজ সার্বজনীন। দাওয়াত দিতেহবে চরিত্র ও কর্মের মাধ্যমে (কথা ও কাজে মিল)
কল্যাণ বা সৎকাজ কি? কোরআন ও হাদীস দ্বারা যা বৈধ তা। যেমনঃ মদ পান হারাম কিন্তু বাইরের দেশ (আমেরিকা) মদপান অপরাধ নয়।
দ্বিতীয় কাজঃ অসৎ কাজে বাধা প্রদান।
নিষেধ নয় বাধা।
বাধা দানের তিনটি পর্যায়- 
হাদীসঃ রাসূল (সাঃ) বলেন হে ঈমানদারগণ তোমাদের কেউ যখন কোন অন্যায় ও অপরাধ হতে দেখবে তখন হাত ---- কথা --- অন্তর
অসৎ কাজে বাধা না দেবার পরিণামঃ
রাসূল (সাঃ) বলেন, যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ তোমরা সৎকাজের আদেশ ও মন্দ কাজ হতে কারণ করতে থাক। নতুবা আল্লাহ অতিসত্ত্বরই তোমাদের উপর তার শাস্তি অবতীর্ণ করবেন। অতঃপর তোমরা (তা থেকে বাচার জন্য) দোয়া করবে কিন্তু তা কবুল করা হবেনা। (আবুদাউদ)
দাওয়াতের এ কাজ সার্বজনীনঃ
নবী রাসূলের মিশন দাওয়ান।
                        ----------------------------------------------------------------------------------
                        '' শুধু নিজে শিক্ষিত হলে হবেনা, প্রথমে বিবেকটাকে শিক্ষিত করুন। ''

দারসুল কোরআন বিষয়ঃ - শাহাদাত

                                                     বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

দারসুল কোরআন বিষয়ঃ - শাহাদাত


ولا تقولوا لمن يقتل فى سبيل الله اموات- بل احياء ولكن لا تشعرون- (سورة البقرة) 
ولا تحسبن الذين قتلوا فى سبيل الله امواتا- بل احياء عند ربهم يرزقون-(سورة ا عمران) 
অনুবাদঃ (১) যারা আল্লাহর পথে নিহত (শহীদ) হয় , তাদেরকে মৃত বলোনা। বরং তারা জীবিত। (আল বাকারা-১৫৪)
(২) আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদের মৃত মনে করোনা। বরং তারা জীবিত ও তাদের রবের নিকট থেকে রিজিক প্রাপ্ত। (আলে ইমরান-১৬৯)
নামকরন ঃ- 
নাযিলের সময়কাল ঃ-
আলোচ্য বিষয় ঃ-

আলোচ্য আয়াত দুটিতে আল্লাহর পথে শাহাদাত বরনকারীদের বিশেষ মর্যাদার কথা বলা হয়েছে।
১ = শহীদরা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে ও পৃথিবীতে অমরত্ব লাভ করে। 
২ = আর পরপারে যাওয়ার সাথে সাথেই আল্লাহ তাদের মেহমান হিসেবে গ্রহন করেন। 
৩ = তারা জান্নাতে আল্লাহর নিকট থেকে রিজিক প্রাপ্ত। 
ব্যাখ্যা- 
শাহাদাত শব্দের অর্থ 
শাহাদাত শব্দটি আরবী এর অর্থ হলো সাক্ষ্য দেয়া, উপস্থিত হওয়া বা সফলতা লাভ করা। ইসলামে এ শব্দটি তাদের জন্য ব্যবহ্রত হয় যারা আল্লাহর দ্বীন কায়েমের পথে জীবন দান করেন। 
মৃত্যুর প্রকার ঃ- 
সাধারনত মৃত্যু তিন প্রকারের-
ক = স্বাভাবিক মৃত্যু।
খ = অস্বাভাবিক মৃত্যু বা দুর্ঘটনায় মৃত্যু।
গ = শাহাদাতের মৃত্যু।
এ তিন প্রকার মৃত্যুর মধ্যে সর্ব্বোত্তম মৃত্যু হলো শাহাদাতের মৃত্যু।
চার প্রকার লোকের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ঃ- আল্লাহ রাব্বুল আলামীন চার প্রকার লোকের প্রতি অনুগ্রহ বা তার নিয়ামত প্রদানের কথা বলেছেন্ তন্মধ্যে এক প্রকার হলো দ্বীনের জন্য যারা শাহাদাত বরণ করেন।
﴿وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَٰئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللّعَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَٰئِكَ رَفِيقًا﴾অর্থ ঃ- আর যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসুলের হুকুম মান্য করবে, তা হলে যাদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন , সে তাদের সঙ্গী হবে। তারা হলেন নবী, সিদ্দিক, শহীদ ও সৎ কর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই হলো উত্তম। (সুরা নিসা ৬৯) 
শহীদি মৃত্যুর জন্য পুরস্কার ঃ-
ক = অনন্ত-অসীম জীবন লাভ।
খ = মহান রবের ক্ষমা।
গ = সন্মান ও মর্যাদার অকল্পণীয উচ্ছতা।
ঘ = আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের রিযিক প্রাপ্তি।
ঙ = তাদের যে সব উত্তরসুরী দুনিয়াতে জিহাদে নিয়োজীত তাদের জন্য তারা আনন্দ প্রকাশ করে।
চ = তারা সর্বদা জান্নাতে আনন্দমুখর থাকবেন।
ছ = মহান রবের সান্নিধ্য।
জ = শহীদরা সমগ্র জান্নাত ঘুরে বেড়াতে পারবেন।
কারা শাহাদাত বরণ করতে পারে ঃ-
শাহাদাতের মৃত্যু আল্লাহ সকলকে দান করেন না। বরং আল্লাহ তার বাগান থেকে যে ফুলটিকে বেশী ভালোবাসেন/ পছন্দ করেন সেটিই তিনি গ্রহন করেন। 
শহীদি মৃত্যুর জন্য যুগের শ্রেষ্ঠ মুজাহিদ ব্যক্তিরা আল্লাহর নিকট দোয়া করতেন। যেমন চার খলিফার মধ্যে হযরত আবু বকর (রাঃ) ছাড়া বাকি তিনজন খলিফাই শাহাদাতের মৃত্যু লাভ করেন। রাসুল (সাঃ) আল্লাহর নিকট শহীদি মৃত্যু কামনা করতেন। কারন এই মৃত্যু- মৃত্যু নয়, বরং এটাই পরকালের মুমিন জীবনের সর্ব্বোচ্ছ চাওয়া-পাওয়া।
আল্লাহ তাদেরকেই শহীদি মৃত্যু দিবেন যারা-
ক = আল্লাহর পছন্দনীয় কিছু মুমিন বান্দাকে-
আল্লাহ বলেন-وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَيَتَّخِذَ مِنكُمْ شُهَدَاءَ ۗ
অর্থাৎ ঃ- আর তিনি তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোককে শহীদ হিসেবে গ্রহন করতে চান। (আলে ইমরান-১৪০)
খ = যরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বেশী পেরেশান-
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْرِي نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ 
অর্থাৎ ঃ- আর মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জীবন বাজী রাখে। (বাকারা-২০৭)
গ = দ্বীন কায়েমের জন্য কিছু লোক শহীদ হবেন আর কিছু লোক অসমাপ্ত দ্বীনের জন্য অপেক্ষা করবেন- 
যেমন আল্লাহ বলেন-
مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ ۖفَمِنْهُم مَّن قَضَىٰ نَحْبَهُ وَمِنْهُم مَّن يَنتَظِرُ ۖ وَمَا بَدَّلُواتَبْدِيلً
اঅর্থাৎ ঃ- মুমিনদের মধ্যে কিছু বান্দা কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যু বরণ করেছে এবং কেউ কেউ মৃত্যুর জন্য প্রতিক্ষা করছে। তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি। (আহযাব-২৩)
শহীদি মৃত্যুর ফজিলত ঃ-
কোরআন ও হাদিসে শহীদি মৃত্যুর অনেক ফজিলতের বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন-
ক = তারা তাদের আমলের পূর্ণ প্রতিদান পাবেন।
আল্লাহ বলেন-
وَالَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَلَن يُضِلَّ أَعْمَالَهُمْ
অর্থাৎ ঃ- আর যারা আল্লাহর পথে জীবন দিবে আল্লাহ কখনো তাদের আমল নষ্ট করবেন না। (মুহাম্মাদ-৪)
খ = তাদের সকল গুনাহ মাফ। 
শহীদের রক্তের ফোঁটা মাটিতে পড়ার সাথে সাথেই মহান আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেন। শুধু দেনা ব্যাতিত। ( মুসলিম)
গ = মুলত শাহাদাত হলো ঈমানী পরীক্ষার চূড়ান্ত স্তর। শাহাদাতের উদ্দেশ্য হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও গুনাহ মাফ-
আল্লাহ বলেন-
فَالَّذِينَ هَاجَرُوا وَأُخْرِجُوا مِن دِيَارِهِمْ وَأُوذُوا فِي سَبِيلِي وَقَاتَلُوا وَقُتِلُوا لَأُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْْ অর্থাৎ ঃ- যারা আমার জন্য হিজরত করেছে, নিজের ঘর-বাড়ী থেকে বহিস্কৃত ও নির্যাতিত হয়েছে এবং আমারই পথে লড়াই করে নিহত হয়েছে, আমি তাদের সকল অপরাধ মাফ করে দেব। (আলে ইমরান-১৯৫)
ঘ = শহীদদের কবরে কোন প্রকার আজাব হবে না। এবং তাদের মৃত দেহ কোনভাবেই নষ্ট হবে না।
রাসুল (সাঃ) শহীদদের দিকে সম্বোধন করে বলেন-
তাদেরকে রক্তাক্ত দাফন কর। (বুখারী)
ঙ = শহীদরা তাদের বংশধরদের জন্য সুপারিশকারী হবেন। 
হাদীসের ভাষায়-
= ويشفع فى سبعين من اقربائه-
শহীদরা তাদের আওলাদদের ৭০ জনকে গুনাহ মাফ করে জান্নাতবাসী করার সুপারিশের সুযোগ পাবে। ( সুনানু আবু দাউদ) 
মুমিনের করণীয় ঃ- 
মুমিনের সার্বক্ষনিক কামনা থাকবে শহীদি মৃত্যু লাভ করা। রাসুল (সাঃ) আল্লাহর পথে শহীদ হওয়ার প্রবল আকাঙ্খা পোষন করতেন। তিনি তার এই দুর্ণিবার আকাঙ্খার কথা ব্যক্ত করেছেন এ ভাষায়- 
“কসম সেই সত্তার যার মুষ্টিবদ্ধ আমার প্রান। আমার বড় সাধ আল্লাহর পথে নিহত হই, আবার জীবন লাভ করি, আবার নিহত হই, আবার জীবিত হই, আবার নিহত হই, আবার জীবিত হই, আবার শহীদ হই”। (বুখারী)
শহীদ্দের অপরাধ ঃ-
কি অপরাধে শহীদদের কে হত্যা করা হয় তা আমরা জানতে পারি কুরআনের ভাষায়-
= ومانفموا منهم الا ان يؤمنوا بالله العزيز الحميد- الذى له ملك السموات والارض-
অর্থাৎ ঃ- তাদের কাছ থেকে তারা কেবল একটি কারনেই প্রতিশোধ নিয়েছে, আর তা হচ্ছে তারা সেই মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর উপর ঈমান এনেছিল। যিনি সপ্রশংসিত ও আসমান জমিনের মালিক। (আল বুরুজ ৮-৯)
শহীদ বলার জন্য কয়েকটি শর্ত ঃ-
যে কোন নিহত ব্যক্তিকে শহীদ বলা যাবেনা। এর জন্য কয়েকটি শর্ত প্রযোজ্য-
১ = তাকে প্রথমেই মুমিন হতে হবে।
২ = তাকে নিহত হতে হবে আল্লাহর পথে দ্বীন কায়েমে অংশগ্রহন করে।
৩ = ইসলাম কিংবা ইসলামী রষ্ট্রের হেফাজতের কাজে অংশগ্রহন করে।
কিয়ামতের দিন শহীদরা কিভাবে উঠবে ঃ-
কিয়ামতের দিন শহীদরা তাজা রক্ত নিয়ে উঠবেন। রাসুল (সাঃ) বলেন-যে, ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে, কিয়ামতের দিন সে আঘাত নিয়েই উঠবে এবং ক্ষত স্থান থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে এবং রং হবে রক্তের মতই, কিন্তু মিশকের মত সুগন্ধিযুক্ত। (বুখারী-মুসলিম)
শিক্ষা ঃ-
১. যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয় তারা অমর।
২. শহীদরা জান্নাতে আল্লাহর মেহমান হিসেবে থাকবে।
৩. শহীদদের সকল অপরাদ ক্ষমা করে দিবেন।
৪. শহীদ হওয়ার সাথে সাথে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে।
৫. শাহাদাৎ হলো ঈমানের পরীক্ষা।
৬. শহীদরা কিয়ামতের ময়দানে তার পরিবারের জন্য সুপারিশ করবে।
= দ্বীন কায়েমের জন্য কিছু লোক শহীদ হবেন আর কিছু লোক অসমাপ্ত দ্বীনের জন্য অপেক্ষা করবেন-
                           ----------------------------------------------------------------------------------
                          '' শুধু নিজে শিক্ষিত হলে হবেনা, প্রথমে বিবেকটাকে শিক্ষিত করুন। ''
Widget ByBlogger Maruf
Widget ByBlogger Maruf