রবিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

দারসুল কোরআন বিষয়ঃ - শাহাদাত

                                                     বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

দারসুল কোরআন বিষয়ঃ - শাহাদাত


ولا تقولوا لمن يقتل فى سبيل الله اموات- بل احياء ولكن لا تشعرون- (سورة البقرة) 
ولا تحسبن الذين قتلوا فى سبيل الله امواتا- بل احياء عند ربهم يرزقون-(سورة ا عمران) 
অনুবাদঃ (১) যারা আল্লাহর পথে নিহত (শহীদ) হয় , তাদেরকে মৃত বলোনা। বরং তারা জীবিত। (আল বাকারা-১৫৪)
(২) আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদের মৃত মনে করোনা। বরং তারা জীবিত ও তাদের রবের নিকট থেকে রিজিক প্রাপ্ত। (আলে ইমরান-১৬৯)
নামকরন ঃ- 
নাযিলের সময়কাল ঃ-
আলোচ্য বিষয় ঃ-

আলোচ্য আয়াত দুটিতে আল্লাহর পথে শাহাদাত বরনকারীদের বিশেষ মর্যাদার কথা বলা হয়েছে।
১ = শহীদরা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে ও পৃথিবীতে অমরত্ব লাভ করে। 
২ = আর পরপারে যাওয়ার সাথে সাথেই আল্লাহ তাদের মেহমান হিসেবে গ্রহন করেন। 
৩ = তারা জান্নাতে আল্লাহর নিকট থেকে রিজিক প্রাপ্ত। 
ব্যাখ্যা- 
শাহাদাত শব্দের অর্থ 
শাহাদাত শব্দটি আরবী এর অর্থ হলো সাক্ষ্য দেয়া, উপস্থিত হওয়া বা সফলতা লাভ করা। ইসলামে এ শব্দটি তাদের জন্য ব্যবহ্রত হয় যারা আল্লাহর দ্বীন কায়েমের পথে জীবন দান করেন। 
মৃত্যুর প্রকার ঃ- 
সাধারনত মৃত্যু তিন প্রকারের-
ক = স্বাভাবিক মৃত্যু।
খ = অস্বাভাবিক মৃত্যু বা দুর্ঘটনায় মৃত্যু।
গ = শাহাদাতের মৃত্যু।
এ তিন প্রকার মৃত্যুর মধ্যে সর্ব্বোত্তম মৃত্যু হলো শাহাদাতের মৃত্যু।
চার প্রকার লোকের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ঃ- আল্লাহ রাব্বুল আলামীন চার প্রকার লোকের প্রতি অনুগ্রহ বা তার নিয়ামত প্রদানের কথা বলেছেন্ তন্মধ্যে এক প্রকার হলো দ্বীনের জন্য যারা শাহাদাত বরণ করেন।
﴿وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَٰئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللّعَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَٰئِكَ رَفِيقًا﴾অর্থ ঃ- আর যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসুলের হুকুম মান্য করবে, তা হলে যাদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন , সে তাদের সঙ্গী হবে। তারা হলেন নবী, সিদ্দিক, শহীদ ও সৎ কর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই হলো উত্তম। (সুরা নিসা ৬৯) 
শহীদি মৃত্যুর জন্য পুরস্কার ঃ-
ক = অনন্ত-অসীম জীবন লাভ।
খ = মহান রবের ক্ষমা।
গ = সন্মান ও মর্যাদার অকল্পণীয উচ্ছতা।
ঘ = আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের রিযিক প্রাপ্তি।
ঙ = তাদের যে সব উত্তরসুরী দুনিয়াতে জিহাদে নিয়োজীত তাদের জন্য তারা আনন্দ প্রকাশ করে।
চ = তারা সর্বদা জান্নাতে আনন্দমুখর থাকবেন।
ছ = মহান রবের সান্নিধ্য।
জ = শহীদরা সমগ্র জান্নাত ঘুরে বেড়াতে পারবেন।
কারা শাহাদাত বরণ করতে পারে ঃ-
শাহাদাতের মৃত্যু আল্লাহ সকলকে দান করেন না। বরং আল্লাহ তার বাগান থেকে যে ফুলটিকে বেশী ভালোবাসেন/ পছন্দ করেন সেটিই তিনি গ্রহন করেন। 
শহীদি মৃত্যুর জন্য যুগের শ্রেষ্ঠ মুজাহিদ ব্যক্তিরা আল্লাহর নিকট দোয়া করতেন। যেমন চার খলিফার মধ্যে হযরত আবু বকর (রাঃ) ছাড়া বাকি তিনজন খলিফাই শাহাদাতের মৃত্যু লাভ করেন। রাসুল (সাঃ) আল্লাহর নিকট শহীদি মৃত্যু কামনা করতেন। কারন এই মৃত্যু- মৃত্যু নয়, বরং এটাই পরকালের মুমিন জীবনের সর্ব্বোচ্ছ চাওয়া-পাওয়া।
আল্লাহ তাদেরকেই শহীদি মৃত্যু দিবেন যারা-
ক = আল্লাহর পছন্দনীয় কিছু মুমিন বান্দাকে-
আল্লাহ বলেন-وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَيَتَّخِذَ مِنكُمْ شُهَدَاءَ ۗ
অর্থাৎ ঃ- আর তিনি তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোককে শহীদ হিসেবে গ্রহন করতে চান। (আলে ইমরান-১৪০)
খ = যরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বেশী পেরেশান-
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْرِي نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ 
অর্থাৎ ঃ- আর মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জীবন বাজী রাখে। (বাকারা-২০৭)
গ = দ্বীন কায়েমের জন্য কিছু লোক শহীদ হবেন আর কিছু লোক অসমাপ্ত দ্বীনের জন্য অপেক্ষা করবেন- 
যেমন আল্লাহ বলেন-
مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ ۖفَمِنْهُم مَّن قَضَىٰ نَحْبَهُ وَمِنْهُم مَّن يَنتَظِرُ ۖ وَمَا بَدَّلُواتَبْدِيلً
اঅর্থাৎ ঃ- মুমিনদের মধ্যে কিছু বান্দা কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যু বরণ করেছে এবং কেউ কেউ মৃত্যুর জন্য প্রতিক্ষা করছে। তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি। (আহযাব-২৩)
শহীদি মৃত্যুর ফজিলত ঃ-
কোরআন ও হাদিসে শহীদি মৃত্যুর অনেক ফজিলতের বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন-
ক = তারা তাদের আমলের পূর্ণ প্রতিদান পাবেন।
আল্লাহ বলেন-
وَالَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَلَن يُضِلَّ أَعْمَالَهُمْ
অর্থাৎ ঃ- আর যারা আল্লাহর পথে জীবন দিবে আল্লাহ কখনো তাদের আমল নষ্ট করবেন না। (মুহাম্মাদ-৪)
খ = তাদের সকল গুনাহ মাফ। 
শহীদের রক্তের ফোঁটা মাটিতে পড়ার সাথে সাথেই মহান আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেন। শুধু দেনা ব্যাতিত। ( মুসলিম)
গ = মুলত শাহাদাত হলো ঈমানী পরীক্ষার চূড়ান্ত স্তর। শাহাদাতের উদ্দেশ্য হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও গুনাহ মাফ-
আল্লাহ বলেন-
فَالَّذِينَ هَاجَرُوا وَأُخْرِجُوا مِن دِيَارِهِمْ وَأُوذُوا فِي سَبِيلِي وَقَاتَلُوا وَقُتِلُوا لَأُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْْ অর্থাৎ ঃ- যারা আমার জন্য হিজরত করেছে, নিজের ঘর-বাড়ী থেকে বহিস্কৃত ও নির্যাতিত হয়েছে এবং আমারই পথে লড়াই করে নিহত হয়েছে, আমি তাদের সকল অপরাধ মাফ করে দেব। (আলে ইমরান-১৯৫)
ঘ = শহীদদের কবরে কোন প্রকার আজাব হবে না। এবং তাদের মৃত দেহ কোনভাবেই নষ্ট হবে না।
রাসুল (সাঃ) শহীদদের দিকে সম্বোধন করে বলেন-
তাদেরকে রক্তাক্ত দাফন কর। (বুখারী)
ঙ = শহীদরা তাদের বংশধরদের জন্য সুপারিশকারী হবেন। 
হাদীসের ভাষায়-
= ويشفع فى سبعين من اقربائه-
শহীদরা তাদের আওলাদদের ৭০ জনকে গুনাহ মাফ করে জান্নাতবাসী করার সুপারিশের সুযোগ পাবে। ( সুনানু আবু দাউদ) 
মুমিনের করণীয় ঃ- 
মুমিনের সার্বক্ষনিক কামনা থাকবে শহীদি মৃত্যু লাভ করা। রাসুল (সাঃ) আল্লাহর পথে শহীদ হওয়ার প্রবল আকাঙ্খা পোষন করতেন। তিনি তার এই দুর্ণিবার আকাঙ্খার কথা ব্যক্ত করেছেন এ ভাষায়- 
“কসম সেই সত্তার যার মুষ্টিবদ্ধ আমার প্রান। আমার বড় সাধ আল্লাহর পথে নিহত হই, আবার জীবন লাভ করি, আবার নিহত হই, আবার জীবিত হই, আবার নিহত হই, আবার জীবিত হই, আবার শহীদ হই”। (বুখারী)
শহীদ্দের অপরাধ ঃ-
কি অপরাধে শহীদদের কে হত্যা করা হয় তা আমরা জানতে পারি কুরআনের ভাষায়-
= ومانفموا منهم الا ان يؤمنوا بالله العزيز الحميد- الذى له ملك السموات والارض-
অর্থাৎ ঃ- তাদের কাছ থেকে তারা কেবল একটি কারনেই প্রতিশোধ নিয়েছে, আর তা হচ্ছে তারা সেই মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর উপর ঈমান এনেছিল। যিনি সপ্রশংসিত ও আসমান জমিনের মালিক। (আল বুরুজ ৮-৯)
শহীদ বলার জন্য কয়েকটি শর্ত ঃ-
যে কোন নিহত ব্যক্তিকে শহীদ বলা যাবেনা। এর জন্য কয়েকটি শর্ত প্রযোজ্য-
১ = তাকে প্রথমেই মুমিন হতে হবে।
২ = তাকে নিহত হতে হবে আল্লাহর পথে দ্বীন কায়েমে অংশগ্রহন করে।
৩ = ইসলাম কিংবা ইসলামী রষ্ট্রের হেফাজতের কাজে অংশগ্রহন করে।
কিয়ামতের দিন শহীদরা কিভাবে উঠবে ঃ-
কিয়ামতের দিন শহীদরা তাজা রক্ত নিয়ে উঠবেন। রাসুল (সাঃ) বলেন-যে, ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে, কিয়ামতের দিন সে আঘাত নিয়েই উঠবে এবং ক্ষত স্থান থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে এবং রং হবে রক্তের মতই, কিন্তু মিশকের মত সুগন্ধিযুক্ত। (বুখারী-মুসলিম)
শিক্ষা ঃ-
১. যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয় তারা অমর।
২. শহীদরা জান্নাতে আল্লাহর মেহমান হিসেবে থাকবে।
৩. শহীদদের সকল অপরাদ ক্ষমা করে দিবেন।
৪. শহীদ হওয়ার সাথে সাথে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে।
৫. শাহাদাৎ হলো ঈমানের পরীক্ষা।
৬. শহীদরা কিয়ামতের ময়দানে তার পরিবারের জন্য সুপারিশ করবে।
= দ্বীন কায়েমের জন্য কিছু লোক শহীদ হবেন আর কিছু লোক অসমাপ্ত দ্বীনের জন্য অপেক্ষা করবেন-
                           ----------------------------------------------------------------------------------
                          '' শুধু নিজে শিক্ষিত হলে হবেনা, প্রথমে বিবেকটাকে শিক্ষিত করুন। ''

কোন মন্তব্য নেই:

Comment here />

Widget ByBlogger Maruf
Widget ByBlogger Maruf