নামাজ/রোজা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
নামাজ/রোজা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৯

প্রশ্নঃ মুসলমানের যেখানে এক এবং একই কুরআনের অনুসারী তাহলে মুসলমানদের মধ্যে এত বিভক্তি এবং চিন্তাদারার এত বিভিন্নতা কেন?

প্রশ্নঃ মুসলমানের যেখানে এক এবং একই কুরআনের অনুসারী তাহলে মুসলমানদের মধ্যে এত বিভক্তি এবং চিন্তাদারার এত বিভিন্নতা কেন?


ক. মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকা উচিৎ

এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, আজকের মুসলিমরা নিজেদের মধ্যেই অসংখ্য ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে। আর তার চাইতেও দুঃখজনক হলো এই বিভক্তি খোদ ইসলামের দ্বারা আদৌ স্বীকৃত নয়। ইসলাম বিশ্বাস করে তার অনুসারীদের মধ্যে ঐক্য এবং একতার লালন করতে। জ্যোতির্ময়ী কুরআন বলছেঃ
এবং আকড়ে ধরো দৃঢ়তার সাথে সবাই মিলে আল্লাহর রজ্জুকে (যা তিনি ঝুলিয়ে রেখেছেন তোমাদের জন্য কুরআনের আকারে) এবং নিজেরা বিভক্ত হয়ে যেও না।” [৩:১০৩-১০৫]
এ আয়াতে যে রজ্জুর কাথা বলা হয়েছে সে রজ্জু কি বা কোন রজ্জু? জ্যোতীর্ময় কুরআন, মহাবিজ্ঞান আল কুরআনই সেই আল্লাহর রজ্জু যা সকল মুসলমানের সম্মিলিতভাবে ধরে রাখা উচিত। ঐক্যের ব্যাপারে দ্বিগুন গুরুত্ব দেয় হয়েছে। অর্থাৎ সবাই মিলে শক্ত করে ধরো বলার সাথে সাথেই বলা হয়েছে বিভক্ত হয়ো না। কুরআন আরো বলছেঃ “আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রাসূলের।” [৪:৫৯]
সকল মুসলমানের কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদূসসমূহ অনুসরণ করা কর্তব্য এবং নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হওয়া উচিত নয়।

খ. ফের্কাবাজী ও বিভক্তি ইসলামে নিষিদ্ধ

জ্যোতির্ময় কুরআন বলছেঃ
যারা নিজেদের দ্বীনকে খন্ড খন্ড করে দিয়েছে এবং দলে দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে তাদের সাথে তোমার এতটুকু সম্পর্ক নেই। তাদের এসব ব্যাপার আল্লাহ কাছে ন্যাস্ত। অবশেষে তাদেরকে তিনি বলে দেবেন সেই সব সম্পর্কে যেসব কাজ তারা করছিল। [সূরা আনআমঃ১৫৯]
এ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, তাদের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে যারা তাদের দ্বীনকে বিভক্ত করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু কেউ যখন কোনো মুসলমানকে জিজ্ঞেস করে তুমি কে? সাধারণ উত্তর হলো, আমি একজন সুন্নি অধবা আমি শিয়া। অনেকেই নিজেদেরকে হানাফী অথবা শা’ফী অথবা মালেকী অথবা হাম্বলী ইত্যাদি হিসেবে পরিচিত হতে গর্ববোধ করেন। কেউ আবার দেওবন্দী। কেউ ব্রেলোভী।

গ. আমাদের রাসূল ছিলেন একজন মুসলিম

এ ধরনের একজন মুসলমানকে কেউ যদি প্রশ্ন করে আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) কি ছিলেন? তিনি কি একজন হানাফী কথবা শাফী অথাবা হাম্বলী ছিলেন? না! তিনি ছিলেন একজন মুসলিম। তাঁর পূর্বে আগত আল্লাহর সকল নবী ও রাসূলগণের মতো। যেমন সূরা নিসা ৫২ নং আয়াতে বলা হয়েছে-ঈসা (আ) ছিলেন একজন মুসলিম। ৬৭ আয়াতে বলা হয়েছে- ইব্রাহীম না ইহুদী ছিল না খ্রীষ্টান, সে ছিল একজন মুসলমান।

ঘ. কুরআন বলছে নিজেদেরকে মুসলিম বলে পরিচয় দাও

কেউ পরিচয় জানতে চাইলে তার বলা উচিত আমি একজন মুসলিম-না হানাফী না শাফী।
“আর কে হতে পারে বক্তব্যে তার চাইতে উত্তম? যে (মানুষকে) আল্লাহর পথে আহ্‌বান করে আর যাবতীয় জীবন কর্ম যেভাবে আল্লাহ করতে বলেছেন সেভাবে করে এবং বলে আমি তো আল্লাহতে সমর্পিতদের একজন।” (মুসলিম) (৪১:৩৩)
কুরআন বলে আমি তাদেরই একজন যারা আল্লাহতে সমর্পিত। অন্য কথায় বলো, আমি একজন মুসলিম।
২. রাসূলুল্লাহ (স) অমুসলিম রাজা বাদশাহদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। সেই সব চিঠিতে তিনি সুরা আলে ইমরানের এই আয়াত উল্লেখ করেছিলেন। তাহলে বলে দিন ওদেরকে তোমরা সাক্ষী থাকো একথার যে আমরা (কিন্তু) সর্বান্তকরনে আল্লাহতে আত্মসর্ম্পনকারী ‘মুসলিম’। (৩:৬৪)

ঙ. ইসলামের মহান ইমামগণের প্রতি শ্রদ্দা ও সম্মান

ইসললামের ইতিহাসে মহান ইমাম ও আলেমগনের প্রতি আমাদের সম্মানবোধ আন্তরিক হতে হবে। তাঁদের জীবন নিংড়ানো জ্ঞান সাধনা মুসলিম জাতিকে জ্ঞান সম্পদে সম্পদশালী করেছে। নিঃসন্দেহে আল্লাহর দরবারে তাঁরা পুরুষকৃত হবেন। সাধারণের মধ্যে কিউ যদি বিশেষ কোনো ইমামের রীতি পদ্ধতি অনুসরণ করেন, সেটা অবশ্যই দোষের কিছু নয়। কিন্তু পরিচয়ের ক্ষেত্রে তাদের কারো নাম জড়িয়ে পরিচয় দেয়া এক ধরনের সংকীর্ণতার প্রকাশ। যেমনটা করতে তাঁরা কেউ বলে জাননি। নবী রাসূলগনের মতো তাঁরাও ছিলেন শুধুমাত্র আল্লাহতে সমর্পিত মুসলিম। কাজেই তাঁদের কারো অনুসারী হলেই পরিচয় বদলে যায় না। মুসলমানদের পরিচয় একটাই তারা মুসলিম।
অনেকেই হয়তো তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংকীর্ণ মানসিকতাকে চাপা দেবার জন্য সুনানে আবু দাউদে বর্নিত ৪৫৭৯ নং হাদীস খানি নিয়ে তর্কে লাফিয়ে পড়বেন। যা রাসূল (স) বলেছেন, আমার উম্মত ৭৩টি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে। কিন্তু এ হাদীসখানি রাসূল (স) তাঁর উম্মতের অধঃপতনের চূড়ান্ত পর্যায়ে যেসব বিকৃতি দেখা দেবে তারই অন্যতম একটি আগাম বার্তা বহন করছে। তিনি তো একথা বলেননি। যে মুসলমানরা এভাবে ফের্কায় ফের্কায় ভাগ হয়ে যেতে হবে। কুরআন যেখানে আমাদেরকে আদেশ করছে কোনো বিভক্তির সৃষ্টি করা যাবে না। অতএব যারা কুরআন ও শুদ্ধ হাদিস সমূহের একনিষ্ঠ অনুসারী এবং কোনো ধরনের বিচ্ছিন্নতার না কারণ হয় না কাউকে উৎসাহিত করে তারাই সঠিক পথে রয়েছেন।
রাসূল (স) বলেছেনঃ আমার উম্মত ৭৩ ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে। এর মধ্যে শুধু একটি ছাড়া বাদ বাকি সব জাহান্নামী হবে। সাহবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ সেই শুদ্ধ দল কোনটি হবে? রাসূল (স) বললেন, “যাদের কাছে আমি এবং আমার সঙ্গী সাথীরা অনুসরণীয় হবো। (তিরমিযির ১৭১)
“আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রাসূলের” কুরআনের বহু জায়গায় এই একটি কথা মুসলমানদের মনের মধ্যে স্থায়ী ভাবে বসিয়ে দেবার জন্য নানান ভাবে বলে দেয়া হয়েছে। কাজেই একজন মুসলমানের অনুস্মরনীয় আদর্শ হচ্ছে কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীস। তারপর এ দুয়ের নির্দেশনা সমূহকে অনুশীলনীর পদ্ধতি হিসেবে সে যদি কোনো বিশেষ আলেমকে অনুসরণ করতে চায় তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু তা যদি আবার কোনো এক পর্যায়ে গিয়ে খোদ কুরআন ও হাদীসের বিরুদ্ধে চলে যায় তাহলে তা যত বড় বিশেষজ্ঞ আলেমই হোকনা কেন্ দুই কড়ি মূল্য রাখেন না।
প্রতিটি মুসলমান যদি তার সামর্থ অনুযায়ী কুরআন বুঝে পড়ার অনুশীলনী করে এবং সেখান থেকে পাওয়া মূলনীতিসমূহ খোদ রাসূল (স) এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি অনুযায়ী বাস্তবায়নের চেষ্টা করে তাহলে ইনশাআল্লাহ একদিন এই বিভক্তি দূর হয়ে যাবে এবং আমরা ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী এক ‘উম্মাহ’ হয়ে আত্মপ্রকাশকরতে সমক্ষ হবো।

                          ----------------------------------------------------------------------------------
                         '' শুধু নিজে শিক্ষিত হলে হবেনা, প্রথমে বিবেকটাকে শিক্ষিত করুন। ''
বিজ্ঞাপনের জন্য

আল-কোরআনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কায়েমের নির্দেশ আছে কি ???

আল-কোরআনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কায়েমের নির্দেশ আছে কি?














নামাজ সম্পর্কিত কুরআনের ৯ আয়াত
১. তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। আর নিঃসন্দেহে তা বড়ই কঠিন- বিনীতদের জন্যে ছাড়া । ( সুরাহ বাকারাহ ২: ৪৫)
২. বল, নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎ সমূহের প্রতি পালক আল্লাহর জন্যে। (সুরাহ আনয়াম ৫:১৬২)

৩. তোমরা সালাত সমূহের প্রতি এবং ( বিশেষ করে ) মধ্যবর্তী সালাতের প্রতি যত্ন বান হও, এবং আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্যে একান্ত অনুগত অবস্থায় দাড়াও। (সুরাহ বাকারাহ ২:২৩৮)

৪. আমি যদি তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করি (ক্ষমতা ওঁ সম্পদ দ্বারা) তাহলে তারা সালাত কায়েম করবে, সৎ কাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করবে, আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহর (নিকট) (সুরাহ হাজ ২২:৪১)

৫.( হে নারী) তুমি পাঠ করো তোমার প্রতি যে কিতাব ওহী করা হয়েছে তা থেকে এবং সালাত কায়েম করো। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করে। এবং আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ। আর তোমরা যা করো আল্লাহ তা জানেন। (সুরাহ ‘আনকাবুত ২৯: ৪৫)

৬. এবং তুমি সালাত কায়েম কর দিনের দুই দিনের দুই প্রান্তে ও রাতের প্রথমাংশে। নিশ্চয় ভালো কাজ মন্দ কাজকে মিটিয়ে দেয়। উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্যে এটি এক উপদেশ। (সুরাহ হুদ ১১: ১১৪)

৭. অতঃপর যখন তোমরা সালাত সমাপ্ত করবে তখন দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহ কে স্মরণ করো, অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ বোধ করবে তখন পুরনাঙ্গ) সালাত কায়েম কর, নিশ্চয় সালাত মু’মিনদের ওপর একটি সময় নির্ধারণ ফরয। (সুরাহ নিসা ৪:১০৩)

৮. সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে রাতের ঘন অন্ধকার পর্যন্ত কায়েম করো এবং কায়েম কর ফরজের কুরআন পাঠও (অর্থাৎ সালাতুল ফরজ)। নিশ্চয় ফজরের পাঠ ( সালাতুল ফরজ) প্রত্যক্ষ করা হয়। (সুরাহ বানী ইসরাইল ১৭:৭৮)
৯. ওহে যারা ঈমান এনেছ! জুমু‘আর দিনে যখন তোমাদের কে সালাতের জন্যে ডাকা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও এবং ক্রয় বিক্রয় পরিত্যাগ কর। এটি তোমাদের জন্যে উত্তম –যদি তোমরা জানতে। (সুরাহ জুমু‘আ ৬২: ৯)

নামাজ সম্পর্কিত রাসুলুল্লাহ সা. এর ৬ হাদিস

১) হজরত উম্মি ফারওয়াহ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী কারিম (সা.) কে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, সবচেয়ে মর্যাদাবান ‘আমল কোনটি? তিনি বলেন, ওয়াক্তের প্রারম্ভে সালাত আদায় করা। (সুনানু আবী দাঊদ: ৪২৬, জামি’উত তিরমিযী:১৭০)

২) হযরত আবূ হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, মুনাফিকদের কাছে ফজর ও ইশা অপেক্ষা অধিক ভারী কোনো সালাত নেই। আর যদি তারা জানত যে, এতদুভয়ের মধ্যে কী (ফযীলাত) রয়েছে, তাহলে অবশ্যই তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এর জন্যে আসত। (সহীহ বুখারী: ৬৫৭, সহীহ মুসলিম: ৬৫১)

৩) হযরত জাবির (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, বান্দা (আনুগত্য) ও কুফরীর মধ্যে (পার্থক্য) হলো সালাত ত্যাগ করা। (সহীহ মুসলিম:৮২)

৪) হযরত আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের অভিমত কী, যদি তোমাদের কারো দরজায় একটি পানির নহর থাকে যাতে সে দৈনিক পাঁচ বার গোসল করে, তার শরীরে কি কোনো ময়লা অবশিষ্ট থাকতে পারে? তারা (সাহাবীগণ) উত্তরে বললেন, তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে না। রাসূল (সা.) বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উদাহরণ এরূপই। বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা তার অপরাধসমূহ মিটিয়ে দেন। (সহীহ বুখারী: ৫২৮, সহীহ মুসলিম: ৬৬৭)

৫) হযরত আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমার সালাত থেকে অপর জুমার সালাত এবং এক রমযান মাসের সিয়াম হতে অপর রমজান মাসের রোজা সেসব গুনাহের জন্যে কাফফারা হয়, যা এর মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে থাকে; যখন কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হয়। (সহীহ মুসলিম:২৩৩)
৬) হযরত ‘আমর ইবনে শুয়াইব রহ. হতে বর্ণিত। তিনি তার পিতা হতে, তার পিতা তার দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সালাতের জন্যে আদেশ কর, যখন তারা সাত বছর বয়সে পৌঁছাবে। আর যখন তারা দশ বছর বয়সে পৌঁছবে, তখন তাদেরকে সালাতের জন্যে প্রহার কর এবং তাদের শোয়ার স্থান পৃথক করে দাও। (সুনানু আবী দাঊদ: ৪৯৫)
                      ----------------------------------------------------------------------------------
                     '' শুধু নিজে শিক্ষিত হলে হবেনা, প্রথমে বিবেকটাকে শিক্ষিত করুন। ''

কোরআনে সুস্পষ্টভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বর্ণনা ও মিথ্যাচারের জবাব

মহান আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য নবী রসূল পাঠিয়েছেন। যেহেতু মানুষ মরণশীল তাই নবী ও রাসূলগণের চির বিদায়ের পর মানুষ যাতে পথভ্রষ্ট না হয়, তাই মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁদের উপর নাযিল করেছেন আসমানি কিতাব। সৃষ্টির সূচনা থেকে অর্থাৎ হযরত আদম (আঃ) থেকে হযরত মুহাম্মদ (সা:) পর্যন্ত যত নবী রসূল দুনিয়াতে এসেছেন তারা সকলেই একই রিসালাতের বানী প্রচার করেছেন। তাঁরা মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন কিভাবে মহান আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য করতে হবে। আনুগত্যের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে সালাত যা সকল নবী-রাসূলগণের উম্মতের উপর অবশ্য কর্তব্য ছিল এবং আছে। যেমন বাইবেলে আছে:
  • হুকুমে স্বাক্ষর দেওয়া হয়ে গেছে শুনে দানিয়েল তাঁর বাড়ীর উপর তলার ঘরে গেলেন; সেই ঘরের জানলা জেরুজালেমের দিকে খোলা ছিল। তিনি নিজের অভ্যাস মতই দিনে তিনবার হাঁটু পেতে প্রার্থনা করে তাঁর ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন।  (দানি 6:10)
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, পূর্বে নামাজ তিন ওয়াক্ত ফরজ করা হয়েছিল। যেহেতু নবী মুহাম্মদ (সা:)  আখেরি নবী এবং ইসলাম  চূড়ান্ত জীবন বিধান, তাই বান্দার জন্য যা মঙ্গল অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারণ করা হয়েছে। নামাজ যে পাঁচ ওয়াক্ত এ সম্পর্কে পবিত্র কোরানে  বিভিন্ন জায়গায় বলা হয়েছে:
  • অতএব, তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা স্মরণ কর সন্ধ্যায় ও সকালে,এবং অপরাহ্নে ও মধ্য দুপুর  রাতের প্রথম অংশে নভোমন্ডল ও ভূমণ্ডলে, তাঁরই প্রশংসা। ( সূরা রোম, আয়াত-১৭-১৮)
  • আর দিনের দুই প্রান্তেই নামায ঠিক রাখবে, এবং রাতের প্রান্তভাগে পুন্য কাজ অবশ্যই পাপ দূর করে দেয়, যারা স্মরণ রাখে তাদের জন্য এটি এক মহা স্মারক। (সূরা হুদ, আয়াত- ১১৪)
  • সূর্য ঢলে পড়ার সময় থেকে রাত্রির অন্ধকার পর্যন্ত নামায কায়েম করুন এবং ফজরের কোরআন পাঠও। নিশ্চয় ফজরের কোরআন পাঠ মুখামুখি হয়। (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত-৭৮)
  • সুতরাং এরা যা বলে সে বিষয়ে ধৈর্য ধারণ করুন এবং আপনার পালনকর্তার প্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন সূর্যোদয়ের পূর্বে, সূর্যাস্তের পূর্বেএবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন রাত্রির কিছু অংশ ও বাদিভাগে,সম্ভবত: তাতে আপনি সন্তুষ্ট হবেন। (সূরা ত্বহা, আয়াত-১৩০)
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কিভাবে পড়তে হবে তা রসূল আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। নামাজ বান্দার উপর আল্লাহর অধিকার। পবিত্র কোরানে কমপক্ষে দু,শত বার নামাজের হুকুমটি এসেছে। মহান আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে যেমন: ভ্রমণ, অসুস্থতা, সফর ইত্যাদি পরিস্থিতিতে নামাজকে সহজ করে দিয়েছেন অর্থাৎ শিথিল করেছেন। কেননা আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলেছেন, তিনি কারো উপর সাধ্যাতীত কিছু চাপিয়ে দেন না। কিন্তু উপযুক্ত কারণ ছাড়া কেউ এই শিথিলতার সুযোগ নিতে পারবে না। নামাজের ব্যাপারে অবহেলা মারাত্মক অপরাধ। লোক দেখানো নামাজির সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
  • অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাযীর,যারা তাদের নামায সম্বন্ধে বে-খবরযারা তা লোক-দেখানোর জন্য করে (সূরা মাউন, আয়াত-৩-৬)
নামাজ কাফের এবং মুমিনের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশকারী। অর্থাৎ নামাজ ব্যতীত ঈমানের কোনই মূল্য নেই। আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে প্রশ্ন করেছেন, তোমরা কি ভেবেছ শুধু ঈমান এনেই জান্নাতে চলে যাবে?
নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত হওয়ার কিছু কারণঃ আরবি সালাত শব্দটি ফারসিতে নামাজ নামে পরিচিত। সাধারণভাবে সালাত অর্থ হচ্ছে প্রার্থনা করা। কিন্তু সালাত বা নামাজ শুধুমাত্র প্রার্থনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সালাত মানুষের পাপ ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয়, তাকে অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করে। এতে শারীরিক উপকারিতা পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা মুসলিমরা আত্মিক উপকারিতার জন্যেই নামাজ পড়ি। শারীরিক ও মানুষিক উপকারিতা হচ্ছে আমাদের বোনাস।  আমরা জানি, মানুষের মস্তিষ্কে সেই বিষয়টিই বেশী স্থায়ী থাকে যা প্রতিনিয়ত তার সামনে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। যেমন, আমারা টিভিতে দেখতে পাই একই বিজ্ঞাপন বারবার প্রচার করা হচ্ছে। বারবার প্রচার এই জন্যেই করা হয় যাতে বিজ্ঞাপিত পণ্যটির নাম মানুষের মস্তিষ্কে দৃঢ়ভাবে গেঁথে যায়। ফলে সে ঐ পণ্যটি কিনবে। একইভাবে নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত করা হয়েছে যাতে কোরানের শিক্ষা মানুষের সামনে দিনে কমপক্ষে পাঁচবার প্রচার করে তার মস্তিষ্কে দৃঢ়ভাবে গেঁথে দেয়া। তাই নামাজকে মানুষের জন্য প্রোগ্রামিং (Programming)  কথাটাই বেশী যুক্তিযুক্ত।
একটি উদাহরণ দেয়া যাক, যদি নামাজে সন্মানীত ঈমাম এই আয়াতগুলো পড়েন:
وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَآ أُفٍّ وَلاَتَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا
  • অর্থাৎ তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যেতাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়তবে তাদেরকে উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা। তাদের সামনে ভালবাসার সাথেনম্রভাবেমাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তাতাদের উভয়ের প্রতি রহম করযেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত-২৩-২৪)
তাহলে কোন সন্তান তার মা-বাবার সাথে খারাপ আচরণ করার সময়ে নামাজে পঠিত এই আয়াতটির কথা মনে আসবে। তখন তার মধ্যে আল্লাহ ভীতির কারণে সে এই গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকবে। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা কি আমাদের এত সুন্দর বাস্তব শিক্ষা দেয়? এক কথায় প্রচলিত শিক্ষাকে শিক্ষা নয় বরং চাকরী করার ট্রেইনিং বলাই ভাল। সমাজের বহু পিতা মাতার সন্তান উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেও পিতা-মাতার সাথে ভাল আচরণ করে না। যার জন্য সরকার বাধ্য হয়েছে পশ্চিমাদের মত ওল্ড হোম (Old Home) এর ব্যবস্থা করতে যা মুসলমান হিসেবে আমাদের জন্যে নিতান্তই লজ্জার। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদেরকে পেশাজীবী করতে পারে কিন্তু ভাল মানুষ হতে সাহায্য করে না। নামাজের গুরুত্ব বলতে গেলে হাজার হাজার পাতা লিখেও শেষ করা যাবে না।

 কিছু নির্দয় অভিযোগের জবাব: গত দেড় শত বছরে বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি বিজ্ঞানের উন্নয়নে আনন্দিত হন না। কিন্তু এক শ্রেণীর মানুষ রূপী দু’পা বিশিষ্ট শয়তান বিজ্ঞানকে ধর্মের বিরুদ্ধে দাড় করানোর নিরলস চেষ্টায় মগ্ন হয়ে আছে। ভাবখান যেন এমন, বিজ্ঞান তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। এ জ্ঞানপাপী নাস্তিকেরা এখন নতুন এবং সবচেয়ে ভয়ানক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারা মুসলিম ছদ্মনাম ব্যবহার করে ইসলামকে ধ্বংসের পায়তারা করছে। কতিপয় কুখ্যাত চিহ্নিত কিছু নাস্তিক ( নাম প্রকাশ করছি না) মুসলিম বেশে নামাজ নিয়ে পোষ্ট দিয়েছেন। তাতে তারা চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন নামাজ নাকি দুই ওয়াক্ত এবং তা নাকি ফরজ নয়। আর মেরাজে নবী (সা:) বারবার আল্লাহ তায়ালার কাছে নামাজ নিয়ে উপস্থিত হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, আল্লাহ নাকি নিজেও নিশ্চিত ছিলেন না যে, নামাজ কত ওয়াক্ত হবে ( নাউযুবিল্লাহ)। যেখানে আল্লাহ তায়ালা নিজেই নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন ( উপরের আয়াতগুলো দ্রষ্টব্য) সেখানে তাদের এ সমস্ত কথা ভূতের মুখে রাম রাম শোনায়। তাদের ব্যাপারে  আল্লাহ নিজেই বলেছেন:
  • তার চাইতে অধিক জালেম কেযাকে তার পালনকর্তার কালাম দ্বারা বুঝানো হয়অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার পূর্ববর্তী কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়আমি তাদের অন্তরের উপর পর্দা রেখে দিয়েছিযেন তা না বোঝে এবং তাদের কানে রয়েছে বধিরতার বোঝা। যদি আপনি তাদেরকে সৎপথের প্রতি দাওয়াত দেনতবে কখনই তারা সৎপথে আসবে না। (সূরা কাহাফ, আয়াত-৫৭)
অর্থাৎ যে পাপীষ্ট কোরান অস্বীকার করছে, তার হেদায়েত বাতিল হয়ে গেছে। ইসলাম থেকে চির বিদায় নিয়ে যে নাস্তিক হয়, সে দুনিয়ার যে কোন ধর্ম থেকে উঠে আসা নাস্তিকদের চেয়ে হাজার গুন বেয়াদব ও উগ্র। আল্লাহ আমাদের এই সমস্ত জালিমদের থেকে হেফাজত করুন! আমীন.
নামাজ সম্পর্কিত কুরআনের ৯ আয়াত ও ৬ হাদিস
১. তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। আর নিঃসন্দেহে তা বড়ই কঠিন- বিনীতদের জন্যে ছাড়া । ( সুরাহ বাকারাহ ২: ৪৫)

২. বল, নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎ সমূহের প্রতি পালক আল্লাহর জন্যে। (সুরাহ আনয়াম ৫:১৬২)
৩. তোমরা সালাত সমূহের প্রতি এবং ( বিশেষ করে ) মধ্যবর্তী সালাতের প্রতি যত্ন বান হও, এবং আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্যে একান্ত অনুগত অবস্থায় দাড়াও। (সুরাহ বাকারাহ ২:২৩৮)

৪. আমি যদি তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করি (ক্ষমতা ওঁ সম্পদ দ্বারা) তাহলে তারা সালাত কায়েম করবে, সৎ কাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করবে, আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহর (নিকট) (সুরাহ হাজ ২২:৪১)

৫.( হে নারী) তুমি পাঠ করো তোমার প্রতি যে কিতাব ওহী করা হয়েছে তা থেকে এবং সালাত কায়েম করো। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করে। এবং আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ। আর তোমরা যা করো আল্লাহ তা জানেন। (সুরাহ ‘আনকাবুত ২৯: ৪৫)

৬. এবং তুমি সালাত কায়েম কর দিনের দুই দিনের দুই প্রান্তে ও রাতের প্রথমাংশে। নিশ্চয় ভালো কাজ মন্দ কাজকে মিটিয়ে দেয়। উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্যে এটি এক উপদেশ। (সুরাহ হুদ ১১: ১১৪)

৭. অতঃপর যখন তোমরা সালাত সমাপ্ত করবে তখন দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহ কে স্মরণ করো, অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ বোধ করবে তখন পুরনাঙ্গ) সালাত কায়েম কর, নিশ্চয় সালাত মু’মিনদের ওপর একটি সময় নির্ধারণ ফরয। (সুরাহ নিসা ৪:১০৩)

৮. সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে রাতের ঘন অন্ধকার পর্যন্ত কায়েম করো এবং কায়েম কর ফরজের কুরআন পাঠও (অর্থাৎ সালাতুল ফরজ)। নিশ্চয় ফজরের পাঠ ( সালাতুল ফরজ) প্রত্যক্ষ করা হয়। (সুরাহ বানী ইসরাইল ১৭:৭৮)

৯. ওহে যারা ঈমান এনেছ! জুমু‘আর দিনে যখন তোমাদের কে সালাতের জন্যে ডাকা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও এবং ক্রয় বিক্রয় পরিত্যাগ কর। এটি তোমাদের জন্যে উত্তম –যদি তোমরা জানতে। (সুরাহ জুমু‘আ ৬২: ৯)

রাসুলুল্লাহ সা. এর ৬ হাদিস

১) হজরত উম্মি ফারওয়াহ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী কারিম (সা.) কে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, সবচেয়ে মর্যাদাবান ‘আমল কোনটি? তিনি বলেন, ওয়াক্তের প্রারম্ভে সালাত আদায় করা। (সুনানু আবী দাঊদ: ৪২৬, জামি’উত তিরমিযী:১৭০)

২) হযরত আবূ হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, মুনাফিকদের কাছে ফজর ও ইশা অপেক্ষা অধিক ভারী কোনো সালাত নেই। আর যদি তারা জানত যে, এতদুভয়ের মধ্যে কী (ফযীলাত) রয়েছে, তাহলে অবশ্যই তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এর জন্যে আসত। (সহীহ বুখারী: ৬৫৭, সহীহ মুসলিম: ৬৫১)

৩) হযরত জাবির (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, বান্দা (আনুগত্য) ও কুফরীর মধ্যে (পার্থক্য) হলো সালাত ত্যাগ করা। (সহীহ মুসলিম:৮২)

৪) হযরত আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের অভিমত কী, যদি তোমাদের কারো দরজায় একটি পানির নহর থাকে যাতে সে দৈনিক পাঁচ বার গোসল করে, তার শরীরে কি কোনো ময়লা অবশিষ্ট থাকতে পারে? তারা (সাহাবীগণ) উত্তরে বললেন, তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে না। রাসূল (সা.) বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উদাহরণ এরূপই। বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা তার অপরাধসমূহ মিটিয়ে দেন। (সহীহ বুখারী: ৫২৮, সহীহ মুসলিম: ৬৬৭)

৫) হযরত আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমার সালাত থেকে অপর জুমার সালাত এবং এক রমযান মাসের সিয়াম হতে অপর রমজান মাসের রোজা সেসব গুনাহের জন্যে কাফফারা হয়, যা এর মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে থাকে; যখন কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হয়। (সহীহ মুসলিম:২৩৩)

৬) হযরত ‘আমর ইবনে শুয়াইব রহ. হতে বর্ণিত। তিনি তার পিতা হতে, তার পিতা তার দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সালাতের জন্যে আদেশ কর, যখন তারা সাত বছর বয়সে পৌঁছাবে। আর যখন তারা দশ বছর বয়সে পৌঁছবে, তখন তাদেরকে সালাতের জন্যে প্রহার কর এবং তাদের শোয়ার স্থান পৃথক করে দাও। (সুনানু আবী দাঊদ: ৪৯৫)

                     ----------------------------------------------------------------------------------
                   '' শুধু নিজে শিক্ষিত হলে হবেনা, প্রথমে বিবেকটাকে শিক্ষিত করুন। ''

রবিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

কারা সিয়াম পালন করবে, কারা করবে না

কারা সিয়াম পালন করবে, কারা করবে না



 সিয়াম পালন যাদের ওপর ফরজ
প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্কসুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্নমুকিমসামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য সিয়াম পালন ফরজ। যে ব্যক্তি এ শর্তাবলির অধিকারী তাকে অবশ্যই রমযান মাসে সিয়াম পালন করতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
﴿ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُۖ ﴾ [البقرة: ١٨٥
সুতরাং তোমাদের মাঝে যারা এ মাস পাবে তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে। {সূরা বাকারা : ১৮৫}

রাসূলুল্লাহ () বলেছেন :
« إِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَصُومُوا ».
যখন তোমরা রমযানের চাঁদ দেখবে তখন সিয়াম পালন করবে।’ [বুখারী : ১৯০০মুসলিম : ২৫৫৬]

এ বিষয়ে সকল মুসলিমের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত।
দশ প্রকার মানুষের মাঝে সিয়াম পালনের এ সকল শর্ত অনুপস্থিত। তারা হল :
 প্রথম. কাফের বা অমুসলিম : কারণ তারা ইবাদত করার যোগ্যতা রাখে না। ইবাদত করলেও ইসলামের অবর্তমানে তা সহী হবে নাকবুলও হবে না। যদি কোন কাফের রমযানে ইসলাম গ্রহণ করে তবে পিছনের সিয়ামের কাজা আদায় করতে হবে না। কারণ আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন :
﴿ قُل لِّلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ إِن يَنتَهُواْ يُغۡفَرۡ لَهُم مَّا قَدۡ سَلَفَ ﴾ [الانفال: ٣٨
যারা কুফরি করে তাদেরকে বল, ‘যদি তারা বিরত হয় তবে যা অতীতে হয়েছে আল্লাহ তা ক্ষমা করবেন।’ {সূরা আনফাল : ৩৮}
তবে রমযানে দিনের বেলা ইসলাম গ্রহণ করলে ঐ দিনের বাকি অংশটা পানাহার থেকে বিরত থাকবে।

 দ্বিতীয়. অপ্রাপ্ত বয়স্ক : অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির জন্য বয়োপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সিয়াম পালন ফরজ নয়। রাসূলুল্লাহ () বলেছেন :
«رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلَاثَةٍ، عَنِ الْمَجْنُونِ الْمَغْلُوبِ عَلَى عَقْلِهِ حَتَّى يَفِيقَ، وَعَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ، وَعَنِ الصَّبِيِّ حَتَّى يَحْتَلِمَ»
তিন ব্যক্তি থেকে কলমকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। নিদ্রামগ্ন ব্যক্তি যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়। কম বয়সী ব্যক্তি যতক্ষণ না সে প্রাপ্ত বয়স্ক হয়। পাগল ব্যক্তি যতক্ষণ না সে সুস্থ হয়।’ [আবু দাউদ : ৪৪০১]

যদিও অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক-বালিকাদের ওপর সিয়াম পালন ফরজ নয় তবে অভিভাবকরা অভ্যস্ত করার জন্য তাদের সিয়াম পালন করতে বলবেন। সাহাবায়ে কেরাম তাদের বাচ্চাদের সিয়াম পালনে অভ্যস্ত করেছেন। তাই আমাদের জন্য মোস্তাহাব হল আমরাও আমাদের অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের সিয়াম পালনে উদ্বুদ্ধ করবযদি সিয়াম পালন তাদের কোন ক্ষতি না করে।

 অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ে কখন বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হয় ?
যদি কোন অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক বা বালিকার মাঝে তিনটি আলামতের কোন একটি পরিলক্ষিত হয় তখন তাকে প্রাপ্তবয়স্ক বলে ধরা হবে। আলামত তিনটি হল :
(১) স্বপ্নদোষ অথবা অন্য কোন কারণে বীর্যপাত হলে।
(২) যৌনাঙ্গে কেশ দেখা দিতে শুরু করলে।
(৩) বয়স পনেরো বছর পূর্ণ হলে।

ছেলেদের মাঝে যখন এ তিনটি আলামতের কোন একটি পরিলক্ষিত হবে তখন তাদের পূর্ণবয়স্ক বলে ধরা হবে। অবশ্য মেয়েদের জন্য চতুর্থ একটি আলামত রয়েছেতা হল মাসিক দেখা দেয়া। যদি দশ বছর বয়সী কিশোরীদেরও মাসিক দেখা দেয় তাহলে তাদের পূর্ণবয়স্ক বলে ধরতে হবে। এবং শরিয়তের সকল আদেশ-নিষেধ তার জন্য অবশ্য পালনীয় বলে গণ্য হবে। কোন কিশোর বা কিশোরী রমযান মাসের দিনের বেলা যদি সাবালক হয় তবে তাকে দিনের অবশিষ্ট অংশ পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। এ দিনের সওম তার কাজা করতে হবে না। পিতা-মাতার কর্তব্য হল এ বিষয়ে সতর্ক থাকা ও সন্তানকে সচেতন করা। সাথে সাথে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তার ওপর যে সকল ধর্মীয় দায়িত্ব-কর্তব্য আছে তা পালনে দিক-নির্দেশনা দেয়া। পাক-পবিত্রতা অর্জনের নিয়ম-নীতিগুলো সে জানে কি না বা মনে রাখতে পেরেছে কিনা তার প্রতি খেয়াল রাখা।

 তৃতীয়. পাগল : পাগল বলতে বুঝায় যার জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। যার কারণে ভাল-মন্দের মাঝে পার্থক্য করতে পারে না। এর জন্য সিয়াম পালন ফরজ নয়। যেমন পূর্বের হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। পাগল যখনই সুস্থ হয়ে যাবে তখনই সে সিয়াম পালন শুরু করে দেবে। যদি এমন হয় যে দিনের কিছু অংশ সে সুস্থ থাকে কিছু অংশ অসুস্থ তাহলে সুস্থ হওয়া মাত্রই সে পানাহার থেকে বিরত থাকবে। সিয়াম পূর্ণ করবে। পাগলামি শুরু হলেই তার সিয়াম ভঙ্গ হবে নাযদি না সে সিয়াম ভঙ্গের কোন কাজ করে।

 চতুর্থ. অশীতিপর বৃদ্ধ যে ভাল-মন্দের পার্থক্য করতে পারে না : যার বয়সের কারণে ভাল-মন্দ পার্থক্য করার অনুভূতি চলে গেছে সে শিশুর মতই। শিশু যেমন শরিয়তের নির্দেশমুক্ত তেমনি সেও। তবে অনুভূতি ফিরে আসলে সে পানাহার থেকে বিরত থাকবে। যদি তার অবস্থা এমন হয় যে কখনো অনুভূতি আসে আবার কখনো চলে যায় তবে অনুভূতি থাকাকালীন সময়ে তার ওপর স্বলাতসিয়াম ফরজ হবে।

 পঞ্চম. যে সিয়াম পালনের সামর্থ্য রাখে না : এমন অক্ষম ব্যক্তি যার সিয়াম পালনের সামর্থ্য ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। যেমন অত্যধিক বৃদ্ধ অথবা এমন রোগী যার রোগ মুক্তির সম্ভাবনা নেইআল্লাহর কাছে আমরা এ ধরনের রোগ-ব্যধি থেকে আশ্রয় চাই। এ ধরনের লোকদের সিয়াম পালন জরুরি নয়। কারণ সে এ কাজের সামর্থ্য রাখে না।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
﴿ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ ﴾ [البقرة: ٢٨٦
আল্লাহ কারো ওপর এমন কোন কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না যা তার সাধ্যাতীত। {সূরা আল-বাকারা : ২৮৬}

কিন্তু এমন ব্যক্তির ওপর সিয়ামের ফিদয়া প্রদান ওয়াজিব। সিয়ামের ফিদয়া হলপ্রতিটি দিনের পরিবর্তে একজন মিসকিন (অভাবী) লোককে খাদ্য প্রদান করবে।
 কিভাবে মিসকিনকে খাদ্য প্রদান করবে ?
মিসকিনদের দুভাবে খাদ্য প্রদান করা যায় :
(১) খাদ্য তৈরি করে সিয়ামের সংখ্যা অনুযায়ী সমসংখ্যক মিসকিনকে আপ্যায়ন করাবে। (২) মিসকিনদের প্রত্যেককে এক মুদ পরিমাণ ভাল আটা দেবে। এক মুদ হল ৫১০ গ্রাম। (তবে হানাফী ফিকাহ অনুযায়ী দুই মুদ বা এক কেজি বিশ গ্রাম আটা বা সমপরিমাণ টাকা দেয়া যেতে পারে।)

 ষষ্ঠ. মুসাফির : মুসাফিরের জন্য সিয়াম পালন না করা জায়েজ আছে। সফরকে যেন সিয়াম পালন না করার কৌশল হিসেবে ব্যবহার না করা হয়। আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন :
﴿ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَر  فَعِدَّة  مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۗ يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ ١٨٥ ﴾ [البقرة: ١٨٥
যে কেউ অসুস্থ থাকে বা সফরে থাকে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চানযা কষ্টকর তা চান না। {সূরা বাকারা : ১৮৫}

সুতরাং যে ব্যক্তি সফরে থাকে তার জন্য সিয়াম ভঙ্গের অনুমতি আছে এবং সফর শেষে সে সিয়াম আদায় করবে। তবে সে যদি সফরাবস্থায় সিয়াম পালন করে তা আদায় হবে। তবে উত্তম কোনটি,সফরকালীন সময়ে সিয়াম পালন করানা সিয়াম ত্যাগ করাযেটা সহজ মুসাফির সেটা করবেন। যদি তিনি দেখেন সফরকালীন সময়ে তার সিয়াম পালন বাড়িতে থাকাকালীন সময়ের মতই মনে হয় তবে সফরে তার সিয়াম পালন করা উত্তম। আর যদি দেখেন সফরে সিয়াম পালন করলে অতিরিক্ত কষ্ট হয় তবে সিয়াম ত্যাগ করা তার জন্য উত্তম। বরং বেশি কষ্ট হলে সিয়াম পালন মাকরূহ হবে। যেমন রাসূলে করিম ()-এর সাথে একদল সাহাবি সফরে থাকাকালে সিয়াম পালন করে খুব কষ্ট সহ্য করেছিলেনরাসূলুল্লাহ () তাদের লক্ষ্য করে বললেন :
«أُولَئِكَ الْعُصَاةُ، أُولَئِكَ الْعُصَاةُ»
তারাইতো অবাধ্য ! তারাইতো অবাধ্য !!’ [মুসলিম : ]

সফরে কেউ সিয়াম পালন শুরু করলপরে দেখা গেল সিয়াম সম্পন্ন রাখতে তার কষ্ট হচ্ছে তখন সে সিয়াম ভঙ্গ করে ফেলবে। এখন কথা হল এক ব্যক্তি সারা জীবনই সফরে থাকেন এবং সফরাবস্থায় সিয়াম পালন তার জন্য কষ্টকর সে কীভাবে সিয়াম পালন করবেন ?তিনি শীতকালে ছোট দিনগুলোতে সিয়াম পালন করতে পারেন।

 সপ্তম. যে রোগী সুস্থ হওয়ার আশা রাখে : যে রোগাক্রান্ত ব্যক্তির সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তার অবস্থা তিনটির যে কোন একটি হয়ে থাকে :
এক: এমন রোগী যার পক্ষে সিয়াম পালন কষ্টসাধ্য নয় এবং সিয়াম তার কোন ক্ষতি করে না। এমন ব্যক্তির সিয়াম পালন অপরিহার্য।
দুই: এমন রোগী সিয়াম পালন যার জন্য কষ্টকর। এমন ব্যক্তির সিয়াম পালন বিধেয় নয়মাকরূহ। সিয়াম পালন করলে আদায় হয়ে যাবে তবে মাকরূহ হবে। ইসলামি শরিয়তের উদ্দেশ্য মানুষকে কষ্ট দেয়া নয় বরং শরিয়তের উদ্দেশ্য হল মানুষের সমস্যাকে হালকা করা।
তিন: এমন রোগী যে সিয়াম পালন করলে রোগ বেড়ে যাবে। এ অবস্থায় তার সিয়াম ত্যাগ করাই ওয়াজিব বা অপরিহার্য।

 অষ্টম. যে নারীর মাসিক চলছে : ঋতুকালীন সময়ে নারীর জন্য সওম পালন জায়েজ নয় বরং নিষেধ। যদি সওম পালন করা অবস্থায় মাসিক দেখা দেয় তাহলে তার সওম ভেঙে যাবে যদি সূর্যাস্তের এক মুহূর্ত পূর্বেও দেখা যায়। পরবর্তীতে এ সওমের কাজা করতে হবে। মাসিক অবস্থায় রমযানের দিনের বেলা কোন মহিলার মাসিক বন্ধ হয়ে গেল তাহলে তাকে ঐ দিনের বাকি সময়টা খাওয়া-দাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পরে এটাও কাজা করতে হবে। যদি সুবহে সাদিকের এক মুহূর্ত পূর্বে মাসিক বন্ধ হয়ে যায় তাহলে ঐ দিনের সওম পালন অপরিহার্য। এমন ভাবা ঠিক নয় যেগোসল করা হয়নি তাই সওম পালন থেকে বিরত থাকতে হবে। সওমর নিয়ত করে নিবে। গোসল পরে করলে সমস্যা নেই। সিয়াম আদায়ের ক্ষেত্রে সদ্য প্রসূতি নারীর বিধান ঋতুবতী নারীর অনুরূপ। ঋতুবতী ও সদ্য প্রসূতি নারীরা সুস্থ হয়ে সিয়ামের কাজা আদায় করবে। তবে তাদের স্বলাতের কাজা আদায় করতে হবে না। আয়েশা রা.-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল যেঋতুবতী নারী স্বলাতের কাজা আদায় করবে নাকিন্তু তাদের সিয়ামের কাজা আদায় করতে হবে কেন তিনি উত্তরে বললেনআমাদের এ অবস্থায় শুধু সিয়ামের কাজা আদায় করতে রাসূলুল্লাহ () নির্দেশ দিয়েছেনস্বলাতের কাজা আদায়ের নির্দেশ দেননি। {বুখারি ও মুসলিম}
এটা আল্লাহ রাববুল আলামিনের এক বিরাট অনুগ্রহ যে তিনি মহিলাদের হায়েজ ও নিফাস চলাকালীন সময়ের স্বলাত মাফ করে দিয়েছেন।

 নবম. গর্ভবতী ও দুগ্ধ দানকারী নারী : যদি গর্ভবতী বা দুগ্ধ দানকারী নারী সিয়ামের কারণে তার নিজের বা সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা করে তবে সে সিয়াম ভঙ্গ করতে পারবে। পরে নিরাপদ সময়ে সে সিয়ামের কাজা আদায় করে নিবে। রাসূলুল্লাহ () বলেছেন :
إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى وَضَعَ عَنِ المُسَافِرِ الصَّوْمَ، وَشَطْرَ الصَّلَاةِ، وَعَنِ الحَامِلِ أَوِ المُرْضِعِ الصَّوْمَ أَوِ الصِّيَامَ
আল্লাহ রাববুল আলামীন মুসাফিরের অর্ধেক স্বলাত কমিয়ে দিয়েছেন এবং গর্ভবতী ও দুগ্ধ দানকরী নারীর সিয়াম না রেখে পরে আদায় করার অবকাশ দিয়েছেন।’ {তিরমিযী : ৭১৫}

 দশম. যে অন্যকে বাঁচাতে গিয়ে সিয়াম ভেঙে ফেলতে বাধ্য হয় : যেমন কোন বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিপানিতে পড়ে যাওয়া মানুষকে অথবা আগুনে নিপতিত ব্যক্তিকে কিংবা বাড়িঘর ধসে তার মাঝে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করতে গিয়ে সিয়াম ভঙ্গ করল। এতে অসুবিধা নেই। যদি এমন হয় যে সিয়াম ভঙ্গ করা ব্যতীত এমন বিপন্ন মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না তাহলে সিয়াম ভঙ্গ করে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত হওয়া অপরিহার্য হয়ে পড়বে। কেননা জীবনের প্রতি হুমকি সৃষ্টি হয়েছে এমন বিপদগ্রস্ত মানুষকে উদ্ধার করা ফরজ। এমনিভাবে যে ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রুদের বিরুদ্ধে আল্লাহর পথে জিহাদে নিয়োজিত সে সিয়াম ভঙ্গ করে শক্তি অর্জন করতে পারবে।
এ দশ প্রকার মানুষ যাদের জন্য সিয়াম ভঙ্গ করার অনুমতি দেয়া হল তারা যেন প্রকাশ্যে পানাহার না করে সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। কারণ এতে অনেক অজানা লোকজন খারাপ ধারণা পোষণ করবে যা ব্যক্তি ও সমাজের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
                       ----------------------------------------------------------------------------------
                       '' শুধু নিজে শিক্ষিত হলে হবেনা, প্রথমে বিবেকটাকে শিক্ষিত করুন। ''
Widget ByBlogger Maruf
Widget ByBlogger Maruf