আলেমগণ মেয়েদের চুল ছোট করে কাটা নিষিদ্ধ করেছেন ২টি হাদিসের বক্তব্যকে সামনে রেখে -
১. অমুসলিমদের অনুসরণ করা২. ছেলেদের সাদৃশ্য ধারণ করা
**১ম হাদিসঃ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,“যে ব্যক্তি যে জাতির অনুসরণ করবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”[আবূ দাউদ, ৪০৩১]
অমুসলিম নারীরা চুল ছোট রাখে। তাই তাদের অনুসরণ করা নিষিদ্ধ।
**২য় হাদিসঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওইসব নারীদের লা’নত করেন, যারা পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহন করে এবং ওইসব পুরুষদের লা’নত করেন যারা নারীদের সাদৃশ্য গ্রহন করে।[বুখারী, ৭/২০৫]
বর্তমান সময়ের ফ্যাশন সচেতন বোনেরা অনেকেই চুল ছোট প্লাক করে থাকেন এবং নানা রঙের নানা ধরনের কাটিং ও ব্যাবহার করে থাকেন। অথচ যারা এমন করেন, রাসুল (সাঃ) তাদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন। কাজেই বোনেরা আল্লাহর ভয়ে এই ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকুন।
● ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যে মহিলা পরচুলা লাগিয়ে দেয় এবং যে পরচুলা লাগাতে বলে, আর যে মহিলা অঙ্গ প্রত্যঙ্গে উল্কি উৎকীর্ণ করে ও উল্কি উৎকীর্ণ করতে বলে তাদেরকে অভিশাপ করেছেন। [সহীহ বুখারী ৫৯৩৭, ৫৯৪০, ৫৯৪২, ৫৯৪৭]
চুল ছোট রাখা মেয়েদের পুরুষের সাদৃশ্যপূর্ণ মনে হয়। তাই এটাও ইসলাম সমর্থন করে না।
তবে উপরের কারণ দুটি ছাড়া মেয়েরা তাদের চুলের বিভিন্ন রোগের কারণে চুল কিছুটা ছোট করতে পারে। তাছাড়া বিবাহিত মেয়েরা তাদের স্বামীর অনুমতি নিয়ে চুল কিছুটা ছোট করতে পারে। তবে তা যেন পুরুষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ না হয়। এক্ষেত্রে স্বামীর কোন আদেশ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) এর আইনের উপর প্রধান্য দেয়া যাবে না।
*** আজকাল সমাজে দেখা যায়, নারীরা মাথার চুল ছোটো করে, তাতে উত্তম ভাবে শ্যাম্পু করে, কনডিশনার মেখে,কালার করে, চুলগুলু বাতাসে উড়িয়ে, মাথায় ঘুমটা না দিয়ে, বেগানা পুরুষদেরকে প্রদর্শন করতে করতে রাস্তা দিয়ে বেপর্দা হয়ে চলতে থাকে, কিন্তু মনে রাখতে হবে, এই ধরনের চলাফেরা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম, হারাম এবং হারাম।আপনি নিজে গুনাহগার হচ্ছেন, যেই সকল পুরুষ আপনাকে দেখছে, তারা গুনাহগার হচ্ছে , এবং আপনি তাদের গুনাহগার করার কারনে, আপনি নিজে ও তাদের কাছ থেকে গুনার ভাগ পেয়ে আপনি আবার ও গুনাহগার হচ্ছেন।মনে রাখবেন, আপনার চুল, দেহ কিন্তু প্রদর্শন করার জন্য না, এই গুলো হচ্ছে পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখার জন্য।
সর্বশেষ, মেয়েদের চুল ছোট করা ইসলাম সমর্থন করে না, শুধুমাত্র কিছু রোগের কারণ ছাড়া।আল্লাহ্ ই সবচেয়ে ভালো জানেন।
তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা গ্রহন কর, আর যা থেকে নিষেধ করেছেন,তা থেকে বিরত থাক। {সূরা হাশর : ৭}
###প্রশ্ন:আমরা জানি, মেয়েদের চুল কাটা নিষেধ। তবে প্রয়োজনের সময় চার আঙ্গুল পরিমাণ চুল কাটা যায়। এখন আমার প্রশ্ন হল : ক) মেয়েরা কতদিন পর পর চুল কাটতে পারবে এবং তার পরিমাণ কতটুকু? খ) বেশি কাটলে তার কাফফারা কী দিতে হবে এবং তা কী পরিমাণ? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
###উত্তর:মহিলাদের চুলের ক্ষেত্রে শরীয়তের মৌলিক নীতিমালা হল :
১. মহিলারা চুল লম্বা রাখবে। হাদীস শরীফ থেকে জানা যায় যে, উম্মাহাতুল মুমিনীন রা. চুল লম্বা রাখতেন।
২. এ পরিমাণ খাটো করবে না যে, পুরুষের চুলের মতো হয়ে যায়। হাদীস শরীফে পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারিনী মহিলার প্রতি অভিসম্পাত করা হয়েছে।
৩. চুল কাটার ক্ষেত্রে বিজাতীয়দের অনুকরণ করবে না। কারণ হাদীসে বিজাতীয়দের অনুকরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
অতএব যে মহিলার চুল এত লম্বা যে, কিছু অংশ কাটলে পুরুষের চুলের সাথে সাদৃশ্য হবে না তার জন্য ঐ পরিমাণ কাটা জায়েয হবে। পক্ষান্তরে যার চুল তত লম্বা নয়; বরং অল্প কাটলেই কাঁধ সমান হয়ে যাবে এবং পুরুষের বাবরী চুলের মতো দেখা যাবে তার জন্য অল্প করেও কাটার অনুমতি নেই। তবে জটিল অসুস্থতার কারণে চিকিৎসার প্রয়োজনে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে চুল ছোট করা, এমনকি জরুরতবশতঃ কামানোরও অনুমতি রয়েছে। অতএব চার আঙ্গুল পরিমাণ কাটা যাবে-এ কথা সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়; বরং চুল বেশি বড় থাকলে যেমন কোমর সমান চুল থাকলে চার আঙ্গুলের বেশি পিঠের মাঝামাঝি করে কাটা জায়েয। তবে সর্বাবস্থায় ফ্যাশনের অনুকরণ করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। উপরোক্ত মূলনীতির আলোকে মহিলারা তাদের চুল খাটো করতে পারবে। এর জন্য সময়েরও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আর কেউ নাজায়েয পরিমাণ কেটে ফেললে বা বিজাতীয় অনুকরণে চুল কেটে করে ফেললে তাওবা ইস্তিগফার করতে হবে।
সহীহ বুখারী ২/৮৭৪; জামে তিরমিযী ১/১০৩; সহীহ মুসলিম ১/১৪৮; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ১/৪৭২; আলমুফাসসাল ফী আহকামিল মারআতি ওয়াল বায়তিল মুসলিম ৩/৪০০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৭৭; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/২০৩; আলফাতাওয়াল মারআহ, শায়খ ইবনে বায পৃ. ১৬৫ আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪১৬.
----------------------------------------------------------------------------------
'' শুধু নিজে শিক্ষিত হলে হবেনা, প্রথমে বিবেকটাকে শিক্ষিত করুন। ''
কোন মন্তব্য নেই:
/>