সোমবার, ৬ জুলাই, ২০১৫

শবে বরাত কেন বিদআত? (স্পষ্ট ব্যাখ্যা)

ইন্নালহামদু লিল্লাহ! নাহ্‌মাদুহূ ওয়া নাস্তা’ঈনুহূ ওয়া নাস্তগ্‌ফিরুহূ ওয়ানু’মিনুবিহী ওয়ানাতাওয়াক্কালু আলায়হি, ওয়া না’উযু বিল্লাহি মিন শুরুরি আনফুসিনা ওয়ামিন সাইয়্যেআতি আ’মালিনা মাইয়্যাহ্‌দিহিল্লাহ্‌ ফালা মুযিল্লালাহূ ওয়া মাইয়্যুযলিল্‌হু ফালা হাদিয়ালাহূ। ওয়া আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ্ – ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু। আম্মা বা’দ। ফাআ’উযু বিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাজীম।

আচ্ছালামুয়ালাইকুম প্রিয় মুসলিম এবং অমুসলিম ভাই ও বোন।
মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিনের দরবারে শুক্রিয়া জানাই (আলহামদুলিল্লাহ্‌) ।
আজকের আলোচ্য বিষয় শবে বরাত। আজ আমরা আলোচনা করবো এই শবে বরাত নিয়ে, ইসলামের দৃষ্টিতে এটা কি এবং কেন তা নিয়ে। তাই আশা করি সকলেই ধৈর্য সহকারে পুরোটা পড়বেন, অনেক জানতে পারবেন ইনশাআল্লাহ্‌।
প্রথমেই আমরা জানবো, শবে বরাত অর্থ কি?
‘শব’ শব্দটির বাংলা অর্থ ‘মৃত’ আর উর্দুতে ‘রাত/রাত্রি’। আর ‘বরাত’ অর্থ ‘বরকতময়’। এটি আরবি এবং উর্দু দুটোতেই ব্যাবহ্নত হয়ে থাকে, যদিও আরবিতে রাতের মুল শব্দ ‘লাইলাত’। আরবিতে আসে লাইলাতুল মূবারকা (লাইলত উল/Night Of), আর উর্দুতে শবে বরাতের বাংলায় অর্থ দাঁড়ায় ‘বরকতময় রাত্রি’। শবে বরাত দেশভেদে বিভিন নামে পরিচিত। ইরান ও আফগানিস্তানে একে বলা হয় ‘নিম সাবান’। মালয় ভাষাভাষীর বলে ‘নিসফু শা’বান’। তুর্কি ভাষাভাষীর মুসলিমরা বলে ‘বিরাত কান্দিলি’। ইসলামী পরিভাষায় সাবান মাসের মধ্যরজনি বা ১৫ তারিখের রাতকে বলা হয় ‘শবে বরাত’ বা ‘লাইলাতুল মুবারক’ অর্থাৎ বরকতময় রাত্রি।
তাহলে একটা ক্লু পাওয়া গেল বরাত বা বরকতময় রাত্রি অবশ্যই আছে। আমাদের জানতে হবে এই বরকতময় রাত্রি কোনটি? শবে বরাত নাকি অন্য কিছু?
আমাদের আজকের উত্তরদাতা হলো আল কুরআন। কুরআন আগেই বলছে ‘যালিকাল কিতাব্য লা রইবা ফিহ…’(সুরা বাকারাহ ২), অর্থ ‘এটি হলো সেই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই’। ‘এটি হলো সুস্পষ্ট বর্ননাকারি কিতাব’ (সুরা দুখান ০২)। সুতরাং কুরআনে গোঁজামিল নেই। যা আছে সব সরাসরি আছে।
সুতরাং কুরআনকে জিজ্ঞেস করা হলো ‘হে সুস্পষ্ট বর্ননাকারি কিতাব, বলো বরকতময় রাত্রির আলাদা বিশিষ্ট কি?’
কুরআন তার বুক চিরে দেখিয়ে দিলো, ‘আমি(আল্লাহ্‌) এক বরকতময় রাত্রিতে এটি (কুরআন) নাজিল করেছি, আমি তোমাদের সতর্ক করতে চেয়েছিলাম…’। (সুরা দুখান, ০৩)।
আমাদের সমাজের আলেম ওলামাগণ শবে বরাতে পক্ষে ওয়াজ করার সময় প্রথমেই এই আয়াতের শেষ অংশ পাঠ করে বলে ‘এই দেখুন শবে বরাত বা বরকতময় রাতের কথা কুরআনে আছে’।
কি সুন্দর ভণ্ডামি!! কুরআনের আয়াতকে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বাঁকা করে তারপর অর্ধেকটা শুনিয়ে দেয় আর সাথে সাথে মুসল্লিরা বলে ওঠে ‘সোবহানাল্লাহ!’।
অথচ তারা পুরোটা পড়ে শোনায় না বা মুসল্লিরা অর্থ বোঝেনা। এখানে উল্লেখ করা আছে ‘ইন্না আংজালনা হুম’ যার অর্থ ‘নিশ্চয় আমি ইহা নাজিল করেছি’।
কবে নাজিল করেছেন আল্লাহ্‌?
পরেই আবার সুন্দর করে বলা আছে ‘হুম লাইলাতুল মুবারকা’ অর্থ ‘বরকতময় রাত্রিতে’।
তাহলে উপরের আয়াতে আমরা নিশ্চিত যে বরকতময় রাতেই কুরআন নাজিল হয়েছে। এখন আবার প্রশ্ন করলাম ‘হে সন্দেহাতীত সত্য কিতাব, বলো কুরআন নাজিলের মাস কোনটা?’
আবারও কুরআন দেখিয়ে দিলো, ‘রমযানের মাস, এ মাসেই কুরআন নাযিল করা হয়েছে।’ (সুরা বাকারাহ, ১৮৫)।
সুতরাং বরতময় রাত্রিটি অবশ্যই রমজান মাসে (যদি আপনি কুরআন বিশ্বাস করেন তবে এটাও মানবেন)।
অথচ তথাকথিত বরকতময় রাত বা শবে বরাত হলো সাবান মাসের ১৫ তারিখ! তাহলে এটা সেই বরকতময় রাত নয় যার কথা কুরআনে বলা হয়েছে। তাহলে বরকতময় রাত্রি কোথায়?
এবার প্রশ্ন করার আগেই কুরআন নিজে থেকেই বলছে ‘ইন্না আংজালনা হুফি লাইলাতুল কদর’ অর্থ ‘নিশ্চয় আমি ইহা নাজিল করেছি লাইলাতুল কদর বা কদরের রাত্রিতে’। (সুরা কদর, ০১)।
সুতরাং কুরআন সমীকরণে,
কুরআন নাজিল হয়েছে বরকতময় রাত্রিতে…[সুরা দুখান ৩]……[১]
কুরআন নাজিল হয়েছে লাইলাতুল কদরে…[সুরা কদর ০১]……[২]
সুতরাং ১ ও ২ হতে পাই, লাইলাতুল কদরই হলো একমাত্র ও কেবল একমাত্র বরকতময় রাত্রি। এছাড়া আর কোন শবে বরাত ফরাত নাই। যেহুতু কুরআন বলছে নাই সুতরাং সহিহ হাদিসেও নাই কারন সহিহ হাদিস কুরআনের বিপক্ষে যায়না।
যারা বাপদাদার দেখানো পথের পূজা করেনা, যারা আল্লাহকে ভয় করে কুরআনের কাছে মাথা নত করে দেয় সেইসব মুমিনদের জন্য এটুকু দৃষ্টান্তই যথেষ্ট যে ইসলামে আলাদা কোন শবে বরাতের স্থান নেই। এক্ষেত্রে আর কোন যুক্তি দিতে হবে বলে মনে করিনা। অবশ্য যারা সত্যটা মানতে দ্বিধা করে তারা মুসলমান নয়। তারা হিন্দু পরিবারে জন্ম নিলে কট্টোর হিন্দুই হতো, তারা সত্যটা খুঁজেও দেখেনা। কুরআন কোথাও বলেনি ‘আমাকে না যাচাই করেই বিশ্বাস করো’ বরং বারবার বলেছে ‘যাচাই করো, চিন্তা করো, উপলব্ধি করো, প্রচার করো।’ আল্লাহ্‌ যুক্তি দিয়ে কথা বলতে বলেছে (সুরা জুমার, ১৮) তাই যুক্তি দিয়েই প্রমান করা হল যে শবে বরাত একটি বিদআত এবং কুফরি। কারন আল্লাহ্‌ যেখানে বলছে রমজান মাসে কুরআন নাজিল করেছেন এবং সেটাই বরকতময় রাত সেখানে নিজেদের তৈরি বানোয়াট রাতকে বরকতময় রাত ঘোষনা করাটা আল্লাহ্‌র সাথে মশকরা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর আল্লাহ্‌র বাণীকে অস্বীকার করাই কুফরি এবং সে সঙ্গে সঙ্গে কাফির হয়ে যায়। আল্লাহ্‌ আমাদের রক্ষা করুন।
এবার আসুন দেখি আমাদের সমাজে প্রচলিত শবে বরাত মানক বিদআতটির ভণ্ডামি।
ভণ্ডদের ফতোয়ামতে শবে বরাত একটি পুন্যের রাত বা বরকতময় রাত। অনেক ওলামায়ে কেরামগন বিশ্বাস করেন যে, এই রাত্রিতে মানুষের ভাগ্য লিখা বা বন্টন করা হয়। অথচ আল্লাহ্‌ পাক ইরশাদ করছেন ‘এটা ছিল সেই রাত যে রাতে আমার নির্দেশে প্রতিটি বিষয়ে বিজ্ঞোচিত ফায়সালা দেয়া হয়ে থাকে৷’ (সুরা দুখান, ০৪)। সুতরাং ভাগ্য বন্টন করা হয় কেবল লাইলাতুল কদরেই, শবে বরাতে নয়। তাই এইধরনের আকিদাহ তে বিশ্বাসীরা কাফির হয়ে যাবে।
এ রাতে মানুষ আল্লাহকে খুশি করার জন্য সারারাত নফল নামাজ আদায় করে। হাজার রাকাতের নামাজ খ্যাত সালাতুল মুবারক আদায় করে, অথচ এই সালাতের কোন দলিল নেই এটা ভুয়া এবং বিদআত। কোন সহিহ হাদিসে এটা নেই।
বিতর নামাজের আগে এগুলো আদায় করে এরপর একটি বিদআতি মিলাদ ও সম্মিলিত মুনাজাত করা হয়। অনেক অঞ্চলে শিন্নি, মিষ্টি, জিলিপি ও বিরিয়ানি বন্টন করা হয়। আসলে ভাগ্য বন্টনের নামে বিরিয়ানি বণ্টন চলছে।
অনেক অঞ্চলে বিধবা মেয়েরা বিশ্বাস করে এ রাতে তাদের স্বামীর রুহু ঘরে ফিরে আসে। পীরেরা তাদের মুরিদদের বিধবা স্ত্রীদের ভোগ করার জন্য বলে ‘আমার উপর তোমার স্বামীর রুহু এসেছে সুতরাং তাকে বাঁধা দিওনা।’ এভাবে শবে বরাতে পীরেরা ফ্রি সেক্স করতে পারে।
আবার অনেক অঞ্চলে দোয়া পড়িয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করে এইসব ভণ্ড হুজুরেরা। কিন্তু ইসলামে টাকার বিনিময়ে কুরআন পাঠ এবং তাফসীর দেওয়া হারাম। এরা জান্নাত তো দুরের কথা জান্নাতের খুশবুও পাবেনা।
এবার আসুন রুটি ও হালুয়ার ভণ্ডামি পেশ করি।
শবে বরাতে বাড়িতে বাড়িতে হালুয়া ও রুটি তৈরি করে খাওয়া হয়। কারন জানতে চাইলে তারা বলে ‘উহুদের যুদ্ধে রাসুল সাঃ এর দাঁত শহিদ হওয়াতে তিনি শক্ত গোসত রুটি খেতে পারেন নি তাই হালুয়া রুটি খেয়েছিলেন।’
বাহবা কত সুন্দর ভণ্ডামি। কিন্তু শয়তানের বুদ্ধি মুমিনের চেয়ে উত্তম নয়। উহুদের যুদ্ধ হয়েছিল কবে?
উহুদের যুদ্ধ হয়েছিল শাউয়াল মাসের ১১ তারিখ রোজ শনিবার সকাল ১১ টায়। আর শবে বরাত পালিত হয় শাবান মাসের ১৫ তারিখ। কত সুন্দর যুক্তি বিদআতের! শাউয়াল মাসে দাঁত শহিদ হয়ে রাসুল সাঃ রুটি খেয়েছিলান শাবান মাসে??
এটা কি মেনে নেওয়ার মত কোন যুক্তি? রুটি হালুয়া আরেকটি বিদআত।
হ্যাঁ আপনি খাওয়ার জন্য তৈরি করুন, প্রতিবেশীদের বণ্টন করুন, গরীব দুঃখীদের বণ্টন করুন এতে সওয়াব আছে কিন্তু শবে বরাতের উদ্দেশে তা পালিন করে হালুয়া রুটি খাওয়া সম্পুর্ন বিদআত ও কুফরি।
তাই সাবধান! মুসলিম ভাইয়েরা, জেনে শুনে কুরআন ও হাদিস বিরোধি বিদাতে লিপ্তি হবেন না। শবে বরাত কোন ইসলামিক রাত না, এটি আর দশটা সাধারণ রাতের মতই। আর এই রাতের জন্য আলাদা কোন নামাজ নেই, পীরের বাচ্চারা এই নামাজেও বিদআত এনেছে। খবরদার তাদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে নিজের ঈমান নষ্ট করবেন না।

                      ----------------------------------------------------------------------------------


                          '' শুধু নিজে শিক্ষিত হলে হবেনা, প্রথমে বিবেকটাকে শিক্ষিত করুন। ''

কোন মন্তব্য নেই:

Comment here />

Widget ByBlogger Maruf
Widget ByBlogger Maruf