নামাজ/রোজা/হাজ্জ/জাকাত লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
নামাজ/রোজা/হাজ্জ/জাকাত লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৯

হজ্জের নিয়মাবলী

                     হজ্জের নিয়মাবলী 

     # হজ্জ আল্লাহ প্রেম ও বিশ্ব মুসলিমের ভ্রাতৃত্ববন্ধনের অন্যতম পথ। হজ্জ বিশ্ব মুসলিমের সামাজিকরাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক ঐক্যের এক অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটি আল্লাহর নির্দেশিত এমন একটা ফরয বিধানযা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ পঞ্চম স্তম্ভ এবং ইসলামের অপরাপর বিধান থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। হজ্জে আর্থিক ও কায়িক শ্রমের সমন্বয় রয়েছেযা অন্য কোন ইবাদতে একসঙ্গে পাওয়া যায় না। হজ্জ সারা বিশ্বের সহীহ মুসলিম উম্মাহর ঐক্যসংহতি ও সাম্যের প্রতীক। যার ওপর হজ্জ ফরয তাকে অবশ্যই হজ্জ আদায় করতে হবে। ৮ যিলহজ্জ থেকে ১২ যিলহজ্জ পর্যন্ত এই ৫ দিনে মক্কা মুকাররমা ও তার আশে পাশের কয়েকটি জায়গায় (মক্কায় তাওয়াফসাফা-মারওয়ায় সায়ীমিনার তাঁবুর জীবনআরাফাতের বিশাল প্রান্তরে অবস্থানমুজদালিফায় রাত্রি যাপন আবার মিনাতে প্রত্যাবর্তনজামরাগুলোতে কংকর নিক্ষেপমিনাতে পশু কুরবানীআবার ক্বাবা তাওয়াফসাফা-মারওয়ায় সায়ী ইত্যাদি) কিছু কর্তব্য কার্য সম্পাদন করাকে ইসলামের পরিভাষায় হজ্জ বলা হয়।হজ্জঅর্থ কছদসংকল্প। 
হজ্জের আভিধানিক অর্থ হলো যিয়ারতের এরাদা করা। শরীয়তের পরিভাষায় হজ্জের অর্থ কতক কার্যক্রম সম্পাদন করার উদ্দেশ্যে ইহ্রামের সাথে বায়তুল্লাহ জেয়ারতের সংকল্প। অর্থাৎ আল্লাহকে রাজি খুশী করার উদ্দেশ্যে শরীয়তের বিধান অনুসারে হজ্জের ইহ্রাম বেঁধে বায়তুল্লাহ শরীফসহ নির্দিষ্ট সময়ে  নির্দিষ্ট স্থানসমূহেনির্দিষ্ট কর্মসমূহ সুনির্দিষ্ট পন্থায় সম্পাদন (যিয়ারত) করাকে ইসলামের পরিভাষায় হজ্জ বলা হয়। হজ্জ একাধারে আর্থিক,শারীরিক ও মানসিক এবাদত। এতে অর্থ ব্যয় হয়শারীরিক পরিশ্রম হয়পরিবার পরিজনের মায়া ত্যাগ করার মত মানসিক কষ্টও রয়েছে। ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে পবিত্র মক্কা শরীফে যাতায়াতের খরচ বহন এবং ওই সময় স্বীয় পরিবারের ব্যয়ভার নির্বাহে সক্ষমদৈহিকভাবে সামর্থপ্রাপ্তবয়স্ক জ্ঞানবান প্রত্যেক সহীহ মুসলিম নর-নারীর ওপর জীবনে একবার হজ্জ ফরয। সঠিকভাবে হজ্জব্রত আদায়কারীকেও দেয়া হয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ। একবার হজ্জ করা ফরজ। একবারের বেশী করলে সেটা নফল।
ইসলামী ইবাদতসমূহের মধ্যে হজ্জের গুরুত্ব অপরিসীম। নি¤œ কোরআনহাদীস ও শরীয়তের দৃষ্টিতে হজ্জের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো।
হজ্জের উদ্দেশ্য--- 
হজ্জের উদ্দেশ্য হলো সারা বিশ্বের সহীহ মুসলিমদের সম্মিলিত করার মাধ্যমে আল্লাহর হুকুম পালন ও তাদের কল্যাণ সাধন করা। এক কথায় শিরক পরিহার করে আল্লাহকে একমাত্র প্রভু হিসেবে স্বীকার করে নেয়া। হজ্জ অনুষ্ঠান বিশ্ব সহীহ মুসলিম ঐক্য-সংহতি ও ভ্রাতৃত্বের এক অপূর্ব নিদর্শন। হজ্জের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহকে রাজি খুশী করা। তালবিয়া ঘোষণার মাধ্যমে তাওহীদ ভিত্তিক জীবন যাপন করতে অঙ্গীকার বদ্ধ হওয়া।
এক নজরে হজ্ব ও ওমরাহ্ --- 
হজ্জের ফরজ ৩টি --- 
১। ইহরাম বাধা ২। উ'কুফে আ'রাফা (আরাফাতের ময়দানে অবস্থান) ৩। তাওয়াফুয্ যিয়ারাত
 
হজ্জের ওয়াজিব ৬টি --- 
(
১) 'সাফা ও মারওয়াপাহাড় দ্বয়ের মাঝে ৭ বার সায়ী করা।
(
২) অকুফে মুযদালিফায় (৯ই জিলহজ্জ) অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সুর্যদয় পর্যন্ত একমুহুর্তের জন্য হলেও অবস্থান করা।
(
৩) মিনায় তিন শয়তান (জামারাত) সমূহকে পাথর নিপে করা।
(
৪) 'হজ্জে তামাত্তুও 'কি্বরানকারীগণ 'হজ্জসমাপনের জন্য দমে শোকর করা।
(
৫) এহরাম খোলার পূর্বে মাথার চুল মুন্ডানো বা ছাটা।
(
৬) মক্কার বাইরের লোকদের জন্য তাওয়াফে বিদা অর্থাৎ মক্কা থেকে বিদায়কালীন তাওয়াফ করা। এছাড়া আর যে সমস্ত আমল রয়েছে সব সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব।
 
ওমরাহর ফরজওয়াজিব --- 
দুইটি ফরজ: (১) ইহরাম পরিধান করা (২) তাওয়াফ দুইটি ওয়াজিব: (১) সাফা ও মারওয়া মধ্যবর্তী (সবুজ বাতি) স্থানে সাতবার সায়ী করা (২) মাথার চুল মুন্ডানো বা ছাটা।
 
তালবিয়া --- 
''
লাব্বাঈক আল্লাহুম্মা লাব্বাঈকলাব্বাঈকলা-শারীকা-লাকা লাব্বাঈকইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি'মাতা লাকা ওয়াল-মুল্কলা শারীকালাক।" অর্থআমি হাজির হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত! আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোন অংশীদার নেই। নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার। আপনার কোন অংশীদার নেই।
 
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ --- 
(
১) সেলাইযুক্ত যে কোন কাপড় বা জুতা ব্যবহারএক্ষেত্রে স্পঞ্জ সেন্ডেলের ব্যবহার করা।
(
২) মস্তক ও মুখমন্ডল (ইহরামের কাপড়সহ যে কোন কাপড় দ্বারা) ঢাকা,
(
৩) পায়ের পিঠ ঢেকে যায় এমন জুতা পরা।
(
৪) চুলকাটা বা ছিড়ে ফেলা,
(
৫) নখকাটা,
(
৬) ঘ্রানযুক্ত তৈল বা আতর লাগানো।
(
৭) স্ত্রীর সঙ্গে সংগম করা।
(
৮) যৌন উত্তেজনামূলক কোন আচরণ বা কোন কথা বলা।
(
৯) শিকার করা।
(
১০) ঝগড়া বিবাদ বা যুদ্ধ করা।
(
১১) চুল দাড়িতে চিরুনী বা আঙ্গুলী চালনা করাযাতে ছিড়ার আশংকা থাকে।
(
১২) শরীরে সাবান লাগানো।
(
১৩) উকুনছারপোকামশা ও মাছিসহ কোন জীবজন্তু হত্যা করা বা মারা।
(
১৪) কোন গুনাহের কাজ করাইত্যাদি।

হজ্জের প্রকার ও নিয়তসমূহ --- 
প্রথম প্রকার হজ্জে ইফরাদ --- 
বর্ণনাওমরাহ্ ব্যতিত শুধু হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধা এবং হজ্জের সাথে ওমরাহকে না মিলানো। (বদলী হজ্জের জন্যও এই হজ্জ)। নিয়্যাতআল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল হাজ্জা ফায়াসছির হুলিওয়াতা কাব্বালহুমিনি্ন। (বাংলা নিয়ত- আল্লাহ আমি ইফরাদ হজ্জের উদ্দেশ্যে আপনার সন্তুষ্টির জন্য ইহরাম বাধলাম। তা সহজ করে দিন ও কবুল করে নিন)।
 

দ্বিতীয় প্রকার হজ্জে কি্বরান --- 
বর্ণনাএকত্রে একই স্থান থেকে হজ্জ ও ওমরার নিয়্যাত করে হজ্জের সাথে ওমরাহকে মিলানো এবং একই ইহ্রামে উভয়টি আদায় করা। নিয়্যাতআল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল উ'মরাতা ফায়াচ্ছির লী-ওয়াতাক্াব্বাল মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি আপনার উদ্দেশ্যে হজ্জে কি্বরানের জন্য ইহরাম বাধলাম তা সহজ করে দিন ও কবুল করে নিন।  তৃতীয় প্রকার হজ্জে তামাত্তু --- 
বর্ণনাএকই সফরে পৃথক পৃথক ভাবে 'ইহরামপরিধান করে 'হজ্জ ও ওমরাহআদায় করা। প্রথম ইহ্রামে ওমরাহর নিয়্যাত করে তা পালন শেষে চুল কেটে 'ইহরামখুলে হালাল হয়ে দ্বিতীয় বার নতুন করে হজ্জের নিয়্যাতে ৮ই জিলহজ্জ 'মক্ক শরীফথেকে হজ্জের জন্য ইহরাম বাধা। তামাত্তু করার ইচ্ছা থাকলে প্রথমে ওমরার নিয়্যাত করে এহরাম বাঁধুন।
 
শুধু ওমরাহর নিয়্যাত --- 
আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল উম'রাতা ফায়াচ্ছির লী-ওয়াতাক্াব্বাল মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি ওমরাহ্ পালনের জন্য ইহরাম বাধলাম তা সহজ করে দিন এবং কবুল করে নিন।  শুধু হজ্জের নিয়্যাত---  আল্লাহুম্মা ইন্নী উরীদুল হাজ্জা ফায়াচ্ছিরহু-লী অ-তাকাব্বালহু মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি পবিত্র হজ্জ পালনের জন্য ইহরাম বেধে নিয়ত করলাম তা সহজ করে দিন এবং কবুল করে নিন।
 
তাওয়াফের বিবরণ --- 
হাজীদের সর্বপ্রথম কাজই হলো (তামাত্তু ও ক্বেরান কারীগণ) নিজের মালছামানগুছিয়ে রেখে পাকপবিত্র হয়ে মোটেই দেরী না করে 'হারাম শরীফেহাজিরা দেওয়া এবং 'তাওয়াফকরা। ওমরাহ এবং হজ্জের তাওয়াফ ব্যাতিত নফল তাওয়াফ ও করা যায়। যেমনরাসূল (দঃ)সাহাবা-আওলিয়াআহ্লে বাইতমা-বাবাপীর-উস্তাদ ও অন্যান্য মুরুব্বী বা সন্তানদের স্মরনে বা তাঁদের নামে তাওয়াফ করা।
 
তাওয়াফের ওয়াজিব সমূহ --- 
(
১) শরীর পাক-সাফ রাখাওজু করা। মহিলাদের হায়েজ নেফাছ অবস্থায় তাওয়াফ করা জায়েজ নাই।
(
২) ছতর ঢাকা। অর্থাৎ যেটুকু ঢাকা প্রত্যেক পুরুষ-নারীর জন্য ফরজ।
(
৩) 'হাতীমে কা'বারবাইরে থেকে 'তাওয়াফকরা।
(
৪) পায়ে হেঁটে 'তাওয়াফকরা। অম ব্যক্তি খাটিয়ার মাধ্যমে 'তাওয়াফকরতে পারেন।
(
৫) 'হাজ্রে আস্ওয়াদথেকে শুরু করে ডানদিক দিয়ে 'তাওয়াফশুরু করা।
(
৬) এক নাগাড়ে বিরতিহীন ভাবে 'সাতবার চক্করদিয়ে 'তাওয়াফপূর্ণ করা।
(
৭) 'সাত চক্করেএক 'তাওয়াফ', এটা পূর্ণ হলেই 'তাওয়াফেরনামাজ পড়া।
 
তাওয়াফের সুন্নত কার্যাবলী ---
(
১) 'তাওয়াফে'র শুরুতে 'হাজারে আসওয়াদএর দিকে মুখ করা।
(
২) সম্ভব হলে 'হাজ্রে আস্ওয়াদচুম্বন করা। নতুবা হাত দ্বারা দূর থেকে ইশারা করাএবং মুখে
'
বিসমিল্লাহি আল্লাহু আক্বার ওয়ালিল্লাহিল হ্ামদবলা।
(
৩) 'হা্জ্রে অস্ওয়াদবরাবর দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরিমা'র ন্যায় উভয় হাত সিনা পর্যন্ত উঠান।
(
৪) যে 'তাওয়াফে'র পরে 'সাঈআছে তাতে 'এযতেবাকরা। অর্থাৎ ইহরামের চাদরের (উপরের অংশের) দুই মাথা ডান বগলের নিচ দিয়ে বাম কাঁধের উপর ফেলে দেওয়া।
(
৫) 'সাঈযুক্ত 'তাওয়াফে'র প্রথম তিন চক্করে 'রমলকরা। অথর্াৎ বীরের মত হেলে দুলে জোর ক্বদমে
(
একের পর এক পা ফেলে) চলা।
(
৬) বাকী চার চক্কর সাধারণ গতিতে (ধীরে ধীরে) সম্পন্ন করা।
(
৭) প্রত্যেক চক্কর তাওয়াফ শেষ করে এবং শেষ চক্করেরও পরে 'হাজ্রে অস্ওয়াদ'কে চুম্বন করা। সম্ভব না হলে দূর থেকে ইশারা করে বিসমিল্লাহে আল্লাহ আকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ্"দোয়াটি পাঠ করা এবং ৩ নং নিয়মের ন্যায় দাড়িয়ে ইশারা করে 'তাওয়াফশেষ করা।
 
তাওয়াফের নিয়্যাত --- 
আল্লাহুম্মা ইন্নী উরীদু তাওয়াফা বাইতিকাল হারাম ফায়াচ্ছিরহু-লীওয়া তাক্বাব্বাল-হু-মিন্নীসাবাআ'তা আশ্ওয়াতি্বন লিল্লাহি তায়া'লা। বাংলায় নিয়ত- হে আল্লাহ আমি তাওয়াফ পালনের জন্য নিয়ত করলাম।
 
সায়ীর নিয়ম --- 
'
হজ্জ ও ওমরাহছাড়া নফল 'তাওয়াফে'র কোন সায়ী নাই। কারো নামে ওমরাহ করতে হলেও সায়ী করতে হবে। সায়ী অর্থ দৌড়ানো। এটা 'ছাফাপাহাড় থেকে প্রথমে শুরু করতে হবে। ছাফা থেকে মারওয়া। মারওয়া থেকে ছাফায়। এভাবে সাতবার সায়ীর সময় প্রথম তিন চক্কর সবুজ বাতির মাঝের অংশটুকু দৌড়ে দৌড়ে হেলে দুলে যাওয়া সুন্নাত (পুরুষদের জন্য)। পরের চার চক্কর সাধারণ গতিতে সম্পন্ন করতে হবে।
 
সায়ীর সহজ দোয়া --- 
সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়া লা-হাওলাওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আ'লিয়্যিল আ'যীমরাবি্বগফির ওয়ারহাম ওয়াআনতাল আ-আজ্জুল আকরাম।
 
সায়ীর কুরআনী দোয়া
'
ইন্নাছ্ ছাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন্ শাআ'ইরিল্লাহ্ ফামান হাজ্জাল বাইতা আও-ইতামারা ফালা জুনাহা আ'লাইহি আইয়াত্ত্বাওয়াফা বিহিমা ওমান তাত্বাওয়াআ খাইরান ফা-ইন্নাল্লাহা শাকিরুণ আ'লীম।" উপরোক্ত দুই দোয়া সাতবার চক্করের সময় হাটতে চলতে পড়তে হবে। পরেরটি না পারলে উপরেরটিই যথেষ্ট হবে।  
হজ্জ ও ওমরাহর করনীয়
একনজরে তিন প্রকার হজ্জের জরুরী কাজহুকুম ও তারিখ সমূহ।

১ম প্রকার হজ্জে ইফরাদের ১১টি জরুরী কাজ---- 
 ১ম প্রকার হজ্জে ইফরাদের ১১টি জরুরী কাজ
২য় প্রকার হজ্জে কেরানের জরুরী কাজ
৩য় প্রকার হজ্জে তামাত্তুর ১৫টি জরুরী কাজ
৩টি ফরজ

 (
১) ইহরাম (শুধু হজ্জের জন্য)।
 (
২) ৯ই জিলহজ্জ উ'কুফে আ'রাফা (সূর্য হেলার পর থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত)।
 (
৩) ১০ থেকে ১২ই জিলহজ্জ তাওয়াফে যিয়ারাত তবে ১০ই জি্বলহজ্ব তারিখই উত্তম।
 (
৪) অকুফে মুযদালেফায় ১০ই জিলহজ্জ সুবহে সাদেক সূর্য উদয় পর্যন্ত।
 (
৫) ১০ই জিলহজ্জ বড় শয়তানকে (জামারাতে আক্কাবায়) ৭টি কঙ্কর মারা। সুর্য হেলার পূর্বে দুপুর ১২টার আগে সুন্নত।
 (
৬) মাথা মুন্ডানো তবে দম দিতে হবে।
 (
৭) সায়ী ৯ তারিখের পূর্বে বা পরে) করে দিবেন।
 (
৮) ১১ তারিখে তিন শয়তানকে (প্রথম ছোট/মেঝ ও পড়ে বড়) ৭ক্ম৩=২১টি পাথর মারা।
 (
৯) ১২ তারিখে অনুরূপ তিন শয়তানকে ৭ক্ম৩= ২১টি পাথর মারা। সর্বমোট তিন দিনে ৭+২১+২১=৪৯টি কঙ্কর মারা।
 (
১০) 'বিদায়ী তাওয়াফে' (মক্কার বাইরের লোকদের জন্য) বিদায়ের পূর্বে। এটি ওয়াজিব।
 (
১১) তাওয়াফে কুদুম করা। (মক্কায় গিয়ে সর্বপ্রথম)
৩টি ফরজ

 (
১) ইহরাম (হজ্জ ও ওমরাহর জন্য)
 (
২) আরাফাতে অবস্থান।
 (
৩) তাওয়াফুয যিয়ারাত।

 
১০টি ওয়াজিব
 (
৪) ওমরাহর তাওয়াফ
 (
৫) ওমরাহর সায়ী
 (
৬) হজ্জের সায়ী
 (
৭) অকুফে মুযদালিফায়
 (
৮) ১০ই জিলহজ্ব তারিখে বড় শয়তানকে ৭টি পাথর মারা (দুপুর ১২টার পূর্বে) সুন্নত।
 (
৯) দম দিতে হবে।
 (
১০) মাথা মুন্ডানো।
 (
১১) ১১ই জিলহজ্ব তারিখে তিন শয়তানকে পাথর মারা
 (
১২) ১২ তারিখে তিন শয়তানকে পূর্বের ছকের নিয়মে পৃথক পৃথক ভাবে সূর্য হেলার পরে নিয়ম অনুযায়ী পাথর মারা।
 (
১৩) বিদায়ী তাওয়াফ।

৪টি ফরজ

 (
১) ওমরাহর ইহরাম (বাংলাদেশ)।
 (
২) হজ্জের ইহরাম (৮ তারিখ মক্কায়)
 (
৩) উ,কুফে আরাফা (৯ই জিলহজ্জ সূর্য হেলার পর থেকে সুর্যস্তের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত)।
 (
৪) তাওয়াফে জিয়ারত (১০ তারিখ অথবা ১১১২ তারিখ)

 
১১টি ওয়াজিব
 (
৫) তাওয়াফে ওমরাহ (মক্কায় গিয়েই)
 (
৬) ওমরাহর সায়ী (ওমরাহ তাওয়াফের পরই)
 (
৭) মাথা মুন্ডানো (ওমরাহর পর)।
 (
৮) হজ্জের সায়ী
 (
৯) বড় শয়তানকে ৭টি পাথর মারা ( ১০ই জিলহজ্ব তারিখ সুর্য হেলার বা ১২টা পূর্বে) সুন্নত।
 (
১০) কুরবানী করা (পাথর মেরে ১০ তারিখ)।
 (
১১) মাথা মুন্ডানো দম দিতে হবে।
 (
১২) ১১ তারিখ তিন শয়তানকে ৭+৭+৭=২১টি পাথর মারা।
 (
১৩) ১২ তারিখে তিন শয়তানকে ৭+৭+৭=২১টি পাথর মারা (সর্বমোট তিন দিনে ৭+২১+২১=৪৯টি পাথর মারতে হবে)।
 (
১৪) বিদায়ী তাওয়াফ।

একনজরে হজ্জের ৫টি দিন ও তার কাজ বা আ'মল সমূহ --- 
৮ই জিলহজ্জ থেকে ১৩ই জিলহজ্জ হাজীদের কোথায় কি করণীয় তার বর্ণনা নিম্নরূপ:
(
বিঃ দ্রঃ শুধু হজ্জে ইফরাদের জন্য কুরবানী মুস্তাহাব। শুকুর করা এবং হজ্জে তামাত্তুতে তাওয়াফে কুদুম সুন্নাত নয়) এ ছাড়া তিন প্রকারের হজ্জের আমল ৫ দিনে একই।
 
১ম দিন ৮ই জিলহজ্জ ---- 
ইহরাম অবস্থায় (ফরয) মক্কা থেকে হজ্জের নিয়্যাতে মিনায় রওয়ানা হোন।
 
এ দিনের কাজ দু'টি
(
১) ইহরাম (ফরজ) (২) ৫ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করা (সুন্নাত)। যোহরআছরমাগরিবএশা ও ৯ তারিখ ফজর সর্বমোট ৫ ওয়াক্ত
২য় দিন ৯ই জিলহজ্জ --- 
১। আরাফাতে অবস্থান (ফরজ)। ২। অকুফে মুযদালিফায় (ওয়াজিব)
 
আরাফাতে অবস্থান ---- 
-  
ফজরের নামাজ মিনায় পড়ে আরাফাতের ময়দানের দিকে রওয়ানা হোন।
-  
আরাফাতে সূর্য হেলার পর অর্থাৎ ১২টার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করা হজ্জের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ।
-  
ওয়াক্ত মত তাবুতে (মসজিদে নামেরায় না গেলে) বা আরাফার ময়দানে যে কোন স্থানে জোহরের সময় জোহর নামাজ আদায় করুন।
-  
আসরের নামাজ আসরের সময় আদায় করুননির্দিষ্ট সময় বা আগে পরেপৃথক পৃথক ভাবে।
-  
উল্লেখ্য: 'মসজিদে নামেরায়জোহর ও আসরের জামাত এক আযান দুই ইকামাতে একত্রে আদায় করলে একত্রে দুই ওয়াক্ত আদায় করতে হয়ওটার নাম 'জমে তাক্বদীম'। কিন্তু তাবুতে বা অন্য কোন স্থানে একত্রে নয়। ভিন্ন সময় ভিন্ন ভাবে ওয়াক্ত মত আদায় করতে হবে।)
-  
সূর্যাস্তের পর সাথে সাথে মাগরিব না পড়ে মুযদালিফায় রওয়ানা হোন।
-  
মুযদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ এক আযান দুই এক্বামাতে একত্রে আদায় করুন। এটা ওয়াজিব এটার নাম 'জামে তাখীর জামাতে পড়া উত্তম। মুযদালিফায় অবস্থান (ওয়াজিব) মুযদালিফায় থাকাকালীন পাহাড়ে অথবা তার পাদদেশে যে কোন ঘাস দুবলা থেকে খুঁজে খুঁজে পাথর মারার জন্য ৭২টি (চানাবুটের ন্যায় কঙ্কর) ছোট ছোট পাথর সংগ্রহ করে ইহরামের কাপড়ে বেঁধে নিন। ১০/১১/১২ তিন দিনে (৪৯টি পাথর) তিন শয়তানকে মারতে হবে।
-  
১ম দিন ৭টি
-  
২য় দিন ২১টি
-  
৩য় দিন ২১টি
(
সর্বমোট তিন দিনে ৭+২১+২১=৪৯টি )। তবে মিসিং হতে পারে বলে বেশী (৭২) নেওয়া সুন্নাত।
 

৩য় দিন ১০ই জিলহজ্জ ---- 
এ দিনের মোট কাজ ৪টি (১) বড় শয়তানকে পাথর মারা (২) কুরবানী (৩) মাথা মুন্ডানো (৪) তাওয়াফে যিয়ারাত করা
-  
মুযদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে সূর্য উদয়ের আগ পর্যন্ত অবস্থান করুন (ওয়াজিব)।
-  
মিনায় পৌছে বড় শয়তানকে ৭টি পাথর সূর্য হেলার আগে (১২টার পূর্বেই) মারুন। (সুন্নাত)।
-  
তারপর তামাত্তু ও কি্বরান হজ্জকারীগণ কুরবানী করুন (ওয়াজিব)।
-  
এরপর ইহরাম খুলে হালাল হয়ে স্বাভাবিক পোষাক পরিধান করুন। কিন্তু কোরবানী পূর্বে নয়। (তবে ইফরাদ হজ্জকারী কুরবানী না করলেও চলবে)।
-  
চুল ছাড়া বা মুন্ডানোর পর মক্কায় গিয়ে (সম্ভব হলে উত্তম) আজই তাওয়াফে যিয়ারত করুন। আজ করা সর্বোত্তম। (এটা ফরজ)।
-  
তাওয়াফ শেষে মিনায় এসে রাত্রি যাপন করুন সুন্নাত।
 

৪র্থ দিন ১১ই জিলহজ্জ ---- 
-  
১০ তারিখে কুরবানীচুল ছাটা ও তাওয়াফে যিয়ারত না করে থাকলে আজ করুন।
-  
সূর্য হেলার পর থেকে (১২টার পর) মিনায় তিন শয়তানকে সূর্যাস্তের পূর্বে (প্রথম ছোটতারপর মেজ অতঃপর বড়) ৭+৭+৭=২১টি পাথর মারুন (ওয়াজিব)। মিনায় রাত্রি যাপন করুন (সুন্নাত)।
 

৫ম দিন ১২ই জিলহজ্জ ---- 
-  
তাওয়াফে যিয়ারত ১০/১১ তারিখে না করে থাকলে আজ সূর্যাস্তের পূর্বে অবশ্যই করুন।
-  
মিনায় সূর্য হেলার পর থেকে (সুন্নাত সময় হল) সূর্যাস্তের পূর্বে ৭+৭+৭=২১টি পাথর (ছোটমেজ ও বড় ) শয়তানকে মেরে সূর্যাস্তের পূর্বে) মক্কায় রওয়ানার চেষ্টা করুন।
 
জরুরী কথা ------ 
(
১) তবে ১১/১২ তারিখ সূর্য হেলার পূর্বে পাথর মারলে আদায় হবে না। পূণরায় মারতে হবে। নতুবা  দম দিতে হবে।
(
২) যদি ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে মীনা ত্যাগ করে মক্কায় রওয়ানা না হন তবে ১৩ তারিখ পূনরায় তিন  শয়তানকে ৭+৭+৭=২১টি পাথর (ছোটমেজ ও বড় ) মেরে (পূর্বের নিয়মে) তারপর মক্কায় আসতে হবে।
(
৩) তাওয়াফে যিয়ারতের উত্তম সময় ১০ই জিলহজ্জ (তবে ৩ দিনএর সব মোট সময়) শেষ সময়  ১২ই জিলহজ্জ সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
(
৪) মক্কা থেকে মিনায় রওয়ানার পূর্বে যদি নফল তাওয়াফ করে হজ্জের নিয়্যাত সায়ী না করে থাকেন  (বা মিনায় আসেন) তাহলে হজ্জের পরে তাওয়াফে যিয়ারতের পর অবশ্যই হজ্জের সায়ী করুন। (ওয়াজিব)।
 
যিয়ারাতে মদীনাহ ----- 
হজ্জের পূর্বে অথবা পরে (সুবিধামত) সময়ে হাজীদল তথা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (দঃ) এর পাগলপাড়া উম্মতগণ এক মূহুর্তে একদিন/তথা ৮ দিনের জন্য (সম্ভব হলে) নতুবা এক রাত হলেও মদীনা শরীফে যান এবং রাসূলে পাক (দঃ) এর রওজা মোবারক যিয়ারতরিয়াদুল জান্নাতে বসা (নামাজ আদায় করা) জান্নাতুল বাকী যিয়ারত করা এবং বিশেষতঃ ৮ দিনে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করাসহ বহু ঐতিহাসিক স্থান তথা উহুদ পাহাড় ও বদর প্রান্তর দেখার সৌভাগ্য অর্জন করে থাকেন। এছাড়া মদীনা শরীফে আর কোন কাজ নেই। মূলতঃ মদীনা শরীফে মাসজিদে নববীতে নামাজ ও রাসূলের পাক (দঃ) এর রওজা শরীফ যিয়ারতই হল প্রধান কাজ। যদি সম্ভব হয় বা সময় সূযোগ থাকে তাহলে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ (সুন্নাত) রয়েছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে৮দিন=৪০ ওয়াক্ত থাকতেই হবে। এটা ফরজ বা ওয়াজিব নয়। আসলে এটা সুন্নাত এবং হজ্জের অংশ নয়। মূলতঃ আশেকে রাসূল (দঃ) দের জন্য রাসূলে পাক (দঃ) এর রওজা মোবারক যিয়ারতের নিয়্যাতে যাওয়াই হল মূল। 

বদলী হজ্জ -----
যে সকল মুসলিম নর-নারীর উপর হজ্জ ফরজ ছিলতাঁদের মধ্যে যদি কেউ মৃতু্যবরণ করে অথবা জীবিত কিন্তু শারিরীক দুর্বলতা ও অসুস্থতা ও অমতার কারণে হজ্জ করতে অপারগ হয়তাহলে অন্য কাউকে দিয়ে বিশেষ করে বিজ্ঞ আলেম বা হজ্জে পারদর্শী ব্যক্তি দ্বারা তাঁর বদলী হজ্জ করাতে পারবে। অর্থাৎ যাঁর জন্য বদলী হজ্জ করা হবে তাঁরই নামে ইহরাম পরিধান ও নিয়্যাত করে অন্য একজন হজ্জ আদায়করতে পারবে।


                       ----------------------------------------------------------------------------------
               '' শুধু নিজে শিক্ষিত হলে হবেনাপ্রথমে বিবেকটাকে শিক্ষিত করুন। ''

                                '' আপনার সন্তানকে ইসলামী শিক্ষা শিক্ষিত করুন ''

বিজ্ঞাপনের জন্য

রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৯

হজ্জের ইতিহাস

হজ্জের ইতিহাস 
হযরত ইবরাহীম আঃ মক্কায় ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন এবং তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাঈল আঃ কে এখানেবসিয়েছিলেনযেন তার পরে তিনি  আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারেন হযরত ইসমাঈল আঃ এর পর তার বংশধরগন কতকাল দীনইসলামের পথে চলেছে তা আল্লাহ তায়ালাই অবগত আছেন কিন্ত পরবর্তী কয়েক শতাব্দীর মধ্যেই তারা যে পূর্ববর্তী মহাপুরুষদেরশিক্ষা  প্রদর্শিত পথ ভূলে গিয়েছিল এবং অন্যান্য জাহেল জাতির ন্যায় সর্বপ্রকার পাপ প্রথা  গোমরাহীর প্রচলন করেছিলতাতেসন্দেহ নেই যে কাবা ঘরকে কেন্দ্র করে এককাল এক আল্লাহর ইবাদাত  প্রচার শুরু  হয়েছিলসেই কাবা ঘরে শত শত মূর্তি স্থাপনকরা হলো এমনকিমূর্তি পূজা বন্ধ করার সাধনা  আন্দোলনে যে হযরত ইবরাহীম আঃ  ইসমাঈল আঃ এর সারাটি জীবনঅতিবাহিত  হয়েছিল তাদের মূর্তি নির্মাণ করেও কাবা ঘরে স্থাপন করা হয়েছিল তাওহীদী ধর্মের অগ্রনেতা হযরত ইবরাহিম আঃ এরপরবর্তী বংশধরগন লাতমানাতউজ্জাহুবালনসরইয়াগুসআসাফনায়েলা আরও অসংখ্য নামের মূর্তি প্রস্তত করেছিল এবং সেসবের পূজা করছিল চন্দ্রবুধশুক্রশনি ইত্যাদি গ্রহ-নক্ষত্রের পূজা করত ভূতপ্রেতফেরেশতা এবং মৃত পূর্বপুরুষদের আত্নারপূজাও করতো তাদের মূর্খতা এতদূর প্রচন্ড রূপ লাভ করেছিল যেঘর থেকে বের হওয়ার সময় নিজেদের বংশের মূর্তি না পেলে পথচলার সময় যে কোনো রঙ্গীন পাথর দেখতে পেত তারা তারই পূজা শুরু করতো পাথর না পেলে মাটি  পানির সংমিশ্রণে একটিপ্রতিমূর্তি বানিয়ে তারা তার উপর  ছাগ দুগ্ধ ছিটিয়ে দিলেই তাদের মতে সে নিষ্প্রাণ পিন্ডটি খোদা হয়ে যেত এবং এরই পূজা শুরুকরতো যে পৌরহিত্য  ঠাকুরবাদের বিরূদ্ধে তাদের পিতা হযরত ইবরাহিম আঃ সমগ্র ইরাকের বিরূদ্ধে লড়াই করেছিলেনতা-আবার তাদের ঘরে প্রবেশ করেছিল কাবাকে তারা মূর্তি পূজার আড্ডাখানা বানিয়ে তারাই সেখানকার পুরোহিত সেজেছিল হজ্জকেতারা তীর্থযাত্রার অনুরূপ বানিয়ে তাওহীদ প্রচারের কেন্দ্রস্থল কাবা ঘর থেকে মূর্তি পূজার প্রচার শুরু করেছিল এবং পূজারীদেরসর্বপ্রকার কলাকৌশল অবলম্বন করে আরবের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লোকদের কাছ থেকে ”নযর-নিয়ায  ভেট-বেগাড়” আদায়করতো এভাবে হযরত ইবরাহিম আঃ  ইসমাঈল আঃ যে মহান কাজ শুরু করেছিলেন এবং যে উদ্দেশ্যে তারা হজ্জ প্রথার প্রচলনকরেছিলেন, ‍তা সবই বিনষ্ট হয়ে গেল
 ঘোর জাহিলী যুগে হজ্জের যে চরম দূর্গতি হয়েছিল একটি ব্যাপার থেকে তা স্পষ্টরূপে অনুমান করা যায় মক্কায় একটি বার্ষিকমেলা বসতোআরবের বড় বড় বংশ  গোত্রের কবি কিংবা কথক নিজ নিজ গোত্রের খ্যাতিবীরত্বশক্তিসম্মান  বদান্যতারপ্রশংসায় আকাশ বাতাস মুখরিত করে তুলতো এবং পারস্পরিক গৌরব  অহংকার প্রকাশের ব্যাপারে রীতিমত প্রতিযোগীতা করতোএমনকি অপরের নিন্দার পর্যায়ও এসে যেত সৌজন্য  বদান্যতার পাল্লা দেওয়া হতো প্রত্যেক গোত্র প্রধান নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণকরার জন্য ডেগ চড়াতো এবং অন্যের হেয় করার জন্য উটের পর উট জবেহ করতো  অপচয়  অপব্যয়ের পিছনে তাদেরএকটিই মাত্র লক্ষ্য ছিলতা এই যে সময় কোন বদান্যতা করলে মেলায় আগত লোকদের মাধ্যমে আরবের সর্বত্র তাদের খ্যাতিছড়িয়ে পড়বে এবং কোন গোত্রপতি কতটি উট জবেহ করেছিল এবং কতলোককে খাইয়েছিল ঘরে ঘরে তার চর্চা শুরু হবে এসবসম্মেলনে নাচগানমদজুয়াব্যভিচার এবং সকল প্রকার নির্লজ্জ কাজ কর্মের অনুষ্ঠান বিশেষ জাঁক-জমকের সাথে সম্পন্ন হতো উৎসবের সময় এক আল্লাহর দাসত্বের কথা কারো মনে জাগ্রত হতো কিনা সন্দেহ কাবা ঘরের চতুর্দিকে তাওয়াফ করা হতোকিন্ত তার পদ্ধতি ছিল বিকৃত নারী পুরুষ সকলেই উলঙ্গ হয়ে ঘুরতো আর বলতো আমরা আল্লাহর সামনে এমন অবস্থায় যাবযেমনঅবস্থায় আমাদের মা আমদেরকে প্রসব করেছে হযরত ইবরাহিম আঃ এর প্রতিষ্ঠিত মসজিদে ইবাদাত করা হতোএকথা ঠিক;কিভাবেখুব জোরে হাত তালি দেওয়া হতোবাঁশি বাজানো হতোশিংগায় ফুঁক দেওয়া হতো আল্লাহর নামও সেখানে নেওয়া হতো না,এমন নয় কিন্ত কিরূপেতারা বলতো-
لبيك اللهم لبيك لا شريك لك
إلا شريكا هو لك تمليكه وما ملك
আমি এসেছিহে আমার আল্লাহআমি এসেছিতোমার কেউ শরীক নেইকিন্ত যে তোমার আপনসে তোমার অংশীদার তুমিতারও মালিক এবং তার মালিকানারও মালিক
আল্লাহর নামে সেখানে কোরবানী দেওয়া হতো কিন্ত তার পন্থা ছিল কত নিকৃষ্ট  ঔদ্ধত্যপূর্ণ কুরবানীর রক্ত কাবা ঘরের দেওয়ালেলাগিয়ে ‍দিত এবং এর গোশত কাবার দরজায় ফেলে রাখতো কারন তাদের ধারণা মতে আল্লাহ এসব রক্ত  মাংশ তাদের কাছ থেকেকবূল করেছন হযরত ইবরাহিম আঃ এর সময়ই হজ্জের চার মাসে রক্তপাত হারাম করে দেওয়া হয়েছিল এবং  সময় সকল প্রকারযুদ্ধ বিগ্রহ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল পরবর্তীকালের লোকেরা  নিষেধ অনেকটা মেনে চলেছে বটেকিন্ত যুদ্ধ করতে যখন ইচ্ছা হতোতখন তারা এক বছরের নিষিদ্ধ মাসগুলোকে হালাল গন্য করতো এবং পরের বছর তারা কাযা আদায় করতো
এছাড়াও অন্যান্য যেসব লোক নিজ ধর্মের প্রতি নিষ্ঠাবান ছিল তারাও নিতান্ত মূর্খতার কারনে আশ্চার্য রকমের বহু রীতিনীতি পালনকরেছিল একদল লোক কোন কোন সম্বল না নিয়ে হজ্জের যাত্রা করতো এবং পথে পথে ভিক্ষা চেয়ে দিন অতিবাহিত করতোতাদের মতে এটা খুব পূণ্যের কাজ ছিল মুখে তারা বলতো “ আমরা আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করেছিআল্লাহর ঘর তাওয়াফ করারজন্য যাচ্ছিদুনিয়ার সম্বল নেওয়ার প্রয়োজন কি হজ্জে গমনকালে ব্যবসা করা কিংবা কামাই রোজগারের জন্য শ্রম করাকেসাধারণত নাজায়েয বলেই ধারণা করা হতো অনেক লোক আবার হজ্জের সময় পানাহারই বন্ধ করে দিতো এর নাম ছিল হজ্জেমুছমিত বা বোবা হজ্জ এছাড়া আরো কত প্রকার ভ্রন্ত  কুপ্রথার প্রচলন ছিল তার ইয়াত্তা নেই এরূপ ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থা কমবেশী দু’ হাজার বছর পর্যন্ত ছিল  দীর্ঘ সময়ে আরবদেশে কোনো নবীর আবির্ভাব হয়নিআর কোনো নবীর প্রকৃত শিক্ষাও সে দেশেপৌছেনি অবশেষে হযরত ইবরাহিম আঃ এর দোয়া পূর্ণ হওয়ার সময় ঘনিয়ে আসলো তিনি কাবা ঘর প্রতিষ্ঠার সময় আল্লাহরদরবারে দোয়া করেছিলেন- ”হে আল্লাহএদেশে একজন নবী  জাতির মধ্য থেকেই প্রেরণ করযে এসে তাদেরকে তোমার বাণীশোনাবেজ্ঞান  প্রজ্ঞা শিক্ষা দিবে এবং তাদের নৈতিক চরিত্র সংশোধন করবে  দোয়া আল্লাহর কাছে মন্জুর হয়েছিলতাই তারওঅধস্তন পুরুষে একজন কামেল ইনসান আবির্ভূত হলেনযাঁর নাম মুহাম্মাদ মুসতাফা ইবনে আব্দুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
হযরত ইবরাহিম আঃ যেরূপ পুরোহিত ও পূজারীদের বংশে জন্ম লাভ করেছিলেন, এ কামেলে ইনসান হযরত মুহাম্মাদ সঃও অনুরূপ এক পরিবারে জন্মগ্রহন করেছিলেন শতাব্দীকাল ধরে যারা কা’বা ঘরের পৌরহিত্য করে আসছিল। একচ্ছত্র হযরত ইবরাহিম আঃ যেরূপ আপন বংশের পৌরহিত্যবাদের উপর আঘাত হেনেছিলেন, শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সঃও সেরূপ প্রচন্ড আঘাত হেনেছিলেন নিজ বংশীয় পৌরহিত্য ও পন্ডিতগিরির উপর। শুধু তাই নয়, তাঁর আঘাতে তা একেবারে মূলোৎপাটিত হয়েছিল। হযরত ইবরাহিম আঃ যেমন বাতিল মতবাদ ও সমগ্র মিথ্যা খোদায়ী ধ্বংশ করা এবং এক আল্লাহর প্রভূত্ব কয়েম করার উদ্দেশ্যে চেষ্টা করেছিলেন, শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সঃও তাই করেছিলেন তিনি হযরত ইবরাহিম আঃ এর প্রচারিত প্রকৃত ও নির্মল দ্বীন ইসলামকে পূর্ণাঙ্গরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন একুশ বছর চেস্টায় তার এসব কাজ যখন পূর্ণতা লাভ করে তখন আল্লাহ তালার হুকুমে সমগ্র কাবা ঘরকেই তিনি সমগ্র দুনিয়ার এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসীদের কেন্দ্ররূপে স্থাপনের কথা ঘোষণা করলেন এবং দুনিয়ার সকল দিক হতেই হজ্জ করার জন্য কাবা ঘরে এসে জামায়েত হওয়ার জন্য আহ্বান জানালেনঃ
ولله علي الناس حج البيت من استطاع اليه سبيلا، ومن كفر فإن الله غني عن العالمين. ال عمران: 97
মানুষের উপর আল্লাহর হক এই যেএই কাবা ঘর পর্যন্ত আসার সামর্থ যাদের আছে তারা হজ্জ করার জন্য এখানে আসবে যারাঅস্বীকার করবে তারা জেনে রাখুক যেআল্লাহ সৃস্টিজগতের প্রতি অমুখাপেক্ষী
এভাবে নব পর্যায়ে হজ্জ প্রবর্তন করার সাথে সাথে জাহেলী যুগে দুহাজার বছর যাবত প্রচলিত যাবতীয় কুসংস্কার একবারে বন্ধ করাহলো কাবা গৃহের মূর্তিগুলো ভেঙ্গে ফেলা হলো মেলা এবং উৎসব তামাশা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হলো আল্লাহর ইবাদাতকরার সঠিক এবং স্বাভাবিত পদ্ধতির প্রচলন করা হলো আল্লাহর আদেশ হলোঃ
واذكروه كما هداكم، وان كنتم من قبله لمن الضالين. –البقرة- 198
আল্লাহর স্বরণ এবং ইবাদাত করার যে পন্থা তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেনঠিক তদানুযায়ী আল্লাহর স্বরণ  ইবাদাত করযদিও এর পূর্বে তোমরা পথ ভ্রষ্ট ছিলে
সকল অন্যায়  বাজে তৎপরতা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ হলোঃ
فلا رفث ولا فسوق ولا جدال في الحج. –البقرة- 197
হজ্জ উপলক্ষে কোনরূপ ব্যভিচারঅশ্লীলতাআল্লাহদ্রোহিতাফাসেকী কাজ এবং ঝগড়া বিবাদ বা যুদ্ধ বিগ্রহ করা যাবে না
কাব্য আর কবিত্বের প্রতিযোগীতাপূর্বপুরুষদের কাজ কর্মের কথা নিয়ে গৌরব অহংকার এবং পরের দোষ ত্রুটি প্রচার করা বাগালাগাল দেয়া বন্ধ করা হলোঃ
فاذا قضيتم مناسككم فاذكروا الله كذكركم آبائكم او أشد ذكرى. البقرة- 200
হজ্জের অনুষ্ঠানগুলো যখন সম্পন্ন হয়ে যাবে তখন তোমরা পূর্বপুরুষগন যেভাবে বাপ-দাদার স্বরণ করতো ঠিক অনুরূপ কিংবাতদপেক্ষা বেশী করে তোমরা আল্লাহর স্বরণ কর
শুধু লোকদের দেখাবার জন্য বা খ্যাতি অর্জনের জন্য যেসব বদান্যতা  দানশীলতার গৌরব করা হতো তা সবই বন্ধ হলো এবংতদাস্থলে হযরত ইবরাহিম আঃ এর আমলের পশু জবেহ করার রীতি প্রচলিত হলো কারণ এর ফলে গরীব হাজীদেরও করবানীরগোশত খাওয়ার সুযোগ মিলতো
كلوا واشربوا ولا تسرفوا، انه لا يحب المسرفين. الاعراف- 31
খাওপান করকিন্ত অপচয় কর নাকারণ আল্লাহ তালা অপচয়কারীদেরকে ভালোবাসেন না
فاذكروا اسم الله عليها صواف، فاذا وجبت جنوبها فكلوا منها واطعموا القانع والمعتر. الحج- 36
খালেছ আল্লাহর উদ্দেশ্যেই এবং তাঁরই নামে  জন্তুগুলোকে জবেহ কর জবেহ করার পর যখন প্রাণ একেবারে বের হয়ে যাবে,তখন নিজেরা তা খাও এবং ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্থকেও খেতে দাও
কুরবানির পশুর রক্ত খানায়ে কাবার দেয়ালে মর্দন করা এবং গোশত নিক্ষেপ করার কু্প্রথা বন্ধ হলো  পরিষ্কার বলে দেওয়া হলোঃ
لن ينال الله لحومها ولا دمائها ولكن يناله التقوى منكم. الحج- 37
এসব পশুর রক্ত বা গোশত আল্লাহর কাছে পৌছায় নাতোমাদের তাকওয়া এবং পরহেযগারিই আল্লাহর কাছে পৌছাতে পারে
উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করা একেবারে নিষিদ্ধ হয়ে গেল এবং বলা হলোঃ
قل من حرم زينة الله اللتي اخرج لعباده. الاعراف- 32
হে নবীআপনি তাদেরকে বলে দিন যেআল্লাহ তার বান্দাদের জন্য যেসব সৌন্দর্যবর্ধক জিনিস মনোনীত করেছেনতা কে হারামকরলো?”
قل ان الله لا يأمر بالفحشاء. الاعراف- 68
হে নবীআপনি বলে দিন যেআল্লাহ কখনো নির্লজ্জতার হুকুম দেন না
يبني آدم خذوا زينتكم عند كل مسجد. الاعراف- 31
হে আদম সন্তানসকল ইবাদাতের সময় তোমাদের সৌন্দর্য গ্রহন কর
হজ্জের নির্দিস্ট মাসগুলোকে উল্টিয়ে দেওয়া এবং নিষিদ্ধ মাসকে যুদ্ধের জন্য হালাল মনে করাকে বিশেষ কড়াকড়ির সাথে বন্ধ করাহলোঃ
انما النسيء زيادة في الكفر، يضل به اللذين كفروا، يحلونه عاما ويحرمونه عاما ليواطئوا عدة ما حرم الله، فيحلوا ما حرم الله. التوبة- 37
নাসী কুফরীকে অধিকতর বাড়িয়ে দেয় কাফেরগন এভাবে আরো অধিক গোমরাহীতে নিমজ্জিত হয় এক বছর এক মাসকে হালালমনে করে আবার তার দ্বিতীয় বছর তার বদলে আর একটি মাসকে হারাম বেধে নেয়যেন আল্লাহর নিষিদ্ধ মাসগুলোর সংখ্যা সমানথাকে কিন্ত এরকম কাজ করলে আল্লাহর নিষিদ্ধ মাসকেই হালাল করা হয়
সম্বল না নিয়ে হজ্জ যাত্রা করা নিষিদ্ধ হলো এবং পরিষ্কার বলে দেওয়া হলোঃ
وتزودوا، فان خير الزاد البتقوى. البقرة- 196
হজ্জ গমনকালে সম্বল অবশ্যই নেবে কারণ, (দুনিয়ার সফরের সম্বল না নেওয়া আখেরাতের সম্বল নয়আখেরাতের উত্তম সম্বলতোহচ্ছে তাকওয়া
হজ্জের সময় ব্যবসা করা বা অন্যকোন রুজি রোজগার করা নিতান্ত অপরাধের কাজআর এসব না করাকেই বড় পুণ্যের কাজ মনেকরা হতো আল্লাহ তালা  ভুল ধারণার প্রতিবাদ করে নাযিল করলেনঃ  ليس عليكم جناح ان تبتغوا فضلا من ربكم. البقرة – 197
“(হজ্জে গমনকালেব্যবসা করে আল্লাহর অনুগ্রহস্বরূপ কিছু কামাই রোযগার করলে তাতে কোন অসুবিধা নাই
বোবা হজ্জ এবং ক্ষুধার্ত-পিপাসার্ত হজ্জ হতেও মানুষকে বিরত রাখা হলো শুধু তাই নয়জাহেলী যুগের আরো অসংখ্য কুসংস্কারনির্মূল করে দিয়ে তাকওয়াআল্লাহর ভয়পবিত্রতা এবং অনাড়ম্বরতাকে মানবতার পূর্ণাঙ্গ আদেশ বলে ঘোষণা করা হলো হজ্জযাত্রীদের নির্দেশ দেওয়া হলো যেতারা যেন ঘর থেকে বের হওয়ার সময় নিজেদেরকে সকল প্রকার প্রার্থিব সম্পর্ক থেকে মুক্ত করেনেয়নফসের খাহেশ  লালসা যেন ত্যাগ করে হজ্জ গমন পথে স্ত্রী সহবাসও যেন না করেগালাগালকুৎসা রটানোঅশ্লীল উক্তিপ্রভৃত্তি জঘন্য আচরন থেকে যেন দূরে সরে থাকে কাবায় পৌছার যত পথ আছেপ্রত্যেক পথেই একটি স্থান নির্দিস্ট করে দেওয়াহয়েছে সে স্থান অতিক্রম করে কাবা ঘরের দিকে অগ্রসর হওয়ার পূর্বে এহরাম বেধে গরীবানা পোষাক পরিধান করে নেবে এতেআমীরগরীব সকলেই সমান হবেপৃথক পৃথক কওমগোত্র প্রভৃতি ঘুচে যাবে সকলেই এক বেশে নিতান্তই গরীবের বেশে একআল্লাহর সামনে বিনয়  নম্রতার সাথে উপস্থিত হবে এহরাম বাধার পর মানুষের রক্তপাততো দূরের কথাপশু শিকার করাও নিষিদ্ধমানুষের মধ্য থেকে পশু স্বভাব দূর করে শান্তি প্রিয়তার গুণ সৃস্টি এবং মানুষকে আধ্যাত্নিক ভাবধারায় মহীয়ান করে তোলাই এর মূলউদ্দেশ্য হজ্জের চার মাসকালের মধ্যে যেন কোন যুদ্ধ বিগ্রহ না হয়এজন্য  চারটি মাসকে হারাম করে দেওয়া হয়েছে এর ফলেকাবা গমনের সমস্ত পথ নিরাপদ হবেহজ্জ যাত্রীদের পথে কোনরূপ বিপদের আশংকা থাকবে না এরূপ পবিত্র ভাবধারা সহকারেতারা হেরেম শরীফে প্রবেশ করবেকোনরূপ রং তামাশানাচ গান এবং মেলা আর খেলা দেখার উদ্দেশ্যে নয় এখানে প্রতি পদে পদেআল্লাহর স্বরণআল্লাহর নামে জিকির , নামাযইবাদাত  কুরবানী এবং কাবা ঘর প্রদক্ষিন করতে হয় আর এখানে একটি মাত্রআওয়াজই মুখরিত হয়ে উঠেহেরেম শরীফের প্রাচীর আর পাহাড়ের চড়াই উৎরাইয়ের প্রতিটি পথে উচ্ছারিত হয়ঃ
لبيك اللهم لبيك، لبيك لا شريك لك لبيك، ان الحمد والنعمة لك والملك، لا شريك لك.
তোমার ডাকেই হাজির হয়েছিহে আল্লাহআমি এসেছিতোমার কোন শরীক নাইআমি তোমারই কাছে এসেছি সকল তারীফএকমাত্র তোমারই জন্য সব নেয়ামত তোমারই দানরাজত্ব আর প্রভুত্ব সবই তোমার তুমি এককেউ তোমার শরীক নেই
এরূপ পূত-পবিত্র এবং ঐকান্তিক নিষ্ঠাপূর্ণ হজ্জ সম্পর্কে বিশ্বনবী ইরশাদ করেছেনঃ
من حج لله فلم يرفث ولم يفسق رجع كيوم ولدته امه.
যে ব্যক্তি খাঁটিভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করে এবং  ব্যপারে সকল প্রকার লালসা এবং ফাসেকী থেকে দূরে থাকেসে সদ্যজাতশিশুর মতই (নিস্পাপ হয়েফিরে আসে
অতঃপর হজ্জের কল্যাণ এবং কার্যকরীতা বর্ণনা করার পূর্বে হজ্জ কি রকমের ফরজ তা বলা আবশ্যক আল্লাহ কালামে পাকেবলেনঃ
ولله علي الناس حج البيت من استطاع اليه سبيلا، ومن كفر فإن الله غني عن العالمين. ال عمران: 97
মানূষের উপর আল্লাহর হক এই যেএই কাবা  ঘর পর্যন্ত আসার সামর্থ যাদের আছে তারা হজ্জ করার জন্য এখানে আসবে যারাঅস্বীকার করবে তারা জেনে রাখুক যেআল্লাহ সৃস্টিজগতের প্রতি অমুখাপেক্ষী
 আয়াতে হজ্জ করার সামর্থ থাকা সত্বেও হজ্জ না করাকে পরিস্কার কুফরী বলা হয়েছে নবী করীম সঃ এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে যাবলেছেনতার মধ্যে দুটি হাদিস উল্লেখ করা হয়েছেঃ
من ملك زادا وراحلة تبلغه الي بيت الله ولم يحج فلا عليه ان يموت يهوديا او نصرانيا.
আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌছার জন্য পথের সম্বল এবং বাহন যার আছে সে যদি হজ্জ না করেতবে  অবস্থায় তার মৃত্যু ইহুদী নাসারার মৃত্যুর সমান বিবেচিত হবে
من لم يمنعه من الحج حاجة ظاهرة او سلطان جائر او مرض حابس فمات ولم يحج فليمت ان شاء يهوديا وان شاء نصرانيا.
যার কোনো প্রকাশ্য অসুবিধা নাইকোনো জালেম বাদশাও তার পথ রোধ করেনি এবং যাকে কোনো রোগ অসমর্থ করে রাখনি;এতদসত্বেও সে যদি হজ্জ না করেই মারা যায়তবে সে ইহুদী বা খৃস্টান হয়েই মারা যেতে পারে
হযরত ওমর ফারুক রাঃ এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, ”সামর্থ্য থাকা সত্বেও যারা হজ্জ করে নাতাদের উপর জিযিয়া কর আরোপ করতেইচ্ছা হয়কারন তারা মুসলমান নয়
আল্লাহ তালার উল্লেখিত এরশাদ এবং রাসূলে কারীম সঃ  তাঁর খলিফার  ব্যাখ্যা দ্বারা প্রত্যেকেই বুঝতে পারেন যেহজ্জ করাসামান্য ফরয নয় তা আদায় করা না করা মুসলমানদের ইচ্ছাধীন করে দেওয়া হয়নি বস্তুত যেসব মুসলমানদের কাবা পর্যন্ত যাওয়াআসার সামর্থ আছেশারীরিক ‍দিক দিয়েও যারা অক্ষম নয় তাদের পক্ষে জীবনের মধ্যে একবার হজ্জ করা কর্তব্য তা না করেকিছুতেই মুক্তি নেই দুনিয়ার যে কোনেই বাসা করুক না কেনসামর্থ্য থাকা সত্তেও একজন মুসলমান যদি হজ্জকে এড়াতে চায় এবংঅসংখ্য ব্যস্ততার অজুহাতে বছরের পর বছর তাকে ক্রমাগত পিছিয়ে দেয়সময় থাকতে আদায় না করেতবে তার ঈমান আছেকিনা সন্দেহ আর যাদের সমগ্র জীবনেও হজ্জ আদায় করার কর্তব্য পালনের কথা মনে জাগেনাদুনিয়ার ‍দিকে দিকেদেশে দেশেঘুরে বেড়ায়ইউরোপ আমেরিকা যাতায়াতকালে হেজাজের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেকাবা ঘর যেখান থেকে মাত্র কয়েক ঘন্টার পথতবুও হজ্জ আদায় করার খেয়াল তাদের মনে জাগ্রতা হয় নাতারা কিছুতেই মুসলমান নয়মুসলমান বলে দাবী করার কোনোইঅধিকার তাদের নেই দাবী করলেও সেই দাবী হবে মিথ্যা আর যারা তাদেরকে মুসলমান বলে মনে করেতারা কুরআন শরীফেরবিধান সম্পর্কে অজ্ঞজাহেল এসব লোকের জন্য যদি মুসলিম জাহানের জন্য দরদ থাকে তবে থাকতে পারেকিন্ত তার কোনইস্বার্থকতা নেই কারন তাদের হৃদয় মনে আল্লাহর আনুগত্য  তার বিধানের প্রতি ঈমানের কোনো অস্তিত্ব নেইএকথা শতঃসিদ্ধ

                       ----------------------------------------------------------------------------------
                    '' শুধু নিজে শিক্ষিত হলে হবেনা, প্রথমে বিবেকটাকে শিক্ষিত করুন। ''
Widget ByBlogger Maruf
Widget ByBlogger Maruf