রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৯

হজ্জের নিয়মাবলী

                     হজ্জের নিয়মাবলী 

     # হজ্জ আল্লাহ প্রেম ও বিশ্ব মুসলিমের ভ্রাতৃত্ববন্ধনের অন্যতম পথ। হজ্জ বিশ্ব মুসলিমের সামাজিকরাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক ঐক্যের এক অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটি আল্লাহর নির্দেশিত এমন একটা ফরয বিধানযা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ পঞ্চম স্তম্ভ এবং ইসলামের অপরাপর বিধান থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। হজ্জে আর্থিক ও কায়িক শ্রমের সমন্বয় রয়েছেযা অন্য কোন ইবাদতে একসঙ্গে পাওয়া যায় না। হজ্জ সারা বিশ্বের সহীহ মুসলিম উম্মাহর ঐক্যসংহতি ও সাম্যের প্রতীক। যার ওপর হজ্জ ফরয তাকে অবশ্যই হজ্জ আদায় করতে হবে। ৮ যিলহজ্জ থেকে ১২ যিলহজ্জ পর্যন্ত এই ৫ দিনে মক্কা মুকাররমা ও তার আশে পাশের কয়েকটি জায়গায় (মক্কায় তাওয়াফসাফা-মারওয়ায় সায়ীমিনার তাঁবুর জীবনআরাফাতের বিশাল প্রান্তরে অবস্থানমুজদালিফায় রাত্রি যাপন আবার মিনাতে প্রত্যাবর্তনজামরাগুলোতে কংকর নিক্ষেপমিনাতে পশু কুরবানীআবার ক্বাবা তাওয়াফসাফা-মারওয়ায় সায়ী ইত্যাদি) কিছু কর্তব্য কার্য সম্পাদন করাকে ইসলামের পরিভাষায় হজ্জ বলা হয়।হজ্জঅর্থ কছদসংকল্প। 
হজ্জের আভিধানিক অর্থ হলো যিয়ারতের এরাদা করা। শরীয়তের পরিভাষায় হজ্জের অর্থ কতক কার্যক্রম সম্পাদন করার উদ্দেশ্যে ইহ্রামের সাথে বায়তুল্লাহ জেয়ারতের সংকল্প। অর্থাৎ আল্লাহকে রাজি খুশী করার উদ্দেশ্যে শরীয়তের বিধান অনুসারে হজ্জের ইহ্রাম বেঁধে বায়তুল্লাহ শরীফসহ নির্দিষ্ট সময়ে  নির্দিষ্ট স্থানসমূহেনির্দিষ্ট কর্মসমূহ সুনির্দিষ্ট পন্থায় সম্পাদন (যিয়ারত) করাকে ইসলামের পরিভাষায় হজ্জ বলা হয়। হজ্জ একাধারে আর্থিক,শারীরিক ও মানসিক এবাদত। এতে অর্থ ব্যয় হয়শারীরিক পরিশ্রম হয়পরিবার পরিজনের মায়া ত্যাগ করার মত মানসিক কষ্টও রয়েছে। ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে পবিত্র মক্কা শরীফে যাতায়াতের খরচ বহন এবং ওই সময় স্বীয় পরিবারের ব্যয়ভার নির্বাহে সক্ষমদৈহিকভাবে সামর্থপ্রাপ্তবয়স্ক জ্ঞানবান প্রত্যেক সহীহ মুসলিম নর-নারীর ওপর জীবনে একবার হজ্জ ফরয। সঠিকভাবে হজ্জব্রত আদায়কারীকেও দেয়া হয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ। একবার হজ্জ করা ফরজ। একবারের বেশী করলে সেটা নফল।
ইসলামী ইবাদতসমূহের মধ্যে হজ্জের গুরুত্ব অপরিসীম। নি¤œ কোরআনহাদীস ও শরীয়তের দৃষ্টিতে হজ্জের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো।
হজ্জের উদ্দেশ্য--- 
হজ্জের উদ্দেশ্য হলো সারা বিশ্বের সহীহ মুসলিমদের সম্মিলিত করার মাধ্যমে আল্লাহর হুকুম পালন ও তাদের কল্যাণ সাধন করা। এক কথায় শিরক পরিহার করে আল্লাহকে একমাত্র প্রভু হিসেবে স্বীকার করে নেয়া। হজ্জ অনুষ্ঠান বিশ্ব সহীহ মুসলিম ঐক্য-সংহতি ও ভ্রাতৃত্বের এক অপূর্ব নিদর্শন। হজ্জের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহকে রাজি খুশী করা। তালবিয়া ঘোষণার মাধ্যমে তাওহীদ ভিত্তিক জীবন যাপন করতে অঙ্গীকার বদ্ধ হওয়া।
এক নজরে হজ্ব ও ওমরাহ্ --- 
হজ্জের ফরজ ৩টি --- 
১। ইহরাম বাধা ২। উ'কুফে আ'রাফা (আরাফাতের ময়দানে অবস্থান) ৩। তাওয়াফুয্ যিয়ারাত
 
হজ্জের ওয়াজিব ৬টি --- 
(
১) 'সাফা ও মারওয়াপাহাড় দ্বয়ের মাঝে ৭ বার সায়ী করা।
(
২) অকুফে মুযদালিফায় (৯ই জিলহজ্জ) অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সুর্যদয় পর্যন্ত একমুহুর্তের জন্য হলেও অবস্থান করা।
(
৩) মিনায় তিন শয়তান (জামারাত) সমূহকে পাথর নিপে করা।
(
৪) 'হজ্জে তামাত্তুও 'কি্বরানকারীগণ 'হজ্জসমাপনের জন্য দমে শোকর করা।
(
৫) এহরাম খোলার পূর্বে মাথার চুল মুন্ডানো বা ছাটা।
(
৬) মক্কার বাইরের লোকদের জন্য তাওয়াফে বিদা অর্থাৎ মক্কা থেকে বিদায়কালীন তাওয়াফ করা। এছাড়া আর যে সমস্ত আমল রয়েছে সব সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব।
 
ওমরাহর ফরজওয়াজিব --- 
দুইটি ফরজ: (১) ইহরাম পরিধান করা (২) তাওয়াফ দুইটি ওয়াজিব: (১) সাফা ও মারওয়া মধ্যবর্তী (সবুজ বাতি) স্থানে সাতবার সায়ী করা (২) মাথার চুল মুন্ডানো বা ছাটা।
 
তালবিয়া --- 
''
লাব্বাঈক আল্লাহুম্মা লাব্বাঈকলাব্বাঈকলা-শারীকা-লাকা লাব্বাঈকইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি'মাতা লাকা ওয়াল-মুল্কলা শারীকালাক।" অর্থআমি হাজির হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত! আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোন অংশীদার নেই। নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার। আপনার কোন অংশীদার নেই।
 
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ --- 
(
১) সেলাইযুক্ত যে কোন কাপড় বা জুতা ব্যবহারএক্ষেত্রে স্পঞ্জ সেন্ডেলের ব্যবহার করা।
(
২) মস্তক ও মুখমন্ডল (ইহরামের কাপড়সহ যে কোন কাপড় দ্বারা) ঢাকা,
(
৩) পায়ের পিঠ ঢেকে যায় এমন জুতা পরা।
(
৪) চুলকাটা বা ছিড়ে ফেলা,
(
৫) নখকাটা,
(
৬) ঘ্রানযুক্ত তৈল বা আতর লাগানো।
(
৭) স্ত্রীর সঙ্গে সংগম করা।
(
৮) যৌন উত্তেজনামূলক কোন আচরণ বা কোন কথা বলা।
(
৯) শিকার করা।
(
১০) ঝগড়া বিবাদ বা যুদ্ধ করা।
(
১১) চুল দাড়িতে চিরুনী বা আঙ্গুলী চালনা করাযাতে ছিড়ার আশংকা থাকে।
(
১২) শরীরে সাবান লাগানো।
(
১৩) উকুনছারপোকামশা ও মাছিসহ কোন জীবজন্তু হত্যা করা বা মারা।
(
১৪) কোন গুনাহের কাজ করাইত্যাদি।

হজ্জের প্রকার ও নিয়তসমূহ --- 
প্রথম প্রকার হজ্জে ইফরাদ --- 
বর্ণনাওমরাহ্ ব্যতিত শুধু হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধা এবং হজ্জের সাথে ওমরাহকে না মিলানো। (বদলী হজ্জের জন্যও এই হজ্জ)। নিয়্যাতআল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল হাজ্জা ফায়াসছির হুলিওয়াতা কাব্বালহুমিনি্ন। (বাংলা নিয়ত- আল্লাহ আমি ইফরাদ হজ্জের উদ্দেশ্যে আপনার সন্তুষ্টির জন্য ইহরাম বাধলাম। তা সহজ করে দিন ও কবুল করে নিন)।
 

দ্বিতীয় প্রকার হজ্জে কি্বরান --- 
বর্ণনাএকত্রে একই স্থান থেকে হজ্জ ও ওমরার নিয়্যাত করে হজ্জের সাথে ওমরাহকে মিলানো এবং একই ইহ্রামে উভয়টি আদায় করা। নিয়্যাতআল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল উ'মরাতা ফায়াচ্ছির লী-ওয়াতাক্াব্বাল মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি আপনার উদ্দেশ্যে হজ্জে কি্বরানের জন্য ইহরাম বাধলাম তা সহজ করে দিন ও কবুল করে নিন।  তৃতীয় প্রকার হজ্জে তামাত্তু --- 
বর্ণনাএকই সফরে পৃথক পৃথক ভাবে 'ইহরামপরিধান করে 'হজ্জ ও ওমরাহআদায় করা। প্রথম ইহ্রামে ওমরাহর নিয়্যাত করে তা পালন শেষে চুল কেটে 'ইহরামখুলে হালাল হয়ে দ্বিতীয় বার নতুন করে হজ্জের নিয়্যাতে ৮ই জিলহজ্জ 'মক্ক শরীফথেকে হজ্জের জন্য ইহরাম বাধা। তামাত্তু করার ইচ্ছা থাকলে প্রথমে ওমরার নিয়্যাত করে এহরাম বাঁধুন।
 
শুধু ওমরাহর নিয়্যাত --- 
আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল উম'রাতা ফায়াচ্ছির লী-ওয়াতাক্াব্বাল মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি ওমরাহ্ পালনের জন্য ইহরাম বাধলাম তা সহজ করে দিন এবং কবুল করে নিন।  শুধু হজ্জের নিয়্যাত---  আল্লাহুম্মা ইন্নী উরীদুল হাজ্জা ফায়াচ্ছিরহু-লী অ-তাকাব্বালহু মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি পবিত্র হজ্জ পালনের জন্য ইহরাম বেধে নিয়ত করলাম তা সহজ করে দিন এবং কবুল করে নিন।
 
তাওয়াফের বিবরণ --- 
হাজীদের সর্বপ্রথম কাজই হলো (তামাত্তু ও ক্বেরান কারীগণ) নিজের মালছামানগুছিয়ে রেখে পাকপবিত্র হয়ে মোটেই দেরী না করে 'হারাম শরীফেহাজিরা দেওয়া এবং 'তাওয়াফকরা। ওমরাহ এবং হজ্জের তাওয়াফ ব্যাতিত নফল তাওয়াফ ও করা যায়। যেমনরাসূল (দঃ)সাহাবা-আওলিয়াআহ্লে বাইতমা-বাবাপীর-উস্তাদ ও অন্যান্য মুরুব্বী বা সন্তানদের স্মরনে বা তাঁদের নামে তাওয়াফ করা।
 
তাওয়াফের ওয়াজিব সমূহ --- 
(
১) শরীর পাক-সাফ রাখাওজু করা। মহিলাদের হায়েজ নেফাছ অবস্থায় তাওয়াফ করা জায়েজ নাই।
(
২) ছতর ঢাকা। অর্থাৎ যেটুকু ঢাকা প্রত্যেক পুরুষ-নারীর জন্য ফরজ।
(
৩) 'হাতীমে কা'বারবাইরে থেকে 'তাওয়াফকরা।
(
৪) পায়ে হেঁটে 'তাওয়াফকরা। অম ব্যক্তি খাটিয়ার মাধ্যমে 'তাওয়াফকরতে পারেন।
(
৫) 'হাজ্রে আস্ওয়াদথেকে শুরু করে ডানদিক দিয়ে 'তাওয়াফশুরু করা।
(
৬) এক নাগাড়ে বিরতিহীন ভাবে 'সাতবার চক্করদিয়ে 'তাওয়াফপূর্ণ করা।
(
৭) 'সাত চক্করেএক 'তাওয়াফ', এটা পূর্ণ হলেই 'তাওয়াফেরনামাজ পড়া।
 
তাওয়াফের সুন্নত কার্যাবলী ---
(
১) 'তাওয়াফে'র শুরুতে 'হাজারে আসওয়াদএর দিকে মুখ করা।
(
২) সম্ভব হলে 'হাজ্রে আস্ওয়াদচুম্বন করা। নতুবা হাত দ্বারা দূর থেকে ইশারা করাএবং মুখে
'
বিসমিল্লাহি আল্লাহু আক্বার ওয়ালিল্লাহিল হ্ামদবলা।
(
৩) 'হা্জ্রে অস্ওয়াদবরাবর দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরিমা'র ন্যায় উভয় হাত সিনা পর্যন্ত উঠান।
(
৪) যে 'তাওয়াফে'র পরে 'সাঈআছে তাতে 'এযতেবাকরা। অর্থাৎ ইহরামের চাদরের (উপরের অংশের) দুই মাথা ডান বগলের নিচ দিয়ে বাম কাঁধের উপর ফেলে দেওয়া।
(
৫) 'সাঈযুক্ত 'তাওয়াফে'র প্রথম তিন চক্করে 'রমলকরা। অথর্াৎ বীরের মত হেলে দুলে জোর ক্বদমে
(
একের পর এক পা ফেলে) চলা।
(
৬) বাকী চার চক্কর সাধারণ গতিতে (ধীরে ধীরে) সম্পন্ন করা।
(
৭) প্রত্যেক চক্কর তাওয়াফ শেষ করে এবং শেষ চক্করেরও পরে 'হাজ্রে অস্ওয়াদ'কে চুম্বন করা। সম্ভব না হলে দূর থেকে ইশারা করে বিসমিল্লাহে আল্লাহ আকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ্"দোয়াটি পাঠ করা এবং ৩ নং নিয়মের ন্যায় দাড়িয়ে ইশারা করে 'তাওয়াফশেষ করা।
 
তাওয়াফের নিয়্যাত --- 
আল্লাহুম্মা ইন্নী উরীদু তাওয়াফা বাইতিকাল হারাম ফায়াচ্ছিরহু-লীওয়া তাক্বাব্বাল-হু-মিন্নীসাবাআ'তা আশ্ওয়াতি্বন লিল্লাহি তায়া'লা। বাংলায় নিয়ত- হে আল্লাহ আমি তাওয়াফ পালনের জন্য নিয়ত করলাম।
 
সায়ীর নিয়ম --- 
'
হজ্জ ও ওমরাহছাড়া নফল 'তাওয়াফে'র কোন সায়ী নাই। কারো নামে ওমরাহ করতে হলেও সায়ী করতে হবে। সায়ী অর্থ দৌড়ানো। এটা 'ছাফাপাহাড় থেকে প্রথমে শুরু করতে হবে। ছাফা থেকে মারওয়া। মারওয়া থেকে ছাফায়। এভাবে সাতবার সায়ীর সময় প্রথম তিন চক্কর সবুজ বাতির মাঝের অংশটুকু দৌড়ে দৌড়ে হেলে দুলে যাওয়া সুন্নাত (পুরুষদের জন্য)। পরের চার চক্কর সাধারণ গতিতে সম্পন্ন করতে হবে।
 
সায়ীর সহজ দোয়া --- 
সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়া লা-হাওলাওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আ'লিয়্যিল আ'যীমরাবি্বগফির ওয়ারহাম ওয়াআনতাল আ-আজ্জুল আকরাম।
 
সায়ীর কুরআনী দোয়া
'
ইন্নাছ্ ছাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন্ শাআ'ইরিল্লাহ্ ফামান হাজ্জাল বাইতা আও-ইতামারা ফালা জুনাহা আ'লাইহি আইয়াত্ত্বাওয়াফা বিহিমা ওমান তাত্বাওয়াআ খাইরান ফা-ইন্নাল্লাহা শাকিরুণ আ'লীম।" উপরোক্ত দুই দোয়া সাতবার চক্করের সময় হাটতে চলতে পড়তে হবে। পরেরটি না পারলে উপরেরটিই যথেষ্ট হবে।  
হজ্জ ও ওমরাহর করনীয়
একনজরে তিন প্রকার হজ্জের জরুরী কাজহুকুম ও তারিখ সমূহ।

১ম প্রকার হজ্জে ইফরাদের ১১টি জরুরী কাজ---- 
 ১ম প্রকার হজ্জে ইফরাদের ১১টি জরুরী কাজ
২য় প্রকার হজ্জে কেরানের জরুরী কাজ
৩য় প্রকার হজ্জে তামাত্তুর ১৫টি জরুরী কাজ
৩টি ফরজ

 (
১) ইহরাম (শুধু হজ্জের জন্য)।
 (
২) ৯ই জিলহজ্জ উ'কুফে আ'রাফা (সূর্য হেলার পর থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত)।
 (
৩) ১০ থেকে ১২ই জিলহজ্জ তাওয়াফে যিয়ারাত তবে ১০ই জি্বলহজ্ব তারিখই উত্তম।
 (
৪) অকুফে মুযদালেফায় ১০ই জিলহজ্জ সুবহে সাদেক সূর্য উদয় পর্যন্ত।
 (
৫) ১০ই জিলহজ্জ বড় শয়তানকে (জামারাতে আক্কাবায়) ৭টি কঙ্কর মারা। সুর্য হেলার পূর্বে দুপুর ১২টার আগে সুন্নত।
 (
৬) মাথা মুন্ডানো তবে দম দিতে হবে।
 (
৭) সায়ী ৯ তারিখের পূর্বে বা পরে) করে দিবেন।
 (
৮) ১১ তারিখে তিন শয়তানকে (প্রথম ছোট/মেঝ ও পড়ে বড়) ৭ক্ম৩=২১টি পাথর মারা।
 (
৯) ১২ তারিখে অনুরূপ তিন শয়তানকে ৭ক্ম৩= ২১টি পাথর মারা। সর্বমোট তিন দিনে ৭+২১+২১=৪৯টি কঙ্কর মারা।
 (
১০) 'বিদায়ী তাওয়াফে' (মক্কার বাইরের লোকদের জন্য) বিদায়ের পূর্বে। এটি ওয়াজিব।
 (
১১) তাওয়াফে কুদুম করা। (মক্কায় গিয়ে সর্বপ্রথম)
৩টি ফরজ

 (
১) ইহরাম (হজ্জ ও ওমরাহর জন্য)
 (
২) আরাফাতে অবস্থান।
 (
৩) তাওয়াফুয যিয়ারাত।

 
১০টি ওয়াজিব
 (
৪) ওমরাহর তাওয়াফ
 (
৫) ওমরাহর সায়ী
 (
৬) হজ্জের সায়ী
 (
৭) অকুফে মুযদালিফায়
 (
৮) ১০ই জিলহজ্ব তারিখে বড় শয়তানকে ৭টি পাথর মারা (দুপুর ১২টার পূর্বে) সুন্নত।
 (
৯) দম দিতে হবে।
 (
১০) মাথা মুন্ডানো।
 (
১১) ১১ই জিলহজ্ব তারিখে তিন শয়তানকে পাথর মারা
 (
১২) ১২ তারিখে তিন শয়তানকে পূর্বের ছকের নিয়মে পৃথক পৃথক ভাবে সূর্য হেলার পরে নিয়ম অনুযায়ী পাথর মারা।
 (
১৩) বিদায়ী তাওয়াফ।

৪টি ফরজ

 (
১) ওমরাহর ইহরাম (বাংলাদেশ)।
 (
২) হজ্জের ইহরাম (৮ তারিখ মক্কায়)
 (
৩) উ,কুফে আরাফা (৯ই জিলহজ্জ সূর্য হেলার পর থেকে সুর্যস্তের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত)।
 (
৪) তাওয়াফে জিয়ারত (১০ তারিখ অথবা ১১১২ তারিখ)

 
১১টি ওয়াজিব
 (
৫) তাওয়াফে ওমরাহ (মক্কায় গিয়েই)
 (
৬) ওমরাহর সায়ী (ওমরাহ তাওয়াফের পরই)
 (
৭) মাথা মুন্ডানো (ওমরাহর পর)।
 (
৮) হজ্জের সায়ী
 (
৯) বড় শয়তানকে ৭টি পাথর মারা ( ১০ই জিলহজ্ব তারিখ সুর্য হেলার বা ১২টা পূর্বে) সুন্নত।
 (
১০) কুরবানী করা (পাথর মেরে ১০ তারিখ)।
 (
১১) মাথা মুন্ডানো দম দিতে হবে।
 (
১২) ১১ তারিখ তিন শয়তানকে ৭+৭+৭=২১টি পাথর মারা।
 (
১৩) ১২ তারিখে তিন শয়তানকে ৭+৭+৭=২১টি পাথর মারা (সর্বমোট তিন দিনে ৭+২১+২১=৪৯টি পাথর মারতে হবে)।
 (
১৪) বিদায়ী তাওয়াফ।

একনজরে হজ্জের ৫টি দিন ও তার কাজ বা আ'মল সমূহ --- 
৮ই জিলহজ্জ থেকে ১৩ই জিলহজ্জ হাজীদের কোথায় কি করণীয় তার বর্ণনা নিম্নরূপ:
(
বিঃ দ্রঃ শুধু হজ্জে ইফরাদের জন্য কুরবানী মুস্তাহাব। শুকুর করা এবং হজ্জে তামাত্তুতে তাওয়াফে কুদুম সুন্নাত নয়) এ ছাড়া তিন প্রকারের হজ্জের আমল ৫ দিনে একই।
 
১ম দিন ৮ই জিলহজ্জ ---- 
ইহরাম অবস্থায় (ফরয) মক্কা থেকে হজ্জের নিয়্যাতে মিনায় রওয়ানা হোন।
 
এ দিনের কাজ দু'টি
(
১) ইহরাম (ফরজ) (২) ৫ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করা (সুন্নাত)। যোহরআছরমাগরিবএশা ও ৯ তারিখ ফজর সর্বমোট ৫ ওয়াক্ত
২য় দিন ৯ই জিলহজ্জ --- 
১। আরাফাতে অবস্থান (ফরজ)। ২। অকুফে মুযদালিফায় (ওয়াজিব)
 
আরাফাতে অবস্থান ---- 
-  
ফজরের নামাজ মিনায় পড়ে আরাফাতের ময়দানের দিকে রওয়ানা হোন।
-  
আরাফাতে সূর্য হেলার পর অর্থাৎ ১২টার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করা হজ্জের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ।
-  
ওয়াক্ত মত তাবুতে (মসজিদে নামেরায় না গেলে) বা আরাফার ময়দানে যে কোন স্থানে জোহরের সময় জোহর নামাজ আদায় করুন।
-  
আসরের নামাজ আসরের সময় আদায় করুননির্দিষ্ট সময় বা আগে পরেপৃথক পৃথক ভাবে।
-  
উল্লেখ্য: 'মসজিদে নামেরায়জোহর ও আসরের জামাত এক আযান দুই ইকামাতে একত্রে আদায় করলে একত্রে দুই ওয়াক্ত আদায় করতে হয়ওটার নাম 'জমে তাক্বদীম'। কিন্তু তাবুতে বা অন্য কোন স্থানে একত্রে নয়। ভিন্ন সময় ভিন্ন ভাবে ওয়াক্ত মত আদায় করতে হবে।)
-  
সূর্যাস্তের পর সাথে সাথে মাগরিব না পড়ে মুযদালিফায় রওয়ানা হোন।
-  
মুযদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ এক আযান দুই এক্বামাতে একত্রে আদায় করুন। এটা ওয়াজিব এটার নাম 'জামে তাখীর জামাতে পড়া উত্তম। মুযদালিফায় অবস্থান (ওয়াজিব) মুযদালিফায় থাকাকালীন পাহাড়ে অথবা তার পাদদেশে যে কোন ঘাস দুবলা থেকে খুঁজে খুঁজে পাথর মারার জন্য ৭২টি (চানাবুটের ন্যায় কঙ্কর) ছোট ছোট পাথর সংগ্রহ করে ইহরামের কাপড়ে বেঁধে নিন। ১০/১১/১২ তিন দিনে (৪৯টি পাথর) তিন শয়তানকে মারতে হবে।
-  
১ম দিন ৭টি
-  
২য় দিন ২১টি
-  
৩য় দিন ২১টি
(
সর্বমোট তিন দিনে ৭+২১+২১=৪৯টি )। তবে মিসিং হতে পারে বলে বেশী (৭২) নেওয়া সুন্নাত।
 

৩য় দিন ১০ই জিলহজ্জ ---- 
এ দিনের মোট কাজ ৪টি (১) বড় শয়তানকে পাথর মারা (২) কুরবানী (৩) মাথা মুন্ডানো (৪) তাওয়াফে যিয়ারাত করা
-  
মুযদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে সূর্য উদয়ের আগ পর্যন্ত অবস্থান করুন (ওয়াজিব)।
-  
মিনায় পৌছে বড় শয়তানকে ৭টি পাথর সূর্য হেলার আগে (১২টার পূর্বেই) মারুন। (সুন্নাত)।
-  
তারপর তামাত্তু ও কি্বরান হজ্জকারীগণ কুরবানী করুন (ওয়াজিব)।
-  
এরপর ইহরাম খুলে হালাল হয়ে স্বাভাবিক পোষাক পরিধান করুন। কিন্তু কোরবানী পূর্বে নয়। (তবে ইফরাদ হজ্জকারী কুরবানী না করলেও চলবে)।
-  
চুল ছাড়া বা মুন্ডানোর পর মক্কায় গিয়ে (সম্ভব হলে উত্তম) আজই তাওয়াফে যিয়ারত করুন। আজ করা সর্বোত্তম। (এটা ফরজ)।
-  
তাওয়াফ শেষে মিনায় এসে রাত্রি যাপন করুন সুন্নাত।
 

৪র্থ দিন ১১ই জিলহজ্জ ---- 
-  
১০ তারিখে কুরবানীচুল ছাটা ও তাওয়াফে যিয়ারত না করে থাকলে আজ করুন।
-  
সূর্য হেলার পর থেকে (১২টার পর) মিনায় তিন শয়তানকে সূর্যাস্তের পূর্বে (প্রথম ছোটতারপর মেজ অতঃপর বড়) ৭+৭+৭=২১টি পাথর মারুন (ওয়াজিব)। মিনায় রাত্রি যাপন করুন (সুন্নাত)।
 

৫ম দিন ১২ই জিলহজ্জ ---- 
-  
তাওয়াফে যিয়ারত ১০/১১ তারিখে না করে থাকলে আজ সূর্যাস্তের পূর্বে অবশ্যই করুন।
-  
মিনায় সূর্য হেলার পর থেকে (সুন্নাত সময় হল) সূর্যাস্তের পূর্বে ৭+৭+৭=২১টি পাথর (ছোটমেজ ও বড় ) শয়তানকে মেরে সূর্যাস্তের পূর্বে) মক্কায় রওয়ানার চেষ্টা করুন।
 
জরুরী কথা ------ 
(
১) তবে ১১/১২ তারিখ সূর্য হেলার পূর্বে পাথর মারলে আদায় হবে না। পূণরায় মারতে হবে। নতুবা  দম দিতে হবে।
(
২) যদি ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে মীনা ত্যাগ করে মক্কায় রওয়ানা না হন তবে ১৩ তারিখ পূনরায় তিন  শয়তানকে ৭+৭+৭=২১টি পাথর (ছোটমেজ ও বড় ) মেরে (পূর্বের নিয়মে) তারপর মক্কায় আসতে হবে।
(
৩) তাওয়াফে যিয়ারতের উত্তম সময় ১০ই জিলহজ্জ (তবে ৩ দিনএর সব মোট সময়) শেষ সময়  ১২ই জিলহজ্জ সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
(
৪) মক্কা থেকে মিনায় রওয়ানার পূর্বে যদি নফল তাওয়াফ করে হজ্জের নিয়্যাত সায়ী না করে থাকেন  (বা মিনায় আসেন) তাহলে হজ্জের পরে তাওয়াফে যিয়ারতের পর অবশ্যই হজ্জের সায়ী করুন। (ওয়াজিব)।
 
যিয়ারাতে মদীনাহ ----- 
হজ্জের পূর্বে অথবা পরে (সুবিধামত) সময়ে হাজীদল তথা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (দঃ) এর পাগলপাড়া উম্মতগণ এক মূহুর্তে একদিন/তথা ৮ দিনের জন্য (সম্ভব হলে) নতুবা এক রাত হলেও মদীনা শরীফে যান এবং রাসূলে পাক (দঃ) এর রওজা মোবারক যিয়ারতরিয়াদুল জান্নাতে বসা (নামাজ আদায় করা) জান্নাতুল বাকী যিয়ারত করা এবং বিশেষতঃ ৮ দিনে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করাসহ বহু ঐতিহাসিক স্থান তথা উহুদ পাহাড় ও বদর প্রান্তর দেখার সৌভাগ্য অর্জন করে থাকেন। এছাড়া মদীনা শরীফে আর কোন কাজ নেই। মূলতঃ মদীনা শরীফে মাসজিদে নববীতে নামাজ ও রাসূলের পাক (দঃ) এর রওজা শরীফ যিয়ারতই হল প্রধান কাজ। যদি সম্ভব হয় বা সময় সূযোগ থাকে তাহলে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ (সুন্নাত) রয়েছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে৮দিন=৪০ ওয়াক্ত থাকতেই হবে। এটা ফরজ বা ওয়াজিব নয়। আসলে এটা সুন্নাত এবং হজ্জের অংশ নয়। মূলতঃ আশেকে রাসূল (দঃ) দের জন্য রাসূলে পাক (দঃ) এর রওজা মোবারক যিয়ারতের নিয়্যাতে যাওয়াই হল মূল। 

বদলী হজ্জ -----
যে সকল মুসলিম নর-নারীর উপর হজ্জ ফরজ ছিলতাঁদের মধ্যে যদি কেউ মৃতু্যবরণ করে অথবা জীবিত কিন্তু শারিরীক দুর্বলতা ও অসুস্থতা ও অমতার কারণে হজ্জ করতে অপারগ হয়তাহলে অন্য কাউকে দিয়ে বিশেষ করে বিজ্ঞ আলেম বা হজ্জে পারদর্শী ব্যক্তি দ্বারা তাঁর বদলী হজ্জ করাতে পারবে। অর্থাৎ যাঁর জন্য বদলী হজ্জ করা হবে তাঁরই নামে ইহরাম পরিধান ও নিয়্যাত করে অন্য একজন হজ্জ আদায়করতে পারবে।


                       ----------------------------------------------------------------------------------
               '' শুধু নিজে শিক্ষিত হলে হবেনাপ্রথমে বিবেকটাকে শিক্ষিত করুন। ''

                                '' আপনার সন্তানকে ইসলামী শিক্ষা শিক্ষিত করুন ''

কোন মন্তব্য নেই:

Comment here />

Widget ByBlogger Maruf
Widget ByBlogger Maruf