সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থায় একজন দেশপ্রেমিক মুসলমানের জন্য করনীয় কি?

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অনেকেই আমাকে ফোনে এবং ফেসবুকে এই প্রশ্ন করছে এবং ধর্মীয়ভাবে এর উপর আলোকপাতের অনুরোধ করে আসছে। কিন্তু গত ২/৩ দিনের দেশের সার্বিক অবস্থায় ব্যাপারটি আলোচনায় আসা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে বলে আমি মনে করি।
হযরত ওসমান (রাঃ) এর শাহাদাতের পর যখন হযরত আলী (রাঃ) যখন আমিরুল মুমিনিন হিসাবে খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন তখন মুসলিম জাহান সবচেয়ে কঠিন সময় অতিক্রম করছে যার শুরু হযরত ওসমান (রাঃ) এর খেলাফতের শেষ আমলে। চতুর্দিকে একটা অশান্ত পরিবেশ বিরাজ করছিল। একদিকে ওসমান (রাঃ) হত্যার ইস্যু অন্যদিকে সেটিকে কেন্দ্র করে প্রখ্যাত জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবীদের মধ্যে মতপার্থক্যের চরম মেরুকরণ।
ঠিক সেই সময় কুফার দুই বারের গভর্নর (হযরত ওমর রাঃ ও ওসমান রাঃ এর খেলাফতকালীন), ইসলামের জন্য প্রথম তীর চালনাকারী, ইরাক এবং পারস্য (বর্তমানে ইরান) বিজয়কারী মুসলমান সেনাবাহিনীর প্রধান, জীবিত অবস্থায় রাসুল (সাঃ) এর নিকট জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবী হযরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) এর কথা এবং কর্মকান্ড আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থায় একজন দেশপ্রেমিক মুসলমানের জন্য অত্যন্ত অনুসরনীয় বলে আমি মনে করি।
হযরত ওসমান (রাঃ) এর খেলাফতের শেষ আমলে যখন চারদিকে চরম ফিতনা ফাসাদ এবং বিশৃঙ্খলা চলছিল। একদল সীমালংঘনকারী মিসরীয় যখন হযরত ওসমান (রাঃ) এর আমলে বিদ্রোহ করে বসল, তখন এই হযরত সাদ (রাঃ) বিদ্রোহীদের বুঝাবার ব্যর্থ চেস্টা করেন।
হযরত আলী (রাঃ)এর খেলাফতের সময় যখন শুধু নিজেদের মতপার্থক্য এবং কিছু সীমালংঘনকারী ফাসেকদের প্ররচনায় মুসলমানদের একদল আরেক দল মুসলমানের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিল এবং অনেকেই যখন তাকে আলী (রাঃ) এর সঙ্গে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন, তখন সাদ (রাঃ) এই বলে নিজেকে এর থেকে বিরত রেখে ছিলেন, “আমাকে এমন কোন যুদ্ধে যাওয়ার কথা বলবেন, যে যুদ্ধ মুসলমান এং কাফেরদের মধ্যে সংঘটিত হয়।“
একদা হযরত সাদ (রাঃ) একবার তার অবসরকালীন জীবনে আলী (রাঃ) এর খেলাফতকালে মদীনার মাঠে উট চরাচ্ছিলেন। এমন সময় তার ছেলে ওমর ইবনে সাদ এসে বলল, “সমস্ত মানুষ বড় বড় সরকারী পদের আশায় নিজ নিজ ভাগ্য পরীক্ষা করছে; আর আপনি এখানে উট চরাচ্ছেন, এটা কি ভাল দেখাচ্ছে?” এতুদত্তরে তিনি ছেলের বুকে হাত মেরে বললেন, “চুপ থাকো? আমি রাসূল (সাঃ) এর কাছে সুনেছি যে, আল্লাহপাক পরহেজগারকে ভালোবাসেন এবং সে ব্যক্তিকেও পছন্দ করেন, যে পরের মুখাপেক্ষী নয়”।
হযরত সাদ (রাঃ) আল্লাহর ইবাদতে এমনই মশগুল থাকতেন যে, মুসলমানদের মধ্যে যখন খেলাফত রাস্ট্র পরিচালনার বিষয়ে বিভেদ সৃস্টি হয়, তখনও তিনি মদীনার এক কোনে বসে আল্লাহর ইবাদত করছিলেন এবং প্রার্থনা জানাচ্ছিলেন, তিনি যেন সমুদয় ঝগড়া বিবাদ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হন। যদি কেউ ঐ সমস্ত কলহ বিবাদ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করত, তা হলে তিনি উত্তর দিতেন, আমি রাসূল (সাঃ) এর কাছে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “আমার পরে এক ফাসাদ সৃস্টি হবে। তখন বসা ব্যক্তির চেয়ে সায়িত ব্যক্তি, দন্ডায়মান ব্যক্তির চেয়ে বসা ব্যক্তি এবং চলন্ত ব্যক্তির চেয়ে দন্ডায়মান ব্যক্তি ভালো হবে”। (মুসনাদ শরীফ)
হযরত আলী (রাঃ) এবং হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) এর মধ্যকার মতবিরোধ মীমাংসার জন্য পঞ্চায়েত নিযুক্ত হলে হযরত সাদ (রাঃ) অত্যন্ত আনন্দিত হন যে, এবার বুঝি ঘরোয়া বিবাদের অবসান ঘটবে। কিন্তু যখন দেখলেন, এই বিবাদের অবসান ঘটল না, তখন তিনি চিরকালের জন্য নিজেকে ঐ সব ফাসাদ হতে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখলেন।
আমরা যারা জীবনের এই তারুন্যকে আল্লাহর হুকুমের সামনে নত করে দিয়েছি, রঙ্গিন পৃথিবীর বহু ক্ষনস্থায়ী হাতছানিকে পিছনে ফেলে এসেছি শুধুমাত্র রাসূল (সাঃ) এর সুন্নতকে জীবনে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে, তাদের উচিত জীবিত অবস্থায় রাসুল (সাঃ) এর নিকট জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবী হযরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রাঃ)এর এসকল কথা এবং কর্মকান্ড থেকে শিক্ষা নেওয়া।
আর তা আমলে রূপদানের এখনই উপযুক্ত সময়।

কোন মন্তব্য নেই:

Comment here />

Widget ByBlogger Maruf
Widget ByBlogger Maruf