রমজান বিষয়ক ফতোয়া
রমজান বিষয়ক ফতোয়া
ফতোয়া (১)
সিয়াম কেন ফরজ হল ?
প্রশ্ন : কেন আল্লাহ তাআলা সিয়ামের বিধান দিলেন? সিয়াম ফরজ করার হিকমত বা উদ্দেশ্য কি?
জওয়াব : সিয়াম বা রোজা ফরজ করার বিভিন্ন কারণ রয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটি নিম্নে আলোচনা করা হল:
সিয়াম তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি অর্জনে সাহায্য করে। প্রবৃত্তগত চাহিদা পূরণ ও অশ্লীলতা থেকে দুরে রাখে। আমরা দেখতেই পাচ্ছি সিয়াম পেট ও লজ্জাস্থানের চাহিদাকে দমন করে। আর এ দুটো জিনিস মানুষকে সকল প্রকার খারাপ কাজের দিকে নিয়ে যায়। এ দুটো জিনিষের চাহিদা পূরণ করতে যেয়ে হারাম ও অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। অতএব এ দুটো জিনিষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে তাকওয়া অর্জন করা যাবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ﴿سورة البقرة:﴾
" হে ঈমানদারগণ তোমাদের জন্য সিয়াম ফরজ করা হল যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।" সুরা বাকরা ১৮৩
(২) আত্মার পরিশুদ্ধতা ও প্রশিক্ষণ :
সিয়ামের দ্বারা ধৈর্য- ছবরের জন্য আত্মার প্রশিক্ষণ লাভ হয়। এর মাধ্যমে সিয়াম পালনকারী আল্লাহর সকল আদেশ পালন ও তার নিষেধাবলী থেকে বিরত থাকার শক্তি অর্জন করেন।
(৩) আল্লাহ ভীতিকে দৃঢ় করা:
সিয়াম এমন একটা ইবাদত যা মানুষ না করেও প্রকাশ করতে পারে যে সে সিয়াম পালনকারী। তাই সিয়াম সত্যিকার সততা, আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ দাসত্ব, আল্লাহকে মহব্বতের চরম পরাকাষ্ঠার প্রমাণ বহন করে। সিয়াম পালনকারী একমাত্র আল্লাহর কাছেই তার প্রতিদানের আশা করে। তার ভয়েই সে সিয়াম পালন করে। তাইতো নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে কুদসীতে বলেছেন : "আল্লাহ তা আলা বলেন :
كل عمل ابن آدم يضاعف، الحسنة بعشرة أمثالها إلى سبعمائة ضعف إلى ما شاء عز وجل، إلا الصوم، فإنه لي وأنا أجزي به، يدع شهوته وطعامه من أجلي.
প্রত্যেক মানব সন্তানের নেক আমলের প্রতিদান দশগুণ থেকে বাড়িয়ে সাত শত গুন বা তার অধিক পরিমাণে দেয়া হবে কিন্তু সাওমের ব্যাপারটা অন্য রকম। কারণ, তা আমারই জন্য, তার প্রতিদান আমি নিজে। কেননা সিয়াম পালনকারী আমারই জন্য তার খাওয়া-দাওয়া ও যৌন চাহিদা পরিত্যাগ করে।"
(৪) আল্লাহর দেয়া নেয়ামত ও অনুগ্রহ অনুধাবন করা :
দুনিয়াতে ক্ষুধা-চাহিদা নিবারণ করার জন্য আল্লাহ যদি আমাদের নেয়ামত ও উপকরণ না দিতেন তা হলে অবস্থা কেমন হত !
(৫) স্বাস্থ্য ও শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করা :
মূলত: সিয়াম ঈমান ও তাকওয়া বৃদ্ধি করে যা সিয়াম পালনকারীকে যাবতীয় পাপাচার থেকে রক্ষা করে।
এ ছাড়াও আরো অনেক উপকার রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখ করার মত যেটা তা হল বর্তমানে গবেষণা ও অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত হয়েছে সিয়াম শরীরকে অনেক ধরনের রোগ ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখে ও স্বাস্থ্যের ভারসাম্য বজায় রাখে।
ফতোয়া (২)
সন্দেহের দিন সিয়াম পালন
প্রশ্ন : হতে পারে আজ রমজানের ১লা তারিখ ইহা মনে করে শাবান মাসের শেষ দিন সতর্কতা স্বরূপ সিয়াম পালনের হুকুম কি?
জওয়াব : সন্দেহের দিন বলতে শাবান মাসের ৩০ তারিখকে বুঝায়। ঐ দিন সতর্কতা অবলম্বন করে সিয়াম পালনের হুকুম সম্পর্কে বিশুদ্ধতম মত হল ঐ দিন রোজা রাখা হারাম।
সাহাবী আম্মার বিন ইয়াসার (রা:) বলেছেন :
من صام اليوم الذي يشك فيه فقد عصى أبا القاسم صلى الله عليه وسلم
"যে ব্যক্তি সন্দেহের দিন সিয়াম পালন করল সে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবাধ্য হল।"
দ্বিতীয়ত : সন্দেহের দিন সিয়াম পালনকারী আল্লাহর দেয়া সীমা অতিক্রম করল। কেননা আল্লাহ তা আলার সীমা হল, কেহ রমজানের চাঁদ না দেখে বা চাঁদ প্রমাণিত না হলে রমজানের সিয়াম পালন করবে না। তাই তো নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
لا يتقدمن أحدكم رمضان بصيام يوم أو يومين، إلا رجل كان يصوم صوما فليصمه.
তোমাদের কেহ যেন রমজান মাসকে এক বা দু দিন বাড়িয়ে না দেয়। তবে যার অন্য কোন নিয়মিত সাওম সে দিনে হয়ে যায়, তার কথা আলাদা। (রমজানের ১লা তারিখ সন্দেহ করে সিয়াম পালন করা যাবে না)
আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক অবগত।
ফতোয়া (৩)
সিয়াম আদায়ে অপারগ ব্যক্তির বিধান
প্রশ্ন : এমন বৃদ্ধ লোক যে সিয়াম পালন করলে তার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে, সে কি সিয়াম পালন করবে?
জাওয়াব : যদি সিয়াম পালনে তার ক্ষতি হয়, তার জন্য সিয়াম পালন জায়েয নয়। কারণ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا ﴿২৯﴾ [ النساء:২৯]
"তোমরা নিজেদের হত্যা করনা। আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের প্রতি দয়াশীল।" সূরা নিসা ২৯
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো বলেন :
وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ [البقرة: ১৯৫]
"তোমরা নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিওনা।" সূরা বাকারা ১৯৫
তাই যে বৃদ্ধ ব্যক্তির স্বাস্থ্যের জন্য সিয়াম ক্ষতিকর তার জন্য সিয়াম পালন জায়েয নয়। এর সাথে ভবিষ্যতে সিয়াম পালনের সামর্থ্যবান হওয়ার সম্ভাবনা যদি না থাকে তাহলে, সে প্রত্যেকটি সাওমের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য খাওয়াবে বা দান করবে।
এতেই সে সিয়ামের দায় থেকে মুক্ত হবে
আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
ফতোয়া (৪)
তারাবির নামাজ
প্রশ্ন : তারাবির নামাজের হুকুম কি?
জওয়াব : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতের জন্য তারাবীহকে সুন্নত করেছেন। তিনি তার সাহাবীদের নিয়ে তিন রাত্রি তারাবীহ আদায় করেছেন। উম্মতের উপর ফরজ হয়ে যেতে পারে এ আশঙ্কায় পরেরদিন তিনি আর জামাতের সাথে তারাবীহ আদায় করেননি। মুসলমানগন আবু বকর (রা:) এর খেলাফত কাল ও উমর (রা:) এর খেলাফতের প্রথম দিকে এ অবস্থায়ই ছিল। এরপর আমীরুল মুমিনীন উমর (রা:) প্রখ্যাত সাহাবী তামীম আদদারী (রা:) ও উবাই ইবনে কাআব (রা:) এর ইমামতিতে তারাবীর জামাতের ব্যবস্থা করেন। যা আজ পর্যন্ত কায়েম আছে। আলহামদুলিল্লাহ! এ তারাবীর জামাত শুধু রমজান মাসেই সুন্নাত।
সালাতে তারাবীহতে অন্যান্য সালাতের মত বিনয়-নম্রতা, একাগ্রতা ও ধীর-স্থিরভাবে রুকু সিজদা, কওমা, জলছা আদায় করতে হবে। অনেক লোককে দেখা যায় সালাতে তারাবীহ আদায়ে এত তাড়াতাড়ি ও তাড়া হুড়া করে যার কারণে সালাতের অনেক সুন্নত ছুটে যায় বরং অনেক ওয়াজিব তরক হয়ে যায়। তাদের এ তাড়া হুড়া দেখলে মনে হয় কে আগে মসজিদ থেকে বের হবে এর যেন একটা প্রতিযোগিতা চলছে। অনেকে আবার তাড়াতাড়ি আদায় করেন এ জন্য যে মসজিদে লোক সংখ্যা বেশি হবে। যে উদ্দেশ্যেই তাড়া হুড়া করা হোক না কেন তা শরীয়ত পরিপন্থী কাজ। তবে ইমাম সাহেবের পিছনে যারা সালাত আদায় করেন তাদের ব্যাপারে তাকে ভয় করতে হবে আল্লাহকে। লক্ষ্য রাখতে হবে সালাত অত্যধিক দীর্ঘ না হয় যাতে মুক্তাদীরা ক্লান্ত বা বিরক্ত হয়ে যায়। আলেমগন বলেছেন : ইমাম সাহেব যদি এত তাড়াতাড়ি করেন যাতে মুক্তাদীগণ সালাতের সুন্নত গুলো আদায় করতে পারে না তাহলে মাকরূহ হবে। চিন্তা করে দেখুন, আর যদি তিনি এত তাড়াহুড়ো করেন যাতে মুক্তাদীগণ সালাতের ওয়াজিব আদায় করতে পারেন না তা হলে এর হুকুম কি হতে পারে! নিঃসন্দেহে এ ধরনের তাড়া হুড়া করা হারাম। (আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন।)
ফতোয়া (৫)
প্রশ্ন : তারাবির নামাজে তাড়াহুড়ো করার বিধান কি ?
জওয়াব : তারাবির নামাজ আদায়ে অতি মাত্রায় তাড়াহুড়ো করা এবং তারাবির নামাজ আদায়ে অবহেলা করা একটি শরিয়ত পরিপন্থী কাজ। যেমন, মুরগির ঠোকর দেয়ার মত করে নামাজ আদায় করা এবং তারাবির নামাজে কোরান খতম করার উদ্দেশ্যে তাড়াতাড়ি কিরাত পড়া।
শেখ জামাল উদ্দিন আল কাসেমি রহ. বলেন,
মনে রাখতে হবে, তারাবির নামাজ রমজান মাসে অবশ্যই সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ,
অধিকাংশ মসজিদের ইমামদের দেখা যায়, তারা তাদের মসজিদ সমূহে তারাবির নামাজ তাড়াহুড়ো করে তারাবির নামাজ আদায় করতে অভ্যস্ত। ফলে তারা নামাজের আরকান সুন্নাত ইত্যাদি আদায়ে অবহেলা করে। নামাজ তাড়াহুড়ো করে শেষ করার প্রবণতায় তারা রুকু সেজদা আদায়ে ধীরস্থিরতা ছেড়ে দেয়, কিরাত পড়তে তাড়াহুড়ো করে এবং কোরানের আয়াতের শব্দগুলোকে পরিবর্তন করে ফেলে।
এ ধরনের নামাজ এবং নেক আমল দ্বারা শয়তান ঈমানদারদের ধোঁকা দেয়া ও তাদের বোকা বানানোর চক্রান্ত।
শয়তান তাদের আমল করা সত্ত্বেও আমলটিকে নষ্ট করে দেয় এবং যারা এ ধরনের তাড়াহুড়োর অনুকরণ করে, তাদের নামাজ অনেক সময় ইবাদতের পরিবর্তে তা হাসি ঠাট্টায় পরিণত হয়।
তাই আমরা বলি, একজন মুসল্লির উপর কর্তব্য হল, সে তার নামাজের বাহ্যিক যেমন: কিরাত, দাঁড়ানো, রুকু-সেজদা ইত্যাদি এবং আধ্যাত্মিক যেমন: একাগ্রতা, অন্তরের উপস্থিতি, পরিপূর্ণ ইখলাস, কিরাত এবং নামাজের তাসবিহ ইত্যাদির অর্থের মধ্যে চিন্তা ফিকির করা।
নামাজের বাহ্যিক সৌন্দর্য হল, মানুষের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সাথে সম্পৃক্ত আর নামাজের বাতিনি সৌন্দর্য,সৌন্দর্য নামাজির অন্তর বা আত্মার সাথে সম্পৃক্ত।
ইমাম গাজালি রহ. বলেন, যে ব্যক্তি নামাজের বাহ্যিক দিকটি লক্ষ্য রাখেন কিন্তু আধ্যাত্মিকতার প্রতি তেমন কোন গুরুত্ব দেন না, তার একটি দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির মত যে কোন একজন বাদশাকে একটি মৃত ছাগলের বাচ্চা উপহার দিল
আর যে ব্যক্তি নামাজের জাহেরি কাজ গুলোতে শৈথিল্য প্রদর্শন করে তার দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে, কোন বাদশাকে একটি কান কাটা, উভয় চক্ষু নষ্ট এমন একটি জন্তু হাদিয়া দিলেন।
মনে রাখতে হবে, এখানে এ দুই জন লোকই একজন বাদশা মানহানি করেছে এবং বাদশার মর্যাদাকে খাট করেছে। তবে উভয় ব্যক্তির অপরাধ অবশ্যই এক রকম নয়, ফলে তাদের উভয়ের শাস্তি ও এক রকম হবে না।
তার পর ইমাম গাজ্জালি রহ. বলেন নিশ্চয় তুমি তোমার প্রভুকে তোমার নামাজ হাদিয়া দিচ্ছ, তোমাকে অবশ্যই এ ধরনের নামাজ হা দিয়া দেয়ার থেকে বিরত থাকতে হবে,যে নামাজ দ্বারা তোমাকে শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়।
শেখ উসাইমিন রহ. রাসূল সা. এর কিয়ামুল্লাইল এবং তার সাহাবিদের কিয়ামুল্লাইলের আলোচনা করতে গিয়ে এক জায়গায় বলেন : বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ যেভাবে তারাবির নামাজ আদায় করেন তা সম্পূর্ণ শরিয়তের পরিপন্থী, তারা তারাবির নামাজ এত দ্রুত আদায় করে, নামাজের ওয়াজিব, নামাজে ধীরস্থিরতা এবং শান্তি সৃষ্ট তা বজায় ইত্যাদিতর প্রতি কোন গুরুত্ব প্রদান তারা করে না, অথচ এ গুলো নামাজের রুকন,যে গুলো আদায় ব্যতীত নামাজ শুদ্ধই হয় না।
তারা তাদের পিছনের নামাজি- অসুস্থ, রুগি, দুর্বল এবং বৃদ্ধদের শুধু শুধু কষ্ট দেয় এবং তারা নিজেদের উপর অত্যাচার করে এবং অন্যদের উপরও অত্যাচার করে।
বিজ্ঞ আলেমগন বলেন, একজন ইমামের জন্য এত তাড়াহুড়ো করা, যাতে তার পিছনে নামাজিরা সুন্নাত আদায় করতে পারে না, তাহলে তার নামাজ অবশ্যই মাকরূহ হবে।
আর যদি ইমাম এমন তাড়াহুড়ো করে যার ফলে নামাজিরা তার পিছনে ফরজ আদায় করতেও সক্ষম হয় না, তার পরিণতি কি হতে পারে ? আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।
শেখ মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব রহ. কে তারাবির নামাজে তাড়াহুড়ো প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তরে বলেন,
তিনি প্রশ্ন কারিকে বলেন -
তোমার কথা ইমাম তাড়াতাড়ি করলে তার পিছনে অনেক মানুষ নামাজ আদায় করবে আর যখন সে ধীরস্থির ভাবে নামাজ আদায় করে তখন তার পিছনে নামাজির সংখ্যা কমে যাবে- এর আলোকে আমি বলব, শয়তানের উদ্দেশ্য হল মানুষকে নেক আমল হতে বিরত রাখা, আর শয়তান যখন তা করতে সক্ষম হয়ে উঠে না, তখন তার জীবন মরণ চেষ্টা থাকে মানুষের আমলকে নষ্ট করা।
দু:খের বিষয় হল, আমাদের দেশের অধিকাংশ ইমামরা তারাবির নামাজে এমন সব কাজ করে যা অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই বলা চলে না।
তারা অর্থহীন নামাজ আদায় করে, তারা ঠিক মত রুকু করে না এবং ঠিক মত সেজদা করে না। অথচ ঠিক মত রুকু-সেজদা না করলে নামাজই শুদ্ধ হয় না।
মনে রাখতে হবে,মূলত: নামাজের উদ্দেশ্যই হল একাগ্রচিত্তে আল্লাহর সম্মুখে বিনয় ও নম্রতার সাথে দণ্ডায়মান হওয়া এবং কোরান তেলাওয়াতে চলাকালে তা হতে উপদেশ গ্রহণ করা।
কিন্তু নামাজের এ মহৎ উদ্দেশ্য তাড়াহুড়ো করে নামাজ আদায় করলে তা পূরণ হয় না।
সুতরাং ইমামের সাথে তাড়াহুড়ো করে বিশ রাকাত আদায় করার চেয়ে ধীরস্থির খুশু ও বিনয়ের সাথে ইমামের পিছনে দশ রাকাত পড়াই উত্তম।
রাকাতের আধিক্যের চেয়ে সুন্দরভাবে নামাজ আদায়ের প্রতি যত্নবান হও;আর ইহাই তোমার জন্য উপকারী ও সর্বোত্তম।
আমরা যে কথাগুলো আলোচনা করলাম, এর উপরই আমল করা উচিত।
আর যদি ইমাম ও মোক্তাদির মাঝে এ নিয়ে মতভেদ দেখা দেয় এবং মোক্তাদিরা তাড়াহুড়ো নামাজে অভ্যস্ত এবং তারা যদি ইমাম এর সাথে সুন্নাত অনুযায়ী নামাজ আদায় করতে অসম্মতি জানান তখনও ইমামের জন্য করণীয় হল, সে ধীরস্থির নামাজ আদায়ে উৎসাহী হবে এবং কোন ভাবেই নামাজে এমন তাড়াহুড়ো করবে না যাতে ধীরস্থিরতার বিঘ্ন হয়।
এ সকল ক্ষেত্রে ইমাম সাহেবের জন্য নামাজে পূর্ণ রুকু সেজদা এবং ধীরস্থিরতা বজায় রেখে তাড়া হুড়া করে দীর্ঘ লম্বা কিরাত পড়ার চেয়ে ছোট কিরাত পড়া উত্তম।
অনুরূপ ভাবে দীর্ঘ কিরাত এবং রুকু সেজদায় ধীরস্থিরতা বজায় রেখে, দশ রাকাত নামাজ আদায় করা তাড়াহুড়ো করে বিশ রাকাত নামাজ আদায় করার তুলনায় উত্তম।
কারণ, নামাজের আসল এবং চালিকা শক্তিই হল মানুষের মন আল্লাহর দিক ধাবিত হওয়া। অনেক সময় আছে তখন কম বেশির চেয়ে উত্তম হয়ে থাকে।
কিতাবুস্সুনান ওয়াল মুবতাদিয়াত গ্রন্থকার বলেন,অনেক ইমামের নামাজ পাগলের নামাজের সাদৃশ্য। বিশেষ করে তারাবির নামাজ তিনি বলেন তাদের দেখা যায় তারা বিশ মিনিটে তেইশ রাকাত নামাজ আদায় করেন এবং প্রত্যেক রাকাতে তা সুরা আলা, দোহা এবং সুরা রহমানের এক চতুর্থাংশ পড়ে নামাজ শেষ করেন। এ ধরনের নামাজ সকলের ঐক্য মতের ভিত্তিতে সম্পূর্ণ বাতিল, কারণ তাদের নামাজ হল মুনাফেকদের নামাজ সমতুল্য।
আল্লাহ মুনাফেকদের নামাজ সম্পর্ক বলেন:
و إذا قاموا إلى الصلاة قاموا كسالى يراءون الناس ولا يذكرون الله إلا قليلا.
এবং যখন তারা নামাজে দণ্ডায়মান হয় তখন তারা অলসতা করে। তারা লোক দেখানো নামাজ আদায় করে। এবং তারা খুব কমই আল্লাহকে স্মরণ করে।
তাদের নামাজ সফল মুমিনরেদর নামাজের মত নয় যাদের নামাজ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
قد أفلح المؤمنون الذين هم في صلاتهم خاشعون.
অবশ্যই ঐ সকল ঈমানদাররা সফল কাম যার তাদের নামাজে বিনয়ী।
এবং তাদের নামাজ রাসূল সা. যে ধরনের নামাজ আদায় হতে বারণ এবং নিন্দা করেছেন -কাকের ঠোকর, নামাজে চুরি ইত্যাদি-সে নামাজের মতই নয়।
আল্লামা দারমি আবুল আলিয়া হতে বর্ণনা করেন, আমরা বিভিন্ন লোকের নিকট হতে ইলম অর্জন করার জন্য উপস্থিত হতাম, তখন আমরা তার নামাজের প্রতি লক্ষ্য করতাম, যখন দেখতাম তার নামাজ সুন্দর,আমরা বলতাম তার অন্য সব কিছুই সুন্দর। আর যখন দেখতে পেতাম তার নামাজ অসুন্দর, আমরা তার থেকে দুরে সরে যেতাম এবং বলতাম তার অন্য সব কিছুই এর চেয়েও বেশি অসুন্দর।
ফতোয়া (৬)
তারাবি নামাজে কুরআন মজীদ দেখে ইমামের কেরাতে ভুল সংশোধন
প্রশ্ন : দেখা যায় কোন কোন মুক্তাদী কেরাআতে ইমাম সাহেবের ভুল সংশোধনের জন্য তারাবীতে কুরআন মজীদ বহন করেন অথচ ইমাম সাহেবের ভুল সংশোধনের দরকার নেই। কারণ, তিনিও কুরআন মজীদ দেখে দেখে তেলাওয়াত করছেন। এ সম্পর্কে নির্দেশ কি?
জাওয়াব : সালাতে কুরআন মজীদ বহন করা উচিত নয়। তবে যদি প্রয়োজন দেখা দেয় তবে অন্য কথা। যেমন: ইমাম সাহেব কাউকে বললেন আমি ভাল মত তেলাওয়াত করতে জানি না, আমি চাই তুমি কুরআন মজীদ নিয়ে আমার পিছনে থাকবে যদি আমি কোন ভুল করি তবে তা ধরিয়ে দেবে। এ ধরনের কারণ ছাড়া মুক্তাদীর কুরআন বহন করা ঠিক নয়। কারণ, এতে মন অন্য দিকে চলে যায়। তা ছাড়া বুকের উপর ডান হাত বাম হাতের উপর রাখার যে সুন্নত রয়েছে, তা আদায় করতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। উত্তম হল বর্ণিত কারণ ব্যতীত এ কাজ পরিহার করা।
আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
ফতোয়া (৭)
ডাক্তার যদি সিয়াম পালনে নিষেধ করেন
প্রশ্ন : এক ব্যক্তি কঠিন হাপানী রোগে ভুগছে। দু বছর পর্যন্ত তার চিকিৎসা চলছে। ডাক্তার তাকে রমজানে সিয়াম পালন করতে নিষেধ করেছে। তাকে বলেছে যদি সে সিয়াম পালন করে তবে রোগ বৃদ্ধি পাবে। এ অবস্থায় সিয়াম বর্জনের হুকুম কি ?
জওয়াব : আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ [البقرة: ১৮৫]
"যে কেহ রমজান মাস পাবে সে যেন সিয়াম পালন করে। আর যে রোগাক্রান্ত অথবা সফরে থাকে সে যেন অন্য সময়ে আদায় করে নেয়।" সূরা বাকারা : ১৮৫
অর্থাৎ রোগের কারণে সিয়াম পালনে যদি কষ্ট হয় অথবা সুস্থা লাভে বিঘ্ন ঘটে তাহলে সে রমজানে সিয়াম পালন না করে অন্য সময়ে আদায় করবে। তাই তো আল্লাহ তা আলা বলেন :
يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ [البقرة: ১৮৫]
"আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান, যা কষ্টকর তা চান না।" সূরা বাকারা: ১৮৫
উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, যদি ডাক্তার মুসলিম ও সৎ-ন্যায়পরায়ণ হন এবং বলেন সিয়াম রোগের ক্ষতি করবে অথবা সুস্থতা লাভে দেরি হবে তবে সিয়াম পালন না করা জায়েয আছে। আর যদি ডাক্তার মুসলিম না হন অথবা মুসলিম কিন্তু সৎ নন তাহলে তার কথা গ্রহণযোগ্য নয়। তবে হ্যা, রোগী যদি অনুভব করে যে সিয়াম তার জন্য ক্ষতির কারণ হবে তা হলে সে সিয়াম পালনে বিরত থাকতে পারবে। পরে সুযোগ মত সময়ে কাজা আদায় করে নিবে। কাফ্ফারা দেয়ার প্রয়োজন হবে না।
উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, যদি ডাক্তার মুসলিম ও সৎ-ন্যায়পরায়ণ হন এবং বলেন সিয়াম রোগের ক্ষতি করবে অথবা সুস্থতা লাভে দেরি হবে তবে সিয়াম পালন না করা জায়েয আছে। আর যদি ডাক্তার মুসলিম না হন অথবা মুসলিম কিন্তু সৎ নন তাহলে তার কথা গ্রহণযোগ্য নয়। তবে হ্যা, রোগী যদি অনুভব করে যে সিয়াম তার জন্য ক্ষতির কারণ হবে তা হলে সে সিয়াম পালনে বিরত থাকতে পারবে। পরে সুযোগ মত সময়ে কাজা আদায় করে নিবে। কাফ্ফারা দেয়ার প্রয়োজন হবে না।
আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
ফতোয়া (৮)
রমজান মাসে ইসলাম গ্রহণকরীর সিয়ামের বিধান
প্রশ্ন : রমজানের কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর যদি কেহ ইসলাম গ্রহণ করে তা হলে তাকে কি চলে যাওয়া সিয়াম আদায় করতে বলা হবে ?
জাওয়াব : না তাকে পিছনের সিয়াম আদায় করতে হবে না। কেননা সে তখন কাফের ছিল। আর কাফের থাকাকালীন সময়ে যে নেক কাজ অতিবাহিত হয়ে গেছে তাকে তা আদায় করতে হবে না। আল্লাহ তা আলা বলেন:
قُلْ لِلَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ يَنْتَهُوا يُغْفَرْ لَهُمْ مَا قَدْ سَلَفَ [الأنفال: ৩৮]
"যারা কাফির তাদের বলে দাও যদি তোমরা কুফরির অবসান ঘটাও তাহলে তিনি তোমাদের অতীতে যা কিছু গেছে তা ক্ষমা করে দিবেন" সূরা আনফাল : ৩৮
দ্বিতীয়ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে তাদের কাউকে অতীতের সালাত, সিয়াম, যাকাত আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়নি।
কিন্তু কথা থেকে যায় সে রমজানের দিনের মধ্যবর্তী সময়ে ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তাকে কি খাওয়া- দাওয়া, যৌন-সম্ভোগ থেকে বিরত থাকতে হবে, না কাজা আদায় করতে হবে, এ ব্যাপারে উলামাদের মধ্যে মতভেদ আছে।
তবে বিশুদ্ধতম মত হল তাকে দিনের বাকি সময়টা খাওয়া- দাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কাজা আদায় করতে হবে না। কেননা দিনের শুরুতে যখন সিয়াম ওয়াজিব হওয়ার সময় এসেছে তখন তার উপর তা ওয়াজিব হয়নি।
তার মাসয়ালাটা ঐ কিশোরের মত যে দিনের মধ্যবর্তী সময়ে বালেগ হয়েছে। তাকে বিরত থাকতে হবে। কাজা করতে হবে না।
ফতোয়া (৯)
যাদুকর কাফের
প্রশঃ একজন যাদুকর মহিলা। সে যাদু করে। তার যাদু দ্বারা বহু লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার সম্পর্কে শরীয় হুকুম কি?
জাওয়াব : যাদু অবশ্যই শয়তানী কাজ। পশু উৎসর্গ, তন্ত্র- মন্ত্র, সালাত পরিত্যাগ, নাপাক- অপবিত্র জিনিস ভক্ষণ ইত্যাদি কাজ কর্মের মাধ্যমে যাদুকর জিন- শয়তানদের সাহায্য নিয়ে থাকে। ফলে যাদুকরের ইচ্ছানুযায়ী তারা কাউকে আছর করে, কাউকে ক্ষতি করে, কারো শরীরের সাথে মিশে যায়, কাউকে মেরে ফেলে। স্বামীকে তার স্ত্রী থেকে পৃথক করে দেয়। স্ত্রীকে স্বামী থেকে আলাদা করে দেয়।
এসব বিবেচনায় যাদুকর মুশরিক ও কাফের। শরীয়তে তাকে হত্যা করার নির্দেশ এসেছে। আর এ নির্দেশ বহু সাহাবায়ে কেরাম যেমন উমর (রা:) তার মেয়ে হাফসা (রা:) ও জুনদব (রা:) প্রমুখ থেকে প্রমাণিত।
সাথে সাথে আমরা সকল মুসলিমকে উপদেশ দিচ্ছি তারা যেন যাদু থেকে বাচার জন্য বেশি করে আল্লাহ তা আলার জিকির করেন, কুরআন তেলাওয়াত করেন, সকাল- সন্ধ্যার যে সকল জিকির ও দোয়া আছে তা যেন আমল করেন।
আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
ফতোয়া (১০)
সালাতে অধিক নড়াচড়া করা প্রসঙ্গ
প্রশ্ন : আমি কোন কোন ভাইকে দেখেছি তারা মসজিদে সালাত (নামাজ) আদায় করার সময় নড়াচড়া করেন। কখনো আবার এক পা সামনে নিয়ে যান। এতে কি সালাত বাতিল হয়ে যায়?
জওয়াব : মূলত প্রয়োজন ছাড়া সালাতে নড়াচড়া করা মাকরূহ। তবে সালাতের মধ্যে নড়াচড়া করা পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন : (১) ওয়াজিব নড়াচড়া (২) হারাম নড়াচড়া (৩) মাকরূহ নড়াচড়া (৪) মুস্তাহাব নড়াচড়া (৫) মুবাহ বা জায়েয নড়াচড়া।
ওয়াজিব বলতে বুঝায় এমন নড়াচড়া যার উপর সালাত শুদ্ধ হওয়া নির্ভর করে। যেমন সালাত অবস্থায় কারো পাগড়িতে নাপাক বস্তু দেখা গেল। তখন ওয়াজিব হবে নড়াচড়া করে নাপাক বস্তুটি ফেলে দিয়ে পাগড়িকে না পাকী থেকে হেফাজত করা। যেমন হাদীসে এসেছে যে একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে ইমামতি করছিলেন, এমতাবস্থা জিবরীল (আঃ) এসে বললেন যে, আপনার জুতায় না পাকী আছে। তখন তিনি সালাতের মধ্যে জুতা খুলে ফেললেন ও সালাতে নিমগ্ন থাকলেন। এমন আরেকটি দৃষ্টান্ত হল কিবলা পরিবর্তনের মাছআলা। সকলে সালাতে মগ্ন ছিলেন। একজন এসে খবর দিলেন কিবলা পরিবর্তন হয়েছে। সাথে সাথে সকলে সালাতের মধ্যেই ঘুরে গেরে গেলেন।
আর হারাম নড়াচড়া বলতে বুঝায় কোন ধরনের প্রয়োজন ছাড়া অনর্থক অধিক নড়াচড়া করা। এতে সালাত বাতিল হয়ে যায়। যা সালাত বাতিল করে তা সালাতের মধ্যে করা হারাম বলেই গণ্য এবং আল্লাহর হুকুমের সাথে বিদ্রূপ করার শামিল।
আর মুস্তাহাব নড়াচড়া হল সালাতের মধ্যে কোন মুস্তাহাব আমল সম্পাদন করার জন্য যে সকল নড়াচড়া করার দরকার হয়। যেমন কেহ কাতার সোজা করার জন্য অথবা সামনের কাতারে স্থান পূরণ করার জন্য সামনে চলে গেল অথবা কাতারের খালি জায়গা পূরণ করার জন্য সরে দাঁড়াল। এ ধরনের কাজের জন্য নড়াচড়া করলে অসুবিধা নেই, কারণ ইহা সালাতের পূর্ণতার জন্য করা হয়। তাই তো হাদীসে এসেছে সাহাবী ইবনে আব্বাস (রা:) সালাত আদায়ের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাম পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি তাকে ধরে পিছন দিক থেকে ডান পাশে এনে দাঁড় করিয়ে দিলেন। আর মুবাহ নড়াচড়া হল প্রয়োজনে নড়াচড়া করা। কম হোক বা বেশি। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায়রত অবস্থায় তার নাতনী উমামাহ বিনতে জয়নবকে কোলে তুলে নিতেন, যখন তিনি সেজদায় যেতেন তখন তাকে রেখে দিতেন। এ হল প্রয়োজনে অল্প নড়াচড়া করার দৃষ্টান্ত। প্রয়োজনে অধিক নড়াচড়া করার দৃষ্টান্ত ও রয়েছে।
যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَى وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ ﴿২৩৮﴾ فَإِنْ خِفْتُمْ فَرِجَالًا أَوْ رُكْبَانًا فَإِذَا أَمِنْتُمْ فَاذْكُرُوا اللَّهَ كَمَا عَلَّمَكُمْ مَا لَمْ تَكُونُوا تَعْلَمُونَ ﴿২৩৯﴾
"তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হবে। বিশেষত মধ্যবর্তী সালাতের এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা বিনীত ভাবে দাঁড়াবে। যদি তোমরা শক্রের আশঙ্কা কর তবে পদচারী অথবা আরোহী অবস্থায় সালাত আদায়ে যত্নবান হবে, যখন তোমরা নিরাপদ বোধ কর তখন আল্লাহকে স্মরণ করবে যেভাবে তিনি তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, যা তোমরা জানতে না।" সূরা বাকারা :২৩৮-৯
পথচলা অবস্থায় সালাত আদায় করলে অধিক নড়াচড়া করতে হয়। কিন্তু ইহা প্রয়োজনে, তাই তা সালাত ভঙ্গ করবে না।
আর উপরে উল্লেখিত নড়াচড়া ব্যতীত যতপ্রকার নড়াচড়া আছে সবগুলো মাকরূহ নড়াচড়া বলে গণ্য।
এর উপর ভিত্তি করে আমি ঐ ভাইকে বলব যাকে প্রশ্নকারী নড়াচড়া করতে দেখেছেন, আপনি যে নড়াচড়া করেছেন তা নিশ্চয়ই মাকরূহ। এতে সওয়াব কমে যায়। আর এক পা কে অপর পায়ের চেয়ে আগে বাড়ানো উচিত নয়। বরং সুন্নত হল আপনার দু পা সামন্ত রাল থাকবে। শুধু আপনার নয় সকল মুসল্লিদের পা সামন্ত-রাল থাকবে। কেননা কাতার সোজা করা ওয়াজিব। যদি তা ত্যাগ করা হয় তবে আল্লাহর রাসূলের অবাধ্যতা হবে। আর রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদের পিঠে ও কাঁধে হাত দিয়ে কাতার সোজা করে দিতেন আর বলতেন :
لا تختلفوا فتختلف قلوبكم.
"তোমরা আলাদা হয়োনা যদি হও তাহলে আল্লাহ তোমাদের অন্তর আলাদা করে দিবেন।' তিনি একদিন কাতার সোজা করার হুকুম জারি করার পর এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে সে তার বুক সামনে নিয়ে গেছে তখন বললেন :
عباد الله لتسوون بين صفوفكم أو ليخالفن الله بين وجوهكم
"হে আল্লাহর বান্দাগন! তোমরা অবশ্যই কাতার সোজা রাখবে অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি করে দিবেন।"
আসল কথা হল কাতার সোজা করা ওয়াজিব। এ টা ইমাম ও মুক্তাদীর উভয়ের দায়িত্ব।
আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
ফতোয়া (১১)
হায়েজ নিফাস অবস্থায় সিয়াম পালনের বিধান
প্রশ্ন : মেয়েদের হায়েজ ও নিফাস অবস্থায় সিয়াম পালনের বিধান কি? তারা যদি এক রমজানের সিয়ামের কাজা অন্য রমজান পর্যন্ত বিলম্বিত করেন তা হলে কোন অসুবিধা আছে কিনা?
জওয়াব : হায়েজ ও নিফাছ অবস্থায় মেয়েদের জন্য ওয়াজিব হল সিয়াম বর্জন করা। এ অবস্থায় সালাত ও সিয়াম কোনটাই আদায় করা জায়েয হবে না। সুস্থতার পর তাদের সিয়াম কাজা আদায় করতে হবে। সালাতের কাজা আদায় করতে হবে না।
হাদীসে এসেছে :
عن عائشة رضي الله عنها أنها سئلت : هل تقضي الحائض الصوم والصلاة؟ فقالت : كنا نؤمر بقضاء الصوم ولا نؤمر بقضاء الصلاة. متفق عليه.
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হল হায়েজ থেকে পবিত্রতার পর মহিলারা কি সালাত ও সাওমের কাজা আদায় করবে?
তিনি বললেন : "এ অবস্থায় আমাদের সিয়ামের কাজা আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সালাতের নয়।" বুখারী ও মুসলিম
সিয়াম কাজা করা আর সালাত কাজা না করা সম্পর্কে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা:) যা বলেছেন সমস্ত উলামায়ে কেরাম তার সাথে একমত পোষণ করেছেন অর্থাৎ ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এ বিধানে আল্লাহর এক অনুগ্রহের প্রকাশ ঘটেছে। সিয়াম বছরের একবার আসে বলে তা কাজা করা কষ্টকর হয় না। কিন্তু সালাত কাজা করার হুকুম হলে তা কষ্টকর হয়ে যেত।
যদি শরয়ী ওজর (সংগত কারণ) ব্যতীত কেহ এক রমজানের সিয়ামের কাজা অন্য আরেক রমজানের পর পর্যন্ত বিলম্বিত করে তাহলে সে এ কাজের জন্য তাওবা করবে। কাজা আদায় করবে এবং প্রত্যেকটি সাওমের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে। এমনিভাবে অসুস্থ ব্যক্তি ও মুসাফির যার উপর সিয়ামের কাজা আদায় করা সহ কাফ্ফারা দিতে হবে অর্থাৎ প্রতিটি সাওমের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করতে হবে এবং তওবা করবে।
আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
ফতোয়া (১২)
ফজরের ওয়াক্তের পূর্বে হায়েজ বা নিফাস থেকে পবিত্র হয়ে ফজরের ওয়াক্তের পর গোসল করার বিধান
প্রশ্ন : যদি হায়েজবতী মহিলা ফজরের ওয়াক্তের পূর্বে তার হায়েজ বন্ধ হয়ে যায় এবং সে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর গোসল করে তা হলে তার বিধান কি?
জওয়াব : যার হায়েজ সুবহে-সাদেকের পূর্বে বন্ধ হয়েছে কিন্তু গোসল করেছে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর তা সিয়াম সহীহ হবে। মূল কথা হল মহিলার নিশ্চিত হতে হবে যে সে হায়েজ থেকে মুক্ত হয়েছে। দেখা যায় অনেক মহিলা মনে করে যে তার হায়েজ বন্ধ হয়েছে অথচ তা বন্ধ হয়নি। তাই তো সাহাবায়ে কিরামের যুগে অনেক মহিলা আয়েশা (রা:) এর কাছে কাপড়ের টুকরা নিয়ে এসে তাকে দেখাতেন যে তারা হয়েজ থেকে মুক্ত হয়েছেন কিনা। তিনি তাদের বলতেন :
لا تعجلن حتى ترين القصة البيضاء.
"তোমরা তাড়া হুড়া করে হায়েজ বন্ধ হয়েছে মনে করোনা, যতক্ষণ না শুভ্র পানি দেখ।"
অতএব তাড়া হুড়া না করে মহিলাদের নিশ্চিত হতে হবে যে তার হায়েজ এ মেয়াদের জন্য একে বারে বন্ধ হয়েছে। যখন সে নিশ্চিত হবে তখন সাওমের নিয়ত করবে। যদিও সে গোসল ফজরের ওয়াক্ত আরম্ভ হওয়ার পর করে তাতে সাওমের নিয়ত করতে অসুবিধা নেই।
কিন্তু সাথে সাথে তাকে সালাতের ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে। ফজরের সালাত ওয়াক্ত মত আদায় করার জন্য তাড়াতাড়ি গোসল করবে। কোন কোন মহিলাকে দেখা যায় তারা ফজরের ওয়াক্তের মধ্যে হায়েজ মুক্ত হয় কিন্তু ভালভাবে গোসল করার অজুহাতে সে সূর্য উদয়ের পর গোসল করে, এ রকম করা ঠিক নয়। কেননা তার জন্য ওয়াজিব হল তাড়াতাড়ি গোসল করে ফজরের সালাত ওয়াক্ত মত আদায় করা।
এমনিভাবে যার উপর গোসল ফরজ হয়েছে তার মাছয়ালাও অনুরূপ। সে যদি ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর গোসল করে তাতে সিয়ামের নিয়ত করতে কোন অসুবিধা হবে না।
আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
ফতোয়া (১৩)
কারো মৃত্যুর পর তার উদ্দেশ্যে ভোজ আয়োজন
প্রশ্ন : অনেককে দেখা যায় যে তাদের কোন আপনজন ইন্তেকাল করলে শোক প্রকাশকারীদের জন্য খাবারের আয়োজন করেন। এর হুকুম কি?
জওয়াব : এ ধরনের কাজের কোন ভিত্তি নেই। বরং এটা বিদয়াত ও পরিত্যাজ্য। এটা জাহেলিয়্যাতের অন্তর্ভুক্ত। মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে খানার আয়োজন করা জায়েয নয়। না তার ইন্তেকালের প্রথম দিনে না দ্বিতীয় দিনে না তৃতীয় দিনে না চতুর্থ দিতে না চল্লিশ দিন পর। যে দিনেই করেন তা বিদয়াত বলেই গণ্য ও মুর্খতাপ্রসূত কাজ। বরং তাদের উচিত হবে আল্লাহর প্রশংসা করা, ধৈর্য ধারণ করা, এ বিপদে ধৈর্য ধারণ করার সামর্থ্য চেয়ে আল্লাহ তা আলার কাছে দোয়া করা। কিন্তু মানুষের জন্য খাবার দাবার আয়োজন করবে না।
প্রখ্যাত সাহাবী জরীর বিন আব্দুল্লাহ আল- বাজালী (রা:) বলেন :
كنا نعد الإجتماع إلى أهل الميت وصنعة الطعام بعد الدفن من النياحة.
"মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর তার বাড়িতে জমায়েত হওয়া, খাবার- দাবার আয়োজন করাকে আমাকে নিয়াহা (মৃতদের জন্য আনুষ্ঠানিক কান্নাকাটি যা ইসলামে নিষিদ্ধ)র মধ্যে গণ্য করতাম।" আর নিয়াহা হল হারাম। কেননা আল্লাহর নিয়াহাকারীদের শাস্তির কথা বলেছেন।
অন্যদিকে মৃতের পরিবার বর্গের কাছে খাবার- দাবার প্রেরণ করা শরীয়ত সম্মত ভাল কাজ। কেননা তারা বিপদ গ্রস্ত।
যখন জর্দানের মুতার যুদ্ধ থেকে জাফর ইবনে আবি তালেবের (রা:) শহীদ হওয়ার খবর আসল তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ পরিবার বর্গকে নির্দেশ দিলেন জাফর (রা:) এর বাড়ীর লোকজনের জন্য যেন খানার ব্যবস্থা করা হয়। তিনি আরো বললেন
إنه قد أتاهم ما يشغلهم
"তাদের উপর আপতিত বিপদ তাদের ব্যস্ত রেখেছে।"
কিন্তু মৃত ব্যক্তির পরিবার কারো জন্য খাবারের আয়োজন করবে না। না প্রথম দিনে না তৃতীয় দিনে না চতুর্থ দিনে না দশম দিনে না অন্য কোন দিন। হ্যাঁ, যদি নিজেদের জন্য বা নিজেদের মেহমানদের জন্য খাবার ব্যবস্থা করে তাতে অসুবিধা নেই।
কিন্তু লোক জন তাদের বাড়ীতে একত্র হওয়া ও তাদের জন্য খাবার আয়োজন করা জায়েয নয়। এটা সুন্নতের পরিপন্থী।
আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
ফতোয়া (১৪)
থু থু গিলে ফেলার হুকুম কি?
প্রশ্ন : সিয়াম পালন রত অবস্থায় যদি থু থু গিলে ফেলে তাতে অসুবিধা আছে কিনা?
জওয়াব : সিয়াম পালন কারী যদি মুখে অবস্থিত থু থু গিলে ফেলে তাতে কোন অসুবিধা নেই। আর এ মাছআলায় উলামাদের মধ্যে কোন মতানৈক্য নেই। কেননা বার বার থু থু ফেলা যেমন কষ্টকর তেমনি থু থু না গিলে থাকাও সম্ভব নয়।
কিন্তু কাশি ও শ্লেষ্মা যদি মুখে এসে যায় তবে তা ফেলে দিতে হবে। সিয়াম পালনরত অবস্থায় উহা গিলে ফেলা জায়েয নয়। কেননা কাশি ও শ্লেষ্মা থু থুর মত নয়।
আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
ফতোয়া (১৫)
সিয়াম পালনকারীর মিসওয়াক ও টুথপেষ্ট ব্যবহারের বিধান
প্রশ্ন : সিয়াম পালনকারী কি রমজানের দিনের বেলায় টুথপেষ্ট বা টুথপাউডার ব্যবহার করতে পারবেন?
জওয়াব : যদি গলার মধ্যে না যায় তবে টুথপেষ্ট ও পাউডার ব্যবহার করতে কোন অসুবিধা নেই। এমনিভাবে দিনের শুরুতে ও শেষে যে কোন সময়ে মিছওয়াক করতে কোন অসুবিধা নেই।
কতিপয় আলেম দুপুরের পর মিছওয়াক করাকে মাকরূহ বলেছেন। অবশ্য এ মত শুদ্ধ নয়। সঠিক কথা হল যে কোন সময় মিছওয়াক করা যায়। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লম মিছওয়াক সম্পর্কে যা বলেছেন তা "আম" অর্থাৎ ব্যাপক। তিনি বলেছেন :
السواك مطهرة للفم مرضاة للرب
"মিছওয়াক মুখকে পবিত্র ও আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে।" (নাসায়ী, আয়েশা (রা:) থেকে)
তিনি আরো বলেছেন :
لولا أن أشق على أمتى لأمرتهم بالسواك عند كل صلاة. متفق عليه
"যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর না হত তা হলে আমি প্রত্যেক সালাতে মিছওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। (বুখারী ও মুসলিম)
আর এ হাদীস জোহর ও আছরের সালাতকেও শামিল করে। কারণ এ দু সালাত দুপুরের পরেই হয়ে থাকে।
ফতোয়া (১৬)
গর্ভবতী ও শিশুকে দুধ দানকারী মহিলার সিয়াম না রাখা প্রসঙ্গ
প্রশ্ন : গর্ভবতী মহিলা কি রমজানে সিয়াম থেকে বিরত থাকতে পারে?
জওয়াব : গর্ভবতী মহিলার দু অবস্থার যে কোন এক অবস্থা থাকবে। হয়তো সে শক্তিশালী হবে। সিয়ামের কারণে তার কষ্ট হবে না ও গর্ভস্থিত বাচ্চার উপর তার প্রভাব পড়বে না। এমতাবস্থায় তার সিয়াম পালন করতে হবে।
আর যদি সে দুর্বল হয়। সিয়াম সে বরদাশত করতে পারবে না বলে মনে হয় তা হলে সে সিয়াম আদায় করবে না। বাচ্চার ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে সিয়াম বর্জন করা তার জন্য ওয়াজিব হবে। বাচ্চা প্রসবের পর সে কাজা আদায় করবে। সিয়াম পালন করলে অনেক সময় বাচ্চাকে দুধ পান করানোর সমস্যা দেখা দেয়। কেননা দুগ্ধ দানকারী মায়ের খাবার- দাবার গ্রহণের প্রয়োজন। বিশেষ করে গ্রীষ্ম কালে যখন দিন বড় হয়ে থাকে। তখন সে সিয়াম বর্জন করতে বাধ্য হয়ে পড়ে। অন্যথায় তার বাচ্চার ক্ষতি হয়ে যাবে।
أفطري وإذا زال عنك العذر فإنك تقضين ما فاتك من الصوم.
এমতাবস্থায় আমরা তাকে বলব আপনি সিয়াম থেকে বিরত থাকুন। যখন আপনি সমস্যা- মুক্ত হবেন তখন কাজা আদায় করবেন।
কোন কোন আলেম বলেছেন গর্ভবতী ও দুগ্ধ দানকারী মহিলা সিয়াম থেকে বিরত থাকতে পারেন যখন সিয়ামের কারণে বাচ্চার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা হয়, নিজের ক্ষতির কারণে নয়। তাই তার জন্য ওয়াজিব হবে কাজা আদায় করা ও কাফ্ফারা। তবে কাফ্ফারা ঐ ব্যক্তি আদায় করবেন যার দায়িত্বে রয়েছে এ সন্তানের ভরন-পোষণ। কিন্তু বিশুদ্ধ মত হল কাফ্ফারা আদায়ের প্রয়োজন হবে না।
আর যে ব্যক্তি অন্য কাউকে পানি বা আগুন থেকে উদ্ধার করার জন্য সাওম ভঙ্গ করেছে তার হুকুমও ঐ মহিলার মত যে তার বাচ্চার ক্ষতির আশঙ্কায় সিয়াম থেকে বিরত থাকল অর্থাৎ সে সাওম থেকে বিরত থাকবে ও পরে কাজা আদায় করবে।
উদাহরণ : আপনি দেখলেন একটি ঘরে আগুন লেগেছে। সে ঘরের ভিতর মুসলমানগন আছেন তখন তাদের উদ্ধার করার জন্য সাওম ভঙ্গ করে খাবার গ্রহণ করে শক্তি অর্জন করত তাদের উদ্ধারের জন্য প্রচেষ্টা চালাবেন। এটা শুধু জায়েয নয় বরং ওয়াজিব।
আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
ফতোয়া (১৭)
সিয়াম আদায়ের উদ্দেশ্যে মাসিক বন্ধ রাখার জন্য ট্যাবলেট খাওয়া প্রসঙ্গ
প্রশ্ন : রমজানে সিয়াম পালনের উদ্দেশ্যে ট্যাবলেট ইত্যাদি খেয়ে মাসিক বন্ধ রাখা জায়েয কিনা?
জওয়াব : রমজানে সিয়াম যেন ত্যাগ করতে না হয় এ উদ্দেশ্যে মাসিক (হায়েজ) বন্ধ রাখার জন্য ঔষধ গ্রহণ করা মহিলাদের জন্য জায়েয আছে। তবে শর্ত হল সৎ-নেককার চিকিৎসকের দ্বারা জেনে নিতে হবে যে এটা তার স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি করবে না এবং তার জরায়ুতে কোন প্রতিক্রিয়া বা সমস্যা সৃষ্টি করবে না।
কিন্তু এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ না করা উত্তম। যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সিয়াম থেকে বিরত থেকে অন্য সময় আদায় করার সুযোগ দিয়েছেন তখন তা সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহণ করাই ভাল।
আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
ফতোয়া (১৮)
না জেনে ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পর খাবার গ্রহণ করার বিধান
প্রশ্ন : আমি সাহারী খাওয়ার জন্য জাগ্রত হয়ে পানি পান করলাম। তারপর দেখলাম বেশ আগেই ফজরের ওয়াক্ত হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আমার সাওম বাতিল হবে কিনা?
জওয়াব : ফজরের ওয়াক্ত হয়ে গেছে অথচ আপনি এখনও সাহারীর সময় আছে মনে করে পানাহার করেছেন। এ অবস্থায় আপনার কোন গুনাহ হবে না এবং সাওমের কাজা আদায় করা দরকার হবে না।
কেননা কুরআন ও হাদীসের অনেক প্রমানাদি দ্বারা একথা স্পষ্ট যে মানুষের ভুলে যাওয়া ও অবগতি না থাকার কারণে শাস্তি দেয়া হবে না।
আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
من نسي وهو صائم فأكل أو شرب فليتم صومه فإنما أطعمه الله وسقاه.
"যে ব্যক্তি ভুলে গেল যে আমি সিয়াম অবস্থায় আছি অতঃপর খাওয়া দাওয়া করল সে যেন তার সাওম অব্যাহত রেখে পূর্ণ করে (ভেঙে না ফেলে)। কেননা আল্লাহ তা আলা তাকে আহার করিয়েছেন।
আল্ল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
ফতোয়া (১৯)
যে ব্যক্তি সাওম ভঙ্গ করার নিয়ত করে তার সাওম কি ভঙ্গ হয়ে যায় ?
প্রশ্ন : অনেকে বলে থাকেন যে সাওম ভঙ্গ করার নিয়ত করল সে সাওম ভঙ্গ করে ফেলল। এটা কি সঠিক।
জওয়াব : হা এটা সঠিক, যে সাওম ভঙ্গের নিয়ত করল সে যেন তার সাওম ভেঙে ফেলল। কারণ সাওম দুটো মৌলিক বিষয় দ্বারা গঠিত।
১ম বিষয় নিয়ত। ২য় বিষয় হল সাওম ভঙ্গ করে এমন সকল বিষয় থেকে বিরত থাকা।
যখন সাওম ভঙ্গের নিয়ত করল তখন ১ম বিষয়টি চলে গেল। আর এ নিয়তটিই তো ছিল ইবাদতের মধ্যে বেশি প্রয়োজনীয়। কেননা সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।
আর আমরা যে বললাম " তার সাওম ভেঙে ফেলল" একথার অর্থ হল সে নিজে সাওম না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও সে খাওয়া- দাওয়া বা এমন কোন কাজ করেনি যা সাওম ভঙ্গ করে।
যদি কোন ব্যক্তি নফল সাওম পালন অবস্থায় নিয়ত করল সে সাওম ভঙ্গ করে ফেলবে, এরপর খাওয়া- দাওয়া বা সাওম ভঙ্গকারী কিছু করার পূর্বে নিয়ত পরিবর্তন করল অর্থাৎ নফলের ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা হবে না।
কিন্তু ফরজের ক্ষেত্রে অসুবিধা হবে। এজন্য সে ফরজ সাওমের জন্য শর্ত হল সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পূর্ণ দিবসটা নিয়তসহ থাকা। কিন্তু নফলের ব্যাপারটা এরকম নয়। বিষয় দুটোর পার্থক্য ভালভাবে বুঝার জন্য ছোট একটা ভূমিকার অবতারণা করছি :
যে কোন ইবাদতের নিয়ত ভেঙে ফেলা দু ধরনের।
এক. কোন কোন ক্ষেত্রে নিয়ত ত্যাগ করলে বা ভেঙে ফেললে কোন অসুবিধা হয় না। এটা হল ইবাদতটা সম্পন্ন করার পর। যেমন কেহ সালাত অথবা সাওম বা হজ অথবা যাকাত আদায় করার পর নিয়ত ত্যাগ করল। এতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা বিষয়টা তার স্থানে চলে গেছে। এমনিভাবে কেহ পবিত্রতা অর্জন করার পর তার নিয়ত ত্যাগ করল, তাতে তার তাহারাতে কোন অসুবিধা হবে না।
দুই. কোন কোন ক্ষেত্রে নিয়ত পরিত্যাগ করলে ইবাদত টা সহীহ হয় না। যেমন আপনি ইবাদতে রত থাকা অবস্থায় তার নিয়ত পরিত্যাগ করে ফেললেন। আপনি সালাতে থাকাকালীন তার নিয়ত ত্যাগ করলেন। অথবা সাওমে বা অজু করা অবস্থায় নিয়ত ছেড়ে দিলেন। এ সকল ক্ষেত্রে ইবাদত সহীহ হবে না।
এ দু অবস্থার পার্থক্য যখন বুঝে আসবে তখন বিষয়টি বুঝতে অসুবিধা হবে না।
আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
ফতোয়া (২০)
রমজানে দিনের বেলায় স্ত্রীকে চুম্বন ও আলিঙ্গন প্রসঙ্গ
প্রশ্ন : যদি কোন পুরুষ রমজানে দিনের বেলা তার স্ত্রীকে চুমো দেয় বা আলিঙ্গন করে তা হলে তার সাওম কি নষ্ট হয়ে যাবে?
জওয়াব : যদি সাওম অবস্থায় স্বামী তার স্ত্রীকে সহবাস ব্যতীত চুমো দেয় বা আলিঙ্গন করে তবে তা জায়েয। এতে সাওমের কোন অসুবিধা হয় না। কেননা নবী করীম সাল্লল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লম সাওম অবস্থায় স্ত্রীকে চুমো দিতেন, আলিঙ্গন করতেন। তবে এতে যদি সহবাসে লিপ্ত হয়ে পরার আশঙ্কা থাকে তবে তা মাকরূহ হবে। আর চুমো বা আলিঙ্গনের কারণে যদি বীর্যপাত হয়ে যায় তবে দিনের বাকি অংশ সাওম অবস্থায় থেকে পরে সাওমের কাজা আদায় করবে। কাফ্ফারা আদায় করতে হবে না। এটা অধিকাংশ আলেমদের মত। চুমো বা আলিঙ্গনের কারণে যদি মজী বের হয় তবে এতে সাওমের কোন ক্ষতি করে না। এটা অধিকতর বিশুদ্ধ মত।
আল্ল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
ফতোয়া (২১)
আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে শপথ করা প্রসঙ্গ
প্রশ্ন : আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে শপথ করা জায়েয আছে কি?
জওয়াব : না, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে শপথ জায়েয নেই। এটা শিরক। যেমন ইবনে উমার (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : নবী করীম সাল্লল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লম বলেছেন :
من حلف بغير الله فقد كفر أو أشرك
"যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করল সে শিরক করল বা কুফরী করল।"
এ শপথ হল শিরকে আছগর। আর যার নামে শপথ করা হল সে যদি শপথকারী ব্যক্তির কাছে ইবাদত তুল্য হয় তা হলে তখন তার নামে শপথ করা শিরকে আকবর বলে পরিগণিত হবে।
যেমনটি আমরা এ যুগে কবর পূজারিদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি। তারা কবরের অলীদেরকে এমনভাবে সম্মান করে যেমন আল্লাহকে করা উচিত। বরং অনেক সময় দেখা যায় তারা অলীদের আল্লাহর চেয়ে বেশি সম্মান দেয়।
যদি কোন ব্যক্তি আপনাকে কোন অলীর নামে কসম (শপথ) করতে বলে তবে তা আপনি কখনো করবেন না। যদিও সে লোকটা খুব সত্যবাদী হয়। আর যদি কোন ব্যক্তি আপনাকে আল্লাহর নামে শপথ করতে বলে তবে আপনি তা করবেন যদিও লোকটি মিথ্যাবাদী হয়।
আল্ল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
ফতোয়া (২২)
নাক, চোখ, কানে ঔষধ বা সুরমা ব্যবহার কি সাওমের ক্ষতি করে?
প্রশ্ন : নাকে চোখে ড্রপ ব্যবহার, সুরমা ব্যবহার অথবা কানে ঔষধ ব্যবহার কি সাওম ভঙ্গ করে?
জওয়াব : নাকে দেয়া ঔষধ যদি পেটে পৌঁছে যায় অথবা গলায় চলে যায় তা হলে সাওম ভেঙে যায়।
লকীত ইবনে সাবুরা থেকে বর্ণিত নবী করীম সাল্লল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লম বলেছেন :
بالغ في الإستنشاق، إلا أن تكون صائما.
"নামে তোমরা ভাল মত পানি পৌঁছাও কিন্তু সাওম পালনরত অবস্থায় নয়।"
অতএব সাওম পালনকারীর জন্য নাকে এমন ঔষধ ব্যবহার করা জায়েয নেই যা গলা অথবা পেটে চলে যায়। যদি পেটে বা গলায় না যায় তবে অসুবিধা নেই।
আর চোখে বা কানে ঔষধ ব্যবহার করলে অথবা চোখে সুরমা ব্যবহার করলে সাওমের কোন ক্ষতি হয় না। কেননা এতে সাওম ভঙ্গের ব্যাপারে কুরআন- হাদীসের কোন দলীল নেই। চোখ বা কান দ্বারা কখনো খাদ্য গ্রহণ করা যায় না। চোখ, কান শরীরের অন্যান্য অঙ্গ- প্রত্যঙ্গের মতই। উলামায়ে কেরামগণ বলেছেন যদি কেহ পা দ্বারা খাদ্য পিষে আর খাদ্যের স্বাদ সে মুখে অনুভব করে তবুও তার সাওম নষ্ট হবে না। কেননা পা দ্বারা খাবার গ্রহণ সম্ভব নয়।
এমনিভাবে চোখে কানে ঔষধ দিলে অথবা সুরমা ব্যবহার করলে তার স্বাদ যদি অনুভূত হয় তবে সাওম নষ্ট হবে না। এমনি নির্দেশ যদি কেহ গায়ে তেল ব্যবহার করে তার স্বাদ অনুভব করে তার সাওমের কোন ক্ষতি হবে না।
আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
ফতোয়া (২৩)
অপ্রাপ্ত বয়স্কদের সিয়াম
প্রশ্ন : যে কিশোরের বয়স পনেরো বছর পর্যন্ত পৌছেনি তাকে কি সিয়াম পালনের নির্দেশ দেয়া হবে, যেমন তাকে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়ে থাকে?
জওয়াব : হা এ ধরনের কিশোর- কিশোরীদের সিয়াম আদায়ের নির্দেশ দেয়া হবে, যদি তারা সিয়াম পালনের সামর্থ্য রাখে। আর সাহাবায়ে কিরাম (রা:) তাদের সন্তানদেরকে সিয়াম পালনের নির্দেশ দিতেন।
উলামায়ে,কেরামগণ বলেছেন অভিভাবক তার অধীনস্থ সকল অপ্রাপ্ত বয়স্কদের সিয়াম আদায়ের নির্দেশ দিবেন। যাতে তারা শিশু কাল থেকে ইসলামী আচার-আকীদায় অভ্যস্ত হয়ে যায় ও এর প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। সিয়াম পালন যদি তাদের কষ্টের কারণ হয় তবে জোর- জবরদস্তি করবে না।
অনেক পিতা-মাতা স্নেহ ও আদরের বশবতী হয়ে তাদের অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের সিয়াম থেকে বারণ করেন। এটা মোটেই উচিত নয়। কারণ এটা সাহাবায়ে কেরামের আমলের খেলাফ। সন্তানদের ইসলামী শরীয়তের অনুশীলন ও তাতে অভ্যস্ত করাই মূলত তাদের সত্যিকার স্নেহ ভালোবাসার দাবি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
إن الرجل راع في أهل بيته، ومسئول عن رعيتة.
"প্রত্যেক ব্যক্তি তার পরিবার বর্গের জিম্মাদার ও তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।" তাই পরিবারের কর্তার উচিত পরিবারের সকলকে আল্লাহকে ভয় ও তার হুকুম আহকাম পালনের নির্দেশ দেয়া।
আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
ফতোয়া (২৪)
কখন সাওম ভঙ্গকারী কারণগুলো সাওম ভঙ্গ করে না?
প্রশ্ন : যদি দেখা যায় রমজানের দিনের বেলা কোন সিয়াম পালনকারী ভুলে খাওয়া দাওয়া করছে তখন কি তাকে সাওমের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে?
জওয়াব : যদি কেহ দেখে রমজানে দিনের বেলায় কোন সিয়াম পালনকারী ব্যক্তি পানাহার করছে তখন তাকে সাওমের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া ওয়াজিব। কেননা এটা অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখার (নাহী আনিল মুনকার) অন্তর্ভুক্ত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
من رأى منكم منكرا فليغيره بيده، فإن لم يستطع فبلسانه، فإن لم يستطع فبقلبه.
"তোমাদের মধ্যে যে অন্যায় কাজ হতে দেখবে সে যেন হাত দ্বারা তা প্রতিরোধ করে। যদি সে এর সামর্থ্য না রাখে তবে যেন মুখ দ্বারা বাধা দেয়। যদি এরও সামর্থ্য না রাখে তবে অন্তর দ্বারা।"
আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে সাওম রত অবস্থায় পানাহার করা একটি অন্যায় কাজ। কিন্তু তার ভুলে যাওয়ার কারণে সে ক্ষমা প্রাপ্ত। কিন্তু যে দেখে বাধা না দেবে সে দায়িত্ব এড়াতে পারবে না। অতএব সাওম পালনকারীকে কিছু খেতে দেখলে তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে।
স্মরণ হওয়ার পর সাওম পালনকারীর উচিত হবে তাড়াতাড়ি খাওয়া বন্ধ করে দেয়া। সে এ ভুলকে খাওয়া দাওয়া করার সুযোগ মনে করে তা যেন অব্যাহত না রাখে। যদি মুখে খাবার থাকে তবে তাড়াতাড়ি ফেলে দেবে। স্মরণ হওয়ার পর গিলে ফেলা জায়েয হবে না।
তাই বলছি তিনটি অবস্থায় সাওম ভঙ্গকারী বিষয়গুলো সংঘটিত হওয়া সত্ত্বেও তা সাওম ভঙ্গ করে না।
১- যখন সাওমের কথা ভুলে যায়।
২- যখন অজ্ঞ হয়ে যায়।
৩- যখন অনিচ্ছাকৃত ভাবে পানাহার করে।
যদি সাওমের কথা ভুলে যেয়ে পানাহার করে তবে তার সাওম পূর্ণ হতে কোন অসুবিধা হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
من نسي وهو صائم فأكل أو شرب فليتم صومه فإنه أطعمه الله وسقاه.
"যে সাওমের কথা ভুলে যেয়ে পানাহার করে সে যেন তার সাওম অব্যাহত রাখে কারণ তাকে আল্লাহ তা আলা পানাহার করিয়েছেন।"
"যখন অজ্ঞ হয়ে যায়" এর মিসাল হল যেমন কেহ মনে করল এখনও ফজরের ওয়াক্ত হয়নি; সাহরী খেল। অথবা মনে করল সূর্য অস্ত গেছে অথচ তা অস্ত যায়নি; ইফতার করল। তাহলে তার সাওম সহীহ হবে।
হাদীসে এসেছে সাহাবী আসমা বিনতে আবি বরক (রা:) বলেন :
أفطرنا في عهد النبي صلى الله عليه وسلم في يوم غيم ثم طلعت الشمس.
"নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে এক মেঘাচ্ছন্ন দিনে সূর্যাস্ত হয়েছে মনে করে আমরা ইফতার করলাম। তারপর সূর্য দেখা গেল।" অথচ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাওম কাজা করতে বলেননি। যদি কাজা করা ওয়াজিব হত তবে তিনি অবশ্যই কাজা করতে আদেশ দিতেন। আর যদি আদেশ দিতেন তা অবশ্যই আমাদের কাছে পৌঁছে যেত। কেননা তিনি কোন কিছুর আদেশ করলে তা আল্লাহর শরীয়তে পরিণত হয়ে যায়, আর তার শরীয়ত কিয়ামত পর্যন্ত রক্ষিত ও সকলের কাছে পৌঁছে গেছে।
আর অনিচ্ছাকৃত ভাবে পানাহার করার দৃষ্টান্ত যেমন কেহ কুলি করার সময় পানি ভিতরে চলে গেল এতে সাওম ভাঙবে না, কেননা সে পান করার ইচ্ছা করেনি। এমনিভাবে কারো স্বপ্নদোষ হয়ে বীর্যপাত হল এতে তার সাওমের কোন ক্ষতি হবে না। কেননা সে নিদ্রায় ছিল, ইচ্ছা করেনি।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ (الأحزاب: ৫)
"তোমরা কোন ভুল করলে কোন অপরাধ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তর ইচ্ছা করলে অপরাধ হবে" সূরা আহযাব : ৫
ফতোয়া (২৫)
কবর উঁচু করা প্রসঙ্গ
প্রশ্ন : আমার ভাই ইন্তেকাল করেছেন। আমাদের এক আত্মীয় কবর উঁচু করেছেন এবং তার উপর কুরআন মজীদের কতিপয় আয়াত লিখে দিয়েছেন। এটা শরীয়ত সম্মত কিনা?
জওয়াব : নবী করীম সাল্লল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লম কবরের উপর ঘর বানাতে নিষেধ করেছেন, কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন, তার উপর কোন কিছু লিখতে নিষেধ: করেছেন। তিনি আলী (রা:) কে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন :
لا تدع قبرا مشرفا إلا سويته.
"কোন উঁচু কবর ছাড়বে না, সব সমান করে দেবে।" অর্থাৎ কোন কবর অন্যটার চেয়ে উঁচু থাকবে না। কেননা উঁচু কবর মানুষের নজর কারে, অজ্ঞ লোকেরা এ কবর দেখে মনে করবে এটা কোন অলীর কবর। তার উপর মসজিদ নির্মাণ করবে বা তার কাছে সালাত আদায় করবে। আর এ সকল কাজ সম্পর্কে হাদীসে নিষেধ এসেছে।
তবে অর্ধ হাত পরিমাণ কবর উচ্চ করা জায়েয আছে যেন কবরটা চেনা যায়, কেহ তার উপর না বসে বা পদ দলিত না করে।
আল্ল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
ফতোয়া (২৬)
রমজানের দিনের বেলা ইচ্ছা করে বীর্যপাত করার বিধান
প্রশ্ন : যদি কেহ রমজানের দিনের বেলা ইচ্ছা করে বীর্যপাত করে তা হলে তার করণীয় কি? তাকে কি এ দিনের সাওমের কাজা আদায় করতে হবে? যদি কাজা আদায় করার দরকার হয় কিন্তু সে পরবর্তী রমজান আসার আগেও কাজা আদায় করল না তা হলে তার হুকুম কি?
জওয়াব : প্রথমত : নিজ স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোন ভাবে বীর্যপাত করা হারাম। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ ﴿৫﴾ إِلَّا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ ﴿৬﴾ فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاءَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْعَادُونَ ﴿৭﴾ ( المؤمنون: ৫-৭)
"(মুমিন তারা) যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে। নিজেদের স্ত্রী অথবা অধিকারভুক্ত দাসীগণ ব্যতীত। এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। এদের ছাড়া অন্য কিছু কামনা করলে তারা সীমা লঙ্ঘন কারী হবে।" সূরা আল- মুমেনুন : ৫-৬
আর এ ধরনের কাজে শরীরেরও ক্ষতি।
রমজানের দিনের বেলা কোন সাওম পালনকারী যদি এ ধরনের কাজ ইচ্ছাকৃত ভাবে করে ফেলে তাহলে সে গুনাহগার হবে। তার ঐ দিনের সাওম কাজা করতে হবে। কারণ বীর্যপাত করা সহবাসের মতই।
বুখারীতে এসেছে আয়েশা (রা:) বলেনে :
كان رسول صلى الله عليه وسلم يقبل وهو صائم، وكان أملككم لإربه.
"আল্লাহর রাসূল সাল্লল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লম সাওম অবস্থায় স্ত্রীকে চুমো দিতেন। কিন্তু তিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে সামর্থ্য ছিলেন।"
একথার দ্বারা বুঝে আসে যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না রমজানের দিনের বেলা সাওম অবস্থায় তার চুমো দেয়া জায়েয নেই। চুমো দিতে যেয়ে কামাবেগে যদি বীর্যপাত হয়ে যায় তাহলে সাওম নষ্ট হয়ে যাবে। তবে কাফ্ফারা আদায় করতে হবে না। কাজা আদায় ও তওবা করতে হবে।
দ্বিতীয়ত : যার উপর সাওমের কাজা ওয়াজিব সে পরবর্তী রমজান আসার আগে যদি কাজা আদায় না করে তবে তার এ অলসতার জন্য তওবা ইস্তিগফার করতে হবে, কাজা আদায় করতে হবে ও প্রতিটি সাওমের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করতে হবে। সাহাবায়ে কেরামের এক জামাত এ ফতওয়া দিয়েছেন। একটি সাওমের কাফ্ফারা হল অর্ধ সা খাদ্য যা বর্তমানে প্রায় এক কেজি পাঁচশো গ্রাম পরিমাণ হয়ে থাকে।
আল্ল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
ফতোয়া (২৭)
জুমার দিনে খুতবার সময় চুপ থাকা ওয়াজিব
প্রশ্ন : জুমার দিন ইমাম সাহেব খুতবাহ দিচ্ছেন এ সময় যে কথা বলে তার হুকুম কি? যেমন কোন বন্ধু তাকে সালাম দিল অথবা তার কাছের শিশুরা কথা বলছে সে তাদের বলল "চুপ কর।"
জওয়াব : জুমার দিন চুপ করে খুতবাহ শোনা ওয়াজিব। তখন কথা- বার্তা বলা হারাম। যদিও সে কথা সৎ কাজের আদেশ সম্পর্কিত হয়, ভাল কথা হয়।
নবী করীম সাল্লল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লম বলেছেন :
إذا قلت لصاحبك أنصت يوم الجمعة والإمام يخطب فقد لغوت.
"জুমার দিন খুতবার সময় তুমি যদি তোমার ভাইকে বল 'চুপকর' তাহলে তুমিও বাজে কথা বললে।"
এমনিভাবে খুতবার সময় অনর্থক কোন কাজ করা, মেঝে সমান করা, জায়নামায সোজা করা ইত্যাদি হারাম। যেমন হাদীসে এসেছে -
من مس الحصى فقد لغا
"যে মেঝের পাথর স্পর্শ করল সে বাজে কাজ করল।" তবে ইমাম সাহেব উপস্থিত লোকদের যে কাউকে কিছু বলতে পারেন। উপস্থিত মুসল্লীদের মধ্য থেকে কেহ প্রয়োজনে ইমাম সাহেবকে সম্বোধন করে কিছু বললে তা নাজায়েয হবে না।
যদি কেহ আপনাকে ছালাম দেয় আপনি ইশারায় তার জওয়াব দিবেন। যদি ছোটদের চুপ করতে বলার প্রয়োজন হয় তা হলে মুখে কিছু না বলে তাদের ইশারায় বলবেন।
আর খুতবার সময় কথা বলা নিষেধ এটা যদি কারো জানা না থাকে আর সে যদি কথা বলে তবে সে মাফ পেয়ে যাবে। কিন্তু মাছআলা জানা থাকা সত্বেও যদি কেহ ইচ্ছা করে কথা বলে তবে সে অপরাধী। তবে তাকে সালাত পুনরায় আদায় করতে বলা হবে না।
ফতোয়া (২৮)
আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে দোয়া করা প্রসঙ্গ
প্রশ্ন : যে সকল ব্যাপারে আল্লাহ তা আলা ব্যতীত অন্য কেহ কুদরত রাখে না সে সকল ব্যাপারে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে দুআ - প্রার্থনা করার বিধান কি?
জওয়াব : যে সকল ব্যাপারে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেহ কুদরত রাখেনা। সে সব বিষয়ে আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো কাছে দোয়া- প্রার্থনা করা শিরক আকবর (মারাত্মক শিরক)। যা ইসলাম থেকে বের করে দেয়। আল্লাহ তা আলা বলেন :
وَلَا تَدْعُ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ الظَّالِمِينَ ﴿১০৬﴾ يونس
" আর আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকবে না, যা তোমার উপকার করে না ক্ষতিও করে না। যদি কর তা হলে তুমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে।" সূরা ইউনুস : ১০৬
আল্লাহ আরো বলেন :
وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللَّهِ مَنْ لَا يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَائِهِمْ غَافِلُونَ ﴿৫﴾ الأحقاف
"সে ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত আর কে যে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে যা কিয়ামত পর্যন্তও তাকে সাড়া দেবে না? এবং এগুলি তাদের প্রার্থনা সম্পর্কে বে-খবর।" সুরা আহকাফ : ৫
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো বলেন :
وَالَّذِينَ تَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ مَا يَمْلِكُونَ مِنْ قِطْمِيرٍ ﴿১৩﴾ إِنْ تَدْعُوهُمْ لَا يَسْمَعُوا دُعَاءَكُمْ وَلَوْ سَمِعُوا مَا اسْتَجَابُوا لَكُمْ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُونَ بِشِرْكِكُمْ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِيرٍ ﴿১৪﴾فاطر
"আর তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ডাক তারা খেজুরের আঁটির আবরণেরও মালিক নয়। তোমরা তাদের ডাকলে তারা তোমাদের ডাক শোনে না এবং শুনলেও তোমাদের আহ্বানে সাড়া দিতে পারে না। তোমরা তাদেরকে যে শরীক করেছ কেয়ামতের দিন তারা তা অস্বীকার করবে। সর্বজ্ঞের ন্যায় কেউ তোমাকে অবহিত করতে পারে না।" সূরা ফাতির : ১৩-১৪
যখন জানলাম গাইরুল্লাহর কাছে দোয়া- প্রার্থনা করা এমন মারাত্মক শিরক যা মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়, এ কথাও জানতে হবে যে শিরক হল সবচেয়ে মারাত্মক পাপ ও অন্যায়। আর শিরককারী ব্যক্তি চিরদিন জাহান্নামে থাকবে। আল্লাহ অন্যান্য পাপগুলো মাফ করে দিলেও শিরক কখনো মাফ করবেন না।
যেমন আল্লাহ তা আলা বলেন :
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ (النساء: ৪৮)
"আল্লাহ কখনো শিরক ক্ষমা করবেন না। এ ছাড়া অন্য গুনাহগুলোকে ক্ষমা করতে পারেন।" সূরা নিসা : ৪৮
তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে দোয়া- প্রার্থনা না করা, না ডাকা। তিনিই তো একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, তার হাতেই ভাল-মন্দের সকল ক্ষমতা, তিনিই তো বান্দার ডাকে সাড়া দেন। যেমন তিনি বলেন :
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ (غافر: ৬০)
"তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন তোমরা আমাকে ডাক আমি সাড়া দিব।" সূরা গাফির : ৬০
তিনি আরো বলেন :
قُلْ أَنَدْعُو مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنْفَعُنَا وَلَا يَضُرُّنَا وَنُرَدُّ عَلَى أَعْقَابِنَا بَعْدَ إِذْ هَدَانَا اللَّهُ (الأنعام: ৭১)
"বল, আল্লাহ ব্যতীত আমরা কি এমন কিছুকে ডাকব যারা আমাদের কোন উপকার কিংবা অপকার করতে পারে না? আল্লাহ আমাদের হিদায়েত দান করার পর আমরা কি আবার পিছনে ফিরে যাব?" সূরা আল- আনয়াম : ৭১
আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
ফতোয়া (২৯)
সদকাতুল ফিৎরের হিকমত
প্রশ্ন : সদকাতুল ফিতরে কি হিকমত বা কল্যাণ আছে? তার পরিমাণ কত ? এবং কার উপর ওয়াজিব ?
জওয়াব : প্রত্যেক মুসলিমের উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব। মহিলা, পুরুষ, ছোট, বড়, স্বাধীন, অধীন সকলের জন্য ওয়াজিব।
ঈদের দিনে যদি কোন মুসলিম ও তার পরিবার বর্গের খাবারের চেয়ে এক সা (প্রায় ৩ কেজি) খাবার অতিরিক্ত থাকে, তা হলে তার উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়ে যায়।
একজন মুসলিম সে নিজের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করবে তেমনি নিজে যাদের ভরন- পোষণের দায়িত্ব পালন করে তাদের পক্ষ থেকেও আদায় করবে।
ফিতরার পরিমাণ হল : মাথা পিছু এক সা খেজুর অথবা এক সা আটা বা কিসমিস অথবা গম।
সকদাতুল ফিতর প্রবর্তনের হিকমত হল অনেক।
আমরা যা দেখছি তা হল :
১- সদকাতুল ফিতর শরীরের যাকাত।
২-এ দ্বারা দরিদ্র মুসলিমদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা হয়। ঈদে আনন্দ উপভোগে তাদের সাহায্য করা হয়। যাতে ধনী- দরিদ্র সকলে ঈদের আনন্দে শামিল হতে পারে। রাসূলে করীম সাল্লাল্ল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লম বলেছেন :
أغنوهم عن المسألة في هذا اليوم.
"এ দিনের জন্য তোমরা তাদের ধনী করে দাও"।
৩- আল্লাহ তা আলা যে সিয়াম আদায়ের তাওফিক দিয়েছেন এর শুকরিয়া আদায় করা হয় সদকাতুল ফিতর আদায় করে।
৪- যদি সিয়াম পালনে কোন ভুল- ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে এর পূর্ণতার জন্য সদকাতুল ফিতরের ভূমিকা আছে।
ফতোয়া (৩০)
মহিলাদের ঈদের সালাতে গমন
প্রশ্ন : ঈদুল ফিতরের জামাতে মহিলাদের অংশ গ্রহণ জায়েয কিনা?
জওয়াব : হ্যাঁ জায়েয। বরং তাদের ঈদের জামাতে অংশ গ্রহণের প্রতি জোর দেয়া হয়েছে।
সাহাবী উম্মে আতীয়াহ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
أمرنا أن نخرج الحيض يوم العيدين وذوات الخدور فيشهدن جماعة المسلمين ودعوتهم، ويعتزل الحيض عن مصلاهن، قالت امرأة: يارسول الله، إحدانا ليس لها جلباب، قال: لتلبسها صاحبتها من جلبابها .
"আমাদের মহিলাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে যাতে মহিলাগন মুসলিমদের জামায়েত প্রত্যক্ষ করতে পারেন ও তাদের সাথে সালাতে শরীক হন।
মাসিকগ্রস্ত মহিলাগন ঈদগাহ থেকে দুরে থাকবে। এক মহিলা জিজ্ঞেস করলেন হে আল্লাহর রাসূল আমাদের একজনের ওড়না নেই, সে কীভাবে যাবে ? তিনি বললেন "সে তাদের এক সাথীর ওড়না নিয়ে পরিধান করবে ও যাবে।"
কিন্তু মহিলাগণ সুগন্ধি ও চাকচিক্যময় বেশ-ভূষা এবং পুরুষদের সাথে একত্রিত হওয়া পরিহার করবেন।
আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
______________________________________________________________________________
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
কোন মন্তব্য নেই:
/>