ইন্নাল হামদা লিল্লাহ। ওয়াস সালাতু ওয়াস আলামু আলা রাসুলিল্লাহ।
অনেকেই জিহাদ বলতে খুব সাদা-মাঠাভাবে কিছু মানুষ জড়ো করে, তাদেরকে কিতালের ব্যাপারে তাহরীদ করে, জিহাদের ব্যাপারে কিছু আয়াত-হাদিস মুখস্থ করিয়ে - একসাথে 'কিছু একটা' করা মনে করে থাকেন। আমাদেরকে এই 'কিছু একটা' এর গভীরে যেতে হবে।
বাস্তবে জিহাদ কিভাবে করতে হবে - তা জানতে হবে।
কিভাবে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের মুজাহিদীনরা জিহাদ করছেন - সেটা জানতে হবে।
তা না হলে এই 'কিছু একটা' এর ব্যাপারে ভাসাভাসা ধারনা নিয়ে কাজ করতে গেলে, আমরা এই জমীনের জিহাদকে হয়তো আরো অনেক পিছিয়ে দিবো। আর আমরা সেটা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই এবং সকল ব্যাপারে শুধু আল্লাহর উপরই ভরসা করি।
শাইখুল মুজাহিদ ইমাম আব্দুল্লাহ আজ্জাম (রঃ) বলেছেনঃ (আল-আন্দালুস মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত আলজেরিয়ার মুজাহিদীনদের সাম্প্রতিক ভিডিওতে এই বক্তব্য এসেছে)
জিহাদ চারটি পর্বের সমন্বয়ে গঠিতঃ
হিজরত
ইদাদ বা প্রস্তুতি
রিবাত
কিতাল
তিনি আরো বলেছেনঃ
"ইদাদ ছাড়া কিতাল করা সম্ভব নয়। রিবাত ছাড়া কিতাল করা সম্ভব নয়।"
তবে প্রত্যেক মুজাহিদকেই আলাদাভাবে এই চারটা পর্বে কাজ করতে হবে এমনটা নয়। এটা হলো সাধারণভাবে যে কোন জিহাদের জন্য পর্ব। মুজাহিদীনদের একদল এগুলো করলেই হবে ইনশাআল্লাহ। যেমনঃ
ক) হিজরতঃ
মক্কার মুহাজিররা হিজরত করেছিলেন, কিন্তু মদীনার আনসাররা হিজরত করেন নি। তারা হিজরত করতে সহায়তা করেছেন। তারা দিয়েছেন নুসরত। মদীনার আনসাররা আনসার হবার পরেই কেবল মক্কার মুহাজিরদের জন্য হিজরত করা সম্ভব হয়েছে। আল্লাহ তাঁদের সবার উপর রাজী থাকুন।
আবার হিজরত করতে হলে যে বর্তমান একদেশ থেকে অন্য দেশে যেতে হবেই - এই চিন্তাধারাও যথেষ্ট আলোচনার দাবী রাখে।
এসব বর্ডার তো মাত্র সেদিন ব্রিটিশ কাফির-ক্রুসেডাররা যাবার সময় এঁকে দিয়ে গেছে।
এছাড়া মক্কা থেকে মদীনার দূরত্ব হয়তো টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া এর দূরত্বের কাছাকাছি হতে পারে। তাহলে বড় যেকোন দেশের এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে গেলেতো এর চেয়ে বেশী দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে।
তাই বুঝা যায়, হিজরত মূলত নিজের দ্বীনকে হেফাজত করার জন্য অন্যত্র চলে যাওয়া। সেটার দূরত্ব নির্দিষ্ট নেই। একই দেশের ভিতরে হিজরতের ব্যাপারে ইমাম আনোয়ার আওলাকী (রঃ) তাঁর "হিজরত" লেকচারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
এছাড়া অনেক সময়, একই দেশে থেকেও অনেক মুজাহিদ নিজের বাড়ী-ঘর ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। সেটাও হিজরত হতে পারে। আল্লাহই ভালো জানেন।
আমরা বর্তমানে মক্কার মুহাজির না হয়ে মদীনার আনসারদের ভূমিকায় থাকতে পারি। তাহলেও জিহাদের প্রথম পর্বে আমাদের অংশগ্রহণ থাকলো ইনশাআল্লাহ।
এটাই বর্তমান যুগের জিহাদের মূল স্রোত। সবাই জিহাদের জন্য নুসরত দেয়ার চেষ্টা করছেন। সবাই আনসার হবার চেষ্টা করছেন। যেমনঃ আনসার আশ শারীয়াহ, আনসার আদ দ্বীন, জাবহাত আন নুসরাহ। খোরাসানের তালেবান মুজাহিদীনগণ, যারা এই যুগের জিহাদের সূতিকাগার হিসেবে কাজ করছেন, তারাও আরব মুজাহিদীনদেরকে নুসরত দিয়েছেন।
তাই আমাদের সবার আনসার হওয়া উচিত। আমরা যেভাবে নিজের জান-মাল-সন্তানদেরকে রক্ষা করি, সেভাবে মুজাহিদীনদেরকে রক্ষা করা উচিত। নিজের ঘরে তাদেরকে জায়গা দেয়া উচিত। যাতে তারা জিহাদের কাজ সুন্দরভাবে আঞ্জাম দিতে পারেন।
এছাড়া এদেশ থেকে সবাই হিজরত করে অন্য দেশে চলে গেলে এই দেশে মুর্তাদদেরকে হটিয়ে ইসলামী শরীয়াত কায়েম করবে কারা? এ দেশ তো তাহলে আজীবনের জন্য মুর্তাদদের দখলে থেকে যাবে। আমাদের এলাকার মুজাহিদীনরা জিহাদে শরীক না থাকলে অন্য দেশের মুজাহিদীনরা এসেতো এখন বাংলাদেশকে তাগুত-মুর্তাদদের থেকে উদ্ধার করে দিবেন না। আমাদের এলাকা আমাদেরকেই সামাল দিতে হবে।
এমনিতেও এখানে শরীয়াতের পুনঃবিজয় করা ইজমা অনুযায়ী আমাদের উপর ফরজে আইন।
তাই, আমরা নিজেরা আনসার হয়ে এদেশে মজলুম মুসলমান ও মুজাহিদীনদেরকে হিজরত করে আসার সুযোগ দেয়া উচিত।
খ) ইদাদঃ
ইমাম আব্দুল্লাহ আজ্জাম (রঃ) আরো বলেছেনঃ
"প্রতিটা ঘন্টা কিতালের জন্য রয়েছে হাজারো ঘন্টার প্রস্তুতি"।
"জিহাদের প্রস্তুতি চলে মাসের পর মাস। কিন্তু কিতাল চলে অল্প সময়ের জন্য। মাসে একদিন কিংবা দুই মাসে একদিন।"
সত্যি, যুদ্ধের জন্য কুফফারদের প্রস্তুতি দেখলে ইমাম আব্দুল্লাহ আজ্জাম (রঃ) এর কথার মাহাত্ম বুঝা যায়। ইরাক যুদ্ধের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো কুফফারও কয়েক মাস ধরে মধ্যপ্রাচ্যে লজিষ্টিক সাপোর্ট সঞ্চয় করেছে। কিন্তু সেখানে তাদের যুদ্ধ চলেছে মাত্র কয়েক সপ্তাহ।
অর্বাচীনরাই কেবল জিহাদের এই পর্বে তাড়াহুড়া করে সকল প্রস্তুতির কাজ বিনষ্ট করে চাইবে।
বোকারাই কেবল সবরের অভাব হেতু এই পর্বে কাজ করতে চাইবে না।
আর বাস্তবিক এই পর্বের কাজ খুবই কষ্টকর। কারণ চোখের সামনে কোন সুস্পষ্ট ফলাফল এই পর্বে দেখা যাবে না। হয়তো মুজাহিদ উমারা শুধু এই পর্বে সার্বিক প্রস্তুতির অগ্রগতি বুঝতে পারবেন। হয়তো নিরাপত্তার স্বার্থে তারা সকল মুজাহিদীনদের সাথে এই অগ্রগতি নিয়ে সাধারণভাবে আলোচনাও করবেন না।
এই পর্ব হলোঃ শ্রবণ ও আনুগত্যের পরীক্ষার এক পর্ব। কারণ অনেক সময় হাতে অস্ত্র থাকবে, সুযোগ থাকবে কোন অপারেশন করার, কিন্তু সার্বিকভাবে ইদাদ শেষ না হওয়ায় হয়তো অপারেশনের অনুমতি মিলবে না। একমাত্র মুজাহিদীন উমারা ভালো বুঝবেনঃ এখন কি অপারেশন করার মতো সামর্থ্য মুজাহিদীনদের জামায়াত অর্জন করেছে কিনা। কারণ তারা সার্বিক পরিস্থিতির ব্যাপারে জানবেন।
ইদাদ পর্বের জন্য যতটুকু সময় প্রয়োজন - ততটুকু সময়ই নেয়া দরকার। এর চেয়ে কম সময়ে কাজ করতে গেলে প্রস্তুতি ঠিকমতো না নিয়ে অপারেশন শুরু করে দিলে, যে কোন জিহাদী তানজিমের জন্য তাদের মঞ্জিলে পৌঁছা কষ্টকর হয়ে যাবে।
অর্ধেক প্রস্তুতি নিয়ে কিতাল শুরু করে দিলে হয়তো নিম্নশ্রেণীর কিছু মুর্তাদ পুলিশ কিংবা সৈনিককে কতল করা যাবে, কিন্তু জিহাদের মূল মাকসাদ হাসিল করা কষ্টকর হয়ে যাবে। ব্যক্তিগতভাবে হয়তো ঐ মুজাহিদীনরা সাফল্য লাভ করবেন, কিন্তু এই অঞ্চলের মুসলিমদের পরিস্থিতির কোন পরিবর্তনের সম্ভাবনা তখন থাকবে না।
এই পাঁচ-সাত বছর আগে ইয়েমেন, মালি, সিরিয়াতে রিবাত / কিতাল পর্ব শুরু হবার আগে এসব দেশের মুজাহিদীনরা এই ইদাদ বা প্রস্তুতি পর্বে কাজ করছিলেন।
এই ইদাদ পর্ব ব্যক্তিগতভাবে সকল মুজাহিদ নাও পেতে পারেন। যেমনঃ এদেশে যদি এখন জিহাদের কিতাল পর্ব চলতো তাহলে নতুনভাবে জিহাদের পথে কেউ আসলে হয়তো ইদাদ কিংবা রিবাত পর্ব উনি পেতেন না। যদিও ব্যক্তিগতভাবে উনাকে কিছু কিছু বিষয় শিক্ষা করতে হবে।
গ) রিবাতঃ
এটা মূলতঃ উভয় পক্ষ একে অন্যকে ভীত-সন্ত্রস্থ করে রাখার পর্ব। এই পর্বে মুজাহিদীনরা ছোট ছোট অপারেশন শুরু করেন কিন্তু পুরো একটা এলাকা সম্পূর্ণ নিজেদের আয়ত্বে নেয়ার মতো শক্তি তখনো অর্জিত হয় না।
এই পর্বে মুজাহিদীনরা নিজেদের 'ব্যানার' প্রকাশ করেন। তাদের নির্দিষ্ট সংবাদ প্রকাশক (Spokesman) কাজ করা শুরু করেন। এই পর্বে মুজাহিদীনরা মাঝে মাঝে মিডিয়ায় অডিও-ভিডিও বার্তা পাঠান। তাঁদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বার বার সাধারণ মুসলমানদের কাছে পরিস্কার করতে থাকেন।
এই পর্বে মুর্তাদ-কাফিরদের ক্ষতি সাধন করে মুজাহিদীনরা তাদেরকে ভীত-সন্ত্রস্থ করে তুলেন। এটা দেখে সাহসী মুসলমান যুবকরা মুজাহিদীনদের সাথে যোগ দিতে থাকে। আবার মুর্তাদ-কাফির বাহিনীও মুজাহিদীনদের উপর মাঝে মাঝে আক্রমণ চালায়। এটা অনেকটা কিতাল পর্বের জন্য একটা সূচনা পর্বের মতো কাজ করে।
পাকিস্তানের শহরাঞ্চলে যে রকম জিহাদ চলছে, এই পর্ব অনেকটা সে রকম। ইরানের মুজাহিদীনদের অবস্থাও এ রকম। ইয়েমেনের মুজাহিদীনরা কিছুদন আগেও (আবইয়ান অঞ্চল দখলে নেবার আগে) এই পর্বে ছিলেন।
এ পর্বও সকল মুজাহিদ নাও পেতে পারেন। অনেকে ইদাদ পর্বে শহীদ হয়ে যেতে পারেন। অনেকে কিতাল পর্বে এসে যোগ দিতে পারেন।
কিন্তু একটি এলাকার জিহাদকে এই পর্ব অতিক্রম করতে হবে।
ঘ) কিতালঃ
এই পর্বে মুজাহিদীনরা সরাসরি কিছু এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেন। কাফির-মুরতাদ বাহিনীর সাথে অনেক ক্ষেত্রে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। অনেক সময় সনাতনধর্মী সামরিক অভিযান চালাতে হয়।
সোমালিয়া ও আফগানিস্তানের জিহাদ এখন কিতাল পর্বে রয়েছে বলে আমরা ধারনা করতে পারি।
অনেকে মুজাহিদ হয়তো রিবাত কিংবা ইদাদ পর্বে শহীদ হয়ে যেতে পারেন, তাই এই পর্বও সবাই নাও পেতে পারেন।
মুলকথাঃ এই পর্বগুলো সামষ্টিকভাবে একটা জিহাদ অতিক্রম করবে।
আমরা নিজেরা যে পর্বেই থাকি না কেন, সে পর্বের কাজ সঠিকভাবে আঞ্জাম দেয়া মানেই হলোঃ আমরা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাতে ঠিক মতো সামিল আছি। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে কিতাল পর্ব থেকে ইদাদ পর্ব আরো বেশী কষ্টকর হয়, তাই আরো বেশী সওয়াবের অধিকারী হতে পারে। কারণ ইদাদ পর্বে একদল মুজাহিদের প্রস্তুতির কাজ আঞ্জাম দেবার ফলেই কিতাল পর্বে শতশত মুজাহিদীন জিহাদে শরীক হবার সুযোগ পান। অনেকে শহীদ, অনেকে গাজী হবার সুযোগ পান। একটি মসজিদ নির্মানের সাথে জড়িত থাকা যদি সদকায়ে জারিয়া হয়, তাহলে একটি জিহাদের ময়দান প্রস্তুত করার কাজ সদকায়ে জারিয়া হবে না কেন?
অনেকে ইদাদ পর্বের সময়ে প্রস্তুতির কাজকে 'পিছনে বসে থাকা' কিংবা 'জিহাদের পথে না থাকা' হিসেবে চিন্তা করেন, যা তাদের দূরদর্শীতা ও ইলমের অভাব থেকে তৈরী হয়। আমরা যেন এ রকম মানুষের চিন্তাধারা দ্বারা প্রভাবিত না হই।
আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে জিহাদের নামে 'কিছু একটা' না করে, সঠিক পদ্ধতিতে জিহাদ করার তৌফিক দান করেন। আল্লাহ যেন আমাদেরকে 'পিছনে বসে থাকার নিফাকী' থেকে দূরে রাখেন এবং জিহাদের জন্য 'তাড়াহুড়া প্রবণতা' থেকে দূরে রাখেন। তিনি যেন আমাদেরকে এই দুই অবস্থার মধ্যবর্তী সঠিক অবস্থানে থেকে জিহাদ করার তৌফিক দান করেন। একমাত্র তিনিই সকল দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র। তিনি ছাড়া সঠিক পথ প্রদর্শনকারী আর কেউ নেই।
জাযাকাল্লাহু খাইরান।
অনেকেই জিহাদ বলতে খুব সাদা-মাঠাভাবে কিছু মানুষ জড়ো করে, তাদেরকে কিতালের ব্যাপারে তাহরীদ করে, জিহাদের ব্যাপারে কিছু আয়াত-হাদিস মুখস্থ করিয়ে - একসাথে 'কিছু একটা' করা মনে করে থাকেন। আমাদেরকে এই 'কিছু একটা' এর গভীরে যেতে হবে।
বাস্তবে জিহাদ কিভাবে করতে হবে - তা জানতে হবে।
কিভাবে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের মুজাহিদীনরা জিহাদ করছেন - সেটা জানতে হবে।
তা না হলে এই 'কিছু একটা' এর ব্যাপারে ভাসাভাসা ধারনা নিয়ে কাজ করতে গেলে, আমরা এই জমীনের জিহাদকে হয়তো আরো অনেক পিছিয়ে দিবো। আর আমরা সেটা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই এবং সকল ব্যাপারে শুধু আল্লাহর উপরই ভরসা করি।
শাইখুল মুজাহিদ ইমাম আব্দুল্লাহ আজ্জাম (রঃ) বলেছেনঃ (আল-আন্দালুস মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত আলজেরিয়ার মুজাহিদীনদের সাম্প্রতিক ভিডিওতে এই বক্তব্য এসেছে)
জিহাদ চারটি পর্বের সমন্বয়ে গঠিতঃ
হিজরত
ইদাদ বা প্রস্তুতি
রিবাত
কিতাল
তিনি আরো বলেছেনঃ
"ইদাদ ছাড়া কিতাল করা সম্ভব নয়। রিবাত ছাড়া কিতাল করা সম্ভব নয়।"
তবে প্রত্যেক মুজাহিদকেই আলাদাভাবে এই চারটা পর্বে কাজ করতে হবে এমনটা নয়। এটা হলো সাধারণভাবে যে কোন জিহাদের জন্য পর্ব। মুজাহিদীনদের একদল এগুলো করলেই হবে ইনশাআল্লাহ। যেমনঃ
ক) হিজরতঃ
মক্কার মুহাজিররা হিজরত করেছিলেন, কিন্তু মদীনার আনসাররা হিজরত করেন নি। তারা হিজরত করতে সহায়তা করেছেন। তারা দিয়েছেন নুসরত। মদীনার আনসাররা আনসার হবার পরেই কেবল মক্কার মুহাজিরদের জন্য হিজরত করা সম্ভব হয়েছে। আল্লাহ তাঁদের সবার উপর রাজী থাকুন।
আবার হিজরত করতে হলে যে বর্তমান একদেশ থেকে অন্য দেশে যেতে হবেই - এই চিন্তাধারাও যথেষ্ট আলোচনার দাবী রাখে।
এসব বর্ডার তো মাত্র সেদিন ব্রিটিশ কাফির-ক্রুসেডাররা যাবার সময় এঁকে দিয়ে গেছে।
এছাড়া মক্কা থেকে মদীনার দূরত্ব হয়তো টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া এর দূরত্বের কাছাকাছি হতে পারে। তাহলে বড় যেকোন দেশের এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে গেলেতো এর চেয়ে বেশী দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে।
তাই বুঝা যায়, হিজরত মূলত নিজের দ্বীনকে হেফাজত করার জন্য অন্যত্র চলে যাওয়া। সেটার দূরত্ব নির্দিষ্ট নেই। একই দেশের ভিতরে হিজরতের ব্যাপারে ইমাম আনোয়ার আওলাকী (রঃ) তাঁর "হিজরত" লেকচারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
এছাড়া অনেক সময়, একই দেশে থেকেও অনেক মুজাহিদ নিজের বাড়ী-ঘর ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। সেটাও হিজরত হতে পারে। আল্লাহই ভালো জানেন।
আমরা বর্তমানে মক্কার মুহাজির না হয়ে মদীনার আনসারদের ভূমিকায় থাকতে পারি। তাহলেও জিহাদের প্রথম পর্বে আমাদের অংশগ্রহণ থাকলো ইনশাআল্লাহ।
এটাই বর্তমান যুগের জিহাদের মূল স্রোত। সবাই জিহাদের জন্য নুসরত দেয়ার চেষ্টা করছেন। সবাই আনসার হবার চেষ্টা করছেন। যেমনঃ আনসার আশ শারীয়াহ, আনসার আদ দ্বীন, জাবহাত আন নুসরাহ। খোরাসানের তালেবান মুজাহিদীনগণ, যারা এই যুগের জিহাদের সূতিকাগার হিসেবে কাজ করছেন, তারাও আরব মুজাহিদীনদেরকে নুসরত দিয়েছেন।
তাই আমাদের সবার আনসার হওয়া উচিত। আমরা যেভাবে নিজের জান-মাল-সন্তানদেরকে রক্ষা করি, সেভাবে মুজাহিদীনদেরকে রক্ষা করা উচিত। নিজের ঘরে তাদেরকে জায়গা দেয়া উচিত। যাতে তারা জিহাদের কাজ সুন্দরভাবে আঞ্জাম দিতে পারেন।
এছাড়া এদেশ থেকে সবাই হিজরত করে অন্য দেশে চলে গেলে এই দেশে মুর্তাদদেরকে হটিয়ে ইসলামী শরীয়াত কায়েম করবে কারা? এ দেশ তো তাহলে আজীবনের জন্য মুর্তাদদের দখলে থেকে যাবে। আমাদের এলাকার মুজাহিদীনরা জিহাদে শরীক না থাকলে অন্য দেশের মুজাহিদীনরা এসেতো এখন বাংলাদেশকে তাগুত-মুর্তাদদের থেকে উদ্ধার করে দিবেন না। আমাদের এলাকা আমাদেরকেই সামাল দিতে হবে।
এমনিতেও এখানে শরীয়াতের পুনঃবিজয় করা ইজমা অনুযায়ী আমাদের উপর ফরজে আইন।
তাই, আমরা নিজেরা আনসার হয়ে এদেশে মজলুম মুসলমান ও মুজাহিদীনদেরকে হিজরত করে আসার সুযোগ দেয়া উচিত।
খ) ইদাদঃ
ইমাম আব্দুল্লাহ আজ্জাম (রঃ) আরো বলেছেনঃ
"প্রতিটা ঘন্টা কিতালের জন্য রয়েছে হাজারো ঘন্টার প্রস্তুতি"।
"জিহাদের প্রস্তুতি চলে মাসের পর মাস। কিন্তু কিতাল চলে অল্প সময়ের জন্য। মাসে একদিন কিংবা দুই মাসে একদিন।"
সত্যি, যুদ্ধের জন্য কুফফারদের প্রস্তুতি দেখলে ইমাম আব্দুল্লাহ আজ্জাম (রঃ) এর কথার মাহাত্ম বুঝা যায়। ইরাক যুদ্ধের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো কুফফারও কয়েক মাস ধরে মধ্যপ্রাচ্যে লজিষ্টিক সাপোর্ট সঞ্চয় করেছে। কিন্তু সেখানে তাদের যুদ্ধ চলেছে মাত্র কয়েক সপ্তাহ।
অর্বাচীনরাই কেবল জিহাদের এই পর্বে তাড়াহুড়া করে সকল প্রস্তুতির কাজ বিনষ্ট করে চাইবে।
বোকারাই কেবল সবরের অভাব হেতু এই পর্বে কাজ করতে চাইবে না।
আর বাস্তবিক এই পর্বের কাজ খুবই কষ্টকর। কারণ চোখের সামনে কোন সুস্পষ্ট ফলাফল এই পর্বে দেখা যাবে না। হয়তো মুজাহিদ উমারা শুধু এই পর্বে সার্বিক প্রস্তুতির অগ্রগতি বুঝতে পারবেন। হয়তো নিরাপত্তার স্বার্থে তারা সকল মুজাহিদীনদের সাথে এই অগ্রগতি নিয়ে সাধারণভাবে আলোচনাও করবেন না।
এই পর্ব হলোঃ শ্রবণ ও আনুগত্যের পরীক্ষার এক পর্ব। কারণ অনেক সময় হাতে অস্ত্র থাকবে, সুযোগ থাকবে কোন অপারেশন করার, কিন্তু সার্বিকভাবে ইদাদ শেষ না হওয়ায় হয়তো অপারেশনের অনুমতি মিলবে না। একমাত্র মুজাহিদীন উমারা ভালো বুঝবেনঃ এখন কি অপারেশন করার মতো সামর্থ্য মুজাহিদীনদের জামায়াত অর্জন করেছে কিনা। কারণ তারা সার্বিক পরিস্থিতির ব্যাপারে জানবেন।
ইদাদ পর্বের জন্য যতটুকু সময় প্রয়োজন - ততটুকু সময়ই নেয়া দরকার। এর চেয়ে কম সময়ে কাজ করতে গেলে প্রস্তুতি ঠিকমতো না নিয়ে অপারেশন শুরু করে দিলে, যে কোন জিহাদী তানজিমের জন্য তাদের মঞ্জিলে পৌঁছা কষ্টকর হয়ে যাবে।
অর্ধেক প্রস্তুতি নিয়ে কিতাল শুরু করে দিলে হয়তো নিম্নশ্রেণীর কিছু মুর্তাদ পুলিশ কিংবা সৈনিককে কতল করা যাবে, কিন্তু জিহাদের মূল মাকসাদ হাসিল করা কষ্টকর হয়ে যাবে। ব্যক্তিগতভাবে হয়তো ঐ মুজাহিদীনরা সাফল্য লাভ করবেন, কিন্তু এই অঞ্চলের মুসলিমদের পরিস্থিতির কোন পরিবর্তনের সম্ভাবনা তখন থাকবে না।
এই পাঁচ-সাত বছর আগে ইয়েমেন, মালি, সিরিয়াতে রিবাত / কিতাল পর্ব শুরু হবার আগে এসব দেশের মুজাহিদীনরা এই ইদাদ বা প্রস্তুতি পর্বে কাজ করছিলেন।
এই ইদাদ পর্ব ব্যক্তিগতভাবে সকল মুজাহিদ নাও পেতে পারেন। যেমনঃ এদেশে যদি এখন জিহাদের কিতাল পর্ব চলতো তাহলে নতুনভাবে জিহাদের পথে কেউ আসলে হয়তো ইদাদ কিংবা রিবাত পর্ব উনি পেতেন না। যদিও ব্যক্তিগতভাবে উনাকে কিছু কিছু বিষয় শিক্ষা করতে হবে।
গ) রিবাতঃ
এটা মূলতঃ উভয় পক্ষ একে অন্যকে ভীত-সন্ত্রস্থ করে রাখার পর্ব। এই পর্বে মুজাহিদীনরা ছোট ছোট অপারেশন শুরু করেন কিন্তু পুরো একটা এলাকা সম্পূর্ণ নিজেদের আয়ত্বে নেয়ার মতো শক্তি তখনো অর্জিত হয় না।
এই পর্বে মুজাহিদীনরা নিজেদের 'ব্যানার' প্রকাশ করেন। তাদের নির্দিষ্ট সংবাদ প্রকাশক (Spokesman) কাজ করা শুরু করেন। এই পর্বে মুজাহিদীনরা মাঝে মাঝে মিডিয়ায় অডিও-ভিডিও বার্তা পাঠান। তাঁদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বার বার সাধারণ মুসলমানদের কাছে পরিস্কার করতে থাকেন।
এই পর্বে মুর্তাদ-কাফিরদের ক্ষতি সাধন করে মুজাহিদীনরা তাদেরকে ভীত-সন্ত্রস্থ করে তুলেন। এটা দেখে সাহসী মুসলমান যুবকরা মুজাহিদীনদের সাথে যোগ দিতে থাকে। আবার মুর্তাদ-কাফির বাহিনীও মুজাহিদীনদের উপর মাঝে মাঝে আক্রমণ চালায়। এটা অনেকটা কিতাল পর্বের জন্য একটা সূচনা পর্বের মতো কাজ করে।
পাকিস্তানের শহরাঞ্চলে যে রকম জিহাদ চলছে, এই পর্ব অনেকটা সে রকম। ইরানের মুজাহিদীনদের অবস্থাও এ রকম। ইয়েমেনের মুজাহিদীনরা কিছুদন আগেও (আবইয়ান অঞ্চল দখলে নেবার আগে) এই পর্বে ছিলেন।
এ পর্বও সকল মুজাহিদ নাও পেতে পারেন। অনেকে ইদাদ পর্বে শহীদ হয়ে যেতে পারেন। অনেকে কিতাল পর্বে এসে যোগ দিতে পারেন।
কিন্তু একটি এলাকার জিহাদকে এই পর্ব অতিক্রম করতে হবে।
ঘ) কিতালঃ
এই পর্বে মুজাহিদীনরা সরাসরি কিছু এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেন। কাফির-মুরতাদ বাহিনীর সাথে অনেক ক্ষেত্রে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। অনেক সময় সনাতনধর্মী সামরিক অভিযান চালাতে হয়।
সোমালিয়া ও আফগানিস্তানের জিহাদ এখন কিতাল পর্বে রয়েছে বলে আমরা ধারনা করতে পারি।
অনেকে মুজাহিদ হয়তো রিবাত কিংবা ইদাদ পর্বে শহীদ হয়ে যেতে পারেন, তাই এই পর্বও সবাই নাও পেতে পারেন।
মুলকথাঃ এই পর্বগুলো সামষ্টিকভাবে একটা জিহাদ অতিক্রম করবে।
আমরা নিজেরা যে পর্বেই থাকি না কেন, সে পর্বের কাজ সঠিকভাবে আঞ্জাম দেয়া মানেই হলোঃ আমরা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাতে ঠিক মতো সামিল আছি। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে কিতাল পর্ব থেকে ইদাদ পর্ব আরো বেশী কষ্টকর হয়, তাই আরো বেশী সওয়াবের অধিকারী হতে পারে। কারণ ইদাদ পর্বে একদল মুজাহিদের প্রস্তুতির কাজ আঞ্জাম দেবার ফলেই কিতাল পর্বে শতশত মুজাহিদীন জিহাদে শরীক হবার সুযোগ পান। অনেকে শহীদ, অনেকে গাজী হবার সুযোগ পান। একটি মসজিদ নির্মানের সাথে জড়িত থাকা যদি সদকায়ে জারিয়া হয়, তাহলে একটি জিহাদের ময়দান প্রস্তুত করার কাজ সদকায়ে জারিয়া হবে না কেন?
অনেকে ইদাদ পর্বের সময়ে প্রস্তুতির কাজকে 'পিছনে বসে থাকা' কিংবা 'জিহাদের পথে না থাকা' হিসেবে চিন্তা করেন, যা তাদের দূরদর্শীতা ও ইলমের অভাব থেকে তৈরী হয়। আমরা যেন এ রকম মানুষের চিন্তাধারা দ্বারা প্রভাবিত না হই।
আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে জিহাদের নামে 'কিছু একটা' না করে, সঠিক পদ্ধতিতে জিহাদ করার তৌফিক দান করেন। আল্লাহ যেন আমাদেরকে 'পিছনে বসে থাকার নিফাকী' থেকে দূরে রাখেন এবং জিহাদের জন্য 'তাড়াহুড়া প্রবণতা' থেকে দূরে রাখেন। তিনি যেন আমাদেরকে এই দুই অবস্থার মধ্যবর্তী সঠিক অবস্থানে থেকে জিহাদ করার তৌফিক দান করেন। একমাত্র তিনিই সকল দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র। তিনি ছাড়া সঠিক পথ প্রদর্শনকারী আর কেউ নেই।
জাযাকাল্লাহু খাইরান।
কোন মন্তব্য নেই:
/>