“তোমার মলিন মুখকে মৃদু হাসি দ্বারা, ক্রোধকে ধৈর্য দ্বারা এবং কৃপনতাকে দানশীলতা দ্বারা পরিবর্তন করবে…!!
এটি কোন কঠিনসাধ্য কাজ নয়…! তবে এত দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও অনুশীলন অপরিহার্য..! সুতরাং তুমি বীরের ভুমিকায় আত্মপ্রকাশ কর…! “
অভিজ্ঞতা উপভোগ কর
অভিজ্ঞতা সম্ভোগ ও বিনোদনের একটি বাস্তব বস্তু। সম্ভোগে ও বিনোদন বলতে শুধু পরকালের বিনিময় উদ্দেশ্য নয়। অভিজ্ঞতা তো উপভোগ ও প্রমোদের এমন বস্তু যা বাস্তবেই অনুভব করা যায়....! সুতরাং তা তুমি অনুভব কর। সকল মানুষের সাথে অনুশীলন কর। ছোট-বড়, ধনি-গরীব, আত্মীয়-অপরিচিত মোট কথা সকলের সাথে..!! হ্যা, তুমি এ অভিজ্ঞতা চর্চা কর... তাদের ভালবাস অর্জন করার লক্ষে..., তাদের অনিষ্ট থেকে আত্ম রক্ষার লক্ষে..., বা তাদেরকে সংশোধনের জন্য...।
হ্যা, সংশোধনের জন্য...।
আলী ইবনুল যাহাম সাহিত্যক কবি ছিল... কিন্তু সে রুঢ় গ্রাম্য ছিল। মরুভুমিতে দৃশ্য বস্তুসমূহ ব্যতিত জীবনের কিছুই সে যানে না...। আর খলীফা মুতাওয়াক্কিল যোগ্য ও প্রতিষ্ঠত খলীফা ছিলেন...।
আলী ইবনুল যাহাম বাগদাদে গমন করলে তাকে সংবাদ দেয়া হল যে, যে ব্যক্তি বাদশাহর তুস্তি করে সে তার নিকট সাম্মানিত হয় এবং উপঢৈাকন লাভ করে...। সংবাদ শুনে সে উৎফুল্ল হল এবং রাজপ্রসাদের দিকে পাবাড়াল....। সেখানে গিয়ে রাজদরবারে প্রবেশ করে দেখল, কবিরা বাদশাহর গুণগান গেয়ে অনেক লাভবান হচ্ছে...। প্রভাব, দাপট ও প্রতাপের ক্ষেত্রে মুতাওয়াক্কিলের কোন তুলনা ছিল না...।
আলী ইবনুল যাহাম একটি কবিতার মাধ্যমে বাদশার প্রশংসা আরম্ভ করল। যার সূচনা ছিল :
হে মহামান্য খলীফা !
ভালবাসার বন্ধন অটুট রাখতে আপনি কুকুর তুল্য!/
বিপদে অবিচল থাকার ক্ষেত্রে আপনি মেষ তুল্য!!
আপনি এমন বালতি যতে বৃহৎ অংশ বিশিষ্ট সকল বালতি রয়েছে!!
আলী ইবনুল যাহাম এভাবে খলীফাকে ছাগ-ছাগী, কুপ ও মাটির মত ক্ষুদ্র বস্তুর সাথে তুলনা করতে থাকে...!! অথচ তার পূর্বের কবীগণ খলীফাকে চন্দ্র-সূর্য ও পহাড়ের মত বিশাল জিনিসের সাথে তুলনা করে ছিল...!!
এক পর্যায়ে খলীফা ক্ষুদ্ধ হয়ে গেলেন…। প্রহরিকে ইঙ্গীত করলেন….। জল্লাদ অসি কোষমুক্ত করল…। এবং (হত্যা করার জন্য নির্ধারিত) বিশেষ মাদুর বিছাল..!! হত্যার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করল…। হটাৎ খলীফা অনুধাবন করলেন যে, এ গ্রাম্য লোকটি তার জন্মগত স্বভাব দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে… !!
খলীফা তার জন্মগত স্বভাব পরির্বতন করার ইচ্ছা করলেন....! তাই তিনি আলী ইবনুল যাহামকে রাজ প্রসাদে বসবাসের ব্যবস্থা করার জন্য তার লোকদের প্রতি নির্দেশ দিলেন...। তারা তাকে একটি রাজকীয় অট্টালিকায় বসবাস করার ব্যবস্থা করল...!! সকাল-সন্ধ্যা তার কাছে সর্বাধিক সুশ্রী দাসী সুস্বাদু-মজদার খাবার পরিবেশন করে...!
ইতি মধ্যে আলী ইবনুল যাহাম বিলাসিতার স্বাদ উপভোগ করেছে..! পালঙ্কে বিশ্রাম নিয়েছে...! কোমল হৃদয়ের কবি ও শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকদের সংশ্রব গ্রহণ করেছে...! এভাবে সে দীর্ঘ সাত মাস অতিক্রম করে....!!
একদা খলীফা নৈশা আলপের আসরে উপবেশন করলেন....! তখন আলী ইবনুল যাহামের বিষয়টি স্বরণ হলো...! তিনি তার সম্পর্কে লোকদের নিকট জানতে চাইলে তারা তাকে উপস্থিত করল....! যখন সে আসরে উপবিষ্ট হল, খলীফা বল্লেন : আলী ইবনুল যাহাম! আমার প্রসংশায় আবৃত্তি কর....!!
সে একটি কবিতা দারা প্রসংশা করল। যার সুচনা ছিল :
“উৎকৃষ্ট বন্য গাভীর একটি দল জোড়া পাথর ও পুলের মাঝে...!/ তারা জানা-অজানার ভালবাসা উথলিয়ে দিয়েছে...”
“তারা আমার প্রাচীন ভালবাসার পুরাবৃত্তি করেছে / কিন্তু প্রশান্তির পরিবর্তে জ্বলন্ত অঙ্গার আরো বৃদ্ধি করেছে...”!!
এভাবে আলী ইবনুল যাহাম সুক্ষ শব্দমালা দ্বারা অনুভূতি সমুহ জাগ্রত করতে লগল..। তার সূর্য, তারকা ও অসির সাথে খলীফার তুলনা করতে লাগল……..!!!
দেখলেতো অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে খলীফা কিভাবে আলী ইবনুল যাহামের জন্মগত স্বভাব পরিবর্তন করতে সক্ষম হলেন!! অথচ আমাদের সন্তান বা বন্ধু-বান্ধবগণ অনেক সময়েই এধরনের অস্বাভাবিন আচরণে আমাদেরকে বিব্রত করে...! কিন্তু আমরা আভিজ্ঞতার আলোকে তা পরির্বতন ও করিনা। এমনকি তার চেষ্টা ও করি না.....!!
সর্বপ্রথম ও শ্রেষ্ঠ কাজ হল তুমি প্রথমে তোমার স্বভাব পরির্বতনের সক্ষম হতে হবে...! সুতরাং তোমার মলিন মুখকে মৃদু হাসি দ্বারা, ক্রোধকে ধৈর্য দ্বারা এবং কৃপনতাকে দানশীলতা দ্বারা পরিবর্তন করবে…!! এটি কোন কঠিনসাধ্য কাজ নয়…! তবে এত দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও অনুশীলন অপরিহার্য..! সুতরাং তুমি বীরের ভুমিকায় আত্মপ্রকাশ কর…!!
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন-চরিত অধ্যায়ন করলে প্রত্যেকেই দেখবে যে, তিনি মানুষর সাথে এমন উন্নত চারিত্রিক যোগ্যতার আচরণ করেছেন যা দ্বারা তিনি সকল হৃদয়ের সম্রাট হয়েছেন...!! মানুষের সম্মুখে তাঁর এসব আচরণ কৃত্রিম ছিল না.. যে, গৃহাভ্যান্তরে তার ধৈর্য ক্রোধে, নম্রতা কঠোরতায় পরিবর্তন হয়ে যায়..!!
না,… মানুষের সাথে তার মৃদু হাসি ঘরের সদস্যদের সাথে মলিন মুখ হত না…!
মানুষের সাথে মহানুভব আর স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে তার বিপরিত, এমন ছিলেন না…!
না,…. বরং তাঁর চরিত্র পাকৃতিক বা স্বভাবজাত ছিল..। চরিত্র দ্বারাই আল্লাহর এবাদত করতেন…! যেমন তাহাজ্জুদ ও ইশারাকের নামায দ্বারা এবাদত করেন…..!! মৃদু হাসিকে আল্লাহর নৈকট্য, দয়াকে এবাদত এবং ক্ষমা ও নম্রতাকে পূণ্য হিসেবে গণ্য করতেন..!!
যে ব্যাক্তি উত্তম চরিত্রকে এবাদত ও উপাসনা গণ্য করে, সে সর্বাবস্থায় উত্তম চরিত্রে সুসজ্জিত থাকে…! যুদ্ধ-শান্তি, আহারে-অনাহারে, সুস্থ-অসুস্থতা এমকি আনন্দ এবং ব্যাথায়ও সে চারিত্রক সুন্দর্যে মানুষের সাথে মিলিত হয়….!!
এমন অনেক স্ত্রী আছে যারা তাদের স্বামীর চারিত্রক সুনাম শুনে…! তিনে মহানুভব, সর্বদা হাস্যজ্জল, দানশীল……., কিন্তু সে তার গৃহাভ্যন্তরে মন্দ চরিত্রের, সঙ্কির্ণ হৃদয়ের, গোমড়ামুখো, বিকট স্বরে অভিশাপ কারী, কৃপণ ও খোটা দান কারী….!!
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই ইরশাদ করেন : “তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ঐ ব্যাক্তি যে তার পরিবার-পরিজনের নিকট (আচার-আচরণে) শ্রেষ্ঠ, আর আমি পরিবার-পরিজনের নিকট (আচার-আচরণে) শ্রেষ্ঠ”। লক্ষ কর! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিবার-পরিজনের সাথে কী ধরণের আচরণ করতেন যে, তিনি এতে সর্বশ্রেষ্ঠ!!!
আসওয়াদ বিন ইয়াযিদ বলেন : আমি আম্মাজান আয়শাকে জিজ্ঞাসা করলাম : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাসায় কি করতেন?
তিনি বল্লেন : তিনি স্ত্রীদের সাথে ঘরের কাজে ব্যাস্ত থাকতেন। আযান হলে আজু করে মসজিদে গমন করতেন..!
একথা পিতা-মাতার সাথেও তুমি ধরে নিতে পার...!!
এমন অনেক মানুষ রয়েছে যাদের উত্তম চরিত্র, মহানুভবতা, মৃদু হাসি ও অপরের সাথে সুন্দর আচরণের কথা আমরা শুনি, কিন্তু সে তার সর্বাধিক নিকটের মানুষটির সাথে... মহান লোকটির সাথে.. পিতা-মাতার সাথে.. স্ত্রী-সন্তানদের সাথে কঠোর ও বিচ্ছিন্ন!!
হ্যাঁ, তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ঐ ব্যাক্তি যে তার পরিবার-পরিজনের সাথে (আচার-আচরণে) শ্রেষ্ঠ.. তার মতা-পিতার সাথে.. সন্তানের সাথে... স্ত্রীর সাথে... কর্মচারী ও সেবকদের সাথে.. বরং তাদের সন্তানদের সাথেও..!!
আনন্দময় একটি দিনে আবুলায়ল (রাঃ)রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপবিষ্ট ছিলেন। হাসান বা হুসাইন (রাঃ) দৌড়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ধরে নিজ উদরের উপর বসালেন...!
শিশুটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেটের উপর মূত্র ত্যাগ করল...!!
আবু লায়লা বলেন : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদরে আমি শিশুটি মূত্র গড়িয়ে পড়তে দেখলাম..!
তিনি বলেন : আমরা (বাচ্চাটিকে সরানোর জন্য) সেদিকে দ্রুত অগ্রসর হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বল্লেন : “আমার সন্তানকে তার কাজ করতে দাও, তাকে কষ্ট দিও না!”....
শিশুটি যখন মূত্রত্যাগ হতে অবসর হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানির ব্যাবস্থা করে মূত্রের উপর ঢেলে দিলেন!!
কতইনা মহান তিনি যে, এউত্তম চরিত্রের অধীকারী ছিলেন...!!
সুতরাং তিনি আবাল-বৃদ্ধ সকলের ভালবাসর পাত্র হলে তোতে আশ্চার্য হয়ার কিছু নেই!!
উপসংহার : অন্ধকারকে মন্দ বলার পরিবর্তে চেরাগ ঠিক করার চেষ্টা কর......
ভালবাসার পৃথিবী (পর্ব-৫) অন্ধকারকে মন্দ বলার পরিবর্তে চেরাগ ঠিক করার চেষ্টা কর......
অভিজ্ঞতা উপভোগ কর
অভিজ্ঞতা সম্ভোগ ও বিনোদনের একটি বাস্তব বস্তু। সম্ভোগে ও বিনোদন বলতে শুধু পরকালের বিনিময় উদ্দেশ্য নয়। অভিজ্ঞতা তো উপভোগ ও প্রমোদের এমন বস্তু যা বাস্তবেই অনুভব করা যায়....! সুতরাং তা তুমি অনুভব কর। সকল মানুষের সাথে অনুশীলন কর। ছোট-বড়, ধনি-গরীব, আত্মীয়-অপরিচিত মোট কথা সকলের সাথে..!! হ্যা, তুমি এ অভিজ্ঞতা চর্চা কর... তাদের ভালবাস অর্জন করার লক্ষে..., তাদের অনিষ্ট থেকে আত্ম রক্ষার লক্ষে..., বা তাদেরকে সংশোধনের জন্য...।
হ্যা, সংশোধনের জন্য...।
আলী ইবনুল যাহাম সাহিত্যক কবি ছিল... কিন্তু সে রুঢ় গ্রাম্য ছিল। মরুভুমিতে দৃশ্য বস্তুসমূহ ব্যতিত জীবনের কিছুই সে যানে না...। আর খলীফা মুতাওয়াক্কিল যোগ্য ও প্রতিষ্ঠত খলীফা ছিলেন...।
আলী ইবনুল যাহাম বাগদাদে গমন করলে তাকে সংবাদ দেয়া হল যে, যে ব্যক্তি বাদশাহর তুস্তি করে সে তার নিকট সাম্মানিত হয় এবং উপঢৈাকন লাভ করে...। সংবাদ শুনে সে উৎফুল্ল হল এবং রাজপ্রসাদের দিকে পাবাড়াল....। সেখানে গিয়ে রাজদরবারে প্রবেশ করে দেখল, কবিরা বাদশাহর গুণগান গেয়ে অনেক লাভবান হচ্ছে...। প্রভাব, দাপট ও প্রতাপের ক্ষেত্রে মুতাওয়াক্কিলের কোন তুলনা ছিল না...।
আলী ইবনুল যাহাম একটি কবিতার মাধ্যমে বাদশার প্রশংসা আরম্ভ করল। যার সূচনা ছিল :
হে মহামান্য খলীফা !
ভালবাসার বন্ধন অটুট রাখতে আপনি কুকুর তুল্য!/
বিপদে অবিচল থাকার ক্ষেত্রে আপনি মেষ তুল্য!!
আপনি এমন বালতি যতে বৃহৎ অংশ বিশিষ্ট সকল বালতি রয়েছে!!
আলী ইবনুল যাহাম এভাবে খলীফাকে ছাগ-ছাগী, কুপ ও মাটির মত ক্ষুদ্র বস্তুর সাথে তুলনা করতে থাকে...!! অথচ তার পূর্বের কবীগণ খলীফাকে চন্দ্র-সূর্য ও পহাড়ের মত বিশাল জিনিসের সাথে তুলনা করে ছিল...!!
এক পর্যায়ে খলীফা ক্ষুদ্ধ হয়ে গেলেন…। প্রহরিকে ইঙ্গীত করলেন….। জল্লাদ অসি কোষমুক্ত করল…। এবং (হত্যা করার জন্য নির্ধারিত) বিশেষ মাদুর বিছাল..!! হত্যার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করল…। হটাৎ খলীফা অনুধাবন করলেন যে, এ গ্রাম্য লোকটি তার জন্মগত স্বভাব দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে… !!
খলীফা তার জন্মগত স্বভাব পরির্বতন করার ইচ্ছা করলেন....! তাই তিনি আলী ইবনুল যাহামকে রাজ প্রসাদে বসবাসের ব্যবস্থা করার জন্য তার লোকদের প্রতি নির্দেশ দিলেন...। তারা তাকে একটি রাজকীয় অট্টালিকায় বসবাস করার ব্যবস্থা করল...!! সকাল-সন্ধ্যা তার কাছে সর্বাধিক সুশ্রী দাসী সুস্বাদু-মজদার খাবার পরিবেশন করে...!
ইতি মধ্যে আলী ইবনুল যাহাম বিলাসিতার স্বাদ উপভোগ করেছে..! পালঙ্কে বিশ্রাম নিয়েছে...! কোমল হৃদয়ের কবি ও শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকদের সংশ্রব গ্রহণ করেছে...! এভাবে সে দীর্ঘ সাত মাস অতিক্রম করে....!!
একদা খলীফা নৈশা আলপের আসরে উপবেশন করলেন....! তখন আলী ইবনুল যাহামের বিষয়টি স্বরণ হলো...! তিনি তার সম্পর্কে লোকদের নিকট জানতে চাইলে তারা তাকে উপস্থিত করল....! যখন সে আসরে উপবিষ্ট হল, খলীফা বল্লেন : আলী ইবনুল যাহাম! আমার প্রসংশায় আবৃত্তি কর....!!
সে একটি কবিতা দারা প্রসংশা করল। যার সুচনা ছিল :
“উৎকৃষ্ট বন্য গাভীর একটি দল জোড়া পাথর ও পুলের মাঝে...!/ তারা জানা-অজানার ভালবাসা উথলিয়ে দিয়েছে...”
“তারা আমার প্রাচীন ভালবাসার পুরাবৃত্তি করেছে / কিন্তু প্রশান্তির পরিবর্তে জ্বলন্ত অঙ্গার আরো বৃদ্ধি করেছে...”!!
এভাবে আলী ইবনুল যাহাম সুক্ষ শব্দমালা দ্বারা অনুভূতি সমুহ জাগ্রত করতে লগল..। তার সূর্য, তারকা ও অসির সাথে খলীফার তুলনা করতে লাগল……..!!!
দেখলেতো অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে খলীফা কিভাবে আলী ইবনুল যাহামের জন্মগত স্বভাব পরিবর্তন করতে সক্ষম হলেন!! অথচ আমাদের সন্তান বা বন্ধু-বান্ধবগণ অনেক সময়েই এধরনের অস্বাভাবিন আচরণে আমাদেরকে বিব্রত করে...! কিন্তু আমরা আভিজ্ঞতার আলোকে তা পরির্বতন ও করিনা। এমনকি তার চেষ্টা ও করি না.....!!
সর্বপ্রথম ও শ্রেষ্ঠ কাজ হল তুমি প্রথমে তোমার স্বভাব পরির্বতনের সক্ষম হতে হবে...! সুতরাং তোমার মলিন মুখকে মৃদু হাসি দ্বারা, ক্রোধকে ধৈর্য দ্বারা এবং কৃপনতাকে দানশীলতা দ্বারা পরিবর্তন করবে…!! এটি কোন কঠিনসাধ্য কাজ নয়…! তবে এত দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও অনুশীলন অপরিহার্য..! সুতরাং তুমি বীরের ভুমিকায় আত্মপ্রকাশ কর…!!
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন-চরিত অধ্যায়ন করলে প্রত্যেকেই দেখবে যে, তিনি মানুষর সাথে এমন উন্নত চারিত্রিক যোগ্যতার আচরণ করেছেন যা দ্বারা তিনি সকল হৃদয়ের সম্রাট হয়েছেন...!! মানুষের সম্মুখে তাঁর এসব আচরণ কৃত্রিম ছিল না.. যে, গৃহাভ্যান্তরে তার ধৈর্য ক্রোধে, নম্রতা কঠোরতায় পরিবর্তন হয়ে যায়..!!
না,… মানুষের সাথে তার মৃদু হাসি ঘরের সদস্যদের সাথে মলিন মুখ হত না…!
মানুষের সাথে মহানুভব আর স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে তার বিপরিত, এমন ছিলেন না…!
না,…. বরং তাঁর চরিত্র পাকৃতিক বা স্বভাবজাত ছিল..। চরিত্র দ্বারাই আল্লাহর এবাদত করতেন…! যেমন তাহাজ্জুদ ও ইশারাকের নামায দ্বারা এবাদত করেন…..!! মৃদু হাসিকে আল্লাহর নৈকট্য, দয়াকে এবাদত এবং ক্ষমা ও নম্রতাকে পূণ্য হিসেবে গণ্য করতেন..!!
যে ব্যাক্তি উত্তম চরিত্রকে এবাদত ও উপাসনা গণ্য করে, সে সর্বাবস্থায় উত্তম চরিত্রে সুসজ্জিত থাকে…! যুদ্ধ-শান্তি, আহারে-অনাহারে, সুস্থ-অসুস্থতা এমকি আনন্দ এবং ব্যাথায়ও সে চারিত্রক সুন্দর্যে মানুষের সাথে মিলিত হয়….!!
এমন অনেক স্ত্রী আছে যারা তাদের স্বামীর চারিত্রক সুনাম শুনে…! তিনে মহানুভব, সর্বদা হাস্যজ্জল, দানশীল……., কিন্তু সে তার গৃহাভ্যন্তরে মন্দ চরিত্রের, সঙ্কির্ণ হৃদয়ের, গোমড়ামুখো, বিকট স্বরে অভিশাপ কারী, কৃপণ ও খোটা দান কারী….!!
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই ইরশাদ করেন : “তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ঐ ব্যাক্তি যে তার পরিবার-পরিজনের নিকট (আচার-আচরণে) শ্রেষ্ঠ, আর আমি পরিবার-পরিজনের নিকট (আচার-আচরণে) শ্রেষ্ঠ”। লক্ষ কর! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিবার-পরিজনের সাথে কী ধরণের আচরণ করতেন যে, তিনি এতে সর্বশ্রেষ্ঠ!!!
আসওয়াদ বিন ইয়াযিদ বলেন : আমি আম্মাজান আয়শাকে জিজ্ঞাসা করলাম : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাসায় কি করতেন?
তিনি বল্লেন : তিনি স্ত্রীদের সাথে ঘরের কাজে ব্যাস্ত থাকতেন। আযান হলে আজু করে মসজিদে গমন করতেন..!
একথা পিতা-মাতার সাথেও তুমি ধরে নিতে পার...!!
এমন অনেক মানুষ রয়েছে যাদের উত্তম চরিত্র, মহানুভবতা, মৃদু হাসি ও অপরের সাথে সুন্দর আচরণের কথা আমরা শুনি, কিন্তু সে তার সর্বাধিক নিকটের মানুষটির সাথে... মহান লোকটির সাথে.. পিতা-মাতার সাথে.. স্ত্রী-সন্তানদের সাথে কঠোর ও বিচ্ছিন্ন!!
হ্যাঁ, তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ঐ ব্যাক্তি যে তার পরিবার-পরিজনের সাথে (আচার-আচরণে) শ্রেষ্ঠ.. তার মতা-পিতার সাথে.. সন্তানের সাথে... স্ত্রীর সাথে... কর্মচারী ও সেবকদের সাথে.. বরং তাদের সন্তানদের সাথেও..!!
আনন্দময় একটি দিনে আবুলায়ল (রাঃ)রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপবিষ্ট ছিলেন। হাসান বা হুসাইন (রাঃ) দৌড়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ধরে নিজ উদরের উপর বসালেন...!
শিশুটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেটের উপর মূত্র ত্যাগ করল...!!
আবু লায়লা বলেন : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদরে আমি শিশুটি মূত্র গড়িয়ে পড়তে দেখলাম..!
তিনি বলেন : আমরা (বাচ্চাটিকে সরানোর জন্য) সেদিকে দ্রুত অগ্রসর হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বল্লেন : “আমার সন্তানকে তার কাজ করতে দাও, তাকে কষ্ট দিও না!”....
শিশুটি যখন মূত্রত্যাগ হতে অবসর হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানির ব্যাবস্থা করে মূত্রের উপর ঢেলে দিলেন!!
কতইনা মহান তিনি যে, এউত্তম চরিত্রের অধীকারী ছিলেন...!!
সুতরাং তিনি আবাল-বৃদ্ধ সকলের ভালবাসর পাত্র হলে তোতে আশ্চার্য হয়ার কিছু নেই!!
উপসংহার : অন্ধকারকে মন্দ বলার পরিবর্তে চেরাগ ঠিক করার চেষ্টা কর......
এটি কোন কঠিনসাধ্য কাজ নয়…! তবে এত দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও অনুশীলন অপরিহার্য..! সুতরাং তুমি বীরের ভুমিকায় আত্মপ্রকাশ কর…! “
অভিজ্ঞতা উপভোগ কর
অভিজ্ঞতা সম্ভোগ ও বিনোদনের একটি বাস্তব বস্তু। সম্ভোগে ও বিনোদন বলতে শুধু পরকালের বিনিময় উদ্দেশ্য নয়। অভিজ্ঞতা তো উপভোগ ও প্রমোদের এমন বস্তু যা বাস্তবেই অনুভব করা যায়....! সুতরাং তা তুমি অনুভব কর। সকল মানুষের সাথে অনুশীলন কর। ছোট-বড়, ধনি-গরীব, আত্মীয়-অপরিচিত মোট কথা সকলের সাথে..!! হ্যা, তুমি এ অভিজ্ঞতা চর্চা কর... তাদের ভালবাস অর্জন করার লক্ষে..., তাদের অনিষ্ট থেকে আত্ম রক্ষার লক্ষে..., বা তাদেরকে সংশোধনের জন্য...।
হ্যা, সংশোধনের জন্য...।
আলী ইবনুল যাহাম সাহিত্যক কবি ছিল... কিন্তু সে রুঢ় গ্রাম্য ছিল। মরুভুমিতে দৃশ্য বস্তুসমূহ ব্যতিত জীবনের কিছুই সে যানে না...। আর খলীফা মুতাওয়াক্কিল যোগ্য ও প্রতিষ্ঠত খলীফা ছিলেন...।
আলী ইবনুল যাহাম বাগদাদে গমন করলে তাকে সংবাদ দেয়া হল যে, যে ব্যক্তি বাদশাহর তুস্তি করে সে তার নিকট সাম্মানিত হয় এবং উপঢৈাকন লাভ করে...। সংবাদ শুনে সে উৎফুল্ল হল এবং রাজপ্রসাদের দিকে পাবাড়াল....। সেখানে গিয়ে রাজদরবারে প্রবেশ করে দেখল, কবিরা বাদশাহর গুণগান গেয়ে অনেক লাভবান হচ্ছে...। প্রভাব, দাপট ও প্রতাপের ক্ষেত্রে মুতাওয়াক্কিলের কোন তুলনা ছিল না...।
আলী ইবনুল যাহাম একটি কবিতার মাধ্যমে বাদশার প্রশংসা আরম্ভ করল। যার সূচনা ছিল :
হে মহামান্য খলীফা !
ভালবাসার বন্ধন অটুট রাখতে আপনি কুকুর তুল্য!/
বিপদে অবিচল থাকার ক্ষেত্রে আপনি মেষ তুল্য!!
আপনি এমন বালতি যতে বৃহৎ অংশ বিশিষ্ট সকল বালতি রয়েছে!!
আলী ইবনুল যাহাম এভাবে খলীফাকে ছাগ-ছাগী, কুপ ও মাটির মত ক্ষুদ্র বস্তুর সাথে তুলনা করতে থাকে...!! অথচ তার পূর্বের কবীগণ খলীফাকে চন্দ্র-সূর্য ও পহাড়ের মত বিশাল জিনিসের সাথে তুলনা করে ছিল...!!
এক পর্যায়ে খলীফা ক্ষুদ্ধ হয়ে গেলেন…। প্রহরিকে ইঙ্গীত করলেন….। জল্লাদ অসি কোষমুক্ত করল…। এবং (হত্যা করার জন্য নির্ধারিত) বিশেষ মাদুর বিছাল..!! হত্যার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করল…। হটাৎ খলীফা অনুধাবন করলেন যে, এ গ্রাম্য লোকটি তার জন্মগত স্বভাব দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে… !!
খলীফা তার জন্মগত স্বভাব পরির্বতন করার ইচ্ছা করলেন....! তাই তিনি আলী ইবনুল যাহামকে রাজ প্রসাদে বসবাসের ব্যবস্থা করার জন্য তার লোকদের প্রতি নির্দেশ দিলেন...। তারা তাকে একটি রাজকীয় অট্টালিকায় বসবাস করার ব্যবস্থা করল...!! সকাল-সন্ধ্যা তার কাছে সর্বাধিক সুশ্রী দাসী সুস্বাদু-মজদার খাবার পরিবেশন করে...!
ইতি মধ্যে আলী ইবনুল যাহাম বিলাসিতার স্বাদ উপভোগ করেছে..! পালঙ্কে বিশ্রাম নিয়েছে...! কোমল হৃদয়ের কবি ও শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকদের সংশ্রব গ্রহণ করেছে...! এভাবে সে দীর্ঘ সাত মাস অতিক্রম করে....!!
একদা খলীফা নৈশা আলপের আসরে উপবেশন করলেন....! তখন আলী ইবনুল যাহামের বিষয়টি স্বরণ হলো...! তিনি তার সম্পর্কে লোকদের নিকট জানতে চাইলে তারা তাকে উপস্থিত করল....! যখন সে আসরে উপবিষ্ট হল, খলীফা বল্লেন : আলী ইবনুল যাহাম! আমার প্রসংশায় আবৃত্তি কর....!!
সে একটি কবিতা দারা প্রসংশা করল। যার সুচনা ছিল :
“উৎকৃষ্ট বন্য গাভীর একটি দল জোড়া পাথর ও পুলের মাঝে...!/ তারা জানা-অজানার ভালবাসা উথলিয়ে দিয়েছে...”
“তারা আমার প্রাচীন ভালবাসার পুরাবৃত্তি করেছে / কিন্তু প্রশান্তির পরিবর্তে জ্বলন্ত অঙ্গার আরো বৃদ্ধি করেছে...”!!
এভাবে আলী ইবনুল যাহাম সুক্ষ শব্দমালা দ্বারা অনুভূতি সমুহ জাগ্রত করতে লগল..। তার সূর্য, তারকা ও অসির সাথে খলীফার তুলনা করতে লাগল……..!!!
দেখলেতো অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে খলীফা কিভাবে আলী ইবনুল যাহামের জন্মগত স্বভাব পরিবর্তন করতে সক্ষম হলেন!! অথচ আমাদের সন্তান বা বন্ধু-বান্ধবগণ অনেক সময়েই এধরনের অস্বাভাবিন আচরণে আমাদেরকে বিব্রত করে...! কিন্তু আমরা আভিজ্ঞতার আলোকে তা পরির্বতন ও করিনা। এমনকি তার চেষ্টা ও করি না.....!!
সর্বপ্রথম ও শ্রেষ্ঠ কাজ হল তুমি প্রথমে তোমার স্বভাব পরির্বতনের সক্ষম হতে হবে...! সুতরাং তোমার মলিন মুখকে মৃদু হাসি দ্বারা, ক্রোধকে ধৈর্য দ্বারা এবং কৃপনতাকে দানশীলতা দ্বারা পরিবর্তন করবে…!! এটি কোন কঠিনসাধ্য কাজ নয়…! তবে এত দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও অনুশীলন অপরিহার্য..! সুতরাং তুমি বীরের ভুমিকায় আত্মপ্রকাশ কর…!!
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন-চরিত অধ্যায়ন করলে প্রত্যেকেই দেখবে যে, তিনি মানুষর সাথে এমন উন্নত চারিত্রিক যোগ্যতার আচরণ করেছেন যা দ্বারা তিনি সকল হৃদয়ের সম্রাট হয়েছেন...!! মানুষের সম্মুখে তাঁর এসব আচরণ কৃত্রিম ছিল না.. যে, গৃহাভ্যান্তরে তার ধৈর্য ক্রোধে, নম্রতা কঠোরতায় পরিবর্তন হয়ে যায়..!!
না,… মানুষের সাথে তার মৃদু হাসি ঘরের সদস্যদের সাথে মলিন মুখ হত না…!
মানুষের সাথে মহানুভব আর স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে তার বিপরিত, এমন ছিলেন না…!
না,…. বরং তাঁর চরিত্র পাকৃতিক বা স্বভাবজাত ছিল..। চরিত্র দ্বারাই আল্লাহর এবাদত করতেন…! যেমন তাহাজ্জুদ ও ইশারাকের নামায দ্বারা এবাদত করেন…..!! মৃদু হাসিকে আল্লাহর নৈকট্য, দয়াকে এবাদত এবং ক্ষমা ও নম্রতাকে পূণ্য হিসেবে গণ্য করতেন..!!
যে ব্যাক্তি উত্তম চরিত্রকে এবাদত ও উপাসনা গণ্য করে, সে সর্বাবস্থায় উত্তম চরিত্রে সুসজ্জিত থাকে…! যুদ্ধ-শান্তি, আহারে-অনাহারে, সুস্থ-অসুস্থতা এমকি আনন্দ এবং ব্যাথায়ও সে চারিত্রক সুন্দর্যে মানুষের সাথে মিলিত হয়….!!
এমন অনেক স্ত্রী আছে যারা তাদের স্বামীর চারিত্রক সুনাম শুনে…! তিনে মহানুভব, সর্বদা হাস্যজ্জল, দানশীল……., কিন্তু সে তার গৃহাভ্যন্তরে মন্দ চরিত্রের, সঙ্কির্ণ হৃদয়ের, গোমড়ামুখো, বিকট স্বরে অভিশাপ কারী, কৃপণ ও খোটা দান কারী….!!
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই ইরশাদ করেন : “তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ঐ ব্যাক্তি যে তার পরিবার-পরিজনের নিকট (আচার-আচরণে) শ্রেষ্ঠ, আর আমি পরিবার-পরিজনের নিকট (আচার-আচরণে) শ্রেষ্ঠ”। লক্ষ কর! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিবার-পরিজনের সাথে কী ধরণের আচরণ করতেন যে, তিনি এতে সর্বশ্রেষ্ঠ!!!
আসওয়াদ বিন ইয়াযিদ বলেন : আমি আম্মাজান আয়শাকে জিজ্ঞাসা করলাম : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাসায় কি করতেন?
তিনি বল্লেন : তিনি স্ত্রীদের সাথে ঘরের কাজে ব্যাস্ত থাকতেন। আযান হলে আজু করে মসজিদে গমন করতেন..!
একথা পিতা-মাতার সাথেও তুমি ধরে নিতে পার...!!
এমন অনেক মানুষ রয়েছে যাদের উত্তম চরিত্র, মহানুভবতা, মৃদু হাসি ও অপরের সাথে সুন্দর আচরণের কথা আমরা শুনি, কিন্তু সে তার সর্বাধিক নিকটের মানুষটির সাথে... মহান লোকটির সাথে.. পিতা-মাতার সাথে.. স্ত্রী-সন্তানদের সাথে কঠোর ও বিচ্ছিন্ন!!
হ্যাঁ, তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ঐ ব্যাক্তি যে তার পরিবার-পরিজনের সাথে (আচার-আচরণে) শ্রেষ্ঠ.. তার মতা-পিতার সাথে.. সন্তানের সাথে... স্ত্রীর সাথে... কর্মচারী ও সেবকদের সাথে.. বরং তাদের সন্তানদের সাথেও..!!
আনন্দময় একটি দিনে আবুলায়ল (রাঃ)রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপবিষ্ট ছিলেন। হাসান বা হুসাইন (রাঃ) দৌড়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ধরে নিজ উদরের উপর বসালেন...!
শিশুটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেটের উপর মূত্র ত্যাগ করল...!!
আবু লায়লা বলেন : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদরে আমি শিশুটি মূত্র গড়িয়ে পড়তে দেখলাম..!
তিনি বলেন : আমরা (বাচ্চাটিকে সরানোর জন্য) সেদিকে দ্রুত অগ্রসর হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বল্লেন : “আমার সন্তানকে তার কাজ করতে দাও, তাকে কষ্ট দিও না!”....
শিশুটি যখন মূত্রত্যাগ হতে অবসর হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানির ব্যাবস্থা করে মূত্রের উপর ঢেলে দিলেন!!
কতইনা মহান তিনি যে, এউত্তম চরিত্রের অধীকারী ছিলেন...!!
সুতরাং তিনি আবাল-বৃদ্ধ সকলের ভালবাসর পাত্র হলে তোতে আশ্চার্য হয়ার কিছু নেই!!
উপসংহার : অন্ধকারকে মন্দ বলার পরিবর্তে চেরাগ ঠিক করার চেষ্টা কর......
ভালবাসার পৃথিবী (পর্ব-৫) অন্ধকারকে মন্দ বলার পরিবর্তে চেরাগ ঠিক করার চেষ্টা কর......
অভিজ্ঞতা উপভোগ কর
অভিজ্ঞতা সম্ভোগ ও বিনোদনের একটি বাস্তব বস্তু। সম্ভোগে ও বিনোদন বলতে শুধু পরকালের বিনিময় উদ্দেশ্য নয়। অভিজ্ঞতা তো উপভোগ ও প্রমোদের এমন বস্তু যা বাস্তবেই অনুভব করা যায়....! সুতরাং তা তুমি অনুভব কর। সকল মানুষের সাথে অনুশীলন কর। ছোট-বড়, ধনি-গরীব, আত্মীয়-অপরিচিত মোট কথা সকলের সাথে..!! হ্যা, তুমি এ অভিজ্ঞতা চর্চা কর... তাদের ভালবাস অর্জন করার লক্ষে..., তাদের অনিষ্ট থেকে আত্ম রক্ষার লক্ষে..., বা তাদেরকে সংশোধনের জন্য...।
হ্যা, সংশোধনের জন্য...।
আলী ইবনুল যাহাম সাহিত্যক কবি ছিল... কিন্তু সে রুঢ় গ্রাম্য ছিল। মরুভুমিতে দৃশ্য বস্তুসমূহ ব্যতিত জীবনের কিছুই সে যানে না...। আর খলীফা মুতাওয়াক্কিল যোগ্য ও প্রতিষ্ঠত খলীফা ছিলেন...।
আলী ইবনুল যাহাম বাগদাদে গমন করলে তাকে সংবাদ দেয়া হল যে, যে ব্যক্তি বাদশাহর তুস্তি করে সে তার নিকট সাম্মানিত হয় এবং উপঢৈাকন লাভ করে...। সংবাদ শুনে সে উৎফুল্ল হল এবং রাজপ্রসাদের দিকে পাবাড়াল....। সেখানে গিয়ে রাজদরবারে প্রবেশ করে দেখল, কবিরা বাদশাহর গুণগান গেয়ে অনেক লাভবান হচ্ছে...। প্রভাব, দাপট ও প্রতাপের ক্ষেত্রে মুতাওয়াক্কিলের কোন তুলনা ছিল না...।
আলী ইবনুল যাহাম একটি কবিতার মাধ্যমে বাদশার প্রশংসা আরম্ভ করল। যার সূচনা ছিল :
হে মহামান্য খলীফা !
ভালবাসার বন্ধন অটুট রাখতে আপনি কুকুর তুল্য!/
বিপদে অবিচল থাকার ক্ষেত্রে আপনি মেষ তুল্য!!
আপনি এমন বালতি যতে বৃহৎ অংশ বিশিষ্ট সকল বালতি রয়েছে!!
আলী ইবনুল যাহাম এভাবে খলীফাকে ছাগ-ছাগী, কুপ ও মাটির মত ক্ষুদ্র বস্তুর সাথে তুলনা করতে থাকে...!! অথচ তার পূর্বের কবীগণ খলীফাকে চন্দ্র-সূর্য ও পহাড়ের মত বিশাল জিনিসের সাথে তুলনা করে ছিল...!!
এক পর্যায়ে খলীফা ক্ষুদ্ধ হয়ে গেলেন…। প্রহরিকে ইঙ্গীত করলেন….। জল্লাদ অসি কোষমুক্ত করল…। এবং (হত্যা করার জন্য নির্ধারিত) বিশেষ মাদুর বিছাল..!! হত্যার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করল…। হটাৎ খলীফা অনুধাবন করলেন যে, এ গ্রাম্য লোকটি তার জন্মগত স্বভাব দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে… !!
খলীফা তার জন্মগত স্বভাব পরির্বতন করার ইচ্ছা করলেন....! তাই তিনি আলী ইবনুল যাহামকে রাজ প্রসাদে বসবাসের ব্যবস্থা করার জন্য তার লোকদের প্রতি নির্দেশ দিলেন...। তারা তাকে একটি রাজকীয় অট্টালিকায় বসবাস করার ব্যবস্থা করল...!! সকাল-সন্ধ্যা তার কাছে সর্বাধিক সুশ্রী দাসী সুস্বাদু-মজদার খাবার পরিবেশন করে...!
ইতি মধ্যে আলী ইবনুল যাহাম বিলাসিতার স্বাদ উপভোগ করেছে..! পালঙ্কে বিশ্রাম নিয়েছে...! কোমল হৃদয়ের কবি ও শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকদের সংশ্রব গ্রহণ করেছে...! এভাবে সে দীর্ঘ সাত মাস অতিক্রম করে....!!
একদা খলীফা নৈশা আলপের আসরে উপবেশন করলেন....! তখন আলী ইবনুল যাহামের বিষয়টি স্বরণ হলো...! তিনি তার সম্পর্কে লোকদের নিকট জানতে চাইলে তারা তাকে উপস্থিত করল....! যখন সে আসরে উপবিষ্ট হল, খলীফা বল্লেন : আলী ইবনুল যাহাম! আমার প্রসংশায় আবৃত্তি কর....!!
সে একটি কবিতা দারা প্রসংশা করল। যার সুচনা ছিল :
“উৎকৃষ্ট বন্য গাভীর একটি দল জোড়া পাথর ও পুলের মাঝে...!/ তারা জানা-অজানার ভালবাসা উথলিয়ে দিয়েছে...”
“তারা আমার প্রাচীন ভালবাসার পুরাবৃত্তি করেছে / কিন্তু প্রশান্তির পরিবর্তে জ্বলন্ত অঙ্গার আরো বৃদ্ধি করেছে...”!!
এভাবে আলী ইবনুল যাহাম সুক্ষ শব্দমালা দ্বারা অনুভূতি সমুহ জাগ্রত করতে লগল..। তার সূর্য, তারকা ও অসির সাথে খলীফার তুলনা করতে লাগল……..!!!
দেখলেতো অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে খলীফা কিভাবে আলী ইবনুল যাহামের জন্মগত স্বভাব পরিবর্তন করতে সক্ষম হলেন!! অথচ আমাদের সন্তান বা বন্ধু-বান্ধবগণ অনেক সময়েই এধরনের অস্বাভাবিন আচরণে আমাদেরকে বিব্রত করে...! কিন্তু আমরা আভিজ্ঞতার আলোকে তা পরির্বতন ও করিনা। এমনকি তার চেষ্টা ও করি না.....!!
সর্বপ্রথম ও শ্রেষ্ঠ কাজ হল তুমি প্রথমে তোমার স্বভাব পরির্বতনের সক্ষম হতে হবে...! সুতরাং তোমার মলিন মুখকে মৃদু হাসি দ্বারা, ক্রোধকে ধৈর্য দ্বারা এবং কৃপনতাকে দানশীলতা দ্বারা পরিবর্তন করবে…!! এটি কোন কঠিনসাধ্য কাজ নয়…! তবে এত দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও অনুশীলন অপরিহার্য..! সুতরাং তুমি বীরের ভুমিকায় আত্মপ্রকাশ কর…!!
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন-চরিত অধ্যায়ন করলে প্রত্যেকেই দেখবে যে, তিনি মানুষর সাথে এমন উন্নত চারিত্রিক যোগ্যতার আচরণ করেছেন যা দ্বারা তিনি সকল হৃদয়ের সম্রাট হয়েছেন...!! মানুষের সম্মুখে তাঁর এসব আচরণ কৃত্রিম ছিল না.. যে, গৃহাভ্যান্তরে তার ধৈর্য ক্রোধে, নম্রতা কঠোরতায় পরিবর্তন হয়ে যায়..!!
না,… মানুষের সাথে তার মৃদু হাসি ঘরের সদস্যদের সাথে মলিন মুখ হত না…!
মানুষের সাথে মহানুভব আর স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে তার বিপরিত, এমন ছিলেন না…!
না,…. বরং তাঁর চরিত্র পাকৃতিক বা স্বভাবজাত ছিল..। চরিত্র দ্বারাই আল্লাহর এবাদত করতেন…! যেমন তাহাজ্জুদ ও ইশারাকের নামায দ্বারা এবাদত করেন…..!! মৃদু হাসিকে আল্লাহর নৈকট্য, দয়াকে এবাদত এবং ক্ষমা ও নম্রতাকে পূণ্য হিসেবে গণ্য করতেন..!!
যে ব্যাক্তি উত্তম চরিত্রকে এবাদত ও উপাসনা গণ্য করে, সে সর্বাবস্থায় উত্তম চরিত্রে সুসজ্জিত থাকে…! যুদ্ধ-শান্তি, আহারে-অনাহারে, সুস্থ-অসুস্থতা এমকি আনন্দ এবং ব্যাথায়ও সে চারিত্রক সুন্দর্যে মানুষের সাথে মিলিত হয়….!!
এমন অনেক স্ত্রী আছে যারা তাদের স্বামীর চারিত্রক সুনাম শুনে…! তিনে মহানুভব, সর্বদা হাস্যজ্জল, দানশীল……., কিন্তু সে তার গৃহাভ্যন্তরে মন্দ চরিত্রের, সঙ্কির্ণ হৃদয়ের, গোমড়ামুখো, বিকট স্বরে অভিশাপ কারী, কৃপণ ও খোটা দান কারী….!!
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই ইরশাদ করেন : “তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ঐ ব্যাক্তি যে তার পরিবার-পরিজনের নিকট (আচার-আচরণে) শ্রেষ্ঠ, আর আমি পরিবার-পরিজনের নিকট (আচার-আচরণে) শ্রেষ্ঠ”। লক্ষ কর! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিবার-পরিজনের সাথে কী ধরণের আচরণ করতেন যে, তিনি এতে সর্বশ্রেষ্ঠ!!!
আসওয়াদ বিন ইয়াযিদ বলেন : আমি আম্মাজান আয়শাকে জিজ্ঞাসা করলাম : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাসায় কি করতেন?
তিনি বল্লেন : তিনি স্ত্রীদের সাথে ঘরের কাজে ব্যাস্ত থাকতেন। আযান হলে আজু করে মসজিদে গমন করতেন..!
একথা পিতা-মাতার সাথেও তুমি ধরে নিতে পার...!!
এমন অনেক মানুষ রয়েছে যাদের উত্তম চরিত্র, মহানুভবতা, মৃদু হাসি ও অপরের সাথে সুন্দর আচরণের কথা আমরা শুনি, কিন্তু সে তার সর্বাধিক নিকটের মানুষটির সাথে... মহান লোকটির সাথে.. পিতা-মাতার সাথে.. স্ত্রী-সন্তানদের সাথে কঠোর ও বিচ্ছিন্ন!!
হ্যাঁ, তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ঐ ব্যাক্তি যে তার পরিবার-পরিজনের সাথে (আচার-আচরণে) শ্রেষ্ঠ.. তার মতা-পিতার সাথে.. সন্তানের সাথে... স্ত্রীর সাথে... কর্মচারী ও সেবকদের সাথে.. বরং তাদের সন্তানদের সাথেও..!!
আনন্দময় একটি দিনে আবুলায়ল (রাঃ)রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপবিষ্ট ছিলেন। হাসান বা হুসাইন (রাঃ) দৌড়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ধরে নিজ উদরের উপর বসালেন...!
শিশুটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেটের উপর মূত্র ত্যাগ করল...!!
আবু লায়লা বলেন : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদরে আমি শিশুটি মূত্র গড়িয়ে পড়তে দেখলাম..!
তিনি বলেন : আমরা (বাচ্চাটিকে সরানোর জন্য) সেদিকে দ্রুত অগ্রসর হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বল্লেন : “আমার সন্তানকে তার কাজ করতে দাও, তাকে কষ্ট দিও না!”....
শিশুটি যখন মূত্রত্যাগ হতে অবসর হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানির ব্যাবস্থা করে মূত্রের উপর ঢেলে দিলেন!!
কতইনা মহান তিনি যে, এউত্তম চরিত্রের অধীকারী ছিলেন...!!
সুতরাং তিনি আবাল-বৃদ্ধ সকলের ভালবাসর পাত্র হলে তোতে আশ্চার্য হয়ার কিছু নেই!!
উপসংহার : অন্ধকারকে মন্দ বলার পরিবর্তে চেরাগ ঠিক করার চেষ্টা কর......
কোন মন্তব্য নেই:
/>