ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নির্বাচিত ফতোয়া !!!
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَمَآ
أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ إِلَّا رِجَالٗا نُّوحِيٓ إِلَيۡهِمۡۖ
فَسَۡٔلُوٓاْ أَهۡلَ ٱلذِّكۡرِ إِن كُنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ٤٣ ﴾ [النحل: ٤٣]
“তোমার পূর্বে আমি ওহীসহ পুরুষই প্রেরণ করেছিলাম; তোমরা যদি না জান, তবে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর।” – (সূরা আন-নাহল: ৪৩)।
بسم الله الرحمن الرحيم
ভূমিকা
সমস্ত
প্রশংসা আল্লাহর জন্য; আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর নিকট সাহায্য চাই এবং
তাঁর কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করি; আর আমাদের নফসের জন্য ক্ষতিকর এমন সকল
খারাপি এবং আমাদের সকল প্রকার মন্দ আমল থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, তাকে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই; আর যাকে তিনি পথহারা করেন, তাকে পথ প্রদর্শনকারীও কেউ নেই। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল।
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ ١٠٢﴾ [ال عمران: ١٠٢]
“হে
মুমিনগণ! তোমরা যথার্থভাবে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং তোমরা মুসলিম
(পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণকারী) না হয়ে কোনো অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করো না।” – (সূরা আলে ইমরান: ১০২)।
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱتَّقُواْ رَبَّكُمُ ٱلَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفۡسٖ وَٰحِدَةٖ وَخَلَقَ مِنۡهَا زَوۡجَهَا وَبَثَّ مِنۡهُمَا رِجَالٗا
كَثِيرٗا وَنِسَآءٗۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ ٱلَّذِي تَسَآءَلُونَ بِهِۦ
وَٱلۡأَرۡحَامَۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلَيۡكُمۡ رَقِيبٗا ١ ﴾ [النساء: ١]
“হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন কর, যিনি
তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি
করেছেন এবং তাদের দুজন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন; আর তোমরা আল্লাহর
তাকওয়া অবলম্বন কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের কাছে নিজ নিজ হক দাবী কর এবং
তাকওয়া অবলম্বন কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারেও। নিশ্চয় আল্লাহ
তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক।” (সূরা আন-নিসা: ১)।
﴿يَٰٓأَيُّهَا
ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَقُولُواْ قَوۡلٗا سَدِيدٗا ٧٠
يُصۡلِحۡ لَكُمۡ أَعۡمَٰلَكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۗ وَمَن
يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ فَازَ فَوۡزًا عَظِيمًا ٧١﴾ [الاحزاب: ٧٠، ٧١]
“হে
ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সঠিক কথা বল; তাহলে তিনি
তোমাদের জন্য তোমাদের কাজ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন। আর যে
ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন
করবে।” – (সূরা আল-আহযাব: ৭০, ৭১)।
অতঃপর:
মুসলিম পুরুষ ও নারীর জীবনে এমন অনেক জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়, যে ব্যাপারে শরী‘য়তের বিধান জানা আবশ্যক হয়ে পড়ে।
আর জ্ঞানীদের নিকট প্রশ্ন করা এবং তাদের নিকট ফতোয়া জানতে চাওয়াটা জ্ঞান অর্জনের অন্যতম চাবিকাঠি; কেননা জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসের মধ্যে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ... أَلاَّ سَأَلُوا إِذْ لَمْ يَعْلَمُوا فَإِنَّمَا شِفَاءُ الْعِىِّ السُّؤَالُ ... » . (أخرجه أبو داود) .
“ ... তারা যখন জানে না, তখন তারা কেন প্রশ্ন করলো না? কারণ, অজ্ঞতার চিকিৎসা হল প্রশ্ন করা ...।”[1] এখান
থেকেই এই সিরিজের চিন্তা আসে- ‘অজ্ঞতা নিরাময় সিরিজ’; যার পিছনে আমার
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হল সম্মানিত আলেম ও শাইখগণের নির্ভরযোগ্য ফতোয়াসমূহ থেকে
একটি সহজ সংকলন তৈরি করা, যা সমাজের বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠী গুরুত্বপূর্ণ মনে
করে। তার মাঝে ছাত্র-ছাত্রীদের দলটি সমাজের মধ্যে একটি বড় অংশ হওয়ার কারণে
খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট শর‘য়ী ফতোয়া সম্পর্কে অনেকেরই
জানা প্রয়োজন।
আর এসব পৃষ্ঠার মধ্যে আমি ঐসব ফতোয়া থেকে বাছাইকৃত অংশ সংকলন করেছি এবং সেগুলোর উৎস ও তথ্যসূত্রের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করেছি।
অতঃপর
আমি যদি এই সঠিক কিছু করে থাকি, তবে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়েছে, যিনি
একক, যার কোন শরীক নেই, আমি তাঁর প্রশংসা করছি; এমন প্রশংসা যা তাঁর মহান
মর্যাদা ও ক্ষমতার সাথে মানানসই, তিনি পবিত্র ও মহান; আর আমি তাঁর নিকট
প্রার্থনা করছি, যাতে তিনি এই কাজটিকে একনিষ্ঠভাবে তাঁর জন্য সঠিক ও
নির্ভেজাল আমল হিসেবে গণ্য করেন।
আর
আমি যদি ভুল করে থাকি, তবে তা একান্ত আমার নিজের ও শয়তানের পক্ষ থেকে
হয়েছে; আমি আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা ও মার্জনা প্রার্থনা করছি।
و صلى الله و سلم على نبينا محمد و على آله و صحبه أجمعين .
(আল্লাহ রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর উপর)।
و آخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.
(আর আমাদের শেষ দো‘আ হবে: ‘সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর প্রাপ্য)।
* * *
নিয়তের মধ্যে সনদ লাভের ইচ্ছা কি নিন্দনীয় হবে?
প্রশ্ন: শর‘য়ী
জ্ঞান অর্জনকারী কোনো কোনো ছাত্র তাদের জ্ঞান অর্জন ও সনদ (সার্টিফিকেট)
লাভের নিয়তের বিষয়টি নিয়ে বিব্রত বোধ করে, সুতরাং এই বিব্রত অবস্থা থেকে
ছাত্রগণ কিভাবে মুক্তি লাভ করবে?
উত্তর: এর উত্তর দেয়া হয় কয়েকভাবে:
প্রথমত: মৌলিকভাবে
এই সনদ (সার্টিফিকেট) লাভ করাটাই তাদের উদ্দেশ্য হবে না; বরং মানব জাতির
সেবার ময়দানে কাজ করার উপায় হিসেবে এই সনদকে গ্রহণ করবে; কারণ, বর্তমান
সময়ে কাজকর্ম সনদের উপর নির্ভরশীল এবং মানুষ এই উপায় অবলম্বন করা ব্যতীত
সৃষ্টির উপকারের দোরগোড়ায় পৌঁছুতে সক্ষম হবে না; আর এই পদ্ধতিতে নিয়ত
বিশুদ্ধ হবে।
দ্বিতীয়ত: যে
ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করতে চাইবে, সেই ব্যক্তি এসব স্কুল ও কলেজ ব্যতীত
অন্য কোথাও তা অর্জন করতে পারবে না; সুতরাং সে তাতে জ্ঞান অর্জনের নিয়তে
ভর্তি হবে এবং তার উপর সনদ বা সার্টিফিকেটের মত কোন বিষয়ের প্রভাব পড়বে না,
যা পরবর্তী সময়ে সে অর্জন করবে।
তৃতীয়ত: মানুষ
যখন তার কর্মের মাধ্যমে দু’টি কল্যাণ লাভের ইচ্ছা পোষণ করবে, একটি দুনিয়ার
কল্যাণ এবং অপরটি আখিরাতের কল্যাণ, তখন এই ক্ষেত্রে তার কোনো অপরাধ হবে
না; কারণ, আল্লাহ বলেন:
﴿... وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ ...﴾ [الطلاق: ٢، ٣]
“... আর
যে কেউ আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য (উত্তরণের) পথ বের
করে দেবেন এবং তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিযিক দান করবেন; ...।” - (সূরা আত-তালাক: ২, ৩); এখানে দুনিয়া সংক্রান্ত উপকারিতা উল্লেখের মাধ্যমে তাকওয়ার গুণ অর্জনের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।
সুতরাং যদি প্রশ্ন করা হয়: যে ব্যক্তি তার কর্মের মাধ্যমে দুনিয়া লাভের ইচ্ছা পোষণ করবে, তাহলে কিভাবে তাকে মুখলিস বা একনিষ্ঠ বলা হবে?
উত্তরে আমি বলব: সে
তার ইবাদতের উদ্দেশ্যকে নির্ভেজাল ও একনিষ্ঠ করেছে এবং এর দ্বারা কোন
সৃষ্টিকে উদ্দেশ্য করে নি; ইবাদতের দ্বারা মানুষকে দেখানো বা মানুষের
প্রশংসা অর্জন করার উদ্দেশ্যও করে নি। তবে সে
ইবাদতের একটি পার্থিব ফলাফল উদ্দেশ্য করেছে। তাই সে ঐ লোক-দেখানো আমলকারী
ব্যক্তির মতো নয়, যে এমন কিছু আমল দ্বারা মানুষের নিকটবর্তী হয়, যা দ্বারা
আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার কথা এবং যে এর দ্বারা মানুষের প্রশংসা অর্জন করতে
চায়।
কিন্তু
এই দুনিয়াবী উদ্দেশ্যের ফলে তার ইখলাসে কমতি হবে; এতে করে সে এক ধরনের
শির্কে পতিত হবে এবং তার মর্যাদা ঐ ব্যক্তির নীচে চলে যাবে, যিনি আমল
দ্বারা আখিরাতকেই একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে।
আর
এই প্রসঙ্গে আমি কিছু মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যারা ইবাদতের
উপকারিতার ব্যাপারে কথা বলার সময় একে পুরোপুরি দুনিয়াবী উপকারিতায়
রূপান্তরিত করে। উদাহরণস্বরূপ তারা বলে: ‘সালাতের মধ্যে শরীরচর্চা ও
স্নায়ুর জন্য উপকার রয়েছে’; ‘সাওমের (রোযার) মধ্যে ফায়দা হল: এর কারণে
শরীরের মেদ কমে এবং খাওয়া-দাওয়ার নিয়ম-শৃঙ্খলা অর্জিত হয়’। অথচ
এই শুধু দুনিয়াবী উপকারিতা বর্ণনা করাই প্রধান আলোচ্য বিষয় করা উচিৎ নয়;
কারণ, তা ইখলাসকে দুর্বল করে দেয় এবং আখেরাতকে চাওয়া থেকে মানুষকে অমনোযোগী
করে। আর এ জন্যই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবের মধ্যে সাওমের তাৎপর্য সুস্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে, সাওম হচ্ছে তাকওয়া অর্জনের অন্যতম উপায়। সুতরাং
দীনী উপকারিতাই হল মূখ্য, আর দুনিয়াবী (পার্থিব) উপকারিতা গৌণ। আর যখনই
আমরা সাধারণ জনগণের নিকট কথা বলব, তখন আমরা দীনী দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের নিকট
আলোচনা পেশ করব; আর যখন আমরা এমন ব্যক্তির নিকট কথা বলব, যে ব্যক্তি
বস্তুগত ফায়দা ছাড়া পরিতৃপ্ত হবে না, তার নিকট আমরা দীনী ও দুনিয়াবী উভয়
দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা পেশ করব। আর স্থান, কাল ও পাত্রভেদেই কথা বলতে হয়।
শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন
ফতোয়ায়ে আকিদা (فتاوى العقيدة): পৃ. ২০২
* * *
বর্তমান সময়ে শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য
প্রশ্ন: বর্তমানে
আমরা বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি
লক্ষ্য করছি; আর এত সব প্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি সত্ত্বেও এগুলো ঐসব বিজ্ঞ
আলেমদের মত আলেম তৈরি করতে সমর্থ হয় নি যেসব আলেম পূর্ববর্তী সময়ে
মসজিদসমূহে অবস্থিত শিক্ষার আসর থেকে তৈরি হয়েছেন; চাই এই সামর্থ্য জ্ঞানগত
দিক থেকে হউক, অথবা ফিকহ শাস্ত্রের ব্যাপারে হউক ...; অথবা সেই সামর্থ্য
কথোপকথন ও বিতর্কের ক্ষেত্রে হউক ... সুতরাং এ ক্ষেত্রে কারণগুলো কি কি?
উত্তর: কোনো
সন্দেহ নেই যে, পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে বর্তমান সময়ের ইলম বা জ্ঞানের মান
কম। তবে আমরা ঢালাওভাবে সকল মানুষের ব্যাপারে বলি না যে, তাদের জ্ঞানগত মান
(standard) দুর্বল; কারণ,
আল্লাহর শুকরিয়া (আলহামদুলিল্লাহ) এখনও অনেক মানুষ পাওয়া যাচ্ছে, যাঁরা
তাঁদের জ্ঞানে ও কর্মে শ্রেষ্ঠ; তবে বর্তমান সময়ে শিক্ষার দুর্বলতার বিষয়ে
আমার অভিমত হল, এটা শিক্ষার দুর্বলতা নয়, কেননা বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা
অধিকাংশ ক্ষেত্রে পূর্বেকার সময়ের শিক্ষাপদ্ধতির মতই; সুতরাং বর্তমান
সিলেবাসটি (কারিকুলাম) অবিকল আগের সিলেবাসটিই; কিন্তু আমার দৃষ্টিতে শুধু
পাঠ করাই সব কিছু নয় ...; কারণ, পাঠ করা হচ্ছে জ্ঞানের চাবিকাঠি ও দরজা
মাত্র ..., আর পূর্বের আলেমগণ তাদের পুরো জীবনটাই অতিবাহিত হয়েছে পঠন—পাঠন ও
অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে, তারা শ্রেণীকক্ষে বা শিক্ষার আসরে যে শিক্ষা গ্রহণ
করতেন, তার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকতেন না, বরং তারা অধ্যয়ন ও আলোচনা-পর্যালোচনা
সার্বক্ষণিক অব্যাহত রাখতেন।
আর
স্বতঃসিদ্ধ কথা হল, আলোচনা ও অধ্যয়নের মাধ্যমেই জ্ঞান বৃদ্ধি পায়; অপরদিকে
বর্তমানে যে বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে, তা হল অধিকাংশ
শিক্ষার্থী উঁচু রেঙ্ক ও উন্নত মানের ফলাফল অর্জন করে, কিন্তু অধিকাংশ
ক্ষেত্রে কিতাব ও জ্ঞানের সাথে তাদের নেই কোনো সম্পর্ক।
বস্তুত:
এ পদ্ধতিতে জানা-বিষয়াদির মৃত্যু ঘটে; কারণ, বিদ্যা হচ্ছে চারাগাছের মত,
যখন তুমি তার পরিচর্যা করবে, তখন তা বড় হবে এবং ফল দেবে; আর যদি তুমি তার
যত্ন না নাও, তবে তার পরিণতি হল মৃত্যু এবং ধ্বংস ...; আর আমলের দিক বিচারে
অধিকাংশ ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী আলেমগণ ছিলেন সৎকর্মশীল আলেম এবং আল্লাহ
তা‘আলার প্রতি একনিষ্ঠ, যারা আল্লাহকে ভয় করতেন। আর এই গুণটি আমাদের এই যুগের শিক্ষার্থীদের মাঝে খুব কমই পরিলক্ষিত হয়। সব মানুষের ব্যাপারে খারাপ ধারণা না পোষণ করেও বলা যায় যে, খুব অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থীই রয়েছে যারা তাদের জ্ঞান অনুযায়ী আমল করে। অথচ একমাত্র আমলই ইলম (জ্ঞান) কে পরিশুদ্ধ ও পরিবর্ধণ করে; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّمَا يَخۡشَى ٱللَّهَ مِنۡ عِبَادِهِ ٱلۡعُلَمَٰٓؤُاْۗ ﴾ [فاطر: ٢٨]
“আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী, তারাই কেবল তাঁকে ভয় করে।” - (সূরা ফাতির: ২৮); সুতরাং আলেমগণ হলেন আল্লাহভীরু ব্যক্তিবর্গ। সালাফে
সালেহীনদের কেউ কেউ বলেন, ইলম দুই প্রকার: এক প্রকার হল ভাষাগত বা মৌখিক
ইলম, আর এটা আল্লাহর বান্দাদের উপর তাঁর দলিল-প্রমাণাদি; আর অপর প্রকার হল
আন্তরিক ইলম, আর এটাই হল বিশুদ্ধ জ্ঞান, যে জ্ঞান আল্লাহ তা‘আলার প্রতি
ভয়কে বৃদ্ধি করে; আর তারা এই আয়াতটির দ্বারা দলিল পেশ করেছেন:
﴿ إِنَّمَا يَخۡشَى ٱللَّهَ مِنۡ عِبَادِهِ ٱلۡعُلَمَٰٓؤُاْۗ ﴾ [فاطر: ٢٨]
“আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী, তারাই কেবল তাঁকে ভয় করে।” - (সূরা ফাতির: ২৮)।
শাইখ আল-ফাওযান
ফতোয়া (فتاوى): ২ / ১৩৫ (ঈষৎ পরিবর্তিত)
* * *
পরীক্ষার জন্য আল-কুরআন মুখস্থ করা
প্রশ্ন: এমন
ব্যক্তির বিধান কী হবে, যে বেশি বেশি কুরআন পাঠ করে, কিন্তু তার স্মরণ
শক্তির দুর্বলতার কারণে তা মুখস্থ করতে সমর্থ হয় না? আর ঐ ব্যক্তির বিধান
কী হবে, যে আল-কুরআন মুখস্থ করে এবং তা ভুলে যায় ঐ ব্যক্তির মত, যে তা
পরীক্ষার জন্য মুখস্থ করে, এতে কি তার গুনাহ হবে?
الحمد لله وحده و الصلاة و السلام على رسوله و آله و صحبه.
(সকল
প্রশংসা এক আল্লাহর জন্য; সালাত ও সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবার-পরিজন ও তাঁর সাহাবীদের প্রতি); অতঃপর:
উত্তর: যে
ব্যক্তি বেশি বেশি কুরআন পাঠ করে, কিন্তু তার স্মৃতি শক্তির দুর্বলতার
কারণে সে তা মুখস্থ করতে পারে না, তবে সে ব্যক্তিকে তার পাঠ করার উপর
সাওয়াব দেয়া হবে এবং তার মুখস্থ না হওয়ার ক্ষেত্রে তার ওযর গ্রহণ করা হবে;
কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ ﴾ [التغابن: ١٦]
“সুতরাং
তোমরা সাধ্যমত আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর।” - (সূরা আত-তাগাবুন: ১৬); আর
যে ব্যক্তি উদাহরণস্বরূপ পরীক্ষার জন্য আল-কুরআন মুখস্থ করে, অতঃপর তা ভুলে
যায়, তবে সে গুনাহগার হবে এবং সে অনেক কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে। আর তাওফীক
দানের মালিক আল্লাহ;
و صلى الله على نبينا محمد و آله و صحبه و سلم .
(আল্লাহ রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীদের উপর)।
গবেষণাপত্র ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী পরিষদ
সভাপতি সহ-সভাপতি
আবদুল আযীয ইবন ইবন বায আবদুর রাজ্জাক ‘আফীফী
সদস্য সদস্য
আবদুল্লাহ ইবন গুদাইয়ান আবদুল্লাহ ইবন কু‘ঊদ
স্থায়ী পরিষদের ফতোয়া (فتاوى اللجنة الدائمة): ৪ / ৬৩, ফতোয়া নং- ৭৭৩১
* * *
শিক্ষার উদ্দেশ্য প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা
প্রশ্ন: শিক্ষার উদ্দেশ্যে কোনো কোনো ছাত্রের জন্য কিছু কিছু প্রাণীর ছবি অঙ্কন করার প্রয়োজন হয়, সুতরাং এর বিধান কী হবে?
উত্তর: এসব
প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা বৈধ নয়; কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ছবি অঙ্কনকারীদেরকে অভিশাপ (লানত) দিয়েছেন; তিনি বলেছেন:
«إن أشد الناس عذابا عند الله يوم القيامة المصورون» ( أخرجه البخاري)
“কিয়ামতের
দিন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে মানুষের মধ্য কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে ছবি
অঙ্কনকারীগণ।” - (বুখারী, হাদিস নং- ৫৬০৬); আর এটা প্রমাণ করে যে, ছবি
অঙ্কন করা কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত; কারণ, কবীরা গুনাহ ব্যতীত লা‘নতের
(অভিশাপের) বিষয়টি আসে না এবং কবীরা গুনাহের প্রসঙ্গ ছাড়া কঠিন শাস্তির
হুমকিও প্রদান করা হয় না; কিন্তু শরীরের হাত, পা ও অনুরূপ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের
ছবি অঙ্কন বৈধ; কারণ, এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রাণ অবস্থান করে না; হাদিসের
বক্তব্যসমূহের বাহ্যিক দিক হল, ঐ ছবি বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অঙ্কন করা হারাম,
যার মাঝে প্রাণ বা জীবনের অবস্থান সম্ভব; কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন:
«من صور صورة في الدنيا كلف يوم القيامة أن ينفخ فيها الروح وليس بنافخ» ( أخرجه البخاري)
“যে
ব্যক্তি ছবি তৈরি করে, তাকে কিয়ামতের দিন তাতে জীবন দানের জন্য নির্দেশ
দেয়া হবে, কিন্তু সে সক্ষম হবে না।” - (বুখারী, হাদিস নং- ৫৬০৬)।
শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন
মাজমু‘উ ফতোয়া ওয়া রাসায়েল (مجموع فتاوى و رسائل ): ২ / ২৭২
* * *
জরুরি প্রয়োজনে ছবি অঙ্কন করা
প্রশ্ন: সম্মানিত
শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন র. কে প্রশ্ন করা হয়েছে, আপনি পূর্বের এক ফতোয়ায়
বলেছেন: “যখন ছাত্র পরীক্ষার সম্মুখীন হবে এবং তার জন্য ভিন্ন কোন উপায়
থাকবে না, তখন সে যেন মাথা বিহীন প্রাণীর ছবি অঙ্কন করে”; কিন্তু যখন ছাত্র
মাথা অঙ্কন করবে না, তখন সে পরীক্ষায় ফেল করবে— এমতাবস্থায় সে কী করবে?
উত্তর: অবস্থা
যখন এই, তখন ছাত্র এই কাজে বাধ্য ও নিরুপায়; আর গুনাহ হবে ঐ ব্যক্তির, যে
ব্যক্তি তাকে নির্দেশ দিয়েছে এবং এই কাজে তাকে বাধ্য করেছে। কিন্তু
আমি কর্তৃপক্ষের নিকট আশা করবো, তারা যেন তাদের নির্দেশকে এই সীমানা
পর্যন্ত নিয়ে না যায়; যার কারণে আল্লাহর বান্দাগণ আল্লাহর অবাধ্য হতে বাধ্য
হয়।
শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন
মাজমু‘উ ফতোয়া ওয়া রাসায়েল (مجموع فتاوى و رسائل ): ২ / ২৭৪
(ঈষৎ পরিবর্তিত)
* * *
ছবির আকৃতি ও ঘাড়ের মাঝে দাগ দেয়া
প্রশ্ন: বইপত্রে
যে সব ছবি রয়েছে সেসব ছবি মুছে ফেলা আবশ্যক হবে কি? আর ছবিতে ঘাড় ও দেহের
মধ্যে দাগ দেওয়ার কারণে হারাম হওয়ার বিষয়টি দূর হবে কি?
উত্তর: ছবি
মুছে ফেলাটাকে আমি আবশ্যক মনে করি না; কারণ, এতে বড় ধরনের কষ্টের কাজ;
তাছাড়া আরও একটি কারণ হচ্ছে, এসব বইপত্র দ্বারা এসব ছবিই উদ্দেশ্য নয়, বরং
তাতে যা আছে, তার মূল উদ্দেশ্য হল, শিক্ষা।
আর ছবিতে ঘাড় ও দেহের মধ্যে দাগ দেয়ার কারণে ছবির আসল আকৃতি বা কাঠামোতে পরিবর্তন হয় না।
শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন
মাজমু‘উ ফতোয়া ওয়া রাসায়েল (مجموع فتاوى و رسائل ): ২ / ২৭৩
* * *
চিত্র অঙ্কন ও ভাস্কর্য বানানোর শখ
প্রশ্ন: আমি
উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের প্রথম বর্ষের ছাত্র; আমি আমার ছোট বেলা থেকেই
চিত্রাঙ্কন পছন্দ করতাম; আর আমি ছবি অঙ্কনের কাজে এমনভাবে আকৃষ্ট হয়ে গেছি,
যা কেউ কল্পনাও করতে পারে না; আর এখন আমি জানতে পারলাম যে, চিত্রাকঙ্কন
আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করে; কিন্তু আমি চিত্রাঙ্কনের সাথে অনেক বেশি
সক্রিয়ভাবে জড়িত এবং শুধু চিত্রাঙ্কনের সাথেই নয়, বরং আমি ভাস্কর্য
বানানোকেও পছন্দ করি; তারপর আমি চিত্রাকঙ্কন ও ভাস্কর্য বানানোর কাজ ছেড়ে
দেয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি. কিন্তু শয়তান চিত্রাঙ্কনের কাজকে আমার নিকট
আকর্ষণীয় করে তুলে। আমি আপনার নিকট আশা করছি যে, আপনি আমাকে এমন একটি
পদ্ধতি বা পথের সন্ধান দেবেন, যা অনুসরণ করলে আমি চিত্রাকঙ্কন ও ভাস্কর্য
বানানোর কাজ ছেড়ে দিতে পারব?
الحمد لله وحده, و الصلاة و السلام على رسوله و آله و صحبه.
(সকল
প্রশংসা এক আল্লাহর জন্য; সালাত ও সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবার-পরিজন ও তাঁর সাহাবীদের প্রতি); অতঃপর:
উত্তর: প্রাণীর
ছবি ও ভাস্কর্য নির্মাণ করা হারাম; কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ছবি নির্মাতাদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন:
«إن أشد الناس عذابا عند الله يوم القيامة المصورون» ( أخرجه البخاري)
“কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে মানুষের মধ্যে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে ছবি অঙ্কনকারীগণ।” - (বুখারী, হাদিস নং- ৫৬০৬)।
আর
আমরা তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তুমি তোমার অবসর সময়টিকে বইপুস্তক পাঠ করা অথবা
ব্যবসা-বাণিজ্য ও অনুরূপ কোন কাজে ব্যয় করবে, যা তোমার মাঝে ও হারাম
(অবৈধ) কাজে নিয়োজিত হওয়ার মাঝে অন্তরায় সৃষ্টি করবে। আর তাওফীক দানের
মালিক আল্লাহ;
و صلى الله على نبينا محمد و آله و صحبه و سلم .
(আল্লাহ রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর উপর)।
স্থায়ী পরিষদ, শিক্ষা-গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক
সভাপতি সহ-সভাপতি
আবদুল আযীয ইবন বায আবদুর রাজ্জাক ‘আফীফী
সদস্য সদস্য
আবদুল্লাহ ইবন গুদাইয়ান আবদুল্লাহ ইবন কু‘ঊদ
স্থায়ী পরিষদের ফতোয়া (فتاوى اللجنة الدائمة): ১ / ৪৭৭, ফতোয়া নং- ৮০৪১
* * *
ছবি সংবলিত ম্যাগাজিন ও সময়িকী সংরক্ষণ
প্রশ্ন: আমি
উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের একজন ছাত্র; আমার শখ হল পড়াশুনা ও তথ্য অনুসন্ধান
করা, যা আমাকে অনেক ইসলামী, সাংস্কৃতিক ও সামরিক ম্যাগাজিন অধ্যয়নের দিকে
ধাবিত করে, কিন্তু এসব ম্যাগাজিনের কিছু কিছু বরং অধিকাংশের মধ্যেই মানুষের
ছবি রয়েছে, অথচ আমি আমার ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে ম্যাগাজিনসমূহ সংরক্ষণ করি
এবং এগুলোর মধ্যে ছবিসমূহ বিদ্যমান থাকে; আর চিত্র শিল্পীদের ব্যাপারে যা
বলা হয়েছে এবং যেই ঘরে কুকুর ও ছবি রয়েছে, সেই ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ না করার
ব্যাপারে যা বলা হয়েছে, আমরা হাদিসে নববী থেকে তা জানতে পেরেছি ...। আমি এই
মাসআলাটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা কামনা করছি, যাতে তার অস্পষ্টতা স্পষ্ট হয়
এবং তা পরিপূর্ণ আলোচনা বিশিষ্ট হয়?
উত্তর: উপকারী
বইপত্র, পত্রপত্রিকা ও ম্যাগাজিন সংরক্ষণে কোনো প্রকার বাধা বা নিষেধ নেই,
যদিও তাতে কোনো প্রকার ছবি বিদ্যমান থাকুক; কিন্তু যদি ছবিসমূহ নারীর হয়,
তবে তা মুছে দেয়া বা বিলুপ্ত করা আবশ্যক (ওয়াজিব); আর যদি তা পুরুষের ছবি
হয়, তবে এই বিষয়ে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদিসের উপর আমল করে ঐ ছবির মাথা বিলুপ্ত
বা ঢেকে দিলেই যথেষ্ট হবে।
শাইখ ইবনু বায
ফতোয়া ইসলামীয়া (فتاوى إسلامية): ৪ / ৩৩২
* * *
সফরে ছাত্র-ছাত্রীদের ছবি উঠানো
প্রশ্ন: আমরা
যখন কোন ছাত্র ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে সফরে যাই, তখন শুধু স্মৃতির
উদ্দেশ্যে আমরা কিছু ছবি সংগ্রহ করি; সুতরাং এই অবস্থায় ছবিগুলোর বিধান কী
হবে?
উত্তর: ছবিগুলো যখন প্রাণীর হবে, তখন তা হারাম বলে গণ্য হবে; কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إن أشد الناس عذابا عند الله يوم القيامة المصورون» (أخرجه البخاري)
“কিয়ামতের
দিন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে মানুষের মধ্যে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে
ছবি অঙ্কনকারীগণ।” - (বুখারী, হাদিস নং- ৫৬০৬); তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম চিত্র শিল্পীদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন; তবে ছবি যদি প্রাণীর
না হয়ে গাড়ী, বিমান, খেজুরগাছ ইত্যাদির মত হয়, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।
আর আল্লাহই হলেন তাওফীক দানের মালিক।
শাইখ ইবনু বায
ফতোয়া ইসলামীয়া (فتاوى إسلامية): ২ / ২৬০
* * *
তাবীয লেখকের জন্য রহমতের দো‘আ করা
প্রশ্ন: আমার
এক শিক্ষক ছিলেন, যিনি আমাকে আল-কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন এবং আমার মায়ের
পিতার নানা, তারা উভয়ে মারা গেছেন; তারা তাবিযের জন্য আল-কুরআনের আয়াত
লিখতেন, অতঃপর তা মানুষকে দিতেন; অতঃপর তারা আমাকে নিয়মিত কুরআন অধ্যয়নের
নির্দেশ দেন এবং আমিও নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করতে থাকি, এমনকি শেষ পর্যন্ত
আমার রব (প্রতিপালক) আমাকে তাওহীদ তথা একত্ববাদের বুঝ দান করলেন; অতঃপর
আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, তারা উভয়ে কিছু অশুদ্ধ (ভুল) কাজ করেছেন;
সুতরাং আমি কি তাদের জন্য দো‘আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারব (و السلام عليكم و رحمة الله و بركاته ) [আপনাদের উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হউক]?
উত্তর: তাবীয
হিসেবে ঝুলিয়ে রাখার জন্য আল-কুরআনের আয়াত লিখা বৈধ নয়; অনুরূপভাবে
বিশুদ্ধ দলিলের ভিত্তিতে হেফাজত (সংরক্ষিত) রাখা, অথবা রোগ নিরাময়, অথবা
বালা-মুসিবত দূর করার আশায় লিখিত কুরআনের আয়াত ঝুলিয়ে রাখাও বৈধ নয়; কিন্তু
তা সত্ত্বেও তোমার জন্য তোমার শিক্ষক ও নানার উদ্দেশ্যে রহমত ও মাগফিরাত
(ক্ষমা) কামানা করে দো‘আ করা বৈধ, যদিও তারা তাদের
জীবদ্দশায় এই কাজ করতেন; কেননা, তা শির্ক নয়, যদিও তা জায়েয (বৈধ) নয়; তবে
যদি তুমি তাদের ব্যাপারে এ বিষয় ছাড়া এমন কোন বিষয় সম্পর্কে জান, যা তাদের
কুফরীকে নিশ্চিত করে, যেমন: মৃত ব্যক্তিকে ডাকা বা তার নিকট প্রার্থনা করা,
জিনের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করা ইত্যাদি, যা বড় প্রকারের শির্কের
অন্তর্ভুক্ত, তাহলে তুমি তাদের জন্য দো‘আ করবে না এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে না।
و صلى الله على نبينا محمد و آله و صحبه و سلم .
(আল্লাহ রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর উপর)।
স্থায়ী পরিষদ, শিক্ষা-গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক
সভাপতি সহ-সভাপতি
আবদুল আযীয ইবন বায আবদুর রাজ্জাক ‘আফীফী
সদস্য সদস্য
আবদুল্লাহ ইবন গুদাইয়ান আবদুল্লাহ ইবন কু‘ঊদ
স্থায়ী পরিষদের ফতোয়া (فتاوى اللجنة الدائمة): ১ / ২০৯, ফতোয়া নং- ৪১৮৪
* * *
বিপজ্জনক শব্দের মাধ্যমে কৌতুক করা
প্রশ্ন: কোনো
এক তরুণী আল-কুরআনের ‘আমপারা মুখস্থ করার কারণে পুরস্কার লাভ করল এবং তার
এক দল বান্ধবীর নিকট গিয়ে হাযির হল; অতঃপর তাদের একজন তাকে বলল: তুমি কি
পুরস্কার লাভ করেছ? তখন সে বলল: দেখানোর জন্য ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং অচিরেই
তা ত্যাগ করব; অতএব এই ধরনের কথার হুকুম (বিধান) কী হবে? আর তার উপর কোন
বিধান প্রযোজ্য হবে, যে ব্যক্তি অনিচ্ছা সত্ত্বেও রসিকতা করে এই কথা বলেছে?
জেনে রাখা প্রয়োজন, সে হলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের একজন ছাত্রী ...?
উত্তর: এই কথা খুবই বিপজ্জনক, কোনো মানুষের জন্য কৌতুক করেও তা উচ্চারণ করা বৈধ নয়; কারণ, এমন কথার মাধ্যমে রসিকতা করা বৈধ নয়। আর
যে এমন কথা বলেছে, তার উপর আবশ্যক হল, সে আল্লাহর নিকট তাওবা করবে, তাঁর
কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং কখনও এই ধরনের নোংরা কথার পুনরাবৃত্তি করবে
না; কারণ, হাদিসের মধ্যে এসেছে; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন:
«إن الرجل ليتكلم بالكلمة من سخط الله لا يلقى لها بالا يهوي بها في النار أبعد مما بين المشرق والمغرب».
“নিশ্চয়
ব্যক্তি আল্লাহর অসন্তুষ্টির কোন কথা বলে ফেলে যার পরিণতি সম্পর্কে সে
সচেতন নয়, অথচ সেই কথার কারণে সে জাহান্নামে এত নীচে পতিত হবে যার দূরত্ব
পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যকার দূরত্বের চেয়ে অনেক বেশি।”
আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মুনাফিকদের ওযর গ্রহণ করেননি, যখন তারা অনর্থক কথাবার্তা উচ্চারণ করেছে এবং বলেছে,
﴿إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلۡعَبُۚ ﴾ [التوبة: ٦٥]
“আমরা তো আলাপ-আলোচনা ও খেল-তামাশা করছিলাম।” -(আত-তাওবা: ৬৫)।
শাইখ আল-ফাওযান
ফতোয়া (فتاوى): ১ / ৬৮
* * *
ছাত্রদেরকে উৎসাহ প্রদানের জন্য হাততালি দেয়া
প্রশ্ন: কোনো
ব্যক্তির জন্য তার বাচ্চার সাথে হাস্য-রসিকতার ছলে হাততালি দেওয়া, অথবা
শ্রেণীকক্ষে ছাত্রদের নিকট থেকে অপর এক ছাত্রকে উৎসাহ প্রদান করার জন্য
হাততালি তলব করা বৈধ হবে কি?
উত্তর: এই
ধরনের হাততালি উচিত নয় এবং তার সর্বনিম্ন অবস্থা হল তা খুবই অপছন্দনীয়;
কারণ, তা হল জাহেলিয়াতের সময়কালের বৈশিষ্ট্যসমূহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য; আর
তাছাড়া হাততালি সালাতের মধ্যে ভুল হওয়ার সময় নারীগণ কর্তৃক সতর্ক সঙ্কেতও
বটে। আর তাওফীক দানের মালিক আল্লাহ;
و صلى الله على نبينا محمد و آله و صحبه و سلم .
(আল্লাহ রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর উপর)।
স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড
ফতোয়া ইসলামীয়া (فتاوى إسلامية): ৪ / ৩৩২
* * *
ঋতুবর্তী ছাত্রীদের কুরআন পাঠ
প্রশ্ন: আমরা
মহিলা কলেজের ছাত্রী, আমাদের পাঠ্যসূচীতে আল-কুরআন থেকে অংশবিশেষ মুখস্থ
করার বিষয় রয়েছে; কিন্তু কখনও কখনও আমাদের মাসিক অবস্থায় পরীক্ষার
নির্দিষ্ট তারিখ হাযির হয়ে যায়, সুতরাং এমতাবস্থায় আমাদের জন্য খাতার মধ্যে
কোন সূরা লেখা এবং তা মুখস্থ করা শুদ্ধ (বৈধ) হবে কিনা?
উত্তর: আলেমদের
দু’টি মতের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ মতে, হায়েয এবং নিফাসকালীন সময়ে নারীদের
জন্য কুরআন পাঠ করা বৈধ; কারণ, এই ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে কোনো দলিল
সাব্যস্ত নেই; কিন্তু আল-কুরআনের মাসহাফ (গ্রন্থ) স্পর্শ করা ব্যতীত পাঠ
করতে হবে; আর উভয় অবস্থায় নারী পবিত্র কাপড় ও অনুরূপ কিছুর সাহায্যে আড়াল
করার মাধ্যমে তাকে ধরতে পারবে; অনুরূপভাবে ঐ খাতার ব্যাপারেও একই বিধান
প্রযোজ্য হবে, প্রয়োজনের সময় যার মধ্যে আল-কুরআন লিপিবদ্ধ করা হয়।
তবে
যার উপর অপবিত্রতাজনিত কারণে গোসল ফরয হয়েছে, এমন অপবিত্র ব্যক্তি গোসল না
করা পর্যন্ত কুরআন পাঠ করবে না; কারণ এই ব্যাপারে বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণিত
হয়েছে, যা নিষেধাজ্ঞার উপর প্রমাণবহ। এই ক্ষেত্রে হায়েয এবং নিফাসকালীন
সময়ের নারীদের উপর অনুমান (কিয়াস) করা বৈধ হবে না; কারণ, অপবিত্রতা জনিত
কাজ থেকে অবসর হওয়ার পর থেকে যে কোনো সময়ে তার জন্য গোসল করে পবিত্র হওয়া
সহজ। আর আল্লাহই তাওফীক দানের মালিক।
শাইখ ইবনু বায
ফতোয়া (الفتاوى): ১ / ৩৯
* * *
ঋতুবর্তী ছাত্রীদের আল-কুরআনের মুসহাফ স্পর্শ করা
প্রশ্ন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
শিক্ষা গ্রহণ ও শিক্ষাদানের দায়িত্ব পালন করার সময়ে ঋতুবর্তী নারীর পক্ষে
কুরআন স্পর্শ করা; বিশেষ করে যখন শিক্ষিকা আমাদেরকে এই কথা বলে বাধ্য করে
যে, এটা হারাম নয়, কেননা আমরা তো শিখছি— এই ক্ষেত্রে বিধান কী হবে?
উত্তর: এই মাসআলাটি দু’টি মাসআলাকে শামিল করে:
প্রথম মাসআলা: অযুবিহীন অবস্থায় মুসহাফ স্পর্শ করা। বিজ্ঞ
আলেমগণ এই ব্যাপারে মতভেদ করেছেন, তাদের কেউ কেউ বলেন: অযুবিহীন অবস্থায়
তা স্পর্শ করা বৈধ; কারণ, কুরআন স্পর্শ করার জন্য পবিত্রতার আবশ্যকতার উপর
বিশুদ্ধ দলিল নেই। আর
এর উপর ভিত্তি করে বলা যায়, ঋতুবর্তী নারীর জন্য কুরআন স্পর্শ করা বৈধ;
কারণ, কুরআন স্পর্শ করার ক্ষেত্রে পবিত্রতা শর্ত নয়। আর অপর আলেমগণ বলেন:
যে ব্যক্তি পবিত্র নয়, তার জন্য কুরআন স্পর্শ করা বৈধ নয়; কেননা নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« لا يمس القرآن إلا طاهر ».
“পবিত্র ব্যক্তি ব্যতীত কেউ আল-কুরআন স্পর্শ করবে না।” আরطاهر শব্দের
অর্থ অযুভঙ্গের মতো অপবিত্রতা থেকে পবিত্র এবং নাপাকির অপবিত্রতা থেকে
পবিত্র; সুতরাং অপবিত্র ব্যক্তির অঙ্গ দ্বারা তা স্পর্শ করবে না।
আর
প্রথম পক্ষের আলেমগণ এই দলিল পেশের জবাবে বলেন যে, তার দ্বারা অযু ভঙ্গের
মত অপবিত্রতা এবং নাপাকি বা অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা বুঝানোর যেমন সম্ভাবনা
রয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে তার দ্বারা শির্ক থেকে পবিত্রতা বুঝানোর সম্ভাবনাও
রয়েছে; কেননা আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদিসে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إن المؤمن لا ينجس ».
“নিশ্চয় মুমিন অপবিত্র হয় না।” তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের প্রসঙ্গে বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡمُشۡرِكُونَ نَجَسٞ ﴾ [التوبة: ٢٨]
“হে ঈমানদারগণ! মুশরিকরা তো অপবিত্র।” - (সূরা আত-তাওবা: ২৮) আর এর উপর ভিত্তি করে বলা যায়, মুসলিম মাত্রই পবিত্র, সুতরাং তার জন্য কুরআন স্পর্শ করা বৈধ; আর অমুসলিম ব্যক্তি অপবিত্র, সুতরাং তার জন্য মুসহাফ স্পর্শ করা বৈধ নয়। আর যখন কোনো শব্দ দু’টি অর্থের সম্ভাবনা রাখবে, তখন প্রমাণ ব্যতীত সম্ভাব্য দু’টি অর্থের একটি বাদ দিয়ে অপরটি আবশ্যক করা যাবে না। আর এ শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধ শব্দ নয় যে এটা অপবিত্র ব্যক্তি ও কাফির উভয়কে অন্তর্ভুক্ত করবে এটা বলা যাবে; বরং এটা যৌথ অর্থবোধক শব্দ, যাতে দু’টি অর্থের সম্ভাবনা সমানভাবে থাকে।
যাই হোক, উত্তম হল পবিত্রাবস্থায় ব্যতীত কেউ মুসহাফ
স্পর্শ করবে না। আর আলহামদুলিল্লাহ্, এই সমস্যার সমাধান সহজ। কেননা যে
নারী ঋতুবর্তী অবস্থায় থাকবে, সে হাতমোজা পরিধান করে কুরআনের পৃষ্ঠা
উল্টাতে পারবে ও তাকে ধরতে পারবে।
দ্বিতীয় মাসআলা: ঋতুবর্তী
নারীর জন্য আল-কুরআন পাঠ করা; আর এই বিষয়টি নিয়েও আলেমদের মাঝে মতবিরোধ
রয়েছে; তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বলেন: তার জন্য আল-কুরআন পাঠ করা বৈধ;
কারণ, সুন্নাহ’র মধ্যে এমন কোন স্পষ্ট সহীহ দলিল নেই, যা তাকে এমতাবস্থায়
কুরআন তিলাওয়াত করা থেকে নিষেধ করে; আর এই মতটি বিশুদ্ধতার খুব কাছাকাছি;
কিন্তু জরুরি প্রয়োজন না হলে এমতাবস্থায় কুরআন পাঠ না করাটাই উত্তম; আর
জরুরি বিষয়টি যেমন: শিক্ষিকা হলে তার ছাত্রীদের শিক্ষা দেয়ার প্রয়োজনে
কুরআন পাঠ করা; অথবা সে ছাত্রী, শিক্ষার জন্য বা পরীক্ষার তা পাঠ করতে হয়;
সুতরাং এতে কোন দোষ হবে না ইনশাআল্লাহ।
আর জবাবটি শেষ করার পূর্বে আমি সতর্ক করতে ইচ্ছুক যে, কিছু মানুষ আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ لَّا يَمَسُّهُۥٓ إِلَّا ٱلۡمُطَهَّرُونَ ٧٩ ﴾ [الواقعة: ٧٩]
“যারা সম্পূর্ণ পবিত্র, তারা ছাড়া অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না” - (সূরা আল-ওয়াকিয়া: ৭৯) –এর দ্বারা প্রমাণ পেশ করে যে, অযুবিহীন ব্যক্তি আল-কুরআন স্পর্শ করতে পারবে না। কিন্তু আয়াতটি তা প্রমাণ করে না এবং এর সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই; কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّهُۥ لَقُرۡءَانٞ كَرِيمٞ ٧٧ فِي كِتَٰبٖ مَّكۡنُونٖ ٧٨ لَّا يَمَسُّهُۥٓ إِلَّا ٱلۡمُطَهَّرُونَ ٧٩ ﴾ [الواقعة: ٧٧، ٧٩]
“নিশ্চয়
এটা মহিমান্বিত কুরআন, যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে; যাদেরকে পবিত্র করা হয়েছে,
তারা ছাড়া অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না” - (সূরা আল-ওয়াকিয়া: ৭৭ - ৭৯)
এর
অর্থ, এই সুরক্ষিত কিতাব পবিত্রকৃত ব্যক্তিগণ ব্যতীত অন্য কেউ স্পর্শ করে
না; আর তিনি কর্তৃবাচক বিশেষ্যের শব্দ ব্যবহার করে বলেন নি: " إِلَّا ٱلۡمُطَهِّرُونَ " (পবিত্রতা অর্জনকারীগণ ব্যতীত)। আর যদি অযুবিহীন অবস্থা থেকে পবিত্রতা অর্জনকারীগণ উদ্দেশ্য হত, তবে তিনি বলতেন: " لَّا يَمَسُّهُۥٓ إِلَّا ٱلۡمُطَهِّرُونَ " (পবিত্রতা অর্জনকারীগণ ব্যতীত অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না)।
আর যেহেতু তিনি বলেছেন: ﴿ ٱلۡمُطَهَّرُونَ ٧٩ ﴾ “যাদেরকে পবিত্র করা হয়েছে”, সেহেতু এটা প্রমাণ করে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল ফেরেশতাগণ। সুতরাং আয়াতের অর্থ হবে: ফেরেশতাগণ ছাড়া অন্য কেউ এই সুরক্ষিত কিতাব স্পর্শ করে না। আর সুরক্ষিত কিতাব হচ্ছে লওহে মাহফুয। আবার কেউ কেউ বলেন: এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল ঐসব সহীফা, যা ফেরেশতাদের হাতে বিদ্যমান আছে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ كَلَّآ
إِنَّهَا تَذۡكِرَةٞ ١١ فَمَن شَآءَ ذَكَرَهُۥ ١٢ فِي صُحُفٖ
مُّكَرَّمَةٖ ١٣ مَّرۡفُوعَةٖ مُّطَهَّرَةِۢ ١٤ بِأَيۡدِي سَفَرَةٖ ١٥
كِرَامِۢ بَرَرَةٖ ١٦ ﴾
[عبس:
١١، ١٦]
“কখনো নয়, এটা তো উপদেশ বাণী, কাজেই যে ইচ্ছে করবে সে এটা স্মরণ রাখবে, এটা আছে মর্যাদাসম্পন্ন লিপিসমূহে, যা উন্নত, পবিত্র; লেখক বা দূতদের হাতে, (যারা) মহাসম্মানিত ও নেককার।” - (সূরা ‘আবাসা: ১১ - ১৬)।
শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন
ফতোয়ায়ে মানারুল ইসলাম (فتاوى منار الإسلام ): ১ / ১১৫
* * *
ঋতুবর্তী ছাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক নামায ঘরে প্রবেশ করা
প্রশ্ন: মাদরাসার
মধ্যে শুধু যোহরের সালাত আদায়ের জন্য একটি মুসাল্লা (নামায ঘর) তৈরি করা
আছে, যোহরের সালাতের সময়ে মেয়েদেরকে ঐ ঘরে প্রবেশ করতে বাধ্য করা হয়, অথচ
তাদের কেউ কেউ মাসিক অভ্যাসের শিকার; সুতরাং ঐ মুসাল্লা বা নামায ঘরের জন্য
কি মাসজিদের বিধান প্রযোজ্য হবে; অর্থাৎ তার জন্য কি তাকে বসা জায়েয (বৈধ)
হবে? আর এই অবস্থায় তারা যখন শ্রেণীকক্ষে বসবে, তখন তারা হয়তো অনৈতিক বিষয়
নিয়ে আলাপ-আলোচনা করবে, সুতরাং তাদেরকে এই মুসাল্লা বা নামায ঘরের মধ্যে
প্রবেশ করতে বাধ্য করা যাবে কি?
উত্তর: মাদরাসার
(বিদ্যালয়ের) মধ্যকার মুসাল্লা (নামায ঘর) মাসজিদের বিধানের আওতায় আসবে
না; বরং তা হল সালাতের জন্য একটি নির্ধারিত স্থান; আর এমন প্রত্যেক স্থান,
যাতে সালাত আদায় করা হয়, তাকে এমন মাসজিদ বলে বিবেচনা করা যাবে না, যার
জন্য প্রকৃত মাসজিদসমূহের বিধান প্রযোজ্য হবে; আর মাসজিদ বলা হয় ঐ ঘরকে, যা
সার্বজনীনভাবে এবং কাঠামোগত ও পরিষ্কারভাবে শুধু সালাতের জন্য তৈরি করা
হয়; আর কোন জায়গায় সালাত পড়া হয়, শুধু এই কারণে তাকে মাসজিদ বলে গণ্য করা
যায় না; আর এর উপর ভিত্তি করে ঋতুবর্তী নারীর জন্য মাদরাসার (বিদ্যালয়ের)
মধ্যকার মুসাল্লা বা নামায ঘরে প্রবেশ করা এবং তাতে অবস্থান করা বৈধ হবে।
শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন
শিক্ষক ও ছাত্রদের জন্য ফতোয়া (فتاوى للمدرسين و الطلاب ): পৃ. ২৪
* * *
অপবিত্র অবস্থায় শিক্ষক ও ছাত্রদের আল-কুরআনের পাণ্ডুলিপি স্পর্শ করা
প্রশ্ন: যেই
শিক্ষক তার ছাত্রদেরকে সরাসরি আল-কুরআনের মুসহাফ থেকে শিক্ষা দান করেন,
তার জন্য কি পবিত্রতা আবশ্যক, নাকি তার জন্য পবিত্রতা শর্ত নয়?
উত্তর: এই
ক্ষেত্রে শিক্ষক ও অন্যান্য ব্যক্তি সকলেই সমান, তার জন্য অধিকাংশ আলেমের
মতে তার জন্য অপবিত্র অবস্থায় আল-কুরআনের পাণ্ডুলিপি স্পর্শ করা বৈধ নয়,
তাদের মধ্যে চার ইমাম র.ও রয়েছেন; কারণ, ‘আমর ইবন হাযম রা. বর্ণিত হাদিসে
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« لا يمس القرآن إلا طاهر ».
“পবিত্র
ব্যক্তি ব্যতীত কেউ আল-কুরআন স্পর্শ করবে না।” আর এটি একটি উত্তম সনদে
বর্ণিত হাদিস, যা ইমাম আবূ দাউদ র. ও অন্যান্য বর্ণনাকারী মুত্তাসিল
(সংযুক্ত) ও মুরসাল (কর্তিত) সনদে বর্ণনা করেছেন। আর তার কয়েকটি
সনদ রয়েছে, যা তার সনদের বিশুদ্ধতা ও ধারাবাহিকতা প্রমাণ করে। আর নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ এই ফতোয়াই দিয়েছেন; আর আল্লাহই
তাওফীক দানের মালিক।
শাইখ ইবনু বায
মাজমু‘উ ফতোয়া (مجموع فتاوى ): ২ / ৯০
* * *
শিশুদের আল-কুরআনের পাণ্ডুলিপি স্পর্শ করা
প্রশ্ন: আমাদের
একটি মাদরাসা আছে, যেখানে শিশুরা আল-কুরআন হিফয (মুখস্থ) করে, কিন্তু
তাদের পক্ষে সার্বক্ষণিক পবিত্র অবস্থায় থাক সম্ভব হয় না; সুতরাং শিশুদের
জন্য আল-কুরআনের পাণ্ডুলিপি স্পর্শ করার জন্য অযু আবশ্যক হবে কি?
উত্তর: তাদের
অভিভাবকের জন্য আবশ্যকীয় কর্তব্য হল তাদেরকে এই ব্যাপারে নির্দেশ প্রদান
করা এবং অনুরূপভাবে যেই শিক্ষক তাদেরকে শিক্ষা দেন, তার জন্যও আবশ্যক হল
তাদেরকে এই ব্যাপারে নির্দেশ প্রদান করা, যখন তাদের বয়স সাত বছর বা তার
চেয়ে বেশি হয়; কারণ, পবিত্র ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারও জন্য আল-কুরআনের
পাণ্ডুলিপি স্পর্শ করা বৈধ নয়, কেননা এই ব্যাপারে শরী‘য়তের দলিল বর্ণিত
আছে; আর যার বয়স সাত বছরের নীচে, সে তো আল-কুরআনের পাণ্ডুলিপি স্পর্শ করার
যোগ্য বলেই বিবেচিত নয়, যদিও সে অযু করুক না কেন; কারণ, হিতাহিত জ্ঞান না
থাকার কারণে তার অযু হয় না।
শাইখ ইবনু বায
মাজমু‘উ ফতোয়া (مجموع فتاوى ): ২ / ৯২
* * *
শিক্ষা বা অধ্যয়নের অজুহাতে সালাত ত্যাগ করা
প্রশ্ন: আমি
কিভাবে কাযা (সময় থেকে বিলম্বিত) সালাত আদায় করব, যেহেতু আমি পড়ালেখার
কারণে অনেক সময় সালাত আদায়ে বিলম্ব করি? যেমনটি আপনারা জানেন যে, অমুসলিম
রাষ্ট্রে সালাতের সময় পাওয়া যায় না; আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম পুরস্কার দান
করুন?
উত্তর: আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
প্রত্যেক জায়গার জন্য সালাতের সময়সমূহ সুস্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করেছেন; আর
ছাত্রদের জন্য আবশ্যক হল, তারা অন্যান্য মুসলিমদের মত সালাতকে তার সময়মত
আদায় করবে; আর পড়ালেখার অজুহাত দিয়ে সালাতকে তার নির্ধারিত সময় থেকে
বিলম্বিত করা বৈধ নয়; বরং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার বাণীর যথাযথ আমল
করে সালাতকে যথাসময়ে আদায় করা ওয়াজিব (আবশ্যক); তিনি বলেছেন:
﴿حَٰفِظُواْ عَلَى ٱلصَّلَوَٰتِ وَٱلصَّلَوٰةِ ٱلۡوُسۡطَىٰ وَقُومُواْ لِلَّهِ قَٰنِتِينَ٢٣٨﴾[البقرة:٢٣٨]
“তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হবে, বিশেষত মধ্যবর্তী সালাতের এবং আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে তোমরা দাঁড়াবে বিনীতভাবে।” - (সূরা আল-বাকারা: ২৩৮); আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ كَانَتۡ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ كِتَٰبٗا مَّوۡقُوتٗا ١٠٣ ﴾ [النساء: ١٠٣]
“নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।” - (সূরা আন-নিসা: ১০৩); আর তাতে যথাযথ আমল হবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদিসসমূহের প্রতি, যাতে তিনি সালাতের সকল সময়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা করেছেন।
আর
ছাত্রদের মধ্য থেকে যারা জানে না তারা যারা জানে তাদের নিকট প্রশ্ন করবে,
আরও প্রশ্ন করবে তার ঐসব বন্ধুবান্ধবকে, যারা সালাতের সময়সমূহ জানে ও বুঝে,
এমনকি যত্নসহকারে সময়মত সালাত আদায় করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধভাবে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন:
«العهد الذي بيننا وبينهم الصلاة فمن تركها فقد كفر ». ( أخرجه الإمام أحمد و اهل السنن الأربعة).
“আমাদের
ও তাদের মাঝে যে প্রতিশ্রুতি বা চুক্তি রয়েছে, তা হল সালাত; সুতরাং যে
ব্যক্তি তা পরিত্যাগ করে, সে কুফরী করল বা কাফির হয়ে গেল।” ইমাম আহমদ,
তিরমিযী, আবূ দাউদ, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ প্রমূখ বিশুদ্ধ সনদে হাদিসখানা
বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম মুসলিম র. তার সহীহ গ্রন্থে জাবের ইবন আবদিল্লাহ
রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
«إِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكَ الصَّلاَةِ ».( أخرجه مسلم).
“বান্দা এবং শির্ক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত ত্যাগ করা।” – (মুসলিম, হাদিস নং- ২৫৬); আর এই ব্যাপারে আরও অনেক হাদিস রয়েছে। আল্লাহ সকলের অবস্থাকে সংশোধন করে দিন।
শাইখ ইবনু বায
মাজমু‘উ ফতোয়া (مجموع فتاوى ): ২ / ১৪১
* * *
প্রবাসী ছাত্রের জুম‘আর সালাত ত্যাগ করা
প্রশ্ন: প্রশ্নকারী
বলে যে, সে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী ছাত্র, তাদের কাছে মাসজিদ নেই এবং সে
দুই বছর ধরে জুম‘আর সালাত কি জিনিস জানে না; সুতরাং তার হুকুম কী হবে?
উত্তর: লেখাপড়ার
উদ্দেশ্যে কোন দেশে প্রেরিত ছাত্রের জন্য বিধান স্থায়ীভাবে বসবাসকারী
ব্যক্তির বিধানের মত, তার উপর জুম‘আর সালাত আবশ্যক হবে, যখন সে এক দল
স্থায়ী বাসিন্দাকে পাবে; সুতরাং যখন তোমরা সংখ্যায় তিনজন বা তার অধিক হও,
তখন তোমরা জুম‘আর সালাত আদায় কর ঘরে, অথবা বাগানে, অথবা এগুলো ভিন্ন অন্য
কোনো জায়গায়; তোমাদের কেউ আযান দিবে এবং তোমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা (ভাষণ)
প্রদান ও তোমাদের ইমামতি করবে তোমাদের মাঝে যিনি সবচেয়ে ভাল তিলাওয়াত করতে
পারে; কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا
ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَوٰةِ مِن يَوۡمِ ٱلۡجُمُعَةِ
فَٱسۡعَوۡاْ إِلَىٰ ذِكۡرِ ٱللَّهِ وَذَرُواْ ٱلۡبَيۡعَۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ
لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٩ ﴾
[الجمعة:
٩]
হে ঈমানদারগণ! জুমু‘আর দিনে যখন সালাতের জন্য ডাকা হয়, তখন
তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং কেনা-বেচা ত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য
সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে। - (সূরা আল-জুম‘আ: ৯); তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুম‘আর সালাতের ক্ষেত্রে মুসল্লির সংখ্যা কত হতে হবে,
এমন কোন নির্দিষ্ট সংখ্যার শর্ত করেন নি; কিন্তু তাঁর সুন্নাহ ও আলেমদের
ইজমা থেকে জানা যায় যে, জামা‘আত ছাড়া জুম‘আর সালাত আদায় করা যায় না; আর
জুম‘আর সালাত আদায় করা দুইয়ের অধিক স্থায়ী বাসিন্দা এবং সাধারণ মুসলিমদের
জন্য প্রযোজ্য।
স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড
ফতোয়ায়ে ইসলামীয়া (فتاوى إسلامية): ১ / ৪১৬
(ঈষৎ পরিবর্তিত)
* * *
অধ্যয়নের সময় পর্যন্ত ফজরের সালাতকে বিলম্বিত করা
প্রশ্ন: আমার আগ্রহ হল, আমি সালাত ত্যাগ করব না; তবে আমি বিলম্বে ঘুমাই এবং ঘড়িতে সতর্ক সঙ্কেত (Alarm)
বাজানোর সময় নির্ধারণ করি সকাল সাত ঘটিকায় (সূর্য উদয়ের পর); অতঃপর সালাত
আদায় করি এবং ক্লাসে গিয়ে উপস্থিত হই; আর বৃহস্পতিবার ও জুমা‘বারে বিলম্ব
করে ঘুম থেকে জাগ্রত হই, অর্থাৎ যোহরের সালাতের একঘন্টা বা দুই ঘন্টা
পূর্বে জাগ্রত হই এবং ঘুম থেকে জাগার পরপরই ফযরের সালাত আদায় করি;
যেমনিভাবে আমি অধিকাংশ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে আমার নিজ কক্ষে
সালাত আদায় করি এবং মাসজিদে যাই না, যা আমার থেকে বেশি দূরে নয়; আমার এক
বন্ধু আমাকে সতর্ক করে বলেছে যে, এটা জায়েয (বৈধ) নয়। সুতরাং উল্লেখিত
বিষয়ে মাননীয় পিতা-গুরুর নিকট থেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা কামনা করছি। আল্লাহ
আপনাদেরকে উত্তম পুরস্কার দান করুন?
উত্তর: যে
ব্যক্তি ইচ্ছা করে সূর্য উদয়ের পরে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার জন্য ঘড়ি
নিয়ন্ত্রণ করে এবং ফযরের ফরয সালাত তার সময়মত আদায় করে না, তবে সে ইচ্ছা
করেই তা ত্যাগ করে; আর এই কারণে সে একদল আলেমের মতে কাফির হয়ে যায়— আমরা
আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই- ইচ্ছাপূর্বক তার সালাত ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত
গ্রহণের জন্য; অনুরূপভাবে একই বিধান প্রযোজ্য হবে তার জন্য, যখন সে যোহরের
পূর্ব পর্যন্ত ফযরের সালাতকে বিলম্বিত করার ইচ্ছা করবে, অতঃপর যোহরের
সালাতের পূর্বে তা আদায় করবে।
আর
যে ব্যক্তির উপর ঘুম প্রভাব বিস্তার করেছে এবং শেষ পর্যন্ত সালাতের সময়
অতিবাহিত হয়ে যায়, তবে এতে তার ক্ষতি হবে না এবং এমতাবস্থায় তার উপর আবশ্যক
হল, যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হবে, তখন সালাত আদায় করে নেবে; আর এতে তার কোনো
পাপ হবে না, যখন তার উপর ঘুম প্রভাব বিস্তার করে, অথবা ভুলক্রমে সালাত
ত্যাগ করে।
আর যেই মানুষ সালাতকে বিলম্বিত করে নির্ধারিত সময়ের পরে আদায় করার ইচ্ছা করে অথবা ঘড়িতে সতর্ক সঙ্কেত (Alarm)
দিয়ে রাখে (সালাতের) সময়ের পরে জেগে উঠার জন্য, শেষ পর্যন্ত সে সময়মত জেগে
উঠতে পারল না, তবে এই কাজটি হবে ইচ্ছা করে সালাত ত্যাগ করার শামিল এবং সকল
আলেমের মতে সে বড় ধরনের অন্যায় কাজ করেছে; কিন্তু সে কাফির হবে কি, হবে
না? এই ব্যাপারে আলেমদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে; যখন সে তার (সালাতের)
আবশ্যকতাকে অস্বীকার করবে না, তখন অধিকাংশ আলেমের মতে এই কারণে সে কাফির
হবে না; আর একদল আলেমের মতে এই কারণে তার পক্ষ থেকে বড় ধরনের কুফরী হবে; আর
এই মতটি সাহাবা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম আজমা‘ঈনের পক্ষ থেকে উদ্ধৃত।
আর
সালাতের জামা‘আত ত্যাগ করাটাও অন্যায় এবং অবৈধ; আবশ্যক (ওয়াজিব) হল
মাসজিদে সালাত আদায় করা; কেননা আবদুল্লাহ ইবন উম্মে মাকতুম রা. প্রসঙ্গে
বর্ণিত হাদিসে এসেছে, আর তিনি ছিলেন অন্ধ সাহাবী; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে তিনি বললেন:
«يَا
رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُ لَيْسَ لِى قَائِدٌ يَقُودُنِى إِلَى
الْمَسْجِدِ. فَسَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ يُرَخِّصَ
لَهُ فَيُصَلِّىَ فِى بَيْتِهِ فَرَخَّصَ لَهُ فَلَمَّا وَلَّى دَعَاهُ
فَقَالَ «هَلْ تَسْمَعُ النِّدَاءَ بِالصَّلاَةِ ». فَقَالَ نَعَمْ. قَالَ «
فَأَجِبْ » . ( أخرجه مسلم).
“হে
আল্লাহর রাসূল! আমার এমন কোন সহায়তাকারী নেই, যে আমাকে সহায়তা করে মাসজিদে
নিয়ে আসবে; অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট
(মাসজিদে হাযির হওয়া থেকে ছুটি চেয়ে) অনুমতি প্রার্থনা করলেন, যাতে তিনি
(মাসজিদে উপস্থিত না হয়ে) তাঁর ঘরের মধ্যে সালাত আদায় করতে পারেন; তখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে অনুমতি প্রদান করেন।
অতঃপর যখন তিনি ফিরে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি তাঁকে ডাকলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন:
তুমি কি আযানের ধ্বনি শুনতে পাও? জবাবে তিনি বললেন: হ্যাঁ, শুনতে পাই; তখন
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাহলে তার জবাব দাও, অর্থাৎ
মাসজিদে উপস্থিত হও।” –(মুসলিম, হাদিস নং- ১৫১৮);
এই হল অন্ধ ব্যক্তি, যাকে মাসজিদে পৌঁছিয়ে দেয়ার মত কোনো সহায়তাকারী নেই;
তা সত্ত্বেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাসজিদে গিয়ে সালাত আদায়
করতে নির্দেশ দিয়েছেন; সুতরাং সুস্থ দৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি তো আরও
উত্তমভাবেই এই নির্দেশের আওতায় আসবে।
আর
উদ্দেশ্য হল, তিনি মুমিনের উপর মাসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করাকে বাধ্যতামূলক
করবেন; সুতরাং তার জন্য এই ক্ষেত্রে শৈথিল্য প্রদর্শন করা এবং মাসজিদের
নিকটবর্তী ঘরের মধ্যে সালাত আদায় করা বৈধ নয়। আর আল্লাহই তাওফীক দানের
মালিক।
শাইখ ইবনু বায
মাজমু‘উ ফতোয়া (مجموع فتاوى ): ২ / ১৮৫
* * *
আবাসিক ছাত্রদের জামা‘আতে সালাত আদায় করা থেকে পিছিয়ে থাকা
প্রশ্ন: আমরা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবৃন্দ যোহরের সালাতকে বিলম্বে আদায় করি, তবে আমরা
নিয়মিত জামা‘আতসহ সালাত আদায় করি; কিন্তু যোহরের সালাতকে আমরা নিয়মিতভাবে
মূল (প্রথম) জামা‘আতের পরে আদায় করি; সুতরাং নিয়মিতভাবে এটা করা জায়েয
(বৈধ) কিনা?
উত্তর: প্রকৃত
মাসজিদে এই ধরনের জামা‘আতে সালাত আদায়ের পক্ষে আমি মত দেই না; কারণ, এর
অর্থ হল নিয়মিতভাবে তোমাদের কর্তৃক একটি জামা‘আতের পর অপর আরেকটি জামা‘আত
কায়েম করা; বরং তোমরা তোমাদের আবাসিক হলে এক সঙ্গে সালাত আদায় কর এবং
মাসজিদকে তার মুসল্লিদের জন্য একাকি সালাত আদায়ের সুযোগ করে দাও।
শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন
লিকাউল বাবিল মাফতুহ (لقاء الباب المفتوح): ৮ / ২৯
* * *
দেশের বাইরে প্রেরিত ছাত্রের কসর ও দুই সালাত একত্রে আদায় করা
প্রশ্ন: আমার জন্য বৃটেনে পড়ালেখাকালীন সময়ে কসর[2] ও দুই সালাত একত্রে আদায় করা বৈধ হবে কিনা এবং এই অবস্থায় রমযান মাসে কসর ও দুই সালাত একত্রে আদায় করা বৈধ হবে কিনা?
উত্তর: মুসাফির
তথা পর্যটকের জন্য দুই সালাত একত্রে আদায় করা বৈধ হবে, যখন সে রাস্তায় পথ
চলতে থাকবে এবং প্রত্যেক সালাতের জন্য প্রত্যেক সময়ে অবতরণ করাটা তার উপর
কষ্টকর হবে; সুতরাং সে দুই সালাতের যে কোনো একটি সময়ে অবতরণ করবে এবং একই
সময়ে দুই সালাত আদায় করবে; হয় প্রথমটির ওয়াক্তে অথবা দ্বিতীয়টির সময়ে; আর
যদি সে মুকীম (অবস্থানকারী) হিসেবে অবতরণ করে, তবে সে দুই সালাত একত্রে
আদায় করবে না, বরং প্রত্যেক সালাত তার সময়মত আদায় করবে; হয় পরিপূর্ণভাবে
আদায় করবে, নতুবা কসর করবে, যদি তা তার জন্য বৈধ হয়; আর কসর তো শুধু ঐ
মুসাফিরের জন্য বৈধ, যে সফরের প্রস্তুতির অবস্থায় বহাল থাকবে, যদিও সে
প্রয়োজনের কারণে মরুভূমিতে অবতরণ করে এবং যদিও সে শহরের এক প্রান্তে কোন
তাঁবুতে অবতরণ করে তার কোনো দ্রুত প্রয়োজন পূরণের জন্য অপেক্ষা করে, অতঃপর
আবার ভ্রমণ করে।
কিন্তু
যদি সে শহরের মাঝে অবতরণ করে, সফরকে সংক্ষেপ করে এবং দীর্ঘ সময়কাল পর্যন্ত
অবস্থান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যদিও সে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী নয়,
কিন্তু সে একটি কক্ষে বা প্রশস্ত বাড়িতে বসবাস করে এবং তার নিকট প্রয়োজনীয়
সকল বিষয় পরিপূর্ণ ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণভাবে বিদ্যমান আছে, তবে তার জন্য কসর
করার অধিকার নেই; আর এই অবস্থায় সে রমযান মাসের সাওম (রোযা) ভঙ্গ করবে না,
যেহেতু তার উপর সফর অবস্থার কথাটি প্রযোজ্য নয় এবং তার মাঝে ও শহরবাসীর
মাঝে কোন পার্থক্য নেই; আর সালাত পূর্ণ করলে এবং সাওম (রোযা) ভঙ্গ না করলে
তার কোন কষ্ট বা সমস্যা নেই।
শাইখ ইবনু জিবরীন
ফতোয়া ইসলামীয়া (فتاوى إسلامية): ১ / ৪০৭
* * *
অভ্যন্তরীন বিভাগের ছাত্রীগণ কর্তৃক সালাতকে কসর করা
প্রশ্ন: আমি
একজন ছাত্রী, আমি আমার পরিবার-পরিজন থেকে দূরে অভ্যন্তরীন বিভাগে বাস করি;
আর আমি যে জায়গায় পড়ালেখা করি, তা আমার পরিবার-পরিজন থেকে প্রায় একশত
পঞ্চাশ কি. মি. দূরে অবস্থিত এবং আমি প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ও
জুমা‘বারে তাদের কাছে আসি; এমতাবস্থায় যেই দুই দিন আমি আমার পরিবার-পরিজনের
নিকট অবস্থান করব, সেই দুই দিন এবং যেই পাঁচ দিন অভ্যন্তরীন বিভাগে
অবস্থান করব, সেই পাঁচ দিন কি আমি আমার সালাতকে কসর করে আদায় করব, নাকি
পরিপূর্ণ করে আদায় করব? আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম পুরস্কার দান করুন?
উত্তর: অভ্যন্তরীন
বিভাগে পাঁচ দিন এবং পরিবার-পরিজনের নিকট দুই দিন তোমার অবস্থানকালে তোমার
উপর সালাতকে পরিপূর্ণ করে আদায় করা আবশ্যক; আর তোমার পড়ালেখার শহর এবং
পরিবার-পরিজনের শহরের দূরত্বের মাঝখানের রাস্তায় তোমার জন্য চার
রাকাত বিশিষ্ট ফরয সালাতকে কসর করে আদায় করা বৈধ এবং তখন তোমার জন্য আরও
বৈধ হল দুই ওয়াক্তের সালাতকে তাদের এক ওয়াক্তে আগে বা পরে একত্রিত করে আদায়
করা; সুতরাং তুমি (সফরকালীন সময়ে) রাস্তায় মুসাফিরের বিধান গ্রহণ করবে এবং বাসায় অবস্থানকালীন সময়ে মুকীম তথা স্থায়ী বাসিন্দার বিধান গ্রহণ করবে।
শাইখ আল-ফাওযান
আল-মুন্তাকা (المنتقى): ১ / ১৭
* * *
দেশের বাইরে প্রেরিত ছাত্র কর্তৃক সালাতসমূহ একত্র করে আদায় করা
প্রশ্ন: কোনো
কোনো সময় আমি আসরের সালাতকে মাগরিবের সালাতের সাথে আদায় করি এবং অধিকাংশ
সময়ে এই রকম হয়; আর এর কারণ হল আমি পররাষ্ট্র মিশনে বৃটেনে অধ্যয়ন করি এবং
আমি এমন এক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করি, যাতে অযু করার মত জায়গা নেই, আর
সালাত আদায় করার জায়গাও নেই; সুতরাং আমার জন্য আসরের সালাতকে মাগরিবের
সালাতের সাথে আদায় করা জায়েয (বৈধ) হবে কি? অথবা আমার জন্য আসরের সালাতকে
তার নির্ধারিত সময় থেকে প্রায় দেড়ঘণ্টা বিলম্ব করে আদায় করা জায়েয (বৈধ)
হবে কি?
উত্তর: অবিরাম
বৃষ্টি, লাগাতার ভ্রমণ, প্রচণ্ড অসুস্থতা ইত্যাদির মত ওযরের কারণে দুই
সালাত একত্রিত করে আদায় করা বৈধ; আর বিনা ওযরে দুই সালাত একত্রিত করে আদায়
করা বৈধ নয়; তাছাড়া (ওযরের কারণে) শুধু যোহর ও আসরের সালাতকে তাদের উভয়
ওয়াক্তের যে কোন একটি ওয়াক্তের মধ্যে এগিয়ে বা পিছিয়ে এক সাথে আদায় করবে;
আর অনুরূপভাবে মাগরিব ও এশার সালাতকে তাদের উভয় ওয়াক্তের যে কোন একটি
ওয়াক্তের মধ্যে এক সাথে আদায় করবে। আর কোন প্রকার ওযর ছাড়া সালাতকে তার
নির্ধারিত সময় থেকে বিলম্বিত করে আদায় করা বৈধ নয়। সুতরাং আসরের সালাতকে
দ্রুততার সাথে আদায় করাটাই বাঞ্চনীয়; কারণ, হাদিসের মধ্যে বর্ণিত আছে:
নিশ্চয়ই যে ব্যক্তির আসরের সালাত ছুটে গেল, সে যেন তার পরিবার-পরিজন ও
ধন-সম্পদ হারাল। আর প্রশ্নকারী যখন উল্লেখ করেছে তার কর্মক্ষেত্রে অযু ও
সালাত আদায় করার মত কোন জায়গা পাওয়া যায় না, তখন তার উপর আবশ্যক হল যখনই সে
অবসর হবে এবং ওযর বা সীমাবদ্ধতা দূর হয়ে যাবে, তখনই সালাত আদায় করে নেয়া
এবং তার কর্তব্য হল দ্রুততার সাথে আসরের সালাতকে সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বেই
আদায় করে নেয়া; আর এর পূর্বে যখনই সম্ভব হবে, তখনই তা দ্রুত আদায় করে
নেয়া। আর আল্লাহই হলেন তাওফীক দাতা।
শাইখ ইবনু জিবরীন
ফতোয়ায়ে ইসলামীয়া (فتاوى إسلامية): ১ / ৪০৬
* * *
অধ্যয়নের অজুহাতে দুই সালাত একত্র করে আদায় করা
প্রশ্ন: আমাদের
জন্য দুই সালাত একত্র করে আদায় করা বৈধ হবে কিনা, যখন আমরা পড়ালেখার জন্য
বরাদ্দ করা সময়ের ভেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে শহরে এমনভাবে বসবাস করি, তার থেকে বের
হওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না, অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মদীনাতে কোন প্রকার সফর, বৃষ্টি ও অসুস্থতা ছাড়াই দুই সালাত
একত্রে আদায় করছেন? নাকি আমাদের উপর ক্লাশ পরিত্যাগ করা এবং সালাত আদায়ের
উদ্দেশ্যে বেরিয়ে আসা আবশ্যক?
উত্তর: তোমার
উপর আবশ্যক হল সময়মত পাঁচবার ফরয সালাতসমূহ আদায় করা; আর অধ্যয়নের বিষয়টি
তোমার এমন ওযর হিসেবে বিবেচিত হবে না, যার কারণে তোমাকে যে কোন সালাতকে তার
ঐ সময় থেকে বিলম্বিত করে আদায় করার সুযোগ দেয়া যেতে পারে, যা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। আর
যে হাদিসটির প্রতি আমি ইঙ্গিত করেছি, তা হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাস্তব আমল, যা তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে
ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে; সুতরাং তোমার উপর আবশ্যকীয় কর্তব্য হল, তুমি তোমার
পড়ালেখা ও সময়মত সালাত আদায় করার মাঝে সমন্বয় সাধন করবে।
স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড
ফতোয়ায়ে ইসলামীয়া (فتاوى إسلامية): ১ / ৪০১
* * *
মাদরাসার মধ্যে ছাত্রগণ কর্তৃক তিলাওয়াতের সিজদা আদায় করা
প্রশ্ন: যখন
ছাত্রগণ মাদরাসায় এমন কোন আয়াত পাঠ করে, যাতে সিজদা রয়েছে, কিন্তু তারা
সিজদা আদায় করে নি; ফলে এতে কোন পাপ হবে কিনা? আর তাদের পক্ষে সিজদা আদায়
করা উত্তম, নাকি সিজদা আদায় না করা উত্তম?
উত্তর: এতে
কোন পাপ হবে না; কারণ, তিলাওয়াতের সিজদা আবশ্যক (ওয়াজিব) বিষয় নয়; বরং তা
হচ্ছে সুন্নাত, কোনো ব্যক্তি যদি তা আদায় করে, তবে তা উত্তম হবে; আর যদি তা
আদায় না করে, তবে তাতে গুনাহ হবে না; আর ছাত্রগণ কর্তৃক তিলাওয়াতে সিজদা
আদায়ের বিষয়টিতে অনেক সময় বিশৃঙ্খলা বা লেখাপড়ার ব্যাঘাত ঘটতে পারে; আবার
অনুরূপভাবে তাতে ক্রীড়া-কৌতুক ও হাসি-তামাশা হতে পারে; সুতারাং তাদের জন্য
উত্তম হল এটা না করা; তবে হ্যাঁ, ছাত্ররা যদি মাসজিদে থাকে এবং তারা যদি
ভদ্র ও সুশৃঙ্খল হয়, আর পাঠক সিজদার আয়াত পাঠ করে, অতঃপর সে নিজে সিজদা করে
এবং তারাও (ছাত্ররাও) তার সাথে সিজদা করে, তাহলে এটা উত্তম হয়। আর আল্লাহই
সবচেয়ে বেশি ভাল জানেন।
শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন
ফতোয়ায়ে মানারুল ইসলাম (فتاوى منار الإسلام ): ১ / ২০৪
* * *
পরীক্ষার কারণে রমযান মাসের সাওম পালন না করা
প্রশ্ন: যখন
রমযান মাসে মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, তখন কি ছাত্রদের
জন্য সাওম (রোযা) ভঙ্গ করা বৈধ হবে, যাতে তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে
সক্ষম হয়?
উত্তর: পরীক্ষার
অজুহাতে কোন প্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রের জন্য রমযান মাসের সাওম ভঙ্গ করা বৈধ হবে
না; কারণ, এটা কোন শর‘য়ী ওযর নয়; বরং তার উপর আবশ্যক হল সাওম পালন করা এবং
তার উপর দিনের বেলায় অধ্যয়নের কাজটি কষ্টকর হলে, রাতের বেলায় অধ্যয়ন করা;
আর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের জন্য উচিত হবে রমযান মাসকে বাদ দিয়ে
পরীক্ষার সময়সূচী তৈরি করে ছাত্রদের প্রতি কোমল আচরণ করা, যাতে সাওমের
কল্যাণ ও পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অবসর সুযোগ গ্রহণের মাধ্যমে উভয় প্রকার
স্বার্থ সুরক্ষিত হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
বিশুদ্ধভাবে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন:
«
اللَّهُمَّ مَنْ وَلِىَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِى شَيْئًا فَشَقَّ عَلَيْهِمْ
فَاشْقُقْ عَلَيْهِ وَمَنْ وَلِىَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِى شَيْئًا فَرَفَقَ
بِهِمْ فَارْفُقْ بِهِ ». ( أخرجه مسلم في صحيحه).
“হে
আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোন বিষয়ে শাসনক্ষমতার অধিকারী হল, অতঃপর
সে তাদের উপর কষ্টকর বোঝা চাপিয়ে দিল, তুমি তার উপর কষ্টের বোঝা চাপিয়ে
দাও; আর যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোন বিষয়ে শাসনক্ষমতার অধিকারী হল, অতঃপর
সে তাদের প্রতি কোমল আচরণ করল, তুমিও তার প্রতি কোমল আচরণ কর।” - (ইমাম
মুসলিম র. তার সহীহ গ্রন্থে হাদিসখানা বর্ণনা করেছেন, হাদিস নং- ৪৮২৬)।
সুতরাং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বা দায়িত্বশীলগণের প্রতি আমার
পরামর্শ হল, তারা যেন ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি কোমল আচরণ করেন এবং রমযান
মাসের মধ্যে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ না করে তার পূর্বে বা পরে
তারিখ নির্ধারণ করেন। আমরা সকলের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাওফীক কামনা
করছি।
শাইখ ইবনু বায
ফতোয়া (الفتاوى): ২ / ১৬২
(ঈষৎ পরিবর্তিত)
* * *
পরীক্ষার কারণে রমযান মাসে সাওম পালন না করার কাফফারা
প্রশ্ন: আমি
একজন তরুণী, পরিস্থিতি আমাকে বাধ্য করেছে ইচ্ছা করে রমযান মাসের ছয়টি সাওম
ভঙ্গ করতে; আর তার কারণ ছিল পরীক্ষার তারিখ; কেননা পরীক্ষা শুরু হয়েছে
রমযান মাসে ... আর পরীক্ষার বিষয়গুলো ছিল খুবই কঠিন ... আর আমি যদি এই
দিনগুলোতে সাওম ভঙ্গ না করতাম, তবে আমার পক্ষে এই কঠিন বিষয়গুলো অধ্যয়ন করা
সম্ভব হয়ে উঠত না; আমি জানতে চাচ্ছি যে, আমি কী করব, যাতে আল্লাহ আমাকে
ক্ষমা করে দেন, আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম পুরস্কার দান করুন?
উত্তর: তোমার
কর্তব্য হল এর থেকে তাওবা করা এবং ঐ দিনগুলোর সাওমের কাযা আদায় করা, যেই
দিনগুলোর সাওম তুমি ভঙ্গ করেছ; আর যে তাওবা করে, আল্লাহ তার প্রতি করুণার
দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন এবং তার তাওবা কবুল করেন; আর প্রকৃত তাওবা পরিচয় হচ্ছে
যার দ্বারা আল্লাহ পাপসমূহ মুছে দেন; অপরাধ থেকে বেঁচে থাকা; আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে ও তাঁর শাস্তির ভয়ে তা
(অন্যায় ও অপরাধ) ত্যাগ করা; তার পক্ষ থেকে যে অপরাধ সংঘটিত হয়ে গেছে, তার
জন্য লজ্জিত হওয়া এবং সেই অপরাধের পুনরাবৃত্তি না করার জন্য সত্যিকার
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা; আর অপরাধটি যদি আল্লাহর বান্দাদের প্রতি
যুলুম-নির্যাতনমূলক হয়ে থাকে, তবে তার পরিপূর্ণ তাওবা হল তাদের হক তথা
অধিকারসমূহ তাদেরকে বুঝিয়ে দেয়া ...। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١ ﴾ [النور: ٣١]
“হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে আস, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” - (সূরা আন-নূর: ৩১); আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا ﴾ [التحريم: ٨]
“হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, বিশুদ্ধ তাওবা।” - (সূরা আত-তাহরীম: ৮)।
আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« التوبة تجب ما قبلها».
“তাওবা তার পূর্বের অপরাধকে বাতিল করে দেয়।” নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন:
«
من كانت له مظلمة لأحد من عرضه أو شيء فليتحلله منه اليوم قبل أن لا يكون
دينار ولا درهم إن كان له عمل صالح أخذ منه بقدر مظلمته وإن لم تكن له
حسنات أخذ من سيئات صاحبه فحمل عليه». ( أخرجه البخاري في صحيحه).
“যে
ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোন বিষয়ে যুলুমের জন্য দায়ী
থাকে, সে যেন আজই তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেয়, সেই দিন আসার পূর্বে, যেই
দিন তার কোন দিনার বা দিরহাম থাকবে না। সেই দিন তার কোন সৎকর্ম থাকলে, তার
যুলুমের পরিমাণ তার নিকট থেকে নেওয়া হবে; আর যদি তার সৎকর্ম না থাকে, তাহলে
তার প্রতিপক্ষের পাপ থেকে নিয়ে তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।” - (ইমাম বুখারী
র. তার সহীহ গ্রন্থে হাদিসখানা বর্ণনা করেছেন, হাদিস নং- ২৩১৭)। আর আল্লাহই তাওফীক দানের মালিক।
শাইখ ইবনু বায
ফতোয়ায়ে ইসলামীয়া (فتاوى إسلامية): ২ / ১৬০
* * *
ছাত্রদের জন্য মাসিক বৃত্তি ভোগ করা অবস্থায় ঈদুল ফিতরের সাদকা
প্রশ্ন: আমরা
একদল প্রবাসী ছাত্র, সুতরাং আমাদের উপর কি যাকাত প্রদান করা ওয়াজিব
(আবশ্যক), অথচ আমরা অন্যান্য ছাত্রদের মত মাসিক বৃত্তি ভোগ করি, বিষয়টি যখন
এই রকম, তখন আমাদের উপর কি পরিমাণ যাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে? আর এর মাধ্যমে
আমাদের জন্য এখানকার মিসকীনদেরকে সাদকা করা জায়েয হবে কিনা, অথবা তা
মাসজিদ নির্মাণের কাজে দান করা যাবে কিনা এবং কখন আমরা তা ব্যয় করব, আল্লাহ
আপনাদেরকে উত্তম পুরস্কার দান করুন?
উত্তর: যাকাত
বলতে যদি সাদকাতুল ফিতর তথা ঈদুল ফিতরের সাদকাকে বুঝায়, তাহলে তা অন্যান্য
মুসলিমদের মত তোমাদের উপরও ওয়াজিব (আবশ্যক) হবে; আর তা হল সংশ্লিষ্ট দেশে
প্রচলিত খাদ্যশস্য যেমন- গম, ভুট্টা, চাউল ইত্যাদি থেকে এক সা পরিমাণ;
আধুনিক মাপে তার পরিমাণ হল প্রায় তিন কিলোগ্রাম, যা ঈদের দিন সকাল বেলায়
ঈদুল ফিতরের সালাতের পূর্বে, অথবা ঈদের রাত্রির এক দিন বা দুই দিন পূর্বে
গরীব-মিসকীনদেরকে প্রদান করবে; যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ করতেন; আর ঈদের সালাতের পর পর্যন্ত বিলম্বিত করা বৈধ
হবে না; কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনগণ ঈদের সালাতের
উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই তা দিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ইমাম বুখারী
র. তাঁর সহীহ গ্রন্থে এই বর্ণনাটির উল্লেখ করেছেন।
আর
তোমাদের মাসিক বৃত্তির মধ্যে তোমাদের উপর যাকাত আবশ্যক হবে না; তবে যখন
তোমরা তার থেকে কিছু সঞ্চয় করবে এবং তার উপর এক বছর অতিবাহিত হবে, তখন
তোমাদের উপর তার যাকাত ওয়াজিব হবে, যদি তা নিসাব পরিমাণে উন্নীত হয়। আর নিসাব হল একশত চল্লিশ মিসকাল রৌপ্য, অথবা বিশ মিসকাল স্বর্ণ, অথবা তার সমমূল্য পরিমাণের অপর যে কোনো মুদ্রা।
আর
তোমাদের আশপাশে বিদ্যমান নিঃস্ব মুসলিমদেরকে তা দান করাটাই সর্বোত্তম; আর
অধিকাংশ আলেমের মতে মাসজিদ নির্মাণের জন্য তা দান করা বৈধ নয়।
আর
স্বর্ণ, রৌপ্য এবং ডলার, ইউরো, টাকা ইত্যাদির মত তার স্থলাভিষিক্ত
মুদ্রাসমূহ থেকে যাকাতের উপযুক্ত সম্পদের চল্লিশ ভাগের একভাগ তথা শতকরা
২.৫% যাকাত হিসেবে প্রদান করা ওয়াজিব (আবশ্যক)। আর আল্লাহই হলেন তাওফীক
দানকারী।
শাইখ ইবনু বায
ফতোয়া সংকলন (مجموع فتاوى ): ৩ / ১১১
* * *
ছাত্রদের বাক্সে জমাকৃত টাকা-পয়সার যাকাত
প্রশ্ন: বাদশা
সা‘ঊদ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ছাত্রদের একটি তহবিল আছে; আর তা হল
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থ সরবরাহ ও ছাত্রদের বৃত্তির টাকা থেকে একটি ক্ষুদ্র
অংশ সংগ্রহের দ্বারা পরিচালিত একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা। এই বাক্সের (তহবিলের) মধ্য থেকে দরিদ্র ছাত্রদের সহযোগিতা করা হয়। এই বাক্সের (তহবিলের) মধ্যে জমাকৃত নিসাব পরিমাণ সম্পদের যাকাত দেয়া লাগবে কিনা?
উত্তর: উল্লেখিত বাক্সের (তহবিলের) সম্পদ এবং তার অনুরূপ কোনো সম্পদের মধ্যে যাকাত নেই। কারণ, তা এমন সম্পদ, যার কোন নির্দিষ্ট মালিক নেই; বরং তা হল ভাল কাজে দানকৃত অপরাপর সকল ওয়াক্ফ সম্পদের মতো।
শাইখ ইবনু বায
ফতোয়ায়ে ইসলামীয়া (فتاوى إسلامية): ২ / ৮৬
* * *
প্রবাসী ছাত্রদের পক্ষ থেকে কুরবানী
প্রশ্ন: যে
প্রবাসী ছাত্র তার পরিবারের (পিতা-মাতা ও ভাই-বোনের) ব্যয়ভার বহন করে,
তারা (পরিবার) তার পক্ষ থেকে তাদের দেশে কুরবানি করলে তা যথেষ্ট হবে কিনা?
অনুরূপভাবে বিবাহিত ছাত্র, কিন্তু তার সাথে তার পরিবার নেই ... সে কি এখানে
কুরবানি করবে, নাকি তার পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের দেশে কুরবানি করবে ...?
উত্তর: কুরবানি
দাতার দেশে এবং তার বাড়িতেই কুরবানির পশু জবাই করা হবে; অতঃপর সে এবং তার
পরিবার-পরিজন তার থেকে খাবে; আর তা থেকে সে তার প্রতিবেশী ও
বন্ধু-বান্ধবদেরকে হাদিয়া (উপহার) দিবে এবং গরীবদেরকে দান করবে। আর
যখন তার পরিবার-পরিজন অন্য দেশে অবস্থান করবে, তবে অবশ্যই তার পক্ষ থেকে ও
তাদের পক্ষ থেকে কুরবানির পশু তার দেশে এবং তার বাড়িতেই জবাই করা হবে,
যদিও সে ভিন্ন দেশে অবস্থান করে।
শাইখ আল-ফাওযান
ফতোয়া (الفتاوى): ২ / ৯
* * *
পশ্চাদভাগের নিতম্ব কর্তিত ছাগল দ্বারা কুরবানী
প্রশ্ন: এখানে আমেরিকাতে একটা বিরাট সংখ্যক প্রবাসী ছাত্র রয়েছে, আর পবিত্র ঈদুল আযহা একেবারে দরজায় উপস্থিত। এমতাবস্থায় তারা কুরবানির পশু সম্পর্কে প্রশ্ন করছে; বিশেষ করে আমেরিকাতে ভেড়ার পশ্চাদভাগের
নিতম্ব তার ছোট বয়সে কেটে ফেলা হয়, যাতে তার পিঠে চর্বি জমে। এই প্রকারের
ভেড়া দিয়ে আমরা কুরবানি করলে তা যথেষ্ট হবে কি? জেনে রাখা দরকার যে, সেখানে
গরু পাওয়া যায়, কিন্তু কেউ কেউ আবার গরুর গোশ্ত খেতে পছন্দ করে না...?
উত্তর: কুরবানি হিসেবে উল্লেখিত ছাগল বা ভেড়া জবাই করাতে কোন সমস্যা নেই, যদিও তা পশ্চাদভাগের
নিতম্ব কর্তিত হয়। কারণ, এর গোশ্তকে সুস্বাদু কারার জন্য তা কাটা হয়;
সুতরাং তা পুরুষ ছাগলকে তার মাংস সুস্বাদু কারার জন্য খাসি করার মত। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাসি ছাগল দ্বারা কুরবানি করেছেন।
শাইখ আল-ফাওযান
ফতোয়া (الفتاوى): ২ / ৯৪
* * *
প্রবাসী ছাত্রদের শূকরের মাংস খাওয়া
প্রশ্ন: প্রশ্নকারী
বলে: একটি বিষয় যেকোনো উদ্দেশ্যে ইউরোপ ও আমেরিকাগামী প্রতিটি মুসলিমের
মনকে চিন্তান্বিত করে তোলে। আর তা হলো, কীভাবে তার জন্য তার সামনে পেশ করা
বা তার ক্রয় করা খাদ্যদ্রব্য চেনা সহজসাধ্য হবে যে, তা শূকরের চর্বিমুক্ত
খাদ্য হওয়া উচিৎ— অথচ তা পশ্চিমা সমাজে অধিক পরিমাণে ব্যবহার করা হয়?
কীভাবে সে নিশ্চিত হবে যে, সে যা খাচ্ছে, তা ইসলামী শরী‘য়ত ও সুন্নাতে
মুহাম্মাদী অনুয়ায়ী হচ্ছে?
আরও
বলে: যদি তাই হয়, তাহলে এসব পরিস্থিতিতে অধিকাংশের পক্ষে কাজ করা কী করে
সম্ভব হবে— এই প্রশ্নটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ঐসব ব্যক্তির জন্য— যাদেরকে
পরিস্থিতি বাধ্য করেছে পশ্চিমা সমাজে জীবনযাপন করার জন্য, চাই তা কর্মের
জন্য হউক, অথবা শিক্ষার জন্য। অতএব,
আমরা এই প্রশ্নটি পেশ করছি শিক্ষা-গবেষণা, ফতোয়া, দা‘ওয়াত ও পরামর্শ
সংস্থার সভাপতি মাননীয় শাইখ আবদুল আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বাযের নিকট, যাতে
তিনি আমাদের প্রবাসী ছেলেদের অনেককে একটু স্বস্তি দিতে পারেন, যাদের অনেক
প্রশ্ন এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে; এমনকি তাদের কেউ কেউ এই মত বা সিদ্ধান্ত
দিয়ে দিয়েছে যে, তাদের এই অবস্থা হচ্ছে জরুরি অবস্থা, আর জরুরি অবস্থা
নিষিদ্ধ (হারাম) জিনিসকে বৈধ করে দেয়। এটি কি এমন বিষয় যা ইসলামী শরী‘য়ত অনুমোদন করে না, নাকি এখানে জরুরি অবস্থার হুকুমের দিকে না গিয়ে অন্য কোন সমাধান আছে?
উত্তর: লেখক
ভাইকে এই সমস্যাটিকে গুরুত্ব দেয়া এবং তার সমাধান খোঁজার জন্য ধন্যবাদ; আর
আমি তার প্রশ্নটির উত্তর সংক্ষিপ্ত কথার মাধ্যমে দেয়ার আশা রাখি এবং
আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যাতে এর দ্বারা উপকৃত করেন। সুতরাং আমি বলছি:
প্রথমত: কোনো
সন্দেহ নেই যে, বহির্বিশ্বে প্রবাসী ছাত্র তার খাওয়া, পানীয়, আগমন,
প্রস্থান ও আল্লাহ তা‘আলা যেসব ইবাদত ফরয করেছেন, সেগুলো আদায়ের ক্ষেত্রে
বহু ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়। আর
এর উপরে সে বড় ধরনের বিপদ দ্বারা পরিবেষ্টিত, যেখানে যুবকগণ ফিতনা,
পথভ্রষ্টতার আহ্বায়ক, বেহায়াপনার ধারক-বাহক এবং পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যবাদী
সংস্থাসমূহের সৈনিকদের মুখোমুখি হতে হয়। আর এর থেকে রক্ষাকারী কেউ নেই,
তবে আল্লাহ যার প্রতি দয়া করেছেন, সেই পরিত্রাণ পেতে পারে। এই
জন্য মুসলিম ছাত্রের জন্য উচিত হবে না যে, সে নিজ দেশে পড়ালেখা ছেড়ে ভিন্ন
দেশে পড়ালেখার জন্য ভ্রমণ করবে এবং নিজেকে বড় ধরনের বিপদ ও বিশৃঙ্খলা বা
বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে।
তবে
রাষ্ট্র যখন নির্দিষ্ট কিছু লোকজনকে বিশেষ কিছু বিষয়ের উপর পড়ালেখা করানোর
জন্য বহির্বিশ্বে পাঠাতে বাধ্য হয়, যেই বিষয়গুলো ঐ রাষ্ট্রে এবং অন্য কোনো
মুসলিম রাষ্ট্রে পাওয়া না যায়, তখন রাষ্ট্রের উচিত হবে একদল মেধাসম্পন্ন,
দীনদার ও ইসলামের বিধানাবলী সম্পর্কে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে বাইরে
পাঠানোর জন্য নির্বাচিত করা; অতঃপর তারা বিভিন্ন স্থানে বা দেশে অত্যন্ত
সতর্কতা, সাবধানতা এবং প্রচণ্ড মনোযোগ ও নিয়মানুবর্তিতা সহকারে ঐসব বিষয়ে
জ্ঞান অর্জন করবে; আর এই শিক্ষাগ্রহণ শেষ হওয়ার পরে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের
দেশে ফিরে আসবে।
দ্বিতীয়ত: নিশ্চয়ই
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর বান্দাদের অবস্থা সম্পর্কে ভালভাবে
জানেন এবং কীসের মাধ্যমে তাদের উপকার হবে ও কীসে তাদের ক্ষতি হবে, সেই
সম্পর্কে খবর রাখেন; আর তিনি তাঁর বান্দা ও রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ইসলামের বিধিবিধান অবতীর্ণ করেছেন, যা সকল প্রকার
কল্যাণ নিয়ে এসেছে এবং সকল অনিষ্টকর বিষয় ও বস্তু থেকে সতর্ক করে দিয়েছে;
আর নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর বান্দাদের উপর নিষিদ্ধ
বস্তুসমূহকে হারাম (নিষিদ্ধ) ঘোষণা করেছেন তার মধ্যে ক্ষতি বিদ্যমান থাকার
কারণে, যেই ক্ষতির কিছু সম্পর্কে তারা জানে এবং কিছু সম্পর্কে তারা জানে না। আর
সেই নিষিদ্ধ বস্তুসমূহের মধ্য থেকে অন্যতম একটি হল শূকরের মাংস, যা
নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে কুরআন, সুন্নাহ ও মুসলিমগণের মধ্যে সংঘটিত ইজমার
প্রমাণ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيۡكُمُ ٱلۡمَيۡتَةَ وَٱلدَّمَ وَلَحۡمَ ٱلۡخِنزِيرِ ﴾ [البقرة: ١٧٣]
“তিনি তো কেবল তোমাদের উপর হারাম করেছেন মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশ্ত ...।” - (সূরা আল-বাকারা: ১৭৩); আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ قُل
لَّآ أَجِدُ فِي مَآ أُوحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلَىٰ طَاعِمٖ
يَطۡعَمُهُۥٓ إِلَّآ أَن يَكُونَ مَيۡتَةً أَوۡ دَمٗا مَّسۡفُوحًا أَوۡ
لَحۡمَ خِنزِيرٖ ﴾
[الانعام:
١٤٥]
“বলুন, ‘আমার প্রতি যে ওহী হয়েছে তাতে, লোকে যা খায় তার মধ্যে আমি কিছুই হারাম পাই না, মৃত, বহমান রক্ত ও শূকরের মাংস ছাড়া।” - (সূরা আল-আন‘আম: ১৪৫); সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদিসে আছে:
« إِنَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ حَرَّمَ بَيْعَ الْخَمْرِ وَالْمَيْتَةِ وَالْخِنْزِيرِ وَالأَصْنَامِ »
“নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মদ, মৃত জন্তু, শূকর ও মূর্তি ক্রয়-বিক্রয়কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন।”
সুতরাং
কুরআন ও সুন্নাহ শূকরের মাংস নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা
প্রদান করেছে; আর আলেমগণ এই ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। কোন কোন আলেম র.
বলেন: “শূকরের সকল অংশ নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে উম্মতের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত
হয়েছে।” আল্লাহ তা‘আলা
অপবিত্র বস্তুসমূহ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিকমত ও
তাৎপর্যের কারণে, যা তিনি জানেন, যদিও তা অন্যের নিকট অস্পষ্ট করে রাখা
হয়েছে; আবার কোন কোন ক্ষেত্রে যদিও আল্লাহ তা‘আলা কোনো কোনো সৃষ্টির নিকট
তাঁর কোনো কোনো বস্তু নিষিদ্ধ ঘোষণার রহস্য ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেছেন; তবে
তাদের নিকট অধিকাংশ রহস্য ও তাৎপর্য গোপন রাখা হয়েছে। আর
শূকরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার মধ্যে যে হিকমত ও তাৎপর্য রয়েছে, তা হচ্ছে, (আর
এ ব্যাপারে আল্লাহই ভালো জানেন,) এর সাথে ময়লা-আবর্জনার যে বৈশিষ্ট্য
রয়েছে, যার সাথে জড়িয়ে আছে বহু রকমের ক্ষতি ও শারীরিক ও মানসিক রোগ-ব্যাধি। আর এই জন্যই এর প্রিয় খাবার হল ময়লা-আবর্জনা ও অপবিত্র বস্তুসমূহ। আর এই প্রাণীটি সকল অঞ্চল বা মহাদেশেই ক্ষতিকারক; বিশেষ করে উষ্ণ অঞ্চলে, যা পরীক্ষা-নিরীক্ষার দ্বারা প্রমাণিত। আর
এর গোশ্ত ভক্ষণ করাটা প্রাণবিনাশী একমাত্র কৃমির উৎপত্তির অন্যতম কারণ।
আরও বলা হয় যে, সচ্চরিত্রতা ও ব্যক্তিত্ব-আত্মসম্মাবোধের মধ্যে এর কুপ্রভাব
পড়ে; আর এর বাস্তব সাক্ষী হল ঐসব দেশের অধিবাসীদের অবস্থা, যারা শূকরের
মাংস ভক্ষণ করে। আর আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এমন অনেক বাস্তব অবস্থায়
পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে, যা প্রমাণ করে যে, অধিকাংশ শূকরের মাংসভোজী ব্যক্তি
এমন রোগ-ব্যাধীতে আক্রান্ত হয়, যা নিরাময়ে আধুনিক চিকিৎসা ব্যর্থ হয়। যদিও
ক্রমবিকাশমান আধুনিক চিকিৎসা শূকরের মাংস ভক্ষণ করার অনেক ক্ষতি চিহ্নিত
করতে সমর্থ হয়েছে; তবুও এর অন্যান্য যেসব ক্ষতি গোপন রয়েছে এবং
চিকিৎসাবিজ্ঞান যা নির্ণয় করতে পারে নি, তা হয়তো এর কয়েক গুণ।
তৃতীয়ত: অন্তরের পরিশুদ্ধতা, দো‘আ
কবুল ও ইবাদতের গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে হালাল ও পবিত্র খাবার খাওয়ার মহান
প্রভাব রয়েছে, যেমনিভাবে হারাম বস্তু থেকে খাদ্য গ্রহণ তার (দো‘আ ও ইবাদতের) গ্রহণযোগ্যতাকে বাধাগ্রস্ত করে। আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহূদীদের প্রসঙ্গে বলেন:
﴿ أُوْلَٰٓئِكَ
ٱلَّذِينَ لَمۡ يُرِدِ ٱللَّهُ أَن يُطَهِّرَ قُلُوبَهُمۡۚ لَهُمۡ فِي
ٱلدُّنۡيَا خِزۡيٞۖ وَلَهُمۡ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٞ ٤١
سَمَّٰعُونَ لِلۡكَذِبِ أَكَّٰلُونَ لِلسُّحۡتِۚ ﴾
[المائدة:
٤١، ٤٢]
“এরাই
হচ্ছে তারা যাদের হৃদয়কে আল্লাহ বিশুদ্ধ করতে চান না; তাদের জন্য আছে
দুনিয়ায় লাঞ্ছনা, আর তাদের জন্য রয়েছে আখেরাতে মহাশাস্তি। তারা মিথ্যা শুনতে খুবই আগ্রহশীল এবং অবৈধ সম্পদ খাওয়াতে অত্যন্ত আসক্ত।” -
(সূরা আল-মায়িদা: ৪১ - ৪২) অর্থাৎ হারাম বা নিষিদ্ধ সম্পদ খাওয়াতে আসক্ত।
সুতরাং যে ব্যক্তির গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই, তাহলে আল্লাহ কিভাবে তার
অন্তরকে পবিত্র করবেন এবং কিভাবে তার দো‘আ কবুল করবেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«
أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا
وَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ
فَقَالَ ( يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا
صَالِحًا إِنِّى بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ) وَقَالَ (يَا أَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ) ». ثُمَّ
ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ
إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ وَمَشْرَبُهُ
حَرَامٌ وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ وَغُذِىَ بِالْحَرَامِ فَأَنَّى يُسْتَجَابُ
لِذَلِكَ ». ( أخرجه مسلم في صحيحه).
“হে মানবজাতি! নিশ্চয়ই আল্লাহ হলেন পবিত্র, তিনি পবিত্র জিনিস ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ মুমিনদেরকে ঐ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন, যে বিষয়ে তিনি নবী-রাসূলদেরকেও নির্দেশ দিয়েছেন;” অতঃপর তিনি বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلرُّسُلُ كُلُواْ مِنَ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَٱعۡمَلُواْ صَٰلِحًاۖ إِنِّي بِمَا تَعۡمَلُونَ عَلِيمٞ ٥١ ﴾ [المؤمنون: ٥١]
“হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে খাদ্য গ্রহণ কর এবং সৎকাজ কর; তোমরা যা কর, সে সম্বন্ধে আমি অবহিত।” (সূরা আল-মুমিনুন: ৫১)।
আর বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُلُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا رَزَقۡنَٰكُمۡ ﴾ [البقرة: ١٧٢]
“হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে আমরা যেসব পবিত্র বস্ত্ত দিয়েছি তা থেকে খাও।” (সূরা আল-বাকারা: ১৭২);
অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন
যে, “দীর্ঘ সফর করে যার এলোমেলো চুল, ধুলায় ধুসরিত সে, আকাশের দিকে দু’হাত
তুলে বলে: ‘হে আমার রব! হে আমার রব!’ অথচ তার খাদ্য হারাম, পোষাক-পরিচ্ছদ
হারাম এবং তার শরীর গঠিত হয়েছে হারামে। অতএব, তার দো‘আ কীভাবে কবুল করা হবে?” - (মুসলিম, হাদিস নং- ২৩৯৩)।
চতুর্থত: যখন
পূর্বোক্ত বিষয়গুলো জানা গেল, তখন মুসলিম ব্যক্তির উপর আবশ্যক হল, আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তা‘আলাকে ভয় করা, হারাম বা নিষিদ্ধ বস্তু থেকে বিরত থাকা এবং
নিজেকে এমন স্থানে নিয়ে না যাওয়া যেখানে আল্লাহর আনুগত্য করা ও তাঁর
বিধিবিধানসমূহ পালন করা সম্ভব হয়ে উঠবে না; আর মুসলিম ব্যক্তির জন্য উচিত
হবে না যে, সে নিজেকে নিয়ে এই জায়গায় অবস্থান করবে, অতঃপর আলেমদের
স্মরণাপন্ন হবে এবং বলবে: আমি ইসলাম থেকে এই সমস্যার সমাধান চাই; আর এটা
সত্য যে, একমাত্র ইসলামের সিদ্ধান্তকে গ্রহণ করার মাধ্যমেই সকল সমস্যার
সমাধান হবে; তবে কোনো এক দিককে অবজ্ঞা করা অথবা তাতে শৈথিল্য প্রদর্শন করা
এবং শুধু একটি দিককে গ্রহণ করার উদ্যোগ নেয়াটা কোনো প্রকার সুফল বয়ে আনে
না।
পঞ্চমত: প্রবাসী
ছাত্রের জন্য তার জরুরি অবস্থার দোহাই দিয়ে এবং জরুরি অবস্থা নিষিদ্ধ
বস্তুকে বৈধ করে দেয়- এমন দাবি করে শূকরের মাংস অথবা তার কোন অংশ থেকে
ভক্ষণ করা বৈধ হবে না; কারণ, এটা ভুল ধারণা; কেননা প্রবাসী ছাত্রকে সেখানে
যেতে এবং নিয়মিতভাবে সেখানে অবস্থান করতে বাধ্য করা হয় নি; আর সে শূকরের
মাংস ভক্ষণ না করলে কখনও মরবে না। আর
যিনি এই প্রশ্ন করেছেন, তিনি যে অন্যান্য সমাধান চেয়েছেন তা (পূর্বে
বর্ণিত বিষয়সহ) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার তাকওয়া থেকেই উৎসারিত হতে
পারে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿... وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ ...﴾ [الطلاق: ٢، ٣]
“... আর
যে কেউ আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য (উত্তরণের) পথ বের
করে দেবেন এবং তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিযিক দান করবেন; ...।”
- (সূরা আত-তালাক: ২, ৩); আর উপস্থিত ব্যক্তি এমন কিছু দেখেন, যা
অনুপস্থিত ব্যক্তি দেখে না; আর মুসলিম দেশসমূহে সহজে যে ভোজ্য তেল পাওয়া
যায়, সম্ভব হলে প্রবাসী ছাত্র তার থেকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী সাথে করে নিয়ে
যাবে, অথবা তার নিকট পাঠানোর ব্যবস্থা করবে, অথবা প্রবাসীগণ জোটবদ্ধভাবে
একত্রিত হয়ে তাদের নিজেদের জন্য শরী‘য়ত সম্মত বৈধ খাবার তৈরি করবে, যেমন
মাছ ও অনুরূপ অন্যান্য খাবার; আর যদি প্রয়োজন হয়, তবে তারা নিজেদের জন্য
(হালাল পশু বা পাখি) জবাইয়ের ব্যবস্থা করবে; আর এই ক্ষেত্রে যে কষ্ট-ক্লেশ
হবে, উচিত হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে ও হারাম থেকে বেঁচে থাকার জন্য সেই
কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করা।
পরিশেষে,
আমি আবারও ঐ ভাইটিকে ধন্যবাদ জানাই ... যিনি এই সমস্যার কথাটি উত্থাপন
করেছেন এবং আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি যে, তিনি যেন মুসলিম সন্তানদেরকে
তাদের প্রতিপালকের আনুগত্য করা, তাঁর শরী‘য়তকে কর্তব্য মনে করার, তাঁর
বিধিবিধান অনুযায়ী আমল করার এবং তাঁর শত্রুদের ষড়যন্ত্র থেকে সতর্ক থাকার
তাওফীক দান করেন, তিনি হলে সর্বশ্রোতা, খুব নিকটবর্তী; আর তিনি হলেন
পবিত্র, সরল পথ প্রদর্শনকারী।
و صلى الله و سلم على عبده و رسوله محمد و آله و صحبه أجمعين .
শাইখ ইবনু বায
ফতোয়ায়ে ইসলামীয়া (فتاوى إسلامية): ৩ / ৩৯৩
(ঈষৎ পরিবর্তিত)
* * *
লেখাপড়া ছেড়ে দেয়ার জন্য মানত করা
প্রশ্ন: জনৈক
ছাত্রী মাদরাসার কোন একটি বিষয়ে অকৃকার্য হয়েছে, অতঃপর সে প্রচণ্ডভাবে
রেগে গিয়ে বলল: আল্লাহর কসম! আমি যদি পুনরায় মাদরাসায় ফিরে যাই, তাহলে আমি
দুই বছর সাওম (রোযা) পালন করব; অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে মাদরাসায় যাওয়ার
ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ করল এবং তাকে উৎসাহ দিতে শুরু করল; অতঃপর সে ঐ বিষয়টি
পরীক্ষা দেয়ার জন্য মাদরাসায় গেল; সুতরাং এই ব্যাপারে তার কাফফারা কি হবে?
উত্তর: এই প্রশ্নের উত্তরের দু’টি অংশ:
প্রথম অংশ: কোনো
মানুষের জন্য দ্রুত রেগে যাওয়া উচিত নয়; আরও উচিত নয় এমন সব পরিশ্রম করাকে
আবশ্যক করে নেয়া, যার শক্তি-সামর্থ্য তার নেই; কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনগণকে এমন কাজের আগ্রহ প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন, যা
তাকে উপকৃত করবে, আর সে আল্লাহ কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে এবং অক্ষমতা
প্রকাশ করবে না; সুতরাং সে যদি চেষ্টা-প্রচেষ্টায় আত্মনিয়োগ ও প্রতিপালকের
নিকট সাহায্য কামনার পর কিছু অর্জন করে, অথবা উদ্দেশ্য হাসিল না হয়, তবে সে
যেন বলে: এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার জন্য নির্ধারিত এবং তিনি যা চেয়েছেন,
তাই করেছেন; আর এর মাধ্যমেই তার দুনিয়ার জীবন সুন্দর ও সুখময় হবে।
দ্বিতীয় অংশ: যখন
তুমি মাদরাসায় ফিরে যাবে, তখন তোমার উপর আবশ্যক হল শপথের কাফফারা দিয়ে
দেয়া, অর্থাৎ দশ জন মিসকীনকে খাবার খওয়াবে, আর তাদেরকে খাবার খাওয়ানোর
দু’টি পদ্ধতি হতে পারে: হয় তুমি খাবার তৈরি করবে এবং তাদেরকে দুপুর বা
রাতের খাবারে উপস্থিত হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাবে, অথবা তুমি তাদের মাঝে
মধ্যম মানের রান্নাবিহীন খাবার বণ্টন করে দেবে, যা সাধারণত লোকজন তাদের
পরিবার-পরিজনকে খাওয়ায়; আর বর্তমানে তা হলো চাল এবং তার সাথে থাকবে গোশত বা
অনুরূপ কোনো তরকারি। কারণ, এটা হল সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম; আর প্রতি দশ জনের জন্য দুই সা‘[3] চালই যথেষ্ট, অর্থাৎ পাঁচ জনের জন্য এক সা‘; আর আল্লাহই তাওফীক দানকারী।
শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন
ফতোয়ায়ে মানারুল ইসলাম (فتاوى منار الإسلام ): ৩ / ৬৬১
* * *
পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার মানত করা
প্রশ্ন: আমার
একটি বোন মাদরাসায় পড়ালেখা করে; সে মানত করেছে যে, সে যাতে অবশ্যই ইতিহাস
বিষয়ে অকৃতকার্য হয়; সে বলেছে: আমার মানত হল, আমি কখনও পরীক্ষায় কৃতকার্য
হব না; আমার মানত হল, অবশ্যই আমি অকৃতকার্য হব। কিন্তু সে পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছে। সুতরাং এই মানতের বিধান কী হবে? তার উপর কি এই মানত পূরণ করা ওয়াজিব হবে?
উত্তর: আমরা
বারবার আমাদের মুসলিম ভাইদেরকে উপদেশ পেশ করেছি যে, তারা যেন মানত না করে;
কেননা মানত করার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই, যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন: « لا يأتي بخير » ( তা কল্যাণ আনতে পারে না ); আর মানুষ এর মাধ্যমে তার নিজের জন্য এমন কিছুকে আবশ্যক করে নেয়, যা থেকে সে মুক্ত।
আর
এই ছাত্রীটি, যে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার মানত করেছে, সম্ভবত সে এই মানত
করেছে তার এই ধারণা থেকে যে, নিশ্চয়ই সে অকৃতকার্য হবে; অতঃপর বিষয়টি
স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হল তার ধারণার বিপরীত; আর এটার উপর ভিত্তি করে বলা
যায় যে, তার উপর কোন কিছুই আবশ্যক হয় নি; কারণ, এমন প্রত্যেক ব্যক্তি, যে
ভবিষ্যৎ কোন কিছুর ব্যাপারে শপথ করে এমন প্রত্যয়ের ভিত্তিতে যে, তা অচিরেই
হবে; অথচ বাস্তবে প্রকাশ পেয়েছে তার উল্টো; এ অবস্থায় তার উপর কোনো কিছুই
আবশ্যক হবে না।
তবে
সে যদি এমন কোনো কাজের বিষয়ে শপথ করে, যা সে করতে চায়, সে ইচ্ছা করলে তা
করতে পারবে, আবার ইচ্ছা করলে সে তা বর্জনও করতে পারবে; কিন্তু যদি সে তা না
করে, তবে তার উপর কাফফারা ওয়াজিব (আবশ্যক) হবে। আর আল্লাহই হলেন তাওফীক
দানকারী।
শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন
ফতোয়ায়ে মানারুল ইসলাম (فتاوى منار الإسلام ): ৩ / ৬৭৪
* * *
ইদ্দত পালনরত ছাত্রীর মাদরাসায় গমন
প্রশ্ন: কোনো
এক ব্যক্তি এই কথা বলে প্রশ্ন করেন যে, তার এক কন্যার স্বামী মারা গিয়েছে
এবং তার উপর আবশ্যক হল (স্বামী হারানো শোকের) ইদ্দত পালন করা, অথচ সে
মাদরাসায় (বিদ্যালয়ে) অধ্যয়নরত ছাত্রী; সুতরাং তার জন্য পড়ালেখা অব্যাহত
রাখা জায়েয (বৈধ) হবে কিনা? আর প্রশ্নকর্তা বলেন: সম্ভবত সে এমন কিছু কাপড়
পরিধান করবে, যা সুগন্ধি ও সাজ-সজ্জা থেকে মুক্ত তবুও কি তা জায়েয হবে?
উত্তর: যে স্ত্রীর স্বামী মারা গিয়েছে, তার উপর ওয়াজিব
(আবশ্যক) হল, সে তার ঐ ঘরে ইদ্দত পালন করবে, যাতে তার স্বামী মারা গিয়েছে;
আর তাতে সে চার মাস দশ দিন অবস্থান করবে এবং তাতে ছাড়া অন্য কোথাও সে
রাত্রিযাপন করবে না; আর তার উপর আবশ্যক হল, যা তাকে সুন্দর করে ও তার প্রতি
অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, এমন কিছু থেকে দূরে থাকবে, যেমন: সুগন্ধি,
সুরমা, চাকচিক্যময় পোষাক, তার শরীরকে অলঙ্কার দিয়ে সাজানো এবং অনুরূপ যা
তার সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করে, তা থেকে দূরে থাকবে; আর কোন প্রয়োজনের কারণে
বাধ্য হলে তার জন্য দিনের বেলায় বের হওয়া বৈধ হবে; আর এর উপর ভিত্তি করে যে
ছাত্রীর ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছে, তার জন্য শিক্ষা গ্রহণ ও
মাসআলা-মাসায়েল অনুধাবন করার প্রয়োজনে মাদরাসায় গমন করা বৈধ হবে, তবে তাকে
স্বামীর মৃত্যুর কারণে ইদ্দত পালনকারিনী নারীর উপর যেসব বস্তু বা বিষয় থেকে
দূরে থাকা আবশ্যক, সেসব থেকে দূরে থাকাকে আবশ্যকীয় কর্তব্য বলে গ্রহণ
করবে, যাতে পুরুষগণ তাকে দেখে বিভ্রান্ত না হয় এবং তাকে বিয়ের প্রস্তাব
দানের দিকে ধাবিত না করে।
و صلى الله على نبينا محمد و آله و صحبه و سلم .
স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড
ফতোয়ায়ে ইসলামীয়া (فتاوى إسلامية): ৩ / ৩১৯
* * *
সহশিক্ষা পদ্ধতির প্রতিষ্ঠানে প্রবাসী ছাত্রের লেখাপড়া
প্রশ্ন: আমি
একজন প্রবাসী ছাত্র, আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করি তাতে ছেলে ও মেয়েরা
এক সঙ্গে পাশাপাশি পড়াশুনা করে; আমার প্রশ্ন: আমার জন্য ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে
অধ্যয়ন করা জায়েয (বৈধ) হবে কিনা?
উত্তর: যে
মুসলিম ব্যক্তি তার নিজের মুক্তি চায়, আমরা তাকে উপদেশ প্রদান করি, সে
যাতে অনিষ্টতা ও ফিতনা তথা বিপর্যয়ের সকল উপায়-উপকরণ থেকে দূরে অবস্থান
করে; আর কোন সন্দেহ নেই যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে যুবতীদের সাথে
যুবকদের মিশ্রণে সহশিক্ষা হল ফিতনা-ফ্যাসাদে নিপতিত হওয়া ও যিনা-ব্যভিচার
ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। আর কোনো ব্যক্তি যদি তার নিজেকে হেফাজত করার
উদ্যোগ গ্রহণ করে, তবে তাকে অবশ্যই কঠোর সাধনা করতে হবে; কিন্তু কোনো
ব্যক্তি যখন এর দ্বারা পরীক্ষার শিকার হয়, তখন তার উপর আবশ্যক হল নিজেকে
হেফাজত করা, সেখান থেকে দূরে সরে যাওয়া, দৃষ্টিকে অবনমিত রাখা,
লজ্জাস্থানকে হেফাজত করা এবং যতটা সম্ভব হয় নারীদের নিকটবর্তী না হওয়া; আর
আল্লাহই ভাল জানেন।
শাইখ ইবনু জিবরীন
ফতোয়ায়ে ইসলামীয়া (فتاوى إسلامية): ৩ / ১০২
* * *
বাসের মধ্যে ছাত্রীদের চেহারা খোলা রাখা
প্রশ্ন: সম্মানিত
শাইখ, আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম পুরস্কার দান করুন— বাসে বা অন্য কোন
পরিবহণে ছাত্রীদেরকে তাদের মুখমণ্ডল খোলা অবস্থায় মাদরাসার (বিদ্যালয়ের)
উদ্দেশ্যে বহন করে আনা-নেয়ার বিধান কী হবে?
উত্তর: নারীর
মুখমণ্ডল খোলা রাখা এবং তার দিকে পুরুষদের তাকানো হারাম এবং অবৈধ; চাই সে
শিক্ষিকা হউক, অথবা ছাত্রী হউক; চাই সে গাড়ীর মধ্যে থাকুক, অথবা বাজারের
মধ্যে পায়ে হেঁটে চলাফেরা করুক, কিন্তু যদি সে এমন গাড়ীতে থাকে, যাতে গ্লাস
আড়াল হওয়ার কারণে গ্লাসের বাইরে যারা আছে, তারা তাকে দেখতে পায় না এবং
চালক ও মহিলাদের মধ্যে আড়াল থাকে, তবে এই অবস্থায় তাদের মুখমণ্ডল খোলা
রাখাতে কোন পাপ হবে না; কারণ, তারা স্বতন্ত্র কক্ষে পুরুষদের থেকে পৃথকভাবে
অবস্থানরত নারীদের মত। আর যখন গাড়ীর গ্লাস এমন স্বচ্ছ হয়, যার অপর পাশ
থেকে দেখা যায়, অথবা গাড়ীর গ্লাস অস্বচ্ছ হয়, কিন্তু তাদের ও চালকের
মাঝখানে কোন আড়াল না থাকে, তাহলে তাদের জন্য তাদের মুখমণ্ডল খোলা রাখা বৈধ
হবে না, যাতে তাদেরকে চালক অথবা বাজারের মধ্যকার কোনো পুরুষ ব্যক্তি দেখতে
না পায়।
আর
চালকের বেতন হারাম নয়, কেননা মহিলারা তাদের মুখমণ্ডল খোলা রাখার জন্য এই
গাড়ীটি ভাড়া নেয় নি, কিন্তু চালকের উপর আবশ্যক হল তাদেরকে মুখমণ্ডল ঢেকে
রাখার নির্দেশ দেয়া; অতঃপর তারা যদি মুখমণ্ডল ঢেকে রাখতে অস্বীকার করে এবং
বারবার তাদের মুখমণ্ডল খোলা রাখে, তাহলে সে যেন গাড়ীর ভিতরে পর্দার
ব্যবস্থা করে। অথবা পর্দাসম্মত গ্লাস লাগিয়ে নেয় এবং সে যেন তার ও তাদের
মাঝখানে আড়াল তৈরি করে নেয়; আর এভাবেই নিষিদ্ধ বিষয় দূর হয়ে যাবে।
শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন
শিক্ষক ও ছাত্রদের জন্য ফতোয়া (فتاوى للمدرسين و الطلاب ): পৃ. ২৮
(ঈষৎ পরিবর্তিত)
* * *
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষক থেকে ছাত্রীদের পর্দা অবলম্বন করা
প্রশ্ন: দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষকদের সামনে মেয়েদের পর্দা না করে জন্য খোলামেলা অবস্থান করা জায়েয (বৈধ) হবে কিনা?
উত্তর: দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী
পুরুষ ব্যক্তি থেকে নারীর পর্দা করার আবশ্যকতার ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে
মতবিরোধ রয়েছে; কেননা এই ব্যাপারে হাদিসের বিভিন্নতা রয়েছে; এক হাদিসের
মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে পর্দা করার নির্দেশ
দিয়েছেন; আর অপর এক হাদিসের মধ্যে তার থেকে পর্দা করার অনাবশ্যকতার প্রমাণ
রয়েছে।
উম্মু
সালামা রা. বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদেরকে (অন্ধ সাহাবী) ইবনু উম্মে মাকতুম রা. থেকে
পর্দা অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছেন, তখন তাঁরা বললেন:
«
يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلَيْسَ أَعْمَى لاَ يُبْصِرُنَا وَلاَ يَعْرِفُنَا
فَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم: « أَفَعَمْيَاوَانِ أَنْتُمَا
أَلَسْتُمَا تُبْصِرَانِهِ ». (أخرجه أبو داود ) .
“হে
আল্লাহর রাসূল! সে কি অন্ধ নয়, সে তো আমাদেরকে দেখে না এবং আমাদেরকে
চিনতেও পারবে না? তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উদ্দেশ্য
প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বললেন: তোমারা দু’জনই কি অন্ধ?! তোমরা কি তাকে দেখতে পাও
না?!” - (আবূ দাউদ, হাদিস নং-৪১১৪)।
সুতরাং এই হাদিসটি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পুরুষ ব্যক্তি থেকে নারীর পর্দা করার আবশ্যকতার উপর প্রমাণ পেশ করে।
আর
ফাতেমা বিনতে কায়েস রাদিয়াল্লাহ ‘আনহা বর্ণিত হাদিসের মধ্যে আছে: নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আবদুল্লাহ ইবন উম্মে মাকতুম
রাদিয়াল্লাহ ‘আনহুর ঘরে ইদ্দত পালন করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন:
« ... فَإِنَّهُ رَجُلٌ أَعْمَى تَضَعِينَ ثِيَابَكِ عِنْدَهُ ». (أخرجه مسلم ) .
“ ... কারণ, সে হল অন্ধ ব্যক্তি, তুমি তোমার কাপড় টানিয়ে তার থেকে আড়াল করবে।” - (মুসলিম, হাদিস নং- ৩৭৭০)।
আর
অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য দলিল (আল্লাহই সবচেয়ে বেশি ভাল জানেন) হল, তার
উপরে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পুরুষ ব্যক্তি থেকে পর্দা করা আবশ্যক নয়; অর্থাৎ তার
উপস্থিতিতে তার (নারীর) চেহারা ঢেকে রাখা ওয়াজিব নয়; কিন্তু তার (নারীর)
জন্য পুরুষ ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টি দেয়া বৈধ হবে না।
ইমাম
শাওকানী র. যখন এই হাদিস দু’টি নিয়ে আলোচনা করেন, তখন তিনি বলেন: “জবাবে
বলা হয়, হতে পারে তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের নিকট
থেকে তাদের দৃষ্টি অবনমিত করার বিষয়টি প্রত্যাশা করেছেন, যাতে ঘরের মধ্যে
সমবেত হওয়া এবং দৃষ্টির মধ্যে নিরবিচ্ছিন্ন না হয়।”
শাইখুল
ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা র. বলেন: “অধিকাংশ আলেমের মতে, নারীর জন্য মূলত
অপরিচিত পুরুষদের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে অথবা স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকানো বৈধ
নয়।”
আর এটা এই জন্য যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ ... ﴾ [النور: ٣١]
“আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনমিত করে ...।” - (সূরা আন-নূর: ৩১)
শাইখ আল-ফাওযান
মুসলিম নারীর ফতোয়া (فتاوى المرأة المسلمة): ১ / ২৪৫
* * *
শিক্ষার আসরে নারীদের উপস্থিত হওয়া
প্রশ্ন: মুসলিম নারীর জন্য শিক্ষামূলক আসর ও মাসজিদসমূহের মধ্যে ফিকহ শিক্ষার আসরে উপস্থিত জায়েয (বৈধ) হবে কিনা?
উত্তর: হ্যাঁ,
নারীর জন্য শিক্ষার আসরসমূহে উপস্থিত হওয়া বৈধ, চাই সেই শিক্ষাটি
প্রজ্ঞাপূর্ণ জ্ঞান সংক্রান্ত হউক, অথবা আকিদা ও তাওহীদ (আল্লাহর একত্ববাদ)
সম্পর্কিত জ্ঞান হউক; তবে শর্ত হল, সে সুগন্ধি ব্যবহার ও সৌন্দর্য
প্রদর্শন করবে না; আর তার জন্য আরও জরুরি হল পুরুষদের সাথে না মিশে তাদের
থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করা; কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ... وَخَيْرُ صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا ». (أخرجه مسلم ) .
“
... আর নারীদের জন্য উত্তম সারি হল শেষ সারি, আর তাদের জন্য নিকৃষ্ট সারি
হল প্রথম সারি।” - (মুসলিম, হাদিস নং- ১০১৩); আর এটা এই জন্য যে, তাদের
প্রথম সারি পুরুষদের খুব কাছাকাছি তাদের শেষ সারির চেয়ে; ফলে তাদের শেষ
সারি তাদের প্রথম সারির চেয়ে উত্তম বলে বিবেচিত হয়েছে।
শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন
ফতোয়া (فتاوى): ২ / ১২৯
* * *
== সমাপ্ত ==
কোন মন্তব্য নেই:
/>