হিজাব এবং ফ্রি মিক্সিং- এ দুটো একসাথে চলতে পারে না বোন !
আল্লাহ তাআলা বলেন: “মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে ।”(সূরা আন-নূর:৩০)
আল্লাহ তাআলা পরের আয়াতে বলেন:
"“ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও ""। (সূরা আন-নূর:৩১)
এখানে সবাই লক্ষ্য করতে পারেন উক্ত আয়াতদ্বয়ে নারী-পুরুষ উভয়েরই লজ্জাস্থান হেফাযতের কথা বলা হয়েছে । আর যে পোষাক তাদের লজ্জাস্থান পুরোপুরি হেফাজত করতে পারে তাকেই বলা হয় শালীন পোষাক , ইসলাম তাই বলে।
এখন কথা হল লজ্জাস্থান কতটুকুকে বোঝানো হয়েছে । এই ব্যাপারটাতেই আমরা ভুল করি । ধরে ফেলি উভয়ের জন্য একই এই ব্যাপারটা । তা নয়।
ছেলেদের জন্য সতর হল নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত । আর মেয়েদের জন্য মুখ(সমস্ত মুখমন্ডল নয়,চোখ এবং তার উপর-নীচের কিছু অংশ), হাতের কবজি এবং পায়ের তালু ব্যতীত সমস্ত শরীর । যে পোষাক তাদের এই অংশ ঢেকে রাখে তাই হল শালীন-পোষাক ইসলামের দৃষ্টিতে ।
শরীয়ত প্রবর্তিত হিজাব সেটি, যাতে আটটি শর্ত পাওয়া যায় :
প্রথম শর্ত : নারীর সমগ্র শরীরই জিলবাব বা বোরকা দিয়ে ঢাকা থাকতে হবে। জিলবাব হলো সমগ্র শরীর ঢেকে রাখে এমন পোশাক।
দ্বিতীয় শর্ত : পর্দার উদ্দেশ্যে-পরা পোশাকটাই খোদ সৌন্দর্য না হতে হবে। অর্থাৎ এমন রঙ চড়ানো বা কারুকার্যখচিত না হতে হবে যা পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি আকৃষ্ট করে। হিজাব তো সেটিই যা পরপুরুষ থেকে নারীর সৌন্দর্যকে আড়াল করে রাখে।
তৃতীয় শর্ত : হিজাব এমন মোটা কাপড়ের হতে হবে যা ভেদ করে ভেতরের সৌন্দর্য প্রস্ফূটিত হবে না।
আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবীজী বলেছেন : "দুই প্রকারের জাহান্নামী আমি এখনো দেখিনি। একপ্রকার হলো, ওই সম্প্রদায় যাদের হাতে গরুর লেজ সদৃশ চাবুক থাকবে। তারা এসব চাবুক দ্বারা (অন্যায়ভাবে) লোকদেরকে প্রহার করতে থাকবে। আর আরেক প্রকার সেসব নারী যারা কাপড় পরিধান করার পরেও উলঙ্গ থাকবে। তারা (পুরুষদেরকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও (পুরুষদের দিকে) আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে সম্মুখে ঝুঁকে পড়া উটের কুঁজের ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না; এমনকি তারা জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের ঘ্রাণ অনেক অনেক দূর থেকেও পাওয়া যাবে’ (মুসলিম)।
ইবনে আবদুল বার রহ. বলেন, এ হাদীসে সেসব মহিলার কথা বলা হয়েছে যারা এমন পাতলা ও সূক্ষ্ম পোশাক পরিধান করে যা তাদের দৈহিক সৌন্দর্য ঢাকতে সক্ষম নয়। ফলে দৃশ্যত তাদেরকে কাপড় পরিধান করেছে বলে মনে হলেও বাস্তবে তারা উলঙ্গই থাকে।
চতুর্থ শর্ত : নারীর হিজাব ঢিলেঢালা ও প্রশস্ত হতে হবে। এমন সঙ্কীর্ণ হলে চলবে না, যা নারীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ফুটিয়ে তোলে। কেননা হিজাব পরিধান করার উদ্দেশ্য ফেতনার আশঙ্কা দূর করা। আর এটা অর্জন হয় না যদি ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করা না হয়। সঙ্কীর্ণ পোশাক, তা যদিও শরীরের চামড়ার রঙ ঢেকে রাখে, তবে তা শরীরের ভাঁজগুলো প্রকাশ করে দেয়।
উসামা ইবনে যায়েদ রাযি. বলেন, আবু উসামা রাযি. বলেছেন : ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে একটি ঘন পাতলা কাতান পোশাক পরালেন, যা দাহিয়াতুল কালবী রাযি. তাঁকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। অতঃপর আমি তা আমার স্ত্রীকে পরিয়ে দিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : ‘কী হলো, তুমি যে কাতান পরিধান করলে না? আমি বললাম : হে আল্লাহর রাসূল! আমি তা আমার স্ত্রীকে পরিয়ে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন : "তাকে তুমি এর নিচে একটি আন্তর পোশাক (সেমিস) পরিধান করতে বলবে। কেননা আমি আশঙ্কা করছি যে তার হাড়ের আকৃতি প্রকাশিত হয়ে যাবে’ (মুসনাদে আহমদ। আলবানী রহ. জিলবাবুল মারআতিল মুসলিমা কিতাবে হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)।
পঞ্চম শর্ত : হিজাবের ওপর আতর বা সেন্ট ব্যবহার করা যাবে না। এ মর্মে বহু বিশুদ্ধ হাদীস রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ : ‘যে নারী সুগন্ধি ব্যবহার করে লোকদের পাশ দিয়ে গেল এ উদ্দেশ্যে যে তারা তার সুগন্ধি পাক, তবে সে যিনাকারী-ব্যভিচারী’ (আলবানী:সহীহ আততারগীব)।
আবু হুরায়রা রাযি. বলেন, ‘এক নারী সুগন্ধি ছড়িয়ে তার কাছ দিয়ে অতিক্রম করল। তিনি বললেন : ‘হে আল্লাহর বান্দী! তুমি কি মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছ? সে বলল, ‘হ্যাঁ’। তিনি বললেন, ‘এর জন্যই কি সুগন্ধি মাখিয়েছ? সে বলল, ‘হ্যাঁ’। তিনি বললেন, ‘তাহলে তুমি ফিরে যাও এবং গোসল করে নাও। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি :‘ যদি কোনো নারী সুগন্ধি ছড়িয়ে ছড়িয়ে মসজিদের দিকে বের হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তাআলা তার নামায কবুল করবেন না, যদি না সে বাড়ি ফিরে এসে গোসল করে নেয়’ (আলবানী : সহীহু ইবনে খুযাইমাহ)।
ষষ্টম শর্ত : নারীর পোশাক পুরুষের পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে না। আবু হুরাইয়া রাযি. বলেন : "রাসূলুল্লাহ সাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওই পুরুষের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন, যে নারীর পোশাক পরে। আর ওই নারীর প্রতি অভিসম্পাত করেছেন যে পুরুষের পোশাক পরিধান করে’ ( আহমদ ও আবূ দাউদ)।
অতঃপর পুরুষ যে ধরনের চাদর, লুঙ্গি, অথাব জামা-কাপড় পরিধান করে নারীও সে ধরনের জামা-কাপড় পরিধান করবে তা ইসলামে অনুমোদিত নয়। কেননা এরূপ করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অভিসম্পাতের আওতাভুক্ত হতে হবে।
সপ্তম শর্ত : মুসলিম নারীর পোশাক কাফির নারীর পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে না। কেননা শরীয়তের বিধান অনুযায়ী মুসলমান নারী ও পুরুষের জন্য কাফিরদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা বৈধ নয়। হোক তা তাদের ইবাদত-বন্দেগীর ক্ষেত্রে অথবা ঈদ-পর্ব, পোশাক-আশাক ইত্যাদির ক্ষেত্রে। হাদীসে এসেছে : مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ‘যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করল সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হলো’ (আবূ দাউদ)। তাই পাশ্চাত্যের শোরুমগুলোতে কাফিরদের পরিধেয় যেসব পোশাক প্রদর্শিত হয় তা মুসলিম নারীদের জন্য ব্যবহার করা কখনো উচিত নয়।
অষ্টম শর্ত : খ্যাতি ও সুনামের পোশাক না হতে হবে। অর্থাৎ এমন পোশাক যা অন্যদের কাছে অপরিচিত এবং যার দ্বারা মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধি অর্জনই মূখ্য হয়ে থাকে। ইবনে উমর রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধির পোশাক পরবে, আল্লাহ তাআলা তাকে কিয়ামতের দিন লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন, অতঃপর তাতে আগুন ধরিয়ে দিবেন’ (আহমদ ও আবূ দাউদ)।
ছেলেরা হয়তো বুঝতে পারছেন অনেকের প্রিয় পোষাক টাইট জিন্স পরিধান করা ইসলাম মোটেও সমর্থন করে না ।
কোন মন্তব্য নেই:
/>