✣✣ পৃথিবী ঘুরছে ও আল-কুরআন – ✣✣
পৃথিবী ঘুরছে কথাটি এখন আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে বদ্ধ মূলে রূপান্তরিত হয়েছে। উপগ্রহের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে তা অবলোকন করছে, যাতে আলোচনা বা দ্বন্দ্বের অবকাশ রাখে না। রকেটের মাধ্যমে সৌরজগৎ পরিভ্রমণ কারীগণ যেভাবে দেখেছেন, ফট উঠিয়েছেন, তা কোন জ্ঞানীর পক্ষে অস্বীকার করার মত নয়।
পৃথিবী ঘুরছে এর প্রমাণ হিসেবে আমরা এখানে চন্দ্র গ্রহণ সূর্য গ্রহণ, দিবারাত্র, ঋতুর আগমনকে পেষ করার প্রয়োজন মনে করছি না, কারণ এগুলো বৈজ্ঞানিক প্রমাণাদী যা মূর্খ ও অহংকারী ব্যক্তি ব্যতীত কেউ অস্বীকার করছে না। কিন্তু এ বিষয়ে চৌদ্দ শত বছর পূর্বে কুরআন যা বর্ণনা করেছে তা আমরা এখানে উপস্থাপন করতে চাই, যা সত্যিকার অর্থে মানব জাতিকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে এবং কুরআনের সামনে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে।
➽আজ ৪র্থ দলিল পেশ করা হলো। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:وتري الجبال تحسبها جامدة وهي تمرمر السحاب ,صنع الله الذي أتقن كل شئ إنه خبير بما تفعلون ( سورة النمل /৮৮)তুমি পাহাড়সমূকে অচল ও স্থিতিশীল অবস্থায় দেখছ অথচ সেগুলো মেঘের ন্যায় চলছে এটা আল্লাহ্র কারিগরি যিনি সব কিছুকে সুসংহত করেছেন। তোমরা যা কিছু করছ তিনি তা অবগত আছেন।(সুরা নামল ২৭ : ৮৮)এখানে মানব জাতিকে এই দুনিয়াতে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন প্রত্যেক দৃষ্টি ও জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিকে চিন্তা ও গবেষণা করার জন্য আহ্বান করছেন যে, কত সুন্দর সুদৃঢ় ও সুবিন্যস্ত নিয়মের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে এই বিশ্বজগৎ।রকেটে মহাকাশ পাড়ি দিতে যাত্রীকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। নতুবা জীবনের ঝুঁকি থাকে। তার এ সতর্কতার মধ্যে রয়েছে অভিকর্ষ তাপ ও চাপ সম্পর্কিত ব্যবস্থা। অথচ এ রকেটের বেগ মাত্র ঘণ্টায় পঁচিশ হাজার মাইল কিন্তু আল্লাহ্ র সৃষ্টি যে পৃথিবী নামক রকেটে করে আমরা এক অনন্ত যাত্রার আরোহী তার বেগ ঘণ্টায় ৬৭০০০ মাইল। এত বিপুল বেগে চলছি অথচ কোন রকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থার বালাই নেই। কি অভাবনীয় ব্যবস্থা পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ সূর্যের চারদিকে, আবার সূর্য অনুরূপ ব্যবস্থা বরাবর ঘুরতে ঘুরতে আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, আমার তা কিছুই জানি না। এর কোন খবরই আমাদের জানা নেই। তাই আল্লাহ্ জানিয়ে দিলেনঃصنع الله الذي أتقن كل شئ ( سورة النمل /৮৮)(ঐটা) আল্লাহ্র সৃষ্টি নৈপুণ্য যিনি সবকিছু সুষম করেছেন।
(সূরা নমল ২৭: ৮৮)আমাদের মাঝে অনেকের ধারণা আয়াতটিতে আখেরাতের অবস্থা বর্ণনা হয়েছে পৃথিবীর অবস্থা নয়, যেহেতু আয়াতটির পূর্বের আয়াতে আখেরাতের বর্ণনা রয়েছে।আব্দুল মাজীদ ঝিন্দানী স্বীয় কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, কিছু তাফসীর কারক গণের অভিমত যে, উক্ত আয়াতে পৃথিবীর অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। এবং এতে স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে যে পৃথিবী ঘুরছে। তারা অস্বীকার করেছে যে, এ অবস্থা কিয়ামতের নয়। কেননা কিয়ামত দিবসে মানুষদেরকে এমন জমিনে উঠান হবে যাতে কোন পাহাড় থাকবে না।নবী করীম (স.) এরশাদ করেন:يحشر الناس يوم القيامة علي أرض بيضاء , عفراء ، كقرصة النقي ,ليس فيها علم لأحد .(رواه البخاري ১১/৩২৩ )কিয়ামতের দিন মানুষকে এমন জমিনে একত্রিত করা হবে সেটা সাদা লাল মিশ্রিত রঙ্গের হবে, পরিষ্কার সমতল ভূমির ন্যায়। তাতে থাকবে না কারো কোন চিহ্ন। (বুখারী)যদি বলা হয় যে, পাহাড়ের দৃশ্যের অবস্থা কিয়ামতের নয় বরং কিয়ামতের পূর্বে শিঙায় ফুৎকার দেয়ার সময়ের দৃশ্য।আসলে শিঙার ফুৎকারের মাধ্যমে যখন বিশ্বজগৎ ধ্বংস হবে, তখন মানুষ থাকবে হয়রান, পেরেশান, ভীত, সন্ত্রস্ত ও নেশাগ্রস্থ ব্যক্তির ন্যায় জ্ঞান হারা হয়ে যাবে।
সেই মুহূর্তে পাহাড়ের দিকে নজর দেয়ার কোন পরিবেশ থাকবে না।আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:يأيها الناس اتقوا ربكم أن زلزلة الساعة شئ عظيم ,يوم ترونها تذهل كل مرضعة عما أرضعت وتضع كل ذات حمل حملها وتري الناس سكري وما هم بسكري ولكن عذاب الله شديد (سورة الحج ১-২)হে লোক সকল! তোমাদের পালন কর্তাকে ভয় কর, নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ংকর ব্যাপার। যে দিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন প্রত্যেক স্তন্যধাত্রী তার দুধের শিশুকে বিস্মৃত হবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করবে এবং মানুষকে তুমি দেখবে মাতাল অথচ তারা মাতাল নয়। বস্তুত আল্লাহ্ র আজাব সুকঠিন (সূরা হজ ২২ : ১-৬)আর একটি বিষয় বিশেষ ভাবে লক্ষণীয় যে, উক্ত আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা ব্যবহার করেছেন এখানে শব্দটি আরবী পরিভাষায় সৃষ্টি নৈপুণ্য সূক্ষ্মতা, সামঞ্জস্য পূর্ণ নিখুঁত তৈরীর ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে। ধ্বংস ও বিশৃঙ্খলতার ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় না। অতএব আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি যে, উক্ত আয়াতটি পৃথিবীর অবস্থা বর্ণনা করছে।আয়াতটির শেষ অংশ হচ্ছে অর্থাৎ নিশ্চয়ই তিনি অবগত আছেন (বর্তমানে পৃথিবীতে) তোমরা যা করছ। আখেরাত হচ্ছে, প্রতিদানের জন্য, যেখানে কোন কাজ নেই।
অতএব আয়াতটি এটাই প্রমাণ করে যে এই অবস্থা দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক। আখেরাতের সাথে নয়। কোন কোন আলেমগণ ধারণা করছেন যে, পৃথিবী ঘুরছে না বরং স্থির রয়েছে। দলিল হিসেবে পেষ করছেন কুরআনের এমন আয়াত যাতে আল্লাহ্ তা’আলা বলেন :أمن جعل الأرض قرارا وجعل خلا لها أنهارا وجعل لها رواسي (سورة النمل ৬১)কে পৃথিবীকে স্থিত (বাসপযোগী) করেছেন এবং তার মাঝে মাঝে নদ নদী প্রবাহিত করেছেন এবং তাকে স্থির রাখার জন্য পর্বত স্থাপন করেছেন? (সূরা নমল ২৭:৬১)এ আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে তারা বলেন : তোমরা কীভাবে বলছ যে, পৃথিবী ঘুরছে অথচ আল্লাহ্ বলছেন পৃথিবী স্থির?এই প্রশ্নটির জওয়াব সুন্দর করে দিয়েছে আব্দুল মাজিদ ঝান্দানী। তিনি বলেন প্রত্যেকটি নড়াচড়া অন্য কিছুর সাথে সম্পর্ক।
যেমন আপনি কোন বিমানে আরোহণ করেছেন। আপনি এই বিমানে স্থির রয়েছেন, কোন নড়াচড়া হচ্ছে না কিন্তু বিমানটি আপনাকে নিয়ে চলছে। আপনি বিমানের জন্য স্থির আর বিমানটি পৃথিবীর জন্য চলমান। একস্থান থেকে অন্য স্থানে চলে গিয়েছে। অতএব নড়াচড়া অবশ্যই অন্য কিছুর সাথে সম্পর্ক। এর উত্তর আমরা পবিত্র কুরআনেই পেয়ে থাকি। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন :الله الذي جعل لكم الأرض قرارا (سورة غافر ৬৪)আল্লাহ্ তোমাদের জন্য পৃথিবীকে স্থির করেছেন। (সূরা গাফের ৬৪)পৃথিবীর ঘুরছে এমন অবস্থায়ও তোমাদের জন্য স্থির করে বসবাসের উপযোগী করেছেন। এতেই মহান করুণাময় আল্লাহ্ র কুদরতের সবচেয়ে বেশী বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
কোন মন্তব্য নেই:
/>