মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি ধর্মনিরপেক্ষতা ???
কিছু নামধারী মুক্তিযোদ্ধা, ঘাদানিক ও আওয়ামীলিগ খুব জোরে সোরেই বলে থাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। আমার মনে হয় মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তাদের কোন ধারণাই নেই।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী সেই বিখ্যাত পোস্টার, যেখানে মানুষের ধর্মীয় পরিচয়কেই আগে তুলে ধরে বলা হয়েছে আমরা সব ধর্মের লোক মিলেই বাঙালী। ধর্মের প্রতি এই সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধের নামই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
কিছু নামধারী মুক্তিযোদ্ধা, ঘাদানিক ও আওয়ামীলিগ খুব জোরে সোরেই বলে থাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। আমার মনে হয় মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তাদের কোন ধারণাই নেই।
প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধান সেনাপতি কর্ণেল এম এ জি ওসমানী ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ শপথ নিচ্ছেন। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রকাননে আল্লাহর ওপর ভরসা করে কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল এ সরকারের যাত্রা। যদি ধর্মনিরপেক্ষতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হত তবে শুধুমাত্র কোরআন তেলাওয়াত দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হতো না। প্রবাসী সরকারের এই নেতারা তখনো জানতেন না ধর্মনিরপেক্ষতা কি জিনিস। সেদিন তারা কোরআন ছাড়া অন্য কোন ধর্মের ধর্মীয়গ্রন্থ পাঠ করারও প্রয়োজন অনুভব করেননি। তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধর্মনিরপেক্ষতা কি করে হয়।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে নিয়মিত ধর্মীয় অনুষ্ঠান চালাতেন অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যদি ধর্মনিরপেক্ষতা হতো তাহলে কি করে তিনি এই অনুষ্ঠান চালাতেন?
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে নিয়মিত ইসলামী অনুষ্ঠান পরিচালনাকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি সৈয়দ আলী আহসান এবং ভারত প্রবাসী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কবি আল মাহমুদ ইসলামের পক্ষাবলম্বন করার আওয়ামী লীগের চোখে হয়ে গেল রাজাকার আর যুদ্ধের পুরো নয় মাস পাক সরকারের সহযোগী ও বেতরভূক কর্মচারী কবি শামসুর রহমান বনে গেলেন মুক্তিযোদ্ধা। মিডিয়ার জোরে এভাবেই রাতকে দিন আর দিনকে রাত বানানোর খেলা আজও চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের এই খেলা বন্ধ হবে কবে?
‘যদি বাংলাদেশকে একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসাবে ঘোষণা করা হয় তাহলে ভারতের আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। যেদিন আমার সৈনিকরা বাংলাদেশকে মুক্ত করে সেদিনই আমি এ কথা উপলব্ধি করি। বাংলাদেশীদের কখনোই ভারতের প্রতি তেমন ভালবাসা ছিল না। আমি জানতাম ভারতের প্রতি তাদের ভালবাসা অস্থায়ী। অনুপ্রেরণা লাভের জন্য ভারতের দিকে না তাকিয়ে তারা মক্কা ও পাকিস্তানের দিকে দৃষ্টিপাত করবে। আমাদেরকে সত্যাশ্রয়ী হতে হবে। বাংলাদেশীদের প্রতি আমরা সঠিক আচরণ করিনি। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য আমাদের সব রকমের সাহায্য করা উচিৎ ছিল, কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদরা তা করেননি। তারা বেনিয়ার মতো আচরণ করেছেন।’ ফিল্ড মার্শাল মানেক শ’ (ভারতের সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান) স্টেটম্যান, ২৯ এপ্রিল ১৯৮৮। এই উক্তিটি করেছেন সেই ব্যক্তি, যিনি ১৯৭১ সালে ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার দিনই উপলব্ধি করেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষের জীবনধারা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যে চেতনা বিরাজ করছে তাতে করে মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার স্থান হওয়া সম্ভব নয়। ইসলাম এ দেশের মানুষের প্রাণস্বত্তার সাথে জড়িয়ে আছে। যে কথা ভারতের সেনা প্রধান বাংলাদেশ মুক্ত হওয়ার দিন উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন বাংলাদেশের এক শ্রেনীর রাজনীতিবিদ সারা জীবন এ দেশের মানুষের সাথে বসবাস করেও তা বুঝতে পারেন না, এরচে দুঃখ ও বেদনার বিষয় আর কি হতে পারে?
দৃশ্যপট একাত্তর
একুশ শতকের রাজনীতি ও আওয়ামী লীগ
আসাদ বিন হাফিজ ।
কোন মন্তব্য নেই:
/>