পরহেযগারিতা অর্জনের পথ :
পরহেযগারিতা আল্লাহ প্রদত্ত এক অমূল্য নে‘মত। যিনি এ নে‘মতের অধিকারী হন, তার জন্য ইহকাল-পরকালের সফলতা নিশ্চিত হয়ে যায়। কিন্তু এ গুণে গুণান্বিত হওয়ার জন্য আমাদেরকে কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে। যা নিম্নরূপ :
(১) নিষিদ্ধ বস্তু থেকে দূরে থাকা
পরহেযগারিতা অর্জনের প্রথম শর্ত হ’ল যেসব কাজ আল্লাহ তা‘আলা হারাম করেছেন, সেগুলো থেকে বিরত থাকা। নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ হ’তে বিরত থাকা দ্বীনদারী অর্জনের প্রধান শর্ত। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘যা কিছু তোমার জন্য হারাম করা হয়েছে, তা থেকে বিরত থাক। তাহ’লে তুমি বড় পরহেযগার হ’তে পারবে’।[21]
(২) সন্দেহযুক্ত বিষয়সমূহ পরিহার করা
পরহেযগারিতা অর্জনের অন্যতম উপায় হ’ল যাবতীয় হারাম বস্তু ছাড়াও সন্দেহপূর্ণ বিষয়সমূহ হ’তে বিরত থাকা এবং যে ব্যাপারে মনে খটকা সৃষ্টি হয়, আত্মাকে অস্থির করে তোলে, তা পরিত্যাগ করা।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যা তোমাকে সন্দেহে ফেলে, তা ছেড়ে নিঃসন্দেহ বিষয়ের দিকে ধাবিত হও।’[22] অপর বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, ‘সৎকর্ম সর্বদা প্রশান্তিদায়ক, কিন্তু অসৎকর্ম সর্বদা সন্দেহপূর্ণ’।[23]
নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,‘হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। উভয়ের মধ্যবর্তী কিছু অস্পষ্ট বিষয় রয়েছে, অধিকাংশ মানুষ যা জানে না। সুতরাং যে ব্যক্তি অস্পষ্ট বিষয়সমূহ থেকে বেঁচে থাকবে, সে তার দ্বীন ও মর্যাদাকে পূর্ণতা দান করবে। আর যে ব্যক্তি অস্পষ্ট বিষয় সমূহে পতিত হবে, সে হারামে পতিত হবে। যেমন একটি রাখাল ক্ষেতের সীমানায় ছাগল চরালে সে শস্য ক্ষেতে প্রবেশ করতে পারে। মনে রেখো, প্রত্যেক বাদশাহর একটি সীমানা রয়েছে। আর আল্লাহর সীমানা হচ্ছে তাঁর হারাম সমূহ’।[24]
রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, ‘সৎকর্ম হ’ল উত্তম চরিত্র। আর পাপকর্ম হ’ল যে কাজ তোমার মনে খটকা সৃষ্টি করে এবং তা অন্য কারো অবগত হওয়াকে তুমি অপসন্দ কর’।[25]
তাই পরহেযগারিতা অর্জনের জন্য অবশ্যই সকল প্রকার সন্দেহপূর্ণ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
(৩) আর্থিক লোভ-লালসা পরিহার করা
পরহেযগারিতা অর্জনের জন্য অর্থের লোভ পরিত্যাগ করে সর্বদা পরকালীন মুক্তি লাভকে প্রাধান্য দিতে হবে।
ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর নিকট একজন লোক এসে কোন একটি বিষয়ে সাক্ষী দিলে তিনি বললেন, আমি তোমাকে চিনি না। আর আমার না চেনায় তোমার কোন ক্ষতি হবে না। তুমি একজন লোক নিয়ে আস যে তোমাকে চেনে। এ কথা শুনে উপস্থিত লোকদের একজন বলল, আমি তাকে চিনি। ওমর (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাকে কি হিসাবে চেন? সে বলল, ন্যায়পরায়ণ এবং মর্যাদাবান ব্যক্তি হিসাবে।&ওমর (রাঃ) বললেন, সে কি তোমার নিকট প্রতিবেশী? তুমি কি তার রাত-দিন, গোপন-প্রকাশ্য সকল বিষয়ে অবগত? সে বলল, না। তুমি কি তার সাথে টাকা-পয়সার লেন-দেন করেছ, যা মানুষের পরহেযগারিতার প্রমাণ? লোকটি বলল, না। ওমর (রাঃ) বললেন, তুমি কি তার সাথে কখনোও সফরে সঙ্গী হয়েছিলে, যার মাধ্যমে চারিত্রিক মাধুর্যের প্রমাণ পাওয়া যায়? লোকটি বলল, না। তখন তিনি বললেন, তুমি তার সম্পর্কে জান না। সুতরাং তুমি এমন একজন লোক নিয়ে আস, যে তোমার সম্পর্কে জানে।[26]
সুফিয়ান ছওরীকে দ্বীনদারী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে, উত্তরে তিনি বলেন,
‘মনে রেখো, আমি দিরহামের নিকট পরহেযগারিতাকে খুঁজে পেয়েছি। এর বাইরে তুমি অন্য কিছুকে ধারণা কর না’। ‘যখন তুমি দিরহাম অর্জনে সক্ষম হ’লে অতঃপর তা পরিত্যাগ করলে। জেনে রাখো! এখানেই একজন মুসলমানের তাক্বওয়া বা পরহেযগারিতা (লুকিয়ে) রয়েছে।[27]
(৪) ছোট-বড় সকল কর্মের হিসাব দেওয়ার ব্যাপারে সজাগ থাকা
আবুল আববাস ইবনু আত্বা বলেন, পরহেযগার লোকদের দ্বীনদারী সৃষ্টি হয় শস্যদানা ও অণু পরিমাণ পাপকে স্মরণ করার মাধ্যমে। তাকে স্মরণ রাখতে হবে যে, আল্লাহ আমাদের প্রতিটি ভাল ও মন্দ কর্মের হিসাব নিবেন। তিনি হিসাবের ক্ষেত্রে কোন প্রকার ছাড় দিবেন না। বরং কঠোরতা করবেন। তার চেয়ে আরও কঠিন ব্যাপার হ’ল যে, তিনি তাঁর বান্দাদের থেকে অণুকণা ও শস্যদানা সমপরিমাণ বিষয়েও হিসাব নিবেন।[28]
সুতরাং বান্দাকে অবশ্যই হিসাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে এবং আমাদেরকে একদিন আল্লাহর সামনে হিসাবের জন্য দাঁড়াতে হবে এ কথা চিন্তা করে যাবতীয় কর্ম সম্পাদন করতে হবে।
(৫) আল্লাহকে ভয় করা
আবু আব্দুল্লাহ আল-ইনতাকী বলেন, আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করার মাধ্যমে তাক্বওয়া অর্জিত হয়।[29] যার অন্তরে আল্লাহভীতি থাকে, সে কখনোই নিষিদ্ধ বিষয়ের ধারে-কাছে যায় না। আললাহভীতিই দ্বীনের মূল ভিত্তি। তাই এটি ব্যতীত প্রকৃত দ্বীনদারী অর্জন করা কখনোই সম্ভব নয়।
(৬) সর্বদা মৃত্যুর কথা চিন্তা করা
একদা রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল ‘সর্বাধিক বিচক্ষণ মুমিন কে’? উত্তরে তিনি বললেন, ‘যে মুমিন মৃত্যুকে অধিক স্মরণ করে এবং পরবর্তী জীবনের জন্য সবচেয়ে সুন্দর প্রস্ত্ততি গ্রহণ করে’।[30]
ইয়াহইয়া ইবনু মু‘আয বলেন, তিনটি অভ্যাসের চর্চা দ্বারা দ্বীনদারী অর্জিত হয়- আত্মমর্যাদাবোধ, বিশুদ্ধ আক্বীদা এবং মৃত্যুর ভয়।[31]
আত্মমর্যাদাবোধ মানুষকে অনেক অপরাধমূলক কাজ হ’তে বিরত রাখে। আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মানুষ মানহানিকর কোন কর্মে অগ্রসর হয় না। এছাড়া আক্বীদার বিশুদ্ধতা ব্যতীত মানুষের কোন আমলই আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই বিশুদ্ধ আক্বীদাকে মানুষের যাবতীয় আমলের রূহ হিসাবে গণ্য করা হয়।
অতঃপর মৃত্যুর অপরিহার্যতা বিষয়ে সকলেই অবগত। তবে মানুষ যখন মৃত্যুর কথা বেশী বেশী চিন্তা করে তখন তার অন্তর নরম হয় এবং দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা দুর্বল হয়ে পড়ে। শতকষ্টেও সে আখেরাতের পুরস্কারের কথা ভেবে আনন্দিত হয়।
তাই মানুষ মৃত্যুকে যত বেশী স্মরণ করবে, ততই সে দুনিয়াবী লোভ-লালসা, পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত থাকবে এবং প্রকৃত দ্বীনদারী অর্জনে সক্ষম হবে।
(৭) বিদ‘আত পরিত্যাগ করা
ইমাম আওযা‘ঈ (রহঃ) বলেন, আমরা আলোচনা করতাম যে, যখন কোন ব্যক্তি বিদ‘আতে লিপ্ত হয়, তখন তার তাক্বওয়া-পরহেযগারিতাকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।[32]
(৮) ইলম অনুযায়ী আমল করা
ইলম অনুযায়ী আমল করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সাহ্ল ইবনু আব্দুল্লাহ বলেন, যখন কোন মুমিন তার ইলম অনুযায়ী আমল করবে, তখন তার ইলম তাকে তাক্বওয়া ও পরহেযগারিতার দিকে পথ প্রদর্শন করবে। আর যখন সে তাক্বওয়া অবলম্বন করবে, তখন তার অন্তর আল্লাহ রাববুল আলামীনের সাথে যুক্ত হবে।[33]
ইলম অনুযায়ী আমল করা দ্বীনদারী অর্জনের পূর্ব শর্ত। যারা তাদের ইলম অনুযায়ী আমল করে আল্লাহ রাববুল আলামীন তাদের জন্য হেদায়াতের পথ খুলে দেন।
(৯) দুনিয়া বিমুখ হওয়া
মানুষকে দুনিয়াতেই বেঁচে থাকতে হয় এবং দুনিয়াতে বেঁচে থেকে আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব-কর্তব্য সমূহ পালন করেই তাকে আখেরাতের পাথেয় অর্জন করতে হয়। কারণ দুনিয়া আখেরাতের শস্যক্ষেত্র। এখানে মানুষ স্বল্প সময়ের জন্য বেঁচে থাকে। তারপর তাকে অবশ্যই তার আসল গন্তব্য আখেরাতের পথে পাড়ি দিতে হয়। দুনিয়াবী জীবন কারো জন্য চিরস্থায়ী নয়। কিন্তু মানুষ দুনিয়ার মোহে পড়ে আখেরাতকে ভুলে যায় এবং দুনিয়া অর্জনের জন্য রাত-দিন পরিশ্রম করে।
এ কথা আমাদেরকে অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে যে, দুনিয়া ও আখেরাতের মহববত কখনোই একত্রে অবস্থান করতে পারে না। যার অন্তর দুনিয়ার প্রতি মোহগ্রস্থ, তার অন্তর থেকে আখেরাতের পাথেয় অর্জনের চিন্তা দূর হয়ে যায়। আর যার অন্তরে আখেরাতের মহববত থাকে, তার অন্তরে দুনিয়াবী লোভ-লালসা বিস্তার লাভ করতে পারে না।
আবু জাফর আল-মিখওয়ালী বলেন, যে অন্তর দুনিয়াকে তার সাথী বানিয়েছে সে অন্তরে তাক্বওয়া-পরহেযগারিতা বসবাস করা হারাম হয়ে যায়।[34]
(১০) ক্রোধ দমন করা
ক্রোধ মানুষের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এটি মানুষের জীবনে অনেক বিপদ ডেকে আনে। আবু আব্দুল্লাহ আস-সাজী (রহঃ) বলেন, যখন কোন অন্তরে ক্রোধ প্রবেশ করে, তখন তার অন্তর থেকে তাক্বওয়া দূর হয়ে যায়। মানুষ যখন ক্রুদ্ধ হয়, তখন সে যা ইচ্ছা তাই করে ফেলে। ফলে তার মধ্যে পরহেযগারিতা অবশিষ্ট থাকে না।[35]
(১১) কম খাওয়া এবং প্রবৃত্তিকে দমিয়ে রাখা
মাত্রাতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ মানুষের জন্য বহু অকল্যাণ বয়ে আনে। অধিক খাদ্যগ্রহণের ফলে মানুষকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হ’তে হয়। আক্রান্ত হ’তে হয় বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধিতে। ইবাদত-বন্দেগীতে অলসতা আসে। প্রবৃত্তির চাহিদা বৃদ্ধি পায়। তাই প্রকৃত দ্বীনদারী অর্জনের জন্য অবশ্যই মাত্রাতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। ইমাম গাযযালী বলেন, দ্বীনদারী ও তাক্বওয়ার চাবিকাঠি হ’ল, কম খাওয়া এবং প্রবৃত্তিকে দমিয়ে রাখা।[36]
(১২) আশা-আকাংখাকে সীমিত করা
আশা-আকাংখার মাঝেই মানুষ বেঁচে থাকে। এটাই মানুষকে কর্মের দিকে ধাবিত করে। দীর্ঘ দিন বাঁচার আশায় মানুষ সঞ্চয় করে এবং ধন-সম্পদ হাছিলের অবিরাম চেষ্টা চালায়। মানুষ এত দীর্ঘ আশা করে থাকে যা তার জীবনকালের চেয়েও দীর্ঘ। কিন্তু এই দীর্ঘ আশা ইহকাল-পরকালে মানুষের জন্য কখনোই কোন কল্যাণ বয়ে আনে না। সুতরাং আকাংখাকে সীমিত করতে হবে। প্রতিটি দিনকেই জীবনের শেষ দিন হিসাবে গণ্য করতে হবে। ইবরাহীম বিন আদহাম বলেন, স্বল্প লোভ ও আশা-আকাংখা মানুষের মধ্যে সততা ও দ্বীনদারী সৃষ্টি করে।[37]
(১৩) বাক সংযত হওয়া
যবানকে হেফাযত করা অতীব গুরুত্বগূর্ণ একটি বিষয়। একজন মানুষের জন্য কঠিনতম ও কষ্টকর কাজ হ’ল, যবানের হেফাযত করা। সেকারণ রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার জন্য দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী বস্ত্ত (জিহবা) এবং দুই রানের মধ্যবর্তী বস্ত্ত (লজ্জাস্থান)-এর যামিন হবে, আমি তার জন্য জান্নাতের যামিন হব’।[38] হাসান ইবনু ছালেহ বলেন, আমরা দ্বীনদারী অনুসন্ধান করে দেখতে পাই যে, যবান ছাড়া আর কোন কিছুতে তা এত দুর্বল নয়’।
ফুযায়েল ইবনু আয়ায বলেন, সবচেয়ে কঠিন পরহেযগারিতা হ’ল, মানুষের যবান। যার যবান ঠিক থাকবে তার বাকি সবকিছু ঠিক থাকবে। তাই পরহেযগারিতা অর্জনের জন্য বাক সংযম একান্ত যরূরী।
(১৪) কথা কম বলা
কথা কম বলা মানুষের একটি বিশেষ গুণ। যারা কথা কম বলে তারা অনেক ভুল-ভ্রান্তি থেকে নিরাপদ থাকে এবং মানুষ তাদের ভালবাসে। আর যে ব্যক্তি কথা বেশী বলে, তার মধ্যে বাড়িয়ে বলার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। তার দোষ-ত্রুটি মানুষের সামনে অধিকহারে প্রকাশ পায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে অথবা চুপ থাকে’।[39] একদিন তিনি আবু যর গেফারী (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বললেন, তুমি উত্তম চরিত্রবান হও এবং দীর্ঘ সময় চুপ থাক।[40]
আব্দুল্লাহ ইবনু আবি যাকারিয়া বলেন, যার কথা বেশী হবে, তার ভুল-ভ্রান্তি বেশী হবে, আর যার ভুল-ভ্রান্তি বেশী হবে, তার তাক্বওয়া হরাস পাবে, আর যার তাক্বওয়া কমে যাবে, আল্লাহ তা‘আলা তার অন্তরকে নিষ্প্রাণ বানিয়ে দিবেন।[41]
(১৫) ঝগড়া পরিহার করা
ঝগড়া-বিবাদ মানুষের জন্য বিপদ ডেকে আনে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর নিকটে সবচেয়ে অপসন্দনীয় হ’ল সেই ব্যক্তি, যে অধিক ঝগড়াটে ও বিবাদকারী’।[42] আওযাঈ হাকাম ইবনু গায়লান আল-কাইসীর নিকট লিখিত চিঠিতে বলেন, তুমি ঝগড়া-বিবাদ ছেড়ে দাও, যা তোমার অন্তরকে কলুষিত করে, দুর্বলতা তৈরি করে, হৃদয়জগতকে শুকিয়ে দেয় এবং কথা ও কাজের মধ্যে তাক্বওয়া অবশিষ্ট রাখে না।[43]
(১৬) অন্যের চর্চা ছেড়ে দিয়ে নিজের দোষ-ত্রুটির দিকে নযর দেওয়া
পরহেযগারিতা অর্জনের জন্য অন্যের দোষান্বেষণ থেকে বিরত হ’তে হবে। অধিকাংশ মানুষ অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু নিজের দোষ খুঁজে দেখে না। কোন মানুষই দোষ-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়, সে কথা স্মরণে রেখে নিজের দোষ-ত্রুটির দিকে দৃষ্টি দিতে হবে এবং এজন্য পরম করুণাময় আল্লাহর নিকটে একাগ্রচিত্তে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। ইবরাহীম বিন আদহামকে কিভাবে তাক্বওয়া পূর্ণতা লাভ করবে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, তুমি তোমার গুনাহের বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে চিন্তা কর এবং তোমার প্রভুর নিকট তওবা কর, তাতে তোমার অন্তরে তাক্বওয়া বা দ্বীনদারী প্রতিষ্ঠিত হবে।[44]
(১৭) অনর্থক কাজে সময় নষ্ট করা হ’তে বিরত থাকা
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘ব্যক্তির ইসলামী সৌন্দর্য্য হ’ল, অনর্থক কর্মকান্ড পরিহার করা’।[45] যেসব কাজ ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে ইহকাল ও পরকালে কোন সুফল বয়ে আনে না, সেরূপ অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকা তাক্বওয়ার গুণে গুণান্বিত হওয়ার জন্য একান্ত যরূরী।
সাহ্ল ইবনু আব্দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অনর্থক কাজে লিপ্ত হয়, সে পরহেযগারিতা অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়’।[46]
(১৮) লজ্জাশীল হওয়া
লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘লজ্জাশীলতা ঈমানেরই অংশ’।[47] তিনি আরো বলেন,‘লজ্জাশীলতা কল্যাণ বৈ কিছুই আনয়ন করে না’।[48] লজ্জাশীলতা মানুষকে অধিকাংশ অনৈতিক কাজকর্ম থেকে বিরত রাখে। লজ্জাবোধের অভাবে মানুষের অধিকাংশ অপকর্ম সংঘটিত হয়। সুতরাং লজ্জাশীলতা পরহেযগারিতা অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ সোপান।
ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন, যার লজ্জা কম হয়, তার তাক্বওয়াও কম হয়। আর যার তাক্বওয়া কম হয়, তার অন্তর মারা যায়।[49]
পরহেযগারিতা মানুষকে ইহকালে যাবতীয় হতাশা, দুশ্চিন্তা থেকে এবং যাবতীয় পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্তি দেয়। সাথে সাথে আখেরাতে অনাবিল শান্তি এবং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে ধন্য করে। তাই প্রত্যেক মুসলিম ভাই-বোনের জন্য পরহেযগারিতা অবলম্বন করা একান্ত যরূরী। মহান আল্লাহ দুনিয়াবী জীবনের এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে আমাদেরকে যাবতীয় অন্যায়-অনাচার, পাপ-পঙ্কিলতা থেকে বিরত থেকে তাক্বওয়া-পরহেযগারিতার সাথে আমল করার তাওফীক দান করুন। আর বিনিময়ে পরকালে জান্নাত লাভে ধন্য করুন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ার (ভোগ-বিলাস) অন্বেষণে লিপ্ত থাকে, আখেরাতকে সে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর যে আখেরাতের পাথেয় অন্বেষণে লিপ্ত থাকে, সে দুনিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অতএব তোমরা চিরস্থায়ী আখেরাতের জন্য ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত কর আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন। আমীন!
কোন মন্তব্য নেই:
/>