শনিবার, ৮ জুন, ২০১৩

কাফিরদের সঙ্গে মিত্রতার বন্ধন প্রমাণ করে এমন ২০টি নিদর্শন !!!

কাফিরদের সঙ্গে মিত্রতার বন্ধন প্রমাণ করে এমন ২০টি নিদর্শন !!!




১.কাফিরদের উপর সন্তুষ্ট থাকা  
কাফিরদের সঙ্গে মিত্রতার প্রথম ধরণটি হল কাফিরদের উপর সন্তুষ্ট থাকা বা তাদের কুফরি কর্মে রাজি-খুশিথাকা_এমনকি তাদের স্বীকৃত কুফরি কর্মকে প্রত্যাখানের ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত হওয়া বা সন্দেহ পোষণ করাও এর অন্তর্ভুক্ত৷সহজ কথায়, কাফিরদের কুফরি কর্মকান্ডের যে কোন বিষয়ের স্বীকৃতি-ই কুফরি হিসেবে গণ্য হবে৷
 এটি খুবই স্পষ্ট যে,কাফিরদের যে সাহায্য-সহযোগিতা করেতাদের সঙ্গে চলাফেরাউঠাবসা করে সে তো তাদেরই একজন৷ এবিষয়ে আলেমদের সর্বসম্মত মত হল, যে কাফিরদের কিংবা তাদের কুফরী কর্মকান্ডকে ভালবাসে সেও কাফির৷ কেননা,হৃদয়ের ভালবাসা এবং ঘৃণা এমন দুটি জিনিস যা নিখাঁদ বা খাঁটি হলে স্বীয় বিশ্বাস-চিন্তা চেতনা থেকে বিচূ্যত হয়েএদিক সেদিক যেতে পারে না৷ এ অর্থে কাফিররা স্বভাবতঃই কুফরি ভালবাসবে এবং ঈমানদারগণ ঈমান ভালবাসবেন৷ আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেন: যদি তারা আল্লাহনবী মুহাম্মদ (সাঃএবং তাঁর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস রাখততবে তারা কখনোই তাদেরকে (কাফিরদেরবন্ধু হিসেবে গ্রহণ করত না(রক্ষাকারী এবং সাহায্যকারী হিসেবে), কিন্তু তাদের অধিকাংশই ফাসিক (বিদ্রোহীআল্লাহর অবাধ্য) (:৮১) 

২.কাফিরদের উপর নির্ভরতা 
কোন ধরণের সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়ার জন্য কিংবা নিরাপত্তার খাতিরে কাফিরদের উপর নির্ভর করাও কাফিরদেরসঙ্গে মিত্রতার পরিচয় বহন করে ৷ এটি কাফিরদের সঙ্গে মিত্রতার দ্বিতীয় নির্দশন৷
আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) এই বলে এ সম্পর্কে নিষেধ করেনঃ “মুমিনগন যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কেন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তাদের কেন সম্পর্ক থাকবে না। তবে যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোন অনিষ্টের আশঙ্কা কর, তবে তাদের সাথে সাবধানতার সাথে থাকবে আল্লাহ তা’আলা তাঁর সম্পর্কে তোমাদের সতর্ক করেছেন। এবং সবাই কে তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে”। (৩:২৮)

  • এবং "হে মুমিনগণ ! তোমরা ইহুদী  খৃষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করিও নাতারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু৷ তোমাদের মধ্যে কেউ তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই একজন হবে৷ নিশ্চয় আল্লাহ যালিম ম্প্রদায়কে ৎপথে পরিচালিত করেন না" (৫ : ৫১) 
  • ইবনে তাইমিয়া তার বর্ণনায় হুবহু অনুরূপ বাক্যগুলির উলেখ করে অতিরিক্ত আরেকটি আয়াতের উলেখকরেছেন:"যদি তারা আল্লাহ , নবী এবং তাঁর প্রতি যা অবতীর্ন হয়েছে তাতে বিশ্বাস রাখতো তবে তারা কখনোই তাদেরকে (কাফিরদেরকেবন্ধু হিসেবে গ্রহণ করত না" ( :৮১) 
 ৩. কুফরির কোন বিষয়ে একমত পোষণ
কুফরি কোন বিষয়ের সঙ্গে একমত পোষণ করার অর্থ হল আল্লাহর বক্তব্যের বিরূদ্ধে তাদের বক্তব্য মেনে নেয়া৷ তাদেরবিশ্বাসহীনতা সম্পর্কে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেন "আপনি কি তাদের দেখেননি যাদের কিতাবের একাংশ দেয়া হয়েছিলতারা জিব্ত  তাগুতে বিশ্বাস করে ? এরা কাফিরদের সম্পর্কে বলেএদের পথ মুমিনদের পথ অপেক্ষা প্রকৃষ্টতর" (:৫১)
এবং "যখন আল্লাহর পক্ষ হতে তাদের নিকট রাসূল আসল, যে তাদের নিকট যা আছে তার সমর্থক; তখনযাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের একদল আল্লাহর কিতাবটিকে পশ্চাতে নিক্ষেপ করল, যেন তারাজানে না৷ এবং সুলায়মানের রাজত্বকালে শয়তানরা যা আবৃত্তি করত তারা তা অনুসরণ করত"৷ (২:১০১-১০২)
এই আয়াতের মধ্য দিয়ে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) আমাদের জানিয়েছেন কিভাবে ইহুদিরা আল্লাহর কিতাবকে পরিত্যাগ করে যাদুর অনুসরণ করেছিল৷ অনুরূপভাবে আজও মুসলিম উম্মাহর মধ্য থেকে যে বাযারাই কাফিরদের সঙ্গে যোগ দিবে এবং তাদের অপকর্মের সঙ্গী হবে সে-ই মুনাফিকির কারণে নিজের জন্য ডেকে আনবেদুঃসহ যন্ত্রণা ও আযাব৷ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এরপরও যারা তাদের মুসলিম মনে করে তারা তো গোলক ধাঁধায়জড়িয়ে পড়েছে৷
আজ এই উম্মাহর এতই বেহাল দশা যে, তারা আজ সত্যের লেশমাত্র কোন মতে ধরে আছে৷ আজ এই উম্মাহরসন্তানদের অবস্থা ঐ তোতাপাখিগুলির মতো যারা কিছু না বুঝেই বুলি আওড়ায়, 'আমি কমিউনিজম কে একটি দর্শন হিসেবে বিশ্বাস করি', কিংবা 'আমি সোশালিজমে বিশ্বাসীকিংবা বলে , 'গণতন্ত্র একটি সুন্দর রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং সংবিধান সেক্যুলার হওয়া উচিত' কাফিররা কুফরের এই মূলনীতিগুলো মুসলমানদের আবাসভূমিতেবাস্তবায়নের এজেন্ডা নিয়েছে: এবং, এই লক্ষ্যে জনগণকে এরা এ সমস্ত শয়তানি বিশ্বাসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷ কেননা,কাফিরদের নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন এই উম্মাহর তরুণ-যুবক-তরুণীদের নিঃশর্ত আনুগত্য ,তাঁবেদারি ওসেবাদাসগিরি মনোভাব৷ যখন কোন মুসলিম আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাহর দিকে লোকদের ফিরে আসার জন্যআহ্বান করে, তখন এরাই তাদেরকে গণশত্রু বা জনগণের শত্রু হিসেবে ঘোষনা দেয়৷ আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা)বলেন "ইহুদী এবং খৃষ্টানরা কখনোই আপনার ওপর সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন" (:১২০)  

 ৪. কাফিরদে সান্নিধ্য অণ্বেষণ
কাফিরদের মমতা-ভালবাসা পাওয়ার চেষ্টা করার অর্থ হল তাদের সঙ্গে নিজেকে সম্পর্কযুক্ত করা৷ আল্লাহ (সুবহানাহুওয়া তায়ালা) এ রকম কাজে নিষেধ করেন, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেন: " আপনি এমন কোন সমপ্রদায়কেখুঁজে পাবেন না, যে আল্লাহ এবং শেষ দিবসের ভয় করে অথচ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের যারা বিরোধিতা করে তাদেরকেবন্ধুরূপে গ্রহণ করে, হোক সে তার পিতা, পুত্র, ভ্রাতা কিংবা তাদের জ্ঞাতিগোত্র ৷" (৫৮:২২)
ইবনে তাইমিয়া বলেন, 'আল্লাহ আমাদের সুস্পষ্ট জানিয়েছেন, কোন ঈমানদারই আল্লাহ ও রাসূলকে চ্যালেঞ্জকারীদেরআনুকূল্য প্রত্যাশী হয় না৷ দুটি বিপরীত ধর্মী জিনিষ যেমন একে অপরকে তাড়িত করে, মুমিনের ঈমানও তদ্রুপমুমিনকে এরুপ কাজ থেকে বিরত রাখে৷ সুতরাং, ঈমান থাকা অবস্থায় আল্লাহর শত্রুদের প্রতি অনুকুল মনোভাব পোষণঅসম্ভব৷ যদি কেউ অনুভব করেন যে তার ভিতর এই মনোভাবের ঘাটতি রয়েছে , তাহলে বুঝতে হবে যে, তার ঈমানেগলদ রয়েছে৷' আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেন: "হে মুমিনগণ ! তোমরা আমার শত্রু এবং তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো নাতোমরা কি তাদের প্রতি মমতা পোষণ করছোঅথচ তোমাদের নিকট যে সত্য এসেছে তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে" (৬০:)
৫ কাফিরদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ
কাফিরদের সঙ্গে কেউ একাত্মতা প্রকাশ করলে সন্দেহাতীতভাবে সে কাফিরদের মিত্রে পরিণত হয়ে যায়৷ ৷ আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেন : "যারা ভ্রষ্টতা করে তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করোনাঅন্যথায় অগ্নি তোমাদের স্পর্শ করবেএবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোনই রক্ষক নেইএবং তোমরা সাহায্যও প্রাপ্ত হবে না"
  • আল কুরতুবি বলেন, 'কোন কিছুর প্রতি একাত্মতা প্রকাশের অর্থ হল তার ওপর নির্ভর করা এবং সমর্থনের জন্য তারদারস্থ হওয়া এবং এভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরী করা যা তোমাকে তুষ্টি দেয়৷'
  • কাতাদাহ্ বলেন, 'এই আয়াতের অর্থ হল, কোন মুসলিমের পক্ষেই কাফিরদের পছন্দ করা কিংবা তাদের খেয়াল-খুশিরঅনুসরণ করা সঙ্গত নয়৷' যারা চিন্তা-ধারণায় পরিবর্তনশীলতাকে ভালবাসে এবং ধর্ম-বিদ্রোহীতায় উত্সাহী তারাদু'ধরণের ; তারা হতে পারে কাফির অথবা পুরোপুরি মুরতাদ৷ আর এর নির্ধারণ সাহচর্যের মাধ্যমেই তৈরী হয়; অর্থাত্একজন কাফিরের বন্ধু কাফির, এবং একজন মুরতাদ বা অবাধ্যের বন্ধু আরেকজন অবাধ্য৷
  • আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) নবীকে (সঃ) উদ্দেশ্য করে বলেন : "আমি আপনাকে অবিচলিত না রাখলে আপনি তাদের দিকে ঝুকেই পড়তেন প্রায়আর তা হলে অবশ্যই আমি আপনাকে ইহজীবনে দ্বিগুণ এবং পরজীবনে দ্বিগুণ শাস্তি আস্বাদন করাতামতখন আমার বিরূদ্ধে আপনি কোন সাহায্যকারী পেতেন না"(১৭:৭৪-৭৫) আমাদের এটি মনে রাখতে হবে যে, এভাবে সৃষ্টির সেরা নবীকে (সঃযে রকম ধমকের সুরে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ব্যাপারে সম্বোধন করেছেনসেক্ষেত্রে আমাদের অবস্থা কিরকম হতে পারে৷ (মুজমুআত তাওহীদ )
৬. কাফিরদের কুফরি বিশ্বাসের প্রশংসাপ্রশস্তি  
কাফিরদের কুফরি বিশ্বাসের প্রশংসা- প্রশস্তি করার মধ্য দিয়ে তাদের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনের বিষয়টি প্রতীয়মান হয়৷আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেন: "তারা ইচ্ছা পোষণ করে যেআপনি তাদের সঙ্গে এক ধরণের সমঝোতায় (ধর্মীয় বিষয়ে সৌজন্যতা সহকারেআসেনসুতরাং তারাও আপনার সঙ্গে সমঝোতা করবে"(৬৮ : ) যখন মুসলিমরা কাফিরদের শক্তিমত্তায় অনেক বেশি শক্তিশালী দেখতে পায় তখন তারা তা দেখে বিমূঢ় হয়েপড়ে এবং এটি তাদের মনে এই ধারণার জন্ম দেয় যে, কাফিররা তাদের থেকে সর্বদিক থেকেই শ্রেষ্ঠতর : সুতরাং তারাকাফিরদের মুকাবিলায় তাদের দ্বীনের শিক্ষা পরিত্যাগ করে, এবং এভাবে তারা বিচ্যুত হয়ে পড়ে, এই ভয়ে যে, পাছেলোকে তাদের 'ফ্যানাটিক' বলে৷ নবী (সঃএরকম লোক দেখে উলেখ করেছেন, "তোমরা সেই জাতিসমূহের অনুসরণ করবে যারা তোমাদের পূর্বে ছিলএবং অনুসরণ করবে শিরায়-শিরায়রন্ধ্রে-রন্ধ্রেএমনকি তারা যদি তোমাদের গোখরে সাপের গর্তেও নিয়ে যায়তোমরা তার অনুসরণ করবে৷ আমরা বললামহে আল্লাহর রাসূল ! (আপনি কি বুঝাতে চানইহুদী এবং খৃষ্টানদের ? তিনি বললেন, 'তারা ছাড়া আর কে' ? কাফিরদেরএই অতিতোষণের ফাঁদটি শয়তান সুকৌশলে পেতে রেখেছে যাতে করে শয়তান মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়েরাখতে পারে৷ এই পরিপ্রেক্ষিতে, মুসলিমদের শয়তানের পক্ষ থেকে পেতে রাখা এই অপ্রত্যাশিত এবং অনাকাঙিক্ষত ফাঁদথেকে সর্তকতার সঙ্গে দূরে থাকতে হবে এবং তাকে আত্মসচেতন হতে হবে৷ আর তাকে এই জ্ঞান দিতে হবে যে, আল্লাহরদেয়া বিধান অনুসারে আল্লাহর পথে অটল থাকলে সে-ই টিকে থাকবে এবং মূলতঃ সে-ই হবে শক্তিশালী৷
৭. কাফিরদের অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা
কাফিরদের অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা তাদের সাথে মৈত্রী বন্ধনের নিদর্শক৷ আল্লাহ (সুবঃ) বলেন: "হে মুমিনগণ !তোমাদের আপনজন ব্যতীত অন্য কাউকেও অনরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করিও না৷ তারা তোমাদের অনিষ্ট করতে ত্রুটি করবে না ; যা তোমাদের বিপন্ন করে তাই তারা কামনা করে  তাদের মুখে বিদ্বেষ প্রকাশ পায় এবং তাদের হৃদয় যা গোপন রাখে তা আরো গুরুতর  তোমাদের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করেছি,যদি তোমরা অনুধাবন কর " (৩;১১৪) এই আয়াতটি নাযিল হয়েছিল মুসলিমদের সেই দল সম্পর্কে যারা মুনাফিকএবং ইয়াহুদিদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক বজায় রাখত, কেননা সে সময়ে তারা (মুনাফিক ও ইয়াহুদি) তাদের (মুসলিমদের )প্রতিবেশী ও বন্ধু ছিল ৷ আল্লাহ এই আয়াত নাযিল করে মুসলিমদের কাফির-মোনাফিকদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতেনিষেধ করলেন৷ অন্তরঙ্গতা শব্দটি দ্বারা বিশ্বাস ও আস্থার নৈকট্য বুঝানো হয়৷ পৃথিবীতে বরাবরই এমন কিছু লোক থাকেযারা মানুষের কাছে অন্যদের থেকে বেশি বিশ্বস্ত হয়৷ মুসলিমরা যেন কাফিরদের অন্তরঙ্গ ও বিশ্বস্ত মনে করে প্রতারিত নাহতে পারে সে লক্ষেই আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) মুসলিমদের কাফিরদের আসল রূপটি পূর্বেই উন্মোচিত করলেন৷আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেন, 'তারা তোমাদের অনিষ্ট করতে কিছু মাত্র পিছপা হবে না৷ রাসূলের সময়েকাফিররা মুসলিমদের সম্পর্কে যা কিছু আবিষ্কার করতো তা-ই বাকি সকল কাফিরদের মাঝে রটিয়ে দিতো৷ আবু দাউদেবর্ণিত আছে, নবী (সঃ) বলেন, "একজন ব্যক্তির দ্বীন তার সহচর বন্ধুদের মতই হয়ে থাকেসুতরাং তোমাদের যে কেউ যেন সতর্ক হয় কাকে সে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবে৷"
৮. কাফিরদের অনুগত হওয়া
কাফিরদের ইচ্ছা-আকাংখার আনুগত্য তাদের সঙ্গে মৈত্রীর আরেকটি নিদর্শন৷ আল্লাহ (সুবঃ) বলেন আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে, নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্য কলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা,আপনি তার অনুগত্য করবেন না (১৮:২৮)
এবং "হে মু'মিনগণ ! যদি তোমরা কাফিরদের আনুগত্য কর তবে তারা তোমাদেরকে বিপরীত দিকে ফিরিয়েদিবে এবং তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে৷" (৩:১৪৯)
আল্লাহ (সুবঃ) আরও বলেনঃ "নিশ্চয়ই শয়তানেরা তাদের বন্ধুদেরকে তোমাদের সাথে বিবাদ করতে প্ররোচনাদেয়৷ যদি তোমরা তাদের কথামত চল তবে তোমরা অবশ্যই মুশরিক হয়ে যাবে৷"(৬:১২১) ইবনে কাছির এই সর্বশেষ আয়াত সম্পর্কে বলেন,যখন অন্যদের কথা মত আল্লাহ এবং তাঁর শরীয়াকে তাদের বক্তব্যের সমপর্যায়ে নিয়ে আসা হয় তখনই তা শির্ক হয়ে যায়৷ এটি এই আয়াতেও প্রতিয়মান হয়, "তারা (ইহুদী খৃষ্টানরাতাদের রাব্বী  ন্নাসীদের আল্লাহর পাশে তাদের প্রভু বানিয়ে নিয়েছে"
৯. কুরআন তাচ্ছিল্যকারীদের সঙ্গে একত্রে বসা
কাফিরদের সঙ্গে বসলে যখন তারা কোরানকে তাচ্ছিল্য করে তখন তাদেরই দলভুক্ত হতে হয়৷ আল্লাহ আমাদেরকে তাকরতে নিষেধ করেছেন৷ আল্লাহ (সুবঃ) বলেন: "কিতাবে তোমাদের প্রতি তিনি তো অবতীর্ণ করেছেন যেযখনতোমরা শুনবেআল্লাহর আয়াত প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে এবং তাকে বিদ্রূপ করা হচ্ছে তখন যে পর্যন্ত না তারা অন্যপ্রসঙ্গে লিপ্ত হবে তোমরা তাদের সাথে বস নাঅন্যথায় তোমরাও তাদের মত হয়ে যাবে৷ মুনাফিক এবংকাফিরদের তো আল্লাহ জাহান্নামে একত্র করবেন৷" (:১৪০)
ইবনে জারীর আত তাবারী ব্যাখ্যা করেন যে, এর অর্থ হল এই যে, যদি আপনি তাদের এ কাজ করতে দেখেন এবং এসম্পর্কে কিছুই না বলেন, তখন এটি সুস্পষ্ট হয় যে , আপনার আনুগত্য তাদের জন্য যা আপনাকে তাদের মত করে দেয়৷তিনি আরো বলেন,এই আয়াতের মাধ্যমে মুসলিমদের প্রতি পরিষ্কার ভাবে কাফিরদের ধর্মদ্রোহী যাবতীয় কর্মকান্ডেবসার ব্যপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে৷
অনুরূপভাবে নবী (সাঃ) বলেন,"যারা ভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত তাদের বাড়ী যেও না, অন্যথায় তোমরা অনুরূপ দুর্ভাগ্যের জন্যক্রন্দন করবে, নতুবা তা(দুর্ভাগ্য) তাদের কাছে যেভাবে এসেছে তোমাদের কাছেও অনুরূপভাবে আসবে৷"(বুখারী)

১০. মুসলিমদের উপর কাফিরদের কতৃত্ব প্রদান
মুসলিমদের উপর কাফিরদের কতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে মুসলিমদের কাফিরদের সঙ্গে মিত্রতায় আবদ্ধ হতে বাধ্য করা হয় ৷কেননা কতৃত্বশীল কাফিরদের প্রতি আনুগত্যের কারনে তাদের কুফরী কর্মকান্ডের বিরোধিতা করা মুসলিমদের পক্ষেঅসম্ভব হয়ে পড়ে৷ আর তাদের কর্তৃত্ব মেনে নেয়ার অর্থ হল তাদের পদ মর্যাদার প্রতি স্বীকৃতি জ্ঞাপন করা যা ইসলামীমূল্যবোধের সঙ্গে কোন ক্রমেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়৷ আল্লাহ বলেনঃ "এবং কখনই মু'মিনদের বিরূদ্ধে কাফিরদের জন্যকোন পথ রাখবেন না৷" (৪:১৪১)


১১. কাফিরদের উপর বিশ্বাস স্থাপন
কাফিরদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করার অর্থ হল তাদেরকে নিজেদের মিত্র বা বন্ধু মনে করা৷ অথচ, স্বয়ং আল্লাহ (সুবহানাহুওয়া তায়ালা) এদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন৷ আল্লাহ (সুবঃ) বলেন "কিতাবিদের মধ্যেএমন লোক আছে যেবিপুল সম্পদ আমানত রাখলেও ফেরত দিবেআবার এমন লোকও আছে যার নিকটএকটি দিনারও আমানত রাখলে তার পিছনে লেগে না থাকলে সে ফেরত দিবে নাতা  কারণে যেতারাবলে,' নিরক্ষরদের প্রতি আমাদের কোন বাধ্যবাধকতা নেই' এবং তারা জেনেশুনে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যাবলে৷" (:৭৫)
১২. কাফিরদের কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করা
কাফিরদের কার্যক্রমের উপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করা, তাদের পোষাকের অনুসরণ কিংবা তাদের লেবাস ও ফ্যাশনের সঙ্গেসঙ্গতি রেখে নিজেদের লেবাসের ষ্টাইল পরিবর্তন করা_এই জিনিসগুলি তাদের সঙ্গে মিত্রতার বিষয়টিকে পরিষ্কারকরে৷(মুজমুআত তাওহীদ)
১৩. কাফিরদের কাছে টানা ও কাফিরদের সাহচর্যে আনন্দ অনুভব করা
তাদের কাছে নিজেদের অন্তর্নিহিত অনুভূতি ব্যক্ত করা, তাদেরকে কাছে টানা এবং তাদের সম্মান করা তাদের সঙ্গে মৈত্রীবন্ধনেরই পরিচয় বহন করে৷ (মুজমুআত তাওহীদ)
১৪. কাফিরদের ভ্রষ্টতার কাজে কোন কিছু দিয়ে সহযোগিতা করা
তাদের ভ্রষ্টতায় সাহায্য করা কিংবা সাহায্য যুগিয়ে তাদের উত্সাহিত করার অর্থ হল নিজেকে তাদের মিত্রে পরিণতকরা৷ কুরআন দুটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে এই বিষয়টি পরিষ্কার করেছে, একটি হল লূত (আঃ) এর স্ত্রী সংক্রান্ত এবং অপরটিনূহ্ (আঃ) এর স্ত্রী সম্পর্কিত৷ লূত (আঃ) এর স্ত্রী তার শহরের লোকদের লূত (আঃ) এর বিরূদ্ধে সমর্থন যুগিয়েছিল এবংলূত (আঃ) এর লোকদের দুর্দশায় উৎফুল্ল হয়েছিল; এমনকি লূত (আঃ) এর অতিথিদের সম্পর্কে গোপনীয় তথ্য সরবরাহকরেছিল৷ অনুরূপ ঘটনা নূহ্ (আঃ) এর স্ত্রীর ক্ষেত্রেও সংঘটিত হয়েছিল৷ (তাফসীর ইবনে কাছীর)
১৫. কাফিরদের উপদেশ-পরামর্শ চাওয়া
কাফিরদের উপদেশ পরামর্শ শ্রবণ করা, তাদের উচ্চ আসনে আসীন করা কিংবা তাদের বন্দনা করা (মুজমু'আততাওহীদ) তাদের সঙ্গে মিত্রতার কতিপয় নিদর্শন যা বর্তমান সময়ে বেশি করে পরিলক্ষি হচ্ছে৷ ইতোমধ্যে আমরাপ্রাচ্যবাদী দার্শনিকদের উত্থান লক্ষ করেছি৷ এরা অতি চাতুর্যের সঙ্গে অনুসন্ধিৎস ও গবেষণার এক নতুন পদ্ধতিআবিষ্কারের দাবী করেছে৷ এই তত্ত্বের অনুসরণে এরা ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতিক্রিয়াশীল, পুরনো যুগের ফসিল ওপুরাতাত্তিক নিদর্শনের লেবেল এঁটে দিয়ে তথাকথিত প্রগতি ও সভ্যতার নতুন যুগের ঘোষণা দিয়েছে৷ আর এভাবে অতিচাতুর্যের সঙ্গে ইসলাম ও মুসলমানদের এরা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছে৷
১৬. কাফিরদের সম্মান করা
কাফিরদের বেশি বেশি সম্মানিত করা এবং নির্বোধের মত বিশাল বিশাল টাইটেলে ভূষিত করা তাদের প্রতি মিত্রতাপ্রর্দশনেরই নামান্তর৷ আমরা লক্ষ্য করি, কিছু লোক তাদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রকাশের ভঙ্গি হিসাবে তাদের সঙ্গে দেখাক..

কোন মন্তব্য নেই:

Comment here />

Widget ByBlogger Maruf
Widget ByBlogger Maruf