মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নির্যাতনকারীর বৃত্তান্ত
**************************
মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার ও নির্যাতনে নেতৃত্বদানকারী ডিসি ডিবি মোল্লা নজরুল চলতি সপ্তাহে ভিন্নভাবে আলোচনায় এসেছে।
শাহবাগী ব্লগার রাজীব হত্যার আসামীদেরও গ্রেফতার করেছিল এই লোক।
এই মোল্লা নজরুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক ক্যাডার। শেখ হাসিনার গত টার্মে পুলিশ ক্যাডারে ঢুকে সে। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিসিএসে চাকরি পেয়েছিল বলে একটি সূত্রের দাবি (তথ্যটি ভেরিফাই করার সুযোগ পাইনি)।
এই টার্মে হাসিনা মসনদ হাসিল করার পর মোল্লা নজরুল পুলিশে বিরাট প্রভাবশালী হয়ে উঠে। ডিবির লাভজনক পদে পোস্টিং পায়। সন্ত্রাসবিরোধী বিদেশী ট্রেনিং নিয়ে গত সাড়ে তিন বছর ডিবিতে তথাকথিত সন্ত্রাস/জঙ্গিবাদ দমনের দায়িত্ব পালন করে সে। সন্ত্রাস/জঙ্গিবাদ দমনের নামে মূলত হিজবুত তাহরীরকে সাইজ করার কাজটি নিষ্ঠুরতার সাথে [পশ্চিমা প্রভুদের চোখে, কৃতিত্বের সাথে] চালিয়ে যায় নজরুল। ব্লগার রাজীবের কথিত হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও রিমান্ডে স্বীকারোক্তির কারিগরও সে! নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির ওই ছাত্রদেরকে প্রথমে শিবির, পরে তাহরীর, তারও পরে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বানানো - সবই মোল্লা নজরুলের প্রতিভার সোনালি স্বাক্ষর!
লিংকে দেখুন
বড় অপারেশন মানেই মোল্লা নজরুল - এমনটাই নিয়ম হয়ে গিয়েছিল ডিবিতে। যেমন, মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারও তার নেতৃত্বেই করা হয়েছিল।
লিংকে দেখুন
মাহমুদুরকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতন সবই এই ক্যাডারের হাতে ঘটে।
১- লিংকে দেখুন
২- লিংকে দেখুন
সরকার, শাহবাগ - সবাই খুশিতে বাগ বাগ তখন! সবকিছু আরামে আরামেই চলছিল মোল্লার।
কিন্তু নিজ এলাকা নড়াইলের এক আওয়ামী ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাইমলাইটে আসে মোল্লা নজরুল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ৭ এপ্রিল ভোরে ডিবি পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী একদল লোক গার্মেন্ট ব্যবসায়ী ও নির্মাণ ঠিকাদার আবিদুল ইসলামের গুলশান ১-এর ৭ নম্বর রোডের ১৩ নম্বর বাড়ির বি/১০ নম্বর ফ্ল্যাটে অভিযান চালায়। ডিবির সদস্যরা সেখান থেকে ভোর ৬টায় তাকে ডিবির ডিসি (উত্তর) মোল্লা নজরুলের ইসলামের কক্ষে নিয়ে যায়।
আবিদুলকে মোল্লা নজরুলের "পাশের কক্ষে" নিয়ে ব্যাপক পেটাতে থাকে ইন্সপেক্টর আজাহার উদ্দিন ও এসআই হাসনাত। এক পর্যায়ে আবিদুলকে জানানো হয়, বাঁচতে হলে ১০ কোটি টাকা দিতে হবে। টাকা না দিলে হিজবুত তাহরীর বলে সারা জীবন জেল খাটানোর ভয় দেখানো হয়। নির্যাতনের ফলে এক সময় তিনি এক কোটি ৫ লাখ টাকা দিতে রাজি হন।
মোল্লা নজরুলের ওই "পাশের কক্ষে" আগেও এভাবেই সন্ত্রাস/জঙ্গিবাদ দমন হয়েছে - মিলেছে স্বীকারোক্তি, জুটেছে মোল্লার বাহ্বা! হয়তো মাহমুদুর রহমানকেও নেয়া হয়েছিল ওই "পাশের কক্ষে"!
আবিদুল যদি আওয়ামী ঘরানার না হতেন বা আওয়ামী এমপির সহায়তা না পেতেন, তাহলে এক্ষেত্রেও মোল্লার সাফল্যের মুকুটে আরো একটি পালক যুক্ত হতো - সন্ত্রাস/জঙ্গিবাদমুক্ত সোনার বাংলার দিকে দেশ এগিয়ে যেত; হয়তো সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯-এর ৭ ধারায় জঙ্গি অর্থায়নের একটি হাই প্রোফাইল মামলা দায়ের হতো। ইউনাইটেড হসপিটালের সজ্জন কার্ডিয়াক সার্জন ডা. গোলাম হায়দার রসুলকে যেভাবে রাতারাতি তাহরীরের উপদেষ্টা বানানো হয়েছিল, সেভাবে আবিদুলও হয়ে যেতেন গার্মেন্ট ব্যবসার ছদ্মাবরণে জঙ্গি অর্থায়নের কোনো গডফাদার! প্রথম আলো-ডেইলি স্টার চক্র প্রথম পৃষ্ঠায় আবিদুলের ছবি ছেপে মার্কিন কৃপাধন্য হতো।
লিংকে দেখুন
কিন্তু চোরের দশদিনের পর গৃহস্থের সেই একটি দিন চলে আসে। ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের ভিডিও ফুটেজ সহ ধরা পড়ে মোল্লা নজরুলের 'সন্ত্রাসবিরোধী' অভিযান।
তবে নজরুল ভাইজান, এগিয়ে যান! এতো বড় কেলেঙ্কারির পরও আপনাকে বরখাস্ত না করে ডিবিতেই রেখে দেয়ায় আপনার ক্ষমতার ছিটেফোটার নজির আমরা পাই।
কোন মন্তব্য নেই:
/>