শুক্রবার, ৭ জুন, ২০১৩

নারী নির্যাতনের মহোৎসব : মহাজোটের ৪ বছর!এই জন্যই কি মুক্তিযোদ্ধারা রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিল ?


নারী নির্যাতনের মহোৎসব : মহাজোটের ৪ বছর!এই জন্যই কি মুক্তিযোদ্ধারা রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিল ?  

-যুলকারনাইন নাসিফ“মায়ের একধার দুধের দাম/কাটিয়া গায়ের চাম/পাপোষ বানাইয়া দিলেও শোধ হবে না”


পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর শব্দ “মা”,সবচেয়ে আপনজন “মা”. এই নারীর জঠোরেই জন্ম একজন ব্যক্তির,একটি পরিবারের,একটি সমাজের-সর্বোপরি একটি জাতিরাষ্ট্রের। বিখ্যাত নেপোলিয়ন বলেছিলেন-“আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও,আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি দিব”, সভ্যতার জন্মলগ্নে একজন আদি নারী প্রথম ধরণীর বুকে বুনেছিল শস্যের বীজ। আগুন আবিষ্কারের পর সেটি ছিল অনন্য এক আবিষ্কার, যা জন্ম দিয়েছিল আদিপেশা কৃষির। শুধু কৃষির প্রশ্নেই নয়, ফলন বা উৎপাদনের জননী হচ্ছে নারী। পৃথিবীতে যা কিছু প্রাকৃতিক তার অধিকাংশ উপাদানই নারীর প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত। মানুষের চিন্তা, দর্শন, সাহিত্য, বিজ্ঞান সবকিছুতেই নারীর উপস্থিতি সমুজ্জ্বল। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই প্রকাশ্যে বা নিভৃতে সূচিত হচ্ছে নারীর অবদান। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন,'বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর,অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।বিশ্বে যা কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি,অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।'প্রাচীন সময় থেকেই সভ্যতা বিকাশের প্রশ্নে বড় ভূমিকা রেখে চলেছে নারী। শিল্পকলার গভীরে নারীর অনন্য অবস্থান। নারী কখনও নদী, কখনও প্রকৃতি, কখনও কোমলতার প্রতীক, কখনও সৌন্দর্যের। নারীর জন্য যুদ্ধবিগ্রহ, হানাহানির ঘটনাও কম নেই পৃথিবীতে। নারীর জন্য বহু প্রাণহানি কিংবা রাজার সিংহাসন ছাড়ার ঘটনাও আছে। আবার আছে শান্তির প্রতীক হিসেবে নারীর সরব উপস্থিতির অসংখ্য স্বাক্ষর। পৃথিবীতে ক্লিওপেট্রার মতো প্রভাব-প্রতিপত্তি, ক্ষমতা ও ব্যভিচারের প্রতীক যেমন রয়েছে; রয়েছে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল, মাদার তেরেসা,বেগম রোকেয়া ও মুন্নুজান এর মতো অগণিত নারীর সেবার পরশ যা বিশ্বমানবতাকেই উজ্জীবিত করেছে।

এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা সবখানেই রয়েছে নারীর অসংখ্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর। শুধু প্রাকৃতিক ও দৈনন্দিন কাজকর্মের ভেতরই যে নারী অবদান রেখে চলেছেন তা নয়; অর্জনে, রক্ষায়, মানুষকে জাগানোর প্রশ্নে যুগে যুগে নারী থেকেছে অনন্য ভূমিকায়। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী নারীদের তালিকায় এ পর্যন্ত বিশ্বের ৪৪ জন নারী স্ব-স্ব ক্ষেত্রে অবদান রাখায় নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন।

জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে দেখা যায় বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক ও মোট শ্রমশক্তির এক-তৃতীয়াংশ হচ্ছে নারী,যারা শ্রমঘন্টার দুই-তৃতীয়াংশ সময়ই ব্যয় করে শ্রমে।এশিয়ায় নারী শ্রমশক্তির সবচেয়ে বেশি আধিক্য চীনে। সেখানে এমন কোনো কাজ নেই, যেখানে নারীর অংশগ্রহণ নেই বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রাধান্য নেই। ঘরে ঘরে সাফল্যের উদাহরণ। আজকের করপোরেট সময়ে নারীরাই সেখানে প্রতিনিয়ত নারীদের প্রশিক্ষিত করে তুলছে। আরেক বিস্ময়কর চিত্র ভিয়েতনামে। সেখানে সব কাজে নারী-পুরুষের অনুপাত যেন তিনজনের বিপরীতে একজন। আমাদের বাংলাদেশেও সামগ্রিক বিচারে কর্মশক্তির বড় অংশটি দখল করে আছে নারীরা। মোট গ্রামীণ নারীর শতকরা ৭৭.৪ ভাগ কৃষিকাজে নিয়োজিত। আইএলওর হিসাব অনুযায়ী, এদেশে নারীশ্রমিকের সংখ্যা শতকরা ৪৩ ভাগ। কিন্তু এর বাইরেও বহু নারীর শ্রম রয়েছে যা শ্রমিকের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। সময়ের পরিমাপ ও গুরুত্বের দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায়, কৃষিক্ষেত্রে নারীর অংশীদারিত্ব অনেক বেশি।

পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে একজন বেবি চাকমাই ঘুরিয়ে দিয়েছেন তার পরিবারের চাকা। যশোরের নওয়াপাড়ার হামিদা বেগম গোটা জেলায় এক দৃষ্টান্ত। সাতক্ষীরার মুন্সীগঞ্জের রহিমা বেগম এক কাঁকড়া চাষ করেই নিজের পরিবারের সচ্ছলতা নয়, আলোকিত করেছেন গোটা এলাকাকে। যশোরের গদখালির বারিছন তো সবারই চেনা। ফুলচাষ ও বাণিজ্যে তিনি এক পথিকৃৎ। এমন হাজার হাজার উদাহরণ এখন বাংলাদেশে।

বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে সাফল্যের উদাহরণ হয়ে জ্বলে ওঠা আরও অসংখ্য নারী রয়েছে এখন। শহরের বহুজাতিক ও করপোরেট দফতরগুলোতে নারীকর্মীরা এখন কৃতিত্ববহুল নারী উদ্যোক্তা, নারী সংগঠক, নারী রাজনীতিক। আমাদের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, মন্ত্রিপরিষদের গুরুত্বপূর্ণ তিন সদস্য বিশ্বের নারী সাফল্যের অনন্য উদাহরণ।

আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীদের ছিল অনন্য ভূমিকা। একাত্তর সালে ২০৩ জন নারী মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। খেতাবপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা দু’জন। তারা হচ্ছেন- ক্যাপ্টেন সেতারা বেগম বীর প্রতীক (সেনাবাহিনী) ও বেগম তারামন বিবি বীর প্রতীক (গণবাহিনী) , মুক্তিযুদ্ধের ১৫ খন্ড দলিলে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা উল্লেখ আছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি দিনাজপুরে ২১ জন নারী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৫, যশোর ও গোপালগঞ্জে ৯, সুনামগঞ্জ ও পঞ্চগড়ে ৮ জন নারী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও সিলেট ও বরিশালে ৭ জন নারী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাদের সীমাহীন ত্যাগ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের এক উজ্জ্বল অধ্যায়।

প্রাচীন, অতীত, বর্তমান এতসব সাফল্যের ভেতর যে সত্য সবারই জানা, তা হচ্ছে আমাদের নারীরা ভালো নেই। বহুবিধ বঞ্চনার শিকার আমাদের নারীরা। পুরুষশাসিত বৃত্তের ভেতর বহু নারীই প্রতিদিন শিকার হচ্ছে নির্যাতন ও নিপীড়নের। আছে গৃহনির্যাতন, যৌতুক ও ফতোয়ার মতো সামাজিক ব্যাধি। গত কয়েক দশক থেকে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় উৎস হচ্ছে তৈরি পোশাক রপ্তানি। পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বাংলাদেশে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের একটি বড় অংশ নারী। এসব কারখানায় কাজ করে লাখ লাখ মানুষ। তাদের মধ্যে ৮০% নারী। বেশির ভাগই নারীর বয়সই ১৬ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। অবিবাহিত মেয়েরা এখানে কাজ করে বাবা-মায়ের সংসার চালায়। কারখানায় কর্মরত মেয়েদের অধিকাংশই অশিক্ষিত। মেয়েদের এই অশিক্ষার সুযোগকে কাজে লাগায় কারখানার মালিকরা। এখানে মেয়েদের পরিশ্রম কোনো অংশে কম নয়; অথচ এত পরিশ্রমের পরও তাদের আয় সামান্যই। চাকরি হারানোর ভয়ে শত শোষণেও মুখ খুলতে চায় না নারী শ্রমিকরা। ২০০৬ সালের ৩১ মে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল সবেতনে তিন মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রদান। কিন্তু সেই ছুটি চাইতে গিয়ে অনেক নারী শ্রমিক কে চাকরি হারাতে হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী এই শিল্পকে যে নারী শ্রমিকরা বাঁচিয়ে রেখেছে,সেই নারী শ্রমিককেই দেওয়া হচ্ছে বৈষম্যমুলক বেতন-ভাতা।

কর্মক্ষেত্রে বেতন বৈষম্যের চেয়ে নারী নির্যাতনের যেদিকটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে তাহল শারীরিক লাঞ্ছনা ও নির্যাতন। বস্তুত বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর নারীর ইজ্জত-আব্রুর উপর আঘাত এসেছে বেশী। আর এই ক্ষেত্রে অপরাধীরা প্রায় সকলেই ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী। নির্যাতিতরা সুষ্ঠু বিচার পায় না প্রভাবশালী এইসব অপরাধীদের ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে,উল্টো জীবন বিপন্ন হওয়ার ভয়ে আইনের আশ্রয় নেওয়া দূরে থাক,পালিয়ে বেড়ায় ভিটেমাটি ছেড়ে।

সিমি, মহিমা, বুশরা, স্বপ্না, তৃষা, তানিয়া, সেলিনা, শাজনীন, মাহমুদা- এ নামগুলো মনে আছে? এরা সবাই কোন-না-কোনভাবে খবরের শিরোনাম হয়ে নাড়িয়ে দিয়েছিল আমাদের বিবেক। আমাদের অসার সভ্যতার মুখে চপেটাঘাত করে এরা পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। এদের কেউ ধর্ষণের অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছিল, কাউকে হত্যা করা হয়েছিল কিংবা তাদের কেউ আত্মহত্যায় বাধ্য হয়েছিল। কাউকে মারা হয় এসিডে পুড়িয়ে। এরা অল্প কয়েকজন খবরের শিরোনাম হয় বলে তাদের নাম জানা যায়। কিন্তু শতগুণ রয়ে যায় খবরের বাইরে। গত ১০ বছরে প্রায় ৪০ হাজার নারী নির্যাতনের শিকার হয়। নারী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনকারীদের আর ক্ষমা নয়।’ প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে তাদের ৮০ ভাগই রেহাই পেয়ে যায়। সে জন্যই প্রতিবছর নির্যাতনের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।

বুশরা-তৃষা-মহিমার মত যাদের নাম খবরের পাতায় আসে তাদের কেউ কেউ বিচার পায়। বাকিরা পায় না। যারা বিচার পায় তাদের আত্মীয়-স্বজন আবার রায় কার্যকর হতে দেখে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, নারী নির্যাতনের ৯০-৯৫ ভাগ ঘটনারই কোন বিচার হয় না। আবার এসিড নিক্ষেপের ৯০ ভাগেরও বিচার হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুর্বল ও দরিদ্র নির্যাতিতরা নির্যাতনের ঘটনার বিচার চাইতে আইনের দ্বারস্থ হয় না। হয়রানি ও আরো নির্যাতনের ভয়ে এবং আর্থিক সংকটের ফলে তারা নীরব থাকে। তদন্ত ও তথ্য প্রমাণের অভাব, বিদ্যমান আইনের বাস্তবায়নের অভাবে বিচার কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় না। এছাড়া নির্যাতনকারীরা আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তারা পার পেয়ে যায়।

নির্যাতিত নারীদের নিয়ে কাজ করে এমন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, গত বছরগুলোতে দেশ রাজনৈতিকভাবে সহিংস হয়ে উঠে । দেশে-বিদেশে সন্ত্রাসীর সংখ্যাও বেড়ে যায়। নারী নির্যাতনকারীরা রাজনৈতিক প্রশ্রয় পায়। এছাড়া বছরগুলোতে নারীরা তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে পুরুষের পাশাপাশি সমঅধিকার দাবি করলেও পুরুষতান্ত্রিক সমাজে তাদের প্রতি নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে নির্যাতনের ঘটনা বাড়ে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন, পারিবারিক আইনসহ নারী নির্যাতন বিরোধী বেশ কয়েকটি আইন দেশে রয়েছে। কিন্তু সেগুলো কার্যকর প্রয়োগ হয় না। বছরের পর বছর সেগুলো ঝুলে থাকে। এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের (এএসএফ) হিসেবে ৯০ ভাগ এসিড নিক্ষেপকারীর কোন বিচার হয় না। গত ৮ বছরে এক হাজার ৯১৪টি এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় মোট দুই হাজার ৪৫৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ৮৬০ জন নারী ও শিশু। আর ২০০৭ সালের প্রায় দুই মাসেই ১৭টি এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। অথচ এইসব নারী নির্যাতনের ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ ঘটনার কোন রায় হয় না। কারণ আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে অপরাধীরা আইনের ঊর্ধ্বে থেকে যায়।

বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতরের অপরাধ পরিসংখ্যান অনুযায়ী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের ৪ বছরে সারাদেশে ধর্ষণের শিকার হয় মোট ১২৯৭১ জন। এ সময়ে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৬৭ হাজার ২২৯টি। এছাড়া যৌতুক ও নানা কারণে স্বামীগৃহে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২ হাজার ৫ জন নারী। তন্মধ্যে স্বামীগৃহে নির্যাতনের ফলে জীবন দিতে হয়েছে প্রায় দেড় সহস্রাধিক নারীকে। এসিড সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৪৪২ জন। বাস্তবের তুলনায় পত্রিকায় প্রকাশিত এই সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। গত চার বছরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও পুলিশ সদর দফতরের অপরাধ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে।

পুলিশ সদর দফতরের অপরাধ পরিসংখ্যানে দেখা যায়ধর্ষণ ১২৯৭১২০০৯ সালে ২ হাজার ৯৭৭ জন২০১০ সালে ৩ হাজার ২৪৩ জন২০১১ সালে ৩ হাজার ৩৪৪ জন২০১২ সালে ৩ হাজার ৪০৭ জন (১১ মাসে)সর্বমোট ধর্ষণ- ১২৯৭১ জন (৩ বছর ১১ মাসে)

নারী নির্যাতন ৬৭২২৯ জন২০০৯ সালে ১২ হাজার ৯০৬টি২০১০ সালে ১৬ হাজার ২১২টি২০১১ সালে ২০ হাজার ৬৬ জন,২০১২ সালে ১৮ হাজার ৪৫টি (১১ মাসে)সর্বমোট নারী নির্যাতন – ৬৭২২৯ জন (৩ বছর ১১ মাসে)

৩৫৬৩ ধর্ষণের ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।ধর্ষণ ৩৫৬৩ (পত্রিকায় প্রকাশিত)২০০৯ সালে ৪৫৬ জন।২০১০ সালে ৫৫৯ জন২০১১ সালে ৭১১ জন২০১২ সালে ১৮৩৭ জন।সর্বমোট- ৩৫৬৩ জন

এসিড সহিংসতা ৪৪২২০০৯ সালে ১০১ জন,২০১০ সালে ১৩৭ জন,২০১১ সালে ১০১ জন,২০১২ সালে ১০৩ জন।৪ বছরে সর্বমোট ৪৪২ জন এসিড সহিংসতার শিকার হয়েছে।

যৌতুক সহিংসতা ২০০৫২০০৯ সালে ৩১৯ জন,২০১০ সালে ৩৭৮ জন,২০১১ সালে ৫১৬ জন,২০১২ সালে ৭৯২ জন।৪ বছরে সর্বমোট ২০০৫ জন যৌতুক সহিংসতার শিকার হয়েছে।

বেশিরভাগ যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের সংশ্লিষ্টতা দেখা গেছে। কুলাঙ্গার পরিমল কর্তৃক ভিকারুন নেসার ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় দেশব্যাপী ব্যাপক প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল কাওসারের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ কর্মীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, ৬ এপ্রিল ছাত্রলীগ নেতা বাবু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ১৪ এপ্রিল টিএসসির বৈশাখী কনসার্টে ছাত্রলীগের মধ্যম সারির নেতাদের হাতে তরুণীদের শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা দেশবাসীকে হতবাক করে। এছাড়া ১৯ এপ্রিল বগুড়ায় ছাত্রলীগ নেতা ডিউ কর্তৃক এক তরুণী এবং ২৮ এপ্রিল পটুয়াখালীতে আওয়ামী লীগ নেতা বরকত খান কর্তৃক স্থানীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শারিরীকভাবে নাজেহাল হন।


২১ এপ্রিল ২০১০ পটুয়াখালীতে বাহাদুর নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীর নেতৃতে ৬/৭ জন যুবক এক গৃহবধুকে ধর্ষণ করে।২২ এপ্রিল ২০১০ ভোলার লালমোহনের কচুয়াখালী গ্রামে বিএনপি কর্মী শফি মাঝির স্ত্রী ও মেয়েকে আওয়ামী লীগ কর্মীরা পালাক্রমে ধর্ষণ করে । এছাড়া ভোলায় উপনির্বাচনের পরদিন যুবলীগ নেতা সিরাজ মিয়া বিএনপি সমর্থিত নান্নু মেম্বারের ভাতিঝা রুবেলের স্ত্রীকে ধর্ষণ করে।

১৩ মে ২০১০ সিলেট পলিটেকনিকে ছাত্রলীগ নেতা সৈকত শ্রেণীকে এক ছাত্রীকে জোড়পূর্বক ধর্ষণ করে। এছাড়া কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের সোনাইকান্দি গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা শাহিন রেজার পুত্র পান্না (২২) তার একজন সহযোগীকে নিয়ে স্বামী পরিত্যক্তা এক মহিলাকে (৪০) ধর্ষণ করে।

৫ জুলাই ২০১০ টাঙ্গাইলের সখীপুরে এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে তার ভিডিও চিত্র ধারণ করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। ধর্ষিতা কিশোরী উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী।

৫ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সখীপুর বাজারে আসে খাতা কিনে বাড়ি ফেরার সময় হাবিবুল্লাহ ওরফে হাবিব, ছাত্রলীগ নেতা আরিফ, সখীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত সিকদারের ভাগ্নে বাবুল, নাতি আকাশ মেয়েটিকে মোটরসাইকেলে করে হাজিপাড়ায় ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি ছাত্রাবাসে নিয়ে যায়। সেখানে হাবিব মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। এ সময় তার সহযোগীরা ধর্ষণের চিত্র ভিডিও করে। পরে আরেকজন ধর্ষণ করতে গেলে মেয়েটি সুযোগ বুঝে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। মেয়েটিকে ধাওয়া করে ছাত্রলীগ নেতারা। এ সময় মেয়েটির চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। পরিস্থিতি টের পেয়ে ধর্ষণকারী ও তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়।ফিল্মি স্টাইলে এ ধরনের ধর্ষণের ঘটনা সামাজিক অবয়ের চিত্র প্রকাশ করে।

৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ বগুড়ার শাজাহানপুরে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী প্রকৃতির ডাকে বাইরে গেলে বখাটে আলামিন তাকে ধর্ষণ করে। পরে মামলা করতে গেলে যুবলীগ নেতা আবু সাঈদ বাধা দেয়।

৪ জানুয়ারি ২০১২ সাতীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে জুয়েল ও পলাশ স্বামীকে মারধর করে আটকে রেখে এক নৃত্যশিল্পকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়।

১৯ জানুয়ারি ২০১২ সিলেটের জকিগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা মিছরা জামান কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হন এক মহিলা।

২৪ জানুয়ারি ২০১২ সরাইলে যুবলীগ ক্যাডার জাকির কর্তৃক যৌন হয়রানির শিকার হন এক তরুণী।

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে গণধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর বাবা মামলা করতে গেলে সন্ত্রাসীরা তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে।

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২ পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সমুদয়কাটি ইউনিয়নের সুন্দর গ্রামে মা (৩০) ও মেয়েকে (১১) ধর্ষণের পর হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ চট্টগ্রামে র্যাব পরিচয়ে এক তরুণীকে ধর্ষণ করে ৩ বখাটে।

১২ মার্চ ২০১২ নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ বাজার এলাকায় স্বামীর অনুপুস্থিতিতে ঘরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করে যুবলীগ কর্মী সুমন।

তথ্যসূত্র- – বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতরের অপরাধ পরিসংখ্যান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এমআরটি, মানবাধিকার সংগঠনসমূহ।

সদ্যবিদায়ী ২০১২ সালেই নারী নির্যাতনের চিত্র ছিল ভয়াবহ। নারী নির্যাতনের আওতায় ইভটিজিং ছিল অন্যতম আলোচিত বিষয়। আত্মহত্যা, হত্যা, ধর্ষণসহ নানা ঘটনাই ছিল গত ২০১২ সালে। 

২০১১ সালে পুলিশ সদর দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী সারা দেশে নারী নির্যাতনের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৩৪৪ জন,যা ২০১২ সালে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত যার সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ১০,০২৯. এর মধ্যে যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৩৪৪৮ জন নারী। এসিড আক্রমণের শিকার হয়েছে ৪৯ জন নারী। অপহরণ হয়েছে ২০৭৭ জন। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৮৬৯ জন এবং ধর্ষণের পর খুন হয়েছে ১৩ জন। এছাড়া বিভিন্ন কারণে খুন হয়েছে ১১৬ জন নারী এবং অনান্য ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছে ২৩৯৪ জন। এদিকে, বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের তথ্য অনুযায়ী ২০১২ সালের ১১ মাসে ৭৭১ জন নারী যৌতুকের সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ২৫৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং ৪৮৫ জনকে বিভিন্নভাবে অত্যাচার নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে ।

নারী ও শিশু অধিদপ্তরের আওতাধীন নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের তথ্য মতে, ২০১২ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের ৬টি বিভাগ থেকে নির্যাতিত নারীদের ২৩৩০টি আবেদন জমা হয়েছেন সেলে। এর মধ্যে ২৩০০টি মামলা নিষ্পিত্তি হয়েছে। দেনমোহর ও খোরপোষ বাবদ টাকা আদায় হয়েছে ৯২ লাখ, ৩৫ হাজার ৫০ টাকা। ২০১২ সালের নারী নির্যাতনের মধ্যে আলোচিত ঘটনাগুলো হলো-

প্রেমিকের হাতে ২৬ টুকরা রুমি:রাজধানীর হাতিরপুলে ১৪তলা নাহার প্লাজার ১৩তলায় সুস্মিতা ওরফে রুমির (১৭) ২৬ টুকরা লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। ২রা জুন নাহার প্লাজার ১৩তলার ১৩০৮ নম্বর কক্ষে রুমির প্রেমিক এবং সোনালী ট্রাভেল্সের মালিক সাইদুজ্জামান ওরফে বাচ্চু (৩০) এই নৃশিংসতম হত্যাকাণ্ড ঘটায়। ঘটনার এক দিন পর এলাকার লোকজনের চোখে খণ্ড খণ্ড মাংস ও হাড়ের টুকরা পাওয়া পর রমনা থানা পুলিশ আসলে প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসে। প্রেমিক বাচ্চুকে আটক করে ৪ দিনের রিমান্ডে নিলে সো মুখ খোলে। বাচ্চু তার জাবানবন্দিতে বলে, রুমির সঙ্গে তার এক বছর আগে পরিচয় হয় ফোনে। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পহেলা জুন শুক্রবার বাচ্চু রুমিকে নাহার প্লাজার ওই অফিসে নিয়ে আসে। এরপর তার সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক করার পর শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেন। এরপর বঁটি, ছুরি দিয়ে তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গের হাড় থেকে মাংস ছাড়িয়ে মাংসগুলো বাথরুমে ফ্লাশ করে দেয়। এবং হাড়গুলো বিভিন্নস্থানে ফেলে দেয়। কিন্তু বাথরুমের ফ্লাশ করা মাংস ও নাড়ী-ভুঁড়ি পাইপে আটকে গেলে পাইপ জ্যোম হয়ে যায়। এছাড়া ওই বিল্ডিংয়ের অন্য কক্ষের বাথরুমেও ভেসে উঠে রক্ত। ঘটনার দিন সকালেই হাড় ও মাংস এলাকার বাসিন্দাদের চোখে পড়লে ধরা পরে বাচ্চু। এরপর উক্ত এলাকা ও কক্ষ থেকে রুমির লাশের ২৬ টুকরা উদ্ধার করে রমনা থানার পুলিশ।প্রেমিকের আসল চেহারা প্রকাশ পাওয়ায় ধর্ষণের পর মুখ থেঁতলিয়ে ড্রেনে লাশ ফেলে দেয় প্রেমিক: সম্পর্ক ছিন্ন করায় নিশৃংসভাবে হত্যার শিকার হয় পপি আক্তার (১৬). মিরপুর ১৪ নাম্বার এলাকার কচুক্ষেত বালুর ঘাট এলাকার বাসিন্দা আলাউদ্দিনের মেয়ে পপি। ২০১২ সালের ১৬ই জুন ওই এলাকার ঝটপট্টি এলাকা থেকে জোর করে তুলে নিয়ে যায় ঘাতক প্রেমিক রিপন ও তার সাঙ্গুপাঙ্গরা এরপর ওই এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে গিয়ে রাতভর ধর্ষণ করে রিপন এবং তার বন্ধু গাইট্টা বাবু, সুমন, বিল্লাল, হাসান, শামীম, রুবেল ওরফে চান্দু এবং আরিফ। এরপর শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে পপিকে। পরিচয় গোপন রাখতে ঘাতক দল হাতুড়ি দিয়ে থেঁতলিয়ে দেয় পপির চেহারা। এরপর তার লাশ ঝুট কাপড়ের বস্তায় ভরে পরিত্যক্ত ড্রেনে ফেলে দেয়। পরের দিন পুলিশ বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য হস্তান্তর করে। এরপর আসামিদের গ্রেপ্তার করেন মিরপুর থানা পুলিশ ।

নবীগঞ্জে যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূর হাত-পা বেঁধে নির্যাতন: যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূ কাকলী আক্তার চৌধুরীর হাত-পা বেঁধে নির্যাতন চালায় স্বামী ইছহাক ও তার পরিবার। ২০১২ এর ২৫শে মে এ নিয়ে তোলপাড় চলে নবীগঞ্জের দিনারপুর পরগনায়। ২০০৯ সালে দীঘলবাগ ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত সিরাজুল ইসলামের মেয়ে কাকলীর সঙ্গে বিয়ে হয় গজনাইপুর ইউনিয়নের সাতাইহাল গ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুল কাদিরের ছেলে ইছহাকের সঙ্গে। বিয়ের পর বিভিন্ন সময়ে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন চালায় তারা। এক পর্যায়ে কাকলী নির্যাতন সইতে না পেরে বাবার বাড়ি চলে যায় । কিন্তু নানা খেসারত করে স্বামী ইছহাক তাকে বাবার বাড়ি থেকে এনে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন চালায়।উক্ত এলাকার বাসিন্দারা কাকলীর পরিবারকে খবর জানালে তারা কাকলীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। গ্রামের চেয়ারম্যান এ বিষয়টি সালিশের মাধ্যমে নিষ্পিত্তি করেছেন বলে জানা গিয়েছিল।

ধর্ষণে বাধা দেয়ায় কেয়ারটেকারের হাতে ডা. ইভা খুন:ধর্ষণে বাধা দেয়াই শ্বাসরোধে খুন হন ডাক্তার সাদিয়া আফরিন ইভা (২৭)। ২৯শে নভেম্বর রাত ১২টায় দক্ষিণাস্থ আমতলার ব্র্যাক ক্লিনিকের ঘটনা ছিল এটি। কেয়াটেকার ফয়সাল (২৩) আটক হওয়ার পর ডিবি হেডকোয়ার্টারের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সামনে ডা. ইভার হত্যার চিত্র তুলে ধরেন। ওই দিন নাইট ডিউটিতে ছিলেন ডা: ইভা। রাত ১২টায় ফয়সাল তার কক্ষের দরজায় নক করেন। দরজা খোলার পরপর ঘাতক ফয়সাল ঝাঁপিয়ে পড়ে ডা. ইভার ওপর। আত্মরক্ষায় চিৎকার করেন ডা. ইভা। এক পর্যায় লাথি মেরে ফ্লোরে ফেলে দেন তিনি ঘাতক ফয়সালকে। এরপর ফয়সাল আবার উঠে বসে ডা. ইভার বুকের উপর। ডা. ইভা আবার চিৎকার করার চেষ্টা করলে তার মুখ ও গলা চেপে ধরে ফয়সাল। এর পর নিস্তেজ হয়ে পরেন তিনি। ডা. ইভার মৃত্যু নিশ্চিত করার পর ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় ঘাতক। এরপর ফয়সালকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরস্থ তার নানা বাড়ি থেকে আটক করেন পুলিশ।ডা. ইভা ঘটনার ১৫ দিন আগেই ওই ক্লিনিকে চাকরিতে যোগ দেন। জাবনবন্দিতে ফয়সাল জানায়, ওই ক্লিনিকে ৫ মাস যাবৎ সে কাজ করছিল। এই ঘটনা দক্ষিণখান থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছিল।

ফতোয়ার শিকার চট্টগ্রামের গৃহবধূ আসমা:চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের যৌন হয়রানির মামলা করায় ফতোয়ার শিকার হয়েছিলেন গৃহবধূ আসমা আক্তার (৩০). আর তাই তার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেন ওই এলাকার মেম্বার ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হক জুনু। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশীর সাথে পারিবারিক কলহ চলছিল প্রবাসী আনোয়ারা ইসলামের স্ত্রী আসমার। ২৭শে জুলাই ওই ওয়ার্ডের আবদুল রশিদ পণ্ডিতের বাড়ির বাসিন্দা নুরুল আফসার (৪৮), আবদুল্লা (৫০),আবুল কাশেম (৩৮) এবং নুর নবী (৪৫) তাকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে ওই বাড়ির একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। এরপর প্রায় ১ ঘণ্টা পর অন্য প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করেন। এ সময় জুনু মেম্বারসহ আরও অনেকেই উপস্থিত থাকলেও তারা ছিলেন নীরব। এ ঘটনায় আসমা বাদী হয়ে ২৯শে জুলাই মীরসরাই থানায় ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। দফায় দফায়া আসমা মামলা করলে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন জুনু মেম্বার। ২রা অক্টেবর স্থানীয়া ফোরকানিয়া মাদরাসায় দু’ঘণ্টার এক বৈঠকে জুনু মেম্বার আসমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন উস্কানিমূলক ফতোয়া জারি করেন। ফতোয়ায় জুনু মেম্বার বলেছিলেন আসমা আক্তারের সাথে যৌন হয়রানির কথা তিনি নিজেই শিকার করেছেন। এ ধরনের অপরাধে শরিয়তের বিধান রয়েছে বিবাহিত নারীদের বুক পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রেখে পাথর নিক্ষেপ করার। কিন্তু যদি আসমা গ্রামের সব মুরব্বির কাছে ক্ষমা চায় এবং অপরাধ স্বীকার করে তাহলে তাকে গ্রামে থাকতে দেয়া হবে। মামলা করার অপরাধে ফতোয়া জারির পাশাপাশি আসমাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতেও লাঞ্ছিত হয়েছেন নারীরা বিগত চার বছরে। অথচ ১৯৯৬ সালের ১২ ই জুন তত্কালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশে প্রথম বারের মত নারী উন্নয়ন নীতি প্রদান করেছিলেন, যার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে যুগ যুগ ধরে নির্যাতিত ও অবহেলিত এদেশের বৃহত্তর নারী সমাজের ভাগ্য উন্নয়ন করা। সেই নারী উন্নয়ন নীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রথম তিনটি ধারাই বিগত চার বছরে মন্ত্রীসভায় চারজন নারী মন্ত্রী থাকাসত্ত্বেও মহাসমারোহে লংঘন করা হয়েছে। নীচে এই নীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমূহ দেওয়া হলো :• রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ;• নারীর রাজনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা ;• নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা ;বিগত চার বছরে আইনশৃংখলা বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত নারী নির্যাতনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা তুলে ধরা হল-

আদালত চত্বরে পুলিশের নারী নির্যাতনঃ গত ২৯ মে ২০১২ আদালতে বিচারপ্রার্থী এক তরুণী ও তাঁর মা-বাবাকে প্রকাশ্যে নির্যাতন ও হয়রানি করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের চত্বরে কয়েকজন পুলিশ সদস্য এ ঘটনা ঘটান।ওই তরুণী বলেন, পুলিশ লোকজনের সামনে থেকে তাঁকে জোর করে আদালত ভবনসংলগ্ন পুলিশ ক্লাবের ক্যানটিনে নিয়ে শ্লীলতাহানি করে। এ সময় পুলিশ তাঁকে ও তাঁর মা-বাবাকে মারধর করে এবং ধরে নিয়ে যায়।দিনভর হেনস্তা শেষে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামালের হস্তক্ষেপে রাত পৌনে ১০টায় তিনজনকেই ছেড়ে দেয় পুলিশ। এর আগে ঘটনা শুনে সুলতানা কামাল ছুটে যান কোতোয়ালি থানায়। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে দেনদরবার করেন। একপর্যায়ে তিনি পুলিশকে বলেন, তাঁদের না ছাড়া পর্যন্ত তিনি থানা ছাড়বেন না। এ কথা বলে ওসির কক্ষের বাইরে অবস্থান নেন সুলতানা কামাল। শেষ পর্যন্ত রাত পৌনে ১০টার দিকে পুলিশ নির্যাতনের শিকার তরুণী ও তাঁর মা-বাবাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এরপর আটক আইনজীবীদেরও ছেড়ে দেয় পুলিশ।

ঘটনার শুরু দুপুর ১২টার দিকে। বেলা সাড়ে তিনটায় নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী পুলিশ ক্লাবের সামনে এসে সাংবাদিক ও আইনজীবীদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সহায়তা চান। এর একপর্যায়ে কোতোয়ালি থানার পুলিশ সাংবাদিক ও আইনজীবীদের লাঠিপেটা করে মেয়েটি ও তাঁর মাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। পুলিশের লাঠির আঘাতে আহত হয়েছেন তিন সাংবাদিক। তাঁরা হলেন প্রথম আলোর আদালত প্রতিবেদক প্রশান্ত কর্মকার, কালের কণ্ঠ পত্রিকার আবদুল জলিল ও বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর তুহিন হাওলাদার। এ ছাড়া আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন ও শিক্ষানবিশ আইনজীবী রাশেদকে বেধড়ক পিটিয়ে গাড়িতে তোলে পুলিশ। রাতে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

কুষ্টিয়ায় ৯ দিন আটকিয়ে রেখে মা ও মেয়েকে নির্যাতনঃ কুষ্টিয়ায় মা আলেয়া বেগমকে ও মেয়ে ৯ কে দিন আটক রেখে নির্যাতন চালিয়েছিল পুলিশ। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ৯ই সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় কুষ্টিয়ার রাজবাড়ি বেড়াডাঙ্গা এলাকায় বাড়ি থেকে চরমপন্থির কানেকশন সন্দেহে কুষ্টিয়া খোকশা কুমারখালী থানা ও ডিবি পুলিশের ১০ থেকে ১৫ জন সদস্য তাদের আটক করেছিল। এরপর তাদের খোকশা কুমারখালী থানায় দু’দিন রেখে কারেন্ট শক দিয়ে নির্যাতন চালায়। এর দু’দিন পরে রাতে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় পুলিশ লাইনের ডিবি অফিসে। সেখানেও তাদের ওপর চলে নানা নির্যাতন। আলেয়া বেগম জানিয়েছিলেন, তাদের যেখানে আটক করা হয়েছিল সেখান থেকে তার মেয়েকে প্রতি রাতে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালিয়েছে পুলিশ। প্রায় ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা পর মেয়েকে তারা তার মায়ের কাছে দিয়ে যেত বলে জানিয়েছিলেন তিনি। ডিবির এসআই মাসুদসহ আরও কয়েক জন পুলিশ তাদের আটকে রেখে ক্রসফায়ারে নিহত সন্ত্রাসী মোতালেবের স্ত্রী শীলার সন্ধান চাইতো বলে জানান তিনি। এদিকে নির্যাতন ও লাঞ্ছনার কারণে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন আলেয়া এবং তার কলেজ পড়ুয়া মেয়ে। আর তাই আটক অবস্থায় থেকেই বহু বার আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন তারা ।

এদিকে এ ব্যাপারে রাজবাড়ী থানার পুলিশ ইনচার্জ এবং খোকশা থানার অফিসার্স ইনচার্জ হরেন্দ্র নাথ সরকার একে অপরকে দোষারোপ করেন। এদিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নাল আবেদিন গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে থাকার অজুহাতে এড়িয়ে যান ঘটনাটি। মানবাধিকার সংগঠন অধিকার চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটির সরেজমিন তদন্ত করে ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পায়নি এবং পুলিশের বর্বরতার প্রমাণ পায়।চট্টগ্রামে এক কলেজছাত্রীকে আবাসিক হোটেলে আটক রেখে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার ওসি।গত ২৯ ডিসেম্বর ২০১২ রাজশাহীতে দিন দিন নারী নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন সুশীল সমাজ। ‘নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ’ শীর্ষক ঐ কর্মশালায় জানানো হয়, গেল বছর রাজশাহী জেলায় ৩৫২টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ছিল। কিন্তু বিদায়ী বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০৬টিতে, এরমধ্যে ধর্ষণ বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। নারী প্রতি এই সহিংসতা রোধে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক সচেতসতা সৃষ্টিতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে আসার আহ্বান জানানো হয়। রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কেন্দ্রে বেসরকারী সংস্থা ব্র্যাক-সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসুচির আওতায় অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক আবদুল হান্নান। কর্মশালায় বক্তারা আরও বলেছিলেন, বিভিন্ন অপরাধীরা সমাজে প্রভাবশালী হওয়ায় নির্যাতিতরা তাদের সঙ্গে আপোষ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ধর্ষণের পর হত্যার মতো অপরাধসহ আপোষযোগ্য নয় এমন ঘটনাও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাপ ও পুলিশের অসহযোগিতার কারণে আপোষ হচ্ছে। এতে সমাজে অপরাধ ও নারী নির্যাতন বেড়েই চলেছে বলে বক্তারা অভিযোগ করেছিলেন।

রাজশাহীতে ডিবি কর্মকর্তাসহ তিন পুলিশের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ : রাজশাহী মহানগরী পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এসআই আক্তারুজ্জামান প্যারিসসহ তিন পুলিশের বিরুদ্ধে এক মহিলাকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। পরে ফেনসিডিল মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে উল্টো ওই মহিলার কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে বুধবার বিকালে ওই ভিকটিম রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার ও রাজশাহী সিটি মেয়র বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। অভিযুক্ত অন্য দু’জন হলেন মহানগরী পুলিশের গোয়েন্দা শাখার কনস্টেবল আনোয়ার হোসেন ও হাসেম।অভিযোগে জানা গেছে, গত ১০ ডিসেম্বর দুপুরে ভিকটিমের বাড়িতে গিয়ে অভিযুক্ত প্যারিসসহ ৪-৫ জন লোক ডিবির পরিচয় দিয়ে তাদের ঘর তল্লাশি চালায়। এরপর কোনো মাদকদ্রব্য না পেলে বাড়ির পাশের একটি বাথরুমের কাছ থেকে ৩ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে। এ সময় অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে টানতে টানতে ঘরের ভেতরে নিয়ে গিয়ে তল্লাশি করার অজুহাতে জোর করে তার শ্লীলতাহানি ঘটায়। তখন প্রতিবাদ করলে কনস্টেবল হাসেমের কাছে থাকা লাঠি দিয়ে তাকে বেধড়ক পেটানো হয়। এ সময় তার আর্তচিত্কারে এলাকাবাসী ছুটে গিয়ে তাকে রক্ষা করে। পরে তাকে ওই মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে পুলিশের ওই সদস্যরা। তখন ভিকটিম সম্মানের কথা বিবেচনা করে ৬ হাজার টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল মডেল থানার এস আই রফিকুলের ভাইয়ের মেয়ে দশম শ্রেণীর ছাত্রীকে (১৬) একই থানার কনস্টেবল রুহুল আমিনের ছেলে ফাহাদ থানার আবাসিক ভবনের ঘরে ঢুকে ধর্ষণ করে। এ খবর পেয়ে থানার ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য এসে মারজানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এতে মেয়েটি রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টায় ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে।

গত ২১ আগস্ট খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার কার্বারীপাড়া এলাকার ১১ বছরের এক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিশু অটলটিলা পুলিশ ক্যাম্পের পাশে গরু চরাতে গেলে কনস্টেবল রাসেল রানা তাকে ধর্ষণ করে। শিশুটিকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ধর্ষণের অভিযোগে রাসেল রানাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।৬ নভেম্বর বগুড়ায় বিচারপ্রার্থী এক গৃহবধূকে কৌশলে একটি আবাসিক হোটেলে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী টাউন পরিদর্শক আবদুল মালেক। গৃহবধূর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সহকারী টাউন পরিদর্শক আবদুল মালেককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না পর্দানশীন নারীরাও। গত ১৭ই ডিসেম্বর ঢাকার মগবাজার থেকে ছাত্রী সংস্থার ২১ জন মহিলা কর্মীকে আটক করে ২০ জনকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালিয়েছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি অন্তঃসত্ত্বা নারীও। অন্তঃসত্ত্বা নারীকে আদালতের ৮ তলা পর্যন্ত সিড়ি ডিঙ্গিয়ে উঠিয়ে রিমান্ড আবেদন করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। পুলিশের হাতে আটক ও রিমান্ড নির্যাতনের পরও তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ। এমনকি কোনো অভিযোগ না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করা যায়নি। এ ঘটনার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবে নারী সংগঠন সেমিনার করতে এলে সেখান থেকেও আটক করা ১৩ জন নারীকে। নারীদের আটক করতে গিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাব ঘিরে রাখে র্যাব ও পুলিশ। এ ঘটনায় বিভিন্ন মানবাধিকার কর্মী ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নিন্দা জানালেও তাতে কান দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ৫৪ ধারায় আটক এসব নারীকে আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে নিউ ইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশী আমেরিকান ওমেন্স এসোসিয়েশন। একই দাবিতে তারা জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিতে ২৫শে ডিসেম্বর সকাল থেকেই নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন স্থান থেকে জাতিসংঘের সামনে মহিলারা জড়ো হতে থাকেন। এতে বিপুল সংখ্যক নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশী আমেরিকান নতুন প্রজন্মের তরুণীরা অংশ নেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী, সে দেশে এভাবে মা বোনদের নির্যাতন করা সহ্য করা যায় না। আগামী ২৪ ঘণ্টার গ্রেপ্তারকৃত নারীদের মুক্তি দিতে হবে। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এভাবে বাংলাদেশে ২১ জন নারীকে নির্যাতন কখনো হয়নি। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নারীদের ইজ্জত রক্ষা নয় বরং সম্ভ্রমহানি করার জন্য কাজ করছেন। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য সবাইকে আহবান জানান। তারা আরো বলেন, পুরুষ পুলিশ ২০ জন নারীকে গ্রেপ্তার করেছে, রিমান্ডের নামে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে ৮ তলায় টেনে হিঁচড়ে ওঠানামা করানো হয়েছে। এসব চিত্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত। তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার দাবি জানান তারা। সমাবেশ শেষে সংগঠনটি জাতিসংঘ মহাসচিবের বরাবর এবং বাংলাদেশ কাউন্সিলরের মাধ্যমে সরকারের কাছে স্মারকলিপি পেশ করে। সমাবেশে রাশেদা আলী, শাহানা মাসুম, মাহের নেগার, সাদিয়া রেজা, সুমাইয়া তাবাস্সুম, সাদিয়া রোমানা, ফারজানা আহমেদ, সালমা আফ্রো, তাসনিয়া কুসুম, তাহুরা মালিহা গুল, নাসরিন সুলতানা কলি, ফিরোজা আখতার, মারিয়াম তানজিলা ও শারমিন হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। 

রাজনৈতিক,সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে নারীর নিরাপত্তা প্রদান তো দূরে থাক,বরঞ্চ আদালতের নির্দেশে পুলিশী হেফাজতে ছিলেন যে নারী-তিনিই ধর্ষিত হন পুলিশ সদস্যের দ্বারা। বাইরে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীর ভয়,আর আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গেলে পুনরায় ইজ্জত নিয়ে টানাটানি। এযেন জলে কুমির-ডাঙ্গায় বাঘ,উভয় সংকট। পরপর দুই দুইটি গণধর্ষনের ঘটনা ঘটার পরও সরকারী,প্রশাসনিক কোন ক্ষেত্রেই কোন বিচারিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যেখানে ভারতে গণধর্ষনের ঘটনায় পুরো ভারত তোলপাড় হয়ে যায়। সম্প্রতি ইডেন কলেজের ছাত্রীকে এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় সকল পরিসংখ্যানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমনি বলেছেন বাংলাদেশের নারী নির্যাতনের ঘটনা এখনো নাকি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছায়নি। সকল পর্যায়ে নারীর নিরাপত্তা যখন ভেঙ্গে পড়েছে তখন রাজনৈতিক,সামাজিক,প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন যে সুদূর পরাহত তা সহজেই অনুমেয়। নির্যাতিতাকে দেখতে এসে মন্ত্রী পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের সত্যকে আড়াল করার প্রচেষ্টা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়ার সামিল। অন্তঃসত্ত্বাকে বিনা অপরাধে গ্রেফতার এবং বিনা বিচারে ২১ জন নারীকে কারান্তরীন রাখাই প্রমাণ দেয় নারীর মানবাধিকার কতটুকু প্রতিষ্ঠিত আছে।



কোন মন্তব্য নেই:

Comment here />

Widget ByBlogger Maruf
Widget ByBlogger Maruf