রিমান্ডে নিয়ে বন্দী নির্যাতন এবং বিচার বহির্ভূত হত্যার ব্যাপারে ইসলাম কি বলে ?
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ভুমিকাঃ বর্তমান সময়ে রিমান্ড শব্দটির নাম শুনলেই আমরা সবাই আঁতকে উঠি। অবশ্য আঁতকে উঠারই কথা। কেননা এটি আজ সবার কাছে এক মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। জালিম সরকারের অন্যায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুললে, ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষ নিয়ে কথা বললে এমনকি কোনধরনের ভিন্নমত পোষণ করলেই রিমান্ড হয়ে উঠছে অনেকের অনিবার্য গন্তব্যস্থল। গত চার বছরে যে পরিমাণ লোককে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে তা সম্ভবত বাংলাদেশের ইতিহাসে সরবচ্চ।
রাজনীতিবিদ, ইসলামপন্থী লেখক, পত্রিকার সম্পাদ থেকে শুরু করে বর্ষীয়ান আলেম কেউই রিমান্ড যাত্রা থেকে রেহাই পাননি। সম্প্রতি হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহাদিস মাউলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সাহেব এবং আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে কি ধরণের ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়েছে তা আমরা সবাই দেখেছি। কোন চোর ডাকাতকেও এমন করে অপদস্থ করা হয় না। কি অপরাধ ছিল বাবুনগরী সাহেবের আর মাহমুদুর রহমানের? বাবুনগরী সাহেবের অপরাধ তো কেবল এই যে তিনি রাসুল(স) কে যারা অপমান করেছে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন আর মাহমুদুর রহমানের অপরাধ ছিল যে তিনি সেই সব কুলাঙ্গারদের পরিচয় জাতির সামনে তুলে ধরেছেন যারা রাসুল(স) কে অপমান করেছিল। এগুলো যদি অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে তো বাংলাদেশের প্রতিটি মুসলিম এই একই অপরাধে অপরাধী। আহলে কি জালেম কাফেরের দল সবাইকে রিমান্ডে নেবে। কিন্তু এভাবে যদি চলতে দেয়া হয় তাহলে হয়তো এখন থেকে মুসলিম হওয়াটাও এদেশে এক ধরণের পাপ হিসেবে গণ্য হবে যার জন্য রিমান্ডে যাওয়াটাও সব মুসলিমের জন্য অনিবার্য হয়ে উঠবে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হোল এরপরও আমাদের মধ্যে এই রিমান্ড নামক কুৎসিত কদাকার বস্তুটির প্রতি সে পরিমাণ ঘৃণা তৈরি হয়নি যে পরিমাণ হওয়া উচিত ছিল। একটি সভ্য সমাজে কি রিমান্ডের মত অসভ্য জিনিসের অস্তিত্ব থাকাটা জরুরী? আমরা যেহেতু মুসলমান তাই আমাদের যেকোনো বিষয়কেই কোরআন এবং সুন্নাহ’র কাছে উপস্থাপন করতে হবে। এই প্রবন্ধে রিমান্ড নিয়ে নির্যাতন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম, ৫৪ ধারায় যাকে ইচ্ছা গ্রেফতার ইত্যাদির ব্যাপারে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি কি তা নিয়ে আলোচনার আশা রাখি। এজন্য আল্লাহ্র(সূওতা) কাছে তৌফীক কামনা করছি।
রাজনীতিবিদ, ইসলামপন্থী লেখক, পত্রিকার সম্পাদ থেকে শুরু করে বর্ষীয়ান আলেম কেউই রিমান্ড যাত্রা থেকে রেহাই পাননি। সম্প্রতি হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহাদিস মাউলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সাহেব এবং আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে কি ধরণের ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়েছে তা আমরা সবাই দেখেছি। কোন চোর ডাকাতকেও এমন করে অপদস্থ করা হয় না। কি অপরাধ ছিল বাবুনগরী সাহেবের আর মাহমুদুর রহমানের? বাবুনগরী সাহেবের অপরাধ তো কেবল এই যে তিনি রাসুল(স) কে যারা অপমান করেছে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন আর মাহমুদুর রহমানের অপরাধ ছিল যে তিনি সেই সব কুলাঙ্গারদের পরিচয় জাতির সামনে তুলে ধরেছেন যারা রাসুল(স) কে অপমান করেছিল। এগুলো যদি অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে তো বাংলাদেশের প্রতিটি মুসলিম এই একই অপরাধে অপরাধী। আহলে কি জালেম কাফেরের দল সবাইকে রিমান্ডে নেবে। কিন্তু এভাবে যদি চলতে দেয়া হয় তাহলে হয়তো এখন থেকে মুসলিম হওয়াটাও এদেশে এক ধরণের পাপ হিসেবে গণ্য হবে যার জন্য রিমান্ডে যাওয়াটাও সব মুসলিমের জন্য অনিবার্য হয়ে উঠবে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হোল এরপরও আমাদের মধ্যে এই রিমান্ড নামক কুৎসিত কদাকার বস্তুটির প্রতি সে পরিমাণ ঘৃণা তৈরি হয়নি যে পরিমাণ হওয়া উচিত ছিল। একটি সভ্য সমাজে কি রিমান্ডের মত অসভ্য জিনিসের অস্তিত্ব থাকাটা জরুরী? আমরা যেহেতু মুসলমান তাই আমাদের যেকোনো বিষয়কেই কোরআন এবং সুন্নাহ’র কাছে উপস্থাপন করতে হবে। এই প্রবন্ধে রিমান্ড নিয়ে নির্যাতন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম, ৫৪ ধারায় যাকে ইচ্ছা গ্রেফতার ইত্যাদির ব্যাপারে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি কি তা নিয়ে আলোচনার আশা রাখি। এজন্য আল্লাহ্র(সূওতা) কাছে তৌফীক কামনা করছি।
রিমান্ড আসলে কি? আভিধানিক অর্থে রিমান্ডকে বলা হয় পুনঃপ্রেষণ অর্থাৎ আরও অধিক তথ্য আদায় করার জন্য বন্দীকে পুলিশ হেফাজতে পাঠানো। এখানে তথ্য আদায়ের কথা বলা হলেও সবাই এটা ভালভাবেই জানে যে রিমান্ড মূলত তথ্য আদায় নয় বরং বন্দী নির্যাতনের অফিসিয়াল পারমিশন। তাই এই রিমান্ডকে রিমান্ড না বলে বন্দী নির্যাতনের পারমিট বলাটাই যুক্তিযুক্ত। কারণ তথ্য আদান প্রদানতো আদালতেই হতে পারে বা বন্দীর আইনজীবীর উপস্থিতিতে আদালতের বাইরেও হতে পারে। কিন্তু এটা না করে ৩দিন, ৭দিন এমনকি ২০-২২ দিনের জন্য বন্দীকে পুলিশের হেফাজতে পাঠানোর মানেটা কি? তাই এটা একেবারে স্পষ্ট যে রিমান্ডের মূল লক্ষই থাকে বন্দীকে নির্যাতন করে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মেনে নিয়ে স্বীকারউক্তি দিতে বাধ্য করা। আর অত্যাচার নির্যাতনের মদ্ধে যে টেকনিকগুলো ব্যাবহার করা হয় তা সহ্য করা দূরের কথা আমার আপনার মত একজন সাধারণ দুর্বল ঈমানের মানুষ তার বর্ণনা শুনেই হার্টফেল করতে পারে। রিমান্ডে নিয়ে যে ধরণের নির্যাতন চালানো হয় তার মধ্যে আছে হাত ও পায়ের নখ উপড়ে ফেলা, বাদুড় ধোলাই(উল্টো করে লটকিয়ে প্রহার করা), বস্থা থেরাপি(বস্তায় ভরে পেটানো), কম্বল থেরাপি(কম্বল পেঁচিয়ে পেটানো), পায়ুপথে লাঠি বা ডিম ধুকিয়ে দেয়া, হাত ও পায়ের জয়েন্টে জয়েন্টে পেটানো ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই সোজা কথায় রিমান্ডের হোল নির্যাতনের মাধ্যমে বন্দীর কাছ থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করার লাইসেন্স মাত্র। একে যতই আইনগত পরিভাষার চাদরে জড়ানো হোক না কেন তাতে তার আসল উদ্দেশ্য ও প্রকৃতি কোনভাবেই গোপন করা সম্ভব নয়। তাই একে রিমান্ড না বলে বন্দী নির্যাতন বলাটাই বুদ্ধি ও বিবেকের দাবি।
আধুনিক বিশ্বে বন্দী নির্যাতনঃ বর্তমান বিশ্বেও বন্দী নির্যাতনের বিষয়টি বহুল আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে একটি। বিশেষ করে ইরাকের গারিব কারাগার এবং গুয়েন্তানামো বের মত কুখ্যাত কারাগারগুলোতে মার্কিন বাহিনী কত্রিক আল্লাহ্র বান্দাদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতনের খবর ও চিত্র প্রকাশিত হওয়ার পর সমগ্র বিশ্ব জুড়ে তিব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিলো। সভ্যতার মুখোশধারী ও মানবাধিকারের সবক দানকারী মার্কিনীদের আসল চেহারা যে কত জঘন্য তা সবার সামনে প্রকাশ হয়ে পড়েছে। আধুনিক বিশ্ব বন্দীদের নির্যাতনের ব্যাপারে কি ধরণের মানসিকতা লালন করে তা ভালোভাবে বুঝতে হলে আমাদের কিছুটা পেছনে ফিরে যেতে হবে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানি বন্দী নির্যাতনের জন্য কুখ্যাতি অর্জন করেছিল। তাদের নির্যাতনের টেকনিকগুলোকে জার্মান ভাষায় বলা হত ‘Verschcarfte Vernehmang’ ইংরেজিতে আমরা একে বলতে পারি Enhanced Interrogation। এই নির্যাতন পদ্ধতির কথা জার্মান সিক্রেট পুলিশ গেস্টাপোর কর্ণধার হেনরিক মুলার ১৯৪২ সালে ইস্যুকৃত একটি মেমোতে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বন্দীদের নির্যাতনের জন্য অনেকগুলো উপায় অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যেমন,বন্দীদের শক্ত বিছানায় শোওয়াতে হবে, অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরে রাখতে হবে, ঘুম থেকে বঞ্চিত করতে হবে, অত্তাধিক কষ্টকর শারীরিক ব্যায়াম করাতে হবে, লাঠি দিয়ে পেটানো ইত্যাদি।[১]
সভ্যতার লেবাসধারি পশ্চিমা বিশ্বে বন্দী নির্যাতনের এই ধারাবাহিকতা আজো চলছে। তাদের মানসিকতায় আজো কোন পরিবর্তন আসেনি। তাই আমরা দেখি ২০০২ সালের জানুয়ারিতে অর্থাৎ হেনরিক মুলারের প্রায় ৬০ বছর পর মার্কিন সহকারী এটর্নি জেনারেল জন ইয়ো ঐ একই কথার প্রতিধ্বনি করছে। সে আফগানিস্থানে আটক মুজাহিদদের ব্যাপারে বলছে, ‘’এই আন্তর্জাতিক যুদ্ধ বিষয়ক রীতিনীতিগুলো এদের ব্যাপারে প্রযোজ্য নয় কারণ এরা কোন রাষ্ট্রের প্রতিনিথিত্ব করে না’’. অর্থাৎ সে এখানে বলছে যে মার্কিনীরা বন্দীদের ওপর নির্যাতন চালানোর অধিকার রাখে কারণ বন্দীরা যেহেতু কোন রাষ্ট্রের সৈনিক নয় তাই তাদের সাথে যেমন কোন চুক্তি সম্ভব নয় ঠিক তেমনি আন্তর্জাতিক যুদ্ধ আইনের আওতায়ও এরা কোন ধরণের সুরক্ষা পাবে না। তাদের ভাষায় এসব বন্দীরা হোল Unlawful Combattants।
এবিসি নিউজ জানাচ্ছে যে ঐ একই বছর মার্চের মাঝামাঝি সিআইএ মুসলিম বন্দীদের ওপর নির্যাতন চালানোর জন্য একেবারে অফিসিয়াল অনুমতি পেয়ে যায়। যাকে তারে Enhanced Interrogation বলে অভিহিত করেছে। এই নির্যাতন কৌশলগুলোর মধ্যে আছে-Water boarding বা পানিতে চুবানো, Cold Cell বা বন্দীকে অত্তাধিক ঠাণ্ডা ঘরে রাখা, Standing বা বন্দীকে ৪০ ঘণ্টারও বেশী সময় ধরে দাড় করিয়ে রাখা, Belly slap বা বন্দীর পেটে প্রচণ্ড জোরে আঘাত করা ইত্যাদি। ঐ বছরের ৮ই মার্চ মার্কিন সিনেট এবং কংগ্রেসে এই ধরণের নির্যাতনের বিরুদ্ধে একটি বিল উপস্থাপন করা হলে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ তাতে ভেটো দিয়ে বলেছিল যে, ‘’সে এই বিলের বিরোধিতা করে কারণ এতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধের একটি কার্যকর কৌশল হাতছাড়া হয়ে যাবে’’. বন্দী নির্যাতনের ব্যাপারে মার্কিন অবস্থান তাদের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের দেয়া একটি সাক্ষাৎকার থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠে। সে ২০০৭ সালের ১০ই অক্টোবর বলেছিল, ‘’মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন কানুন ভঙ্গ করেই বন্দী নির্যাতন করে’’।[2]
পশ্চিমাদের মত করে মুসলিম বিশ্বেও একশ্রেণীর দালাল শাসকগোষ্ঠী মুসলমানদের ওপর এই ধরণের অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। বন্দী করে নির্যাতন, গুম, হত্যা কিছুই তারা বাদ দিচ্ছে না। আজ বাংলাদেশ,পাকিস্তান,সিরিয়া,মিশর,আলজেরিয়া,মরক্কো,উজবেকিস্থানের মত মুসলিম দেশগুলোর জেলগুলো হাজার হাজার মুসলমান দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে আছে। তাদের একটাই অপরাধ ছিল যে তারা আল্লাহ্(সূওতা) এবং তার রাসুল(স)কে ভালোবাসে, ভালোবাসে আল্লাহ্র(সূওতা) দ্বীনকে। এর দ্বারা এই কাপুরুষ শাসকগোষ্ঠী মূলত আল্লাহ্র সাথেই যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। একটি হাদিসে কুদসিতে এসেছে যে আল্লাহ্(সূওতা) বলছেন, ‘’যারা আমার বন্ধুদের সাথে শত্রুতা পোষণ করবে আমি(আল্লাহ্) স্বয়ং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবো’’।[3]
বন্দী নির্যাতনের ব্যাপারে ইসলামের হুকুমঃ
ইসলাম সব ধরণের বন্দী নির্যাতনকে একেবারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তা সে যে ধরণের বন্দীই হোক না কেন। ইমাম মুসলিম হিশাম বিন হাকিম থেকে বর্ণনা করেন যে, ‘’আমি সাক্ষ দিচ্ছি যে রাসুল(স) বলেছেন আল্লাহ্ তাদেরকে কেয়ামতের দিন শাস্থি দেবেন যারা দুনিয়াতে মানুষকে শাস্থি দেয়’’। [৪] অর্থাৎ যারা আল্লাহ্(সূওতা) নির্ধারণ করেননি এমন কোন পন্থায় মানুষকে শাস্থি দেয় তাদের কেয়ামতে শাস্থির সম্মুখীন হতে হবে। রাসুল(স) আরও বলেছেন, ‘’দুই শ্রেণীর মানুষ হোল জাহান্নামী যাদেরকে এখনো আমি দেখিনি। যাদের মধ্যে একশ্রেণী এমন যে তাদের হাতে থাকবে গাভীর লেজের মত লম্বা লাঠি যা দিয়ে তারা মানুষকে পেটাবে’’।(বুখারি ও মুসলিম)
ইসলাম বন্দীকে নির্যাতন করে তার থেকে স্বীকারোক্তি নেয়াকে শুধুমাত্র মাত্র নিষিদ্ধই করেনি বরং নির্যাতনমূলক স্বীকারোক্তিকে ফাসিদ বা বাতিল বলে ঘোষণা করেছে। কারণ ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিটা মানুষই নির্দোষ যতক্ষণ পর্যন্ত তার কোন দোষ অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই কাউকে অভিযুক্ত করা হলে এটা তার দায় নয় যে নিজেকে নির্দোষ বলে প্রমাণ করবে। বরং এই দায় তার ওপর বর্তায় যেকিনা অভিযোগ করেছে। কারণ রাসুল(স) বলেছেন, ‘’এটা বাদীর দায়িত্ব যে সে প্রমাণ পেশ করবে’’। (সুনানে বায়হাকি) এছাড়া অপরাধী যদি তার অপরাধ স্বেচ্ছায় স্বীকার করার পর তা ফিরিয়ে নেয় তাহলেও তাকে কোন শাস্থি দেয়া যাবে না। এমনকি তা যদি হুদুদ (যিনা,চুরি,মদপান) সংক্রান্ত ব্যাপারেও হয়। যেমনটি সহি বুখারিতে এসছে যে হজরত মায়েজ আসলামি(রা) রাসুল(স) এর কাছে এসে তার জিনায় লিপ্ত হওয়ার কথা স্বীকার করেছিলেন, তখন রাসুল(স) তাকে বারবার তার স্বীকারোক্তি থেকে ফিরে আসার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন।[৫]
অর্থাৎ চুরি, যিনা, মদপান করে কেউ স্বীকার করলেও পরে যদি সেই স্বীকারোক্তি ফিরিয়ে নেয় তবে তাকে ইসলামী রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ কোন শাস্থি দিবে না। কারণ সন্দেহের ওপর ভিত্তি করে শাস্থি কার্যকর করা ইসলামের নীতি নয়। [৬] এখন দেখুন ইসলাম যেখানে স্বীকারোক্তি ফিরিয়ে নেয়ার কারণে বিবাদীকে রেহাই দিচ্ছে সেখানে নির্যাতনের মাধ্যমে স্বীকারোক্তি আদায় করার তো কোন প্রশ্নই আসে না। তাছাড়া রিমান্ডে নিয়ে মানুষকে অত্যাচার নির্যাতনের মাধ্যমে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। এবং ইসলামে জোর-জবরদস্থিমুলক কোন কিছুই ধর্তব্য নয়। রাসুল(স) বলেছেন, ‘’আমার উম্মত থেকে ভুল ভ্রান্তি, ভুলে যাওয়া কারণে এবং যে কাজে তাদেরকে জোরপূর্বক বাধ্য করা হয়েছে, তা ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে’’। [৭] তাই জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হলে তা বাতিল এবং ফাসিদ।
এতো গেলো রিমান্ডের কথা। একইভাবে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করাও হারাম। কারণ একজন মানুষের জীবনকে আল্লাহ্(সূওতা) অন্য সবার জন্য হারাম করে দিয়েছেন। তাই অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা জায়েজ নয় যতক্ষণ পর্যন্ত এমন কোন পরিস্থিতির উদ্ভব না হয় যেখানে ইসলামী শরিয়াহ হত্যার অনুমতি দিয়েছে। রাসুল(স) বলেন, ‘’কোন মুমিনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার চাইতে দুনিয়াটা ধ্বংস হয়ে যাওয়াই আল্লাহ্র নিকট অধিকতর সহজ’’। [৮] যেহেতু কাউকে কোন অপরাধের জন্য রাষ্ট্র যদি মৃত্যুদণ্ড দিতে চায় তবে তাকে আদালতে নিয়ে তার অপরাধ প্রমাণ করতে হবে। তারপরই সম্ভব শাস্থি প্রদান করা। আর যদি প্রমাণিত না হয় তবে কোন শাস্থি দেয়া যাবে না। যেহেতু বিচারের সম্মুখীন করলেই শাস্থি হবে না বরং এর জন্য অপরাধ প্রমাণ করতে হবে। সেহেতু বিচার বহির্ভূত পন্থায় কাউকে হত্যা করার তো প্রশ্নই আসে না।
এখন আসি ৫৪ ধারায় যাকে তাকে যখন তখন গ্রেফতারের বিষয়ে ইসলাম কি বলে? ৫৪ ধারায় যাকে তাকে যখন ইচ্ছা গ্রেফতার করা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। কারণ ইসলামের দৃষ্টিতে অপরাধ প্রমাণের পূর্ব পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায় না। একবার হজরত উমার(রা) এর কাছে অভিযোগ এলো ইরাক থেকে যে সেখানে অনেক লোককে বিনা প্রমাণে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এর জবাবে খলিফাতুল মুসলেমীন হজরত ফারুকে আযম(রা) যা বললেন তা হচ্ছে এই, ‘’ইসলামে ন্যায়সঙ্গত পন্থা ছাড়া কাউকে আটক করা যায় না’’।[৯] এখানে ন্যায়সঙ্গত পন্থা বলতে উলামায়ে ইসলাম বুঝেছেন যে বিচার বিভাগীয় কার্যক্রমের (Due process of Law) মাধ্যমে কারো অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগে তাকে গ্রেফতার করা যাবে না। অর্থাৎ বর্তমানে প্রচলিত ৫৪ ধারা ইসলামের দৃষ্টিতে বাতিল এবং হারাম। শুধু তাই নয় এটি মানবতার জন্য চরম অপমানকরও বটে।
সব শেষে বলতে চাই যে আল্লাহ(সূওতা) আমাদের যেন এই মানিব রচিত শাসন বেবস্থার যাবতীয় অনিষ্ট থেকে রক্ষা করেন এবং আমাদের যেন দারুল ইসলামে ইসলামের শরিয়াহ’র সুশীতল ছায়ায় নিঃশ্বাস নেয়ার সেই সুযোগটি দান করেন যার জন্য আল্লাহ্র(সূওতা) হাজার হাজার বান্দা চাতকের ন্যায় চেয়ে আছে।
তথ্যসূত্রঃ ১.Law Reports of Trials of war Criminals,The United Nations War Crimes Comission,volume 3, London,HMSO,194.২.http://edition.cnn.com/2007/POLITICS/10/10/carter.torture/৩.সহি বুখারি। ৪.সহি মুসলিম ৫.বুখারি। ৬.আল কুরতুবি, আল-জামি’ লি আহকামিল কুরআন, খণ্ড ১৩, পৃষ্ঠা ২৯৮। ৭.ইবনু হাজার আসকালানি-আদ দিরায়াহ ফি তাখরিজি আহাদিসিল হিদায়াহ, বৈরুত; আল মাক্তাবাতুল ইসলামী, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৮১। ৮.তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ। ৯.মুওাত্বা ইমাম মালেক।
কোন মন্তব্য নেই:
/>