সোমবার, ৩ জুন, ২০১৩

** পুলিশের অব্যক্ত কথা-১ . স্বাধীনতার পর থেকে কোন সরকার পুলিশের পেশাদারিত্ব অর্জনের পথ খুলে দেয়নি **



** পুলিশের অব্যক্ত কথা-১ .
স্বাধীনতার পর থেকে কোন সরকার পুলিশের পেশাদারিত্ব অর্জনের পথ খুলে দেয়নি **
<><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><>

পুলিশের কল্যাণে গৃহীত নানা পদক্ষেপ প্রস্তাবনার পর আর আলোর মুখ দেখে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর কিছুদিন দৌঁড়াদৌঁড়ি চলে, ফাইল চালাচালি হয়। পরে দেখা যায়, বিগত সরকারের মতো চলমান সরকারও একই ভাবে, হচ্ছে হবে, করছি করবো করতে করতে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে। পুলিশ অধ্যাদেশ মানা হচ্ছে না শুধুমাত্র পুলিশের উপর সরকারের কর্তৃত্ব হারানোর ভয়ে। মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের অভিযোগ, সরকারের বড় ভয় শুধু এটিই নয়, আসল ভয় হলো অধ্যাদেশ বাস্তবায়িত হলে পুলিশকে আর রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না কোন সরকার । সিএমপিতে কর্মরত কয়েকজন ইন্সপেক্টর আক্ষেপ করলেন আজাদীর কাছে। তাঁরা বলেন, পুলিশ অধ্যাদেশতো সুদূর পরাহত। 



সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় পুলিশ আইন- ১৮৬১ চালুর পর থেকে ইন্সপেক্টর পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৮১ সালের পূর্ব পর্যন্ত একজন ইন্সপেক্টর একটি সার্কেলের (কয়েকটি থানার সমন্বয়ে গঠিত) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন তিনি। পরবর্তীতে থানা এলাকা কেন্দ্রীক সরকারি বিভিন্ন অফিসে ক্যাডার ও নন ক্যাডার গেজেটেড প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইত্যাদি পদমর্যাদার কর্মকর্তারা সচিব পদমর্যাদার। আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠক বা থানার কোন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা ইউনিট প্রধান হিসেবে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঐ সময় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ইন্সপেক্টরগণকে গুরুত্বপূর্ণ মতামত ও সিদ্ধান্ত দিতে হয়। কিন্তু তারা দ্বিতীয় শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়ার কারণে উক্ত সভায় মতামতসহ সিদ্ধান্ত প্রদানে হীনমন্যতায় ভুগেন।

একইভাবে পুলিশের ঝুঁকিভাতা বাড়ানোর প্রস্তাবনা নিয়েও চলছে টালবাহানা। মাঠ পর্যায়ে রয়েছে দারুণ ক্ষোভ। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা থাকলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন ব্যক্তির অনিচ্ছার কারণে দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়টি ঝুলে রয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে পুলিশ সদস্যদের মূল বেতনের ৮০ শতাংশ ঝুঁকি ভাতা হিসেবে প্রদানের প্রস্তাব পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। চলতি বছর জানুয়ারিতে পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী পুলিশ সদস্যদের ৭০ % ঝুঁকিভাতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে ঝুঁকিভাতা ৫০% করে প্রস্তাব পাঠানো হয়।এখন সেটিও ঝুলে আছে।

ইউএনডিপির সহায়তায় পুলিশ সংস্কার কর্মসূচীর আওতায় ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পুলিশ বাহিনী কর্তৃক প্রস্তুতকৃত খসড়া পুলিশ অধ্যাদেশ অনুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ১২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ প্রস্তাব আসার পরতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ২০০৮ সালের ৭ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে উপস্থাপন করা হয়। উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে পুলিশ অধ্যাদেশ সম্পর্কে কমিউনিটি কনসালটেশনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

মাঠ পর্যায়ের একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে, সবাই বলেন, পুলিশকে ঢেলে সাজাতে হবে, পুলিশের আধুনিকায়ন করা হবে। কিন্তু পুলিশকে কোথাও ঢালতেও দেখি না, আধুনিক করারও কোন উদ্যোগ দেখি না। বাস্তবে পুলিশের স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য যা করা দরকার তা কেউ করেন না। পুলিশের জবাবদিহিতা আরো বাড়ানোর জন্য যা যা করা দরকার সেসব নিয়ে পুলিশ অধ্যাদেশের যে খসরাটি দেয়া হয়েছিল সেটি ঝুলছে এখনো মন্ত্রণালয়ে। সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ তাঁর এক সাক্ষাৎকারে আক্ষেপ করে বলেছিলেন, “আমার মনে হয় পুলিশ স্বাধীন হোক, নিরপেক্ষভাবে কাজ করুক তা কেউ চায় না। ” পুলিশ একটা চাপতোষকের (শক এ্যাবজর্ভার) মতো কাজ করবে। কোথাও গোলমাল হলে বা কেউ মারা গেলে পুলিশের এক দুজনকে সাসপেন্ড করে দাও। পুলিশ হচ্ছে এসব পরিবেশ পরিস্থিতির শিকার। একেতো হাতে রাখতে হবে। একে স্বাধীন করার ব্যাপারে সবারই আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। আমার মনে হয় না পুলিশকে কেউ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ করতে চাইবে।

অভিযোগ রয়েছে, যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক,তাদের একটি অনুগত বাহিনী হিসেবে এ দেশের পুরিশ পরিচিত। সরকারের ধ্যানধারণা বা চিন্তার পরিধির বাইরে যাওয়ার সামর্থ্য পুলিশের নেই। পুলিশ সদস্যদের পক্ষ থেকে প্রেরিত অধ্যাদেশে চাওয়া ছিল অন্তত পুলিশ যেন অন্তত: অপরেশনের দিক থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। মামলা পুলিশই তদন্ত করবে; সেখানে যেন কোন মন্ত্রী, এমপি নাক না গলাতে পারেন। কেউ তা করতে এরে তা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। এছাড়া পেশাদারিত্ব ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উপরও প্রস্তাবনা থাকে অধ্যাদেশে। পেশাদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে পুলিশের মধ্যে ভালো কিছু গুণাবলী প্রতিষ্ঠিত হতো। স্বাধীনতার পর থেকে কোন সরকারই পুলিশের এই পেশাদারিত্ব অর্জনের পথটি খুলে দেয়নি।

<><><><><><><><><><><><><><><><><> ঋত্বিক নয়ন<> দৈনিক আজাদী, ২৯ জুলাই রোববার ২০১২ খ্রি <><><><><><><><><><>

কোন মন্তব্য নেই:

Comment here />

Widget ByBlogger Maruf
Widget ByBlogger Maruf