-:: আগামী নির্বাচন: আমেরিকার ইসলামোফোবিয়া: ভারতের চক্রান্ত: আমাদের করনীয়::-
-:: আগামী নির্বাচন: আমেরিকার ইসলামোফোবিয়া: ভারতের চক্রান্ত: আমাদের করনীয়::-
~~~~~~~~~~~~আগামী ২৫ জুন আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরী ৪-৫ ঘন্টার জন্য আসছেন বাংলাদেশে। মানে গরীবের ঘরে হাতির পারা। অবশ্য ওবামার এর আগেকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন ঢাকায় দুই দিন থেকে গেছেন। ঐ সফরটা আম্লীগ সরকারের জন্য খুব দুর্ভাগ্যের ছিল। হাসিনাকে হিলারী অনেক বিষয়ে চাপ দিয়ে গেছেন, যথা- ডঃ ইউনুসকে উৎপীড়ন নাকরা, অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও সকলের অংশগ্রহনে সাধারন নির্বাচন করা, শ্রমিক নেতা আমিনুল হকের হত্যার বিচার করা,
বিএনপির গুম হওয়া নেতা ইলিয়াস আলীকে ফেরত দান ইত্যাদি নানা তিক্ত বিষয়। হাসিনার সাথে ডিনার বাতিল করে খালেদার বাসায় গিয়ে নাস্তা করেছেন।হাসিনার মহাবিরক্তি ডঃ ইউনুস এবং আবেদের সাথে বৈঠক করে গেছেন। এর পরে পার হয়ে গেছে আরো একটি বছর। বাংলাদেশে ঘটে গেছে অনেক ঘটনা দুর্ঘটনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরামহীন সফর চলছে। সর্বশেষে এসে গেলেন আন্ডার সেক্রেটারী ওয়েন্ডি শারম্যান। তিনি হাসিনা সরকারের কর্তাদের সাথে দেখা করলেও হরতালের কারনে খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে পারেন নি। এমনকি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রশংসা করে গেছেন তিনি। অনেকে এ সফরকে বিএনপির জন্য নৈরাশ্যকর বলে মনে করছেন। আমি মনে করি না, হিলারীর অনুসৃত কূটনীতি জন কেরীর আমলে এত দ্রুত বদলেছে।
প্রথম আলো রিপোর্ট করেছে, জন কেরী ঢাকায় এসে হাসিনা ও দীপুমনির সাথে দেখা করবেন।খালেদা জিয়ার সাতে দেখা করবেন কিনা, সেটা বলে নি। তবে বাস্তবে খালেদা জিয়ার সাথে কেরীর দেখা হবে। বিএনপির উচিত হবে, এর সঠিক সদ্ব্যবহার করা, আবার হরতাল দিয়েন না যেনো!
আগামী নির্বাচন বাংলাদেশ ভারত ও মার্কিনীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন। আরো বেশী গুরুত্বপূর্ন বিএনপি, ১৮ দলীয় জোট, হেফাজতে ইসলাম তথা সাধারন মুসলমানদের জন্য। এটা নিশ্চিত যে, ভারত চাইছে যে কোনো মূল্যে আম্লীগকে আবার ক্ষমতায় আনতে। বাংলাদেশের কাছে ভারত যে সব বিষয় চায়, তা পুরন করতে পারে কেবল আম্লীগ। আর বিএনপির কাছ থেকে ওইসব পাওয়ার কোনো আশা নাই। তাই ওদের হিসাব খুব পরিস্কার।
বরাবরের মত আমেরিকার অবস্থান এন্টি-ইসলামিক। তাদের ভিতরে ইসলামো-ফোবিয়া কাজ করছে। ২০০৪ সাল থেকে ভারত তাদেরকে খাইয়েছে, বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গীবাদ আছে, যদিও ওটা ছিল ভারতেই সৃষ্টি। এটা প্রমানিত যে, জেএমবির কাছে অস্ত্র সরবরাহ করত ভারত! বাংলাদেশে সাম্প্রতিক হেফাজতে ইসলামের কর্মকান্ডকে আম্লীগ সরকার ও ভারত আম্রিকাকে বুঝিয়েছে ইসলামী মৌলবাদের উত্থান হিসাবে, যদিও বাস্তবে তা নয়। অবাক করার মত বিষয়- ২০১০ সালে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য এই হেফাজতে ইসলামের সৃষ্টিতেও সহায়তা করেছিল আম্লীগ! যদিও ২০১৩ সালে এসে নাস্তিক ব্লগার ও শাহবাগ ইস্যুতে হেফাজত সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ২০০৬-৭ সাল ব্যাপী ভারতীয় লবির লোকজন বাংলাদেশে ইসলামাইজেশনের বিরুদ্ধে আমেরিকার বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিরামহীন প্রচারণা চালিয়েছে। দেখুন নমুনা: http://www.fas.org/sgp/
এর বিপরীতে বাংলাদেশের তখনকার ৪ দলীয় জোট সরকার কার্যকর তেমন জোরালো কিছু করতে পারেনি। তখন ওয়াশিংটনে রাষ্ট্রদূত ছিল শমশের মবিন চৌধুরী, কিন্তু তার পারফর্মেন্স ছিলো একেবারে জিরো। তার আশে পাশে যখন চলছিল ”ওয়ান ইলেভেনের ষড়যন্ত্র”, তখন তিনি কেবল চেয়ে চেয়ে দেখেছেন! যদিও বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে বিএনপি সরকার ২০০৬ সালে বাংলা ভাই, শায়খ রহমান সহ সন্ত্রাসীদের আটক ও বিচার করেছে, কিন্তু বিএনপি এর ফায়দা তুলতে ব্যর্থ হয়েছিল। অন্যদিকে আওয়ামীলীগ গত চার বছরে বিএনপির চেয়ে ভালো পারফর্ম করতে না পারলেও সাধারন মুসলমানদের পিটিয়ে মসজিদ খালি করে, জামায়াত নেতাদের জেল দিয়ে, এমনকি হেফাজতের কয়েক হাজার কর্মী হত্যা করে আম্রিকার কাছে নিজেদেরকে ইসলামী জঙ্গী ও মৌলবাদ দমনে একমাত্র অনুগত দাস হিসাবে প্রচারের কোশেশ চালাচ্ছে! অর্থাৎ পুরোনো পথ ধরেই চলছে হাসিনা, যাতে করে আগামী নির্বাচনে মার্কিনী অনুকম্পা লাভ করতে পারে!!
হাসিনা খুব ভালো করেই জানে, নির্বাচন হলে তাদের সীট সংখা ৪০ এর মধ্যে সীমিত হয়ে যাবে, আর বিপুল সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে ১৮ দলীয় জোট ক্ষমতায় আসবে। এরপরে সংবিধান সংশোধন থেকে শুরু করে সারা দেশে চলবে ব্যাপক পরিবর্তন। এক কথায় আম্লীগ যা যা করে গেছে, সবকিছু উল্টে যাবে। এমনকি হত্যা গুম খুনের অভিযোগে তাদের বড় বড় নেতাদের চরম দন্ড ভোগ করা লাগতে পারে। তাই বিএনপিকে কোনোভাবেই সরকারে আসতে দিতে চায় না আম্লীগ। দরকার হলে ক্ষমতা আর্মি নিয়ে যাক। তবে সেখানে আবার কিন্তু আছে: ২০০৭ মার্কা সরকার হলে আম্লীগের সব বান্ধা পড়বে। তাই তারা চায় প্রো-আম্লীগ সেনা শাসন। আর আমেরিকার কাছ থেকে তারা আশা করে ১/১১র মত ঘটনা যেনো তারা না ঘটায়, বিশেষ করে ডঃ ইউনুসের যেনো কোনোরূপ প্রভাব না থাকে! সে লক্ষে নানাবিধ উপায়ে এবং চালাকি করে ওয়াশিংটনকে গোলক ধাধার উপর রাখতে চায় আম্লীগ। এর মধ্যে আছে: পার্টনারশীপ ডায়লগ সই করা, ইসলামপন্থীদের দমনে নির্মম হওয়া, তেল গ্যাসের ব্যবসা, বঙ্গোপসাগরের ব্যবহার, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে মার্কিনীদের যে তৎপরতা রয়েছে সেটাকে হাতিয়ায় সরিয়ে আনার সুযোগ দেয়া। এ লক্ষে হাতিয়ার চর কেরিং এলাকায় ৯ হাজার একর জমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অলরেডি দিয়ে দিয়েছে হাসিনা। লোকজন সরিয়ে নেয়া হয়েছে এই এলাকার। আসলে মহড়ার নামে ওটা ব্যবহার করবে মার্কিন বাহিনী। এভাবে দেশ ধংসকারী যত পদক্ষেপ আছে, তা নিয়ে হলেও হাসিনা চায় আরেকবার ক্ষমতা! সেটা হতে দেয়া যাবে না।
এমতাবস্থায় বাংলাদেশের ১৫ কোটি মুসলমান, তথা ১৮ দলীয় জোট ও হেফাজতে ইসলামের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আগামী নির্বাচনে ১৮ দলীয় জোটকে জয়ী করে ক্ষমতায় আনা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই। সে লক্ষে কতিপয় প্রস্তাবনা:
১. বিএনপিকে বিভিন্ন পর্যায়ে তড়িৎ-কূটনীতি চালাতে হবে। চীন, পাকিস্তান, সৌদিআরব ও আমেরিকাতে প্রতিনিধি পাঠাতে হবে। চীনের সাথে খুব উন্নতমানের সম্পর্ক তৈরী করতে হবে, যাতে আতঙ্কিত হয়ে আম্রিকা বিএনপিমূখি হয়। পাকিস্তান-সৌদিকও মার্কিনীদের উপর ব্যবহার করা যায়।
২. বিএনপির অতি ডানপন্থী অবস্থানে কিছুটা সমন্বয় করতে হবে। সরকারে গেলে তা মৌলবাদী হয়ে যাবে না, এ বিষয়টা আন্তর্জাতিক মহলের কাছে পরিস্কার করতে হবে।
৩. হেফাজতের আন্দোলন খুব আতঙ্কজনক কিছু না হওয়াই ভালো। তবে ৫ তারিখের সমন্বয়হীনতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে যদি একবারে নির্ভুলভাবে সরকার পতন ঘটানো যায়, তা করতে হবে। আধাআধি কোনো কিছু করা যাবে না। তার চেয়ে বরং ‘ভোট বিল্পব’ করাই ভালো। হেফাজতের আন্তর্জাতিক একটা টীম করতে হবে। তার বিভিন্ন দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করবে। দাবী দাওয়া সহজবোধ্য করে বিদেশীদের কাছে পৌছাতে হবে। তারা দেশে তালেবানী শাসন চায়না, এটা পরিস্কার করতে হবে।
৪. মনে রাখতে হবে, আমরা যত কিছুই করি না কেনো, আমেরিকা কোনো দিনও মুসলমানদের সহায়ক হবে না। তাদের লাইন ইহুদি-ইন্ডিয়া-আম্লীগ-বাম এইসব রাস্তা। হাসিনার ছেলে জয় ইহুদি এক মেজরের সাথে মিলে যে পেপার তৈরী করেছিল, সেই ভাবেই বাংলাদেশে মুসলমান নিধন চালাচ্ছে হাসিনা। সেই কারনে ভবিষ্যতে মইনের মত আবার কোনো জাতীয় দুশমন যেনো আবার ওদের পাল্লায় পরে দেশে নাস্তিক্যবাদীদের ক্ষমতায় বসাতে না পারে, সে লক্ষে কাজ করতে হবে।
৫. জামায়াতে ইসলামের আন্তর্জাতিক টীমকে আরো ভাইব্রান্ট করতে হবে। তারা আজকাল খুব কম যাচ্ছে পশ্চিমে।
৬. আম্রিকার কাছে খুব পরিস্কার ধারনা আছে, সামনের নির্বাচনে কি ফলাফল হতে পারে। সে জন্য তারা বিএনপির পিছু ছাড়বে না। এটাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর মধ্যে বিজয়ের সূত্র নিহিত আছে।
৭. নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচনে যাওয়ার অর্থ স্রেফ আত্মহত্যা। নির্বচনকে সামনে রেখে প্রশাসন থেকে হাজার খানেক সিনিয়র অফিসার চাকরীচ্যুত করতে যাচ্ছে হাসিনা। আর নিজের পছন্দ করা অফিসারদের বসাচ্ছে কী পয়েন্টে, ব্যাকআপে রাখছে আরো। যাতে করে ভবিষ্যতে যদি নির্দলীয় সরকারও হয়, তারা যেনো প্রশানকে নিউট্রাল করতে না পারে। এ সবের জন্য পরিস্কার কর্মপরিকল্পনা তৈরী করুন।
৮. সবার জন্য বলছি, মিশরের মুরসি আর পাকিস্তানের নেওয়াজ শরীফকে কিন্তু আম্রিকা সমর্থন করেনি। মুরসি রক্তক্ষয়ী আন্দোলন করে আর শরীফ শান্তিপূর্ন পথে এগিয়ে বিজয় অর্জন করেছেন। আমাদের ক্ষেত্রটা একটু ভিন্ন। এখানে শান্তিপূর্ন পথে কিছুই আসবে না, আবার অতিরিক্ত হানাহানিতে জাতীসংঘ বাহিনী পাঠানোর হুমকি আছে। কাজেই ময়দানের শক্তি ও ব্যালটের জোর দু’টো খাটিয়ে ক্ষমতা বদল করে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে।
আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
কোন মন্তব্য নেই:
/>