চরমনাই পীরের মুনাফেকির কিছু নমুনা।
1. চরমনাই এর মরহুম পীর সাহেব খুব বড় গলা করে বলতেন, ইসলামে রাজনীতি হারাম। খুব ভাল কথা। তাহলে উনি নিজে কেন পরবর্তীতে হারাম রাজনীতি করলেন? শুনুন উনার মুখ থেকেই... (ইসলামী ঐক্য আন্দলনের আমির মুফতি হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে) 'রাজনীতি হারাম ফতোয়া দিয়ে জামাত ঠেকান যাচ্ছিল না। এই ফেতনা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। এই বার (১৯৯১) আমরা নির্বাচন করাই ওদের ভোট কিছুটা হলেও কমেছে!' আমার কিছু বলার নেই। আপনারাই বলেন কতবড় ভণ্ড আর মুনাফিক হলে এভাবে হালাল হারাম ফতোয়া দিতে পারে?
2. আশির দশকের শেষের দিকে মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাইদি সাহেবের উদ্যেগে দেশের প্রায় সকল শীর্ষ আলেমগণ একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মে এসে দ্বীন কায়েমের আন্দোলন করার উদ্যেগ নিয়েছিলেন। যখন সকল ইসলামপন্থীরা মতভেদ ভুলে এক হওয়ার জন্য সিধান্ত নিল তখন মুনাফিক চরমনাই কূট কৌশল প্রয়োগ করল। উনি বেকে বসলেন যে, জামাত কে এই ঐক্যের মধ্যে নেওয়া যাবে না। আরে জামাত এত বড় দল তাকে যদি না নেওয়া হয় তাহলে এত বড় একটা অংশকে বাদ দিয়ে ঐক্য কি ভাবে হওয়া সম্ভব? তাহলে সেটা তো আর সকল ইসলামপথিদের ঐক্য হল না, একটা অংশের ঐক্য হল। যায় হোক ঐ মুনাফিকের কারণে সেবার আর ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব হয় নি।
3. যায় হোক শেষ পর্যন্ত জামাত কে ছারাই ঐক্য বদ্ধ একটা দল গঠন করা হল যার নাম দেওয়া হয়েছিল 'ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন'. সিধান্ত নেওয়া হল, এক জন দুই বছর করে আমির থাকবেন। প্রথম আমির ছিলেন আল্লামা আজিজুল হোক সাহেব। দ্বিতীয় আমির করা হল মরহুম চরমনাই পীরকে। কিন্তু ঐ যে উনি আমিরে একবার বসলেন আজ অবধি উনি সে পদ ছারেন নাই। কয়েকদিন আগে দেখলাম এক পীরের মুরিদ লিখেছে, আমার কাছে ভিডিও আছে যেখানে সাইদি বলেছে ইসলামী শাসন তন্ত্র আন্দোলন এখন যে করবে না সে মুনাফিক। ঐ বেটা ভণ্ড পীরের মূর্খ মুরিদ এই কথা সাইদি তখন বলেছিল যখন জামাত সহ সকল ইসলাম পন্থীদের ঐক্য বদ্ধ ভাবে ইসলামী শাসন তন্ত্র আন্দোলন করার সিধান্ত হয়েছিল। বাপকা বেটা, পিরকা মুরিদ।
4. যাক সেবারের মত ঐক্য বদ্ধ হওয়ার সম্ভব হল না ভণ্ড পীরের কূট চাল ও মুনাফেকির কারণে। কিন্তু আল্লাহ্র আশেষ রহমতে প্রায় দুই যুগ পরে আবার ২০১৩ সালে সেই সুযোগ এসেছিল আল্লামা শফির উছিলায়। ফলে দল মত নির্বিশেষে আমরা সবাই আবার এক প্লাটফর্মে আসতে পেরেছিলাম। কিন্তু মুনাফিকের মুনাফিকি তো আর থেমে নেই। সেই রাতে আমি মতিঝিলে আমার এক বন্ধুকে বলছিলাম, আজকে সবাই মতিঝিলে এসেছে শুধু মাত্র দুইটা দল ছাড়া- তাবলীগ ও চরমনাই। পাশ থেকে একজন মাদ্রাসা ছাত্র আমার কথা শুনে বলল, না ভাই তাবলীগের সাথে আল্লামা শফির বৈঠক হয়েছে এবং তারা হেফাজতের কর্মসূচিতে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে। আমি বললাম, আলহামদুলিল্লাহ্। যে তাবলীগ জীবনেও কোন দিন মাঠে নামে নি আজকে সেই নিরীহ তাবলীগও নাস্তিকের ফাসির দাবীতে মাঠে নেমেছে। উনি আরও জানাল যে চরমনাই এর পীর তার সকল মুরিদকে হেফাজতের অবরোধ কর্মসূচীতে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। বাংলাদেশে বাস করে এবং মুসলিম দাবি করে এমন সকল ব্যাক্তিই সেদিন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে অবরোধ কর্মসূচীকে সমর্থন দিয়েছিল। আর চরমনাই পীর তার মুরিদদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সেখানে যেতে! হয়তোবা উনি আগেই জানত সেদিন থাকলে কি পরিণতি হবে কারণ উনি তো বুবুজির ইনার সার্কেলের লোক! এরপরেও কি কওমি ভাইয়েরা এই মুনাফিক থেকেও সতর্ক হবেন না?
5. হেফাযত প্রথম যেদিন বাদ জুম্মা সারা দেশে নবী অবমাননার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচী ঘোষণা করে সেদিন আমি বায়তুল মোকাররমে গিয়েছিলে সে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে। আপনারা সবাই জানেন সেদিন সারা দেশেই মিছিলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল। আমি মিছিলের সাথে পল্টন যেতেই পুলিশ গুলি চালনা শুরু করল, তখন সবাই যে যে দিকে পারে ছুটতে লাগল। আমিও ঢুকে গেলাম পল্টনের ভেতর গলির মধ্যে। ঢুকে দেখি পল্টন মসজিদের সামনের গলিতে একদল হুযুর নাস্তিক ও সরকার বিরোধী স্লোগান দিচ্ছে। আমি তো অবাক যে সবাই পালাইতেছে আর এরা কত বড় ইমানদার যে এরা এক পাও নরতেছে না। ভাবলাম সবগুল গুলি খাইবে এখনই! কিন্তু না। তারা তাদের কর্মসূচী চালিয়েই গেল। পুলিশ কোন অলি গুলি বাদ রাখে নাই গুলি চালাতে কিন্তু সেখানে একটা টিয়ার শেলও মারল না। অথচ সে রাস্তা টা পল্টন মূল রাস্তা থেকেই দেখা যাচ্ছিল। আমি এতক্ষণে বুঝতে পারলাম এরা আসলে হেফাযতি না, এরা চরমনাই ওরেফ মুনাফিক। তাই তো পুলিশ এদেরকে কিছুই বলল না। এরা সারে তিনটা পর্যন্ত তাদের কর্মসূচী চালিয়ে গেল। আসলে আগেই তাদের পুলিশকে বলা ছিল, আমরা নাস্তিক মুরতাদের দোসর মুনাফিক ওরফে চরমনাই মসজিদ গলিতে থাকব এখানে তোমরা আইসো না। কারণ তমারা গুলি চালাইয়া যা করতে পারবা না আমরা তার চেয়ে বেশী তোমাদের কইরা দিব।
6. ৫ ই মে হেফাজতের সমাবেশের কয়েকদিন আগে চরমনাই মতিঝিলে বিশাল এক সমাবেস করে যার ছবি আপনারা অনেকেই না বুইঝা শেয়ার করছেন। কিন্তু আপনাদের সবার জানা উছিত ছিল যে ঐ টা ছিল একটা ধোঁকাবাজি। তারা কোন কর্মসূচী না দিলে তাদের মুরিদদের কাছে আবার জবাব দেওয়ার কিছু থাকবে না। মুরিদেরাও এখন বলতে পারবে আমরাও নাস্তিকের ফাসির দাবীতে মতিঝিলে গেছিলাম। আসলে চরমনাই খুব ভাল করেই জানত যে হেফাজতের সাথে গেলে পরিণতি খুব খারাপ হবে। তাই তারা একুল ও অকুল দু কুলই রক্ষা করল। এটাই মুনাফিকদের বৈশিষ্ট যে তারা মুসলিমদের সাথে যখন থাকে তখন বলে আমরা তো তোমাদের সাথেই আছি আবার যখন নাস্তিকদের সাথে যাই তখন বলে আমরা তো ওদের সাথে অভিনয় করছি মাত্র।
হে আমার কওমি মাদ্রসার ভাইয়েরা! আপনারা কি এরপরেও চরমনাই এর সাথে সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করবেন না? এরপরেও কি এই মুনাফিকদ ব্যাপারে সতর্ক হবেন না? যদি এখনই এদের ব্যাপারে সতর্ক না হন তাহলে ভবিষ্যতে আপনাদেরকে আরও চরা মুল্য দিতে হবে। তাই আর দেরি না করে এই চরমনাই নামক ভণ্ড পীর ব্যবসায়ীর সাথে নিজেদের সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করুন।
কোন মন্তব্য নেই:
/>