বুধবার, ৪ মার্চ, ২০১৫

পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর মুনাজাত ----------





পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর মুনাজাত

আমাদের দেশে বলতে গেলে ভারতীয় উপমহাদেশে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর দুআ-মুনাজাতের প্রচলন দেখা যায়। এ বিষয় এখন কিছু আলোচনা করার ইচ্ছা করছি।

পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত শেষে দুআ কবুল হওয়ার কথা বহু সহীহ হাদীস থেকে প্রমাণিত। তাহলে এ নিয়ে বিতর্ক কেন? আসলে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর দুআ নিয়ে বিতর্ক নয়, বিতর্ক হল এর পদ্ধতি নিয়ে। যে পদ্ধতিতে দুআ করা হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা তাঁর সাহাবায়ে কেরাম এভাবে দুআ করেছিলেন কি-না? তাই আমি এখানে আলোচনা করব সে দুআ-মুনাজাত নিয়ে যার মধ্যে নিম্নোক্ত সবকটি শর্ত বিদ্যমান :

এক. পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর দুআ করা।

দুই. যে দুআ-মুনাজাত জামাআতের সঙ্গে করা হয়।

তিন. প্রতিদিন প্রতি ফরজ সালাত শেষে দুআ-মুনাজাত করা।
এ শর্তাবলী বিশিষ্ট দুআ-মুনাজাত কতটুকু সুন্নাত সম্মত সেটাই এ অধ্যায়ের মূল আলোচ্য বিষয়।

পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত আদায়ের পর প্রচলিত মুনাজাত করা না করার ব্যাপারে আমাদের দেশের লোকদের সাধারণত তিন ভাগে বিভক্ত দেখা যায়।

এক. যারা ছালাম ফিরানোর পর বসে বসে কিছুক্ষণ যিকর-আযকার আদায় করেন, যা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

দুই. যারা ছালাম ফিরানোর পর যিকির-আযকার না করে তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে যান সুন্নাত নামায আদায়ের জন্য।

তিন. যারা ছালাম ফিরানোর পর সর্বদা ইমাম সাহেবের সঙ্গে একত্রে মুনাজাত করেন। এবং মুনাজাত শেষ হওয়ার পর সুন্নাত নামায আদায় করেন।
আর এ তিন ধরনের লোকদেরই এ সকল আমলের সমর্থনে কোনো না কোনো দলীল প্রমাণ রয়েছে। হোক তা শুদ্ধ বা অশুদ্ধ। স্পষ্ট বা অস্পষ্ট।

প্রথম দলের দলীল-প্রমাণ স্পষ্ট। তাহল বুখারী ও মুসলিমসহ বহু হাদীসের কিতাবে সালাতের পর যিকির-আযকার অধ্যায়ে বিভিন্ন যিকিরের কথা সহীহ সনদে বর্ণিত আছে, যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবায়ে কেরাম আমল করেছেন। অনেক ইমাম ও উলামায়ে কেরাম এ যিকির-আযকার সম্পর্কে স্বতন্ত্র পুস্তক সংকলন করেছেন।

আর দ্বিতীয় দলের প্রমাণ হল এই হাদীস
عن عائشة رضى الله عنها قالت كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا سلم لم يقعد إلا مقدار ما يقول اللهم أنت السلام ومنك السلام تباركت يا ذالجلال والإكرام.") أخرجه ابن ماجة والنسائي والترمذي وقال حديث حسن صحيح وهو كما قال، صححه الألباني في صحيح ابن ماجه رقم الحديث 761(
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ছালাম ফিরাতেন তখন আল্লাহুম্মা আনতাচ্ছালাম ওয়ামিনকাচ্ছালাম তাবারাকতা ইয়া জালজালালি ওয়াল ইকরাম পড়তে যতটুকু সময় লাগে তার চেয়ে বেশি সময় বসতেন না। (তিরমিজী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)
তারা এ হাদীস দ্বারা বুঝে নিয়েছেন যে, এ যিকিরটুকু আদায় করতে যতটুকু সময় লাগে এর চেয়ে বেশি বসা ঠিক নয়। তাই তাড়াতাড়ি সুন্নাত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে যেতে হবে। আসলে এ হাদীস দ্বারা তারা যা বুঝেছেন তা সঠিক নয়।
হাদীসটির ব্যাখ্যা হল, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু ইমাম ছিলেন তাই তিনি ছালাম ফিরানোর পর এতটুকু সময় মাত্র কেবলামুখী হয়ে বসতেন এরপর তিনি মুসল্লীদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতেন। আর তিনি যে প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর মুসল্লীদের দিকে মুখ করে বসতেন তা বহু সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। (মজমু আল ফাতাওয়া : ইমাম ইবনু তাইমিয়া)
এ হাদীস দ্বারা কখনো প্রমাণিত হয় না যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছালাম ফিরিয়ে এ দুআটুকু পড়ে তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে যেতেন সুন্নাত সালাত আদায়ের জন্য। ফরজ সালাত আদায়ের পর যিকির, তাছবীহ, তাহলীল বর্জন করে তাড়াতাড়ি সুন্নাত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়া মোটেও সুন্নাত নয়। বরং সুন্নাত হল সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যিকির, দুআ, তাছবীহ, তাহলীল সাধ্যমত আদায় করে তারপর সুন্নাত আদায় করা।

তৃতীয় দল যারা ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে (জামাআতের সঙ্গে) মুনাজাত করেন তাদের দলীল হল ওই সকল হাদীস যাতে সালাত শেষে দুআ কবুলের কথা বলা হয়েছে এবং দুআ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এ সকল হাদীস ছাড়া তাদের এ কাজের সমর্থনে হাদীস থেকে সরাসরি কোনো প্রমাণ নেই। এমন কোনো হাদীস তারা পেশ করতে পারবেন না যাতে দেখা যাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক সালাত জামাআতের সঙ্গে আদায় শেষে সকলকে নিয়ে সর্বদা হাত তুলে মুনাজাত করেছেন।
তারা যে সকল হাদীস প্রমাণ হিসেবে পেশ করতে চান তার শিরোনাম হল
الدعاء عقيب الصلوات،  الدعاء دبر الصلوات
তারা মনে করে নিয়েছেন আকীবাস সালাত ও দুবুরাস সালাত অর্থ ছালাম ফিরানোর পর। আসলে তা নয়। এর অর্থ হল সালাতের শেষ অংশে। এ সকল হাদীসে সালাতের শেষ অংশে অর্থাৎ শেষ বৈঠকে দরূদ পাঠ করার পর ছালাম ফিরানোর পূর্বে দুআ করার কথা বলা হয়েছে। পরিভাষায় যা দুআয়ে মাছুরা হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত। সালাত শেষে দুআ কবুল সম্পর্কে যত হাদীস এসেছে তা সবগুলো দুআ মাছুরা সম্পর্কে। যার সময় হল ছালাম ফিরানোর পূর্বে। আর দুআ মাছুরা শুধু একটা নয়, অনেক। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সালাতের শেষে দুআ সংক্রান্ত এ সকল হাদীসে বাদাস সালাত বলা হয়নি। হাদীস গ্রন্থে এ সকল দুআকে
الأدعياء دبر الصلوات أو الدعاء عقيب الصلاة
(সালাত শেষের দুআ) অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে দুটো বিষয়; প্রথমটা হল সালাত শেষের দুআ। দ্বিতীয়টা হল সালাত শেষের যিকির। প্রথমটির স্থান হল ছালাম ফিরানোর পূর্বে। আর দ্বিতীয়টির স্থান হল ছালাম ফিরানোর পর। ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহ. ইবনুল কায়্যিম রহ. প্রমুখ উলামায়ে কেরামের মত এটা-ই।
এ মতটা কুরআন ও হাদীসের আলোকে বেশি যুক্তিগ্রাহ্য। বান্দা যখন সালাতে থাকে তখন সে আল্লাহর নিকটে অবস্থান করে। দুআ মুনাজাতের সময় তখনই। যখন সালাতের সমাপ্তি ঘোষিত হল তখন নয়। তখন সময় হল আল্লাহর যিকিরের, যেমন আল্লাহ বলেন :
فَإِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلَاةَ فَاذْكُرُوا اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِكُمْ. 
যখন তোমরা সালাত শেষ করলে তখন দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে। (আন নিসা : ১০২ )
এ সম্পর্কিত হাদীসগুলোর ভাষা এবং সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আমলসমূহ গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে এ বিষয়টিই বুঝে আসেছালাম ফিরানোর পরের সময়টা দুআ করার সময় নয়, যিকির করার সময়।

তারপরও প্রশ্ন থেকে যায় যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরজ সালাতের পর কখনো কি দুআ করেননি? হ্যা করেছেন। তবে তা সম্মিলিতভাবে নয়।
যেমন হাদীসে এসেছে :
عن البراء بن عازب قال : كنا إذا صلينا خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم أحيانا  نكون عن يمينه يقبل علينا بوجهه فسمعته يقول : رب قني عذابك بوم تبعث عبادك"  (رواه البخاري)
আল-বারা ইবনু আযেব বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পিছনে সালাত আদায় করতাম, তিনি আমাদের দিকে মুখ করতেন, কখনো কখনো শুনতাম তিনি বলতেন, হে আল্লাহ ! আপনার শাস্তি থেকে আমাকে বাঁচান যেদিন আপনি আপনার বান্দাদের উঠাবেন। (বুখারী)

জামাআতের সঙ্গে তিনি মুসল্লীদের নিয়ে দুআ করেছেন, এমন কোনো বর্ণনা নেই। যা আছে তা তার বিপরীত। যেমন বর্ণিত হাদীসটির প্রতি লক্ষ্য করুন! সেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবচন শব্দ ব্যবহার করেছেন। বলেছেন আমাকে বাঁচান...। সকলকে সঙ্গে নিয়ে দুআটি করলে বলতেন আমাদেরকে বাঁচান।
আরেকটি হাদীসের প্রতি লক্ষ্য করুন :
قال النبي صلى الله عليه وسلم لمعاذ بن جبل " لا تدعن في دبركل صلاة أن تقول اللهم أعني على ذكرك وشكرك وحسن عبادتك.  )رواه  أبو داود و النسائي)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুআজ বিন জাবালকে বলেছেন, তুমি অবশ্যই প্রত্যেক সালাতের পর বলবে, হে আল্লাহ! আপনার যিকির, আপনার শোকর, আপনার জন্য উত্তম ইবাদত করতে আমাকে সাহায্য করুন। (আবু দাউদ, নাসায়ী)
দেখুন! প্রখ্যাত সাহাবী মুআজ বিন জাবাল রা. কওমের ইমাম ছিলেন। রাসূল তাঁকে ইয়েমেনের গভর্ণর, শিক্ষক ও ইমাম হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। তিনি সালাতে ইমামতি করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে এ দুআটি সকলকে নিয়ে করার নির্দেশ দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা দেননি। তিনি তাঁকে একা একা দুআটি করার জন্য বলেছেন। হাদীসের ভাষাই তার প্রমাণ।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছালাম ফিরনোর পর তিনবার আস্তাগফিরুল্লাহ (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি) বলেছেন। তিনি যদি এটা সকলকে নিয়ে করতেন তাহলে নাস্তাগফিরুল্লাহ (আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি) বলতেন।

যারা ফরজ সালাত শেষে কোনো যিকির-আযকার না করে উঠে গেল তারা একটা সুন্নাত (মুস্তাহাব) ছেড়ে দিল। আবার যারা সালাত শেষে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করে উঠে গেল তারা একটা সুন্নাত বাদ দিয়ে সে স্থানে অন্য একটি বিদআত আমল করল।

তাই সারকথা হল, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের পর সব সময় জামাআতের সঙ্গে মুনাজাত করা একটি বিদআত। যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেন নি, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণ করেছেন বলেও কোনো প্রমাণ নেই।
তবে যদি কেউ জামাতে সালাত আদায়ের পর একা একা দুআ মুনাজাত করেন তা সুন্নাতের খেলাফ হবে না। এমনিভাবে ইমাম সাহেব যদি সকলকে নিয়ে বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে কোনো কোনো সময় দুআ-মুনাজাত করেন তবে তা নাজায়েয হবে না।
ইমাম ইবনু তাইমিয়া, ইবনুল কায়্যিম, মুফতীয়ে আজম ফয়জুল্লাহ রহ. সহ অনেক আলেম-উলামা এ মত ব্যক্ত করেছেন।

সালাত শেষে যে সকল দুআ ও জিকির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত

আমি এখানে সালাত শেষে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেসকল দুআ ও যিকির আদায় করেছেন ও করতে বলেছেন তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করতে চাই। যাতে পাঠক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই সুন্নাতকে আমল হিসেবে গ্রহণ করেন এবং এ সম্পর্কিত বিদআত পরিহার করেন।
عن ثوبان رضي الله عنه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم  إذا انصرف من صلاته استغفر ثلاثا وقال اللهم أنت السلام ومنك السلام تباركت يا ذالجلال والإكرام. قيل للأوزاعي وهو أحد رواة الحديث كيف الاستغفار؟ قال : يقول : استغفر الله، استغفر الله، استغفر الله.) رواه مسلم(
সাওবান রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন যখন সালাত শেষ করতেন তখন তিনবার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন এবং বলতেন, আল্লাহুম্মা আনতাচ্ছালাম . . . (হে আল্লাহ! তুমি শান্তিময় এবং তোমার নিকট হতে শান্তির আগমন, তুমি কল্যাণময়ত, হে মর্যাদাবান, মহানুভব!
ইমাম আওযায়ীকে জিজ্ঞেস করা হল -যিনি এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাত শেষে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন কিভাবে?
বললেন, তিনি বলতেন, আস্তাগফিরুল্লাহ! আস্তাগফিরুল্লাহ! আস্তাগফিরুল্লাহ! (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি)। (মুসলিম)
كتب المغيرة بن شعبة إلى معاوية رضي الله عنه: أن رسول الله صلى الله عبيه وسلم كان إذا فرغ من الصلاة وسلم قال : لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير. اللهم لا مانع لما أعطيت ولا معطى لما منعت ولا ينفع ذا الجد منك الجد. (أخرجه البخاري ومسلم)
মুগীরা ইবনু শোবা রা. মুয়াবিয়া রা. এর কাছে লিখেছেন যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সালাত শেষ করে সালাম ফিরাতেন তখন বলতেন, লা-ইলাহা ইল্লাহ ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর, আল্লাহুম্মা লা- মানেআ লিমা আতাইতা ওয়ালা মুতিয়া লিমা মানাতা ওয়ালা ইয়ান ফাউ জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু। (আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁর। তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ আপনি যা দান করেন তা বাধা দেয়ার কেউ নেই। আর আপনি যা বাধা দেবেন তা দেয়ার মত কেউ নেই। আর আযাবের মুকাবেলায় ধনবানকে তার ধন কোনো উপকার করতে পারে না।) (বুখারী ও মুসলিম)
عن عبد الله بن الزبير رضي الله عنهما أنه كان يقول دبر كل صلاة حين يسلم : لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير. لا حول ولا قوة إلا بالله . لا إله إلا الله ولا نعبد إلا إياه له النعمة وله الفضل وله الثناء الحسن، لا إله إلا الله مخلصين له الدين ولو كره الكافرون. قال ابن الزبير : وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم  يهلل بـهن دبر كل صلاة. (رواه مسلم(
আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর রা. থেকে বর্ণিত তিনি প্রত্যেক সালাতের শেষে সালাম ফিরানোর পর বলতেন, লা-ইলাহা ইল্লাহ ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর, লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ, লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়ালা নাবুদু ইল্লা ইয়্যাহ, লাহুন নিমাতু ওয়ালাহু ফজলু ওয়ালাহুছ ছানাউল হাসান, লাইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিছীনা লাহুদ্দীন ওয়ালাও কারিহাল কাফিরূন। (আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁর। তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ব্যতীত গুনাহ থেকে বিরত থাকার ও ইবাদত করার শক্তি কারো নেই। আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। আমরা তাঁকে ছাড়া আর কারো ইবাদত করি না। সমস্ত অনুগ্রহ ও শ্রেষ্ঠত্ব তাঁরই। সকল সুন্দর ও ভাল প্রশংসা তাঁরই জন্য। তিনি ব্যতীত আর কোনো ইলাহ নেই। আমরা ধর্মকে একমাত্র তাঁরই জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছি, যদিও কাফেরা তা পছন্দ করে না)।
ইবনু যুবাইর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক সালাতের শেষে এ বাক্যগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর ইলাহিয়্যাতের ঘোষণা দিতেন। (মুসলিম)
عن أبي هريرة رضي الله عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : من سبح الله في دبر كل صلاة ثلاثا وثلاثين وحمد الله ثلاثا وثلاثين وكبر الله ثلاثا وثلاثين وقال تمام المائة  لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير، غفرت خطاياه وإن كانت مثل زبد البحر. (رواه مسلم(
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক সালাতের পর তেত্রিশবার ছুবহানাল্লাহ বলবে, তেত্রিশ বার আলহামদু লিল্লাহ বলবে ও তেত্রিশবার আল্লাহু আকবার বলবে এর পর লা-ইলাহা ইল্লাহ ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর (আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁর। তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান) বলে একশ বাক্য পূর্ণ করবে তার পাপগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। (মুসলিম)

এ ছাড়াও সালাতের পর আরো অনেক যিকির ও দুআর কথা হাদীসে এসেছে। সেগুলো আদায় করা যেতে পারে। যেমন সূরা ইখলাছ, সূরা ফালাক, সূরা নাছ পাঠ করার কথা এসেছে। আয়াতুল কুরসী পাঠ করার বর্ণনা এসেছে ।
এ সকল দুআ যে সবগুলো একইসঙ্গে আদায় করতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সময় ও সুযোগ মত যা সহজ সেগুলো আদায় করা যেতে পারে।মোট কথা হল, এ সুন্নাতটি যেন আমরা কোনো কারণে ভুলে না যাই সে বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার। অনেককে নামায শেষে এমন কিছু আমল করতে দেখা যায় যেগুলো হাদীসে পাওয়া যায় না, সেগুলো বর্জন করা উচিত। যেমন, মাথায় হাত দিয়ে কিছু পাঠ করা বা কিছু পাঠ করে চোখে ফুঁক দেয়া ইত্যাদি।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সঠিক পথের হিদায়াত দান করুন!

                                                 -------------সমাপ্ত ----------


কোন মন্তব্য নেই:

Comment here />

Widget ByBlogger Maruf
Widget ByBlogger Maruf