আসুন বুঝে নিই-তাহলে হাদিসে বর্ণিত নিয়াতের আসল অর্থ কি?
বুখারির ১ম খন্ডে, ওয়াহীর সুচনা
অধ্যায়ে, ১ নং হাদিসে
উল্লেখ আছে-
"উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেন- প্রত্যেক কাজের ফলাফল তার
নিয়াতের উপর নির্ভরশীল।"
তাহলে হাদিসে যেহেতু নিয়াতের কথা বর্ণিত আছে তাহলে নামাজে মুখে নিয়া করা যাবে
না কেন?
তাহলে আসুন একটু বুঝে নিই এই নিয়াতের আসল ব্যাখ্যা কি?
সাহাবারা (রাঃ) কি নামাজের সময় নিয়াত করতেন?
রাসুল (সাঃ) কি নাওয়ায়তুন...... পড়তেন?
নিয়তের অর্থঃ নিয়ত আরবী শব্দ। এর বাংলা অর্থঃ ইচ্ছাকরা , মনস্ত করা , এরাদা করা , সংকল্প করা। (মুনজিদ , ৮৪৯। ফতহুল বারী , ১।১৭)
শব্দটি আমরা বাংলাভাষী লোকেরাও ব্যবহার করে থাকি। যেমন আমরা বলিঃ আমি এ বছর
হজ্জ করার নিয়ত করেছি। অর্থাৎ ইচ্ছা করেছি মনস্থ করেছি।
নিয়তের গুরুত্বঃ শরীয়তে নিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যক্তির আমল আল্লাহর নিকট
গ্রহণীয় হয়না যতক্ষণে বান্দা তার নিয়ত সঠিক না করে নেয়। অর্থাৎ , আল্লাহর জন্যে তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে না
করে নেয়। আল্লাহ বলেনঃ (তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে , তারা খাঁটি মনে একনিষ্ট ভাবে আল্লাহর এবাদত
করবে। (সূরা বাইয়্যিনাহঃ ৫)
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “আমল সমূহ নিয়তের (ইচ্ছার) উপর নির্ভরশীল , আর প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে যাসে নিয়ত
করবে। সুতরাং যে ব্যক্তি পার্থিব জীবনে সুখ-শান্তি লাভের উদ্দেশ্যে হিজরত করবে সে
তাই পাবে। কিংবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে হিজরত করবে সে তাই পাবে"।
(বুখারী , প্রথম হাদীস)
উক্ত হাদীসটিতে নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বক্তব্য স্পষ্ট
যে , মানুষ তার
নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পায়। দৃষ্টান্ত স্বরূপ হিজরত। হিজরত অর্থঃ ইসলামের
বিধি-বিধান পূর্ণ রূপে পালন করতে পারা যায়না এমন দেশ ছেড়ে সে দেশে যাওয়া যেখানে
বিনা অসুবিধায় পালন করা যায়। অন্য কথায় , কুফরের দেশত্যাগ করে ঈমানের দেশে
প্রত্যাবর্তন করা। [ফাতহুল বারী , ১।২১]
তাই কোন ব্যক্তি যদি এ কারণে দেশ ত্যাগ করে যে, সে যে দেশে যাচ্ছে সেখানে যাওয়ার তার
উদ্দেশ্যে হল কোন রমণীকে বিবাহ করা বা দুনিয়াবী কোনসুবিধা অর্জন করা , তাহলে সে তাই পাবে। হিজরতের ফলে কোন নেকী
পাবেনা। যদিসে ঈমান বাঁচানোর উদ্দেশ্যে হিজরত করতো , তাহলে নেকী পেত। কাজ একই কিন্তু নিয়তের
পরিবর্তনের কারণে নেকী পাওয়া এবং না পওয়া নির্ভর করছে।
আমি এখানে আরেকটি উদাহরন দিচ্ছি,
ধরুন, কোন ব্যক্তি
মসজিদে নামাজ পড়তে যাচ্ছে খুব সুন্দর একটি পাঞ্জাবী পরে, গায়ে আতর মেখে এই নিয়াতে যে- তার সুন্দর পাঞ্জাবী ও খুশবুদার আতর দ্বারা সে লোকজনের
দৃষ্টিতে পড়বে ফলে লোকজন তাকে নামাজী বলবে।
এই নিয়াতে নামাজ পড়লে সে একটি নেকিও পাবে না। বরং সে গোনাহগার হবে।
পক্ষান্তরে সে ব্যক্তি যদি মসজিদে নামাজ পড়তে যায় এই নিয়াতে যে- সে কেবল
একমাত্র আল্লাহ্কে সন্তুষ্টি করবে। লোকজনকে দেখানোর জন্য নয় তাহলে সে ঐ নামাজে
অবশ্যই আল্লাহ্র পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান পাবে ইনশাল্লাহ।
মহান আল্লাহ্ বলেনঃ “বল, নিশ্চয়ই আমার সলাত, আমার যাবতীয় 'ইবাদাত, আমার জীবন, আমার মরণ সব কিছুই বিশ্বজগতের প্রতিপালক
আল্লাহ্র জন্যই নিবেদিত।” (আল-আন'আমঃ ১৬২)
প্রকৃত নিয়ত আসলে কিঃ
ইবনুল কাইয়ুম (রাহেঃ) বলেনঃ “ নিয়ত হচ্ছে , কোন কিছু করার ইচ্ছা করা এবং সংকল্প করা।
উহার স্থান হচ্ছে অন্তর জবানের সাথে আসলে তার কোন সম্পর্ক নেই। এ কারণে না তো
নবীজী হতে আর না কোন সাহাবী হতে নিয়তের শব্দ বর্ণিত হয়েছে” । (ইগাসাতুল্ লাহ্ফান , ১।২১৪)
সত্য প্রিয় ভাই! হ্যাঁ, প্রকৃতপক্ষে নিয়তের স্থান হচ্ছে অন্তর, মুখে বলা বা পড়ার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।
উদাহরণ স্বরূপ , ধরুন
আপনারগ্রামে মসজিদ উন্নতি কল্পে জালসা হচ্ছে। আপনি জালসায় আগত আলেমদের আলোচনা
শোনার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হলেন। সাথে এক শত টাকাও নিলেন। সভা শেষে ১০০ টাকা
দান করে বাড়ি ফিরলেন। বলুন তো , আপনি যে এ নেকীর কাজটি করলেন এর জন্য কি আপনাকে মুখে আরবী বা বাংলায় এরূপ
বলতে হল কি যে- "হে আল্লাহ! আমাদের গ্রামে মসজিদের উন্নতি কল্পে আয়োজিত
জালসায়, আগত উলামাদের
আলোচনা শোনার উদ্দেশ্যে এবং এক শত টাকা দান করার উদ্দেশ্যে জালসা শুনতে উপস্থিত
হলাম বা হতে যাচ্ছি?
যদি কেউ এরূপ বলে তখন আপনিই তাকে "মাথা খারাপ" বলে মন্তব্য করবেন।
তাই আসুন মুখে নিয়াত উচ্চারণ না করে অন্তরে করি।
ঐভাবেই নামাজ পড়ি যেভাবে রাসুল (সাঃ) পড়েছেন, এবং আমাদের শিখিয়েছেন।
বিদআত পরিহার করুন সুন্নাহ মেনে চলুন।
"যখন সত্য এসে মিথ্যার সামনে দাড়ায় তখন মিথ্যা বিলুপ্ত হয়। মিথ্যা তার প্রকৃতগত
কারনেই বিলুপ্ত হয়। [সুরা বানী ইসরাইলঃ ৮১]
----------------------------------------------------------------------------------
'' শুধু নিজে শিক্ষিত হলে হবেনা, প্রথমে বিবেকটাকে শিক্ষিত করুন। ''
কোন মন্তব্য নেই:
/>