১) পবিত্র কোরআন খতমের বিনিময়ে হাদিয়া দেওয়া-নেওয়া যাবে ???
পূর্বেকার যুগে মুসলমানগণ সচেষ্ট থাকতেন যাবতীয় ইবাদত যেন যথাযথভাবে আদায় হয়। ইবাদতের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার ত্রুটি বা দুর্বলতা না থাকে।
যেকোনো ইবাদতে ব্যতিক্রমী কিছু মনে হলে তা ফকিহ, মুফতি ও মুহাদ্দিসগণ থেকে জেনে নিয়ে শুধরে নিতেন। এ যুগেও ওই বাস্তবতা ও চিন্তাধারা বিদ্যমান। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক প্রথা ইবাদতে প্রভাব বিস্তার করতে দেখা যায় বর্তমান সমাজে। এ দিকটি বড়ই আফসোসের এবং হতাশার। ইবাদত হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর হুকুম পরিপালনের উদ্দেশ্যে। এতে না কোনো দুনিয়াবি স্বার্থ জড়িত থাকবে, না সামাজিক কোনো প্রথা ইবাদতকে প্রভাবিত করবে। এর ব্যতিক্রম হলে ইবাদত অপরিপূর্ণ হয়, সাওয়াব কমে যায়, অনেক সময় একেবারেই সাওয়াব হয় না, অনেক ক্ষেত্রে ইবাদতটাও সহিহ হয় না।পূর্বেকার যুগে মুসলমানগণ সচেষ্ট থাকতেন যাবতীয় ইবাদত যেন যথাযথভাবে আদায় হয়। ইবাদতের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার ত্রুটি বা দুর্বলতা না থাকে।
পবিত্র রমজান মাসের বিশেষ আমলগুলো সিয়াম সাধনার পর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো তারাবির নামাজ। মুসলমানগণ তারাবির নামাজকে যথাযথভাবে আদায় করে তার পরিপূর্ণ ফজিলত অর্জনের জন্য সচেষ্ট থাকেন। অনেক সময় পরিপূর্ণ জ্ঞানের অভাব বা পরিবেশ পরিস্থিতি ও সামাজিকভাবে প্রচলিত প্রথার চাপের মুখে তারাবির মতো আমলে কিছু ত্রুটিবিচ্যুতির অনুপ্রবেশ ঘটে থাকে। যার কারণে তারাবির ফজিলত থেকে পুরোপুরিভাবে বঞ্চিত রয়ে যেতে হয় তাদের। যেমন- তারাবির নামাজ সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো পবিত্র কোরআনের খতম। কোরআন খতমের বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে একটি হলো যে হাফেজ পবিত্র কোরআন তারাবিতে খতম করবেন, তিনি এর বিনিময় চাইতে পারবেন কি না? হাফেজের কোনো দাবি ছাড়া মুসল্লিগণ তাঁকে বিনিময় প্রদান করতে পারবেন কি না? বিনিময় নয়, হাদিয়া বা উপহারণস্বরূপ কিছু লেনদেন করতে পারা যাবে কি না? ওই হাফেজ যদি কোরআন খতমের পাশাপাশি মসজিদে আজান দেন বা কয়েক ওয়াক্ত নামাজ পড়ান, তখন ওই হাফেজকে বিনিময় দেওয়া যাবে কি না ইত্যাদি।
বিষয়টি ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। যার কারণে শরিয়তের মূল চাওয়াকে পাশ কাটিয়ে বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে একে ব্যাখ্যা করে থাকেন। শেষ পর্যন্ত মুসল্লিগণ, যারা আন্তরিকভাবে হাফেজদের খেদমত করতে আগ্রহী, হাফেজ সাহেবদের কিছু আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে মূল্যায়ন করতে চান, রমজান ও তারাবির ফজিলত পরিপূর্ণভাবে পেতে আকাঙ্ক্ষী, তাঁরা স্বয়ং তারাবির নামাজের মতো মহৎ ইবাদতের ফজিলতটুকু অর্জনেও ব্যর্থ হন। এ কারণে তারাবির নামাজে কোরআন খতম করে বিনিময় নেওয়া ও দেওয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় বিধান জানা থাকা আবশ্যক।
তারাবির নামাজের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় শরিয়ার দিক থেকে লক্ষণীয়। প্রথমত, তারাবির নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা। দ্বিতীয়ত, তারাবির নামাজে পুরো এক খতম কোরআন পাঠ করা। শরিয়তের দৃষ্টিতে দুটি বিষয়ের বিধান ভিন্ন ভিন্ন।
তারাবির নামাজ জামাত সহকারে আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। কোথাও তারাবির জামাত অনুষ্ঠিত না হলে সবাই গোনাহগার হবে। তারাবির নামাজে পুরো এক খতম কোরআন পাঠ করা সুন্নাতে জায়েদা। যদিও এটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি আমল। তবুও বাধ্যতামূলক নয়। তাই খতমে তারাবি সম্ভব না হলে সুরা তারাবি হলেও পড়তে হবে।
ইবাদতের বিনিময়সংক্রান্ত শরিয়তের নীতিমালা : ইবাদতের বিনিময় গ্রহণসংক্রান্ত শরিয়তের নীতিমালা হলো নিরেট ইবাদত তথা ইবাদতে মকসুদা যেমন- নামাজ, রোজা, ইতিকাফ ইত্যাদির ক্ষেত্রে বিনিময় গ্রহণ করা সম্পূর্ণ হারাম। ইসলামের শুরু থেকে যত দিন ইসলামী খেলাফত অবশিষ্ট ছিল, তত দিন এই নীতি বহাল ছিল। ইমামগণ ইমামতি করে বিনিময় গ্রহণ করতেন না। কোরআন শিক্ষা দিয়ে বিনিময় নিতেন না। রাষ্ট্রীয়ভাবে এসবের ব্যবস্থা করা হতো। ইসলামী খেলাফত বিলুপ্তির পর রাষ্ট্রীয়ভাবে শরিয়তের বাধ্যতামূলক ইবাদতগুলোর ব্যবস্থাপনা না থাকায় পরবর্তী ফুকাহাগণ শরিয়তের প্রয়োজনে ইমাম, মুয়াজজিন, কোরআন শিক্ষার মুয়াল্লিমদের বিনিময় গ্রহণে ছাড় দেন। অর্থাৎ এগুলোর ক্ষেত্রে ডক্ট্রিন অব নেসেসিটির ভিত্তিতে বৈধতা প্রদান করেন।
এবার আসা যাক তারাবির বিষয়ে। শরিয়ত মতে, তারাবির নামাজ বাধ্যতামূলক হলেও তারাবিতে খতমে কোরআন বাধ্যতামূলক নয় বিধায় তারাবিতে খতমে কোরআনের বিনিময় এই বৈধতার আওতায় পড়ে না।
তারাবিতে কোরআন খতমের বিনিময়ে হাদিয়া দান ও গ্রহণের হুকুম : ওই নীতিমালার ভিত্তিতে খতম তারাবিতে হাফেজদের বিনিময় বা হাদিয়া দেওয়া-নেওয়া মুসলিম উম্মাহর ফকিহ, মুহাদ্দিসগণ ঐকমত্যের ভিত্তিতে নাজায়েজ বলেছেন। এতে না কোনো মাজহাবের মতবিরোধ আছে, না পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ফকিহগণের মাঝে কোনো মতভেদ আছে। ইমামতির জন্য বেতন ঠিক করা এবং তা আদায় করা যদিও পরবর্তী ফকিহগণের দৃষ্টিতে জায়েজ; কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো ফকিহ খতমে তারাবির বিনিময় বা হাদিয়া নেওয়া-দেওয়ার অনুমতি দেননি।
সুতরাং খতমে তারাবির বিনিময় দেওয়া-নেওয়া উভয়ই নাজায়েজ ও হারাম। হাদিয়া হিসেবে দিলেও জায়েজ হবে না। এক মাসের জন্য নিয়োগ দিয়ে কয়েক ওয়াক্ত নামাজ পড়িয়ে বেতন হিসেবে দিলেও জায়েজ নয়। এটা যেভাবেই দেওয়া হোক, তা কোরআন খতমের বিনিময় হিসেবেই স্বীকৃত হবে। এতে কোনো প্রকার হিলা বা কৌশল করার অবকাশ নেই। (ফতোয়ায়ে শামী ৬/৫৭, আল-বাহরুর রায়েক ৮/২৩, মাজমাউল আনহুর ৩/৫৩৩, ফতওয়ায়ে হামিদিয়া ২/১৩৭-১৩৮, শিফাউল আলীল ওয়া বাল্লুল গালিল ১/১৫৪-১৫৫, আল ইখতিয়ার লিতালীল মুখতার ২/৬২)
পবিত্র কোরআন-সুন্নাহর আলোকে ফকিহদের মতামত : এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর স্পষ্ট বিধানাবলি এবং এর ভিত্তিতে ফকিহগণ কী মত পোষণ করেন, তার প্রতিও সামান্য আলোকপাত করা হলো-
* আবদুর রহমান ইবনে শিবল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কোরআন পড়ো। তবে তাতে বাড়াবাড়ি করো না। এর প্রতি বিরূপ হয়ো না। কোরআনের বিনিময় ভক্ষণ করো না এবং এর দ্বারা সম্পদ কামনা করো না। (মুসনাদে আহমদ ৩/৪২৮, হাদিস : ১৫৫২৯; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৫/২৪০)
* ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কোরআন পড়ো এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করো। তোমাদের পরে এমন জাতি আসবে, যারা কোরআন পড়ে মানুষের কাছে প্রার্থনা করবে। -(মুসনাদে আহমদ ৪/৪৩৭, হাদিস : ১৯৯১৭)
* আবদুল্লাহ ইবনে মা'কাল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি এক রমজানে লোকদের নিয়ে তারাবি পড়ালেন। এরপর ঈদের দিন উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ (রা.) তাঁর কাছে একজোড়া কাপড় এবং ৫০০ দিরহাম পাঠালেন। তখন তিনি কাপড় জোড়া এবং দিরহামগুলো এই বলে ফেরত দিলেন, আমরা কোরআনের বিনিময় গ্রহণ করি না। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৫/২৩৭, হাদিস : ৭৮২১)
এরূপ আরো বহু হাদিস ও দলিল প্রমাণের আলোকে উম্মতের ফকিহগণ তারাবিতে পবিত্র কোরআন খতমের বিনিময়ে বা হাদিয়া দেওয়া-নেওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম বলেছেন।
প্রখ্যাত ফকিহদের মতামত : ১. হজরত রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী বলেন, তারাবিতে যে পবিত্র কোরআন পড়ে এবং শোনে তাদের বিনিময় দেওয়া হারাম। (ফতোয়ায়ে রশীদিয়া ৩৯২)
২. হজরত খলিল আহমদ সাহারানপুরী (রহ.) বলেন, বিনিময় দিয়ে পবিত্র কোরআন শোনা জায়েজ নয়। দানকারী এবং গ্রহণকারী উভয় গোনাহগার হবে। (ফতোয়ায়ে খলিলিয়া ১/৪৮)
৩. হজরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.) বলেন, বিনিময় লেনদেন হয় এমন খতম তারাবি শরিয়তপরিপন্থী। এরূপ খতমের দ্বারা সাওয়াবের ভাগী হওয়া যাবে না বরং গোনাহের কারণ হবে। (এমদাদুল ফতোয়া ১/৪৮)
৪. মুফতি কেফায়াতুল্লাহ (রহ.) বলেন, তারাবিতে পবিত্র কোরআন শোনানোর বিনিময় গ্রহণ করা জায়েজ নেই। (কেফায়াতুল মুফতি ৩/২৬৫)
৫. হজরত মুফতি আযীযুর রহমান (রহ.) বলেন, বিনিময় গ্রহণ করে কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করা জায়েজ নেই। যাদের নিয়তে দেওয়া-নেওয়া আছে, তাও বিনিময়ের হুকুমে হবে। এমতাবস্থায় শুধু তারাবি আদায় করাই ভালো। বিনিময়ের কোরআন শরিফ না শোনা উত্তম। কিয়ামুল লাইলের সাওয়াব শুধু তারাবি পড়লেই অর্জন হয়ে যাবে। (ফতোওয়া দারুল উলুম ৪/২৪৬)
৬. হজরত মাওলানা মুফতি শফী (রহ.) বলেন, ছোট ছোট সুরা দিয়ে তারাবি পড়ে নিন। বিনিময় দিয়ে কোরআন শুনবেন না। কারণ কোরআন শোনানোর মাধ্যমে বিনিময় গ্রহণ করা জায়েজ নেই। (জাওয়াহেরুল ফিকহ ১/৩৮২)
৭. তারাবিতে কোরআন পড়ার বিনিময় গ্রহণ করা জায়েজ নেই। দানকারী এবং গ্রহণকারী উভয়েই গোনাহগার হবে। যদি বিনিময়বিহীন কোরআন শোনানোর মতো হাফেজ পাওয়া না যায়, তবে ছোট ছোট সুরা দিয়ে তারাবি পড়ে নেওয়াই উত্তম। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া ৭/১৭১)
৮. খেদমতের নামে নগদ টাকা বা কাপড়চোপড় ইত্যাদি দেওয়াও বিনিময়ের মধ্যে শামিল। বরং তা বিনিময় ধার্য করা থেকেও জঘন্য। কারণ তাতে দুটি গোনাহ একত্রিত হয়। একটি কোরআনের বিনিময় গ্রহণের গোনাহ। দ্বিতীয়টি হলো, যে বিনিময় হচ্ছে তা না জানার গোনাহ। (আহসানুল ফতোওয়া ৩/৫১৪)
এ বিষয়ে বেরলভি সম্প্রদায়ের মতামত : বিশিষ্ট বেরলভি মুফতি আমজাদ আলী কাদেরী আজমী এক ফতোয়ায় লেখেন, বর্তমানে অধিক প্রচলন দেখা যায়, হাফেজ সাহেবকে বিনিময় দিয়ে তারাবি পড়া হয়। যা জায়েজ নেই। দানকারী ও গ্রহণকারী উভয়ই গোনাহগার হয়। এটুকু নেব বা এটুকু দেবে- এটিই শুধু বিনিময় নয়। বরং যদি জানা থাকে যে এখানে কিছু পাওয়া যায়, যদিও তা নির্দিষ্ট নয়, তা নাজায়েজ। কারণ জানা থাকাও শর্তকৃতের মতো। (বাহারে শরিয়ত ৪/৬৯২)
লা-মাজহাবি সম্প্রদায়ের ফতোয়া : লা-মাজহাবিদের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা আব্দুর রহমান মোবারকপুরী লেখেন, ইমাম আহদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-এর কাছে বিনিময় নিয়ে তারাবি নামাজে ইমামতকারী ইমামের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, সেরূপ ইমামের পেছনে কে বা কারা নামাজ আদায় করবে? আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক বলেন, আমি বিনিময় নিয়ে নামাজ পড়ানোকে মাকরূহ মনে করি এবং আমার ভয় হয়, ওই সব লোকের নামাজ আবার পড়তে হবে কি না, যারা এমন ইমামের পেছনে নামাজ আদায় করে। এরপর তিনি বলেন, আমার মত হলো, বিনিময় গ্রহণ করা যাবে না। (ফতোয়ায়ে নজিরিয়া ১/৬৪২)
* মাওলানা আব্দুল্লাহ আমরতসরী লেখেন, বিনিময়ের মাধ্যমে তারাবিতে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা বা বিনিময় নির্ধারণ করা সম্পূর্ণ হারাম। বরং এরূপ লোকের পেছনে তারাবিও হয় না। (ফতোয়ায়ে আহলে হাদিস ২/৩০২)
এ আলোচনার পর স্পষ্ট হয়ে গেল, খতম তারাবি পড়িয়ে কোনো প্রকার বিনিময়-হাদিয়া লেনদেনের কোনো অবকাশ দ্বীন ইসলামে নেই। এটি পুরো উম্মতের দল-মত নির্বিশেষে ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত। সুতরাং এ ব্যাপারে অপরিণামদর্শী ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন হীলা-বাহানার অবতারণা করে বিষয়টিকে জটিল করার কোনো সুযোগ আর বাকি থাকে না। আল্লাহ আমাদের সত্য বোঝা ও মানার তাওফিক দান করুন আমিন।
হাফেজদের প্রতি ভক্তি-ভালোবাসা ও তাদের খেদমত করার পদ্ধতি : তার পরও একটি বিষয় থেকে যায়, তাহলো মুসলমানগণের আবেগ, হাফেজদের মূল্যায়ন করা তাদের খেদমত করা, তা কিভাবে সম্ভব? মুসলমানদের এরূপ আবেগ, ভক্তি-ভালোবাসা থাকা স্বাভাবিক। কারণ পবিত্র কোরআনের হাফিজের অগণিত ফজিলত হাদিস শরিফে এসেছে। তাই হাফেজদের মূল্যায়ন করা, মুহাব্বত করা, তাদের যথাসম্ভব খেদমত করা সব মুসলমানের জন্য জরুরি বিষয়। শরিয়তে এরও পদ্ধতি ভিন্নভাবে আছে। রমজানসহ সারা বছর তাদের খিদমত করার সুযোগ আছে। যেমন ১. এ ক্ষেত্রে মুসলমানদের সর্বপ্রথম দ্বীনি দায়িত্ব হলো পবিত্র কোরআনের হাফিজকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসা ও ভক্তি করা। এই ভালোবাসা ও ভক্তি সব সময়ের জন্য, সারা বছরের জন্য। শুধু রমজানের জন্য সীমাবদ্ধ নয়। ২. পবিত্র কোরআন ও হাফেজে কোরআনের মুহাব্বত তখনই প্রকাশ পাবে, যদি অন্তরে নিজের সন্তানকে হাফেজে কোরআন বানানোর ইচ্ছা করা হয় এবং চেষ্টা করা হয়। ৩. রমজান মাসে যে হাফেজের পেছনে তারাবি পড়া হবে, তার খানাপিনার ক্ষেত্রে সর্বোন্নত ব্যবস্থা করা যায়। ৪. তাদের যাতায়াতের জন্য সবচেয়ে উন্নত গাড়ি ব্যবহার করা যায়। ৫. সারা বছর যারা পবিত্র কোরআন হিফজ করার কাজে নিয়োজিত, এরূপ ছাত্র-শিক্ষকদের যেকোনো খেদমত যেকোনো সময় আঞ্জাম দেওয়া যায়। নিজের সাধ্যমতো হাফেজদের খোঁজখবর রাখা, তাদের জরুরত পূরণ করা। তাদের খানাপিনার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
এভাবে হাফেজদের যথাযথ খিদমত আঞ্জাম দেওয়া ও আন্তরিক ভালোবাসা দিয়ে তাদের অভিভাবকত্ব করার ফজিলত অপরিসীম। আল্লাহ আমাদের বৈধ পদ্ধতিতে হাফেজদের যথাযথ মূল্যায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
২) মৃত্য ব্যক্তির নামে কোরআন খতম কিংবা চল্লিশা করা যাবে কি?
আমাদের সমাজে একটা রীতি প্রচলিত রয়েছে সেটা হলো- কোন ব্যক্তি যদি মারা যায়, তাহরের মারা যাওয়ার সাত দিনের পর অথবা মারা যাওয়ার পর প্রথম শুক্রবার আল কোরআনের হাফেজদের ডেকে কোরআন খতম করানো। এছাড়া মৃত্যুর চল্লিশ দিনের মাথায় বিশাল মজলিশের মাধ্যমে মেজবানের আয়োজন করা হয়। ইসলামে মূলত এগুলো জায়েজ আছে কিনা জানতে হলে নিচের বর্ণনাটি পড়ুন। মেজবান বলতে বোঝায় মানুষকে খাওয়ানো। লোকদের খাওয়ানো একটি ভালো কাজ। বুখারি শরিফের মধ্যে রাসুল (সা.) বলেছেন, এটি একটি আফতারুল ইসলাম, ইসলামের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ কাজ। সুতরাং আপনি লোকদের খাওয়াইতে পারেন; কিন্তু সেখানে আনুষ্ঠানিকতা চার দিনে, ১০ দিনে, চল্লিশা ইত্যাদি করেন তাহলে আপনি সুন্নাহ পরিপন্থী কাজ করলেন। সে ক্ষেত্রে সওয়াব তো দূরের কথা, বেদাত হওয়ার কারণে আপনি বড় ধরনের কবিরা গুনাহর মধ্যে লিপ্ত হয়ে গেলেন। সুতরাং এ ধরনের কাজ করবেন না, তাহলে আমলও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একাধিক হাদিস দ্বারা এই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তাই মেজবান বা চল্লিশা এ জাতীয় নাম না দিয়ে আপনি যেকোনো দিন আপনার সুবিধামতো আত্মীয়স্বজন বা গরিবদের খাওয়াতে পারেন, মৃত ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করতে পারেন।
----------------------------------------------------------------------------------২) মৃত্য ব্যক্তির নামে কোরআন খতম কিংবা চল্লিশা করা যাবে কি?
আমাদের সমাজে একটা রীতি প্রচলিত রয়েছে সেটা হলো- কোন ব্যক্তি যদি মারা যায়, তাহরের মারা যাওয়ার সাত দিনের পর অথবা মারা যাওয়ার পর প্রথম শুক্রবার আল কোরআনের হাফেজদের ডেকে কোরআন খতম করানো। এছাড়া মৃত্যুর চল্লিশ দিনের মাথায় বিশাল মজলিশের মাধ্যমে মেজবানের আয়োজন করা হয়। ইসলামে মূলত এগুলো জায়েজ আছে কিনা জানতে হলে নিচের বর্ণনাটি পড়ুন। মেজবান বলতে বোঝায় মানুষকে খাওয়ানো। লোকদের খাওয়ানো একটি ভালো কাজ। বুখারি শরিফের মধ্যে রাসুল (সা.) বলেছেন, এটি একটি আফতারুল ইসলাম, ইসলামের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ কাজ। সুতরাং আপনি লোকদের খাওয়াইতে পারেন; কিন্তু সেখানে আনুষ্ঠানিকতা চার দিনে, ১০ দিনে, চল্লিশা ইত্যাদি করেন তাহলে আপনি সুন্নাহ পরিপন্থী কাজ করলেন। সে ক্ষেত্রে সওয়াব তো দূরের কথা, বেদাত হওয়ার কারণে আপনি বড় ধরনের কবিরা গুনাহর মধ্যে লিপ্ত হয়ে গেলেন। সুতরাং এ ধরনের কাজ করবেন না, তাহলে আমলও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একাধিক হাদিস দ্বারা এই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তাই মেজবান বা চল্লিশা এ জাতীয় নাম না দিয়ে আপনি যেকোনো দিন আপনার সুবিধামতো আত্মীয়স্বজন বা গরিবদের খাওয়াতে পারেন, মৃত ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করতে পারেন।
এরপর কোরআন খতম আপনি নিজে করবেন। কোরআন খতম করে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করবেন। মৃত ব্যক্তির জন্য কোরআন খতম করার বিষয়টি রাসুলুল্লাহ (সা.) অথবা সাহাবিদের আমল দ্বারা সাব্যস্ত হয়নি। এটাও আমরা নিজেরাই আবিষ্কার করে নিয়েছি।
মৃত ব্যক্তির জন্য কোরআন খতম না করে কোরআন খতম আমরা নিজেরাই করব, তারপর আমরা লোকদের মেজবান খাওয়াব। আমরা মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে দান-খয়রাত করব, ছদকায়ে জারিয়া করব। আর বেশি বেশি করে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করব। এটা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
'' শুধু নিজে শিক্ষিত হলে হবেনা, প্রথমে বিবেকটাকে শিক্ষিত করুন। ''
কোন মন্তব্য নেই:
/>