মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই, ২০১৭

অসীলা ও মাজার জিয়ারত !!!

অসীলা ও মাজার জিয়ারত !!! 

রওজা শরীফ, মাজার শরীফ ও মুসলমানদের কবর জিয়ারত এবং নবী-ওলীগণের কাছে সাহায্য চাওয়া
রওজা শরীফ, মাজার শরীফ ও মুসলমানদের কবর জিয়ারত করা সুন্নত। আর সুন্নতকে মাজার-পূজা, কবর-পূজা, শিরক ইত্যাদি বলে অবমাননা করাটা চরম অজ্ঞতা, গোমরাহী, বিদয়াতে সায়্যিয়াহ্ বা কুফর। তাছাড়া, নবী-ওলীগণ মৃত্যুর স্বাদ নিয়েও জীবিত। তাই, তাঁদের কাছে সাহায্য চাওয়া জায়েজ।
সাধারণত মহামান্য নবীগণের (’আলাইহিমুস সলাতু ওয়াস সালাম) সমাধিকে “রওজা শরীফ”, সম্মানিত ওলীআল্লাহগণের (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহুম) সমাধিকে “মাজার শরীফ” এবং সাধারণ মুসলমানের সমাধিকে আরবিতে “কবর” (قبر) বলা হয়। ফার্সী “রওজা” শব্দটি আরবি “রাওদ্বাহ” (روضة) থেকে এসেছে – যার অর্থ বাগান, তৃণভূমি, উদ্যান ইত্যাদি। আর আরবি “মাজার” (مزار) শব্দটির অর্থ জিয়ারত বা পরিদর্শনের জায়গা। এসব জিয়ারত করা সুন্নত ও নেক-আমল তথা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। এতে করে, তাঁদের সঙ্গে দুনিয়াবাসী মুসলমানদের আত্মিক ও সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সুন্নতে বাধা দেওয়া বিদয়াত, একে কবর-পূজা বা মাজার-পূজা বলে এনকার (অবজ্ঞা) করা কুফর এবং এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা চরম অজ্ঞতা, গোমরাহী ও বাতিলপন্থীদের কারসাজি ও বৈশিষ্ট্য। তেমনি, এসব জিয়ারতের নামে কোনো বেশরা কাজ বা আচরণও কোনোভাবেই সমর্থিত নয়, বরং নিন্দিত ও ধিকৃত। কেননা, এর ফলে, এ সুন্নত বা নেক-আমলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে ফেতনার সৃষ্টি হয় এবং বাতিলপন্থীরা মওকা পেয়ে যায়।
যাহোক, নবী ও ওলীগণ মৃত্যুর স্বাদ নিয়েও জীবিত থাকেন এবং আল্লাহুতা’লা তাঁদেরকে দুনিয়াবাসীদের সাহায্য-সহযোগিতা করার ক্ষমতা দান করেন। তাই, তাঁদের কাছে সরাসরি বা দূর থেকে কিংবা তাঁদের রওজা বা মাজার শরীফে গিয়ে অথবা তাঁদের উসীলায় সাহায্য-সহযোগিতা চাওয়া নিঃসন্দেহে জায়েজ।
একটি জড় পদার্থ তথা কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ (স্যাটেলাইট) যদি মহাকাশ থেকে একই সময়ে বিশ্বের প্রায় সকল দেশে কোনো কিছু সম্প্রচার করতে পারে তথা মানব জাতিকে সাহায্য করতে পারে কিংবা বিশ্বের পরাশক্তিগুলো যদি তাদের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহগুলোর কল্যাণে সুদূর মহাকাশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গোয়েন্দাগিরি বা নজরদারি কিংবা মনিটরিং করতে পারে – তাহলে, নবী-ওলীগণ যাঁর যাঁর রওজা ও মাজার শরীফে থেকে কিংবা সেখানে থেকে অতীন্দ্রিয় পন্থায় বের হয়ে মুসলিম উম্মাহর হাল-হাকীকত পর্যবেক্ষণ, তাদের আবেদন শ্রবণ ও গ্রহণ এবং তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে পাবেন না কেন? তাঁদের চেয়ে কি ঐ কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহগুলো তথা জড় পদার্থগুলোর ক্ষমতা বেশি (মায়াজাল্লা)? তাছাড়া, ঐ জড় পদার্থের ঐ ব্যাপক ও বাস্তব ক্ষমতাকে (world wide broadcasting power or networking power) স্বীকার করলে যদি শিরক না হয় – তাহলে, নবী-ওলীগণের অতীন্দ্রিয় বা আধ্যাত্মিক ব্যাপক ক্ষমতাকে স্বীকার করলে শিরক হবে কেন? মোদ্দা কথা হচ্ছে, ওয়াহাবী, সালাফী, দেওবন্দী ও লা মাযহাবীরা নবী-ওলীগণের চেয়েও জড়পদার্থকে বেশি ক্ষমতাশালী মনে করে। তাই, ওরা নিঃসন্দেহে গোস্তাগে রাসূল বা বেয়াদবে আওলিয়া। আর নিষ্ঠাবান সুন্নীগণ জড়পদার্থ তথা কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহের চেয়ে নবী-ওলীগণকে বহুগুণ বেশি শক্তিশালী মনে করেন। তাই, তাঁরা আশেকে রাসূল ও আশেকে আওলিয়া। বলা বাহুল্য, জীব ও জড়ের সকল ক্ষমতা আল্লাহুতা’লারই দান।
প্রথমে আম্বিয়ায়ে কেরামের (’আলাইহিমুস সালাম) ক্ষমতার প্রসঙ্গে আসি। মহান আল্লাহপাক ফরমান: আর আমি আপনার আগে যাদের রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছি – তাদের জিজ্ঞেস করুন যে, আমি কি রহমান ছাড়া ইবাদত করা যায় – এমন আর কোনো ইলাহ সাব্যস্ত করেছি? (ঝুখরুফ:৪৫)।
লক্ষ্য করুন, নবীজীর (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগেতো প্রায় সকল রাসূলই (’আলাইহিমুস সলাতু ওয়াস সালাম) ইন্তেকাল করেছেন; অথচ তারপরেও আল্লাহুতা’লা তাঁকে বলছেন: “আপনি তাঁদের (সরাসরি) জিজ্ঞেস করুন!” এতে স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয় যে, নবী-রাসূলগণ মৃত্যুর স্বাদ নিয়েও শুধু জীবিতই নন, বরং তাঁরা বারঝাখী (কবরের) জীবনেও দুনিয়ার কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িতও থাকেন। নইলে, কেন তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করতে তথা তাঁদের সাহায্য নিতে বলা হলো। তাছাড়া, তাঁরাও নবীজীকে নানাভাবে (সরাসরি বা তাঁর উম্মতকে সাহায্য করার মাধ্যমে তাঁকে) সাহায্য করতে প্রতিশ্রুতিবন্ধ। যেমন- আল্লাহুতা’লা ফরমান: আর স্মরণ করুন, যখন আল্লাহ এ মর্মে নবীদের থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন: “আমি তোমাদের কিতাব ও হেকমত (প্রজ্ঞা) দেবো; তারপর তোমাদের কাছে তোমাদের ওগুলোর সত্যায়নকারী একজন রাসূল তাশরীফ আনলে, তোমরা তাঁর প্রতি ঈমান আনবে এবং তাঁকে সাহায্য করবে।” তিনি (আল্লাহ) বললেন: “তোমরা মানলেতো এবং ঐ ব্যাপারে আমার (দেওয়া) গুরু দায়িত্ব নিলেতো, নাকি?” তারা বলেছিলো: আমরা মেনে নিলাম।” তিনি (আল্লাহ) বললেন: যাক! তাহলে, তোমরা সাক্ষী থাকো এবং আমিও তোমাদের সঙ্গে অন্যতম সাক্ষী থাকলাম।” (৩:৮১)
কেউ কেউ বলেন যে, ঐ আয়াতে কারীমায় (৪৩:৪৫) পবিত্র মীরাজের রাতে জিজ্ঞেস করতে বলা হয়েছে। কিন্তু, এটা অন্যতম অভিমত, একমাত্র বা সর্বসম্মত কিংবা চূড়ান্ত অভিমত নয়, বরং এর তাফসীর ও শানে নুজুলে এখতেলাফ রয়েছে। তাফসীরে ইবনে আব্বাসেও এ ব্যাপারে ৩টি অভিমত রয়েছে – যার অন্যতমটি হচ্ছে, “ওদের জিজ্ঞেস করুন যে, আমি কি দয়াময় আল্লাহ্ ছাড়া এমন কোনো ইলাহ সাব্যস্ত করেছি – যার ইবাদত করা যেতে পারে?” সুতরাং এ অভিমত অনুসারে, এখানে সরাসরিই জিজ্ঞেস করতে বলা হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, যেসব আয়াতে কারীমার তাফসীর ও শানে নুজুলের ব্যাপারে সুন্নী মুফাসসিরগণ একাধিক অভিমত দিয়েছেন – সেখানে নির্দ্বিধায় তাহকীকের (গবেষণার) সুযোগ রয়েছে। তাই, সেসব ক্ষেত্রে একটিমাত্র অভিমত গ্রহণ করে বা চাপিয়ে দিয়ে বাকিগুলোকে শিরক বা কুফর বলাটা অবশ্যই অজ্ঞতা। আর তাই, এ আয়াতে কারীমার অন্যতম তাফসীর হচ্ছে, নবীজীকে সরাসরিই আগেকার রাসূলগণকে জিজ্ঞেস করতে বলা হয়েছে। যদি এটা কুফর বা শিরক হতো – তাহলে, সুন্নী মুফাসসিরীনে কেরাম, বিশেষ করে, রইসুল মুফাসসিরীন ইবনে আব্বাস (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) কখনোই এ অভিমতটি দিতেন না। তাছাড়া, “পবিত্র মীরাজের রাতে আম্বিয়ায়ে কেরাম যেমন সক্রিয় ছিলেন – তেমন আর কখনো হবেন না” – এ কথা কে বলেছে? বরং আল্লাহুতা’লা যখনি ইচ্ছে করেন – তখনি তিনি তাঁর নবীগণকে সক্রিয় করে থাকেন বৈকি। এটাই আমাদের আকীদা এবং তাঁদের রওজা শরীফগুলো জিয়ারতের মূল হাকীকত বা চেতনা।
দেখুন, মুত্যুর স্বাদ নিয়েও হযরত মূসা (’আলাইহিস সালাম) পবিত্র মীরাজের রাতে ৫০ ওয়াক্ত নামাজকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ করার পেছনে উম্মতে মুহাম্মাদীর পক্ষে সক্রিয়ভাবে ওয়ালতি করে তথা মুখ্য ভূমিকা পালন করে প্রমাণ করেছেন যে, আম্বিয়ায়ে কেরাম (’আলাইহিমুস সালাম) মৃত্যুর স্বাদ নিয়েও শুধু জীবিতই নন, বরং তাঁরা দুনিয়ার মানুষের অফুরন্ত উপকার করতে পারেন! এমনকি আল্লাহুতা’লা তাঁদেরকে ইসলামী শরীয়তের মৌলিক বিষয়ে (নামাজে) হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা পর্যন্ত দান করেছেন, তাই না?
যারা বলেন: “ওটা মূসা নবীর বিশেষ মু’জিজা ছিলো” – তাদের উদ্দেশে বলছি, কোনো নবীর রওজা শরীফ জিয়ারত করার সময়েও আমরা এ নিয়ত করি বা আকীদা রাখি যে, তিনি তাঁর ঐ বিশেষ মু’জিজা দিয়েই আমায়/আমাদের সাহায্য করবেন। সর্বোপরি, নবীজী যদি দুনিয়ার হায়াতে থেকেই ওফাতপ্রাপ্ত রাসূলগণকে সরাসরি কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারেন – তাহলে, আমরা তাঁদের রওজা শরীফগুলো জিয়ারতের সময়ে, এমনকি ঘরে বসেও তাঁদের খেদমতে সরাসরি সাহায্য চাইতে পারবো না কেন? কাজেই, কোনো রওজা শরীফে গিয়ে বা সরাসরি নবীগণের কাছে সাহায্য চাওয়াকে যারা শিরক বলে – তারা আসলে শিরকের সংজ্ঞা বা মর্মই জানে না, বরং তারাই কুফরী, গোমরাহী ও অজ্ঞতায় সাংঘাতিকভাবে নিমজ্জিত এবং এ নিয়ে ফেতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টির মূল হোতা! মহান আল্লাহপাক ও মহানবীজী কোথাও বলেন নি যে, নবীগণ ওফাতের পরে সাহায্য করতে পারেন না, বরং এটা ওয়াহাবী ও সালাফীদের মিথ্যাচার! আমাদের আকীদা হচ্ছে, প্রত্যেক নবীই হায়াতুন্নবী এবং আল্লাহুতা’লা তাঁদের এমন ক্ষমতা দিয়েছেন যে, তাঁরা মৃত্যুর স্বাদ নিয়েও জীবিত এবং দুনিয়ার কর্মকান্ডে অনায়াসে হস্তক্ষেপ করতে পারেন; যেমন- উম্মতে মুহাম্মাদীকে হর-হামেশা সাহায্য করার মাধ্যমে তাঁরা নবীজীকে প্রতিশ্রুতি (৩:৮১) মোতাবেক সহায়তা করে থাকেন।
এবার আওলিয়ায়ে কেরামের (কুদ্দিসা আসরারুহুমুল আজীজ) ক্ষমতার প্রসঙ্গে আসি। আল্লাহুতা’লা ফরমান: “আল্লাহর পথে যারা জীবন দেয় – তাদের মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত। কিন্তু তোমরা তা বুঝতে পারো না!” (২:১৫৪) এবং “আল্লাহর পথে যারা জীবন দান করে – তাদের মৃত ভেবো না, বরং তারা তাদের পালনকর্তার কাছে জীবিত হিসেবে গণ্য এবং জীবিকা পেয়ে থাকে!” (৩:১৬৯)। তাই, শহীদদের মৃত ভাবাটা আল্লাহুতা’লার স্পষ্ট নাফরমানি। আর আমাদের আকীদা হচ্ছে, ওলীগণের মর্যাদা, নবী নন – এমন শহীদগণের উপরে। কেননা,
প্রথমত, বান্দার হক (হক্কুল ইবাদ) আদায় না করে কেউ শহীদ হলে – কবরে তাকে পাকরাও করার কথা হাদীছ শরীফে রয়েছে। যেমন- “ঋণ ছাড়া শহীদগণের বাকি গুণাহ মাফ করে দেয়া হবে” (মিশকাত শরীফ: ৩৬৩১ ও ৩৬৩২ ও মুসলিম শরীফ)। অন্যদিকে, বান্দার হক আদায় না করে বা বান্দাকে কষ্ট দিয়ে কেউ কামেল ওলী হতে পারেন না। আল্লাহুতা’লা ফরমান: পক্ষান্তরে, আবরারের খাতাতো (আমলনামা) ইল্লিয়ীনে রয়েছে! আর আপনি কি জানেন যে, ইল্লিয়ীন কী? ওটা সুলিখিত খাতা। নৈকট্যপ্রাপ্তরা এটা পরিদর্শন করে। আবরারতো পরম আরামে থাকবে! (তারা) সিংহাসনে বসে (সবকিছু) দেখবে। আপনি তাদের চেহারায় স্বস্তির আভা দেখতে পাবেন। তাদের অক্ষত (ইনট্যাক্ট) পানীয় খাওয়ানো হবে। এর মহর (ছিপি) হচ্ছে, মেশক (কস্তুরী বা মৃগনাভী)! কাজেই, এতে আগ্রহীদের প্রতিযোগিতা করা উচিত। আর ঐ মিশ্রিত পানীয় তাসনীম (একটি জান্নাতী ঝরণা) থেকে উৎপন্ন। (আল্লাহুতা’লার) নৈকট্যপ্রাপ্তরা ঐ ঝরণা থেকে খাবে! (৮৩:১৮-২৮)
ইল্লিয়ীন কী? ইল্লিয়ীন হচ্ছে, চিহ্নিত আমলনামা, অর্থাৎ নেককারদের আমলনামা – যা আরশের নিচে ও সপ্তম আকাশের উপরে সবুজ রঙের জবরজদ পাথরের ফলকে লিখিত। (তাফসীরে ইবনে আব্বাস) এ সম্পর্কে আরো মতামত রয়েছে; যেমন- ইল্লিয়ীন হচ্ছে, সপ্তম আকাশের যেখানে ঈমানদারদের আত্মা থাকবে, সর্বোচ্চ আকাশ, সপ্তম আকাশ, আরশের ডান দিকের জায়গা বা পায়া, আরশের কাছাকাছি – যেখানে ঈমানদারদের আত্মাগুলো (বেহেশতে যাওয়ার) অপেক্ষ করবে – যা কিয়ামতের কঠিন আযাব থেকে নাজাতের সূচনা, বেহেশত, সিদরাতুল মুন্তাহার কাছাকাছি জায়গা ও আকাশে আল্লাহুতা’লার কাছাকাছি জায়গা (তাফসীরে তাবারী)।
আবরার কারা? আবরার হচ্ছেন, এমন খাঁটি ঈমানদার ও সত্যবাদী – যাঁরা কখনো পিঁপড়ার মতো ক্ষুদ্র জীবকেও কষ্ট দেন নি! (তাফসীরে ইবনে আব্বাস) কিংবা আবরার হচ্ছেন, সেসব নেককার ব্যক্তি – যাঁরা কখনো কাউকে কোনো কষ্ট দেন নি। তাঁরাই ইল্লিয়ীনবাসী! (তাফসীরে তাবারী)
আসলে, আবরার বলতে উঁচু স্তরের বা কামেল ওলীদেরই বোঝানো হয়েছে – যারা কাউকে কখনো কোনো কষ্ট দেন নি তথা বান্দার হক পুরোপুরিই আদায় করেছেন এবং নিঃসন্দেহে তাঁরা শহীদগণের চেয়েও উঁচু মর্তবার অধিকারী। কেননা, শহীদদের হক্কুল ইবাদ অনাদায় থাকতে পারে; যেমন- ঋণ। কাজেই, আল-কুরআন মোতাবেক, শহীদগণ মৃত্যুর স্বাদ নিয়েও জীবিত থাকতে পারলে, তাঁদের চেয়েও উঁচু স্তরের যাঁরা, অর্থাৎ আবরার তথা কামেল ওলীগণ মৃত্যুর স্বাদ নিয়ে জীবিত থাকতে পারবেন না কেন? তাই, মোল্লা আলী আল-ক্বারী (’আলাইহির রাহমাহ) লিখেছেন: “লা ইয়ামূতু আওলিয়াউ” (ওলীগণ মরেণ না – শারহে শেফা), অর্থাৎ তাঁরা মৃত্যুর স্বাদ নিয়েও অমর।
দ্বিতীয়ত, আওলিয়া কারা? এর উত্তরে নবীজী (’আলাইহিস সলাতু ওয়াস সালাম) ফরমান: যাদের দেখলে আল্লাহুতা’লার কথা মনে হয় – তারাই হচ্ছে, আওলিয়া। রোজ কিয়ামতে তাদের চেহারা নূরান্বিত হবে, তাঁরা নূরের ভেতরে থাকবে, আল্লাহুতা’লা নূরের আসনে তাদের বসতে দেবেন এবং তাঁর কাছে তাদের উঁচু মর্তবা দেখে নবী ও শহীদরাও ঈর্ষা করবেন। সকল মানুষ যখন ভীত ও চিন্তিত থাকবে – তারা তখন ভীত ও চিন্তিত হবে না। এরপরে তিনি তিলাওয়াৎ করলেন: “শুনে রাখো! আল্লাহর ওলীদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না – ১০:৬২। (মেশকাত, আবূ দাউদ, বাগাবী, তাফসীরে তাবারী ও মাযহারী; নানা সূত্রে কম-বেশি করে বর্ণিত)
তৃতীয়ত, আল্লাহুতালা ফরমান: “কেউ আমার কোন ওলীর সঙ্গে শত্রুতা করলে – আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি!…” (মেশকাত:২১৫৭ ও বুখারী:৬০৫৮) কিন্তু তিনি শহীদদের পক্ষে এমন কোন কথা বলেন নি!
চতুর্থত, ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র ইবনুল কাইয়্যিম আল-জাওঝিয়া তার “রূহ” কিতাবের “জীবিত ও মৃত ব্যক্তিদের রূহ একে-অপরের সঙ্গে দেখা হয় কী না?” অধ্যায়ে লিখেছেন: “একজন জীবিত ও মৃত ব্যক্তির রূহ যে একে অপরের সঙ্গে দেখা করে – এর বহু প্রমাণ রয়েছে। অনুভূতি ও সত্য ঘটনাগুলোর মাধ্যমে তা জানা যায়। জীবিত ও মৃত ব্যক্তির রূহ এমনভাবে মিলিত হয় – যেভাবে জীবিতরা একে অপরের সঙ্গে মিলিত হন। … জীবিত ও মৃতদের রূহের মিলিত হওয়ার এটাও একটি প্রমাণ যে, জীবিত বুজুর্গগণ স্বপ্নে মৃতদের দেখা পান এবং তাঁদের কাছ থেকে তাঁদের হাল-হাকীকত জেনে নেন। আর মৃতরা এমন অজানা তথ্যও জানিয়ে দেন – যেগুলোর মাঝে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীও রয়েছে। কোনো কোনো সময়ে মৃত ব্যক্তি মাটিতে পুঁতে রাখা ধন-সম্পদের খবরও দিয়ে থাকেন – যে সম্পর্কে তিনি ছাড়া আর কেউ জানতেন না! কখনো তাঁরা অন্যের ঋণের কথাও, এমনকি ঐ ঋণের সাক্ষ্য প্রমাণের তথ্যও জানিয়ে দেন!! এছাড়া, কখনো দুনিয়ার কর্মকান্ড সম্পর্কেও খবরাখবর দিয়ে থাকেন – যা তিনি ছাড়া দুনিয়ার আর কেউ জানেন না!!! মৃত ব্যক্তি কখনো বলে থাকেন: “তুমি অমুক সময়ে আমার কাছে আসবে।” এ খবরও সঠিক হয়ে যায়। কখনো তিনি এমনসব তথ্যও বলে দেন – যেসবে জীবিতদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো যে, তারা ছাড়া বুঝি আর কেউ তা জানতো না। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত হযরত সা’য়াব, আউফ, সাবিত ইবনে কায়েস, সদাকা ইবনে সুলায়মান জাফরী, শুবাইব ইবনে শাইবাহ ও ফযল ইবনে মুয়াফফিকের (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহুম) ঘটনাবলী উল্লেখযোগ্য” (এরপরে, ইবনে কাইয়্যিম এসব সাহাবী বা নেককারের ঘটনা একে একে বয়ান করেছেন)। এখন ওয়াহাবী ও সালাফীদের কাছে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ইবনুল কায়্যিম মুশরিক কী না? নাকি, উনি আপনাদের জ্ঞাতিভাই দেখে খাতির করবেন?
হযরত বুরাইদা (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফরমান: “আমি তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন থেকে জিয়ারত করো … (মুসলিম শরীফ ও মিশকাত:১৬৬৮)। হযরত ইবনে মাস’ঊদ (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফরমান: “আমি তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন জিয়ারত করো। কেননা, এটা হচ্ছে, দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি ও আখেরাতের স্মরণ (ইবনে মাজা ও মিশকাত:১৬৭৫)। লক্ষ্য করুন, “দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি ও আখেরাতের স্মরণ” হচ্ছে, তাক্বওয়া বা পরহেজগারীর প্রধানতম বৈশিষ্ট্য। সুতরাং মুসলমানদের কবর, মাজার শরীফ ও রওজা শরীফ জিয়ারত করাটার নিঃসন্দেহে মুক্তাকী বা পরহেজগারীদের বৈশিষ্ট্য, তাই না?
তাবেয়ী হযরত মোহাম্মদ বিন নু’মান (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) থেকে বর্ণিত, নবীজী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফরমান: “প্রতি শুক্রবার কেউ তার মা-বাবা বা তাঁদের কারো কবর জিয়ারত করলে – তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং (মা-বাবার সঙ্গে) সদাচারী হিসেবে গণ্য হবে” (শুয়াবুল ঈমান ও মিশকাত:১৬৭৪)। সুতরাং স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, সাধারণ মুসলমানদের কবর জিয়ারত করা সন্দেহাতীতভাবে পরহেজগারী, মাগফিরাতের অন্যতম উপায় এবং মা-বাবার অনুগত সন্তান হওয়ার অন্যতম উপায়।
খতীব বাগদাদী (’আলাইহির রাহমাহ) লিখেছেন, ইমাম শাফেয়ী (’আলাইহির রাহমাহ) বাগদাদে থাকতে ইমামে আযম আবূ হানীফার কবর জিয়ারত করতেন এবং তাঁকে উসীলা করে দোয়া করতেন। তিনি ইমাম আবূ হানীফার মাজার শরীফের বরকত সম্পর্কে নিজের পরীক্ষিত আমল বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন: “আমি ইমাম আবূ হানীফার উসীলায় বরকত লাভ করি এবং প্রতিদিন তাঁর কবর জিয়ারত করি। যখন আমার কোনো প্রয়োজন বা সমস্যা হয় – তখন আমি দু’রাকাত নামায আদায় করে তাঁর কবরের কাছে এসে, এর পাশে দাঁড়িয়ে হাজত (প্রয়োজন) পূরণের জন্যে আল্লাহুতা’লার কাছে দোয়া করি। এরপরে আমি সেখান থেকে ফিরতে না ফিরতেই আমার হাজত পূরণ হয়ে যায়!” (সূত্র: তারিখে বাগদাদ, ১ম খন্ড, ১২৩ পৃষ্ঠা)
হযরত ইবনে হাজার হায়তামী (’আলাইহির রাহমাহ) লিখেছেন, ইমাম শাফেয়ী (’আলাইহির রাহমাহ) বলতেন: “নবীজীর (’আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) পরিবার-পরিজন আমার উসীলা। আমি আশা করি, তাঁদের উসীলায় রোজ কিয়ামতে আমার আমলনামা আমার ডান হাতে দেওয়া হবে।” (সূত্র: আস-সাওয়ায়িকুল মুহরিকা, ১৮০ পৃষ্ঠা)
শায়খ আব্দুল হক দেহেলভী (’আলাইহির রাহমাহ) লিখেছেন, ইমাম শাফেয়ী (’আলাইহির রাহমাহ) বলেছেন: “ইমাম মূসা কাযিমের (’আলাইহির রাহমাহ) কবর শরীফ হচ্ছে, দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে পরশ পাথরের মতোই পরীক্ষিত!” (আশিয়াতুল লুমআত, ২য় খন্ড, ৯২৩ পৃষ্ঠা)।
আল্লামা ইউসূফ নাবহানী (’আলাইহির রাহমাহ) লিখেছেন, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (’আলাইহির রাহমাহ) আল্লাহুতা’লার কাছে দোয়া করার সময়ে ইমাম শাফেয়ীকে (’আলাইহির রাহমাহ) উসীলা বানাতেন। এতে একদিন তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ অবাক হয়ে যান! তখন ইমাম সাহেব বললেন: “ইমাম শাফেয়ী (’আলাইহির রাহমাহ) মানুষের জন্যে সূর্য এবং শরীরের জন্যে শেফার মতোই!!” (সূত্র: শাওয়াহিদুল হক ফীল ইস্তিগাছাতি বিসায়্যিদিল খালক, ১৬৬ পৃষ্ঠা)
হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাঝালী (’আলাইহির রাহমাহ) লিখেছেন: “আল্লাহুর ইবাদতের জন্যে দ্বিতীয় প্রকার সফর করা হয়। যেমন- হজ্জ্ব ও জিহাদের জন্যে সফর ইত্যাদি। এসব বিষয়ের ফাযাইল ও নিয়ম-কানুন আগে বর্ণনা করেছি। এতে (আরো) রয়েছে, নবীগণের (’আলাইহিমুস সালাম) কবর জিয়ারত করা। সাহাবী, তাবেঈন ও অন্যান্য আলেম ও ওলীর কবর জিয়ারতও এর অন্তর্গত। যে মহাপুরুষের সঙ্গে তাঁর দুনিয়ার হায়াতে সাক্ষাৎ করলে বরকত পাওয়া যায় – তাঁর ওফাতের পরে, তাঁর কবর জিয়ারত করলেও সেই বরকত পাওয়া যায়! এ উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েজ। রাসূলে করীমের (’আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) ঐ হাদীছ শরীফ কোনোভাবেই এর প্রতিবন্ধক নয় – যেখানে তিনি ফরমান: তিনটি মসজিদ ছাড়া আর কোথাও (উটের) হাওদা বেঁধো না; যথা- মসজিদুল হারাম, মসজিদুল আকসা ও আমার মসজিদ (মসজিদে নবভী)।” (ইহইয়াউ ’উলূমিদ্দীন, সফর অধ্যায়)
শায়খ আব্দুল হক দেহেলভী লিখেছেন: “হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মাদ গাঝালী (রাহমাতুল্লাহিতা’লা ’আলাইহি) বলেছেন যে, যেসব বুযুর্গ পার্থিব জীবনে বরকত দান করতেন – তাঁরা ইন্তেকালের পরেও উসীলা হওয়ার ও বরকত দান করার (সাহায্য করার) যোগ্যতা রাখেন। কেননা, ইন্তেকালের পরে আত্মার অবশিষ্ট থাকাটা হাদীছ শরীফ ও উম্মতের ইজমার আলোকে প্রমাণিত ও সাব্যস্ত। জীবদ্দশায় ও ওফাতের পরে – উভয় অবস্থায়ই আত্মা কাজ করে। শরীরের সঙ্গে কাজের কোনো সম্পর্ক নেই। আর আসল কাজতো করেন আল্লাহুতা’লাই।” (সূত্র: তাকমীলুল ঈমান, ১২২ পৃষ্ঠা)
তিনি আরো লিখেছেন: “সূফীগণ বলেন যে, কোনো কোনো ওলীর কাজ করার ক্ষমতা আলমে বারঝাখেও (কবরে) রয়েছে। তাঁদের পবিত্র আত্মা থেকে সাহায্য-সহযোগিতা লাভ করা যায়। … বেলায়েত অর্থ ফানাফীল্লাহ তথা আল্লাহতে বিলীন হয়ে যাওয়া এবং বাকাবিল্লাহ তথা আল্লাহতে অবশিষ্ট থাকা। এটা ওফাতের পরে, আরো পূর্ণতা পায় এবং শক্তিশালী হয়। হৃদয়বান ও সূক্ষ্মদর্শী বিশ্লেষকদের মতে, এটা প্রমাণিত যে, জিয়ারতকারীদের আত্মা কবরবাসীদের আত্মা থেকে আলো ও রহস্যের প্রতিচ্ছবি লাভ করে। একটি আয়নার সামনে আরেকটি আয়না রাখলে যা হয় আরকি! এতে প্রতিচ্ছবি পড়ে। আল্লাহর ওলীগণের (ওফাতের পরে) মেছালী (প্রতীকী) শরীর থাকে – যার মাধ্যমে তাঁরা প্রকাশিত হয়ে সাহায্যপ্রার্থীকে সাহায্য করেন। যে এ কথা অস্বীকার করে – তার কাছে কোনো দলিল-প্রমাণ নেই।” (সূত্র: প্রাগুক্ত, ১২২-১২৩ পৃষ্ঠা)
তিনি আরো লিখেছেন, জনৈক বুযুর্গ বলেন, আমি এমন চারজন বুযুর্গ দেখেছি – যাঁরা তাঁদের পার্থিব জীবনের চেয়ে কবরে গিয়ে আরো বেশি ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন। তাদের মাঝে খাজা মারূফ কারখী ও শেখ আব্দুল কাদির জিলানী (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহুমা) রয়েছেন। … সায়্যিদ আহমাদ মারঝুক বলেন, জীবিতদের চেয়ে ওফাতপ্রাপ্ত বুযুর্গের সাহায্য বেশি শক্তিশালী। ওলীগণের নিয়ন্ত্রণ সব জগতেই রয়েছে। এ ক্ষমতা হচ্ছে, তাঁদের রূহগুলোর। আর রূহগুলো অবিনশ্বর ও স্থায়ী।” (সূত্র: আশিয়াতুল লুমুয়াত, কবর জিয়ারত অধ্যায়)
বড়পীর সাহেবের (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) সবচেয়ে বিশ্বস্ত জীবনী বাহজাতুল আসরার ওয়া মা’দিনুল আনওয়ারে রয়েছে, গ্রন্থকার ইমাম আবূল হাসান আলী শাত্বনুফী শাফেয়ী (’আলাইহির রাহমাহ) লিখেছেন: “আমি এমন চারজন শাইখকে দেখেছি – যাঁরা তাঁদের কবর থেকে এমনভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ করেন – যেভাবে জীবিতরা করে থাকেন! তাঁরা হলেন, শাইখ আব্দুল কাদির জিলানী, মারূফ কারখী, আকীল মানজারী ও হায়াত ইবনে কাইস হাররানী (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহুম)।”
“তাঁর (আল্লাহুতা’লার) পানে ওসীলা তালাশ করো” (৫:৩৫)- এ আয়াতে কারীমার ব্যাখ্যায় ইমাম সাবী (’আলাইহির রাহমাহ) লিখেছেন: “আল্লাহ ছাড়া আর কারো এবাদত-বন্দেগী করছেন” – মর্মে ধুয়া তুলে আওলিয়ায়ে কেরামের মাজার শরীফ জিয়ারতকারীদের কাফের আখ্যা দেয়াটা স্পষ্ট গোমরাহী। তাঁদের মাজার শরীফ জিয়ারত করা মানে হচ্ছে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো এবাদত-বন্দেগী করা নয়, বরং এটা হচ্ছে, আল্লাহ যাঁদের ভালোবাসেন – তাঁদেরকে ভালোবাসারই নিদর্শন” (তাফসীরে সাবী, ১ম খন্ড, ২৪৫ পৃষ্ঠা)।
ওয়াহাবী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা ও সালাফীদের গুরু ইবনে তাইমিয়াকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো: নবীজীকে (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উসীলা বানানো জায়েজ কিনা? সে উত্তর দিয়েছিলো: “আল-হামদুলিল্লাহ! তাঁর প্রতি ঈমান রেখে, তাঁর মুহব্বত, তাঁর আনুগত্য, তাঁর প্রতি দরূদ ও সালাম, তাঁর শাফায়াত, তাঁর সুন্নতগুলোর অনুসরণ এবং তাঁর কল্যাণে বান্দাদের জন্যে যেসব আমল আবশ্যক হয়েছে (ফরজ-ওয়াজিব) – সেসবকে উসীলা বানানো মুসলমানদের ঐকমত্যে শরীয়তসম্মত।” (সূত্র: ইবনে তাইমিয়ার আল-ফতোয়া আল-কুবরা, ১ম খন্ড, ১৪০ পৃষ্ঠা)
ইবনে তাইমিয়া আরো লিখেছে: “সাহাবায়ে কেরাম (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহুম) হুজুরের (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পবিত্র হায়াতে তাঁকে উসীলা বানাতেন এবং তাঁর বেছাল মুবারকের পরে, তাঁরা তাঁর চাচা ইবনে আব্বাসের (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) উসীলা ধরেছেন – যেভাবে তাঁরা হুজুরের (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উসীলা ধরতেন।” (সূত্র: মাজমু’য়ায়ে ফতোয়া, ১ম খন্ড, ১৪০ পৃষ্ঠা)
সে আরো লিখেছে: “আমরা বলি, যখন আল্লাহর কাছ প্রার্থনাকারী বলে যে, আমি তোমার কাছে অমুকের উসীলায় এবং অমুক ফেরেশতা, নবী, নেককার প্রমুখের উসীলায় কিংবা অমুকের মর্যাদা বা অমুকের সম্মানের উসীলায় প্রার্থনা করছি – তখন এ দোয়ার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর কাছে তাঁদের (বিশেষ) মর্যাদা রয়েছে। আর এভাবে দোয়া করাটা বিশুদ্ধ (ওয়া হাযা সহীহ)। কেননা, আল্লাহর কাছে তাঁদের (বিশেষ) মর্তবা, মর্যাদা ও সম্মান রয়েছে। আর তাই, আল্লাহ তাঁদের দরজাকে (স্তর) সমুন্নত করবেন, তাঁদের শ্রেষ্ঠত্ব বাড়িয়ে দেবেন এবং তাঁরা শাফায়াত (সুপারিশ) করলে – তিনি তা কবুল করবেন; যেমনটি আল্লাহ সুবহানাহুতা’লা বলেছেন যে, তাঁর অনুমতি ছাড়া কে তাঁর কাছে শাফায়াত (সুপারিশ) করতে পারে?” (সূত্র: প্রাগুক্ত, ২১১ পৃষ্ঠা)
ওয়াহাবী মতবাদের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠাতা মুহম্মদ বিন ’আব্দিল ওয়াহাব নজদীকে যখন সুন্নী উলামায়ে কেরাম তাঁর বদ-আকীদা ও কুকীর্তির জন্যে দোষী করলো – তখন সে আত্মপক্ষ সমর্থন করে লিখেছে: “সুলাইমান বিন সুহাইল এমন কিছু ব্যাপারে আমাকে মিথ্যামিথ্যি অভিযুক্ত করেছে – যা আমি বর্ণনা করি নি, বরং এসবের অধিকাংশ আমার ধারণায়ও ছিলো না। যেমন- আমি নাকি নেককারদের উসীলা করাকে কুফরি বলেছি, আমি নাকি (নবীজীকে) “ইয়া আকরামাল খালক” বলার কারণে ইমাম বুসীরীকে কাফের বলেছি এবং আমি নাকি দালাইলুল খাইরাত পুড়িয়ে দিয়েছি! এসব অভিযোগের বিরুদ্ধে আমার উত্তর হচ্ছে, সুবহানাকা! হাযা বুহতানুল ’আযীম!! অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমারই পবিত্রতা ঘোষণা করে বলছি, এসব জলজ্যান্ত মিথ্যে কথা!! (সূত্র: মুহম্মদ ইবনে ’আব্দিল ওয়াহাব নজদীর ১ ও ১১নং রিসালার ১২ ও ৬৪নং পৃষ্ঠা)
মাজার শরীফ জিয়ারতকে যারা কবর-পূজা বলে – তারা অহরহ তাদের এ গোমরাহীর সমর্থনে একটি হাদীছ শরীফ পেশ করে তার অপব্যাখ্যা করে থাকে। সেটি হচ্ছে, হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমান: তিনটি মসজিদ ছাড়া আর কোথাও (উটের) হাওদা বেঁধো না; যথা- মসজিদুল হারাম, মসজিদুল আকসা ও আমার মসজিদ (মিশকাত: ৬৪২, বুখারী ও মুসলিম) আসুন! হাদীছ শরীফটি নিয়ে একটু বিশ্লেষণ করি:-
প্রথমত, এটি একটি মানসূখ বা রহিত হাদীছ শরীফ। নাসেখ বা রহিতকারী দু’টি হাদীছ শরীফ আগেই পেশ করেছি – যেখানে নবীজী (’আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) ফরমান: আমি তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন থেকে জিয়ারত করো (মিশকাত: ১৬৬৮ ও ১৬৭৫)
দ্বিতীয়ত, এ হাদীছ শরীফে রওজা শরীফ, মাজার শরীফ ও মুসলমানদের কবর জিয়ারতের কোনো কথাই নেই। আর তাই, এটিকে কবর জিয়ারতের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলাটা চরম অজ্ঞতা ও হাস্যকর তথা গোমরাহী।
তৃতীয়ত, ঐ নিষেধাজ্ঞা শুধু অন্যান্য মসজিদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। নইলে, ঐ ৩টি মসজিদ ছাড়া আর কোথাও যাওয়ার উদ্দেশেতো বাড়ী থেকেই বের হওয়া যাবে না! যেমন- বাজার, অফিস-আদালত, ব্যবসা কেন্দ্র, স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, শ্বশুর বাড়ী, বিয়াইয়ের বাড়ী তথা আর কোথাওতো তাহলে যাওয়া যাবে না, তাই না?
চতুর্থত, একটি হাদীছ শরীফ দিয়ে আরেকটি হাদীছ শরীফকে ব্যাখ্যা করাই উত্তম ব্যাখ্যা। মুসনাদে আহমাদে উল্লিখিত হাদীছ শরীফটি আরেকটু বিস্তারিতভাবেই রয়েছে – যা অনায়াসে আলোচ্য হাদীছ শরীফটির ব্যাখ্যা হতে পারে; যেমন- হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমান: মসজিদুল হারাম, মসজিদুল আকসা ও মসজিদে নবভী – এ ৩টি মসজিদ ছাড়া অন্য কোনো মসজিদে নামাজ আদায়ের উদ্দেশে সফর করা মুসাফিরের জন্যে সঙ্গত নয় (মুসনাদে আহমাদ:১১৬০৯)। সুতরাং এটা দিবালোকের মতোই পরিষ্কার হয়ে গেলো যে, ঐ নিষেধাজ্ঞা অন্যান্য মসজিদে বেশি সওয়াবের উদ্দেশে সফর করার বেলায়ই প্রযোজ্য; মাজার শরীফ বা কবর জিয়ারতের ক্ষেত্রে মোটেও প্রযোজ্য নয়।
যাহোক, কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহগুলো বা এসবের কেন্দ্রগুলো যেমন একেকটি পাওয়ার হাউজ – তেমনি, প্রতিটি রওজা শরীফ, মাজার শরীফ ও নেককার মুসলমানদের কবরগুলোও একেকটি আধ্যাত্মিক কেন্দ্র বা রূহানী পাওয়ার হাউজ – যেগুলোর অতীন্দ্রিয় বা গায়েবী ক্ষমতা অচিন্তনীয়! আর আল্লাহুতা’লা সন্দেহাতীতভাবে তাঁর প্রিয়পাত্রদের তথা নবী-ওলীগণকে জড় পদার্থের চেয়েও অনেক বেশি ক্ষমতা দিয়ে থাকেন – যে ব্যাপারে বাতিলপন্থীদের কোনো ধারণাই নেই!! সুতরাং ইসলামে মাজার-পূজা বা কবর-পূজা বলে আসলেই কিছু নেই। এসব নির্বোধ ও কাট্টা বেদয়াতীদের বিকৃত মস্তিষ্কজাত বা ওদের মাথার ভেতরে থাকা গোবর থেকে উদ্ভূত বেদয়াতী শব্দ বা পরিভাষা বৈকি! কখনো কোনো মুসলমান জিয়ারতকারী কবর বা মাজার শরীফে শায়িত ব্যক্তিকে খোদা, ইলাহ বা মা’বুদ বলে মনে করেন না, বরং আল্লাহ, ইলাহ বা মা’বুদের নেককার বান্দা বা ওলী বলেই বিশ্বাস করেন। কাজেই, যারা সুন্নতকে মাজার-পূজা বা কবর-পূজা বলে – তারা নিঃসন্দেহে গোমরাহ, ইবলিশের দোস্ত ও আসফালু সাফিলীনের বাসিন্দা। আল্লাহুতা’লা এসব অর্বাচীন থেকে দ্বীন ও মিল্লাতকে হেফাজত করুক। আমিন। ধন্যবাদ।
                             ----------------------------------------------------------------------------------
                                  '' শুধু নিজে শিক্ষিত হলে হবেনা, প্রথমে বিবেকটাকে শিক্ষিত করুন। ''

কবর, মাজার ও মৃত্যু সম্পর্কীত কতিপয় বিদ’আত



কবর, মাজার ও মৃত্যু সম্পর্কীত কতিপয় বিদ’আত


আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,
আকাশে ঘন কালো মেঘের আড়ালে অনেক সময় সূর্য্যের কিরণ ঢাকা পড়ে যায়। মনে হয় হয়ত আর সূর্য্যের মুখ দেখা যাবে না। কিন্তু সময়ের ব্যাবধানে নিকশ কালো মেঘের বুক চিরে আলো ঝলমল সূর্য্য বের হয়ে আসে। ঠিক তেমনি বর্তমানে আমাদের সমাজের দিকে তাকালে দেখা যাবে বিদ’আতের কালিমা ইসলামের স্বচ্ছ আসমানকে ঘিরে ফেলেছে। যার কারণে কোন কাজটা সুন্নাত আর কোন কাজটা বিদ’আত তা পার্থক্য করাটাই অনেক মানুষের জন্য কঠিন হয়ে গেছে। যা হোক শত রকমের বিদ’আতের মধ্য থেকে এখানে শুধু কবর, মাজার ও মৃত্যু সম্পর্কীত কয়েকটি প্রসিদ্ধ বিদ’আত তুলে ধরা হল। যদিওএ সম্পর্ক আরও অনেক বিদ’আত আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। যদি এতে আমাদের সমাজের বিবেকবান মানুষের চেতনার দুয়ারে সামান্য আঘাত হানে তবেই এ প্রচেষ্টা সার্থক হবে।
১) মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা:
আজকেআমাদের সমাজে পিতা-মাতা, দাদা-দাদী সন্তান-সন্ততি ইত্যাদির মৃত বার্ষিকী অত্যন্ত জমজমাট ভাবে পালন করা হয়ে থাকে। সেখানে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে বিশাল খাবার-দাবারের আয়োজন করা হয়। যদিও গরীব শ্রেণীর চেয়ে অর্থশালীদের মধ্যে এটা পালন করার ব্যাপারটি বেশি চোখে পড়ে কিন্তু আমরা কজনে জানি বা জানার চেষ্টা করি যে, মৃত্যুবার্ষিকী কিংবা কারো মৃত্য উপলক্ষ্যে শোক দিবস পালন পালন করা জঘন্যতম বিদ্‌’আত? অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে এ উপলক্ষ্যে শামিয়ানা টাঙ্গানো, ঘর-বাড়ী সাজানো, আলোকসজ্জা করা এবং কুরআন তেলাওয়াত বা বিভিন্ন তাসবীহ-ওযীফা ইত্যাদি পাঠ করে সেগুলোর সাওয়াব মৃতব্যক্তির রূহের উদ্দেশ্যে বখশানো বিদ’আত। আব্দুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) বলেন, “মৃত ব্যক্তিকে ছায়া দিতে পারে কেবল তার আমল; তাঁবু টানিয়ে ছায়া দেয়া সম্ভব নয়।”
অনুরূপভাবে জানাযা দিয়ে ফিরে আসার পর জানাযায় অংশগ্রহণকারীদেরকে, যে সমস্ত মানুষ শোক জানাতে আসে তাদেরকে অথবা ফকীর-মিসকীনদের খানা খাওয়ানো, বৃহস্পতিবার, মৃত্যু বরণ করার চল্লিশ দিন পর অথবা মৃত বার্ষিকীতে খাওয়ার অনুষ্ঠান করা, মীলাদ মাহফিল করা, ‘চার কুল’ এর ওযিফা পড়া ইত্যাদি সবই হারাম এবং বিদ’আতী কাজ। কারণ, নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নত এবং সাহাবীগণের কার্যক্রমে এ সব কাজের কোন প্রমাণ নেই। এ সব জীবিকা উপার্জন, অর্থ অপচয় এবং ধ্বংশের মাধ্যম ছাড়া আর কিছুই নয়।
২) চল্লিশা পালন:
মানুষ মারা যাওয়ার চল্লিশ দিন বিদ্‌আতঃপরে মৃতের চল্লিশা উপলক্ষ্যে খানার আয়োজন করা অথবা চল্লিশদিন পর্যন্ত প্রত্যেক বৃহস্পতিবার শোক পালন করা, মৃত্যুর পর প্রথম ঈদকে বিশেষভাবে শোকদিবস হিসেবে পালন করা, সে দিন কুরআনের হাফেয বা কারী সাহেবদের ডেকে কুরআন পড়ানো এবং শোক পালনের জন্য লোকজন একত্রিত করা ইত্যাদি সবই বিদ’আত এবং হারাম।
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল এবং ইমাম ইব্‌ন মাজাহ (রহঃ) ছহীহ সনদে আব্দুল্লাহ আল বাজালী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন “আমরা মৃত্যুবরণকারী সাহাবীগনের কাফন-দাফন সম্পন্ন করে মৃতের বাড়ীতে একত্রিত হওয়া এবং তাদের পক্ষ থেকে খাবারের আয়জন করাকে ‘নাওহা’ এর মতই মনে করতাম।” ইমাম আহমদ বলেন, “এটি একটি জাহেলী কাজ।” নাওহা অর্থঃ কারো মৃত্যেুতে চিৎকার করে কান্নাকাটি করা, শরীরে আঘাত করা, চুল ছেড়া, জামা-কাপড় ছেড়া …ইত্যাদি।  এসব কাজ করা ইসলামে হারাম।
৩) নির্দিষ্ট কোন দিনে কবর যিয়ারতের জন্য একত্রিত হওয়া, হাফেজদের দিয়ে কুরআন খতম করিয়ে পারিশ্রমিক দেয়া ইত্যাদি।
ঈদ বা জুমার দিন পুরুষ-মহিলা একসাথে বা আলাদা আলাদাভাবে কবরের পাশে একত্রিত হওয়া, খানা বিতরণ অথবা কিছু তথাকথিত মৌলোভী বা কুরআনের হাফেজদেরকে একত্রিত করে কুরআন পড়িয়ে তাদেরকে পারিশ্রমিক দেয়া ইত্যাদি কাজ সুস্পষ্ট বিদ’আত এবং নাজায়েয।
কবর যিয়ারতের জন্য জুমা বা ঈদের দিনের বিশেষ কোন বৈশিষ্ট প্রামাণিত নয়। অনুরূপভাবে কাবরের পাশে কুরআন পড়া বা পড়ানো একাটি ভিত্তিহীন কাজ। একে জীবিকা উপার্জনের মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করা আরও বেশি অন্যায়।
৪) সবীনা পাঠ:
রমাযান বা অন্য মাসে সারারাত ধরে কুরআন খতম করানো এবং এজন্য বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা রাসলুল্লাহ (সাল্লাল্ল্ল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল্লাম) এর শিক্ষা এবং সাহাবায়ে কেরামের নীতি বিরুদ্ধ কাজ। নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবে এর দলীল নেই।
শরীয়তের দাবী হল, আমরা নিজেরা এ কুরআন পাঠ করব, নিজেদের মধ্যে তা নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করব এবং কুরআনের মর্ম-উদ্দেশ্য বুঝার জন্য গবেষণা করব।
রাসূল (সাল্লাল্ল্ল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল্লাম) এর নিয়ম ছিল, তিনি রমাযানের শেষ দশকে ইবাদত-বন্দেগীর জন্য কোমর বেঁধে নামতেন, আর বাড়ীর সবাইকে জাগিয়ে রাত জাগরণ করাতেন (বুখারী ও মুসলিম)। কিন’, কুরআনের সবীনা পড়া করা অথবা হাফেজ সাহেবদের ডেকে অর্থের বিনিময়ে কুরআন পড়ানোর কোন প্রমাণ নেই।
৫) রূহের মাগফেরাতের উদ্দেশ্যে ফাতিহা পাঠের বিদ’আতঃ
নবী (সাল্লাল্ল্ল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল্লাম) এবং খেলাফয়ে রাশেদীনের রূহের প্রতি ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে ফরয নামাযের পর এই বিশ্বাস সহকারে সূরা ফাতিহা পড়া বিদ’আত যে, এ সকল পবিত্র রূহসমূহের উদ্দেশ্যে সূরা ফাতিহা পড়লে তাঁরা মৃত্যুর পর গোসল দেয়ার সময় এবং কবরে সওয়াল-জওয়াবের সময় উপস্থিত থাকবেন। আফ্‌সোস! এটা কত বড় মূর্খতা এবং গোমরাহী! এসব কথার না আছে ভিত্তি; না আছে দলীল। এদের বিবেক দেখে বড় করুণা হয়।
অনুরূপভাবে, কোথাও কোথাও নামাযের শেষে দু’আ শেষ করে করে মৃতের ফাতিহা পাঠের রেওয়াজ দেখা যায়। কোন জায়গায় জুমআর নামায শেষ করে ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর উদ্দেশ্যে ফাতিহা পাঠের নিয়ম চালু রয়েছে। এসবই বিদ’আত।
অনুরূপভাবে কোন কবর বা মাযারের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়া এবং হাত উঠিয়ে কবর বা মাযারে মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে ফাতিহা পাঠ করা, আবার সে মৃত ব্যক্তির নিকটে ফরিয়াদ করা বা তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা, মৃত মানুষের দাফন শেষে গোরস্থান থেকে ফিরে আসার সময় চল্লিশ কদম দূরে দাঁড়িয়ে ফাতিহা পাঠ করা এবং সাধারণ মৃত মুসলমানদের রূহের উদ্দেশ্যে সাওয়াব রেসানীর উদ্দেশ্যে ফাতিহা পড়া শুধু মূর্খতাই নয় বরং বিদ’আত।
৬) কবরে মান্নত পেশ, পশু যবেহ এবং খতমে কুরআনের বিদ’আত:
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কবরে খতমে কুরআন আয়োজন করা, পশু যবেহ করে কুরআনখানী বা মৃতবার্ষিকীতে অংশ গ্রহণকারীদেরকে খানা খাওয়ানো এবং কবরে টাকা-পয়সা মান্নত হিসেবে পেশ করা জঘন্যতম বিদ্‌’আত। এসব কাজের সাথে যদি বিশ্বাস করা হয় যে, কবরবাসীরা এগুলোতে খুশি হয়ে আমাদের উপকার করবে, আমাদেরকে ক্ষয়-ক্ষতি এবং বিপদাপদ থেকে রক্ষা করবে এবং যদি বিশ্বাস করা হয় যে, তারা এ হাদিয়া-তোহফা দিলে কবুল করেন তবে তা শুধু বিদ্‌’আতই নয় বরং বরং শির্‌ক। নবী (সাল্লাল্ল্ল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল্লাম) এ ধরণের ক্রিয়াকলাপকে লানত করেছেনঃ
((لَعَن اللَّهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللَّهِ))
“যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু যবেহ করে তার প্রতি আল্লাহর অভিশম্পাত।” (মুসলিম, অধ্যায়ঃ গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু জবেহ করা হারাম)
মান্নত একটি ইবাদত। আর গাইরুল্লাহর জন্য ইবাদত করা শির্‌ক। নবী (সাল্লাল্ল্ল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল্লাম) ইরশাদ করেনঃ
“এক ব্যক্তি একটি ছোট মাছির জন্য জান্নাতে গেছে এবং অন্য একজন জাহান্নামে গেছে । সাহাবীগণ কারণ, জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, “পূর্ববর্র্তী উম্মতের দু জন লোক সফরকালে এমন এক জায়গা দিয়ে যাচ্ছিল যেখানে ছিল একটি মূর্তি। মূর্তির সেবকগণ এ দু জন লোককে কোন কিছু মূর্তির উদ্দেশ্যে কোন কিছু উৎসর্গ করতে আদেশ করল। এমনকি হুমকি দিয়ে বলল, “অবশ্যই কিছু না কিছু উৎসর্গ করতে হবে। কমপক্ষে একটি মাছি হলেও মূর্তির উদ্দেশ্যে দিতে হবে। অন্যথায় তোমাদেরকে হত্যা করা হবে।” কোন উপায় না পেয়ে হয়ে দু জনের মধ্যে একজন একটি মাছি ধরে মূর্তির মন্ডপে নিক্ষেপ করল। যার ফলে সে জাহান্নামে স’ন্তান করে নিল। আরেকজন কোন কিছু দিতে অস্বীকার করল। ফলে তাকে হত্যা করা হল এবং সে জান্নাতবাসী হয়ে গেল। (ছহীহ মুসলিম)
৭) কবরে ফাতিহা খানী করাঃ
নির্দিষ্ট সংখ্যায় সূরা ফাতেহা পড়ে তার সাওয়াব কবরে মৃতদের উদ্দেশ্যে বখশানোএকটি ভিত্তিহীন কাজ।ইসলামী শরীয়তে যার কোন প্রমাণ নেই।
আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমার (রাঃ) কবরের নিকট সুরা ফাতিহা এবং সূরা বাকারার শেষাংশ তেলাওয়াতের উপর গুরুত্ব দিতেন বলে যে একটি বর্ণনা প্রসিদ্ধ তা একটি ‘শায’ এবং সনদ বিহীন বর্ণনা। তাছাড়া সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে থেকে কেউ তার সমর্থন করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না।
অনুরূপভাবে সূরা নাস, ফালাক, তাকাসূর, কাফেরুন ইত্যাদি পড়ে সেগুলোর সাওয়াব মৃতদের উদ্দেশ্যে বখশানো একটি বাতিল প্রথা।নবী (সাল্লাল্ল্ল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল্লাম) এর বক্তব্য এবং সাহাবায়ে কেরামের কার্যক্রমে তার কোন সর্মথন পাওয়া যায় না। অথচ সব ভিত্তিহীন বিদআতী কার্যক্রম আমরা নির্দিধায় করে যাচ্ছি। কোন দিন এগুলোর দলীল তলিয়ে দেখার গরজ আমাদের হয় নি।
৮) পথের ধারে বা মাযারে কুরআন পাঠঃ
মাযার, পথের ধারে বা লোক সমাগম হয় এমন কোন স্থানে কুরআন তেলাওয়াত করে ভিক্ষা করা বিদ’আত এবং হারাম। কেননা, মহাগ্রন্থ কুরআনকে ভিক্ষার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা অত্যন্ত নিকৃষ্ট কাজ। এর মাধ্যমে আল্লাহর কালামকে অপমান করা হয়। ইসলাম সাধারণভাবে ভিক্ষাবৃত্তিকেই তো নিন্দা করেছে আবার কুরআনকে মাধ্যম ধরে ভিক্ষা করা?! এটা শুধু হারামই নয় বরং কঠিন গুনাহের কাজ।
এভাবে অসংখ্য বিদআত আমাদের সমাজে জেঁকে বসে আছে যেগুলোর প্রতিবাদ করতে গেলেও হয়ত প্রতিবাদকারীকে উল্টো বিদআতী উপাধী নিয়ে ফিরে আসতে হবে।
তবে বর্তমানে জ্ঞান চর্চার অবাধ সুযোগে আমাদের নতুন প্রজন্ম, যুব সমাজ, তরুন আলেম সমাজ সবাই যদি উন্মুক্ত হৃদয়ে দ্বীনে ইসলামের বুক থেকে বিদআতের পাথরকে সরানোর জন্য তৎপর হয় তবে অদূর ভবিষ্যতে ইসলাম তার আগের মহিমায় ভাস্বর হবে। ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য্যে ভরে উঠবে আমাদের সপ্নিল বসুন্ধরা। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন।
                           ----------------------------------------------------------------------------------
                                 '' শুধু নিজে শিক্ষিত হলে হবেনা, প্রথমে বিবেকটাকে শিক্ষিত করুন। ''

মাজারপূজা-কবরপুজা এবং পীরবাদের মতো বিদা'তি-শিরিকি কর্ম থেকে আমরা কেন দূরে থাকব? একটু জেনে দেখব কি!!!

মাজারপূজা-কবরপুজা এবং পীরবাদের মতো বিদা'তি-শিরিকি কর্ম থেকে আমরা কেন দূরে থাকব? একটু জেনে দেখব কি!!! 

আমি বিদা'তি-শিরিক কর্ম নিয়ে লিখি বলে অনেক ভাই আমার উপর বিরক্ত এবং কাছের আপনজনরাও আমার উপর মনোকষ্টে ভুগছেন । তাদের জ্ঞাতারতে জানাতে চাই , আপনি যদি নিজেকে মুসলিম মনে করেন তাহলে ইসলাম আপনাকে যতোটুকু অনুমতি দিয়েছে আপনি তার বেশি যেতে পারেন না , করতে পারেন না । যদি  আপনি ভুল করে  নিজেকে জিইয়ে রাখার নিমিক্তে জোর করে তা  করতে চান তাহলে  মনে রাখবেন  আল্লাহ তা বরদাশত করবেন না ।আমি শুধুমাত্র যা সত্য তা প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি মাত্র । নিন্মে এই বেপারে আল্লাহ'র এই অধম গোলাম  হিসাবে সংক্ষেপে বিস্তারিত আলোচনা দিয়েছি , ইনশাআল্লাহ  একটু সময় নিয়ে মনোযোগ সহকারে পড়লে  কোনটা সহীহ তা জানতে পারবেন । আল্লাহ আমাদের বুঝে পড়ার তওফিক দান করুন । 

আসলে পীর শব্দটা আরবী ভাষার নয়। ফার্সি ভাষা হতে আগত বলে  ইসলামিবিদরা মত দিয়েছেন ।
আপনি যদি মনে করেন পীর আপনাকে বেহেশত দিবে তাহলে তা হবে আপনার ভুল , কারন পীর নিজেও জানেনা তিনি বেহেশত পাবে কিনা। অনেক পীর সাহেব নাকি মুরীদদেরকে বলে থাকেন:আমার কাছে মুরীদ হও।তাহলে,আমি তোমাদেরকে আমার হাত ধরে বেহেশতে নিয়ে যাব। অনেকে আছে অগ্রিম ভবিষ্যৎও দিয়ে থাকেন । অনেকে আছে টাকার বিনিময়ে দোয়া দেন ।
আমার প্রশ্ন - যেইখানে  পীরসাহেবকে নিজের ব্যাপারে গ্যারান্টি দেওয়ার ক্ষমতা মহান আল্লাহ দেননাই , সেইখানে তিনি এ ধরণের কথা বলার দুঃসাহস কোথায় পেলেন?এইধরনের কথার অনুমতি ইসলাম তাদের কতোটুকু দিয়েছে ?
কিয়ামতের মাঠে পীর সাহেব বলেছেন বলে গুনাহ করেছি এই কথা বলে কি আপনি পার পাবেন ?
কেয়ামতের মাঠে পীর সাহেব কি আপনাকে চেনার ক্ষমতা রাখে ? নাকি বেহেশতের চাবি পীর সাহেবের হাতে ?
আল্লাহ কুরআনে বলেন : 
"তাঁর নিকট রয়েছে গায়েবের চাবিসমূহ, এবং এক তিনি ছাড়া এ সম্পর্কে কারও জ্ঞান নেই।”
(সূরা আল আনআম, ৬ : ৫৯)
"আজকে (কিয়ামতের দিন) তোমাদের কেউ কাউকে উপকার কিংবা ক্ষতি করতে পারবে না। আর আমি অপরাধীদেরকে বলব-জাহান্নামের আগুনের স্বাদ গ্রহণ কর দুনিয়ায় যাকে তোমরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছ। (সুরা সাবা: ৪২)
 "সেটি এমন দিন যেদিন কোন নিকটতম প্রিয়জনও কোন নিকটতম প্রিয়জনের কাজে আসবে না। আর তাদেরকে সাহায্যও করা হবে না। (সুরা দুখান:৪১)

আমাদের দেশ বিদা'তে ভরপুর । আমাদের এই অবস্থা থেকে মুক্ত হতে হবে সঠিক ইসলাম জানার মাধ্যমে , যা এখন বাংলাদেশের মুসলিমদের জন্য অতীব প্রয়োজন । বাংলাদেশে এখন অনেক ভণ্ড এবং  বিদা'তি পীর রয়েছে যারা আমাদের সঠিক ইসলাম থেকে শধুমাত্র দুরেই রাখতেছেনা বরং আমাদের দেশের সহজ-সরল মানুসগুলোকে মাজারে-পীরের আসরে অনৈতিক কাজে প্রলুব্ধ করে বিদ'তি কর্মে  লিপ্ত রেখে তা সমাজে ভাইরাস আকারে ছড়াচ্ছে ।কুরআন হাদিসের কোথাও রাসুল (সাঃ)ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির নির্দেশ সর্বাবস্থায় বিনাপ্রশ্নে মেনে নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি।তাকে অনুসরণ কিংবা তার নির্দেশ বাস্তবায়ন করা যাবে শুধুমাত্র সে সকল ক্ষেত্রে যখন তা কুরআন ও হাদিসের অনুকুলে হয়।আলেমগন-মুহাদ্দিস-ইমামগনকে শ্রদ্ধার সহিত মূল্যায়ন করতে হবে , সম্মান জানাতে হবে যদি তারা আপনাকে সহীহ কুরান ও হাদীস থেকে শিক্ষা দেই ।
আল্লাহ কুরআনে বলেন :
"যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে,আল্লাহ তায়ালা তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন,যার নিম্নদেশে ঝর্ণাধারাসমূহ প্রবাহমান থাকবে।আর যে মুখ ফিরিয়ে নেবে আল্লাহ তাকে মর্মান্তিক আযাব দেবেন। (সুরা ফাতহ:১৭)

যেমন মনে করেন আপনি দীনের একটা মাসালা বুঝতেছেন না , যার দরুন আপনি জানেন না এইটা কোথায় পাবেন , তখন কোন আলেম থেকে তা জেনে নেওয়ার পর কুরান এবং হাদীস থেকে তার রেফেরেন্স মিলিয়ে নিলেন যখন দেখলেন তা সহীহ তখন তা আমল করলেন । ইনশাআল্লাহ , এইভাবেই আপনি পেয়ে যাবেন কে সত্তিকার অর্থে "আলেম" এবং কে "ভণ্ড" ।অথচ  আমরা তা না করে ভণ্ড পীর-মাজার পুজারীদের কথা শুনে নিজেকে বিদা'তি কর্মে লিপ্ত রেখে একেই তো নিজে আল্লাহ'র হুকুম ঠিকভাবে পালন করতেছিনা ,উল্টো ইসলামকে বিকৃত করার মাধ্যমে ধ্বংস করতেছি । আমাদের ভুলে গেলে হবেনা যে , প্রত্যেককে তার নিজ নিজ কর্মের ব্যাপারে জবাবদিহি নিজ থেকেই দিতে হবে ।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
”তোমরা যদি না জেনে থাক তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর।”(সুরা নাহল:৪৩)

"সেদিন এমন একটি দিন যখন কারও জন্য কোন কিছু করার সাধ্য থাকবে না। ফায়সালার ভার সেদিন একমাত্র আল্লাহ তায়ালার হাতেই থাকবে। (সুরা ইনফিতার:১৯)

আমরা আমাদের বিবেগকে একটু খাটিয়ে ভাবলেই দেখি যে, রাসুল(সঃ) কে আল্লাহ দুনিয়ায় সরবচ্ছ কমতা দিয়েছেন , রাসুল(সঃ) এর জীবন কর্ম  এর সাথে এই সমস্ত ভণ্ড পীরগুলোর চলা চরিত্র কেমন মিল ?
কখনও ভেবে দেখেছেন কি রাসুল(সঃ) পরিচালিত জীবন এবং এই সকল ভণ্ডপীরদের পরিচালিত জীবনের মধ্যে কতোটুকু তফাৎ ?
এদের বিলাসিতা জীবন পরিচালন কি আপানার মনে কোন প্রশ্ন জন্ম দেইনা ?
এরা কতোটুকু সহিহভাবে কুরআন-সুন্নাহ অনুসরণ করছে ? আপনি কখনও কুরআন-হাদীস খুলে তা মিলিয়ে দেখেছেন কি ?
এইসকল পীর কি আপনাকে জান্নাত দিতে পারে,নাকি রাসুল(সঃ)এর সহিহ সুন্নাত এবং পরিপূর্ণ জীবন বিধান 'আল-কুরাআন"  আপনাকে জান্নাত দিবে ?
মাজারে সিজদা দেওয়া , গানের আসর জমিয়ে গাঁজাখানার আড্ডা এগুলো কি রাসুল(সঃ) এর সুন্নাহ'র মধ্যে পড়ে ?
নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি কি সঠিক পথে আছেন কিনা ? 
আপনার লক্ষ্য জান্নাত কিনা / এই পথ অবলম্বন করে আপনি জান্নাত পাবেন কিনা ? 

আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন ;
“হে পয়গম্বর! আপনি মুশকদেরকে জিজ্ঞেস করুন যে, বল তো কে তোমাদেরকে আসমান জমিন থেকে রুযী দেন? এবং কে তোমাদের কান ও চোখের মালিক? তাছাড়া কে জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করেন এবং কে মৃতকে জীবিতের মধ্য থেকে বের করেন? কে করেন কর্মসম্পাদনের ব্যবস্থাপনা? তারা পরিস্কার বলবে যে, মহান আল্লাহ।(সূরা ইউনুস-৩১)

মনে রাখবেন :
আল্লাহ'র পক্ষ থেকে আপনাকে দেওয়া জ্ঞান সম্পন্ন উন্নত মস্তিস্কই হচ্ছে আপনার " পীর " , যা দিয়ে আপনি মহাগ্রন্থ আল-কুরান ও সহীহ হাদীস নির্ভুলভাবে অন্বেষণ করবেন ।  পীর/মাজারে মৃত বেইক্তি আপনাকে বেহেশত দিতে পারবেনা। আপনার কর্মই আপনাকে জান্নাত দিবে যদি তা সহীহ হয় এবং আল্লাহ'র সন্তুষ্টিতে হয়  ।তাই  বলি , সহীহভাবে ইসলাম অন্বেষণ করুন এবং আল্লাহ'র ভয়ে কাতর হয়ে সঠিকভাবে তা পালন করুন । ইনশাআল্লাহ  জান্নাত-ই হবে আমাদের আসল ঠিকানা ।নিশ্চয়ই আল্লাহ মহান এবং দয়ালু ।

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:

"যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের হুকুম মেনে চলে,আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর নাফরমানী করা থেকে দূরে থাকে,ওরাই সফলকাম। (সুরা নুর: ৫২)

@কবর-মাজার পুজা প্রসঙ্গ@
>>আল্লাহ ছাড়া কাউকে সেজদা করা সুষ্পষ্ট হারাম। কুরআনের অসংখ্য আয়াত ও হাদিসে নববী দ্বারা যা দিবালোকের ন্যয় পরিস্কার। একথা মনে হয় অন্ধ পীর ও মাজারপূজারী ছাড়া সকল মুসলমানরাই জানে।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
"সাবধান ! তোমাদের পূর্বের যুগের লোকেরা তাদের নবী ও নেককার লোকদের কবর সমূহ মসজিদ (সিজদার স্থান) হিসেবে গন্য করতো। তবে তোমরা কিন্তু কবর সমূহকে সিজদার স্থান বানাবে না। আমি এরূপ করতে তোমাদের নিষেধ করে যাচ্ছি" ।
<p>[মুসলিম, ১০৭৭]</p>
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরও বলেন,
"তোমরা স্বীয় ঘরকে কবর বানিয়োনা। (অর্থাৎ কবরের ন্যায় ইবাদত-নামায, তেলাওয়াত ও যিকির ইত্যাদি বিহীন করনা।) এবং আমার কবরে উৎসব করোনা।(অর্থাৎ বার্ষিক, মাসিক বা সাপ্তাহিক কোন আসরের আয়োজন করনা। তবে হ্যাঁ আমার উপর দুরূদ পাঠ কর। নিশ্চয় তোমরা যেখানেই থাক না কেন তোমাদের দুরূদ আমার নিকট পৌঁছে থাকে।(আল্লাহ তায়ালার ফেরেশতারা পৌঁছিয়ে দেন।)”
(সুনানে আবু দাউদ: হাদিস নং-২০৪৪/৪০)

@কবরের সামনে বাতি প্রজ্জ্বলন করাকে হারাম সাব্যস্ত করে রাসূলে কারীম সাঃ ইরশাদ করেন-

“হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর নবী সাঃ অভিশম্পাত করেছেন (বেপর্দা) কবর যিয়ারতকারীনী মহিলাদের উপর, এবং সেসব লোকদের উপর যারা কবরকে মসজিদ বানায় (কবরকে সেজদা করে) এবং সেখানে বাতি প্রজ্জ্বলিত করে।
(জামি তিরমীযী-২/১৩৬)

@আল্লাহ ছাড়া কারো নামে মান্নত বা কুরবানী করা যায়না। কারণ মান্নত ও কুরবানী হচ্ছে ইবাদত। আর ইবাদত আল্লাহ ছাড়া কারা জন্য করা জায়েজ নয়। অথচ আমরা পীরের নামে ,মৃত বেইক্তির নামে মান্নত করি  :( ।

মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
“আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কুরবানী এবং আমার জীবন ও আমার মরণ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই। তাঁর কোন অংশিদার নেই। আমি তা-ই করতে আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম আনুগত্যশীল।
(সূরা আনআম-১৬২-১৬৩)

"আর তার (মুশরেকরা) আল্লাহ ভিন্ন এমন কতিপয়ের ইবাদত করে, যারা তাদের কোন অপকারও করতে পারেনা এবং তাদের কোন উপকারও করতে পারেনা, ও তারা বলে-এরা হল আল্লাহ তায়ালার কাছে আমাদের সুপারিশকারী। (হে রাসূল!) আপনি বলে দিন, তোমরা কি আল্লাহ তায়ালাকে এমন বিষয়ের সংবাদ দিচ্ছ যা আছে বলে তিনি (নিজেও) জানেন না, না আসমানে না জমিনে! তিনি তাদের শিরকী কার্যকলাপ হতে পবিত্র ও অনেক ঊর্দ্ধে "
(সূরা ইউনুস-১৮)

উল্লেখিত কুরআন ও হাদিসের বিবরণ মোতাবিক কবর ও মূর্তিপূজার সাযুজ্যতার মাধ্যমে আমরা সহজেই অনুমান করে নিতে পারি আমাদের দেশের ভন্ড মাজারপূজারী ও কবরপূজারীরা কি পরিমাণ শিরকী কর্মকান্ডে লিপ্ত।আল্লাহ আমাদের সঠিক জ্ঞান অন্বেষণ করে সঠিক পথে চলে আল্লাহ-রাসুল(সঃ) মোহাব্বত অর্জন করার তাওফিক দান করুন । 



নিম্মে সংগৃহীত কিছু প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে এর সমাধান করার চেষ্টা করেছি এবং প্রত্যেক উত্তরের জন্য কুরআন এবং সুন্নাহ থেকে দলীল দেয়ার চেষ্টা করেছি।

প্রশ্ন ১: আল্লাহ তায়ালা আমাদের কেন সৃষ্টি করেছেন?

উত্তরঃ যেন আমরা এক মাত্র আল্লাহর ইবাদত করি এবং তাঁর সাথে কোন শিরক না করি।

কুরআনের দলীলঃ “আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।” (সুরা যারিয়াতঃ ৫৬)

হাদীসের দলীলঃ “বান্দার উপর আল্লাহর হক হচ্ছে তাঁর ইবাদত করা এবং তাঁর সাথে কোন শিরক না করা।”

(বুখারী ও মুসলিমের মিলিত হাদীস)

প্রশ্ন ২: যদি আমরা আল্লার সাথে শিরক করি তাহলে কি আল্লাহ ক্ষমা করবেন?

উত্তরঃ না, আল্লাহ মুশরিক (শিরককারী)কে কখনই ক্ষমা করবেন না।

কুরআনের দলীলঃ “নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ্ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম” (সুরা মায়িদাঃ৭২)

হাদীসের দলীলঃ “যে ব্যক্তি ঐ অবস্থায় মারা যায় যে, সে আল্লাহর সাথে শিরক করত, তবে তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। (মুসলিম)

প্রশ্ন ৩: শিরকের সাথে কোন আমল করলে কি কোন লাভ হবে?

উত্তরঃ না, কোন লাভই হবে না বরং অপূরণীয় ক্ষতি হবে।

কুরআনের দলীলঃ “যদি তারা শেরেকী করত, তবে তাদের কাজ কর্ম তাদের জন্যে ব্যর্থ হয়ে যেত।” (সুরা আন্ আমঃ ৮৮)

হাদীসের দলীলঃ “যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করবে যাতে আমার সাথে অন্যকে শরিক করে, তখন তাকে এবং তার শিরকী আমল আমি পরিত্যাগ করি।” (মুসলিম, হাদীসে কুদছি)

প্রশ্ন ৪: আমরা কিভাবে আল্লাহর ইবাদত করব?

উত্তরঃ যেভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) হুকুম করেছেন, সেভাবে।

কুরআনের দলীলঃ “তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম।” (সুরা বাইয়েনাহঃ ৫)

হাদীসের দলীলঃ “যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করে যা আমাদের (অনুমোদিত) শরিয়াত সম্মত নয়, তা বাতিল বলে গণ্য হবে।” (মুসলিম)

প্রশ্ন ৫: আল্লাহ তায়ালা কেন রাসূলদের প্রেরণ করেছেন?

উত্তরঃ একমাত্র তাঁরই ইবাদত করতে এবং তাঁর সাথে শরিক করা হতে নিষেধ করতে।

কুরআনের দলীলঃ “ আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক।” (সুরা নাহলঃ৩৬)

হাদীসের দলীলঃ “প্রত্যেক নবী একে অন্যের ভাই আর তাঁদের দ্বীনও এক, অর্থাৎ প্রত্যেক রাসূলই তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছেন।” (বুখারী ও মুসলিম)

প্রশ্ন ৬: আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে একত্ববাদ (তাওহীদ) কি?

উত্তরঃ প্রতিটি ইবাদত একমাত্র তাঁরই জন্য করা যেমন, দু’আ করা, মানত করা, হুকুম মানা, আইন মানা।

কুরআনের দলীলঃ “আর জেনে রেখো তিনি ব্যতীত আর কোন মা’বুদ নাই। অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’বুদ নাই।” (সুরা মুহাম্মাদঃ ১৯)

হাদীসের দলীলঃ “সর্ব প্রথম তুমি তাদের লা-ইলাহার সাক্ষ্য দিতে বলবা অর্থাৎ একমাত্র তাঁর একত্ববাদের (তাওহীদের) দাওদাত দিবে।” (বুখারী ও মুসলিমের মিলিত হাদীস)

প্রশ্ন ৭: বড় শিরক কি?

উত্তরঃ তা হচ্ছে ইবাদতের কোন অংশ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য নির্দিষ্ট করা। যেমন, পীব-ফকিরের কিছু চাওয়া, পীরের নামে মানত করা, সওয়াবের আশায় পীরের বাড়ীতে গমন করা, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো আইন গ্রহন করা ইত্যাদি।

কুরআনের দলীলঃ “(হে নবী) বলুনঃ আমি তো আমার রবের ইবাদত করি আর তাঁর সাথে কোন শিরক করি না।” (সুরা জ্বীনঃ ২০)

হাদীসের দলীলঃ “সবচেয়ে বড় পাপ হচ্ছে আল্লাহর সাথে শিরক করা।” (বুখারী)

প্রশ্ন ৮: শিরক কি বর্তমানে বিদ্যমান আছে?

উত্তরঃ হ্যাঁ, খুবই বেশী পরিমাণে বিদ্যমান আছে।

কুরআনের দলীলঃ “অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে এবং সাথে সাথে শিরকও করে।” (সুরা ইউসুফঃ ১০৬)

হাদীসের দলীলঃ “ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত ঘটবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমার উম্মতের একদল মুশরিক না হয়ে যায় এবং তারা মূর্তি, গাছ, পাথরের পূজা না করে।” (সহীহ্, তিরমিযি)

প্রশ্ন ৯: আল্লাহ ছাড়া কোন পীর-আওলিয়ার নিকট দু’আর হুকুম কি?

উত্তরঃ তাদের নিকট দু’আ করা শিরক এর অন্তর্ভূক্ত।

কুরআনের দলীলঃ “আর আল্লাহর সাথে অন্য কোন মা’বুদের নিকট দু’আ করো না, তাহলে আযাবে নিপতিত হবে।” (সুরা আশ্ শুআরাঃ ২১৩)

হাদীসের দলীলঃ “যে এ অবস্থায় মারা যায় যে, সে আল্লাহর সাথে অন্য কোন মা’বুদের নিকট দু’আ করত, তাহলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (বুখারী)

প্রশ্ন ১০: দু’আ কি ইবাদতের শামীল? 

উত্তরঃ অবশ্যই ইবাদতের শামীল।

কুরআনের দলীলঃ “আর তোমাদের রব বলেন আমার নিকট দু’আ করো; অবশ্যই আমি কবুল করব।” (সুরা গাফিরঃ ৬০)

হাদীসের দলীলঃ “দু’আ হচ্ছে ইবাদত।” (সহীহ্ তিরমিযি)

প্রশ্ন ১১: মৃত ব্যক্তিরা, মৃত পীর-আওলীয়ারা কি তাদের নিকট কৃত দু’আ শুনতে পায়?

উত্তরঃ মৃতরা কখনই শুনতে পায় না।

কুরআনের দলীলঃ “নিশ্চয়ই তুমি মৃতদের শ্রবণ করাতে পারবে না।” (সুরা নামলঃ৮০)

হাদীসের দলীলঃ “আল্লাহ তায়ালার কিছু সংখ্যক মালাইকা (ফিরিশতা) আছেন যারা দুনিয়াতে ঘুরে বেড়ায় আমার উম্মতের তরফ হতে তারা আমাকে সালাম পৌছায়।” (সহীহ্, আহমদ)

প্রশ্ন ১২: আমরা কি বিপদে মৃত ব্যক্তিদের অথবা পীর-আওলীয়াদের বা অনুপস্থিত ব্যক্তিদের নিকট সাহায্য চাইব?

উত্তরঃ না, অবশ্যই তাদের নিকট সাহায্য চাইব না, বরং একমাত্র আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইব।

কুরআনের দলীলঃ “যখন তোমরা তোমাদের রবের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছিলে, তখন তিনি তোমাদের সাহায্য করেন।” (সুরা আনফালঃ ৯)

হাদীসের দলীলঃ “হে চিরঞ্জিব, হে চিরস্থায়ী, তোমার রহমতের অছিলায় সাহায্য প্রার্থনা করি।” (তিরমিযি)

প্রশ্ন ১৩: পীর-আওলীয়াদের নিকট সাহায্য চাওয়া কি জায়িয?

উত্তরঃ না, জায়িয নয়।

কুরআনের দলীলঃ “নিশ্চয়ই আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি ও তোমারই নিকট সাহায্য চাই।” (সুরা ফাতিহাঃ ৫)

হাদীসের দলীলঃ “যদি কোন কিছু চাও, তবে আল্লাহর নিকট চাও। যদি সাহায্য চাও তবে একমাত্র তার নিকটই চাও।” (তিরমিযি)

প্রশ্ন ১৪: পীরের নামে মানত করা কি জায়িয?

উত্তরঃ সম্পূর্ণ নাজায়িয।

কুরআনের দলীলঃ “হে আমার রব আমার পেটে যে বাচ্চা আছে তা তোমার নামে উৎসর্গ করছি।” (সুরা আল ইমরানঃ ৩৫)

হাদীসের দলীলঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যের জন্য মানত করে সে যেন তা পূর্ণ করে, আর যে তার বিরুদ্ধে পাপাচরণে মানত করে সে যেন তা হতে বিরত থাকে।” (বুখারী)

প্রশ্ন ১৫: পীরের নামে যবেহ্ করা কি জায়িয?

উত্তরঃ এটা শিরক। আল্লাহ ছাড়া কারো নামে যবেহ করা জায়িয নয়।

কুরআনের দলীলঃ “আর তোমার রবের সালাত আদায় কর আর যবেহ (কুরবানী) কর।” (সুরা কাওছারঃ ২)

হাদীসের দলীলঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে যবেহ্ করে তার উপর আল্লাহর লা’নত (অভিশাপ)।” (মুসলিম)

প্রশ্ন ১৬: কোন ভবিষ্যৎ বর্ণনাকারী পীরের কথা কি বিশ্বাস করা যায়?

উত্তরঃ না, কোন পীরের ভবিষ্যৎবাণী বিশ্বাস করা শিরক।

কুরআনের দলীলঃ “(হে নবী) বলুনঃ আসমান ও জমীনের গায়িবের খবর আল্লাহ ছাড়া কেউ জানের না।” (সুরা নামলঃ ৬৫)

হাদীসের দলীলঃ “যে ব্যক্তি কোন গণক বা ভবিষ্যৎ বর্ণনাকারী ব্যক্তির নিকট গমন করে এবং সে যা বলে তা বিশ্বাস করে, তবে সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তাকে যেন অস্বীকার করল।” (সহীহ্, আহমদ)

প্রশ্ন ১৭ঃ সুস্থতা লাভের জন্য তাবিজ বা এই জাতীয় জিনিস ব্যবহার করা কি জায়িয?

উত্তরঃ এগুলোর অনেক কিছুই শিরকের অন্তর্ভূক্ত।

কুরআনের দলীলঃ “আর যদি তোমাকে কোন খারাবী স্পর্শ করে, তবে তা দূর করার ক্ষমতা তিনি ছাড়া অন্য কারো নেই।” (সুরা আন’আমঃ ১৭)

হাদীসের দলীলঃ “যে ব্যক্তি কোন তাবিজ ব্যবহার করল সে যেন শিরক করল।” (সহীহ্, আহমদ)

প্রশ্ন ১৮: কোন পীর আউলিয়ার অছিলা করে দু’আ করার কি প্রয়োজনীয়তা আছে?

উত্তরঃ না, কোন পীর বা আউলিয়ার অছিলা করে দু’আ করার প্রয়োজন নেই।

কুরআনের দলীলঃ “আর যদি বান্দা আপনাকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে, তবে বলুন, আমি অতি নিকটে, দু’আকারীর দু’আর জবাব দেই যখন সে আমাকে ডাকে।” (সুরা বাকারাহঃ ১৮৬)

হাদীসের দলীলঃ “নিশ্চয় তোমরা এমন জাতকে ডাকছো, যিনি সর্বশ্রোতা ও অত্যন্ত নিকটে এবং তিনি তোমাদের সাথে আছেন। অর্থাৎ ইলমের দ্বারা তিনি তোমাদের দেখেন ও কথা শ্রবণ করেন।” (মুসলিম)

প্রশ্ন ১৯: আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজীদকে কেন অবতীর্ণ করেছেন? 

উত্তরঃ এটি এজন্য অবতীর্ণ করা হয়েছে, যেন তার উপর আমল করা হয়।

কুরআনের দলীলঃ “তোমাদের রবের তরফ হতে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাকে অনুসরণ কর।” (সুরা আ’রাফঃ ৩)

হাদীসের দলীলঃ “কুরআন তিলাওয়াত করতে থাক, আর তার উপর আমল করতে থাক, তার দ্বারা অর্থ উপার্জন করো না, বেশি বেশি আয়ের লোভও করো না।” (আহ্মদ, সহীহ্)

প্রশ্ন ২০: আমরা কি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথার উপর কোন পীর, ইমাম, আউলিয়া বা মণিষীদের কথাকে অথবা তাদের রচিত বই পুস্তককে প্রাধান্য দিব?

উত্তরঃ না, অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথার উপর এক বিন্দু পরিমাণ কাউকে প্রাধান্য দেয়া জায়িয নয়, বরং আল্লাহর হুকুমের সম্পূর্ণ পরিপন্থি।

কুরআনের দলীলঃ “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর কাউকে প্রাধান্য দিবে না।” (সুরা হুজরাতঃ ১)

হাদীসের দলীলঃ “আল্লাহর বিরুদ্ধাচারণের কারো কোন আনুগত্য চলবেনা। একমাত্র ভাল কাজেই আনুগত্য চলবে।” (বুখারী ও মুসলিম)

প্রশ্ন ২১: যদি আমাদের মধ্যে মতবিরোধ হয় তখন কি করব?

উত্তরঃ তখন আল্লাহর কিতাব (কুরআন) ও সহীহ্ সুন্নাহর প্রতি প্রত্যাবর্তন করব।

কুরআনের দলীলঃ “যদি তোমাদের কোন ব্যাপারে মতবিরোধ হয় তখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তন কর।” (সুরা নিসাঃ ৫৯)

হাদীসের দলীলঃ “তোমাদের মধ্যে আমি দুটো জিনিস রেখে যাচ্ছি, যদি তা আঁকড়ে ধর, তাহলে কখনো গোমরাহ্ হবেনা, তা হল আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাহ।” (মালিক, সহীহ)

প্রশ্ন ২২: দ্বীনের (ধর্মের) মধ্যে কি বিদআতে হাসানাহ আছে?

উত্তরঃ না, দ্বীনের (ধর্মের) মধ্যে বিদআতে হাসানাহ্ বলে কোন জিনিস নেই। কিছু আছে “মাসলাহাতিল উম্মাহ” যা তা দ্বীনের জন্য ও মানুষের জন্য সহায়ক কিন্তু দ্বীনের মধ্যে নয়।

কুরআনের দলীলঃ “আজ তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণতা দিলাম, আমার নিয়ামত তোমাদের উপর পূর্ণ করলাম, আর ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা) হিসেবে মনোনীত করে তার উপর রাজী হয়ে গেলাম।”(সুরা মায়িদাঃ ৩)

হাদীসের দলীলঃ “ওহে! সমস্ত ধরনের (নতুন আবিষ্কার) বিদআতের ব্যাপারে সাবধান, কারণ দ্বীনের প্রতিটি নতুন সংযোজনই বিদআত, আর প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী (পথভ্রষ্টা)।” (সহীহ্, আবু দাউদ)

প্রশ্ন ২৩: দ্বীনের মধ্যে বিদআত কি?

উত্তরঃ ইসলামের নামে ঐ সমস্ত কাজ যাতে শরীয়াতের কোন সহীহ্ দলীলা নেই।

কুরআনের দলীলঃ “আর তাদের কি কোন শরীক আছে যারা তাদের জন্য ঐ নতুন দ্বীনের প্রবর্তন করেছে, যার ব্যাপারে আল্লাহর সম্মতি নেই।”(সুরা শুরাঃ ২১)

হাদীসের দলীলঃ “যারা আমাদের হুকুমের মধ্যে এমন কোন নতুন কথার প্রবর্তন করবে, যা আমাদের কথা নয়, তবে তা পরিত্যক্ত।” (বুখারী ও মুসলিম)।

প্রশ্ন ২৪: ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন আইন মানার অনুমতি আছে কি?

উত্তরঃ না, বরং অন্য আইনের উপর চলা, তাকে সঠিক মনে করা বা বিকল্প মনে করা শিরক।

কুরআনের দলীলঃ “আর যারা আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ বিধান দ্বারা বিচার করবে না তারা কাফির।” (সুরা মায়িদাঃ ৪৪)

হাদীসের দলীলঃ “যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের শাসকগণ আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী শাসন না করবে, আর আল্লাহ প্রদত্ত বিধানের কোন্টা গ্রহণ করবে, কোন্টা ছেড়ে দিবে, আল্লাহ তায়ালা তাদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করে দিবেন।” (ইবনে মাজাহ্)

বিজ্ঞ পাঠক পাঠিকার কাছে আমার আবেদন-আপনারা শান্ত মস্তিস্কে একটু ভেবে দেখুন, আমাদের দেশে মাজার পূজা আর কবর পূজার নামে মুসলমানদের কিভাবে মুশরিক বানানো হচ্ছে সুপরিকল্পিতভাবে। 
আল্লাহ তায়ালা আমাদের কবর পূজা ও মাযার পূজা এবং পীর পূজা করে মুশরিক হওয়া থেকে হিফাযত করুন।
ভন্ড পীরদের কারণে সঠিক ও হকপন্থী আলেমগনকে খারাপ বলা মোটেও উচিত নয়, কারন উনারা আমাদের কাছে সরবচ্ছ শ্রদ্ধার পাত্র । তাই , অবশ্যয় উনাদের মূল্যায়নের সহিত সম্মান দিতে হবে। 

আল্লাহ তায়ালা  আমাকে , আপনাকে, সঠিক দ্বীন ইসলামের জ্ঞান অর্জন করে কুরআন সুন্নাহ্ মোতাবেক চলার জন্য ঈমান দান করুন , শয়তানের সবধরনের  ছত্রছায়া থেকে রক্ষা করুন এবং  আল্লাহ তায়ালা আমাদের হকপন্থী আলেম ও বাতিল ভন্ড পীর চিনার তৌফিক দিয়ে ঈমান আমল হিফাযত করার তাওফিক দান করুন,আমীন।
সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লা আনতা, আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইক।

আলহামদুলিল্লাহ! সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ'র এবং সকল কর্ম একমাত্র তার সন্তুষ্টির জন্য । আল্লাহ আমাদের কবুল করুন  ।                      

                         ----------------------------------------------------------------------------------
                                 '' শুধু নিজে শিক্ষিত হলে হবেনা, প্রথমে বিবেকটাকে শিক্ষিত করুন। ''

বুধবার, ৫ জুলাই, ২০১৭

সমকামিতার উৎপত্তি ও তার পরিণতি ( শাস্থি ) কি ???

সমকামিতার উৎপত্তি ও তার পরিণতি ( শাস্থি ) কি ???

হযরত লূত (আ:) এর পরিচয় :-----
লূত শব্দটির উদ্ভব লাতা শব্দ থেকে। এর অর্থ নিজেকে স্নেহভাজন করা। হযরত ইব্রাহীম (আ:) এর হৃদয় লুত (আ:) এর প্রতি অতিশয় স্নেহানুরক্ত ছিল বলে তার এরুপ নামকরন সার্থক হয়েছিল। আল্লাহ তার বান্দার (লুত) প্রতি বিশেষভাবে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে আপন বন্ধু গ্রহণ করে নবুওয়্যাত দান করেছিলেন। বাইবেলে এ নবীকেই লুট বলা হয়েছে।
বংশ পরিচয় :------
লুত (আ:) ছিলেন ইব্রাহীম (আ:) এর ভাতিজা হারানের পুত্র। তার শৈশবকাল ইব্রাহীম (আ:) এর ছত্রছায়াই কেটেছে। লুত (আ:) কে ইব্রাহীম (আ:) লালন-পালন করেছেন। এজন্যই লুত (আ:) এবং বিবি সাবাহ দ্বীনে ইব্রাহীমের প্রথম মুসলিম বা আনুগত্যকারীদের অন্যতম। ইব্রাহীম (আ:) এর প্র্রতিটি সফরে লুত (আ:) এবং তার স্ত্রী তার সফরসঙ্গী থাকতেন। ইব্রাহীম (আ:) যখন হিজরত করে মিসর গেলেন তখনো লুত (আ:) এবং তার স্ত্রী সঙ্গে ছিলেন। পরবর্তী সময় লুত (আ:) মিসর থেকে হিজরত করে পূর্ব জর্দানের সুদুম (সোডম) ও আরা অঞ্চলে চলে যান। ইব্রাহীম (আ:) চলে যান ফিলিস্তিনে। সেখানে অবস্থান করেন এবং ইসলামের প্রচার ও প্রসারে আত্মনিয়োগ করেন।
লুত (আ:) এর সময়কাল :----
ইব্রাহীম (আ:) এর সময়কালেই লূত (আ:) নবুওয়্যাতের দায়িত্ব পালন করেছেন। ইব্রাহীম (আ:) এর সময়কাল নির্নয় করা সম্ভব হলে লূত (আ:) এর সময়কাল নির্ণয় করার ক্ষেত্রে আর কোন সমস্যাই থাকে না।
আধুনিক নৃতাত্বিক গবেষণার ফলে মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহীম (আ:) এর জন্মস্থানই শুধু আবিষ্কৃত হয়নি, যে সময়ে তিনি পৃথিবীতে আগমণ করেছিলেন, সে সমাজের অবস্থা কেমন ছিল এবং তাদের সভ্যতা সংস্কৃতি কেমন ছিল ইত্যাদি সম্পর্কে নানা তথ্য আবিষ্কৃত হয়েছে। স্যার নিওনার্ড ওলঙ্গ- এর দেয়া তথ্য হতে জানা যায় ২১০০ খৃষ্টপূর্বের কাছাকাছি সময়ে ইব্রাহীম (আ:) এই পৃথিবীতে আগমণ করেছিলেন বলে গবেষক ঐতিহাসিককগণ মনে করেন। সাম্প্রতিক কালের গবেষণা হতে দেখা যায় ইব্রাহীম (আ:) খৃষ্টপূর্ব ২১৬০ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং খৃষ্টপূর্ব ১৯৮৬ সালে মৃত্যবরণ করেন। তিনি ১৭৪ বছর বেছে ছিলেন।
লুত (আ:) এর সম্প্রদায় :-----
লুত (আ:) এর জাতি পৃথিবীর কোন অঞ্চলে বসবাস করতো এ সম্পর্কে বর্তমানকালের গবেষকগণ বলেন, ইরাক ও ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী এক স্থানে তারা বসবাস করতো। যাকে বর্তমনে ট্রান্সজর্দান বা ধুমজর্দান বলে।বাইবেল এই অঞ্চলের নাম বলেছে সুদুম। বর্তমান যে সাগরকে মৃত সাগর বা ডেডসি বলা হয় এর আশে পাশে কোথাও অবস্থিত ছিল বর্ণনা করা হয়।]
অপর দিকে তুলমুদ গ্রন্থে বলা হয়েছে, সুদুম ব্যতীত এ স্থানে আরো চারটি বড় বড় শহর ছিল। ঐতিহাসিকগণ বলেন, প্রত্যেকটি শহরের মাঝখানে বড় বড় বাগান ছিল। ওদুন নামক যে এলাকা ছিল তারই আশে-পাশে ছিল সুদুম এবং আমুরা এলাকা। বর্তমান কালের গবেষকগণ বলেন, এখন যেখানে সমুদ্র দেখা যাচ্ছে সেখানে ইতিহাসের কোন এক সময় ছিল বিশাল মরুভুমি। কালক্রমে সে মরুভুমি শহরে রুপান্তরিত হয়। তারপর তা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে (আসমানী গযবের) সাগরতলে বিলীন হয়ে যায়।
মৃত সাগর জর্ডান ও ইসরাইল সীমান্তে অবস্থিত। এ বিষ্ময়কর সাগরটি পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা নিচু জায়গা। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৪০০ মি. নীচু, অতি লবনাক্ততা ২৪০ ভাগ। স্বাভাবিক লবনাক্ততার পরিমাণ ৩০%। এই পানিতে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড ও বিষাক্ত পদার্থের কারণে কোন প্রানী বাচতে পারে না বিধায় একে মৃত সাগর বলে। এর পানির আপেক্ষিক ঘনত্ব এতো বেশি যে হাত পা বেধে ফেলে দিলেও কারো ডোবার সম্ভাবনা নেই। এ হ্রদে লবণ জমতে জমতে অনেক অদৃশ্যমান পিলার সৃষ্টি হয়েছে।
গবেষকদের ধারনা এই স্থানেই লুত (আ:) এর জাতি বাস করতো। এবং তাদের উপরই আল্লাহর গযব এসেছিল। ফলে তাদের সে এলাকা সমুদ্রের অতলে তলিয়ে যায়। এই মৃত সাগরের এলাকায় এক সময় যে মানব জাতি বাস করতো তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। দৈনন্দিন জীবনে মানুষ যা ব্যাবহার করে এবং বাস করার গৃহের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। গবেষকদের ধারণা ভুমিকম্পে ইটালীর পম্পেই নগরী যেমন শতশত মিটার নীচে চলে গেছে ঠিক তেমনি লূত (আ:) এর জাতি যে এলাকায় বসবাস করতো, সে এলাকায় বড় ধরনের ভূমিকম্পে শত শত মিটার মাটির নীচে চলে গিয়েছে এবং সে এলাকা সমুদ্রের তলদেশে নিমজ্জিত।
সুদুম আমুরার সবুজ শ্যামল মরুদ্যান দুটি খুবই উর্বর ছিল। তাতে পানির সরবরাহ ছিল পর্যাপ্ত। ফলে ভুমি ছিল অত্যন্ত উর্বর ও শষ্যে ভরপুর। অঞ্চলটিতে নানা স্বাচ্ছন্দপূর্ণ জীবনের অধিকারী, জীবনের সব রকমের উপকরণের প্রাচুর্য আল্লাহ পাক তাদেরকে ঢেলে দিয়েছিলেন।
লুত (আ:) এর জাতি তাদের প্রাচুর্যময় জীবনযাত্রার সঙ্গে হয়ে উঠে বেপরোয়া। সমাজ জীবনে তারা জুলুম-অত্যাচার, মারামারি, নির্লজ্জতা ও কুকর্মের ক্ষেত্রে এ যুগের সকল জাতিকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এ জাতির চরিত্র ছিল অত্যন্ত জঘন্য প্রকৃতির। পৃথিবীতে পরিচিত এবং অপরিচিত অপরাধ ও এমন কোন অপরাধ নেই যা সেই জাতির ভিতর ছিল না। অন্যায় আর বেহায়াপনার সাগরে নিমজ্জিত ছিল সেই জাতি। সে সময় তারা আরো একটি অপরাধ অবিষ্কার করেছিল যা তখন পর্যন্ত কোন জাতির লোক এমন অপরাধের সাথে পরিচিত ছিল না। পবিত্র কোরআন হতে জানা যায় যে, তখন পর্যন্ত পৃথিবীর মানুষ জানতো না, এই ধরনের কোন কু-কর্ম করা যায়।
লূত (আ:) এর জাতিই সেই কুকর্মের জন্ম দিয়েছিল। সে কু-কর্মের নাম হলো সমকাম-ইংরেজিতে যাকে হোমোসেক্স বলে। সে জাতির পুরুষেরা নারীর সাথে যৌনক্রিয়া করার চেয়ে পুরুষে পুরুষে রতিক্রিয়া করতে অধিক আগ্রহী ছিল। এই জঘন্য অপকর্ম তারা প্রকাশ্যে করে আনন্দ লাভ করত। সুন্দরী নারীকে ত্যাগ করে তারা পুরুষের সাথে রতিক্রিয়া করতো।
আজ হতে হাজার হাজার বছর পূর্বে এমন একটি জাতি এই ঘৃনিত ও জঘন্য প্রথার আবিষ্কার করেছিল, বর্তমান যুগের সভ্যতাগর্বী মানুষেরা যে জাতিকে অজ্ঞ অশিক্ষিত আর মূর্খ ছাড়া আর কিছুই বলেনা। কিন্তু সেই অজ্ঞ অশিক্ষিত ও মূর্খ জাতি কর্তৃক আবিষ্কৃত ঘৃণিত ও জঘন্য কর্ম সমকামকে বর্তমানের সভ্যতা গর্বিত মানুষ আনন্দের সাথে স্বাগত জানিয়েছে!!!
বর্তমান বিশ্বে পাশ্চাত্যের অধিকাংশ ব্যাক্তি ও সমাজ জীবনে নৈতিকতার কোন অস্তিত্ব নেই। পাশ্চাত্য জগতে মুক্ত যৌনচার সভ্য মানুষকে পশুত্বের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছে। বস্তুবাদী সমাজে অশালীন ও অশ্লীল যৌনাচার, নৈতিকতাহীনতা এক ভয়াবহ স্তরে উপনীত হয়েছে। ফলে পরিবার গঠন এবং বিবাহ পদ্ধতি প্রায় বিলুপ্তির পথে। শিল্পোন্নত দেশগুলো যুবক-যুবতীদের অবাধ খোলামেলা এবং যৌনাচারের উপর কোন ধর্মীয় এবং সামাজিক বিধিনিষেধ আরোপ করে না। ফলে হাজার হাজার ধর্ষীতা কুমারী মাতা জন্ম দিচ্ছে হাজার হাজার জারজ সন্তান। ইউরোপ, আমেরিকার অনেক দেশেই সাবালিকা মেয়েদের মধ্যে প্রায় শতকারা ষাট ভাগই ধর্ষিতা। ১৯৭৯ সালে নিউইয়র্কে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারনে কয়েক ঘন্টা বিদ্যুৎ ছিল না। পৃথিবীর সভ্য জাতির নৈতিকতার বীভৎস্বরুপ এ সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। শহরে সমকামিতা আর ধর্ষণের তান্ডবলীলা চলছিল। পিতা-মাতার সামনে হাজার হাজার নারীকে ধর্ষন করা হয়েছে। সমকামিতার লালসা থেকে রক্ষা পায়নি সুন্দর কিশোরেরা। বিশ্ববাসী এ জঘন্য ঘটনায় হয়েছিল স্তম্ভিত। সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক, সুইডেন সহ পাশ্চাত্যের অনেক নাস্তিকবাদী দেশে পুরুষে-পুরুষে, নারীতে-নারীতে বিবাহ ব্যবস্থা স্বীকৃত হচ্ছে।
যাই হোক কোন বিদেশী সুদুম এলাকায় গমন করলে সে এলাকার লোকজন তার সমস্ত সম্পদ ছিনিয়ে নিত। তেমন বয়স হলে তার সাথে জোর জবরদস্তি করে সমকাম করা হত। ইব্রাহীম (আ:) আল ইয়ারাজকে সুদুমে প্রেরণ করেছিলেন তখন সে এলাকার এক লোক তার মাথায় পাথর ছুড়ে তার সব সম্পদ কেড়ে নেয় এবং আঘাতকারী আঘাতের পরিশ্রমের মজুরি দাবি করে। আদালত আঘাতকারীর পক্ষে রায় দিয়ে বলে তার আঘাতের পারিশ্রমিক দিয়ে দাও। আহত ব্যাক্তি একটি পাথর নিয়ে বিচারকের মাথায় আঘাত করে তার মাথা ফাটিয়ে দেয় এবং বলে, আমার এই মজুরি তাকে দিয়ে দাও। নিছক গল্প হতে পারে কিন্তু এতে সুদুম জাতির চরিত্র সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
আসমানী গযবের কবলে লুত (আ:) এর জাতি :-----
যেসব জাতির উপরে মহান আল্লাহ আসমানী গযব নাযিল করেছিলেন এবং তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন, কেন তাদের উপর গযব নাযিল করা হযেছিল, তাদের অপরাধ কি ছিল তা কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। লুত (আ:) এর জাতিকে কি কারণে ধ্বংস করা হয়েছিল এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন : ” আর লূতকে আমি নবী বানিয়ে প্রেরণ করেছি। তারপর স্মরণ করো যখন সে নিজ জাতির লোকদেরকে বললো, তোমরা কি এতদূর নির্লজ্জ হয়ে গিয়েছো যে, তোমরা এমন সব নির্লজ্জতার কাজ করছো, যা তোমাদের পূর্বে পৃথিবীর কেউ করেনি। তোমরা স্ত্রী লোকদেরকে ত্যাগ করে পুরুষদের দ্বারা নিজেদের যৌন ইচ্ছা পুরন করে নিচ্ছো। প্রকৃতপক্ষে তোমরা একেবারেই সীমালংঘনকারী জাতি। কিন্তু তার জাতির লোকদের জবাব এ ছাড়া আর কিছুই ছিল না যে, বের করে দাও এই লোকদেরকে তাদের নিজেদের জনপদ হতে, এরা নিজেদেরকে বড় পবিত্র বলে দাবী করে। শেষ পর্যন্ত লূত ও তার ঘরের লোকদেরকে তার স্ত্রী ব্যাতিত যে পছন্দের লোকদের সাথে রয়ে গিয়েছিল, বেছে বের করে নিলাম। সেই জাতির লোকদের উপর এক প্রচন্ড বৃষ্টি বর্ষণ করলাম। এরপর দেখ ওদের সেই অপরাধী লোকদের কি পরিণাম হলো। (সূরা আরাফ : ৮০-৮৪)
বর্তমান বাইবেলে লুত (আ:) কে নারীলিপ্সু মাতাল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাকে দিয়ে তার মেয়েদেরকে ধর্ষণ করানো হয়েছে। আল্লাহর মর্যাদাবান নবীর চরিত্র বিকৃত করে তারা মুসলমানদের উপর তাদের আক্রোশ মিটিয়েছে। লুত (আ:) একজন পূত ও পবিত্র চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। লুত (আ:) এর জাতির অনেক অপরাধের কথাই কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। সেসব অপরাধের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ ছিল সমকামিতা। আর এ কারণেই তাদের উপর আল্লাহ পাক এমন ধরনের গযব নাযিল করেছিলেন যে, পৃথিবীর ইতিহাস হতে তারা নিশ্চিহৃ হয়ে গিয়েছিল।
এই ঘৃণ্য ও কদর্য কাজের দরুনই সুদুম জাতির লোকজন পৃথিবীতে স্থায়ী কুখ্যাতী লাভ করেছে, এ চরিত্রহীন লোকজন তো কখনোই এ কদর্য কাজ ত্যাগ করেনি কিন্তু গ্রীকদের ভূমিকা এ ব্যাপারে আরো লজ্জাজনক। গ্রীক দার্শনিকরা এই জঘন্য কাজকে একটা নৈতিক গুণের পর্যায়ে উন্নিত করতে চেয়েছিল। তবে গ্রীকরা তাদের কাজে ততটা সফলতা লাভ করতে পারেনি বিধায় সফলতা লাভ করছে আমিরিকা ও ইউরোপ।
বৈজ্ঞানিকভাবে এ তথ্য পতিষ্ঠিত যে. সমমৈথুন একান্তই প্রকৃতিবিরুদ্ধ কাজ। মহান আল্লাহ পাক সমগ্র জীব জাতীর মধ্যে স্ত্রী ও পুরুষের পার্থক্য রেখেছেন কেবলমাত্র বংশ রক্ষার উদ্দেশ্যেই নয় মানবজাতির ক্ষেত্রে এর পেছনে আরেকটি অতিরিক্ত উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে। তা হলো এই যে, স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ে মিলে পরিবার গঠন করবে এবং তার ভিত্তিতে গড়বে সমাজ এবং সভ্যতা।
একজন সমকামী সে নিজেই ক্রিয়া কর্মের ধরন ও গঠন এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে আর তাতে এক সাংঘাতিক বিকৃতি ও বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে, যার ফলে উভয়ের দেহ মন ও নৈতিকতার উপর অত্যন্ত খারাপ প্রভাব বিস্তার লাভ করে, সে প্রকৃতির সাথে বিশ্বাস ভঙ্গ করে, খেয়ানত ও বিশ্বাসঘাতকাতার অপরাধ করে, কারণ যে স্বাদ আস্বাদনকে মানব জাতির ও সমাজ সভ্যতার খেদমতের পারিশ্রমিক বানানো হয়েছে এবং যা লাভ করার সাথে কতগুলো দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন এবং অধিকার পুরন অনিবার্য করে দেয়া হয়েছে, সে তা লাভ করতে চায় কেবল অবদান বা কল্যাণ সম্পাদন, অধিকার আদায় ও দায়িত্ব পালণের বাধ্যবাধকতা ছাড়াই।
এমন মানুষ নিজের সঙ্গে অন্তত একজন পুরুষকে অস্বাভাবিক স্ত্রীজনাচিত কাজে নিয়োজিত করে এবং অন্তত দুইজন নারীর জন্য যৌন উচ্ছ্বঙ্খলতা, নৈতিক অধ:পতন ও বিপর্যয়ের দুয়ার খুলে দেন। লুত জাতি শুধুমাত্র নির্লজ্জ নৈতিকতা বিবর্জিত ও চরিত্রহীন ছিল না, তাদের অধ:পতন এতো নিম্নে নেমে গিয়েছিল যে, এই ঘৃণ্য কাজকে তারা কোন অপরাধ বলেই মনে করতো না। এবং এই কাজ যারা ঘৃণা করতো তাদেরকেই ঐ জাতির লোকজন ঘৃনা করতো। যে ব্যাক্তি তাদেরকে এই কাজ ত্যাগ করতে উপদেশ পরতো তাদের অস্তিত্বই তারা তাদের সমাজে বরদাশত করতে রাজি ছিল না। লূত (আ:) এবং তার আদর্শ যারা গ্রহণ করেছিল তাদেরকে ঐ সমাজের লোকজন সে সমাজ হতে বের করে দেয়ার জন্য বদ্ধপরিকর ছিল। এ জাতির সামগ্রিক জীবনে পবিত্রতার সামান্যতম উপাদানও অবশিষ্ট থাকে না, এমন জাতিকে পৃথিবীর বুজে জীবিত রাখার কোন যু্ক্তিসঙ্গত কারন থাকতে পারে না।
লুত (আ:) এর স্ত্রী সুদুম জাতিরই মেয়ে ছিল। সে ছিল সুদুম জাতির যাবতীয় কর্মকান্ডের সমর্থক। এ কারনেই আল্লাহ পাক লূত (আ:) কে আযাব অবতীর্ণ হবার আগে বলেছিলেন, এই স্ত্রীকে তোমাদের সাথে গ্রহণ করো না, সে আল্লাহর বিধানের বিপরীত কর্মকান্ডের সমর্থক। আযাব আসার পূর্বে লুত (আ:) কে ও তার ঈমানদ্বার সঙ্গীদেরকে উক্ত এলাকা থেকে হিজরত করার জন্য আদেশ দিয়ে ছিলেন।
গযবের ফেরেশতার আগমন :-------
লুত (আ:) কে আল্লাহ তায়ালা মুসলিম জাতির জাতির পিতা ইব্রাহীম (আ:) এর সহযোগী হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন। সুদুম জাতিকে ধ্বংস করার জন্য যে ফেরেশতা দলের (দুইজন মতান্তরে তিনজন) আগমন ঘটেছিল সে ফেরেশতা দল সরাসরি লুত এর কাছে না যেয়ে প্রথমে সমকালীন শ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল ইব্রাহীম (আ:) এর নিকট এসেছিলেন। ইব্রাহীম (আ:) তাদের জন্য খাওয়ার আয়োজন করলেন। কিন্তু মেহমানগণ খেতে অস্বীকার করলেন। এতে ইব্রাহীম (আ:) ধারণা করলেন-এরা কোন শত্রু পক্ষের লোক হবে। মেহমানগন বললেন, আমরা আযাবের ফেরেশতা। আমরা আল্লাহর নির্দেশে লুত (আ:) এর জাতিকে ধ্বংস করার জন্য এসেছি।
ইব্রাহীম (আ:) বললেন, সামান্য কোন কল্যাণও যদি ঐ জাতির ভিতর বিদ্যমান থাকে তাহলে সেই কল্যাণের বিনিময়ে ঐ জাতিকে রক্ষা করুন। কিন্তু ফেরেশতাগণ তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, তাদেরকে অনেক সুযোগ দেয়া হয়েছিল কিন্তু তারা সে সুযোগ গ্রহণ করেনি। এখন আর কোন অবকাশ নেই। তাদের ধ্বংস অনিবার্য এবং অত্যাসন্ন।
এ প্রসঙ্গে কুরআন বলতেছে, “ইব্রাহীম বললেন, হে ফেরেশতাগণ আপনারা কোন অভিযানে আগমন করেছেন? তারা উত্তর দিল, আমরা এক অপরাধি জাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছি-যেন আমরা তাদের প্রতি পাক মাটির পাথর বর্ষণ করি। যা আপনার প্রতিপালক এর সীমা লংঘনকারীদের জন্য নির্ধারিত হয়ে আছে। পরে আমি সে সব লোকদেরকে বের করে দিলাম, যারা এই জনপদে মুমিন ছিল”। (সূরা যারিয়াত : ৩১-৩৫)
অবশেষে আযাবের ফেরেশতাগন ইব্রাহীম (আ:) এর সাথে দেখা করে লুত (আ:) এর জাতির আবাসস্থল সুদুমে গিয়ে উপস্থিত হলেন। তারা অপূর্ব সুন্দর চেহারার কিশোর বালক বা তরুনের আকৃতি ধারণ করে লুত (আ:) এর বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলেন আল্লাহর নবী মেহমানদের দেখে অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়লেন।
তার চিন্তার কারন ছিল সুদুম জাতি সুন্দর চেহারার কিশোর তরুন দেখলেই তার সাথে জোর করে বলাৎকার করতো। লূত (আ:) ভাবলেন এই মেহমানগণ বয়সে এমন যে, এদেরকে তার জাতির লোকজন দেখলেই তারা এসে শাক্তি প্রয়োগ করে মেহমানদের ছিনিয়ে নিয়ে যাবে। সুতরাং মেহমান রক্ষার চিন্তায় তিনি অত্যন্ত পেরেশান হয়ে পড়লেন।
ইতিমধ্যে তার জাতির লোকজন জানতে পারলো যে, এমন কয়েকজন অদ্ভুত সুন্দর চেহারার তরুন তাদের শত্রু লুতের বাড়িতে এসেছে। তারা দলবদ্ধভাবে এসে লূত (আ:) এর বাড়ি ঘেরাও করলো। তারা তরুনদেরকে তাদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য বারবার দাবি করতে লাগলো, অন্যথায় তারা শক্তি প্রয়োগ করে বাড়ি থেকে বের করে নেওয়ারও হুমকি দিল। লুত (আ:) তাদের বুঝালেন এবং বললেন, এই দেশে সুন্দর নারীর অভাব নেই। আমরাও মেয়ে রয়েছে, যাকে ইচ্ছে করলে তোমরা বিয়ে করে স্বাভাবিক ঘর সংসার করতে পার।
কিন্তু সুদুম জাতির লোকজন নবীর কোন যুক্তিই গ্রহণ করলো না। তারা শেষে সময় বেধে দিল, এই সময়ের মধ্যে সুন্দর তরুনদেরকে তাদের হাতে তুলে না দিলে তারা জোর করে বাড়ি থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে। লুত (আ:) কথায় কৌশলে তাদের বাড়ির বাইরে রেখে মেহমানদের কাছে এলেন। নবী আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা করলেন। আল্লাহ যেন তার জালিম জাতির লোকদের নিকট মেহমানদেরকে রক্ষা করেন। মেহমানরুপী ফেরেশতাগণ বললেন, হে আল্লাহর নবী! আমাদের এই চেহারা দেখে আপনি চিন্তিত হবেন না, কারণ আমরা মানুষ নই আমরা আল্লাহর ফেরেশতা। আল্লাহর আদেশে আপনার জাতিকে ধ্বংস করার জন্য এসেছি। কারণ আপনার জাতির কর্মকান্ড এমন স্তরে পৌছেছে যে, তারা আল্লাহর গযবের উপযুক্ত হয়ে পড়েছে। আপনি এবং আপনার সঙ্গি সাথীগণ এই ধ্বংসলীলা হতে সংরক্ষিত হবেন। কিন্তু আপনার স্ত্রীকে তাদের সাথে ধ্বংস করে দেয়া হবে। লুত (আ:) আল্লাহর আদেশে তার ঈমানদ্বার সাথীদের নিয়ে রাতের প্রথম প্রহরেই নিরাপদ এলাকায় চলে গেলেন। তার স্ত্রী তাদের সাথে যেতে অস্বীকার করেছিল। সে তার নবী স্বামীকে ত্যাগ করে তার জাতীর সাথেই থাকতে অধিক পছন্দ করলো।
রাতের এক অংশে যখন অপরাধী জাতি গভীর সুসুপ্তিতে নিমগ্ন ছিল, এমন সময় আল্লাহর ফয়সালা কর্যকর হয়ে গেলো। ভয়ংকর একটা গর্জন হলো, গোটা এলাকাটিকে উপরে উঠিয়ে নিয়ে তা উল্টিয়ে ফেলে দেয়া হলো। উপর হতে পাথর নিক্ষেপ করে গোটা জনপদ নিশ্চিহৃ করে দেয়া হলো। অপরাধী জাতি তাদের অপরাধের বিনিময় এভাবেই আল্লাহর নিকট থেকে লাভ করেছিল।
কেয়ামত পর্যন্ত যে মানব সভ্যতা এই পৃথিবীকে আবাদ করতে থাকবে, তাদের শিক্ষার জন্যই আল্লাহ সুদুম জাতির ধ্বংসের চিত্র পবিত্র কুরআনে একে দিয়েছেন। আল্লাহ সুদুম জাতির ইতিহাস এভাবে বর্ননা করেছেন-
“ফেরেশ্তাগণ যখন লুত-পরিবারের নিকট আসিল, তখন লুত বলিল, ‘তোমরাতো অপরিচিত লোক’। তাহারা বলিল, ‘না, উহারা যে বিষয়ে সন্দিগ্ধ ছিল আমরা তোমার নিকট তাহাই লইয়া আসিয়াছি। আমরা তোমার নিকট সত্য সংবাদ লইয়া আসিয়াছি এবং অবশ্যই আমরা সত্যবাদী। সুতরাং তুমি রাত্রির কোন এক সময়ে তোমার পরিবারবর্গসহ বাহির হইয়া পড় এবং তুমি তাহাদের পশ্চাদানুসরণ কর এবং তোমাদের মধ্যে কেহ যেন পিছন দিকে না তাকায়; তোমাদের যেখানে যাইতে বলা হইতেছে তোমরা সেখানে চলিয়া যাও।” আমি তাহাকে এই বিষয়ে ফয়সালা জানাইয়া দিলাম যে, প্রত্যুষে উহাদের সমুলে বিনাশ করা হইবে। নগরবাসীগণ উল্লসিত হইয়া উপস্থিত হইল। সে বলিল, ‘উহারা আমার অতিথি; সুতরাং তোমরা আমাকে বেইযযত করিওনা। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ও আমাকে হেয় করিও না।” উহারা বলিল, “আমরা কি দুনিয়াসুদ্ধ লোককে আশ্রয় দিতে তোমাকে নিষেধ করিনাই ?” লূত বলিল, ” একান্তই যদি তোমরা কিছু করিতে চাও তবে আমার এই কণ্যাগণ রহিয়াছে”। তোমার জীবনের শপথ, উহারা তো মত্ততায় বিমূঢ় হইয়াছে। অত:পর সূর্যোদয়ের সময়ে মহানাদ উহাদেরকে আঘাত করিল; আর আমি জনপদকে উল্টাইয়া উপর নীচ করিয়া দিলাম এবং উহাদের উপর প্রস্তর-কংকর বর্ষণ করিলাম। অবশ্যই ইহাতে নিদর্শন রহিয়াছে পর্যবেক্ষণ-শক্তিসম্পন্ন ব্যাক্তিদের জন্য। উহা তো লোক চলাচলের পথিপার্শ্বে এখনও বিদ্যমান। অবশ্যই ইহাতে মুমিনদের জন্য রহিয়াছে নিদর্শন। (সুরা নাহল : ৬১-৭৭)।
নবীগণ হলেন নৈতিকতার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। তার বাড়িতে মেহমান এলো আর সেই মেহমানকে নোংরা উদ্দেশ্যে সেই জাতি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য আক্রমন পরিচালিত করেছিল। এ থেকেই অনুমান করা যায় যে, সেই জাতি কতটা নিম্নস্তরে নেমে গিয়েছিল। তাদের পশু প্রবৃত্তি কতটা নিকৃষ্ট হয়ে পড়েছিল। নির্লজ্জতা তাদেরকে কিভাবে গ্রাস করে ফেলেছিল এ ঘটনা থেকেই তা অনুমান করা যেতে পারে। একজন নবীর বাড়ীর মেহমান এর যখন জান, মাল ইজ্জতের কোন মূল্য তাদের কাছে ছিল না তাহলে সেই জাতির সাধারণ মানুষের জান মাল ইজ্জতের যে কানাকড়ি মূল্য ছিল না, এ ঘটনা হতে তা স্পষ্ট হয়ে যায়। তালমুদ গ্রন্থে এই সুদুম জাতির আরো বিচিত্র অপরাধের কথা উল্লেখ রয়েছে।
পোড়া মাটির বর্ষণ সম্পর্কে গবেষকগণ বলেন, হতে পারে তা পোড়া মাটিকে পাথরে রুপান্তরিত করে তা বৃষ্টির আকারে বর্ষণ করা হয়েছিল। অথবা উর্ধ্বগগন হতে পোড়া মাটির মত উল্কাপাত ঘটানো হয়েছিল। আবার এমন হতে পারে, আগ্নেয়গিরি অগ্নুৎপাতের ফলে তা মৃত্তিকাগর্ভ হতে বের হযে তাদের উপর চতুর্দিক হতে বৃষ্টির মত বর্ষিত হয়েছিল। অথবা একটা প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় তাদেরকে পরিবেষ্টন করেছিল এবং সেই ঝড় তাদের উপর পাথর বর্ষণ করেছিল।
ধ্বংস প্রাপ্ত এই এলাকাটি লোক চলাচলের পথের পাশে অবস্থিত, হিজাজ থেকে সিরিয়া এবং ইরাক হতে মিসর যাবার পথে এই ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকাটি দেখা যায়। সাধারণত বাণিজ্য যাত্রীদল এ ধ্বংসের নিদর্শনগুলো দেখে থাকে। বার্তমানেও সমগ্র এলাকা জুড়ে এ ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।
এবার সমকামিতা সম্বন্ধিয় কিছু হাদীস দেখি :-----
রাসূলে পাক (স:) এরশাদ করেন, “আমি তোমাদের সম্পর্কে সবচেয়ে বেশী যে বিষয়টির আশংকা করি, তা হচ্ছে কওমে লুতের জঘন্য কাজ”। অত:পর তিনি এই দুষ্কর্মে লিপ্তদেরকে এই বলে তিনবার অভিসম্পানত করেন: “কওমে লুতের দুষ্কর্ম যে করবে তার উপর আল্লাহর অভিসম্পাত”। (ইবনে মাজাহ, তিরমিযী, হাকেম)।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন : “কওমে লুত দশটি কুঅভ্যাসে অভ্যস্ত ছিল : (১) মেয়েরা পুরুষদের মত ছোট এবং পুরুষরা মোয়েদের মত বড় বড় চুল রাখা, (২) ছতর প্রকাশ করা, (৩) মাটির গুলাল চালানো, (৪) কংকর নিক্ষেপ করা, (৫) উড়ন্ত কবুতরের বাজি খেলা, (৬) আঙ্গুল মুখে পুরে শিস দেয়া, (৭) পায়ের হাটু বের করা বা গিরা ফোটানো, (৮) অহংকারের সাথে টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলানো।, (৯) মদ পান করা, (১০) পুরুষে পুরুষে সমকাম। এ উম্মতের মধ্যে অতিরিক্ত আরো একটি দুষ্কর্ম দেখা দেবে : নারীর সাথে নারীদের যৌন মিলন।
রাসূল (স:) বলেছেন, যৌন আবেগের সাথে নারীদের পারস্পরিক আলিঙ্গনও ব্যাভিচারের পর্যায়ভুক্ত। (তাবরানী)।
হযরত আবু হোরায়রা (রা:) বর্ণনা বনের, রাসূলে পাক (স:) বলেছেন : চার শ্রেনীর মানুষ সকাল সন্ধ্যা (অর্থাৎ সার্বক্ষণিকভাবে) আল্লাহর গযবের আওতায় থাকে। জানতে চাওয়া হলো : হে আল্লাহর রাসূল (স:) ! তারা কারা ? তিনি বললেন, নারীর বেশ ভুষা গ্রহণকারী পুরুষ, পুরুষের বেশ ভুষা গ্রহণকারী নারী, পশুর সাথে যৌন সঙ্গমকারী এবং কওমে লুতের আচরণকারী অর্থাৎ সমকামী। (তাবরানী, বায়হাকী)
আরেক হাদীসে হযরত রাসূলে পাক (স:) এরশাদ করেন : সাত শ্রেনীর মানুষের উপর আল্লাহ অভিশাপ বর্ষন করেন, হাশরের দিন আল্লাহ পাক তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদেরকে বলবেন : “তোমরা জাহান্নামীদের সাথে প্রবেশ কর।” তারা হচ্ছে (১) সমকামী, (২) যার সাথে সমকাম করা হয়, (৩) পশুর সাথে সঙ্গমকারী, (৪) কোন মহিলা ও তার মেয়েকে একত্রে বিয়েকারী, (৫) বোনের সাথে ব্যাভিচারী, (৬) কণ্যার সাথে ব্যাভিচারি, (৭) হস্ত মৈথুনকারী। তবে তওবা করলে আল্লাহ পাক মাফ করতে পারেন।”
রাসূল (স:) বলেছেন, “যে লোক সমকাম কিংবা মহিলাদের মলদ্বার দিয়ে যৌন সঙ্গম করবে, (হাশরের দিন) আল্লাহ পাক তার দিকে ফিরেও তাকাবেন না। (তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে হোব্বান)।
কামভাবের সাথে কোন মাহিলা কিংবা সুদর্শন তরুনের দিকে তাকানোও ব্যাভিচারের পর্যায়ভুক্ত। কেননা পূর্বোল্লিাখিত রাসূল (স:) এর এক হাদীসে আছে, “লালসার দৃষ্টি চোখের ব্যাভিচার, লালসার বাক্যালাপ জিহ্বার ব্যাভিচার, কামভাবে স্পর্শ করা হাতের ব্যাভিচার, এ উদ্দেশ্যে হেটে যাওয়া পায়ের ব্যাভিচার, অশ্লিল কথাবার্তা শুনা কানের ব্যাভিচার, কামনা বাসনা মনের ব্যভিচার, গুপ্তাঙ্গ – যা বাস্তবে রুপদান করে কিংবা দমন করে”। (বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী)।
“কোন পুরুষ যখন কোন মাহিলার সাথে নিভৃতে অবস্থান করে শয়তান তখন তৃতীয় ব্যাক্তি হিসেবে সেখানে অবস্থান করে। ” (তিরমিযী, তাবরানী)।
আল্লাহ পাক আমাদেরকে ধর্ম মেনে নৈতিকতার অনুশীলন করে সচ্চিরিত্রবান মুসলিম হয়ে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি অর্জন করার তৌফিক দান করুন।
(সংগৃহীত)


                           ----------------------------------------------------------------------------------
                         '' শুধু নিজে শিক্ষিত হলে হবেনা, প্রথমে বিবেকটাকে শিক্ষিত করুন। ''
Widget ByBlogger Maruf
Widget ByBlogger Maruf