হজ্জ আল্লাহ প্রেম ও বিশ্ব মুসলিমের ভ্রাতৃত্ববন্ধনের অন্যতম পথ। হজ্জ বিশ্ব মুসলিমের সামাজিক, রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক ঐক্যের এক অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটি আল্লাহর নির্দেশিত এমন একটা ফরয বিধান, যা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ পঞ্চম স্তম্ভ এবং ইসলামের অপরাপর বিধান থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। হজ্জে আর্থিক ও কায়িক শ্রমের সমন্বয় রয়েছে, যা অন্য কোন ইবাদতে একসঙ্গে পাওয়া যায় না। হজ্জ সারা বিশ্বের সহীহ মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও সাম্যের প্রতীক। যার ওপর হজ্জ ফরয তাকে অবশ্যই হজ্জ আদায় করতে হবে। ৮ যিলহজ্জ থেকে ১২ যিলহজ্জ পর্যন্ত এই ৫ দিনে মক্কা মুকাররমা ও তার আশে পাশের কয়েকটি জায়গায় (মক্কায় তাওয়াফ, সাফা-মারওয়ায় সায়ী, মিনার তাঁবুর জীবন, আরাফাতের বিশাল প্রান্তরে অবস্থান, মুজদালিফায় রাত্রি যাপন আবার মিনাতে প্রত্যাবর্তন, জামরাগুলোতে কংকর নিক্ষেপ, মিনাতে পশু কুরবানী, আবার ক্বাবা তাওয়াফ, সাফা-মারওয়ায় সায়ী ইত্যাদি) কিছু কর্তব্য কার্য সম্পাদন করাকে ইসলামের পরিভাষায় হজ্জ বলা হয়।‘হজ্জ’অর্থ কছদ, সংকল্প।
হজ্জের আভিধানিক অর্থ হলো যিয়ারতের এরাদা করা। শরীয়তের পরিভাষায় হজ্জের অর্থ কতক কার্যক্রম সম্পাদন করার উদ্দেশ্যে ইহ্রামের সাথে বায়তুল্লাহ জেয়ারতের সংকল্প। অর্থাৎ আল্লাহকে রাজি খুশী করার উদ্দেশ্যে শরীয়তের বিধান অনুসারে হজ্জের ইহ্রাম বেঁধে বায়তুল্লাহ শরীফসহ নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানসমূহে, নির্দিষ্ট কর্মসমূহ সুনির্দিষ্ট পন্থায় সম্পাদন (যিয়ারত) করাকে ইসলামের পরিভাষায় হজ্জ বলা হয়। হজ্জ একাধারে আর্থিক,শারীরিক ও মানসিক এবাদত। এতে অর্থ ব্যয় হয়, শারীরিক পরিশ্রম হয়, পরিবার পরিজনের মায়া ত্যাগ করার মত মানসিক কষ্টও রয়েছে। ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে পবিত্র মক্কা শরীফে যাতায়াতের খরচ বহন এবং ওই সময় স্বীয় পরিবারের ব্যয়ভার নির্বাহে সক্ষম, দৈহিকভাবে সামর্থ, প্রাপ্তবয়স্ক জ্ঞানবান প্রত্যেক সহীহ মুসলিম নর-নারীর ওপর জীবনে একবার হজ্জ ফরয। সঠিকভাবে হজ্জব্রত আদায়কারীকেও দেয়া হয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ। একবার হজ্জ করা ফরজ। একবারের বেশী করলে সেটা নফল।
ইসলামী ইবাদতসমূহের মধ্যে হজ্জের গুরুত্ব অপরিসীম। নি¤েœ কোরআন, হাদীস ও শরীয়তের দৃষ্টিতে হজ্জের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো।
হজ্জের উদ্দেশ্য
হজ্জের উদ্দেশ্য হলো সারা বিশ্বের সহীহ মুসলিমদের সম্মিলিত করার মাধ্যমে আল্লাহর হুকুম পালন ও তাদের কল্যাণ সাধন করা। এক কথায় শিরক পরিহার করে আল্লাহকে একমাত্র প্রভু হিসেবে স্বীকার করে নেয়া। হজ্জ অনুষ্ঠান বিশ্ব সহীহ মুসলিম ঐক্য-সংহতি ও ভ্রাতৃত্বের এক অপূর্ব নিদর্শন। হজ্জের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহকে রাজি খুশী করা। তালবিয়া ঘোষণার মাধ্যমে তাওহীদ ভিত্তিক জীবন যাপন করতে অঙ্গীকার বদ্ধ হওয়া।
কোরআনের আলোকে হজ্জের গুরুত্ব
১. আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও ওমরাহ পরিপূর্ণভাবে পালন কর। (সূরা আল বাকারা-আয়াত-১৯৬)
২. মক্কার কা’বা ঘরই দুনিয়ায় প্রথম হেদায়েতের কেন্দ্র, মহান আল্লাহর ঘোষণা: “মানব জাতির সর্বপ্রথম যে গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা তো বাক্কায় (মক্কার আরেক নাম বাক্কা), তার বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারী” (সূরা আল ইমরান-৯৬)
৩. সার্বিক নিরাপত্তার স্থান কা’বা ঘর: মহান আল্লাহ বলেন:“তাতে অনেক সুষ্পষ্ট নিদর্শন আছে যেমন মাকামে ইব্রাহীম; এবং যে কেউ সেথায় প্রবেশ করে সে নিরাপদ”। (সূরা আল ইমরান-৯৭)
৪. প্রত্যেক সামর্থবান মুসলিমের জীবনে একবার হজ্জ করা অবশ্য কর্তব্য বা ফরয:মহান আল্লাহর নির্দেশ “মানুষের মধ্যে যার সেখানে পৌছাঁর সামর্থ আছে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ্জ করা তার অবশ্য কর্তব্য এবং কেউ (অর্থাৎ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্জ করতে আসবে না) প্রত্যাখ্যান করলে সে জেনে রাখুক যে,আল্লাহ সমগ্র সৃষ্টিজগতের মুখাপেক্ষী নহেন।” (সূরা আল ইমরান-আয়াত-৯৭)
৫. যখন ইব্রাহীমের জন্য এই ঘরের স্থান ঠিক করেছিলাম একথা বলে যে, এখানে কোন প্রকার শিরক করো না এবং আমার ঘরকে তাওয়াফকারী ও নামাযীদের জন্য পাক-সাফ করে রাখ। আর লোকদেরকে হজ্জ করার জন্য প্রকাশ্যভাবে আহ্বান জানাও। তারা যেন এখানে পায়ে হেঁটে আসুক কিংবা দূরবর্তী স্থান থেকে কৃশ উটের পিঠে চড়ে আসুক। এখানে এসে তারা যেন দেখতে পায় তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের কত সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর দেয়া জন্তুগুলোকে আল্লাহর নামে কুরবানী করবে। তা থেকে নিজেরাও খাবে এবং দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত লোকদেরও খেতে দেবে। (সূরা আল হজ্জ : ২৬-২৮)
৬. নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই যে ব্যক্তি আল্লাহর ঘরের হজ্জ অথবা ওমরাহ করবে,এই দুই পাহাড়ের মাঝে দৌঁড়ানো তার জন্য কোন গুনাহর কাজ হবেনা (বরং সওয়াবের কাজ হবে)। (সূরা আল বাকারা ১৫৮)
৭. আমরা মানুষের জন্য কিরূপে বিপদশূন্য ও শান্তিপূর্ণ হেরেম তৈরী করেছি তা কি তারা দেখতে পারেনি। অথচ তার চারপাশে লোক লুণ্ঠিত ও ছিনতাই হয়ে যেত। (সূরা আল আনকাবুত : ৬৭) অর্থাৎ আরবের চারদিকে যখন লুট-তরাজ, মারপিট, দাঙ্গা হাঙ্গামা ও যুদ্ধ-বিগ্রহ ইত্যাদি অশান্তির সয়লাব বয়ে যেত তখনও এই হেরেমে সর্বদা শান্তি বিরাজ করতো। এমন কি দুর্ধর্ষ মরু বেদুঈন যদি এর সীমার মধ্যে তার পিতৃহত্যাকেও দেখতে পেত, তবু এর মধ্যে বসে তাকে স্পর্শমাত্র করতে সাহস পেত না।
৮. এবং স্মরণ কর, যখন আমরা এ ঘরকে লোকদের কেন্দ্র ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল বানিয়ে ছিলাম এবং ইব্রাহীমের ইবাদতের স্থানকে মুসাল্লা (জায়নামায) বানাবার নির্দেশ দিয়েছিলাম। আর তাওয়াফকারী অবস্থানকারী এবং নামাযীদের জন্য আমার ঘরকে পাক ও পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে নির্দেশ দিয়েছিলাম। পরে যখন ইব্রাহীম দু’আ করলো হে পালন কর্তা! আপনি এই শহরকে শান্তিপূর্ণ জনপদে পরিণত করুন এবং এখানকার অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী তাদের জন্য ফল-মূল দ্বারা জীবিকার সংস্থান করে দিন। (সূরা আল বাকারা ১২৫-১২৬)
৯. এবং স্মরণ কর ইব্রাহীম ও ইসমাঈল যখন এই ঘরের ভিত্তি স্থাপনকালে দু’আ করেছিল; হে আমাদের রব। আমাদের এ চেষ্টা কবুল কর। তুমি সব কিছু জান ও সব কিছু শুনতে পাও। হে আমাদের পালন কর্তা। তুমি আমাদের দু’জনকেই সহীহ মুসলিম অর্থাৎ তোমার অনুগত কর এবং আমাদের বংশধর থেকে এমন একটি জাতি তৈরী কর যারা একান্তভাবে তোমারই অনুগত হবে। আমাদেরকে তোমার ইবাদত করার পন্থা বলে দাও, আমাদের প্রতি ক্ষমার দৃষ্টি নিক্ষেপ কর। তুমি বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়াময়। হে পরওয়ারদিগার! তুমি সে জাতির প্রতি তাদের মধ্য থেকে এমন একজন রাসূল পাঠাও যিনি তাদেরকে তোমার বাণী পড়ে শুনাবে। তাদেরকে কিতাব ও জ্ঞানের শিক্ষা দিবে এবং তাদের চরিত্র সংশোধন করবে। নিশ্চয় তুমি সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পন্ন এবং বিজ্ঞ।” (সূরা আল বাকারা : ১২৭-১২৯)
১০.এবং স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম দু’আ করেছিল-হে আল্লাহ! এ শহরকে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ বানিয়ে দাও। আমাকে এবং আমার সন্তানকে মূর্তি পূজার শিরক থেকে বাঁচাও। হে আল্লাহ! এ মূর্তিগুলো অসংখ্য লোককে গুমরাহ করেছে। অতএব, যে আমার পন্থা অনুসরণ করবে সে আমার আর যে আমার পন্থার বিপরীত চলবে তখন তুমি নিশ্চয় বড় ক্ষমাশীল ও দয়াময়। পরওয়ারদিগার! আমি আমার বংশধরদের একটি অংশ তোমার এই মহান ঘরের একটি এ ধূসর মরুভূমিতে এনে পুনর্বাসিত করেছি। এ উদ্দেশ্যে যে, তারা নামাযের ব্যবস্থা কায়েম করবে। অতএব হে আল্লাহ। তুমি লোকদের মনে এতদূর উৎসাহ দাও যেন তারা এদের দিকে দলে দলে চলে আসে এবং ফল-মূল দ্বারা তাদের জীবিকার ব্যবস্থা কর। হয়ত এরা তোমার কৃতজ্ঞ বান্দা হবে। (সূরা ইব্রাহীম-৩৫-৩৬)
১১. কুরাইশদের মনোবাঞ্ছনা পূরণের কারণে, তথা শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন বাণিজ্য সফরসমূহে তাদের বিশেষ মর্যাদার কারণে। অতএব তাদের উচিৎ তারা যেন এ ক্বাবা গৃহের প্রতিপালকের ইবাদতে নিবেদিত হয়, যিনি তাদেরকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিয়ে আহার্য সরবরাহ করেছেন এবং ভয় ভীতি হতেও দিয়েছেন পরিত্রাণ। (সূরাতুল ফীল)
১২. আর তোমরা যেখানেই থাকনা কেন আর মসজিদ আল হারামের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করবে। (সূরা আল ইমরান-১৪৪)
১৩. আল্লাহ কা’বা তথা পবিত্র গৃহকে মানবগোষ্ঠীর অস্তিত্বের জন্য রক্ষাকবচ করেছেন। আর সম্মানিত মাস, কুরবানীর উদ্দেশ্যে নিবেদিত জন্তু ও এজন্তুর গলায় স্থাপিত চিহ্নসমূহকেও। ইহা এজন্যই যে তোমরা যেন জ্ঞাত হও যে আল্লাহ তা’আলা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু ঘটছে তার সকল বিষয়ে জ্ঞান রাখেন এবং আল্লাহ হচ্ছেন সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞা। (সূরা মায়েদা-৯৭)
হাদীসের আলোকে হজ্জের গুরুত্ব
ক. হজ্জ কখন কাদের উপর ফরজ
১. রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী হলো-ইসলামের বুনিয়াদ পাঁচটি: আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই আর মুহাম্বাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য দেয়া, সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, হজ্জ সম্পন্ন করা ও রমযানের সাওম আদায় করা। (সহীহ আল বুখারী-৮ ও মুসলিম-১১৩)
২. প্রতিটি স্বাধীন, সুস্থ, বালেগ, বুদ্ধিমান ও সামর্থ্যবান মুসলিমের ওপর জীবনে কমপক্ষে একবার কা’বাঘরের হজ্জ আদায় করা ফরয। হযরত ওমার ইবনুল খাত্তাব ও আবু হুরায়রা রাদিয়াআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তারা বলেন:“একবার রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সামনে খুতবা প্রদান উপলক্ষে বলেছিলেন। লোক সকল! তোমাদের উপর যে হজ্জ অবশ্যই ফরজ করা হয়েছে, তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। সুতরাং তোমরা হজ্জ আদায় কর। তখন জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন, প্রতি বছরই কি আমাদের ওপর হজ্জ আদায় করা ফরয? রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাব না দিয়ে চুপ থাকলেন। প্রশ্নকারী তার প্রশ্ন তিনবার পুনরাবৃত্তি করলো। এরপর আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম তবে তোমাদের ওপর প্রতি বছর হজ্জ করা ফরয হয়ে যেতো, যা তোমরা পালন করতে পারতে না। (সহীহ মুসলিম-৩২৫৭)
৩. যে ব্যক্তি ভরন পোষণ জোগানোর পর হজ্জে যাওয়ার সামর্থ রাখে তার উপর আল্লাহ পাক হজ্জকে ফরজ করেছেন। (সহীহ মুসলিম)
৪. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) থেকে বর্ণিত এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে হাজীর হয়ে নিবেদন করল, হজ্জ কখন ফরজ হয়? রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন যখন পবিত্র মক্কা পর্যন্ত যাতায়াতের পথ খরচ ও যানবাহনের ব্যবস্থা হয়ে যায়। (ইবনে মাজাহ ও তিরমিযী)
অধিকাংশ ফকীহদের মতে শর্তাবলী পুরণ হলে সাথে সাথেই হজ্জ আদায় করা ফরয। সেক্ষেত্রে বিলম্ব করার কারণে গুনাহগার হতে হবে।
খ. হজ্জ পালনকারীদের দায়িত্ব আল্লাহর
১. আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা তিন ব্যক্তির দায়িত্ব গ্রহণ করেন: (ক) যে ব্যক্তি আল্লাহর কোন মসজিদের উদ্দেশে বের হয় (খ) যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করতে বের হয় (গ) যে ব্যক্তি হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হয়।
গ. মাবরুর হজ্জের বিনিময় হলো জান্নাত
১. জাবির (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মাবরুর হজ্জের প্রতিদান কেবল জান্নাত। (মুসনাদে আহমদ)
২. হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এক ওমরাহ হতে অন্য ওমরাহ এ দুয়ের মধ্যে যা কিছু গুনাহ হবে তার কাফফারা। আর মাবরুর হজ্জের বিনিময় জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়। (সহীহ আল সহীহহাদীস নং-১৭৭৩ ও মুসনাদে আহমাদ-২/২৪৬)
৩. আবু দারদা (রা:) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; এক ওমরাহ হতে আরেক ওমরাহ-এর মধ্যবর্তী গুনাহের কাফফারা এবং কবুল হজ্জের একমাত্র বিনিময় হলো জান্নাত। (সহীহ মুসলিম)
৪. হযরত বিবি উম্মে সালমা (রা:) বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি বায়তুল মাকদাস হতে (মক্কার) বায়তুল হারামের দিকে হজ্জ বা ওমরাহর ইহরাম বাঁধে, তার পূর্বের বা পরের গুনাহ মাফ করা হবে। অথবা তিনি বলেছেন, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।
৫. রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: বিশুদ্ধ মকবুল একটি হজ্জ পৃথিবী ও পৃথিবীর মধ্যকার সব বস্তু থেকে উত্তম। বেহেশত ছাড়া আর কোন কিছুই এর বিনিময় হতে পারে না। (সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম)
ঘ. হজ্জ গুনাহমোচন করে
১. হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ্জ করলো, অতঃপর অশ্লীলতা এবং গুনাহের কাজ পরিহার করলো সে যেন সে দিনের মতো নিষ্পাপ অবস্থায় (নিজ ঘরে) ফিরে আসলো যে দিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল। (সহীহ আল বুখারী-১৪২৪)
২. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি হজ্জ করে, তার মধ্যে বাজে কথা বলে না এবং কোন গুনাহর কাজও করে না, সে নিজের গুনাহ থেকে এমনভাবে মুক্ত ও পবিত্র হয়ে ফিরে যায়, যেন তার মা তাকে (এখনই) প্রসব করেছেন।
৩. ওমরাহর জন্য ও বড় সওয়াবের ওয়াদা রয়েছে। হাদীসে আছে হজ্জ এবং ওমরাহ উভয় গুনাহগুলোকে এমন ভাবে দূর করে দেয়, যেমন আগুন লোহার মরিচাকে দূর করে দেয়।
৪.হযরত আমর বিন আল-আস হতে বণিত; রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইসলাম গ্রহণ যেমন অতীত জীবনের গুনাহসমূহ নিশ্চিহ্ন করে দেয়; তেমনি হজ্জ পালন অতীতের সব পাপ মোচন করে দেয়। (বায়হাকী)
৫. হযরত আমর ইবনুল আস (রা:) বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হে আমর কেউ যদি ইসলামে দীক্ষিত হয়! তবে ইতোপূর্বে কৃত তার সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়। আর হিজরত দ্বারা ইতোপূর্বে কৃত সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়। তেমনি হজ্জ ইতোপূর্বে কৃত সমস্ত গুনাহ শেষ করে দেয়। (সহীহ মুসলিম)
ঙ. হজ্জ ও ওমরাহকারী হলো আল্লাহর প্রতিনিধি
১. আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহর পথের মুজাহিদ এবং হজ্জ ও ওমরাহকারী হলো আল্লাহর প্রতিনিধি। তারা যদি আল্লাহকে ডাকে আল্লাহ তাদের ডাকে সাড়া দেন। আর তারা যদি গুনাহ মাফ চায় আল্লাহ তাদের গুনাহ মাফ করে দেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ)
২. অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, হজ্জ ও ওমরাহকারীরা হলো আল্লাহর প্রতিনিধি। তারা আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন আর আল্লাহও তাদের প্রার্থনা কবুল করেন। (মুসনাদে বাযযার)
৩. হযরত আবু হুরায়রা (রা:) রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: হজ্জ ওমরাহকারীরা হচ্ছে আল্লাহর দাওয়াতী যাত্রীদল। অতএব তারা যদি তাঁর নিকট প্রার্থনা করেন তবে তিনি তা কবুল করেন এবং যদি ক্ষমা চান তবে তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। (ইবনে মাজাহ-২৮/৮৩)
চ. সর্বোত্তম আমল হজ্জ
১.আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন। জিজ্ঞাসা করা হলো, এরপর কী? বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। বলা হলো এরপর? তিনি বললেন, মাবরুর হজ্জ। (সহীহ আল বুখারী-১৪২২)
২. উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করি। তাহলে আমরা (নারীরা) কি জিহাদ করব না? নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না। তোমাদের জন্য উত্তম জিহাদ হলো মাবরুর হজ্জ। (সহীহ আল বুখারী)
৩. সর্বোত্তম আমল কী এ ব্যাপারে এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন। উত্তরে বললেন, অদ্বিতীয় আল্লাহর প্রতি ঈমান, ও তারপর মাবরুর হজ্জ যা সকল আমল থেকে শ্রেষ্ঠ। সূর্য উদয় ও অস্তের মধ্যে যে পার্থক্য ঠিক তারই মত। (মুসনাদে আহমাদ-৪/৩৪২)
৪. অন্য এক হাদীসে এসেছে, উত্তম আমল কি এই মর্মে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো। উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান। বলা হল, তারপর কী? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ। বলা হল তারপর কোনটি? তিনি বললেন, মাবরুর হজ্জ।
৫. রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে হজ্জ গুনাহ এবং অন্যান্য খারাবি থেকে পবিত্র হবে, তার পুরষ্কার বেহশত ছাড়া অন্য কিছুই নয়। হজ্জ অতি উত্তম ইবাদত।
৬. মাবরুর হজ্জ ঐ হজ্জকে বলা হয় যে হজ্জের সাথে কোন গুনাহের কাজের সংমিশ্রণ হয় না। (ফিকহুস সুন্নাহ-১/৫২৭)
ছ. জেহাদের মর্যাদা
১. উম্মে সালমা (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, হজ্জ হলো প্রত্যেক দুর্বলের জিহাদ। (সুনানে ইবনে মাজাহ)
২. হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন : রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি হজ্জ, ওমরাহ অথবা আল্লাহর রাস্তায় জেহাদের নিয়তে বের হয়, অতঃপর ঐ পথে মারা যায়, তার আমলনামায় গাজী, হাজী বা ওমরাহকারীর সওয়াব লেখা হয়। (বায়হাকী)
৩. হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীস: তিনি বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম- হে আল্লাহ রাসূল মহিলাদের ওপর কি জিহাদ ফরয? তিনি জবাবে বললেন, হ্যাঁ, তাদের ওপর এমন জিহাদ ফরয যাতে কিতাল ((রক্তপাত) নেই, আর তা হলো হজ্জ ও ওমরাহ। ইমাম আহমদ-২৫৩২২, ইবনে মাজাহ-২৯০১-এর দ্বারা জীবনে একবার ওমরাহ করাও ফরয় হওয়ার দলিল দিয়েছেন।
জ. অন্যান্য সওয়াব
১. হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“আল্লাহ আরাফাহ’র দিন এতো সংখ্যক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন যা অন্য কোন দিন দেন না। এদিন আল্লাহ তা’আলা নিকটবর্তী হন ও আরাফাহ ময়দানে অবস্থানরত হাজীদেরকে নিয়ে তিনি ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন ও বলেন - ‘ওরা কী চায়?’ (সহীহ মুসলিম-১৪৮)
২. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোনো মুমিন যখন ইহরামের হালতে দিন কাটাবে তখন সূর্য তার সব গুনাহ নিয়ে অস্ত যাবে। আর কোনো সহীহ মুসলিম যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ্জের তালবিয়া পাঠ করবে তখন তার ডানে-বামে পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সবকিছু তার পেস্যা দেবে। (জামে তিরমিযি হাদিস-৮১০; তারগির, হাদিস-১৭০৩)
৩. রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ক্বাবা গৃহের উপর প্রত্যহ একশত বিশটি রহমত নাযিল হয়। ষাটটি তাওয়াফকারীদের জন্য, চল্লিশটি নামাজ আদায়কারীদের জন্য এবং বিশটি দর্শকদের জন্য।
৪. রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মক্কা থেকে পাঁয়ে হেঁটে হজ্জব্রত পালন করে পুনরায় মক্কায় ফিরে আসেন তাঁর প্রতি কদমে হারাম শরীফের সওয়াবের সাতশত সওয়াব লেখা হয় এবং হারাম শরীফের প্রতিটি সওয়াবের পরিমাণ হচ্ছে লাখ গুণ।
৫. সাহল বিন সা’দ (রা:) হতে বির্ণিত; রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন মুসলমান যখন তালবিয়া (লাব্বাইকা................) বলে তখন তার ডান ও বাম পার্শ্বে প্রতিটি পাথর, গাছ ও বালুকণা তার সাথে তালবিয়া পড়তে থাকে, যতদূর পর্যন্ত তার কণ্ঠস্বর পৌঁছে। (তিরমিযি)
ঝ. হজ্জ ও ওমরাহ দারিদ্রতা দূর করে
১. রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যিনি হজ্জ করেন তিনি কখনো দরিদ্র হন না। (সহীহ মুসলিম)
২. হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) বলেন: রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হজ্জ ও ওমরাহ এক সাথে করো। কেননা এ দু’টি ইবাদত দারিদ্রতা ও গুনাহদূর করে, যেভাবে হাপর লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা দূর করে। কবুল হজ্জের সওয়াব জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়। (তিরমিযি ও নাসায়ী)
৩. ইবনে মাসউদ (রা:) হতে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, তোমরা পর পর হজ্জ ও ওমরাহ আদায় করো। কেননা তা দারিদ্রতা ও পাপকে সরিয়ে দেয় যেমন সরিয়ে দেয় কামারের হাপর লৌহ-স্বর্ণ-রূপার ময়লাকে। আর হজ্জে মাবরুর সওয়াব তো জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়। (সহীহ ইবনে খুজাইমাহ-৪/১৩০)
৪. হযরত ইবনে ওমর (রা:) হতে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোন হাজীর সাথে সাক্ষাতের সময় তাকে সালাম দেবে, মোসাফাহ করবে, তোমার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করতে বলবে। কেননা হাজীগণ ক্ষমাপ্রাপ্ত। (তিরমিযি)
৫. হযরত আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ফিরিশতাগণ যানবাহনে আরোহী হাজীদের সাথে মোসাফাহ করেন এবং পদচারী হাজীদের সাথে আলিঙ্গন করেন। (মিশকাত)
ঞ. সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ পালন না করার পরিণতি
১. হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্তকবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ করল না, বা হজ্জকে উপেক্ষা করল, সে ইয়াহুদি হয়ে মরল না নাসারা হয়ে মরল তাতে আল্লাহ তায়ালার কোন কিছু আসে যায় না। (তিরমিযি)
২. রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, “যার কোন প্রকাশ্য অসুবিধা নেই, কোন যালিম বাদশাও যার পথ রোধ করেনি এবং যাকে কোন রোগ অসমর্থ করে রাখেনি এতদসত্ত্বেও সে যদি হজ্জ না করে মারা যায় তাহলে সে ইয়াহুদী বা খ্রিষ্টান হয়ে মরতে পারে।” (দায়েমী)
৩. হযরত ওমর ফারুক (রা:) এ ব্যাখ্যায় বলেছেন: সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যারা হজ্জ করে না তাদের ওপর জিযিয়া কর আরোপ করতে ইচ্ছে হয়; কারণ তারা, মুসলমান নয়।
সুতরাং হাদীসের শিক্ষাই হচ্ছে হজ্জ ফরজ হওয়ার পর কেউ কোন ওযর ব্যতিত হজ্জ পালন না করে মারা গেলে সে ইসলামের গন্ডি থেকে বেরিয়ে গেল। একথা প্রমাণিত হলো যে, ইসলামে হজ্জ অবহেলা করার কোন বিষয় নয় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যিযিয়ার বিষয়টি আরো গুরুত্বপূর্ণ। হজ্জ ফরজ হওয়ার পর হজ্জ না করলে সহীহ মুসলিম থাকারই সুযোগ থাকবে না। হজ্জ পালন করা মহান আল্লাহর নির্দেশ। হজ্জ পালন করার মাধ্যমে যেহেতু আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ আদায় করা হয়ে থাকে, সেহেতু এর মাধ্যমে তাঁর সন্তুুষ্টি অর্জনও ত্বরান্বিত হয়। আর তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারলে পরকালীন মুক্তি অর্জন অবশ্যই সম্ভব হবে।
শরীয়তের দৃষ্টিতে হজ্জের বিধান
* ক্ষমতা ও সামর্থ্যবান লোকদের জন্য জীবনে একবার হজ্জ করা ফরজ।
* হজ্জ পরিত্যাগকারীর প্রতি ভর্ৎসনা করা হয়েছে।
* হজ্জ ফরয হওয়ার পর অবহেলা করা চরম দুর্ভাগ্যের বিষয়। এহেন লোকদের প্রতি হাদিস শরীফে কঠোর শাস্তির ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। জীবনের কোন নিশ্চয়তা নাই। সুতরাং অনতিবিলম্বে তা আদায় করা কর্তব্য।
উপরে উল্লেখিত কোরআন, হাদীস ও শরীয়তের দৃষ্টিতে বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট। তাই হজ্জ পালনেচ্ছু প্রতিটি ব্যক্তিরই উচিত পবিত্র হজ্জের এই ফজিলতসমূহ পরিপূর্ণভাবে পাওয়ার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাওয়া। হজ্জ কবুল হওয়ার সকল শর্ত পূর্ণ করে সমস্ত পাপ বা গুনাহ থেকে মুক্ত থেকে আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হজ্জ পালন করা।
হজ্জ ফরয হওয়ার শর্ত ৮টি : ১) মুসলমান হওয়া ২) বালেগ হওয়া। ৩) বুদ্ধিমান হওয়া ৪) স্বাধীন হওয়া ৫) হজ্জের সময় হওয়া ৬) সম্পদশালী হওয়া (হজ্জ আদায় করার মত সামর্থ যোগ্য) ৭) সুস্থ থাকা ৮) যাতায়াতের পথ নিরাপদ হওয়া ।
মাসআলা
১. কারও যদি আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকে, কিন্তু তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হন-এমতাবস্থায় তিনি কাউকে দিয়ে বদলি হজ্জ করাবেন।
২. মক্কা মুকাররমাহ ও তার আশে পাশে-যেমন জেদ্দা, তায়েফ প্রভৃতি এলাকায় চাকুরি বা ব্যবসার উদ্দেশ্যে যারা আসবেন তাদের ওপর হজ্জ ফরয। নিজ নিজ সময় ও সুবিধা মতো তারা এ দায়িত্ব পালনে বাধ্য থাকবেন ।
৩. সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আবদুল আজিজ আ’ল শেখের মতে-কোন বয়স্কা মহিলার সঙ্গে যদি মাহরাম না থাকে, এমতাবস্থায় বিশ্বস্ত মহিলাদের সাথে তিনি হজ্জ করতে পারবেন। তবে শর্ত হলো তার সফরের নিরাপত্তার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।
হজ্জ তিন প্রকার
১) হজ্জে ইফরাদ
২) হজ্জে কেরান
৩) হজ্জে তামাত্তু
১। হজ্জে ইফরাদ : হজ্জের সাথে ওমরাহ না করে শুধু হজ্জ করাকে ইফরাদ হজ্জ বলে।
* মীকাত থেকে শুধু হজ্জের নিয়তে (বর্ণিত নিয়মে) ইহরাম বাঁধুন।
* মক্কা শরীফ পৌঁছে তাওয়াফে কুদুম (আগমনী তাওয়াফ) করুন।
* ইচ্ছা করলে এ তাওয়াফের পর সায়ী করুন। সে ক্ষেত্রে হজ্জের ফরজ-তাওয়াফের পর আর সায়ী করতে হবে না।
* তাওয়াফ ও সায়ী করার পর চুল ছাঁটবেন না।
* তাওয়াফে কুদুমের পর ইহরাম অবস্থায় হজ্জের অপেক্ষায় থাকুন।
* ৮ যিলহজ্জ একই ইহরামে মিনা-আরাফাহ গমন ও হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা।
বি: দ্র: ইফরান হজ্জ পালনকারীকে কুরবানী করতে হয়না। তাই ১০ যিলহজ্জ কংকর নিক্ষেপের পর মাথা মুন্ডন করে হজ্জ থেকে হালাল হয়ে যান।
২। হজ্জের ক্বিরান : ওমরাহর সাথে যুক্ত করে একই ইহরামে ওমরাহ ও হজ্জ আদায় করাকে ক্বিরান হজ্জ বলে।
ক্বিরান হজ্জ দু’ভাবে আদায় করা যায়।
এক. ১-১) মীকাত থেকে এহরাম বাঁধার সময় হজ্জ ও ওমরাহ উভয়টার নিয়ত করে ইহরাম বাঁধুন।
১-২) মক্কায় পৌঁছে প্রথমে ওমরাহ ও সায়ী আদায় করুন। তবে এরপর চুল ছাঁটবেন না।
১-৩) ইহরাম অবস্থায় মক্কায় অবস্থান করুন।
১-৪) ৮ যিলহজ্জ একই ইহরামে মিনা-আরাফাহ গমন ও হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা।
দুই. ২-১) মীকাত থেকে শুধু ওমরাহর নিয়তে ইহরাম বাঁধুন।
২-২) পবিত্র মক্কায় পৌঁছার পর তাওয়াফ শুরু করার পূর্বে হজ্জের নিয়ত ওমরাহর সাথে যুক্ত করে নেন।
২-৩) ওমরাহর তাওয়াফ ও সায়ী শেষ করুন, তবে এরপর চুল ছাঁটবেন না।
২-৪) ইহরাম অবস্থায় হজ্জের অপেক্ষায় থাকুন।
২-৫) ৮ যিলহজ্জ একই ইহরামে মিনা-আরাফাহ গমন ও হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা।
২-৬) মক্কাবাসীদের জন্য ক্বিরান হজ্জ নেই। যেহেতু তারা হারামের সীমানার ভেতরে অবস্থান করছেন, সেহেতু তাদের ক্বিরান হজ্জ করতে হয় না।
বি: দ্র: ক্বিরান হজ্জ পালনকারীদের কুরবানী করতে হয়। তাই ১০ যিলহজ্জ কংকর নিক্ষেপের পর কুরবানী করে মাথা মুন্ডন করে হজ্জ থেকে হালাল হয়ে যান।
৩। হজ্জে তামাত্তু : এ হজ্জের জন্য পৃথকভাবে প্রথমে ওমরাহ ও পরে হজ্জ আদায় করাকে তামাত্তু হজ্জ বলে।
তামাত্তু হজ্জ তিনভাবে করা যায়।
এক. ১-১. তামাত্তু হজ্জ পালনকারীগণ মীকাত থেকে প্রথমে ওমরাহর ইহরাম বাঁধুন।
১-২. মক্কায় পৌঁছে প্রথমে ওমরাহর তাওয়াফ ও সায়ী আদায় করুন।
১.৩. তারপর মাথা মুন্ডন করে হজ্জ থেকে হালাল হয়ে যান।
১-৪. হজ্জের আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন।
দুই. ২-১. তামাত্তু হজ্জ পালনকারীগণ মীকাত থেকে প্রথমে ওমরাহ’র ইহরাম বাঁধুন।
২-২. মক্কায় পৌঁছে প্রথমে ওমরাহর তাওয়াফ ও সায়ী আদায় করুন।
২-৩. তার পর মাথা মুন্ডন করে হজ্জ থেকে হালাল হয়ে যান।
২-৪. হজ্জের আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন।
২-৫. হজ্জের পূর্বে মদীনা যিয়ারত সেরে নেয়া।
২-৬. মদীনা থেকে মক্কায় আসার পথে আবায়ে আলী নামক জায়গা থেকে ওমরাহর নিয়তে ইহরাম বেঁধে মক্কায় আসা।
২-৭. ওমরাহ আদায় করে হালাল হয়ে যাওয়া।
২-৮. হজ্জের আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন।
তিন. ৩-১. ইহরাম না বেঁধে সরাসরি মদীনা গমন করা।
৩-২. যিয়ারতে মদীনা সেরে মক্কায় আসার পথে আবায়ে আলী নামক জায়গা থেকে ওমরাহর নিয়তে ইহরাম বেঁধে মক্কায় আসা।
৩-৩. ওমরাহ আদায় করে হালাল হয়ে যাওয়া।
৩-৪. হজ্জের আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন।
৩-৫. হারামের সীমানার ভেতরের অধিবাসীদের জন্য তামাত্তু হজ্জ নেই।
৮ যিলহজ্জহজ্জের ইহরাম বেঁধে মিনা-আরাফাহ গমন ও হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করুন
বি: দ্র: তামাত্তু হজ্জ পালনকারীদের কুরবানী করতে হয়। তাই ১০ যিলহজ্জ কংকর নিক্ষেপের পর কুরবানী করে মাথা মুন্ডন করে হজ্জ থেকে হালাল হয়ে যান।
----------------------------------------------------------------------------------
'' শুধু নিজে শিক্ষিত হলে হবেনা, প্রথমে বিবেকটাকে শিক্ষিত করুন। ''
হজ্জের আভিধানিক অর্থ হলো যিয়ারতের এরাদা করা। শরীয়তের পরিভাষায় হজ্জের অর্থ কতক কার্যক্রম সম্পাদন করার উদ্দেশ্যে ইহ্রামের সাথে বায়তুল্লাহ জেয়ারতের সংকল্প। অর্থাৎ আল্লাহকে রাজি খুশী করার উদ্দেশ্যে শরীয়তের বিধান অনুসারে হজ্জের ইহ্রাম বেঁধে বায়তুল্লাহ শরীফসহ নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানসমূহে, নির্দিষ্ট কর্মসমূহ সুনির্দিষ্ট পন্থায় সম্পাদন (যিয়ারত) করাকে ইসলামের পরিভাষায় হজ্জ বলা হয়। হজ্জ একাধারে আর্থিক,শারীরিক ও মানসিক এবাদত। এতে অর্থ ব্যয় হয়, শারীরিক পরিশ্রম হয়, পরিবার পরিজনের মায়া ত্যাগ করার মত মানসিক কষ্টও রয়েছে। ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে পবিত্র মক্কা শরীফে যাতায়াতের খরচ বহন এবং ওই সময় স্বীয় পরিবারের ব্যয়ভার নির্বাহে সক্ষম, দৈহিকভাবে সামর্থ, প্রাপ্তবয়স্ক জ্ঞানবান প্রত্যেক সহীহ মুসলিম নর-নারীর ওপর জীবনে একবার হজ্জ ফরয। সঠিকভাবে হজ্জব্রত আদায়কারীকেও দেয়া হয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ। একবার হজ্জ করা ফরজ। একবারের বেশী করলে সেটা নফল।
ইসলামী ইবাদতসমূহের মধ্যে হজ্জের গুরুত্ব অপরিসীম। নি¤েœ কোরআন, হাদীস ও শরীয়তের দৃষ্টিতে হজ্জের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো।
হজ্জের উদ্দেশ্য
হজ্জের উদ্দেশ্য হলো সারা বিশ্বের সহীহ মুসলিমদের সম্মিলিত করার মাধ্যমে আল্লাহর হুকুম পালন ও তাদের কল্যাণ সাধন করা। এক কথায় শিরক পরিহার করে আল্লাহকে একমাত্র প্রভু হিসেবে স্বীকার করে নেয়া। হজ্জ অনুষ্ঠান বিশ্ব সহীহ মুসলিম ঐক্য-সংহতি ও ভ্রাতৃত্বের এক অপূর্ব নিদর্শন। হজ্জের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহকে রাজি খুশী করা। তালবিয়া ঘোষণার মাধ্যমে তাওহীদ ভিত্তিক জীবন যাপন করতে অঙ্গীকার বদ্ধ হওয়া।
কোরআনের আলোকে হজ্জের গুরুত্ব
১. আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও ওমরাহ পরিপূর্ণভাবে পালন কর। (সূরা আল বাকারা-আয়াত-১৯৬)
২. মক্কার কা’বা ঘরই দুনিয়ায় প্রথম হেদায়েতের কেন্দ্র, মহান আল্লাহর ঘোষণা: “মানব জাতির সর্বপ্রথম যে গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা তো বাক্কায় (মক্কার আরেক নাম বাক্কা), তার বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারী” (সূরা আল ইমরান-৯৬)
৩. সার্বিক নিরাপত্তার স্থান কা’বা ঘর: মহান আল্লাহ বলেন:“তাতে অনেক সুষ্পষ্ট নিদর্শন আছে যেমন মাকামে ইব্রাহীম; এবং যে কেউ সেথায় প্রবেশ করে সে নিরাপদ”। (সূরা আল ইমরান-৯৭)
৪. প্রত্যেক সামর্থবান মুসলিমের জীবনে একবার হজ্জ করা অবশ্য কর্তব্য বা ফরয:মহান আল্লাহর নির্দেশ “মানুষের মধ্যে যার সেখানে পৌছাঁর সামর্থ আছে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ্জ করা তার অবশ্য কর্তব্য এবং কেউ (অর্থাৎ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্জ করতে আসবে না) প্রত্যাখ্যান করলে সে জেনে রাখুক যে,আল্লাহ সমগ্র সৃষ্টিজগতের মুখাপেক্ষী নহেন।” (সূরা আল ইমরান-আয়াত-৯৭)
৫. যখন ইব্রাহীমের জন্য এই ঘরের স্থান ঠিক করেছিলাম একথা বলে যে, এখানে কোন প্রকার শিরক করো না এবং আমার ঘরকে তাওয়াফকারী ও নামাযীদের জন্য পাক-সাফ করে রাখ। আর লোকদেরকে হজ্জ করার জন্য প্রকাশ্যভাবে আহ্বান জানাও। তারা যেন এখানে পায়ে হেঁটে আসুক কিংবা দূরবর্তী স্থান থেকে কৃশ উটের পিঠে চড়ে আসুক। এখানে এসে তারা যেন দেখতে পায় তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের কত সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর দেয়া জন্তুগুলোকে আল্লাহর নামে কুরবানী করবে। তা থেকে নিজেরাও খাবে এবং দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত লোকদেরও খেতে দেবে। (সূরা আল হজ্জ : ২৬-২৮)
৬. নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই যে ব্যক্তি আল্লাহর ঘরের হজ্জ অথবা ওমরাহ করবে,এই দুই পাহাড়ের মাঝে দৌঁড়ানো তার জন্য কোন গুনাহর কাজ হবেনা (বরং সওয়াবের কাজ হবে)। (সূরা আল বাকারা ১৫৮)
৭. আমরা মানুষের জন্য কিরূপে বিপদশূন্য ও শান্তিপূর্ণ হেরেম তৈরী করেছি তা কি তারা দেখতে পারেনি। অথচ তার চারপাশে লোক লুণ্ঠিত ও ছিনতাই হয়ে যেত। (সূরা আল আনকাবুত : ৬৭) অর্থাৎ আরবের চারদিকে যখন লুট-তরাজ, মারপিট, দাঙ্গা হাঙ্গামা ও যুদ্ধ-বিগ্রহ ইত্যাদি অশান্তির সয়লাব বয়ে যেত তখনও এই হেরেমে সর্বদা শান্তি বিরাজ করতো। এমন কি দুর্ধর্ষ মরু বেদুঈন যদি এর সীমার মধ্যে তার পিতৃহত্যাকেও দেখতে পেত, তবু এর মধ্যে বসে তাকে স্পর্শমাত্র করতে সাহস পেত না।
৮. এবং স্মরণ কর, যখন আমরা এ ঘরকে লোকদের কেন্দ্র ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল বানিয়ে ছিলাম এবং ইব্রাহীমের ইবাদতের স্থানকে মুসাল্লা (জায়নামায) বানাবার নির্দেশ দিয়েছিলাম। আর তাওয়াফকারী অবস্থানকারী এবং নামাযীদের জন্য আমার ঘরকে পাক ও পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে নির্দেশ দিয়েছিলাম। পরে যখন ইব্রাহীম দু’আ করলো হে পালন কর্তা! আপনি এই শহরকে শান্তিপূর্ণ জনপদে পরিণত করুন এবং এখানকার অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী তাদের জন্য ফল-মূল দ্বারা জীবিকার সংস্থান করে দিন। (সূরা আল বাকারা ১২৫-১২৬)
৯. এবং স্মরণ কর ইব্রাহীম ও ইসমাঈল যখন এই ঘরের ভিত্তি স্থাপনকালে দু’আ করেছিল; হে আমাদের রব। আমাদের এ চেষ্টা কবুল কর। তুমি সব কিছু জান ও সব কিছু শুনতে পাও। হে আমাদের পালন কর্তা। তুমি আমাদের দু’জনকেই সহীহ মুসলিম অর্থাৎ তোমার অনুগত কর এবং আমাদের বংশধর থেকে এমন একটি জাতি তৈরী কর যারা একান্তভাবে তোমারই অনুগত হবে। আমাদেরকে তোমার ইবাদত করার পন্থা বলে দাও, আমাদের প্রতি ক্ষমার দৃষ্টি নিক্ষেপ কর। তুমি বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়াময়। হে পরওয়ারদিগার! তুমি সে জাতির প্রতি তাদের মধ্য থেকে এমন একজন রাসূল পাঠাও যিনি তাদেরকে তোমার বাণী পড়ে শুনাবে। তাদেরকে কিতাব ও জ্ঞানের শিক্ষা দিবে এবং তাদের চরিত্র সংশোধন করবে। নিশ্চয় তুমি সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পন্ন এবং বিজ্ঞ।” (সূরা আল বাকারা : ১২৭-১২৯)
১০.এবং স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম দু’আ করেছিল-হে আল্লাহ! এ শহরকে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ বানিয়ে দাও। আমাকে এবং আমার সন্তানকে মূর্তি পূজার শিরক থেকে বাঁচাও। হে আল্লাহ! এ মূর্তিগুলো অসংখ্য লোককে গুমরাহ করেছে। অতএব, যে আমার পন্থা অনুসরণ করবে সে আমার আর যে আমার পন্থার বিপরীত চলবে তখন তুমি নিশ্চয় বড় ক্ষমাশীল ও দয়াময়। পরওয়ারদিগার! আমি আমার বংশধরদের একটি অংশ তোমার এই মহান ঘরের একটি এ ধূসর মরুভূমিতে এনে পুনর্বাসিত করেছি। এ উদ্দেশ্যে যে, তারা নামাযের ব্যবস্থা কায়েম করবে। অতএব হে আল্লাহ। তুমি লোকদের মনে এতদূর উৎসাহ দাও যেন তারা এদের দিকে দলে দলে চলে আসে এবং ফল-মূল দ্বারা তাদের জীবিকার ব্যবস্থা কর। হয়ত এরা তোমার কৃতজ্ঞ বান্দা হবে। (সূরা ইব্রাহীম-৩৫-৩৬)
১১. কুরাইশদের মনোবাঞ্ছনা পূরণের কারণে, তথা শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন বাণিজ্য সফরসমূহে তাদের বিশেষ মর্যাদার কারণে। অতএব তাদের উচিৎ তারা যেন এ ক্বাবা গৃহের প্রতিপালকের ইবাদতে নিবেদিত হয়, যিনি তাদেরকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিয়ে আহার্য সরবরাহ করেছেন এবং ভয় ভীতি হতেও দিয়েছেন পরিত্রাণ। (সূরাতুল ফীল)
১২. আর তোমরা যেখানেই থাকনা কেন আর মসজিদ আল হারামের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করবে। (সূরা আল ইমরান-১৪৪)
১৩. আল্লাহ কা’বা তথা পবিত্র গৃহকে মানবগোষ্ঠীর অস্তিত্বের জন্য রক্ষাকবচ করেছেন। আর সম্মানিত মাস, কুরবানীর উদ্দেশ্যে নিবেদিত জন্তু ও এজন্তুর গলায় স্থাপিত চিহ্নসমূহকেও। ইহা এজন্যই যে তোমরা যেন জ্ঞাত হও যে আল্লাহ তা’আলা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু ঘটছে তার সকল বিষয়ে জ্ঞান রাখেন এবং আল্লাহ হচ্ছেন সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞা। (সূরা মায়েদা-৯৭)
হাদীসের আলোকে হজ্জের গুরুত্ব
ক. হজ্জ কখন কাদের উপর ফরজ
১. রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী হলো-ইসলামের বুনিয়াদ পাঁচটি: আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই আর মুহাম্বাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য দেয়া, সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, হজ্জ সম্পন্ন করা ও রমযানের সাওম আদায় করা। (সহীহ আল বুখারী-৮ ও মুসলিম-১১৩)
২. প্রতিটি স্বাধীন, সুস্থ, বালেগ, বুদ্ধিমান ও সামর্থ্যবান মুসলিমের ওপর জীবনে কমপক্ষে একবার কা’বাঘরের হজ্জ আদায় করা ফরয। হযরত ওমার ইবনুল খাত্তাব ও আবু হুরায়রা রাদিয়াআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তারা বলেন:“একবার রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সামনে খুতবা প্রদান উপলক্ষে বলেছিলেন। লোক সকল! তোমাদের উপর যে হজ্জ অবশ্যই ফরজ করা হয়েছে, তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। সুতরাং তোমরা হজ্জ আদায় কর। তখন জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন, প্রতি বছরই কি আমাদের ওপর হজ্জ আদায় করা ফরয? রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাব না দিয়ে চুপ থাকলেন। প্রশ্নকারী তার প্রশ্ন তিনবার পুনরাবৃত্তি করলো। এরপর আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম তবে তোমাদের ওপর প্রতি বছর হজ্জ করা ফরয হয়ে যেতো, যা তোমরা পালন করতে পারতে না। (সহীহ মুসলিম-৩২৫৭)
৩. যে ব্যক্তি ভরন পোষণ জোগানোর পর হজ্জে যাওয়ার সামর্থ রাখে তার উপর আল্লাহ পাক হজ্জকে ফরজ করেছেন। (সহীহ মুসলিম)
৪. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) থেকে বর্ণিত এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে হাজীর হয়ে নিবেদন করল, হজ্জ কখন ফরজ হয়? রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন যখন পবিত্র মক্কা পর্যন্ত যাতায়াতের পথ খরচ ও যানবাহনের ব্যবস্থা হয়ে যায়। (ইবনে মাজাহ ও তিরমিযী)
অধিকাংশ ফকীহদের মতে শর্তাবলী পুরণ হলে সাথে সাথেই হজ্জ আদায় করা ফরয। সেক্ষেত্রে বিলম্ব করার কারণে গুনাহগার হতে হবে।
খ. হজ্জ পালনকারীদের দায়িত্ব আল্লাহর
১. আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা তিন ব্যক্তির দায়িত্ব গ্রহণ করেন: (ক) যে ব্যক্তি আল্লাহর কোন মসজিদের উদ্দেশে বের হয় (খ) যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করতে বের হয় (গ) যে ব্যক্তি হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হয়।
গ. মাবরুর হজ্জের বিনিময় হলো জান্নাত
১. জাবির (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মাবরুর হজ্জের প্রতিদান কেবল জান্নাত। (মুসনাদে আহমদ)
২. হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এক ওমরাহ হতে অন্য ওমরাহ এ দুয়ের মধ্যে যা কিছু গুনাহ হবে তার কাফফারা। আর মাবরুর হজ্জের বিনিময় জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়। (সহীহ আল সহীহহাদীস নং-১৭৭৩ ও মুসনাদে আহমাদ-২/২৪৬)
৩. আবু দারদা (রা:) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; এক ওমরাহ হতে আরেক ওমরাহ-এর মধ্যবর্তী গুনাহের কাফফারা এবং কবুল হজ্জের একমাত্র বিনিময় হলো জান্নাত। (সহীহ মুসলিম)
৪. হযরত বিবি উম্মে সালমা (রা:) বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি বায়তুল মাকদাস হতে (মক্কার) বায়তুল হারামের দিকে হজ্জ বা ওমরাহর ইহরাম বাঁধে, তার পূর্বের বা পরের গুনাহ মাফ করা হবে। অথবা তিনি বলেছেন, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।
৫. রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: বিশুদ্ধ মকবুল একটি হজ্জ পৃথিবী ও পৃথিবীর মধ্যকার সব বস্তু থেকে উত্তম। বেহেশত ছাড়া আর কোন কিছুই এর বিনিময় হতে পারে না। (সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম)
ঘ. হজ্জ গুনাহমোচন করে
১. হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ্জ করলো, অতঃপর অশ্লীলতা এবং গুনাহের কাজ পরিহার করলো সে যেন সে দিনের মতো নিষ্পাপ অবস্থায় (নিজ ঘরে) ফিরে আসলো যে দিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল। (সহীহ আল বুখারী-১৪২৪)
২. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি হজ্জ করে, তার মধ্যে বাজে কথা বলে না এবং কোন গুনাহর কাজও করে না, সে নিজের গুনাহ থেকে এমনভাবে মুক্ত ও পবিত্র হয়ে ফিরে যায়, যেন তার মা তাকে (এখনই) প্রসব করেছেন।
৩. ওমরাহর জন্য ও বড় সওয়াবের ওয়াদা রয়েছে। হাদীসে আছে হজ্জ এবং ওমরাহ উভয় গুনাহগুলোকে এমন ভাবে দূর করে দেয়, যেমন আগুন লোহার মরিচাকে দূর করে দেয়।
৪.হযরত আমর বিন আল-আস হতে বণিত; রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইসলাম গ্রহণ যেমন অতীত জীবনের গুনাহসমূহ নিশ্চিহ্ন করে দেয়; তেমনি হজ্জ পালন অতীতের সব পাপ মোচন করে দেয়। (বায়হাকী)
৫. হযরত আমর ইবনুল আস (রা:) বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হে আমর কেউ যদি ইসলামে দীক্ষিত হয়! তবে ইতোপূর্বে কৃত তার সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়। আর হিজরত দ্বারা ইতোপূর্বে কৃত সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়। তেমনি হজ্জ ইতোপূর্বে কৃত সমস্ত গুনাহ শেষ করে দেয়। (সহীহ মুসলিম)
ঙ. হজ্জ ও ওমরাহকারী হলো আল্লাহর প্রতিনিধি
১. আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহর পথের মুজাহিদ এবং হজ্জ ও ওমরাহকারী হলো আল্লাহর প্রতিনিধি। তারা যদি আল্লাহকে ডাকে আল্লাহ তাদের ডাকে সাড়া দেন। আর তারা যদি গুনাহ মাফ চায় আল্লাহ তাদের গুনাহ মাফ করে দেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ)
২. অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, হজ্জ ও ওমরাহকারীরা হলো আল্লাহর প্রতিনিধি। তারা আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন আর আল্লাহও তাদের প্রার্থনা কবুল করেন। (মুসনাদে বাযযার)
৩. হযরত আবু হুরায়রা (রা:) রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: হজ্জ ওমরাহকারীরা হচ্ছে আল্লাহর দাওয়াতী যাত্রীদল। অতএব তারা যদি তাঁর নিকট প্রার্থনা করেন তবে তিনি তা কবুল করেন এবং যদি ক্ষমা চান তবে তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। (ইবনে মাজাহ-২৮/৮৩)
চ. সর্বোত্তম আমল হজ্জ
১.আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন। জিজ্ঞাসা করা হলো, এরপর কী? বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। বলা হলো এরপর? তিনি বললেন, মাবরুর হজ্জ। (সহীহ আল বুখারী-১৪২২)
২. উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করি। তাহলে আমরা (নারীরা) কি জিহাদ করব না? নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না। তোমাদের জন্য উত্তম জিহাদ হলো মাবরুর হজ্জ। (সহীহ আল বুখারী)
৩. সর্বোত্তম আমল কী এ ব্যাপারে এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন। উত্তরে বললেন, অদ্বিতীয় আল্লাহর প্রতি ঈমান, ও তারপর মাবরুর হজ্জ যা সকল আমল থেকে শ্রেষ্ঠ। সূর্য উদয় ও অস্তের মধ্যে যে পার্থক্য ঠিক তারই মত। (মুসনাদে আহমাদ-৪/৩৪২)
৪. অন্য এক হাদীসে এসেছে, উত্তম আমল কি এই মর্মে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো। উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান। বলা হল, তারপর কী? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ। বলা হল তারপর কোনটি? তিনি বললেন, মাবরুর হজ্জ।
৫. রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে হজ্জ গুনাহ এবং অন্যান্য খারাবি থেকে পবিত্র হবে, তার পুরষ্কার বেহশত ছাড়া অন্য কিছুই নয়। হজ্জ অতি উত্তম ইবাদত।
৬. মাবরুর হজ্জ ঐ হজ্জকে বলা হয় যে হজ্জের সাথে কোন গুনাহের কাজের সংমিশ্রণ হয় না। (ফিকহুস সুন্নাহ-১/৫২৭)
ছ. জেহাদের মর্যাদা
১. উম্মে সালমা (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, হজ্জ হলো প্রত্যেক দুর্বলের জিহাদ। (সুনানে ইবনে মাজাহ)
২. হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন : রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি হজ্জ, ওমরাহ অথবা আল্লাহর রাস্তায় জেহাদের নিয়তে বের হয়, অতঃপর ঐ পথে মারা যায়, তার আমলনামায় গাজী, হাজী বা ওমরাহকারীর সওয়াব লেখা হয়। (বায়হাকী)
৩. হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীস: তিনি বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম- হে আল্লাহ রাসূল মহিলাদের ওপর কি জিহাদ ফরয? তিনি জবাবে বললেন, হ্যাঁ, তাদের ওপর এমন জিহাদ ফরয যাতে কিতাল ((রক্তপাত) নেই, আর তা হলো হজ্জ ও ওমরাহ। ইমাম আহমদ-২৫৩২২, ইবনে মাজাহ-২৯০১-এর দ্বারা জীবনে একবার ওমরাহ করাও ফরয় হওয়ার দলিল দিয়েছেন।
জ. অন্যান্য সওয়াব
১. হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“আল্লাহ আরাফাহ’র দিন এতো সংখ্যক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন যা অন্য কোন দিন দেন না। এদিন আল্লাহ তা’আলা নিকটবর্তী হন ও আরাফাহ ময়দানে অবস্থানরত হাজীদেরকে নিয়ে তিনি ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন ও বলেন - ‘ওরা কী চায়?’ (সহীহ মুসলিম-১৪৮)
২. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোনো মুমিন যখন ইহরামের হালতে দিন কাটাবে তখন সূর্য তার সব গুনাহ নিয়ে অস্ত যাবে। আর কোনো সহীহ মুসলিম যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ্জের তালবিয়া পাঠ করবে তখন তার ডানে-বামে পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সবকিছু তার পেস্যা দেবে। (জামে তিরমিযি হাদিস-৮১০; তারগির, হাদিস-১৭০৩)
৩. রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ক্বাবা গৃহের উপর প্রত্যহ একশত বিশটি রহমত নাযিল হয়। ষাটটি তাওয়াফকারীদের জন্য, চল্লিশটি নামাজ আদায়কারীদের জন্য এবং বিশটি দর্শকদের জন্য।
৪. রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মক্কা থেকে পাঁয়ে হেঁটে হজ্জব্রত পালন করে পুনরায় মক্কায় ফিরে আসেন তাঁর প্রতি কদমে হারাম শরীফের সওয়াবের সাতশত সওয়াব লেখা হয় এবং হারাম শরীফের প্রতিটি সওয়াবের পরিমাণ হচ্ছে লাখ গুণ।
৫. সাহল বিন সা’দ (রা:) হতে বির্ণিত; রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন মুসলমান যখন তালবিয়া (লাব্বাইকা................) বলে তখন তার ডান ও বাম পার্শ্বে প্রতিটি পাথর, গাছ ও বালুকণা তার সাথে তালবিয়া পড়তে থাকে, যতদূর পর্যন্ত তার কণ্ঠস্বর পৌঁছে। (তিরমিযি)
ঝ. হজ্জ ও ওমরাহ দারিদ্রতা দূর করে
১. রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যিনি হজ্জ করেন তিনি কখনো দরিদ্র হন না। (সহীহ মুসলিম)
২. হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) বলেন: রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হজ্জ ও ওমরাহ এক সাথে করো। কেননা এ দু’টি ইবাদত দারিদ্রতা ও গুনাহদূর করে, যেভাবে হাপর লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা দূর করে। কবুল হজ্জের সওয়াব জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়। (তিরমিযি ও নাসায়ী)
৩. ইবনে মাসউদ (রা:) হতে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, তোমরা পর পর হজ্জ ও ওমরাহ আদায় করো। কেননা তা দারিদ্রতা ও পাপকে সরিয়ে দেয় যেমন সরিয়ে দেয় কামারের হাপর লৌহ-স্বর্ণ-রূপার ময়লাকে। আর হজ্জে মাবরুর সওয়াব তো জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়। (সহীহ ইবনে খুজাইমাহ-৪/১৩০)
৪. হযরত ইবনে ওমর (রা:) হতে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোন হাজীর সাথে সাক্ষাতের সময় তাকে সালাম দেবে, মোসাফাহ করবে, তোমার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করতে বলবে। কেননা হাজীগণ ক্ষমাপ্রাপ্ত। (তিরমিযি)
৫. হযরত আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ফিরিশতাগণ যানবাহনে আরোহী হাজীদের সাথে মোসাফাহ করেন এবং পদচারী হাজীদের সাথে আলিঙ্গন করেন। (মিশকাত)
ঞ. সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ পালন না করার পরিণতি
১. হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্তকবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ করল না, বা হজ্জকে উপেক্ষা করল, সে ইয়াহুদি হয়ে মরল না নাসারা হয়ে মরল তাতে আল্লাহ তায়ালার কোন কিছু আসে যায় না। (তিরমিযি)
২. রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, “যার কোন প্রকাশ্য অসুবিধা নেই, কোন যালিম বাদশাও যার পথ রোধ করেনি এবং যাকে কোন রোগ অসমর্থ করে রাখেনি এতদসত্ত্বেও সে যদি হজ্জ না করে মারা যায় তাহলে সে ইয়াহুদী বা খ্রিষ্টান হয়ে মরতে পারে।” (দায়েমী)
৩. হযরত ওমর ফারুক (রা:) এ ব্যাখ্যায় বলেছেন: সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যারা হজ্জ করে না তাদের ওপর জিযিয়া কর আরোপ করতে ইচ্ছে হয়; কারণ তারা, মুসলমান নয়।
সুতরাং হাদীসের শিক্ষাই হচ্ছে হজ্জ ফরজ হওয়ার পর কেউ কোন ওযর ব্যতিত হজ্জ পালন না করে মারা গেলে সে ইসলামের গন্ডি থেকে বেরিয়ে গেল। একথা প্রমাণিত হলো যে, ইসলামে হজ্জ অবহেলা করার কোন বিষয় নয় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যিযিয়ার বিষয়টি আরো গুরুত্বপূর্ণ। হজ্জ ফরজ হওয়ার পর হজ্জ না করলে সহীহ মুসলিম থাকারই সুযোগ থাকবে না। হজ্জ পালন করা মহান আল্লাহর নির্দেশ। হজ্জ পালন করার মাধ্যমে যেহেতু আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ আদায় করা হয়ে থাকে, সেহেতু এর মাধ্যমে তাঁর সন্তুুষ্টি অর্জনও ত্বরান্বিত হয়। আর তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারলে পরকালীন মুক্তি অর্জন অবশ্যই সম্ভব হবে।
শরীয়তের দৃষ্টিতে হজ্জের বিধান
* ক্ষমতা ও সামর্থ্যবান লোকদের জন্য জীবনে একবার হজ্জ করা ফরজ।
* হজ্জ পরিত্যাগকারীর প্রতি ভর্ৎসনা করা হয়েছে।
* হজ্জ ফরয হওয়ার পর অবহেলা করা চরম দুর্ভাগ্যের বিষয়। এহেন লোকদের প্রতি হাদিস শরীফে কঠোর শাস্তির ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। জীবনের কোন নিশ্চয়তা নাই। সুতরাং অনতিবিলম্বে তা আদায় করা কর্তব্য।
উপরে উল্লেখিত কোরআন, হাদীস ও শরীয়তের দৃষ্টিতে বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট। তাই হজ্জ পালনেচ্ছু প্রতিটি ব্যক্তিরই উচিত পবিত্র হজ্জের এই ফজিলতসমূহ পরিপূর্ণভাবে পাওয়ার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাওয়া। হজ্জ কবুল হওয়ার সকল শর্ত পূর্ণ করে সমস্ত পাপ বা গুনাহ থেকে মুক্ত থেকে আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হজ্জ পালন করা।
হজ্জ ফরয হওয়ার শর্ত ৮টি : ১) মুসলমান হওয়া ২) বালেগ হওয়া। ৩) বুদ্ধিমান হওয়া ৪) স্বাধীন হওয়া ৫) হজ্জের সময় হওয়া ৬) সম্পদশালী হওয়া (হজ্জ আদায় করার মত সামর্থ যোগ্য) ৭) সুস্থ থাকা ৮) যাতায়াতের পথ নিরাপদ হওয়া ।
মাসআলা
১. কারও যদি আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকে, কিন্তু তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হন-এমতাবস্থায় তিনি কাউকে দিয়ে বদলি হজ্জ করাবেন।
২. মক্কা মুকাররমাহ ও তার আশে পাশে-যেমন জেদ্দা, তায়েফ প্রভৃতি এলাকায় চাকুরি বা ব্যবসার উদ্দেশ্যে যারা আসবেন তাদের ওপর হজ্জ ফরয। নিজ নিজ সময় ও সুবিধা মতো তারা এ দায়িত্ব পালনে বাধ্য থাকবেন ।
৩. সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আবদুল আজিজ আ’ল শেখের মতে-কোন বয়স্কা মহিলার সঙ্গে যদি মাহরাম না থাকে, এমতাবস্থায় বিশ্বস্ত মহিলাদের সাথে তিনি হজ্জ করতে পারবেন। তবে শর্ত হলো তার সফরের নিরাপত্তার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।
হজ্জ তিন প্রকার
১) হজ্জে ইফরাদ
২) হজ্জে কেরান
৩) হজ্জে তামাত্তু
১। হজ্জে ইফরাদ : হজ্জের সাথে ওমরাহ না করে শুধু হজ্জ করাকে ইফরাদ হজ্জ বলে।
* মীকাত থেকে শুধু হজ্জের নিয়তে (বর্ণিত নিয়মে) ইহরাম বাঁধুন।
* মক্কা শরীফ পৌঁছে তাওয়াফে কুদুম (আগমনী তাওয়াফ) করুন।
* ইচ্ছা করলে এ তাওয়াফের পর সায়ী করুন। সে ক্ষেত্রে হজ্জের ফরজ-তাওয়াফের পর আর সায়ী করতে হবে না।
* তাওয়াফ ও সায়ী করার পর চুল ছাঁটবেন না।
* তাওয়াফে কুদুমের পর ইহরাম অবস্থায় হজ্জের অপেক্ষায় থাকুন।
* ৮ যিলহজ্জ একই ইহরামে মিনা-আরাফাহ গমন ও হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা।
বি: দ্র: ইফরান হজ্জ পালনকারীকে কুরবানী করতে হয়না। তাই ১০ যিলহজ্জ কংকর নিক্ষেপের পর মাথা মুন্ডন করে হজ্জ থেকে হালাল হয়ে যান।
২। হজ্জের ক্বিরান : ওমরাহর সাথে যুক্ত করে একই ইহরামে ওমরাহ ও হজ্জ আদায় করাকে ক্বিরান হজ্জ বলে।
ক্বিরান হজ্জ দু’ভাবে আদায় করা যায়।
এক. ১-১) মীকাত থেকে এহরাম বাঁধার সময় হজ্জ ও ওমরাহ উভয়টার নিয়ত করে ইহরাম বাঁধুন।
১-২) মক্কায় পৌঁছে প্রথমে ওমরাহ ও সায়ী আদায় করুন। তবে এরপর চুল ছাঁটবেন না।
১-৩) ইহরাম অবস্থায় মক্কায় অবস্থান করুন।
১-৪) ৮ যিলহজ্জ একই ইহরামে মিনা-আরাফাহ গমন ও হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা।
দুই. ২-১) মীকাত থেকে শুধু ওমরাহর নিয়তে ইহরাম বাঁধুন।
২-২) পবিত্র মক্কায় পৌঁছার পর তাওয়াফ শুরু করার পূর্বে হজ্জের নিয়ত ওমরাহর সাথে যুক্ত করে নেন।
২-৩) ওমরাহর তাওয়াফ ও সায়ী শেষ করুন, তবে এরপর চুল ছাঁটবেন না।
২-৪) ইহরাম অবস্থায় হজ্জের অপেক্ষায় থাকুন।
২-৫) ৮ যিলহজ্জ একই ইহরামে মিনা-আরাফাহ গমন ও হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা।
২-৬) মক্কাবাসীদের জন্য ক্বিরান হজ্জ নেই। যেহেতু তারা হারামের সীমানার ভেতরে অবস্থান করছেন, সেহেতু তাদের ক্বিরান হজ্জ করতে হয় না।
বি: দ্র: ক্বিরান হজ্জ পালনকারীদের কুরবানী করতে হয়। তাই ১০ যিলহজ্জ কংকর নিক্ষেপের পর কুরবানী করে মাথা মুন্ডন করে হজ্জ থেকে হালাল হয়ে যান।
৩। হজ্জে তামাত্তু : এ হজ্জের জন্য পৃথকভাবে প্রথমে ওমরাহ ও পরে হজ্জ আদায় করাকে তামাত্তু হজ্জ বলে।
তামাত্তু হজ্জ তিনভাবে করা যায়।
এক. ১-১. তামাত্তু হজ্জ পালনকারীগণ মীকাত থেকে প্রথমে ওমরাহর ইহরাম বাঁধুন।
১-২. মক্কায় পৌঁছে প্রথমে ওমরাহর তাওয়াফ ও সায়ী আদায় করুন।
১.৩. তারপর মাথা মুন্ডন করে হজ্জ থেকে হালাল হয়ে যান।
১-৪. হজ্জের আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন।
দুই. ২-১. তামাত্তু হজ্জ পালনকারীগণ মীকাত থেকে প্রথমে ওমরাহ’র ইহরাম বাঁধুন।
২-২. মক্কায় পৌঁছে প্রথমে ওমরাহর তাওয়াফ ও সায়ী আদায় করুন।
২-৩. তার পর মাথা মুন্ডন করে হজ্জ থেকে হালাল হয়ে যান।
২-৪. হজ্জের আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন।
২-৫. হজ্জের পূর্বে মদীনা যিয়ারত সেরে নেয়া।
২-৬. মদীনা থেকে মক্কায় আসার পথে আবায়ে আলী নামক জায়গা থেকে ওমরাহর নিয়তে ইহরাম বেঁধে মক্কায় আসা।
২-৭. ওমরাহ আদায় করে হালাল হয়ে যাওয়া।
২-৮. হজ্জের আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন।
তিন. ৩-১. ইহরাম না বেঁধে সরাসরি মদীনা গমন করা।
৩-২. যিয়ারতে মদীনা সেরে মক্কায় আসার পথে আবায়ে আলী নামক জায়গা থেকে ওমরাহর নিয়তে ইহরাম বেঁধে মক্কায় আসা।
৩-৩. ওমরাহ আদায় করে হালাল হয়ে যাওয়া।
৩-৪. হজ্জের আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন।
৩-৫. হারামের সীমানার ভেতরের অধিবাসীদের জন্য তামাত্তু হজ্জ নেই।
৮ যিলহজ্জহজ্জের ইহরাম বেঁধে মিনা-আরাফাহ গমন ও হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করুন
বি: দ্র: তামাত্তু হজ্জ পালনকারীদের কুরবানী করতে হয়। তাই ১০ যিলহজ্জ কংকর নিক্ষেপের পর কুরবানী করে মাথা মুন্ডন করে হজ্জ থেকে হালাল হয়ে যান।
----------------------------------------------------------------------------------
'' শুধু নিজে শিক্ষিত হলে হবেনা, প্রথমে বিবেকটাকে শিক্ষিত করুন। ''
কোন মন্তব্য নেই:
/>