শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০১৪

প্রশ্নঃ যাকাতের আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ কি?যাকাতের অর্থ বৃদ্বিকারী ও পবিত্রকারী বলা হয় কেন? যাকাত কখন ফরয হয়? যাকাতের খাত সমূহ কি কি? ঘোড়া বা ক্রীতদাসের উপর যাকা ফরয হয় কিনা? দারিদ্র্যাতা বিমোচনে যাকাতের ভূমিকা কি?

যাকাত এর আভিধানিক পরিচয় ----------------

যাকাত একটি ব্যাপক প্রত্যয়। এটি আরবী শব্দ زكوة থেকে গেৃহীত। যার অর্থ পবিত্রতা বা পরিশুদ্ধতা। যাকাতের আরেক অর্থ পরিবর্ধন (Growth)শুধু তাই নয়যাকাত একাধারে পবিত্রতাবর্ধিত হওয়া,আর্শীবাদ (Blessing) এবং প্রশংসা অর্থেও ব্যবহৃত হয়কুরআন ও হাদিসে যাকাতের এ সব তাৎপর্য নিহিত।আল্লামা জুরযানী বলেন- الزكاة فى اللغة الزيادة[অর্থাৎ যাকাতের আভিধানিক অর্থ অতিরিক্ত। মাওলানা আব্দুর রহীম বলেনযাকাত শব্দের আসল অর্থ হচ্ছে প্রবৃদ্ধি (Growth), প্রবৃদ্ধি লাভ (Increa8uuuse), প্রবৃদ্ধির কারণ (To Cause to grow) ইত্যাদি যা আল্লাহ প্রদত্ত বারাকাত (Blessing) থেকে অর্জিত হয়।
ইসলাম বিশ্বকোষে যাকাতের অর্থ সম্পর্কে আছেযাকাত অর্থ পবিত্রতা ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা।
কারণ আল্লাহ বলেন,
তাদের মালামাল থেকে যাকাত গ্রহকর যাতে তুমি সেগুলোকে পবিত্র করতে এবং সেগুলোকে বরকতময় করতে পার এর মাধ্যমে।[তওবাঃ১০৩]
আল্লামা শাওকানী বলেন,
যাকাত শব্দটি মূল زكاء এর অর্থ প্রবৃদ্ধিবর্ধিত হওয়া। কোন জিনিস বৃদ্ধি পেলে এই শব্দ বলা হয় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়া। খুব বেশী কল্যাণকময় হলে তা زكى বলা হয়। আর ধন সম্পদের একটা অংশ বের করে দিলে তাকে যাকাত বা প্রবৃদ্ধি পাওয়া বলা হয়অথচ তাকে কমে। তা বলা হয় এ জন্য যে যাকাত দিলে তাকে বরকত বেড়ে যায় বা যাকাত দাতা অধিক সওয়াবের অধিকারী হয়।
ইবনুল মানযুর বলেনযাকাত শব্দের অর্থ হলো পবিত্রতাক্রমবৃদ্ধি ও আধিক্য।
সাদী আবু জীব বলেনযাকাত আদায়ের মাধ্যমে বাহ্যিকভাবে সম্পদ কমলেও প্রকারান্তে এর পরিবর্ধন ঘটে। এছাড়া এর মাধ্যমে সম্পদ পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন হয় এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে সমাজ হয় মুক্ত ও পবিত্র।
আবুল হাসান বলেনযাকাতের অর্থ الطهارة والنماء والبركة والمدح পবিত্রতাবৃদ্ধিবরকত ও প্রশংসা।
আল মুজামুল অসীতে আছেআভিধানিক অর্থ زكا যে জিনিস ক্রমশ বৃদ্ধি পায় ও পরিমাণে বেশী হয়।زكا فلان অমুক ব্যক্তি যাকাত দিয়েছে অর্থ-সুস্থ ও সুসংবদ্ধ হয়েছে।
অতএবযাকাত হচ্ছে বরকতপরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়াপ্রবৃদ্ধি লাভপবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতাশুদ্ধতা- সুসংবদ্ধতা।

যাকাত এর পারিভাষিক পরিচয়

ইসলামী শরীয়াতের পরিভাষায় জীবন যাত্রার অপরিহার্য প্রয়োজন পুরণের পর সম্পদে পূর্ণ এক বছরকাল অতিক্রম করলে ঐ সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট অংশ আল্লাহর নির্ধারিত খাতে ব্যয় করাকে যাকাত বলা হয়।
 ইউসুফ কারযাভী বলেনশরীয়াতের দৃষ্টিতে যাকাত ব্যবহৃত হয় ধন-মালে সুনির্দিষ্ট ও ফরযকৃত অংশ বোঝানোর জন্য। যেমন পাওয়ার যোগ্য অধিকারী লোকদের নির্দিষ্ট অংশের ধন-মাল দেওয়াকে যাকাত বলা হয়।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেনযাকাত আল্লাহ নির্দেশিত অংশ ধন-মাল থেকে হকদারদের দিয়ে দেয়াযাতে মন-আত্মা পবিত্র হয় এবং ধন-মাল পরিচ্ছন্ন হয় ও বৃদ্ধি পায়।
নিজের অর্থ সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ অভাবী মিসকিনদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়াকে যাকাত বলে। এটাকে যাকাত বলার কারণ হল এভাবে যাকাত দাতার অর্থ সম্পদ এবং তার নিজের আত্মা পবিত্র -পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। যাকাতের শরয়ী অর্থই তোআল্লাহর সন্তোষ লাভের উদ্দেশ্যে কোন মালদার ব্যক্তি কর্তৃক কোন হকদার ব্যক্তিকে তার মালের নির্ধারিত অংশ অর্পন করা।

 যাদের উপর যাকাত ফরয ঃ

প্রাপ্ত বয়স্কসুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন সকল সাহেবে নিসাব মুসলিম নর-নারীর উপর যাকাত প্রদান করা ফরয। কোন ব্যক্তি মৌলিক প্রয়োজনীয় উপকরণাদি ব্যতীত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার পর চাঁদের হিসেবে পরিপূর্ণ এক বৎসর অতিবাহিত হলে তার উপর পূর্ববর্তী বৎসরের যাকাত প্রদান করা ফরয। অবশ্য যদি কোন ব্যক্তি যাকাতের নিসাবের মালিক হওয়ার পাশাপাশি ঋণগ্রস্থ হয়তবে ঋণ বাদ দিয়ে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেতার উপর যাকাত ফরয হবে। যাকাত ফরয হওয়ার পর যদি কোন ব্যক্তি যাকাত প্রদান না করে টাকা খরচ করে ফেলেতাহলেও তাকে তার পূর্বের যাকাত দিতে হবে। নাবালেগ ও পাগলের উপর যাকাত ফরয হবে না। কারণতাদের উপর শরীয়তের বিধান আরোপিত হয়না। তবে যদি কোন মস্তিষ্ক বিকৃত ব্যক্তি নিসাবের মালিক হওয়ার সময় এবং বৎসর পরিপূর্ণ হওয়ার সময় সুস্থ থাকেকিন্তু মধ্যবর্তী সময় মস্তিষ্ক বিকৃতির শিকার হয় তাহলেও তাকে যাকাত প্রদান করতে হবে।

যেসব মালে যাকাত ফরয হয়

১. পশু ও জন্তু সম্পদের যাকাত: উষ্ট্রের সংখ্য ৫-৯ টি হলে =১টি ছাগীআবার ১০-১৪ টি হলে =২টি ছাগী এবং ১৪-১৯টি পর্যন্ত =৩টি ছাগী। এভাবে পর্যায়ক্রমে গরু-মহিষ কমপক্ষে ৩০টি হলে ১ বছর বয়সী ১টি বাছুর যাকাত ফরয। তবে শর্ত মালিকানায় একবছর অতিবাহিত হওয়া। ছাগল ও ভেড়া কমপক্ষে ৪০টি হতে ১২০টিতে ১টি ছাগী১২১টি হতে ২০০টি পর্যন্ত ২টি ছাগী এভাবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ঘোড়া ও উট পালন করলে তার যাকাত আদায় করতে হবে।
২. স্বর্ণ ও রৌপ্যের যাকাত: সাড়ে সাত ভরি পরিমাণ স্বর্ণ বা এর তৈরি অলংকাররৌপ্য সাড়ে বায়ান্ন ভরি বা এর অলংকার অথবা স্বর্ণ-রৌপ্য উভয়ই থাকলে উভয়েরই মোট মূল্য সাড়ে বায়ান্ন ভরি রৌপ্যের সমান হলেতার বাজার মূল্য ২.৫% হারে যাকাত দিতে হবে।
৩. ব্যবসায় পণ্যের যাকাত: ব্যবসায়ের মজুদ পণ্যের মূল্য সাড়ে বায়ান্ন ভরি রৌপ্যের মূল্যের বেশী হলে তার উপর ২.৫% হারে যাকাত দিতে হবে।
৪. কৃষি সম্পদের যাকাত: কৃষির উৎপন্ন ফসলের ক্ষেত্রে এ যাকাত আদায় করতে হবে তার নাম ওশর। এ ক্ষেত্রে নিসাব হলোসেচবিহীন জমির ফসলের শতকরা ১০ ভাগ এবং সেচপ্রদানকৃত জমির ফসলের শতকরা ২০ অংশ। আবার নিসাব পরিমাণ ২৬ মন ১০ সের মতান্তরে ৩০ মন না হলে ওশর দিতে হবে না।
৫. মধুর যাকাত: ৫ অসাকের মূল্য হিসেবে মধুর নিসাব ধার্য হবে। অর্থাৎ ৬৫৩ কিলোগ্রাম হলে তাতে ওশর দিতে হবে।
৬. খনিজ ও সামুদ্রিক সম্পদের যাকাত: খনিজ ও সামুদ্রিক সম্পদে এক-পঞ্চমাংশ যাকাত দিতে হবে।
৭. নগদ টাকা ও মজুদ সম্পদের যাকাত: নগদ টাকা বা মজুদ ব্যবসায়িক পণ্যের মূল্য সাড়ে বায়ান্ন ভরি রৌপ্যের মূল্যামানের বেশী হলে তার ওপর শতকরা ২.৫% হারে যাকাত দিতে হবে।

যে সব সম্পদের যাকাত দিতে হয় না

১. নিসাবের কম পরিমান সম্পদ,
২. নিসাব বছরের মধ্যেই অর্জিত ও ব্যয়িত সম্পদ
৩. ব্যবহার্য সামগ্রী
৪. শিক্ষা উপকরণ,
৫. ঘর-বাড়ীদালান-কোঠা যা বসবাস কিংবা কলকারখানা হিসেবে ব্যবহৃত
৬. যন্ত্রপাতি ও সাজ সরঞ্জাম
৭. ব্যবহার্য যানবাহন
৮. ব্যবহার্য পশু,ঘোড়া যেহেতু জিহাদের কাজে ব্যবহার করা হয় আর তা যেহেতু বর্ধনশীল নয় তাই এর উপর কোন যাকাত নেই।আবার ক্রীতদাসের উপরও কোন যাকাত নেই।কারণ রাসূল(সাঃ) বলেছেন,ঘোড়া ও ক্রীতদাসের উপর কোন যাকাত নেই।
৯. ওয়াকফকৃত সম্পত্তি
১০. পোষা পাখি ও হাঁস মুরগী।

যাকাত বণ্টনের খাতসমূহ

যাকাত বণ্টনের ব্যাপারে আল-কুরআনের স্পষ্ট ঘোষণা হচ্ছে:
﴿إِنَّمَا ٱلصَّدَقَٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَٱلۡمَسَٰكِينِ وَٱلۡعَٰمِلِينَ عَلَيۡهَا وَٱلۡمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمۡ وَفِي ٱلرِّقَابِ وَٱلۡغَٰرِمِينَ وَفِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱبۡنِ ٱلسَّبِيلِۖفَرِيضَةٗ مِّنَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٞ﴾[التوبة:60]
অর্থাৎ সাদাকাহ (যাকাত) তো কেবল নি:স্বঅভাবগ্রস্থ ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্যযাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্যদাসমুক্তির জন্যঋণভারাক্রান্তদেরআল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর বিধান।[তওবাঃ৬০]
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের আলোকে যাকাত ব্যয়ের খাত ৮টি। যার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে পেশ করছি:
১. নিঃস্ব ফকীর (الفقير): ফকীহ বলা হয় যার কোন সম্পদ নেইনেই তার উপযোগী হালাল উপার্জন,যদ্বারা তার প্রয়োজন পূরণ হতে পারে। যার খাওয়া-পরা ও থাকার স্থান নেই। অন্যান্য নিত্য-প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই। আবার কেউ বলেছেনফকীর সে যার সামান্য সম্পদ আছে। তবে জীবন ধারণের জন্য অপরের ওপর নির্ভর করে।
ফকীরের সংজ্ঞায় আল্লামা তাবারী বলেনالمحتاج المتعفف الذى لايسأل সে অভাবগ্রস্থ যে নিজেকে সর্বপ্রকার লাঞ্ছনা থেকে রক্ষা করে চলেছেকারোর নিকটই কিছুর প্রার্থনা করে না।
ইবনে আববাসহাসান আল বসরীমুজাহিদইকরামা ও জহুরীর মতে: ফকীর এমন ধরনের নিঃস্ব ব্যক্তিকে বলা হয়যে মানুষের কাছে হাত পাতে না। তবে এক্ষেত্রে ফকীহদের সংজ্ঞা বিষয়ক ইমাম শাফিয়ীর দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্নরূপ। তিনি বলেনফকীর ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়যে কর্মজীবি নয় যার কোন সম্পদ নেই। ইমাম আবু হানিফা সহ অন্যান্য আহলুর রায়গণ বলেন-الفقير أحسن حالا من المسكين ومنالناس মিসকীন অপেক্ষা ফকীরের অবস্থা উত্তম।
মুলকথা হলোএ পর্যায়ের লোকদেরকে যাকাতের খাত থেকে সাহায্য করা যাবে।
এ খাতটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বলে আল্লাহ ৮টি খাতের মধ্যে সর্ব প্রথমে উল্লেখ করেছেন। আর আরবী বাচনিক রীতি আছেসর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কথা সর্বপ্রথম বলা।
২. অভাবগ্রস্থ মিসকীন ( المسكين) : মিসকীন বলা হয় যার এমন পরিমাণ সম্পদ আছে যাদ্বারা তার ওপর নির্ভরশীল লোকদের প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট নয়। মুহাম্মদ আলী সাবুনী বলেনমিসকীন সেই যার কোন কিছুই নেই।[আবার কেউ কেউ বলেনমিসকীন সে যার কিছু সম্পদ আছে কিন্তু লজ্জা সম্মানের ভয়ে কারো কাছে হাত পাতে না যারা। তারা জীবন-জীবিকার জন্য প্রানান্তকর প্রচেষ্টা করার পরও প্রয়োজন মত উপার্জন করতে পারেন না। এতকিছুর পরও নিজের কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারেন না। হাদীসে মিসকীনের পরিচয়ে বলা হয়েছে: «الذى لا يجد غنى يغنية ولا يفطن له فيصدق عليهولا يقوم فيسأل الناس» যে ব্যক্তি তার প্রয়োজন অনুযায়ী সম্পদ পায় না আর না তাকে বুঝতে বা চিনতে পারা যায়যার জন্য লোকেরা তাকে আর্থিক সাহায্য করতে পারে। আর না সে লোকদের কাছে কিছু চায়।
আল-ফাতওয়া আল-হিন্দিয়ায় বর্ণিত আছেমিসকীন এমন ব্যক্তিকে বলা হয়যার কিছুই নেইযে মানুষের কাছে হাত পাতে বেড়ায় এবং খোরাক-পোশাকের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হয়।
এ প্রসঙ্গে মুহাম্মদ (সা.) এর হাদীস উল্লেখযোগ্যতিনি বলেনসেই লোক মিসকীন নয়যাকে একটি বা দুটি খেজুর অথবা দু-এক লোকমা খাবারের লোভ দ্বারে দ্বারে ঠেলে নিয়ে বেড়ায়। বরং মিসকীন সে যে কারো কাছে চায় না। এ সম্পর্কে জানতে হলে কুরআনের এ আয়াত পাঠ করতারা মানুষকে আগলে ধরে সাহায্য চায় না।
যেসব লোকদের প্রয়োজন অনুযায়ী সম্পদ যাকাতের খাত থেকে দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে হযরত ওমর (রা) বলেন إذا أعطيتم فأغنوا যখন দিবেইতখন ধনী বানিয়ে দাও সচ্ছল বানিয়ে দাও।
উপরে বর্ণিত দুটি খাতকে সর্বাগ্রে উল্লেখ করাতে এ কথাই প্রমাণিত হয় যেআল্লাহ সুবহানাহু তাআলা দারিদ্র দুর করা ও ফকীর মিসকীনদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিধানই যাকাত ব্যবস্থার প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য। আর যাকাতের আসল উদ্দেশ্যই তাই।
৩. যাকাত বিভাগের কর্মচারী (العامل): যারা যাকাত আদায়কারীসংরক্ষণকারীপাহারাদারলেখক,হিসাব রক্ষক এবং তার বণ্টনকারী এদের সবাইকে যাকাতের ফান্ড থেকে বেতন দিতে হবে। তবে এমন যেন না হয় যেআমিলদের পারিশ্রমিক দিতে গিয়ে যাকাতের কোন অর্থ অবশিষ্ট না থাকেসে ক্ষেত্রে তাদেরকে আদায়কৃত যাকাতের অর্ধেকের বেশী দেয়া যাবে না।[আল্লাহ তাআলা এ ব্যবস্থা এজন্য করেছেনযেন তারা মালের মালিকদের থেকে অন্য কিছু গ্রহণ না করেন। বরং এটা আসলে রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের আওতায় পড়ে। রাষ্ট্রই এর যাবতীয় ব্যবস্থাপনাগঠন ও পরিচালনা করবে। এসব লোককে নিয়োগও দিবে রাষ্ট্র।
এ ক্ষেত্রে কর্মচারীদের নিযুক্তির শর্তাবলী অন্যতম হচ্ছে:
ক) তাকে মুসলিম হতে হবে;
খ) পূর্ণ বয়স্ক ও সুস্থ্য বিবেকসম্পন্ন হতে হবে;
গ) যাকাতের বিধান সম্পর্কে ইলম থাকতে হবে;
ঘ) আমানতদারী ও কাজের যথেষ্ট যোগ্যতা থাকতে হবে;
ঙ) স্বাধীন মুসলিম নিয়োগ করতে হবেক্রীতদাস নয়।
 ৪. যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য (مؤ لفة القلوب) : ইসলামের জন্য যাদের মন আকর্ষণ করা প্রয়োজন কিংবা ইসলামের ওপর তাদের সুপ্রতিষ্ঠিত রাখার জন্যে এমন লোকদের যাকাতের খাত থেকে প্রদান করা। মুয়াল্লাফাতুল কুলুব কারা তা নির্ণয়ে ফকীহ ও আলিমদের মতামত হচ্ছে:
ইমাম যুহরী বলেন: المؤلفة من أسلم من يهودى أو نصرانى وإن كان غنيا যে ইয়াহুদী বা খৃষ্টান ইসলাম কবুল করবেসে-ই এর মধ্যে গণ্যসে যদি ধনী হয় তবুও।
ইমাম কুরতুবী বলেনوهم قوم كانوا في صدر الإسلام ممن يظهر الإسلام يتألفون يدفع سهم من الصدقة اليهملضعف يقينهم তাদেরকে মুয়াল্লাফাতুল কুলুব বলা হয়যারা ইসলামী যুগে প্রকাশ্যভাবে ইসলাম গ্রহণ করেছেকিন্তু ইসলামের প্রতি তাদের বিশ্বাস দুর্বল হওয়ায় যাকাতের অর্থ দিয়ে তাদেরকে ইসলামের প্রতি অনুরক্ত করা।
মুহাম্মদ আলী সাবুনী বলেনهم قوم من أشرف العرب أعطاهم رسول الله صلى الله عليه وسلم ليتألف قلوبهمعلى الإسلام মুয়াল্লাফাতুল কুলুব হলেনআরবদের উচ্চ মর্যাদাশীল ব্যক্তিত্বদের বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.) ইসলামের দিকে তাদের হৃদয় জয় করার নিমিত্তে উপঢৌকন প্রদান করতেন।
এ শ্রেণীর লোকদের কয়েকটি পর্যায়ে আছেযেমন:
ক) এমন লোক যাকে অর্থ-সম্পদ দিলে সে বা তার গোত্র বা বংশের লোকেরা ইসলাম কবুল করবে বলে আশা করা যায়। যেমন এ রকম অনেক ঘটনা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
খ) নতুন ইসলাম কবুলকারী লোকেরাতাদেরকে যাকাতের খাত থেকে প্রদান। যে অন্য ধর্মের লোক সে যখন ইসলাম কবুল করবেসেই এর মধ্যে গণ্য । সে যদি ধনী হয় তবুও তাকে এ ফান্ড থেকে দেয়া যাবে।
গ) দুর্বল ঈমানের লোকেরাএমন লোক যাদেরকে অর্থ প্রদান করলে ঈমান দৃঢ় ও শক্তিশালী হবে এবং কাফিরদের সাথে জিহাদে তাদের থেকে বেশী আনুকুল্য পাওয়া যাবে। মহানবী (সা) এ শ্রেণীর লোকদেরকে যুদ্ধে প্রাপ্ত গণীমাতের মাল বেশী বেশী প্রদান করতেন। ফলে তারা ইসলামী আদর্শে আরো দৃঢ়তা ও অনুকরণীয় আদর্শে পরিণত হয়েছিলেন।
ঘ) কাফির বা অন্য ধর্মের লোক। যাকে অর্থ উপহার দিলে তারা গোত্র বা বংশের লোকেরা ইসলাম কবুল করবে বলে আশা করা যায়।[এ প্রসঙ্গে হাদীসে বর্ণিত হয়েছেমহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সাফওয়ান ইবন উমায়্যাহকে হুনাইন যুদ্ধে প্রাপ্ত গণীমাতের মাল থেকে প্রদান করেছিলেন। অথচ সে সময়ে তিনি মুশরিক ছিলেন। সাফওয়ান বলেনমহানবী (সা.) এরূপভাবে আমার প্রতি তার দানের হাত সম্প্রসারিত করতে লাগলেন অবশেষে তিনি আমার কাছে সবচেয়ে ভাল মানুষ হিসেবে পরিগণিত হলেন। পরবর্তীতে তিনি মহানবী (সা.) এর মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে ইসলাম কবুল করেছিলেন বলে জানা যায়।
ঙ) শত্রু পক্ষের প্রতিবন্ধকতা ও শত্রুতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে এমন শ্রেণীর লোক যার দুষ্কৃতির ভয় করা হয়সীমান্তে অমুসলিম শত্রু দেশের আক্রমণ প্রতিরক্ষা ও মুসলিম সমাজকে রক্ষা করতে পারে এমন লোকতাদেরকে যাকাতের ফান্ড থেকে অর্থ প্রদান করা।
৫. দাসমুক্তির জন্য (الرقاب) : যে ক্রীতদাস তার মালিককে অর্থ প্রদানের বিনিময়ে মুক্তিলাভের জন্য চুক্তিবন্ধ হয়েছে। এখানে এ পর্যায়ে মুসলিম যুদ্ধবন্ধীও এ খাতের আওতায় পড়বে। কাযী ইবনুল আরাবী বলেনমুসলিম দাসকে যখন মুক্ত করতে যাকাতের খাত থেকে দেয়া যাবেঠিক তেমনি মুসলিম বন্দীকে কাফিরদের দাসত্ব শৃঙখলা ও লাঞ্ছনা থেকে মুক্ত করার কাজে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা অধিক উত্তম বলে বিবেচিত হবে।এ বিষয়ে বিখ্যাত তাফসীরকারক সাইয়্যেদ রশীদ রিযা বলেনفى الرقاب বলে যাকাতের যে ব্যয় খাতটি নির্দিষ্ট করা হয়েছে তাকে পরাধীন গোত্র ও জাতিসমূহকে মুক্ত করার কাজে ব্যবহার করা যাবে।
৬. ঋণভারাক্রান্তদের জন্য (الغارمون) : এমন ব্যক্তি যে ঋণভারাক্রান্ত অবস্থায় নিপতিততাকে যাকাতের ফান্ড থেকে সাহায্য করা। তবে যে কোন অসৎ কাজে বা অপব্যয়ের কারণে ঋণভারাক্রান্ত হয়েছে তাওবা না করা পর্যন্ত যাকাতের ফান্ড দেয়া যাবে না। আবার ঋণভারাক্রান্ত এর পর্যায়ে যেমন জীবিত ব্যক্তি শামিলতেমনি মৃত্যু ব্যক্তিও এর আওতায় পড়ে। মৃতব্যক্তি যিনি ঋণ রেখে মারা গিয়েছেন। ইমাম কুরতুবী (রা.) তাই বলেছেন।
ইবনুল হুমাম বলেছেনগারিমুন হচ্ছে সে সমস্ত লোক যাদের উপর ঋণের বোঝা চেপে আছে অথবা লোকদের নিকট পাওনা আছে কিন্তু তারা তা আদায় করছে নাতাকে গারিমুন বলার প্রচলন আছে।
৭. আল্লাহর পথে: আল্লাহর পথ বলতে আকীদা বিশ্বাস ও কাজের দিক দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি পর্যন্ত পৌছিয়ে দেয় যে পথতাই আল্লামা রশীদ আহমদ বলেছেনفى سبيل الله ইসলামী শাসন পুন:প্রতিষ্ঠার চেষ্টা প্রচেষ্টার কাজই ফী সাবিলিল্লাহর খাত। অর্থাৎ ইসলামী জীবন বিধান পুন:প্রতিষ্ঠার জন্যে সর্বাত্মক চেষ্টা প্রচেষ্টা চালানোযেখানে ইসলামী আইন বিধান বাস্তবায়িত হবেমুসলিম সভ্যতার পুনরাভ্যুদয়মুসিলম উম্মতের পুনজার্গরণইসলামী আকীদা বিশ্বাসআচার-আচরণ,শরীয়াতচরিত্র ইত্যাদি সবকিছু পুরামাত্রায় কার্যকর হবে।
ইবনুল আসীর বলেনفى سبيل الله এর অর্থ এমন কার্যক্রমকে বুঝায় যা খালিস নিয়্যাত আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে হয়ে থাকেতা ফরয নফল ও বিভিন্ন ধরনের ইবাদত বন্দেগীকে বুঝায়।
জালালুদ্দিন সুয়ুতী বলেনفى سبيل الله এর অর্থ যারা জিহাদের কাছে নিয়োজিত আছে।
সলফে সালেহীনদের মতে ফী সাবিলিল্লাহ আল্লাহর দ্বীনের প্রচারপ্রতিষ্ঠা ও ইসলামী দেশষমূহের প্রতিরক্ষার জন্য পরিচালিত প্রচেষ্টা সাধনা ও সামগ্রিক তৎপরতাকে বুঝায়। এখানে فى سبيل الله অর্থ স্বশস্ত্র সংগ্রামকে বুঝানো হয়েছে।
ইসলাম বিরোধী শক্তি তাদের চেষ্টা সাধনা ও অর্থ শক্তি দ্বারা লোকদেরকে আল্লাহর পথে চলার বাধাদানে নিয়োজিত হলে বিত্তশালী মুসলিমদের কর্তব্য হবে তাদের শক্তিসামর্থ ও অর্থ দ্বারা কুফরী শক্তি প্রতিরোধকারীদের সাহায্য করা। তাই এরূপ সাহায্য করাই ফরয যাকাতের একটি অংশ নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
মূলত আল্লাহর পথের পর্যায় ও স্তর অনেক। যেসব কাজের নির্দেশনা কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছেতা সবই এর আওতায় পড়বে। ওলামায়ে কিরামদের বিশ্লেষণে জিহাদের কয়েকটি পর্যায়ের অন্যতম হচ্ছে:
এক. দাওয়াত ইলাল্লাহআল্লাহর পথে আপামর মানুষকে দাওয়াত দেয়া। যুগে যুগে সকল নবী রাসূলগণ তাদের সমসাময়িক জনগণকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দিয়েছেন। তারা বলেছেন
﴿ يَٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرُهُ  [الأعراف:59
অর্থ হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর ইবাদত করতিনি ব্যতিত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ নেই।[আনফালঃ৫৯]
 দুই. নিজেকে সত্যের সাক্ষ্য হিসেবে পেশ করা। আল্লাহ বলেন: ‘‘কথায় কে উত্তম ঐ ব্যক্তির চেয়ে যে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করেসৎকর্ম করে এবং বলে আমি তো অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত।
তিন. জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ: আল্লাহর বাণী﴿وَجَٰهِدُواْ فِي ٱللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِۦۚ  [الحج:78আল্লাহর পথে যেভাবে জিহাদ কর আল্লাহর পথে যেভাবে জিহাদ করা উচিত।[হাজ্জঃ৭৮]
৮. মুসাফিরদের জন্য: এমন যার নিজ আবাসস্থলে সম্পদ আছেকিন্তু সফরে সে বিপদগ্রস্থ ও নি:স্ব তাকে যাকাতের তহবিল থেকে সাহায্য করা। তবে সে সফর পাপের কাজের বা অনুরূপ পর্যায়ের কোন সফর হওয়া যাবে না।
আল্লামা তাবারী মুজাহিদ সূত্রে বর্ণনা করেছেন যেযাকাতের সম্পদ ধনী হওয়া সত্ত্বেও এ ধরনের নি:স্ব পথিকের একটি হক রয়েছে। যদি সে তার নিজের ধন-সম্পদ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
মুসাফিরদেরকে খোরাক-পোশাকের ব্যয় এবং লক্ষ্যস্থল পর্যন্ত পৌঁছার জন্য যা প্রয়োজন অথবা তার ধন-মাল পথিমধ্যে কোথাও থাকলে তা যেখানে রয়েছেসে পর্যন্ত পৌঁছার খরচ যাকাতের ফান্ড থেকে দিতে হবে।
কতুটুকু পরিমাণ দিতে হবে এ ব্যাপারে দুটি মত পাওয়া যায়। এক: যাতায়াত ও অবস্থানের প্রয়োজনীয় খরচ ছাড়া অতিরিক্ত দেয়া যাবে না। দুই. প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্রহণ করা তার বৈধ হবে।

 আর্থ-সামাজিক উন্নযনে যাকাতের ভূমিকা

আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যাকাতের ভূমিকা অপরিসীম। ড. হাম্মুদাহ আবদালাতি এ প্রসঙ্গে বলেন,জরুরী পরিস্থিতিতে যাকাতের রেটের কোন সীমারেখা নেই। যে যত বেশী দান করবে সবার জন্য ততই মঙ্গলজনক। বিভিন্ন তহবিল গঠনে যে প্রচারণা চালানো হয় যাকাত তাদের সব লক্ষ্যই পুরণ করে।
১. দুশ্চিন্তামুক্ত সমাজ গঠন: এ কথা আজ অবিসংবাদিত সত্য যেযাকাত ব্যবস্থার মাধ্যমে জাতি সম্পূর্ণরুপে দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারে। একটি সুখীসুন্দর ও উন্নত সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বিত্তশালী মুসলিমদের অবশ্যই তাদের সম্পদের একটি অংশ দরিদ্র ও অভাবগ্রস্থদের দুর্দশা মোচনের জন্য ব্যয় করতে হবে। এর ফলে যে শুধু অসহায় এবং দুস্থ মানবতারই কল্যাণ হবে তা নয়,সমাজে আয় বন্টনের ক্ষেত্রে বৈষম্য অনেকখানি হ্রাস পাবে। [1] কোন ব্যক্তির কাছে অর্থ-সম্পদ নেই;যাকাত তাকে অর্থের যোগান দেবেমৃত্যুর পরে তার পরিবার পরিজন ও সন্তানদের লালন-পালন করবেবেকারঅক্ষমবিকলাঙ্গরুগ্ন ও বিধবাদের সম্মানজনক জীবন যাপনের নিশ্চয়তা দেবে।সে সমাজে চুরিডাকাতিহত্যালুণ্ঠনচাঁদাবাজিআত্মসাৎজবরদখলসুদ-ঘুষসহ সব অনৈতিক কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
২. যাকাত ধনী দরিদ্রের বৈষম্য দূরীকরণে আর্থ-সামাজিক সেতুবন্ধন: প্রকৃতপক্ষে যাকাত ধনী দরিদ্রের বৈষম্য দুর করে ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ইসলামী নৈতিকতা ও অর্থনৈতিক বিধান মেনে চললে সমাজে কখনও ধনী দরিদ্রের আকাশ চুম্বি পার্থক্য সৃষ্টি হতে পারে না। বর্তমানে শ্রেণী বিভক্তবৈষম্যপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থার কারণে এক শ্রেণীর লোক সব সময় অবহেলিত। একমাত্র যাকাত ব্যবস্থাই পারে শ্রেণীহিন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। প্রকৃতপক্ষে যাকাত,সাদকা দান উপঢৌকনআপ্যায়নখাদ্য বিতরনসালাম বিনিময় এ সকলের মাধ্যমে সম্প্রীতি,ঐক্যবোধ পারস্পারিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা এবং কল্যাণ কামনার বুনিয়াদের সকল বৈষম্য দুর হয়ে সাম্য মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্বভিত্তিক কল্যাণময় সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই ইসলামে সামাজিক বৈষম্য দুর করে সাম্য মৈত্রীর সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যাকাত বিধান এক বিষ্ময়কার ব্যবস্থার নাম।
৩. যাকাত ব্যবস্থায় ধনীদের সম্পদে দরিদ্রের অধিকার: যাকাত ব্যবস্থার মাধ্যমে ধনীদের সম্পদে গরীবদের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আল্লাহ দারিদ্রমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের ব্যবস্থা করেছেন। যাকাত দুস্থ দারিদ্রের প্রতি ধনীদের দয়া বা অনুকম্পা নয় বরং অধিকার।[2] এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন,
 ﴿ وَفِيٓ أَمۡوَٰلِهِمۡ حَقّٞ لِّلسَّآئِلِ وَٱلۡمَحۡرُومِ  [الذاريات:19]
 এবং তাদের সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্থ ও বঞ্চিতদের হক। [যারিয়াতঃ১৯]
অন্যত্র বলা হয়েছে ধনীদের যা প্রদান করতে বলা হয়েছে তা বদান্যতা নয়বরং গরীবদের অধিকারحق অধিকার হিসেবেই তা গরীবদের নিকট ফেরত আসা উচিত। বস্ত্তত গরীবরাই তাদের শ্রম দ্বারা জাতীয় সম্পদ সৃষ্টি করে।[3]
৪. অভাবদুর্দশাক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সমাজ গঠনে যাকাত: যাকাতের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার দারিদ্র বিমোচনযা সামাজিক নিরাপত্তার মূল চালিকা শক্তি। যাকাত বন্টনের ৮টি খাতের মধ্যে ৪টি খাতই (ফকিরমিসকিনদাসমুক্তিঋণগ্রস্থ) সর্বহারাঅসহায়অভাবগ্রস্থ জনগোষ্ঠীর জন্য নিবেদিত। এছাড়া নও মুসলিমের খাতটাও বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে এর মধ্যে আসতে পারে। মহানবী (সা.) বলেছেনতোমরা দরিদ্র লোকের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করো। তাদের প্রতি সাধ্যমত অনুগ্রহ ও উপকার করো। আখিরাতের পথে তারা তোমাদের জন্য সংগৃহীত ধন এবং প্রধান সম্বল। কিয়ামতের দিন আল্লাহ রাববুল আলামিন দরিদ্রের প্রতি আদেশ করবেন যেপৃথিবীতে যারা তোমাদের এক লোকমা অন্ন এবং এক ঢোক পানি দান করেছেএক প্রস্থ বস্ত্র দান করেছে আজ তোমরা তাদের হাত ধরে জান্নাতে চলে যাও।ওমর (রা) বলেছেনআমার রাজ্যে ফোরাত নদীর তীরে যদি একটি কুকুরও না খেয়ে মারা যায় তাহলে তার জন্য আমি উমরকে আল্লাহর কাছে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িযে জবাবদিহি করতে হবে।
৫. যাকাত সম্পদ পবিত্র করে সামাজিক সম্প্রীতি স্থাপন করে:
মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ পালন ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যে যাকাত দেয় তা তার নিজের জন্য পবিত্রকারী।[1] এ কাজটিকে যাকাত বলার কারণ হলো এভাবে যাকাতদাতার অর্থসম্পদ এবং তার নিজের আত্মা পবিত্র ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। যে ব্যক্তি আল্লাহর দেয়া অর্থ সম্পদ থেকে আল্লাহর বান্দাদের অধিকার বের করে দেয় নাতার অন্তরে বিন্দুমাত্র কৃতজ্ঞতা নেই। সে সাথে তার আত্মা থেকে যায় অপবিত্র। কেননা আল্লাহ যে তার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এ জন্য তার অন্তরে বিন্দুমাত্র কৃতজ্ঞতা নেই। এ প্রসঙ্গে আল কুরআনের আসছে 

 ﴿ خُذۡ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡ صَدَقَةٗ تُطَهِّرُهُمۡ وَتُزَكِّيهِم 
তাদের সম্পদ হতে যাকাত (সাদাকা) গ্রহণ করবেযা দ্বারা তুমি তাদের পবিত্র করবে এবং পরিশোধিত করবে।[2]
যাকাত ধনী ব্যক্তিদের সম্পদকে পবিত্র করে। যে পরিমাণ অর্থ সম্পদ যাকাত হিসেবে ধনীদের উপর ফরয হয় তাতে দাতার কোন নৈতিক ও আইনগত অধিকার থাকে না। এ অর্থ সম্পদ গ্রহীতার অধিকার হিসেবেই চি‎‎হ্নিত হয়। দাতা যাকাত দিতে ব্যর্থ হলে তার অর্থ এ দাঁড়ায় যে তিনি অন্যের সম্পদ বেআইনী ভোগ দখল করছেন। এ বেআইনী সম্পদকে ভোগ দখল করার কারণে তার সব সম্পদ অপবিত্র হয়ে যায়। যাকাত কেবল দাতার সম্পদকে পবিত্র করে না বরং তার হৃদয়কে সুনির্মল ও প্রসারিত করে। তার মন-মানস আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা চেতনামূলক হয়ে সমাজ কেন্দ্রিক সঞ্জিবিত হয়। সাথে সাথে সম্পদ লিপ্সা ও স্বার্থপরতা ইত্যাদি দূর হয়। যাকাত প্রাপ্তির ফলে গ্রহীতার মন থেকে ধনীদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষদ্বন্দ্ব-সংঘাতশত্রুতা ও ঘৃণার মানসিকতা দূর হয়ে যায়।[3] যার কারণে সমাজের সর্বস্তরে সম্প্রীতি বিরাজ করে সহমর্মিতা ও সহনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
৬. শিক্ষা প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে যাকাতের ভূমিকা
জনশক্তিকে জনসম্পদে পরিণত করার জন্য যাকাতের অর্থ দিয়ে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণমূলক অনেক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা সম্ভব। যাকাতের অর্থ দিয়ে গরীব অথচ মেধাবী শিক্ষার্থীদের বই পুস্তক,খোরাকপোশাকশিক্ষা উপকরণসহ লিল্লাহবোর্ডিং এ উন্নততর ও গুণগত শিক্ষা প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে গরীব অথচ মেধাবী শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া যাবে।
৭. যাকাত ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা দেয়
প্রাকৃতিক দুর্বিপাকদুর্ঘটনা বা অন্য কোন কারণে কোন ব্যক্তি যদি তার অর্থ সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়ঋণগ্রস্থ হয়ে যায় তাহলে যাকাত তার ঋণ পরিশোধ করবেতার হারানো ব্যবসা বা অর্থ সম্পদ ফিরিয়ে আনার জন্য যথাযথ সহযোগিতা করবে। এখানে বলা দরকার যে তারা এমন ঋণগ্রস্থ যেনিজের অর্থ সম্পদ দিয়ে ঋণ পরিশোধ করলে আর নিসাব পরিমাণ অর্থ নিজের কাছে থাকে না। এমন ব্যক্তি উপার্জনশীল হোকফকীর বলে পরিচিত হোক কিংবা ধনী হোক সর্বাবস্থায় তাকে যাকাত থেকে সাহায্য করা যেতে পারে।
৮. উৎপাদন বৃদ্ধিতে যাকাতের ভূমিকা
আল্লাহ প্রদত্ত ও নির্দেশিত যাকাত ব্যবস্থায় অর্থনীতিতে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। যাকাত নিঃস্ব ব্যক্তিদের ভিক্ষার হাতকে কর্মীর হাতে রূপান্তরিত করে। যে কোন উৎপাদন কাজে শ্রমের সাথে পুজির সংযোজন অনস্বীকার্য। মানুষ তার শ্রমের মাধ্যমে বিষ্ময়কর উন্নয়ন ঘটাতে পারেকাজে লাগাতে পারে অসংখ্য প্রকৃতির সম্পদকেপারে মরুভূমিকে উর্বর জমিতে পরিণত করতে। তবে এর জন্য প্রয়োজন যন্ত্রপাতি ও হাতিয়ার যা অর্থনীতির ভাষায় পুঁজি দ্রব্য বলা হয়ে থাকে। পুঁজির অভাবে বহু কর্মক্ষম দারিদ্র জনগোষ্ঠী বেকারত্ব জীবন যাপন করছে। যাকাতের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করে এই সকল দরিদ্র জনশক্তিকে উৎপাদন কর্মকান্ডে ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব
৯. আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যাকাতের আরো কতিপয় পদক্ষেপ
এদেশের তথা সারা পৃথিবীতে অসংখ্য বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নিজ পরিবারের গলগ্রহ হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার কারণে পাশ্চাত্য পরিবার প্রথা প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার কারণে বৃদ্ধ বয়সে সেখানকার নারী পুরুষেরা তাদের সন্তান সন্ততি হতে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় সরকারের করুনায় বেঁচে থাকে। অথচ যাকাত দিতে পারে তাদের সুন্দর স্বপ্নীল জীবনের নিরাপত্তা।

 কন্যা দায়গ্রস্থ পিতা অর্থের অভাবে কন্যা বিবাহ দিতে পারে না। এ সমস্ত অক্ষম পিতার কন্যার বিয়েতে যাকাত তার নিজস্ব ফান্ড থেকে অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে দিয়ে দিবে।

মুসাফিরদের সাহায্য প্রদানদরিদ্র শিশুদের পুষ্টি সাহায্যইয়াতীম প্রতিপালনে ব্যবস্থা গ্রহণশীত বস্ত্ত বিতরণস্বাস্থ্য সম্মত শৌচাগারনও-মুসলিম পুর্ণবাসনইউনিয়ন মেডিকেল সেন্টার স্থাপন,অসহায় মায়েদের প্রসবকালীন সাহায্য প্রদানঋণগ্রস্থ কৃষকদের ঋণ পরিশোধে সহায়তাসহ নানামুখী আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে যাকাত তার সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী শান্তির সমাজ কায়েমে অগ্রণী ভূমিকা রাখে।

এছাড়া দ্বীনী শিক্ষা অর্জনে সহযোগিতাছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বৃত্তিমহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণপ্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণবেকারদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্হা না করা পর্যন্ত ভাতা প্রদানদুস্থ পরিবারের জন্য গরু-ছাগলসহ অন্যান্য পশু কিনতে সাহায্য দান, গৃহহীনদের গৃহ তৈরী করে দেওয়া,অসহায় গরীব মানুষের গৃহস্থালী আসবাবপত্র ক্রয় করতে সহযোগিতা করাসহ সব প্রকার উন্নয়ন কর্মসূচীতে যাকাতের সরব উপস্থিতিই সুখী সমৃদ্ধশালী দেশজাতি,ডিজিটাল সমাজ গড়ার নিশ্চয়তা দিতে পারে।

যাকাতের মূল উদ্দেশ্যই তো ক) গরীবের প্রয়োজন পুরণখ) ধনীরা তাদের কষ্টোপার্জিত সম্পদকে বিলিয়ে দেয়ার চেতনা ও গ) আল্লাহর নৈকট্য লাভ এ টার্গেট পুরণ করার নিমিত্তেই আর্থ-সামাজিক বহুবিধ পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।[4]
সাদাকাতুল ফিতর
দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে শুরু করছি
১. রহমতমাগফিরাত ও নাজাতের মহিমান্বিত মাস রমাদানের শেষের দিকে ঈদুল ফিতরের আগে সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরা প্রদান করা অপরিহার্য। প্রত্যেক সচ্ছল মুসলিম - যার ঘরে ঈদুল ফিতরের আগের রাতে নিজের ও পরিবারের খাবারের প্রয়োজনের অতিরিক্ত কমপক্ষে এক সাপরিমাণ খাবার থাকে - তাকেই সাদাকাতুল ফিতরা আদায় করতে হয়।
হযরত ইবনে উমর রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিম দাস ও স্বাধীন ব্যক্তিপুরুষ ও মহিলা এবং বালক ও বৃদ্ধের ওপর সদকায়ে ফিতর (সিয়ামের ফিতরা) এক সাখেজুর কিংবা এক সা যব নির্ধারিত করেছেন। তিনি এটাও আদেশ করেছেন যেলোকদের (ঈদের) সালাতে যাবার আগেই যেন তা আদায় করা হয়
এক সা হলো একসাথে দুহাত ভরে চারবারে যে পরিমাণ হয় (four full double-handfuls); এটি আসলে সর্বজনীন একটি আয়তনভিত্তিক মাপের এককতাই উপাদানের ভিন্নতার প্রেক্ষিতে এর ওজন বিভিন্ন হয়। ফলে স্বভাবতই তা যবগমখেজুরকিসমিস বা চালের ক্ষেত্রে ভিন্ন হবে। চালের ক্ষেত্রে হয় আনুমানিক ২.১ কেজিতবে সাবধানতার জন্য জনপ্রতি ২ কেজি ২৫০ গ্রাম ধরে নেয়াই উত্তম।সহীহ আল-বুখারী: ১৪০৬
এক্ষেত্রে লক্ষনীয় যেদৈনন্দিন ও পারিবারিক কাজে সহায়তা দানকারী লোকেরা - যারা নিয়োগকারীর ওপর নির্ভরশীল - তাদের পক্ষ থেকেও সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা উচিত। এমনকি মাতৃগর্ভের সন্তানের জন্যও ফিতরা আদায় করা যেতে পারে।
২. অধিকাংশ ফকীহ (Islamic scholars) দের মতে অর্থ বা টাকা-পয়সা নয়খাদ্যদ্রব্য দিয়েই ফিতরা আদায় করা উচিত এবং এক্ষেত্রে আঞ্চলিক প্রধান খাদ্য (local staple food stuff) যেমনবাংলাদেশের জন্য চাল প্রদান করা যাবে:
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেননবী করীম সা:এর জামানায় ঈদুল ফিতরের দিন আমরা ফিতরা বাবদ (মাথাপিছু) এক সা পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য প্রদান করতাম। তিনি বলেন: তখন আমাদের খাবার ছিল যবকিসমিসপনির ও খুরমা।
সহীহ আল-বুখারী: ১৪১৩
৩. রমাদানের ২৮ তারিখ রাত থেকে ঈদের সালাতের আগেই ফিতরা আদায় করতে হয়। নবী করীম সা: ও সাহাবায়ে কেরামগণ ঈদের দুতিন দিন আগে থেকেই ফিতরা আদায় করতেন এবং রমাদান মাস তখন কখনো ২৯ অথবা ৩০ দিনের হতো। ঈদের সালাতের আগেই তা আদায় করা উচিতকারণ:
হযরত ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত। নবী করীম সা: বলেছেন: সায়েমকে (রোযাদারকে) অহেতুক ও অশালীন কথা ও কাজ থেকে পবিত্র করা এবং অসহায় মানুষের আহার যোগান দেয়ার উদ্দেশ্যে যাকাতুল ফিতর-এর বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে। কাজেইযে ব্যক্তি (ঈদের) সালাতের আগে (ফিতরা) আদায় করে তা যাকাত হিসেবে গৃহীত হয়আর যে সালাতের পরে তা আদায় করে তা হয় এক ধরনের দান।সুনানে আবু দাউদ
৪. নিজ এলাকার দরিদ্রদের মাঝেই ফিতরা প্রদান করা উচিত। যদি এলাকায় উপযুক্ত কোনো গ্রহীতা না পাওয়া যায় তাহলে তা কোনো সম্মিলিত উদ্যোগ বা সংস্থার মাধ্যমে খাদ্য বা বিক্রিত অর্থ হিসেবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা উচিত। কিন্তু কোনো মসজিদ তৈরি বা দাতব্য কার্যক্রমে ফিতরা ব্যবহার করা যায় না।
৫. একজনের ফিতরা একজনকে অথবা অনেকের মাঝেও বিতরণ করা যায়।
৬. যারা অধিক অভাবগ্রস্ত এবং পরিবারের অনেকেই যার ওপর নির্ভরশীল তাদের জন্য ফিতরা আদায়ের প্রয়োজন নেই। মহান আল্লাহ তালা বলেন:
আল্লাহ তোমাদের সাধ্যের অতীত কিছু চাপিয়ে দেন না।সূরা আল-বাকারাহ: ২৮৬

রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন: যাদের সাধ্য নেইতাদের পক্ষ থেকে সাদাকাহ আদায়ের কোনো প্রয়োজন নেই। আমি যদি তোমাদেরকে কিছু করার নির্দেশ দেই তা তোমরা তোমাদের সাধ্য অনুযায়ী করো।

কোন মন্তব্য নেই:

Comment here />

Widget ByBlogger Maruf
Widget ByBlogger Maruf