নিয়ত সহীহ করা- নিয়ত বিশুদ্ধ করে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হজ্জ করবে৷
সফর আরম্ভ- পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর নিকট থেকে সুন্নত তরীকা অনুপাতে বিদায় নিবে৷ আত্মীয়-স্বজনকে বিমান বন্দরে আসতে নিরূত্সাহিত করবে৷
সফর আরম্ভ- পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর নিকট থেকে সুন্নত তরীকা অনুপাতে বিদায় নিবে৷ আত্মীয়-স্বজনকে বিমান বন্দরে আসতে নিরূত্সাহিত করবে৷
পবিত্র ওমরার সফরের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী- (১) পুরুষদের ইহরামের কাপড় একসেট (শরীরের নীচের অংশে পরার জন্য আড়াই হাত বহরের আড়াই গজের এক টুকরা সাদা কাপড় আর গায়ের চাদরের জন্য একই বহরের তিন গজ কাপড় )৷ শীতকালে ইহরামের জন্য এক সেট মোটা কাপড় তথা তোয়ালে সেট নেওয়া উচিত্৷
(২) ইহরামের সময় কোমরে বাঁধার একটি বেল্ট৷
(৩) জামা /পাঞ্জাবী, পায়জামা প্যান্ট, লুঙ্গি, গেঞ্জি, টুপি প্রয়োজনমত ৷
(৪) নরম ফিতাওয়ালা স্পঞ্জের স্যান্ডেল দুই জোড়া এবং জুতা, চামড়ার মোজা এক জোড়া করে৷
(৫) তাওয়াফের সময় জুতা/স্যান্ডেল রাখার জন্য একটি কাপড়ের ব্যাগ এবং কাঁধে ঝুলিয়ে রাখার ব্যাগ ১টি (পানির বোতল, প্রয়োজনীয় পুস্তকাদি, জায়নামায, ছাতা (সব সময় নিজের কাছেরাখার জন্য)৷
(৬) মেসওয়াক, ব্রাশ, পেস্ট, টয়লেট পেপার, আয়না, চিরুনী, তেল, সাবান, ভেসলিন, ফেসক্রীম, লিপজেল, খিলাল, কটনবার, নেইল কাটার, সেফটি রেজার ও ব্লেড, ছোটকাঁচি, ছুরি, সুঁই-সুতা, কাপড় টাঙ্গানোর জন্য রশি ইত্যাদি প্রয়োজন মত ৷
(৭) খাবার প্লেট, গ্লাস, বাটি, চামচ একটি করে৷
(৮) ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনসহ নিয়মিত সেবনের প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র, ব্যাথা, পেটের অসুখ, সর্দি-কাশি, জ্বর, ইত্যাদির ঔষধ, খাবার স্যালাইন প্রয়োজন মত৷
(৯) চাকাওয়ালা ব্যাগ/সুটকেস ১টি (এটির মাপ- ২২X১৮ ইঞ্চি হবে), হ্যান্ড ব্যাগ ১টি (এটির মাপ- ১৮X১০ ইঞ্চি হবে), ব্যাগ বা সুটকেস অবশ্যই চাকা ওয়ালা হতে হবে ৷ তা না হলে মালামাল পরিবহনে অসুবিধা হয়৷ ব্যাগে ইংরেজী ও আরবীতে নিজের নাম-ঠিকানা, পাসপোর্ট নাম্বার লিখে নিতে হবে৷
(১০) মহিলাদের ইহরামের জন্য সালোয়ার-কামিজ, বোরকা, হাত ও পা মোজা, মাথার ক্যাপ, ইহরামের জন্য পরিধেয় সালোয়ার-কামিজ ব্যাতীত এক মাস ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় সালোয়ার, কামিজ, ওড়না ও স্যান্ডেল সঙ্গে নিবে৷
(৩) জামা /পাঞ্জাবী, পায়জামা প্যান্ট, লুঙ্গি, গেঞ্জি, টুপি প্রয়োজনমত ৷
(৪) নরম ফিতাওয়ালা স্পঞ্জের স্যান্ডেল দুই জোড়া এবং জুতা, চামড়ার মোজা এক জোড়া করে৷
(৫) তাওয়াফের সময় জুতা/স্যান্ডেল রাখার জন্য একটি কাপড়ের ব্যাগ এবং কাঁধে ঝুলিয়ে রাখার ব্যাগ ১টি (পানির বোতল, প্রয়োজনীয় পুস্তকাদি, জায়নামায, ছাতা (সব সময় নিজের কাছেরাখার জন্য)৷
(৬) মেসওয়াক, ব্রাশ, পেস্ট, টয়লেট পেপার, আয়না, চিরুনী, তেল, সাবান, ভেসলিন, ফেসক্রীম, লিপজেল, খিলাল, কটনবার, নেইল কাটার, সেফটি রেজার ও ব্লেড, ছোটকাঁচি, ছুরি, সুঁই-সুতা, কাপড় টাঙ্গানোর জন্য রশি ইত্যাদি প্রয়োজন মত ৷
(৭) খাবার প্লেট, গ্লাস, বাটি, চামচ একটি করে৷
(৮) ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনসহ নিয়মিত সেবনের প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র, ব্যাথা, পেটের অসুখ, সর্দি-কাশি, জ্বর, ইত্যাদির ঔষধ, খাবার স্যালাইন প্রয়োজন মত৷
(৯) চাকাওয়ালা ব্যাগ/সুটকেস ১টি (এটির মাপ- ২২X১৮ ইঞ্চি হবে), হ্যান্ড ব্যাগ ১টি (এটির মাপ- ১৮X১০ ইঞ্চি হবে), ব্যাগ বা সুটকেস অবশ্যই চাকা ওয়ালা হতে হবে ৷ তা না হলে মালামাল পরিবহনে অসুবিধা হয়৷ ব্যাগে ইংরেজী ও আরবীতে নিজের নাম-ঠিকানা, পাসপোর্ট নাম্বার লিখে নিতে হবে৷
(১০) মহিলাদের ইহরামের জন্য সালোয়ার-কামিজ, বোরকা, হাত ও পা মোজা, মাথার ক্যাপ, ইহরামের জন্য পরিধেয় সালোয়ার-কামিজ ব্যাতীত এক মাস ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় সালোয়ার, কামিজ, ওড়না ও স্যান্ডেল সঙ্গে নিবে৷
পবিত্র ওমরার বিস্তারিত বর্ণনা
পবিত্র কুরআনে হজ্জ ও ওমরাহ উভয়টির কথা এসেছে৷ এরশাদ হয়েছে: واتموا الحج والعمرة لله অর্থাত্, তোমরা হজ্জ ও ওমরাহ আল্লাহর জন্য পরিপূর্ণ কর৷ (সূরা বাকারা)
ওমরাহ কাকে বলে? ওমরাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ- যিয়ারত করা, দর্শন করা বা আবাদ জায়গার ইচ্ছা করা৷
শরীয়তের ভাষায়- শরীয়ত নির্দেশিত বিশেষ পদ্ধতিতে ইহরামসহ ক’াবা শরীরে চর্তুদিকে তাওয়াফ করা, ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ পাহাড়দ্বরে মধ্যস্থলে সাঈ করা এবং মাথা মুন্ডানোকে ওমরাহ বলে৷ এটিকে ছোট হজ্জও বলা হয়৷
ওমরার ফযীলত- বহু হাদীসে ওমরার ফযীলত বর্ণিত আছে৷ যথা-
(১) হযরত ইবনে মাসউদ (রা:) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা:) এরশাদ করেছেন, তোমরা হজ্জ ও ওমরাহ একই সঙ্গে সম্পন্ন করো৷ কারণ, এগুলো দারিদ্র্য ও গুনাহকে এমনভাবে দূর করে যেভাবে কামারের হাঁপর (আগুন) লোহা, সোনা ও রুপার ময়লা দূর করে দেয়৷ (তিরমিযী শরীফ)
(২) হুজুর (সা:) এরশাদ করেছেন, রমজান মাসে ওমরাহ পালন করা সাওয়াবের দিক দিয়ে এক হজ্জের সমান৷ অন্য একটি রেওয়ায়েতে এসেছে যে, ঐ হজ্জের সমান যা আমার সাথে পালন করা হয়েছে৷ (তিরমিযী শরীফ)
(৩) হজ্জ এবং ওমরাহ পালনকারীরা আল্লাহর মেহমান৷ তারা যদি আল্লাহর নিকট কোন প্রার্থনা করে তিনি তা কবুল করে থাকেন৷ এবং যদি পাপ হতে ক্ষমা চায় তবে তাদের পাপ ক্ষমা করেন৷
(৪) হাদীসে এসেছে, এক ওমরাহ থেকে অন্য ওমরাহ- এ দু’রে মাঝে কৃত পাপের কাফ্ফারা স্বরূপ৷ (বুখারী শরীফ)
কখন ওমরাহ করবে- ওমরাহ বছরের যে কোন সময় পালন করা জায়েয৷ শুধু ৫দিন অর্থাত্ ৯ই যিলহজ্জ হতে ১৩ই যিলহজ্জ পর্যন্ত ওমরার ইহরাম বাঁধা মাকরূহে তাহরীমী৷ রমজানের ওমরাহ ঐ হজ্জের সমান, যা হুজুর (সাঃ)-এর সাথে সমাপন করা হয়েছে৷
ওমরাহ করা সুন্নত না ওয়াজিব?
ওমরার মীকাত (ইহরাম বাঁধার স্থান)- পাকিস্তান ভারত বাংলাদেশ উপমহাদেশসহ প্রাচ্য ও দূরপ্রাচ্য হতে হজ্জ/ওমরাহ পালনকারীদের জন্য মীকাত হচ্ছে “ইয়ালাম্লাম্” যা মক্কা থেকে ১২০ কি. িম. দূরে অবস্থিত৷ আর মক্কা মুকাররামা হতে উমরাহ পালন কারীদের জন্য ওমরার ইহরামের মীকাত হচ্ছে ‘হিল্ল’ (হারাম সীমার বাহিরের ভূমি) ত েতানঈম নামক স্থানেই (মসজিদে আয়েশা) ইহরাম বাঁধা উত্তম৷ মীকাতের বাহির থেকে আসলে মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধবে৷
ওমরার কার্যাবলী- দু’টি ফরয ও দু’টি ওয়াজিব: ১. ওমরার জন্য ইহরাম বাঁধা (শর্ত/ফরয)৷ ২. তাওয়াফ করা (রুকন/ফরয)৷ ৩. সাঈ করা (ওয়াজিব)৷ ৪. মাথা মুন্ডাাে বা ছাঁটানো (ওয়াজিব)৷
ওমরার ফরয- ওমরার ফরয ২টি: ১. ইহরাম বাঁধা৷ ২. তাওয়াফ করা৷
ওমরার ওয়াজিব- ওমরার ওয়াজিব ২টি: ১. সাফা ও মারওয়ার মাঝে সাঈ করা৷ ২. মাথার চুল মুন্ডানো বা ছাঁটানো৷
ফরয দু’টির আলোচনা
(১ম ফরয ইহরাম)
ইহরামের সংজ্ঞা- ইহরাম এর আভিধানিক অর্থ হারাম বা নিষিদ্ধ করা৷ পারিভাষায় এহরাম বলা হয়, হজ্জ অথবা ওমরার নিয়ত করে তালবিয়াহ পড়া, অর্থাত্ নিয়ত ও তালবিয়াহ পাঠ এ দুয়ের সমন্বয়কে ইহরাম বলে৷ হাজীগণ যখন ইহরাম বেঁধে হজ্জের জন্য তালবিয়াহ পাঠ করে, তখন তার জন্য কতিপয় হালাল এবং মুবাহ্ বস্তুও হারাম হয়ে যায়৷ এ জন্য একে ইহরাম বলা হয়৷ রূপক অর্থে সেই দু’টি চাদরওে ইহরাম বলে, যা হাজীগণ ইহরাম অবস্থায় ব্যবহার করে৷ (মা‘আরিফুস সুনান ৬খন্ড ২৯পৃষ্ঠা)
কখন ইহরাম বাঁধবে? মীকাত থেকে ওমরাহ বা হজ্জের নিয়তে ইহরাম বাঁধা সুন্নত৷ মীকাত আসার পূর্বে ইহরাম বাঁধা সুন্নতের খেলাফ৷ তবে যেহেতু বাংলাদেশ থেকে হজ্জে যাওয়ার সময় বিমানে থাকা অবস্থাতেই মীকাত এসে যায় এবং বিমানে কর্তব্যরত ব্যক্তিরা হাজীদেরকে এব্যাপারে ঘোষণা দিয়ে জানিয়ে দিলেও অনেক সময় অসাবধানতার কারণে তারা ইহরাম বাঁধতে ভূলে যায়৷ তাই বিমানে আরোহনের পূর্বেই সুবিধা মত জায়গায় হজ্জ বা ওমরার নিয়তে ইহরাম বেঁধে নিবে৷ (বাহরুর রায়েক ২য় খন্ড ৫৫৮পৃষ্ঠা)
ইহরাম বাঁধার সুন্নত তরীকা- যে ব্যক্তি ইহরাম বাঁধার সংকল্প করবে সে প্রথমে ক্ষৌরকার্য করবে, তারপর মীকাতের পূর্বেই বাড়ীতে/হাজী ক্যাম্পে/বিমানবন্দরে কিংবা বিমানে মিকাত অতিক্রম করার পূর্বে ইহরামের নিয়তে ওযু-গোসল করবে৷ যদি কোন কারণে গোসল করতে না পারে, তাহলে ওযু করে নিবে৷ অতঃপর সেলাই করা কাপড় খুলে একটি সেলাইবিহীন লুঙ্গি, আর একটি চাদর এমনভাবে পরিধান করবে, েযন দুই কাধ এবং পিঠ ঢেকে যায়৷ অতঃপর সুগন্ধি লাগাবে৷ এর পর টুপি পরে বা গায়ের চাদর দ্বারা মাথা ঢেকে ইহরামের নিয়তে দু‘রাকাআত নফল নামাজ(প্রথম রাকাআতে সুরা কাফেরুন, দ্বিতীয় রাকাআতে সুরা এখ্লাছ) আদায় করেসালাম ফিরিয়ে কাবা শরীফের দিকে মুখ করে বসে মস্তক অনাবৃত করে সেখানেই নিয়ত করবে৷ মাকরূহ ওয়াক্ত হলে নামাজের জন্য অপেক্ষা করবে৷ অপেক্ষা করা সম্ভব না হলে নামাজ ছাড়াই ইহরাম বেঁধে ফেলবে৷ (মা‘আরিফুস সুনান ৬ষ্ঠ খন্ড ৮৬পৃষ্ঠা, বাহরুর রায়েক ২য় খন্ড ৫৬০-৫৬৫পৃষ্ঠা)
নিয়ত করার নিয়ম- ওমরার ইহরামের নিয়ত- اَللّهم انى اريد العمرة فيسرها لى وتقبلها منى “আল্লাহুম্মা ইন্নী উরিদুল ওমরাতা ফায়াস্সিরহা লী ওয়া তাকাব্বালহা মিন্নী” অর্থাত্ হে আল্লাহ আমি ওমরাহ পালনের নিয়ত করছি৷ তা আমার জন্য সহজ করে দাও এবং কবুল কর৷ অথবা এভাবে নিয়ত করবে- اللهم لبيك عمرة “আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা ওমরাতান” অর্থাত্, হে আল্লাহ আমি ওমরার জন্য হাজির৷
যদি আরবী শব্দ মনে না থাকে তবে শুধু বাংলায় নিয়ত করলেই চলবে৷ অতঃপর পুরুষরা উচ্চঃস্বরে আর মহিলারা নিম্নস্বরে তিনবার তালবিয়াহ্ পাঠ করবে৷ তাহলে ইহরাম বাঁধা হয়ে গেলো৷ এবার সাধ্য অনুযায়ী বেশী বেশী তালবিয়াহ্ পাঠ করতে থাকবে৷ এবং সে সকল কাজ সম্পূর্ণরূপে বর্জন করবে যা ইহরাম বাঁধার পর নিষিদ্ধ৷
ইহরাম শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত বা ফরয- ইহরাম শুদ্ধ হওয়ার জন্য প্রধানত দু’টি শর্ত রছে:
১.মুসলমান হওয়া৷
২. ইহরামের নিয়ত ও তালবিয়াহ পাঠ করা৷
ইহরামের ওয়াজিবসমূহ- ইহরামের ওয়াজিব দু‘টি:
১. মীকাত অতিক্রম করার পূর্বে ইহরাম বাঁধা৷
২. ইহরামের নিষিদ্ধ বিষয়াদি হতে বিরত থাকা৷
ইহরামের সুন্নতসমূহ- ইহরামের সুন্নত নয়টি:
১. হজ্জের মাসে অর্থাত্ শাওয়াল থেকে যিলহজ্জের ভিতর ইহরাম বাঁধা৷
২. নিজ দেশের মীকাত অতিক্রম করার পূর্বে ইহরাম বাঁধা৷
৩. ইহরামের পূর্বে গোসল অথবা ওযু করা৷
৪. চাঁদর এবং (সেলাই ছাড়া) লুঙ্গি ব্যবহার করা৷
৫. দুই রাকা‘আত নফল নামাজ আদায় করা৷
৬. তালবিয়াহ্ পাঠ করা৷
৭. তালবিয়াহ্ তিনবার পাঠ করা৷
৮. উচ্চস্বরে তালবিয়াহ পাঠ করা৷
৯. ইহরামের নিয়ত করার পূর্বে সুগন্ধি ব্যবহার করা৷
ইহরামের মুস্তাহাবসমূহ্- ইহরামের মুস্তাহাব ১০টি:
১. ইহরামের পূর্বে দেহের ময়লা পরিষ্কার করা৷
২. নখ কাটা৷
৩. বগল পরিস্কার করা৷
৪. নাভির নিম্নদেশের পশম দূরীভুত করা৷
৫. ইহরামের নিয়তে গোসল করা৷
৬. নতুন অথবা ধৌত করা সাদা লুঙ্গি অথবা চাঁদর পরিধান করা৷
৭. স্যান্ডেল পায়ে দেওয়া৷
৮. মুখে ইহরামের নিয়ত করা৷
৯. নামাজের পরে বসা অবস্থায় নিয়ত করা৷
১০. মীকাতের পূর্বে ইহরাম বাঁধা৷
ইহরামের নিষিদ্ধ কর্মসমূহ-
১. পুরুষদের জন্য সেলাইযুক্ত কাপড় পরিধান করা৷
২. সুগন্ধি ব্যবহার করা৷
৩. চুল কাটা অথবা কাউকে দিয়ে কাটানো৷
৪. মস্তক অথবা মুখ সম্পূর্ণ অথবা আংশিকভাবে ঢাকা৷
৫. নখ কাটা৷
৬. উকুন মারা অথবা কাউকে দিয়ে মারানো৷
৭. স্থলজ প্রাণী শিকার করা৷
৮. স্বামী-স্ত্রীর বিশেষ সম্পর্ক ও যৌনাচার৷
ইহরামের মাকরূহ বিষয়সমূহ-
১. শরীর হতে ময়লা দূর করা৷ মাথা অথবা দাড়ি এবং দেহকে সাবান ইত্যাদি দ্বারা ধৌত করা৷
২. মাথা অথবা দাঁড়ি চিরুনি দ্বারা আচঁড়ানো৷
৩. দাঁড়ি খিলাল করা৷
৪. চাঁদর গিরা দিয়ে কাঁধের উপর বাঁধা; চাঁদর অথবা লুঙ্গিতে গিরা দেওয়া অথবা সুঁই, পিন ইত্যাদি লাগানো৷ সুতা অথবা দড়ি দিয়ে বাঁধা৷
৫. নাক, থুতনী ও গাল কাপড় দিয়ে আবৃত করা৷ হাত দিয়ে ঢাকা জায়েয আছে৷
৬. বালিশের উপর মূখ রেখে উপুড় হয়ে শয়ন করা৷
ইহরামের মুবাহ বিষয়সমূহ- ১. মাথা এবং মুখমন্ডল ব্যতীত সারা দেহ আবৃত করা৷ কান,কাঁধ বা পা ইত্যাদি চাঁদর অথবা রুমাল ইত্যাদি দ্বারা আবৃত করা জায়েয৷
২. ক্ষতিকর প্রাণী হত্যা করা জায়েয৷ যেমন, সাপ, বিচ্ছু, গিরগিট, চিল, ছারপোকা, মশা-মাছি, মুর্দাখেকো প্রাণী কাক ইত্যাদি৷
৩. লং, এলাচি এবং সুগন্ধিযুক্ত জর্দ্দা ছাড়া পান খাওয়া জায়েয৷ লং, এলাচি এবং সুগন্ধিযুক্ত জর্দ্দা দিয়ে পান খাওয়া মাকরূহ৷
৪. আয়না দেখা, মিসওয়াক করা, দাঁত তুলে ফেলা, ভাঙ্গা-নখ কেটে ফেলা, চুল বা পশম না ফেলে শিঙ্গা লাগানো, সুগন্ধিহীন সুরমা লাগানো, খাত্না করানো, ভাঙ্গা অঙ্গ ব্যান্ডেজ করা ইত্যাদি জায়েয৷
৫. কলেরার ইনজেকশন ও বসন্তের টিকা নেওয়া জায়েয৷
৬. দাঁড়ি, মাথা এবং সমস্ত দেহ এমনভাবে চুলকানো জায়েয যাতে চুল না পড়ে৷ যদি জোরে জোরে চুলকালেও চুল পড়ার আশঙ্কা না থাকে, তাহলে রক্ত বের হয়ে গেলেও তা জায়েয৷
৭. ইহরাম অবস্থায় কাপড় অথবা তোয়ালে দিয়ে মুখমন্ডল পরিষ্কার করা মাকরূহ৷ তবে হাত দিয়ে মুখমন্ডল পরিষ্কার করা যাবে৷
৮. নাপিত দ্বারা বা নিজেই নিজের চুল কামানো বা কাটা যায়৷ আপনার মত যার এখন মাথা কামিয়ে বা কেটে হালাল হওয়ার মুহুর্তে, তার দ্বারাও চুল কামানো বা কাটানো যায়৷
৯. ইহরাম অবস্থায় কম্বল, লেপ, কাঁথা, শাল ইত্যাদি গায়ে দেয়া জায়েয৷
১০. যখম অথবা হাত-পায়ের কাটা জায়গায় তেল লাগানো জায়েয৷ তবে শর্ত হচ্ছে তা যেন সুগন্ধিযুক্ত না হয়৷
মহিলাদের ইহরাম বাঁধার নিয়ম-
vমহিলাদের ইহরাম পুরুষদের ইহরামেরই অনুরুপ৷ শুধু পার্থক্য এইযে, মহিলাদের জন্য মাথা ঢেকে রাখা ওয়াজিব এবং কাপড় দ্বারা মুখ আবৃত করা নিষিদ্ধ, আর সেলাই যুক্ত কাপড় পরিধান করা জায়েয৷
v মহিলাদের জন্য বেগানা পুরুষের সম্মুখে বে-পর্দা হওয়া নিষিদ্ধ৷ সুতরাং চেহারার সাথে লাগতে না পারে এমন কোন কিছু (ক্যাপ) কপালের উপর বেঁধে তার উপর কাপড় ঝুলিয়ে দিতে হবে৷
v মহিলাদের জন্য ইহরাম অবস্থায় অলংকার, পা-মোজা, হাত-মোজা, ইত্যাদি পরিধান করা জায়েয৷ তবে অলংকার পরিধান না করাই উত্তম৷
v মহিলাদের জন্য মাথা মন্ডন করা নিষিদ্ধ৷ সুতরাং ইহরাম খোলার পর সমস্ত চুলের ঝুটি ধরে এর অগ্রভাগ হতে আঙ্গুলের এক কর পরিমান চুল নিজের হাতে কেটে ফেলতে হবে৷ কোন বেগানা পুরুষকে দিয়ে কাটানো নিষিদ্ধ৷
v মহিলাদের জন্য হায়েযের অবস্থায়ও হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা জায়েয৷ শুধু তাওয়াফ নিষিদ্ধ৷ যদি ইহরামের পূর্বে হায়েয দেখা দেয়, তাহলে গোসল করে ইহরাম বেঁধে (নামাজবিহীন) হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করবে, িকন্তু সাঈ এবং তাওয়াফ করবে না৷
v যদি কোন মহিলার হায়েয জনিত কারণে যথা সময়ে তাওয়াফে যিয়ারত সম্পন্ন করতে সক্ষম না হয়, তবে তাকে পবিত্র হওয়ার পর তাওয়াফ সম্পন্ন করতে হবে৷ ‘দম’ ওয়াজিব হবেনা৷
v মহিলারা তাওয়াফের সময় কখনও ইজতিবা এবং রমল করবে না৷ এবং সাঈ করার সময় সবুজ বাতি দু‘টির মধ্যবর্তী স্থানে দৌঁড়িয়ে চলবে না৷ বরং নিজেদের স্বাভাবিক গতীতে চলবে৷ এবং পুরুষদের ভীড়ের সময় হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করতে যাবে না৷ এমনকি উহাতে হাত দ্বারা স্পর্শও করবে না৷ এবং মাকামে ইবরাহীমের পিছনে তাওয়াফের দু’রাকা‘আত নামাজও পড় েনা৷ হারাম শরীফে যে স্থানে সহজ হয়, সে স্থানে পড়বে৷
নাবালেগের ইহরাম-
v যদি কোন অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক শিশু চালাক ও বুদ্ধিমান বলে প্রতীয়মান হয়, তবে সে নিজেই ইহরাম বেঁধে হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করবে এবং প্রাপ্ত বয়ষ্কদের মত সকল কাজ সম্পন্ন করবে৷ পক্ষান্তরে যদি সে একান্তই অবুঝ শিশু হয় তবে তার অভিভাবক (পিতা , বড় ভাই, চাচা ইত্যাদি) তার পক্ষ হতে ইহরাম বাঁধবে৷ শিশুকে ইহরামের নিষিদ্ধ কাজ হতে বিরত রাখা অভিভাবকের কর্তব্য৷ কিন্তু যদি শিশু কোন নিষিদ্ধ কাজ করে ফেলে তবুও সেজন্য কোন ‘দম’ অথবা সদকা শিশু বা তার অভিভাবক কারও উপর ওয়াজিব হবেনা৷
v শিশুর ইহরাম ওয়াজিব নয়৷ সুতরাং যদি সে হজ্জের যাবতীয় কাজ ছেড়ে দেয় অথবা আংশিক ছেড়ে দেয়, তবে তার উপরে ‘দম’ অথবা সদকা এবং ক্বাযা ওয়াজিব হ েনা৷
v বুদ্ধিমান শিশু হজ্জের যে সকল কাজ নিজে সম্পাদন করতে পারে, তা নিজে নিজেই সমাপন করবে আর যা নিজে সম্পন্ন করতে পারবেনা তা তার অভিভাবকগণ সম্পন্ন করে দিবে৷ অবশ্য তাওয়াফের নফল নামাজ নিজে পড়বে৷ অভিভাবক পড়লে আদায় হবে না৷
v নিয়ত, তালবিয়াহসহ হজ্জের যেসব আমল শিশুরা করতে পারেনা সে সব আমলগুলো শিশুর পক্ষ হতে তার অভিভাবকগণ করে দিবে৷ সেলাই করা কাপড় বদলিয়ে তাকে সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করাবে৷
v অবুঝ শিশুর অভিভাবক নিজের তাওয়াফের নিয়তের সঙ্গে শিশুর পক্ষ থেকে ও নিয়ত করে নিবে৷ তারপর শিশুকে সঙ্গে নিয়ে তাওয়াফ করবে৷ এভাবে এক তাওয়াফেই উভয়ের তাওয়াফ হয়ে যাবে৷
পবিত্র মক্কায় প্রবেশ
v মক্কা মুকাররামায় প্রবেশ করার পূর্বে গোসল করা সুন্নত ৷
v যখন মক্কা শরীফ দৃষ্টিগোচর হবে তখন এ দু‘আ পড়বে- اللهم اجعل لى بها قرارا وارزقنى فيها رزقا حلالا “আল্লাহুম্মাজ আল্লি বিহা কারারান ওয়ার যুকনি ফিহা রিযকান হালালান”
v অত্যন্ত বিনয় ও নম্রতার সহিত তালবিয়াহ পাঠ করতে করতে পরিপুর্ণ আদব ও সম্মান প্রদর্শন করে মক্কায় প্রবেশ করবে৷ দিবা-ভাগে বা রাত্রি বেলা যখন ইচ্ছা মক্কা শরীফে প্রবেশ করা জায়েয৷ তবে দিনের বেলা প্রবেশ করাই উত্তম৷
মসজিদে হারামে প্রবেশ করার আদব
v বায়তুল্লাহ শরীফের মসজিদের নাম মসজিদে হারাম৷ বায়তুল্লাহ শরীফ মসজিদে হারামের ঠিক মধ্যস্থানে অবস্থিত৷ মক্কা শরীফে প্রবেশ করার সাথে সাথেই মাল-সামানা গোছিয়ে সর্বাগ্রে মসজিদে হারামে উপস্থিত হওয়া মুস্তাহাব৷
v তালবিয়াহ্ পাঠ করতে করতে অত্যন্ত বিনয় ও নম্রতার সাথে আল্লাহ তা‘আলার পাক দরবারের গৌরব ও মর্যাদার প্রতি সম্মান প্রদর্শন পূর্বক মসজিদে হারামে ‘বাবুস সালাম’ দরজা দিয়ে প্রশে করা মুস্তাহাব৷ এবং প্রথমে ডান পা ভিতরে রেখে এ দু‘আ পাঠ করবে- بسم الله والصلوة والسلام على رسول الله اللهم افتح لى ابواب رحمتك “বিসমিল্লাহি, ওয়াস সালাতু ওয়াসালামু আলা রাসুলিল্লাহি, আল্লাহুম্মাফ তাহলি আবওয়াবা রাহমাতিকা”৷ অতঃপর ই’কোফের নিয়ত করবে৷
v মসজিদে হরামের প্রবেশ করার পর যখন বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে চোখ পড়বে তখন তিনবার الله اكبر، لااله الا الله “আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু” পাঠ করবে৷ এবং বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে তাকায়ে হাত উঠায়ে দু‘আ করবে৷ দু‘আর আগে দরুদ শরীফ পাঠ করবে৷ এ সময় দু‘আ কবুল হয়৷ যে দু‘আ ইচ্ছা করতে পারবে তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দু‘আ হলো আল্লাহ তা‘আলার কাছে হেদায়াত চাওয়া এবং বিনা হিসেবে জান্নাত লাভের প্রার্থনা করা৷ এ সময় দাঁড়িয়ে দু‘আ করা মুস্তাহাব৷
v মসজিদে হারামে প্রবেশ করে “তাহিয়্যাতুল মসজিদ” পড়তে নেই, এ মসজিদের তাহিয়্যাই হচ্ছে তাওয়াফ৷ সুতরাং দু‘আর পরপরেই তাওয়াফ সম্পন্ন করবে৷
v মসজিদে হারাম পৃথিবীর সকল মসজিদ অপেক্ষা উত্তম৷ এতে নামাজ পড়ার সওয়াব অত্যন্ত বেশী৷ এক নামাজের সওয়াব এক লক্ষ নামাজের সমান৷ কিন্তু সওয়াবের আধিক্য শুধূ ফরয নামাজের সহিত নির্দিষ্ট৷ নফলের সওয়াব এত না৷ নফল নামাজ ঘরে পড়াই উত্তম৷ জামা‘আতের সাথে আদায়কৃত এক দিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব হিসাব করলে ১ কোটি ৩৫ লক্ষ নামাজের সমান হয়৷ ( এ মসজিদে এক নামাজের সওয়াব এক লক্ষ নামাজের সমান৷ আর প্রত্যেক মসজিদেই জামা‘আতের সহিত নামাজ পড়লে সাতাইশ গুন সওয়াব পাওয়া যায়৷ এভাবে জামা‘আতের সাথে আদায়কৃত একদিনের পাঁচ ওযাক্ত নামাজের সওয়াব এক কোটি ৩৫ লক্ষ হয়৷)
(২য় ফরয তাওয়াফ)
তাওয়াফের সংজ্ঞা- তাওয়াফের শাব্দিক অর্থ কোন কিছুর চারিদিকে প্রদক্ষিণ করা৷ হজ্জ/ওমরার অধ্যায়ে তাওয়াফ অর্থ কা‘বা ঘরের চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করা, অর্থাত্ হাজারে আসওয়াদ হতে ডান দিকে প্রদক্ষিণ শুরু করে হাতীমসহ কা‘বা ঘরের চতুর্দিকে ঘুরে পুনরায় হাজারে আসওয়াদ পর্যন্ত পৌঁছলে তাওয়াফের এক চক্কর বা একবার প্রদক্ষিণ করা হয়৷ এভাবে সাতবার প্রদক্ষিণ করলে এক তাওয়াফ সম্পূর্ণ হয়৷ তাই এক তাওয়াফের জন্য সাতবার প্রদক্ষিণ করতে হয়৷
তাওয়াফের ফযীলত- পবিত্র কুরআনে এসেছে, এবং আমি ইবরাহীম (আ:) ও ইসমাঈল (আ:)- েক দায়িত্ব দিলাম যে তোমরা আমার ঘর তাওয়াফকারী ও ই‘তিকাফকারীদের জন্য পবিত্র কর৷ হাদীস শরীফে উহার প্রতি বিশেষ উত্সাহ প্রদান করা হয়েছে৷
(১) নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বায়তুল্লাহ শরীফের উপর প্রত্যহ একশত বিশটি রহমত নাযিল করেন৷ তন্মধ্যে ষাটটি রহমত তাওয়াফ কারীদের জন্য, চল্লিশটি নামাজ আদায়কারীদের জন্য, এবং বিশটি বায়তুল্লাহ শরীফের দর্শনার্থীদের জন্য৷
(২) অন্য আর এক বর্ণনায় রয়েছে, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করে, তার এক কদম উঠিয়ে আরেক কদম রাখার পূর্বেই আল্লাহ তা‘আলা একটি পাপ ক্ষমা করে দিবেন এবং একটি নেকী লিখে দিবেন, আর একটি মর্যাদা বুলন্দ করেন৷
(৩) হাদীসে এসেছে , যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করল ও দু‘রাকাআত নামাজ আদায় করল, তার এ কাজ একটি গোলাম আযাদের সমতুল্য নেকী হল৷ (ইবনে মাজাহ)
(৪) হাদীসে আরো এসেছে, তুমি যখন বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করলে, পাপ থেকে এমন ভাবে বের হয়ে গেলে, যেমন নাকি আজই তোমার মাতা তোমাকে জন্ম দিলেন৷ (মুসান্নাফু আব্দির রায্যাক)
তাওয়াফ করার সুন্নত তরীকা- ওযু করে পাক-সাফ হয়ে কা‘বা শরীফে এসে প্রথমে তাওয়াফের নিয়ত এভাবে করবে: اللهم انى اريد طواف بيتك المحرم، فيسره لى وتقبله منى. উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইনী্ন উরীদু তাওয়াফা বাইতিকাল মুহাররম, ফায়ািস্সর্হু লী ওয়া তাকাব্বাল্হু মিন্নী “হে আল্লাহ! আমি তোমার সম্মানিত গৃহের তাওয়াফ করতে চাই, অতএব তুমি এটা আমার জন্য সহজ করে দাও এবং কবুল করে নাও”৷
বায়তুল্লাহর যে কোণায় হাজারে আসওয়াদ বিদ্যমান, সে কোণায় হাজারে আসওয়াদকে ডানপাশে রেখে দাঁড়াবে৷ একটু সামনে অগ্রসর হয়ে এবং হাজারে আসওয়াদকে সামনে রেখে নামাজের তাকবীরে তাহরীমার সময় যেভাবে হাত উঠাতে হয় সেভাবে কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে بسم الله الله اكبر لااله الا الله ولله الحمد والصلوة والسلام على رسول الله “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া লিল্লাহিল হাম্দ ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সলামু আলা রাসূলিল্লাহ”বলা৷ অতঃপর হাত নামিয়ে সম্ভব হলে হাজারে আসওয়াদের উপর হাত দু’াে এমনভাবে রাখবে যেমনভাবে সিজ্দার সময় রাখা হয়৷ এরপর আদবের সাথে উক্ত পাথরে চুমু দেয়া৷ সম্ভব না হলে উক্ত পাথরের দিকে হাত বা অন্য কিছু দিয়ে ইশারা করে তাতে চুমু দেয়া৷ মনে রাখতে হবে হাজারে আসওয়াদে চুমু দিতে যেয়ে কাউকে যেন কষ্ট না দেয়া হয় এবং তাড়াহুড়া না করা হয়৷ কারণ কাউকে কষ্ট দেয়া হারাম৷ অতঃপর ডানদিকে কা‘বা শরীফের দরজার দিকে অগ্রসর হবে৷ তাওয়াফের সময় রুকনে ইয়ামানী (কা‘বা ঘরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ) পৌছে তা শুধু ডান হাত দ্বারা স্পর্শ করতে হবে৷ সম্ভব না হলে এর প্রয়োজন নেই, ইশারা করার জন্য হাত উঠাতে হবে না৷ পুনরায় হাজারে আসওয়াদের দিকে চক্কর ঘুরে بسم الله الله اكبر لااله الا الله ولله الحمد والصلوة والسلام على رسول الله “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া লিল্লাহিল হাম্দ ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সলামু আলা রাসূলিল্লাহ” বলে তাতে চুমু দিবে এবং সম্ভব না হলে হাত বা হাতের তালুতে অথবা অন্য কিছূ দিয়ে ইশারা করে তাতে চুমু দিতে হবে৷ এভাবে সাত চক্কর পূর্ণ করতে হবে৷ সপ্তম চক্করের পর অষ্টমবার পূণরায় হাজারে আসওয়াদকে চুম্বন প্রদানের সহিত তাওয়াফ শেষ করবে৷ এবার এক তাওয়াফ পূর্ণ হয়ে গেলো৷ তাওয়াফের পর মাকামে ইবরাহীমের পিছনে অথবা হারাম শরীফের যে কোন স্থানে দু’রাকা‘আত ‘ওয়াজিবুত তাওয়াফ’ নামাজ আদায় কর েহবে৷ এটি প্রতি সাত চক্কর তাওয়াফের পর ওয়াজিব৷ প্রথম রাকাআ'তে সূরা কাফিরূন এবং দ্বিতীয় রাকাআ'তে সূরা ইখলাস পাঠ করবে৷ তারপর যমযমের পানি পান করে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করতঃ বাবুস্-সাফার পথে বের হয়ে সাফা-মারওয়ার সাঈ করবে৷
তাওয়াফের শর্তসমূহ- তাওয়াফের শর্ত ৬টি৷ তিনটি শুধু হজ্জের তাওয়াফেরজন্য এবং তিনটি সকল তাওয়াফের জন্য৷
তাওয়াফের রুকন/ফরযসমূহ-
(১) তাওয়াফের অধিকাংশ চক্কর পূর্ণ করা৷
(২) বায়তুল্লাহর বাইরে, মসজিদে হারামের ভিতরে তাওয়াফ করা৷
(৩) নিজে তাওয়াফ করা৷ (কোন কিছুর উপর আরোহণ করে হলেও৷)
তাওয়াফের ওয়াজিবসমূহ-
(১) তাহারাত অর্থাত্ গোসল ফরয থাকলে তা করে নেয়া এবং ওযু না থাকলে ওযু করে নেয়া৷
(২) শরীর ঢাকা৷
(৩) কোন কিছুতে আরোহণ না করে তাওয়াফ করা (মা‘যুর অর্থাত্ বৃদ্ধ, অসুস্থ ও রুগ্ন-অক্ষম ব্যক্তির জন্য অবশ্য আরোহণ করে তাওয়াফ করা জায়েয৷)
(৪) নিজের ডানদিক হতে তাওয়াফ শুরু করা৷
(৫) হাতীমসহ বায়তুল্লাহর উত্তর দিকে বায়তুল্লাহ সংলগ্ন অর্ধচক্রাকৃতি দেয়াল ঘেরা জায়গা তাওয়াফ করা৷
(৬) সবগুলো চক্কর পূর্ণ করা৷
(৭) তাওয়াফের শেষে দু’রাক‘আত নামাজ পড়া৷
ওয়াজিবের হুকুম- যদি কেউ কোন ওয়াজিব ছেড়ে দেয় ত েতাকে পুনরায় তাওয়াফ করতে হবে৷ যদি কেউ সেটা না করে তবে ‘দম’ বা কুরবানী ওয়াজিব হ৷ে
তাওয়াফের সুন্নতসমূহ- (১) হাজারে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করা৷
(২) ইজতিবা করা (অর্থাত্ ইহরামের চাঁদর ডান বগলের নীচে দিয়ে এনে বাম কাঁধে জড়ানো)
(৩) হাজারে আসওয়াদে চুমু প্রদান করা বা হাতে ইশারা করে তাতে চুমু দেয়া৷
(৪) প্রথম তিন চক্করে রমল করা (অর্থাত্ বীরদর্পে হাত দুলিয়ে দ্রুত পায়ে চলা)
(৫) বাকী চক্করগুলোতে রমল না করা৷ বরং ধীরে-সুস্থে তাওয়াফ করা৷
(৬) সাঈ ও তাওয়াফের মাঝে ইস্তিলাম (হাজারে আসওয়াদে চুমু প্রদান বা হাত কিংবা অন্য কিছু দিয়ে ইশারা করে তাতে চুমু দেয়া) করা৷ (এটা সে ব্যক্তির জন্য, যে তাওয়াফের পর সাঈ করে৷)
(৭) হাজারে আসওয়াদের সামনে দাঁড়িয়ে ‘আল্লাহু আকবর’ ব েদুই হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠানো৷
(৮) তাওয়াফের শুরুতে হাজারে আসওয়াদের দিকে মুখ করা৷ (৯) চক্করগুলো বিরতি না দিয়ে পরপর করা৷
বিঃদ্রঃ- মহিলাদের জন্য রমল ও ইযতিবা করতে হবে না৷
তাওয়াফের মুস্তাহাবসমূহ-
(১) হাজারে আসওয়াদের ডানদিক হতে তাওয়াফ শুরু করা৷
(২) হাজারে আসওয়াদে তিনবার চুমু খাওয়া৷ এবং এর উপর তিনবার সিজদা করা৷
(৩) তাওয়াফ করার সময় দু‘আ মাছুরাসমূহ পাঠ করা৷
(৪) সম্ভব হলে বায়তুল্লাহর দেয়াল ঘেঁষে তাওয়াফ করা৷
(৫) মহিলাদের রাতে তাওয়াফ করা৷
(৬) মুবাহ কথাবার্তাও বর্জন করা৷
(৭) আল্লাহর ধ্যান ও খেয়ালে তাওয়াফ করা৷
(৮) দু‘আ এবং যিকির-আযকার আস্তে আস্তে পাঠ করা৷
(৯) রুকনে ইয়ামানী সম্ভব হলে হাতে স্পর্শ করা ৷
(১০) আকর্ষণিয় বস্তু-সামগ্রী দর্শন করা হতে দৃষ্টিকে সংযত রাখা৷
তাওয়াফের মুবাহসমূহ-
(১) সালাম করা৷
(২) হাঁচি দেয়ার পর আল-হামদুলিল্লাহ্ বলা৷
(৩) শরীয়ত সম্পর্কিত মাসআলা বলে দেয়া এবং জানতে চওয়া৷
(৪) প্রয়োজনবশতঃ কথা বলা৷
(৫) কোন কিছু পান করা৷
(৬) দু‘আ তরক করা৷
(৭) ভাল ভাল কবিতা আবৃতি করা৷
(৮) পাক-পবিত্র জুতা পরিধান করে তাওয়াফ করা ৷
(৯) ওযরবশতঃ সওয়ার হয়ে তাওয়াফ করা৷
(১০) মনে মনে কুরআন তেলাওয়াত করা৷
তাওয়াফের নিষিদ্ধ কাজসমূহ- (১) জানাবাত অথবা হায়েয ও নেফাস অবস্থায় তাওয়াফ করা৷
(২) বিনা ওযরে কারও কাঁধে আরোহন করে তাওয়াফ করা৷
(৩) বিনা ওযুতে তাওয়াফ করা৷
(৪) বিনা ওযরে হাঁটুর উপর ভর করে অথবা উল্টা হয়ে তাওয়াফ করা৷
(৫) তাওয়াফ করার সময় হাতীম এবং বায়তুল্লাহর মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা দিয়ে বাহির হয়ে যাওয়া৷ অর্থাত্, হাতীমকে বাদ দিয়ে তাওয়াফ করা৷
(৬) তাওয়াফের কোন প্রদক্ষিণ অথবা উহা হতে কিছু কম তাওয়াফ ছেড়ে দেয়া৷
(৭) হাজারে আসওয়াদ ব্যতীত অন্য কোন স্থান হতে তাওয়াফ শুরু করা৷
(৮) তাওয়াফের মধ্যে বায়তুল্লাহর দিকে মুখ করা৷ অবশ্য তাওয়াফের শুরুতে হাজারে আসওয়াদকে সামনে করার সময় ইহা জায়েয আছে৷
(৯) তাওয়াফের ওয়াজিবসমূহ হতে কোন একটিকে তরক করা৷
তাওয়াফের মাকরূহ কাজসমূহ-
(১) অর্নথক কথাবার্তা বলা৷
(২) বেচা-কেনা করা৷
(৩) হাম্দ ও না‘তবিহীন কবিতা আবৃত্তি করা৷
(৪) উচ্চস্বরে দু‘আ পাঠ বা কুরআন তিলাওয়াত করা৷
(৫) অপবিত্র কাপড়ে তাওয়াফ করা৷
(৬) ওযর ব্যতীত রমল ও ইজতিবা পরিত্যাগ করা৷
(৭) হাজারে আসওয়াদের চুম্বন ছেড়ে দেয়া৷
(৮) এক চক্কর সমাধা করে পরবর্তী চক্কর দিতে অযথা বিলম্ব করা৷
(৯) তাওয়াফের শেষে দু’রাকা‘আত নামাজ আদায় না ক েপুনরায় তাওয়াফ শুরু করা৷
(১০) তাওয়াফের নিয়তের সময় তাকবীর ব্যতীত কান পর্যন্ত হাত তোলা৷
(১১) খুতবা বা নামাজের জামাআতের সময় তাওয়াফ করা৷
(১২) তাওয়াফের মাঝে পানাহার করা৷
(১৩) তাওয়াফের সময় নামাজের মত হাত বাঁধা বা কোমরে কিংবা ঘাড়ে হাত বাঁধা৷
(১৪) পেশাব-পায়খানার বেগ হওয়ার পরও তাওয়াফ করা৷
(১৫) ক্ষুধা এবং রাগের অবস্থায় তাওয়াফ করা৷
ওয়াজিব দু’টির আলোচনা
(১ম ওয়াজিব সাঈ)
সাফা ও মারওয়া হচ্ছে মসজিদে হারাম সংলগ্ন দু’টি পাহাড়৷ ইহা সেইঐতিহ্যবাহী স্থান যেখা েহযরত হাজেরাহ (আ.) পানির অন্বেষনে দৌঁড়িয়েছিলেন৷
সাঈর সংজ্ঞা- সাঈ শব্দের অর্থ দৌঁড়ান, চেষ্টা করা৷ হজ্জের অধ্যায়ে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে সাতবার দৌঁড়ানোকে সাঈ বলা হয়৷ বর্তমানে এই স্থানটুকুর কিছু অংশ সবুজ বাতি দ্বারা চিহ্নিত আছে৷ সেখানে এসে দ্রুত দৌঁড়াতে হয়৷ সাঈ করা ওয়াজিব এবং তাওয়াফ শেষ করার সাথে সাথেই এটা করা সুন্নাত৷ শায়েখ আবদুর রহমান মুরশিদী “কান্য”-এর টিকায় বর্ণনা করেনযে, সাফা ও মারওয়ার মধ্যখানের দৌঁড়ানোর স্থানটির দূরত্ব প্রায় ৭৫০ হাত৷ সুতরাং সাত চক্করের পূর্ণ সাঈ-তে ৫,২৫০ হাত দুরত্ব অতিক্রম করতে হয়৷ সাঈ-র স্থানের প্রস্থ ৩৫ হাত৷ রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে স্থানে সাঈ করতেন তার প্রস্থ আরো বেশী ছিল৷ পরবর্তীতে সেখানে বাসগৃহ নির্মিত হওয়ায় প্রস্থ কমে যায়৷ এরপর খলীফা মাহদী এসব বাসগৃহ ভূমিসাত্ করে প্রস্থ নির্দিষ্ট করে দেন৷ অদ্যাবধি সেই প্রস্থই অব্যাহত আছে৷ পরবর্তীকালে সৌদীসরকার মসজিদে হারামের সম্প্রসারন করে এবং সাঈর স্থানটি অনেক প্রশস্ত ও আধুনিক পদ্ধতিতে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে৷
সাঈর সুন্নত তরীকা- তাওয়াফের পর যমযমের পানি পান করতঃ হাজারে আসওয়াদে সম্ভব হলে সরাসরি ইস্তিলাম্ তথা চুমু দিবে আর সম্ভব না হলে হাত দিয়ে ইশারা করে হাতে বা তালুতে চুমু দিতে হবে৷ মুখে বলতে হবে بسم الله الله اكبر لااله الا الله ولله الحمد والصلوة والسلام على رسول الله“বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া লিল্লাহিল হাম্দ ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সলামু আলা রাসূলিল্লাহ”৷ অতঃপর বাবুস্-সাফা দিয়ে বের হয়ে সাফা পাহাড়ের উপর এতটুকুু আরোহণ করতে হবে যেন বায়তুল্লাহ শরীফ দৃষ্টিগোচর হয় এবং কেবলার প্রতি মুখ করে দাঁড়িয়ে সাঈ‘র নিয়ত করে বলতে হবে: “হে আল্লাহ্! আপনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সাফা-মারওয়ার সাত চক্কর সাঈ‘র নিয়ত করছি, আপনি আমার জন্য তা সহজসাধ্য করুন এবং কবুল করুন”৷ পরে দু‘আর মাধ্যমে যতটুকু হাত উঠানো হয় ততটুকু পর্যন্ত হাত উঠাতে হবে৷ তাকবীরে তাহরীমার মত কান পর্যন্ত হাত উঠাবে না৷ উচ্চস্বরে তাকবীর ও তাহলীল অর্থাত্, الله اكبر لااله الا الله “আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু” পাঠ করতে হবে এবং কাকুতি মিনতিসহকারে আল্লাহর দরবারে দু‘আ করতে হবে৷ অতঃপর যিকির তাসবিহ ও দু‘আ দরুদ পাঠ করতে করতে সাফা থেকে মারওয়ার দিকে অগ্রসর হতে হবে এবং দু’টি সবুজ চিহ্নিত স্তভের (যা বর্তমানে সবুজ রং-এর বাতি দ্বারা চিহ্নিত আছে) মধ্যবর্তী স্থানটুকু দ্রুত চলতে হবে এবং এই দু‘আ পড়বে: رب اغفر وارحم وانت الأعز الأكرم (রব্বিগ্ ফির্ ওয়ার্হাম্ ওয়া আন্তাল্ আ‘আয্যুল আক্রাম্)৷ মহিলাদের দৌঁড়াতে হবে না এবং পাহাড়ে উঠাও জরুরী নয়৷ দ্বিতীয় স্তম্ভ পার হয়ে আবার স্বাভাবিকভাবে চলতে হবে৷ মারওয়া পাহাড়ে উঠে বায়তুল্লাহর দিকে মুখ করে দাঁড়াতে এবং কাকুতি মিনতিসহ দু‘আ করতে হবে৷ এতে সাঈ‘র এক চক্কর হবে৷ পুনরায় মারওয়া থেকে সাফার দিকে চলতে হবে৷ সবুজ চিহ্নিত স্তম্ভের মধ্যবর্তী স্থান একটু দ্রুত দৌঁড়ে চলবে এবং দ্বিতীয় স্তম্ভ অতিক্রম করে স্বাভাবিকভাবে চলতে হবে৷ এ হল দ্বিতীয় চক্কর৷ এভাবে সাত চক্কর পুরণ করতে হবে৷ এভাবে সাঈ সমাধা করার পর মাথামুন্ডন করে বা চুল ছেঁটে উমরাহ পালনকারীকে ইহরাম খুলে ফেলতে হবে৷
সাঈর রুকন/ফরয- সাফা এবং মারওয়ার মধ্যবর্তী স্থানটি হলো সাঈর রুকন৷ এর বাহিরে সাঈ করলে সাঈ আদায় হবে না৷
সাঈর শর্তসমূহ- সাঈর শর্ত ছয়টি:
(১) নিজের সাঈ নিজে করা৷
(২) প্রথমে তাওয়াফ করে পরে সাঈ করা৷
(৩) সাফা থেকে শুরু করা এবং মারওয়া গিয়ে শেষ করা৷
(৪) সাঈর পূর্বে হজ্জ অথবা উমরার এহরাম বাঁধতে হবে৷
(৫) সাঈর অধিকাংশ চক্কর সম্পন্ন করা৷
(৬) সাঈর নির্ধারিত সময়ে সাঈ সম্পন্ন করা৷ এটা হজ্জের সাঈর জন্য শর্ত, উমরার সাঈর জন্য নয়৷ তবে কেরান বা তামাত্তু আদায়কারী ব্যক্তি যদি উমরাহ পালন করে, তাহলে উমরার সাঈর জন্যও নির্ধারিত সময় হওয়া শর্ত৷
সাঈর ওয়াজিবসমূহ- সাঈর ওয়াজিব ছয়টি:
(১) পায়ে চলে সাঈ করা৷ (তবে ওযরবশতঃ কোন কিছুতে আরোহণ করেও সাঈ করা যায়৷)
(২) সাত চক্কর পূর্ণ করা অর্থাত্, ফরয চার চক্করের পর আরো তিন চক্কর পূর্ণ করা৷ যদি কেউ তিন চক্কর ছেড়ে দেয়, তাহলে সাঈ শুদ্ধ হয়ে যাবে৷ কিন্তু প্রতি চক্করের বদলে পৌণেদুই-সের গম অথবা তার মূল্য সদকা করা ওয়াজিব৷
(৩) সাফা ও মারওযার মধ্যবর্তী স্থান পরিপূর্ণভাবে অতিক্রম করা৷
(৪) সাঈ সফা হতে আরম্ভ করা এবং মারওয়াতে সমাপ্ত করা৷
(৫) এমন তাওয়াফের পর সাঈ করা; যা জানাবত, হায়েয ও নেফাস হতে পবিত্র অবস্থায় সম্পন্ন করা হয়েছে৷
(৬) উমরার সাঈর ক্ষেত্রে উমরার ইহরাম সাঈ সমাপ্ত করা পর্যন্ত বহাল রাখা৷
সাঈর সুন্নতসমূহ- (১) হাজারে আসওয়াদে চুমু দিয়ে সাঈ‘র জন্য বের হওয়া৷
(২) তাওয়াফ শেষ করার সাথে সাথে সাঈ করা৷
(৩) সাফা ও মারওয়ায় আরোহণ করা৷
(৪) সাফা ও মারওয়ায় আরোহণ করে কেবলামুখী হওয়া৷
(৫) সাঈ‘র চক্করগুলো একটির পর একটি আদায় করা৷
(৬) সবুজ স্তম্ভ দু‘টির মধ্যবর্তী স্থানটি একটু দৌঁড়ে অতিক্রম করা৷
(৭) সতর ঢাকা, যদিও সর্বাস্থায়ই সতর ঢাকা ফরয৷ কিন্তু এ ক্ষেত্রে আরো বেশী গুরুত্ব প্রদান করতে হবে৷ (৮) জানাবত, হায়েয ও নেফাস হতে পবিত্র হওয়া৷
বি.দ্র.- সাঈকরা অবস্থায় যদি নামাজের জামা‘আত অথবা জানাযার নামাজ শুরু হয়ে যায়, তাহলে সাঈ পরিহার করে নামাজে শরিক হয়ে যাবে৷ নামাজের পর অবশিষ্ট চক্কর পুরা করবে৷
সাঈর মুস্তাহাবসমূহ-
(১) নিয়ত করা৷
(২)সাফা এবং মারওয়ায় দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করা৷
(৩) কাকুতি মিনতি ও বিনয়ের সঙ্গে যিকির আযকার ও দু‘আ করা৷
(৪) সাঈ সমাধা করে বায়তুল্লাহ্ শরীফে দু’রাকা‘আত নামাাজ পড়া৷ মারওয়ার উপ েএ নফল নামায আদায় করা মাকরূহ৷
(৫) সাঈর চক্করসমূহের মধ্যে যদি বিনা ওযরে খুব বেশি ব্যবধান হয়ে যায়, তাহলে নতুন করে সাঈ আরম্ভ করা৷
সাঈর মুবাহ কাজসমূহ-
১. মনকে অন্যদিকে আকৃষ্ট করে না এবং একাগ্রতার পরিপন্থি নয় -এমন সব জায়েয কথাবার্তা বলা৷
২. সাঈর চক্করসমূহের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করে না -এধরণের পানাহার৷
সাঈর মাকরূহসমূহ-
(১) বেচা-কেনা করা৷
(২) অনর্থক কথাবার্তা বলা৷
(৩) সাঈ‘র চক্করসমূহ পরপর আদায় না করা৷
(৪) সাফা ও মারওয়ায় আরোহণ না করা৷
(৫) ওযর ব্যতীত তাওয়াফের পর সাঈ করতে বিলম্ব করা৷
(৬) সবুজ চিহ্নিত স্তম্ভের মাঝে না দৌঁড়ানো৷
(২য় ওয়াজিব মাথা মুন্ডানো বা চুল ছাঁটানো)
মাথা মুন্ডানো বা চুল ছাঁটানোর পরিমান- সাঈ সমাপ্ত করে মাথা মুন্ডাবে অথবা চুল ছাঁটাবে৷ মাথার চুলের এক চতুর্থাংশ মুন্ডন করা অথবা ছাঁটা ওয়াজিব৷ ইহা না করে ইহরাম খুলা নিষেধ৷ সারা মাথা মুন্ডন করা অথবা ছাঁটা সুন্নত৷ মাথার কিছু অংশ মুন্ডন করা অথবা ছাঁটা আর কিছু অংশ ছেড়ে দেওয়া হাদীসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে৷ শুধু মাথার চর্তুথাশের চুলের উপরে যথেষ্টকরণ জায়েয৷ কিন্তু তা মাকরূহে তাহরীমী৷ চুল ছাঁটার চেয়ে মুন্ডন করাই উত্তম৷ পবিত্র কোরআনে মুন্ডন করার কথা আগে এবং ছাঁটার কথা পরে এসেছে৷
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজেও মাথা মুন্ডন করেছিলেন৷ যারা মাথা মুন্ডন করে তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রহমত ও মাগফিরাতের দু‘আ করেছেন তিনবার৷ আর যারা চুল ছাঁটে তাদের জন্য দু‘আ করেছেন একবার৷ (বাদাইউস সানায়ে ২য় খন্ড )
হাদীসে এসেছে, আর তোমার মাথা মুন্ডন কর এতে প্রত্যেক চুলের বিনিময়ে তোমার জন্য একটি করে ছাওয়াব ও একটি করে গুনাহের ক্ষমা রয়েছে৷ কসর অর্থাত্ চুল ছাঁটার অর্থ সমস্ত্র মাথা থেকে হাতের আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ চুল কেটে ফেলা৷ যাদের চুল আঙ্গুলের এক করের চেয়ে কম লম্বা তাদেরকে মুন্ডনই করতে হবে৷ নতুবা হালাল হবে না৷ (বাদাইউস সানায়ে ২য় খন্ড ৩৩০পৃষ্ঠা)
একটু-আধটু চুল কাটা ছহিহ হবেনা৷ কোন কোন হাজী সাহেব দু-চারটি চুল কেটে ইহরাম খুলে ফেলে এটা সম্পন্ন ভূল৷ কারো টাক মাথা থাকলে মাথায় ব্লেড অথবা ক্ষুর চালিয়ে দিলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে৷ (বাদাইউস সানায়ে ২য় খন্ড ৩৩০পৃষ্ঠা)
v ক্ষৌরকার্য হারামের সীমানার ভিতরে করতে হবে৷ এর বাহিরে করলে ‘দম’ ওয়াজিব হ৷ে মহিলাদের জন্য মাথা মুন্ডানো হারাম৷ হাতের আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ চুল কেটে ফেলাই যথেষ্ট৷ সমগ্র মাথার চুল একত্র করে আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ কাটা সুন্নত৷ এতটুকু কাটার নামই কসর৷ (বাদাইউস সানায়ে ২য় খন্ড ৩২৯পৃষ্ঠা)
কার দ্বারা মাথা মুন্ডাতে বা ছাঁটাতে পারবে-
পুরুষরা নাপিত অথবা যারা সাঈর দায়িত্ব থেকে ফারেগ হয়ে গেছে তাদের দ্বারা কিংবা নিজের মাথা নিজেই কামিয়ে নিতে বা ছেঁটে নিতে পারবে৷
v কোন ইহরাম বিশিষ্ট ব্যক্তি যার কেবল মাথা মন্ডানো বা ছাঁটা বাকী থাকে এবং পূর্ববর্তী সকল কাজ সম্পন্ন হয়ে যায় তখন এরূপ ইহরাম বিশিষ্ট ব্যক্তি অন্য ইহরাম বিশিষ্ট ব্যক্তির মাথা মুন্ডাতে বা ছাঁটতে পারবে৷
v মহিলারা নিজের চুল নিজেই অথবা অন্য মহিলা দ্বারা কাটাইয়া নিবে৷ v মাথা মুন্ডন অথবা চুল ছাঁটার পর নখ কাটবে এবং বগল প্রভৃতির লোম পরিস্কার করবে৷ মাথা মুন্ডানোর পূর্বে নখ ইত্যাদি কাটলে ক্ষতিপূরণ ওয়াজিব হবে৷ ক্ষৌর কার্যের পরে ইহরামের কারণে যে সব কাজ নিষিদ্ধ ছিল তা জায়েয হয়ে যায়৷ যেমন সুগন্ধি ব্যবহার করা, সেলাইযুক্ত কাপড় পরিধান করা স্থল প্রাণী শিকার করা ইত্যাদি৷ (বাদাইউস সানায়ে ২য়খন্ড ৩৩১পৃষ্ঠা)
তালবিয়াহ্ (লাব্বাইকা পুরা পাঠ করা)
لَبَّيْكَ اللّهُمَّ لَبَّيْك. لَبَّيْكَ لاَشَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْك.
اِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْك. لاَشَرِيْكَ لَك.
“লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল-হামদা ওয়ান্নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারীকা লাক৷” অর্থাত্, আমি উপস্থিত হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত৷ আমি উপস্থিত তোমার কোন শরীক নাই, আমি উপস্থিত৷ নিশ্চয় সকল প্রশংসা ও নিয়ামত তোমার এবং রাজত্বও তোমারই, তোমার কোন শরীক নাই৷
অতঃপর দরুদ শরীফ পাঠ করবে এবং যা ইচ্ছা প্রর্থনা করবে৷ তালবিয়াহ্ পাঠ করার পর এ দু‘আ করা মুস্তাহাব-
اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَسْئَلُكَ رِضَاكَ وَالْجَنَّةَ وَاَعُوْذُبِكَ مِنْ غَضَبِكَ وَالنَّارِ.
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্ আলুকা রিযাকা ওয়াল জান্নাহ ওয়া আউযুবিকামিন গাজাবিকা ওয়ান নারি”৷ অর্থাত্, হে আল্লাহ আমি তোমার সন্তুষ্টি ও জান্নাতের প্রত্যাশা করছি এবং তোমার ক্রোধ ও জাহান্নাম হতে পানাহ চাচ্ছি৷
তালবিয়াহকে চার ভাগ করে পাঠ করা মুস্তাহাব৷ চার ভাগ নিম্নরূপ-
১৷ لَبَّيْكَ اللّهُمَّ لَبَّيْك. লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক,
২৷ لَبَّيْكَ لاَشَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْك. লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইক,
৩৷ اِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْك. ইন্নাল-হামদা ওয়ান্নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুলক,
৪৷ لاَشَرِيْكَ لَك. লা-শারী-কা লাক্” (মা‘আরিফুস সুনান ৬খন্ড ৩০পৃষ্ঠা)
যখনই তালবিয়াহ পড়বে তিনবার পড়বে৷ তারপর দরুদ শরীফ পাঠ করবে৷ এবং উপরোল্লেখিত দু‘আটি পাঠ করবে৷ (মারাকিউল ফালাহ৭৩০পৃষ্ঠা)
তালবিয়াহ পাঠের হুকুম- তালবিয়াহ হজ্জ/উমরার শে‘আর বা শ্লোগান ৷ তাই তালবিয়াহ পাঠের কোন বিকল্প নাই৷ তাই হজ্জ/উমরাহ পালনেচ্ছু প্রত্যেক ব্যক্তিরই শুদ্ধভাবে তালবিয়াহ পাঠ শিক্ষা করা উচিত৷ তালবিয়াহ পাঠ ফরয, ওয়াজিব না সুন্নত এ নিয়ে ফেকাহবিদদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে৷ হানাফি মাযহাব অনুযায়ী ইহরাম বাঁধার সময় তালবিয়াহ বা অন্য কোন যিকির একবরা পাঠ করা ফরয এবং একাধিকবার পাঠ করা সুন্নত৷ (মা‘আরিফুস সুনান ৬খন্ড ২৯পৃষ্ঠা)
তালবিয়াহ বেশী বেশী পড়া মুস্তাহাব৷ দাড়িয়ে, বসে, শুয়ে, চলন্ত অবস্থায়, ওযু ও বে-ওযু সর্বাবস্থায় পড়া যায়৷ বিশেষ করে ব্যক্তির অবস্থা পরিবর্তনের সময় পড়া মুস্তাহাব৷ যেমন- দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসার সময়, বসা থেকে দাঁড়ানোর সময়, ঘর থেকে বের হওয়ার সময়, ঘরে প্রবেশের সময়, গাড়িতে উঠার সময়, গাড়ি থেকে নামার সময়, উচু স্থানে উঠূার সময়, নিচুতে নামার সময় ইত্যাদি৷ (মা‘আরিফুস সুনান ৬খন্ড ৮০-৮৪পৃষ্ঠা)
মসজিদে হারাম, মিনার মসজিদে খাইফ, আরাফার মসজিদে নামিরায়, তালবিয়াহ নিচুস্বরে পাঠ করা৷ পুরুষরা তালিবিয়াহ উচ্চঃস্বরে এবং মহিলারা নিম্নস্বরে পাঠ করবে৷
তালবিয়াহ পাঠের শুরু ও শেষ সময়- ইহরামের নিয়ত করার সময় থেকে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ শুরু করার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত৷ (মা‘আরিফুস সুনান ৬খন্ড ৮০পৃষ্টা ও বাহরুর রায়েক ২য় খন্ড ৬০৫পৃষ্ঠা)
তালবিয়াহর ফযীলত-
(১) রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন কোন মুসলামান হাজী লাব্বাইকা উচ্চারণ করতে থাকে তখন তার ডানে বামে যত পাথর, বৃক্ষ এবং কংকর থাকে সকলেই তার সঙ্গে লাব্বাইকা উচ্চারণ করতে থাকে৷ এভাবে যমীনের এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত সেই একই ধ্বনি উত্থিত হতে থাকে৷ (তিরমিযী)
(২) আর এক হাদীসে আছে, হযরত মুসা (আঃ) যথন লাব্বাইকা বলতেন, তখন আল্লাহ তা‘আলাও বলতেন: লাব্বাইকা অর্থাত্ আমিও হাজির আছি৷ (কান্য)
(৩) তালবিয়াহ পাঠকারীকে আল্লাহর পক্ষ থেকে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়৷
(৪) সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত তালবিয়াহ পড়তে থাকলে তার গুনাহ অস্তমিত হয়ে সে মায়ের গর্ভ থেকে সদ্য প্রসূত শিশুর মত নিস্পাপ হয়ে যায়৷
দু‘আ কবুলের বিশেষ স্থানসমূহ
(১) মাতাফ- অর্থাত্ তাওয়াফ করার জায়গা৷
(২) মুলতাযাম- অর্থাত্ বায়তুল্লাহর দরজা এবং হাজারে আসওয়াদের মাঝখানে বায়তুল্লাহর যে দেয়াল৷
(৩) মীযাবে রহমত- অর্থাত্ বায়তুল্লাহর পর-নালার নীচে৷
(৪) বায়তুল্লাহর অভ্যন্তরে৷
(৫) যমযম কূপের নিকটে৷
(৬) মাকামে ইবরাহীমের পিছনে৷
(৭) সাফা পাহাড়ের উপরে৷
(৮) মারওয়া পাহাড়ের উপরে৷
(৯) মাস‘আ- অর্থাত্ সাঈ (দৌঁড়ানো) করার স্থানে বিশেষ ভাবে সবুজ বাতিদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে৷
(১০) আরাফাতের ময়দানে৷
(১১) মুযদালিফায় বিশেষ ভাবে মাশ‘আরুল হারাম মসজিদে৷
(১২) মিনায়৷
(১৩) জামারাতের নিকটে (মিনায় উচা লম্বা তিনটি পাথরের স্তম্ভ)৷
(১৪) বায়তুল্লাহ্ শরীফের দিকে চোখ পড়ার সময়৷
(১৫) হাতীমের ভিতরে (বাইতুল্লাহ শরীফ সংলগ্ন উত্তরে প্রাচীর বেষ্টিত কিছু জায়গা)৷
(১৬) হাজারে আসওয়াদ এবং রুকনে ইয়ামানীর মাঝখানে৷
পবিত্র কুরআনে হজ্জ ও ওমরাহ উভয়টির কথা এসেছে৷ এরশাদ হয়েছে: واتموا الحج والعمرة لله অর্থাত্, তোমরা হজ্জ ও ওমরাহ আল্লাহর জন্য পরিপূর্ণ কর৷ (সূরা বাকারা)
ওমরাহ কাকে বলে? ওমরাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ- যিয়ারত করা, দর্শন করা বা আবাদ জায়গার ইচ্ছা করা৷
শরীয়তের ভাষায়- শরীয়ত নির্দেশিত বিশেষ পদ্ধতিতে ইহরামসহ ক’াবা শরীরে চর্তুদিকে তাওয়াফ করা, ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ পাহাড়দ্বরে মধ্যস্থলে সাঈ করা এবং মাথা মুন্ডানোকে ওমরাহ বলে৷ এটিকে ছোট হজ্জও বলা হয়৷
ওমরার ফযীলত- বহু হাদীসে ওমরার ফযীলত বর্ণিত আছে৷ যথা-
(১) হযরত ইবনে মাসউদ (রা:) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা:) এরশাদ করেছেন, তোমরা হজ্জ ও ওমরাহ একই সঙ্গে সম্পন্ন করো৷ কারণ, এগুলো দারিদ্র্য ও গুনাহকে এমনভাবে দূর করে যেভাবে কামারের হাঁপর (আগুন) লোহা, সোনা ও রুপার ময়লা দূর করে দেয়৷ (তিরমিযী শরীফ)
(২) হুজুর (সা:) এরশাদ করেছেন, রমজান মাসে ওমরাহ পালন করা সাওয়াবের দিক দিয়ে এক হজ্জের সমান৷ অন্য একটি রেওয়ায়েতে এসেছে যে, ঐ হজ্জের সমান যা আমার সাথে পালন করা হয়েছে৷ (তিরমিযী শরীফ)
(৩) হজ্জ এবং ওমরাহ পালনকারীরা আল্লাহর মেহমান৷ তারা যদি আল্লাহর নিকট কোন প্রার্থনা করে তিনি তা কবুল করে থাকেন৷ এবং যদি পাপ হতে ক্ষমা চায় তবে তাদের পাপ ক্ষমা করেন৷
(৪) হাদীসে এসেছে, এক ওমরাহ থেকে অন্য ওমরাহ- এ দু’রে মাঝে কৃত পাপের কাফ্ফারা স্বরূপ৷ (বুখারী শরীফ)
কখন ওমরাহ করবে- ওমরাহ বছরের যে কোন সময় পালন করা জায়েয৷ শুধু ৫দিন অর্থাত্ ৯ই যিলহজ্জ হতে ১৩ই যিলহজ্জ পর্যন্ত ওমরার ইহরাম বাঁধা মাকরূহে তাহরীমী৷ রমজানের ওমরাহ ঐ হজ্জের সমান, যা হুজুর (সাঃ)-এর সাথে সমাপন করা হয়েছে৷
ওমরাহ করা সুন্নত না ওয়াজিব?
ওমরার মীকাত (ইহরাম বাঁধার স্থান)- পাকিস্তান ভারত বাংলাদেশ উপমহাদেশসহ প্রাচ্য ও দূরপ্রাচ্য হতে হজ্জ/ওমরাহ পালনকারীদের জন্য মীকাত হচ্ছে “ইয়ালাম্লাম্” যা মক্কা থেকে ১২০ কি. িম. দূরে অবস্থিত৷ আর মক্কা মুকাররামা হতে উমরাহ পালন কারীদের জন্য ওমরার ইহরামের মীকাত হচ্ছে ‘হিল্ল’ (হারাম সীমার বাহিরের ভূমি) ত েতানঈম নামক স্থানেই (মসজিদে আয়েশা) ইহরাম বাঁধা উত্তম৷ মীকাতের বাহির থেকে আসলে মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধবে৷
ওমরার কার্যাবলী- দু’টি ফরয ও দু’টি ওয়াজিব: ১. ওমরার জন্য ইহরাম বাঁধা (শর্ত/ফরয)৷ ২. তাওয়াফ করা (রুকন/ফরয)৷ ৩. সাঈ করা (ওয়াজিব)৷ ৪. মাথা মুন্ডাাে বা ছাঁটানো (ওয়াজিব)৷
ওমরার ফরয- ওমরার ফরয ২টি: ১. ইহরাম বাঁধা৷ ২. তাওয়াফ করা৷
ওমরার ওয়াজিব- ওমরার ওয়াজিব ২টি: ১. সাফা ও মারওয়ার মাঝে সাঈ করা৷ ২. মাথার চুল মুন্ডানো বা ছাঁটানো৷
ফরয দু’টির আলোচনা
(১ম ফরয ইহরাম)
ইহরামের সংজ্ঞা- ইহরাম এর আভিধানিক অর্থ হারাম বা নিষিদ্ধ করা৷ পারিভাষায় এহরাম বলা হয়, হজ্জ অথবা ওমরার নিয়ত করে তালবিয়াহ পড়া, অর্থাত্ নিয়ত ও তালবিয়াহ পাঠ এ দুয়ের সমন্বয়কে ইহরাম বলে৷ হাজীগণ যখন ইহরাম বেঁধে হজ্জের জন্য তালবিয়াহ পাঠ করে, তখন তার জন্য কতিপয় হালাল এবং মুবাহ্ বস্তুও হারাম হয়ে যায়৷ এ জন্য একে ইহরাম বলা হয়৷ রূপক অর্থে সেই দু’টি চাদরওে ইহরাম বলে, যা হাজীগণ ইহরাম অবস্থায় ব্যবহার করে৷ (মা‘আরিফুস সুনান ৬খন্ড ২৯পৃষ্ঠা)
কখন ইহরাম বাঁধবে? মীকাত থেকে ওমরাহ বা হজ্জের নিয়তে ইহরাম বাঁধা সুন্নত৷ মীকাত আসার পূর্বে ইহরাম বাঁধা সুন্নতের খেলাফ৷ তবে যেহেতু বাংলাদেশ থেকে হজ্জে যাওয়ার সময় বিমানে থাকা অবস্থাতেই মীকাত এসে যায় এবং বিমানে কর্তব্যরত ব্যক্তিরা হাজীদেরকে এব্যাপারে ঘোষণা দিয়ে জানিয়ে দিলেও অনেক সময় অসাবধানতার কারণে তারা ইহরাম বাঁধতে ভূলে যায়৷ তাই বিমানে আরোহনের পূর্বেই সুবিধা মত জায়গায় হজ্জ বা ওমরার নিয়তে ইহরাম বেঁধে নিবে৷ (বাহরুর রায়েক ২য় খন্ড ৫৫৮পৃষ্ঠা)
ইহরাম বাঁধার সুন্নত তরীকা- যে ব্যক্তি ইহরাম বাঁধার সংকল্প করবে সে প্রথমে ক্ষৌরকার্য করবে, তারপর মীকাতের পূর্বেই বাড়ীতে/হাজী ক্যাম্পে/বিমানবন্দরে কিংবা বিমানে মিকাত অতিক্রম করার পূর্বে ইহরামের নিয়তে ওযু-গোসল করবে৷ যদি কোন কারণে গোসল করতে না পারে, তাহলে ওযু করে নিবে৷ অতঃপর সেলাই করা কাপড় খুলে একটি সেলাইবিহীন লুঙ্গি, আর একটি চাদর এমনভাবে পরিধান করবে, েযন দুই কাধ এবং পিঠ ঢেকে যায়৷ অতঃপর সুগন্ধি লাগাবে৷ এর পর টুপি পরে বা গায়ের চাদর দ্বারা মাথা ঢেকে ইহরামের নিয়তে দু‘রাকাআত নফল নামাজ(প্রথম রাকাআতে সুরা কাফেরুন, দ্বিতীয় রাকাআতে সুরা এখ্লাছ) আদায় করেসালাম ফিরিয়ে কাবা শরীফের দিকে মুখ করে বসে মস্তক অনাবৃত করে সেখানেই নিয়ত করবে৷ মাকরূহ ওয়াক্ত হলে নামাজের জন্য অপেক্ষা করবে৷ অপেক্ষা করা সম্ভব না হলে নামাজ ছাড়াই ইহরাম বেঁধে ফেলবে৷ (মা‘আরিফুস সুনান ৬ষ্ঠ খন্ড ৮৬পৃষ্ঠা, বাহরুর রায়েক ২য় খন্ড ৫৬০-৫৬৫পৃষ্ঠা)
নিয়ত করার নিয়ম- ওমরার ইহরামের নিয়ত- اَللّهم انى اريد العمرة فيسرها لى وتقبلها منى “আল্লাহুম্মা ইন্নী উরিদুল ওমরাতা ফায়াস্সিরহা লী ওয়া তাকাব্বালহা মিন্নী” অর্থাত্ হে আল্লাহ আমি ওমরাহ পালনের নিয়ত করছি৷ তা আমার জন্য সহজ করে দাও এবং কবুল কর৷ অথবা এভাবে নিয়ত করবে- اللهم لبيك عمرة “আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা ওমরাতান” অর্থাত্, হে আল্লাহ আমি ওমরার জন্য হাজির৷
যদি আরবী শব্দ মনে না থাকে তবে শুধু বাংলায় নিয়ত করলেই চলবে৷ অতঃপর পুরুষরা উচ্চঃস্বরে আর মহিলারা নিম্নস্বরে তিনবার তালবিয়াহ্ পাঠ করবে৷ তাহলে ইহরাম বাঁধা হয়ে গেলো৷ এবার সাধ্য অনুযায়ী বেশী বেশী তালবিয়াহ্ পাঠ করতে থাকবে৷ এবং সে সকল কাজ সম্পূর্ণরূপে বর্জন করবে যা ইহরাম বাঁধার পর নিষিদ্ধ৷
ইহরাম শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত বা ফরয- ইহরাম শুদ্ধ হওয়ার জন্য প্রধানত দু’টি শর্ত রছে:
১.মুসলমান হওয়া৷
২. ইহরামের নিয়ত ও তালবিয়াহ পাঠ করা৷
ইহরামের ওয়াজিবসমূহ- ইহরামের ওয়াজিব দু‘টি:
১. মীকাত অতিক্রম করার পূর্বে ইহরাম বাঁধা৷
২. ইহরামের নিষিদ্ধ বিষয়াদি হতে বিরত থাকা৷
ইহরামের সুন্নতসমূহ- ইহরামের সুন্নত নয়টি:
১. হজ্জের মাসে অর্থাত্ শাওয়াল থেকে যিলহজ্জের ভিতর ইহরাম বাঁধা৷
২. নিজ দেশের মীকাত অতিক্রম করার পূর্বে ইহরাম বাঁধা৷
৩. ইহরামের পূর্বে গোসল অথবা ওযু করা৷
৪. চাঁদর এবং (সেলাই ছাড়া) লুঙ্গি ব্যবহার করা৷
৫. দুই রাকা‘আত নফল নামাজ আদায় করা৷
৬. তালবিয়াহ্ পাঠ করা৷
৭. তালবিয়াহ্ তিনবার পাঠ করা৷
৮. উচ্চস্বরে তালবিয়াহ পাঠ করা৷
৯. ইহরামের নিয়ত করার পূর্বে সুগন্ধি ব্যবহার করা৷
ইহরামের মুস্তাহাবসমূহ্- ইহরামের মুস্তাহাব ১০টি:
১. ইহরামের পূর্বে দেহের ময়লা পরিষ্কার করা৷
২. নখ কাটা৷
৩. বগল পরিস্কার করা৷
৪. নাভির নিম্নদেশের পশম দূরীভুত করা৷
৫. ইহরামের নিয়তে গোসল করা৷
৬. নতুন অথবা ধৌত করা সাদা লুঙ্গি অথবা চাঁদর পরিধান করা৷
৭. স্যান্ডেল পায়ে দেওয়া৷
৮. মুখে ইহরামের নিয়ত করা৷
৯. নামাজের পরে বসা অবস্থায় নিয়ত করা৷
১০. মীকাতের পূর্বে ইহরাম বাঁধা৷
ইহরামের নিষিদ্ধ কর্মসমূহ-
১. পুরুষদের জন্য সেলাইযুক্ত কাপড় পরিধান করা৷
২. সুগন্ধি ব্যবহার করা৷
৩. চুল কাটা অথবা কাউকে দিয়ে কাটানো৷
৪. মস্তক অথবা মুখ সম্পূর্ণ অথবা আংশিকভাবে ঢাকা৷
৫. নখ কাটা৷
৬. উকুন মারা অথবা কাউকে দিয়ে মারানো৷
৭. স্থলজ প্রাণী শিকার করা৷
৮. স্বামী-স্ত্রীর বিশেষ সম্পর্ক ও যৌনাচার৷
ইহরামের মাকরূহ বিষয়সমূহ-
১. শরীর হতে ময়লা দূর করা৷ মাথা অথবা দাড়ি এবং দেহকে সাবান ইত্যাদি দ্বারা ধৌত করা৷
২. মাথা অথবা দাঁড়ি চিরুনি দ্বারা আচঁড়ানো৷
৩. দাঁড়ি খিলাল করা৷
৪. চাঁদর গিরা দিয়ে কাঁধের উপর বাঁধা; চাঁদর অথবা লুঙ্গিতে গিরা দেওয়া অথবা সুঁই, পিন ইত্যাদি লাগানো৷ সুতা অথবা দড়ি দিয়ে বাঁধা৷
৫. নাক, থুতনী ও গাল কাপড় দিয়ে আবৃত করা৷ হাত দিয়ে ঢাকা জায়েয আছে৷
৬. বালিশের উপর মূখ রেখে উপুড় হয়ে শয়ন করা৷
ইহরামের মুবাহ বিষয়সমূহ- ১. মাথা এবং মুখমন্ডল ব্যতীত সারা দেহ আবৃত করা৷ কান,কাঁধ বা পা ইত্যাদি চাঁদর অথবা রুমাল ইত্যাদি দ্বারা আবৃত করা জায়েয৷
২. ক্ষতিকর প্রাণী হত্যা করা জায়েয৷ যেমন, সাপ, বিচ্ছু, গিরগিট, চিল, ছারপোকা, মশা-মাছি, মুর্দাখেকো প্রাণী কাক ইত্যাদি৷
৩. লং, এলাচি এবং সুগন্ধিযুক্ত জর্দ্দা ছাড়া পান খাওয়া জায়েয৷ লং, এলাচি এবং সুগন্ধিযুক্ত জর্দ্দা দিয়ে পান খাওয়া মাকরূহ৷
৪. আয়না দেখা, মিসওয়াক করা, দাঁত তুলে ফেলা, ভাঙ্গা-নখ কেটে ফেলা, চুল বা পশম না ফেলে শিঙ্গা লাগানো, সুগন্ধিহীন সুরমা লাগানো, খাত্না করানো, ভাঙ্গা অঙ্গ ব্যান্ডেজ করা ইত্যাদি জায়েয৷
৫. কলেরার ইনজেকশন ও বসন্তের টিকা নেওয়া জায়েয৷
৬. দাঁড়ি, মাথা এবং সমস্ত দেহ এমনভাবে চুলকানো জায়েয যাতে চুল না পড়ে৷ যদি জোরে জোরে চুলকালেও চুল পড়ার আশঙ্কা না থাকে, তাহলে রক্ত বের হয়ে গেলেও তা জায়েয৷
৭. ইহরাম অবস্থায় কাপড় অথবা তোয়ালে দিয়ে মুখমন্ডল পরিষ্কার করা মাকরূহ৷ তবে হাত দিয়ে মুখমন্ডল পরিষ্কার করা যাবে৷
৮. নাপিত দ্বারা বা নিজেই নিজের চুল কামানো বা কাটা যায়৷ আপনার মত যার এখন মাথা কামিয়ে বা কেটে হালাল হওয়ার মুহুর্তে, তার দ্বারাও চুল কামানো বা কাটানো যায়৷
৯. ইহরাম অবস্থায় কম্বল, লেপ, কাঁথা, শাল ইত্যাদি গায়ে দেয়া জায়েয৷
১০. যখম অথবা হাত-পায়ের কাটা জায়গায় তেল লাগানো জায়েয৷ তবে শর্ত হচ্ছে তা যেন সুগন্ধিযুক্ত না হয়৷
মহিলাদের ইহরাম বাঁধার নিয়ম-
vমহিলাদের ইহরাম পুরুষদের ইহরামেরই অনুরুপ৷ শুধু পার্থক্য এইযে, মহিলাদের জন্য মাথা ঢেকে রাখা ওয়াজিব এবং কাপড় দ্বারা মুখ আবৃত করা নিষিদ্ধ, আর সেলাই যুক্ত কাপড় পরিধান করা জায়েয৷
v মহিলাদের জন্য বেগানা পুরুষের সম্মুখে বে-পর্দা হওয়া নিষিদ্ধ৷ সুতরাং চেহারার সাথে লাগতে না পারে এমন কোন কিছু (ক্যাপ) কপালের উপর বেঁধে তার উপর কাপড় ঝুলিয়ে দিতে হবে৷
v মহিলাদের জন্য ইহরাম অবস্থায় অলংকার, পা-মোজা, হাত-মোজা, ইত্যাদি পরিধান করা জায়েয৷ তবে অলংকার পরিধান না করাই উত্তম৷
v মহিলাদের জন্য মাথা মন্ডন করা নিষিদ্ধ৷ সুতরাং ইহরাম খোলার পর সমস্ত চুলের ঝুটি ধরে এর অগ্রভাগ হতে আঙ্গুলের এক কর পরিমান চুল নিজের হাতে কেটে ফেলতে হবে৷ কোন বেগানা পুরুষকে দিয়ে কাটানো নিষিদ্ধ৷
v মহিলাদের জন্য হায়েযের অবস্থায়ও হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা জায়েয৷ শুধু তাওয়াফ নিষিদ্ধ৷ যদি ইহরামের পূর্বে হায়েয দেখা দেয়, তাহলে গোসল করে ইহরাম বেঁধে (নামাজবিহীন) হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করবে, িকন্তু সাঈ এবং তাওয়াফ করবে না৷
v যদি কোন মহিলার হায়েয জনিত কারণে যথা সময়ে তাওয়াফে যিয়ারত সম্পন্ন করতে সক্ষম না হয়, তবে তাকে পবিত্র হওয়ার পর তাওয়াফ সম্পন্ন করতে হবে৷ ‘দম’ ওয়াজিব হবেনা৷
v মহিলারা তাওয়াফের সময় কখনও ইজতিবা এবং রমল করবে না৷ এবং সাঈ করার সময় সবুজ বাতি দু‘টির মধ্যবর্তী স্থানে দৌঁড়িয়ে চলবে না৷ বরং নিজেদের স্বাভাবিক গতীতে চলবে৷ এবং পুরুষদের ভীড়ের সময় হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করতে যাবে না৷ এমনকি উহাতে হাত দ্বারা স্পর্শও করবে না৷ এবং মাকামে ইবরাহীমের পিছনে তাওয়াফের দু’রাকা‘আত নামাজও পড় েনা৷ হারাম শরীফে যে স্থানে সহজ হয়, সে স্থানে পড়বে৷
নাবালেগের ইহরাম-
v যদি কোন অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক শিশু চালাক ও বুদ্ধিমান বলে প্রতীয়মান হয়, তবে সে নিজেই ইহরাম বেঁধে হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করবে এবং প্রাপ্ত বয়ষ্কদের মত সকল কাজ সম্পন্ন করবে৷ পক্ষান্তরে যদি সে একান্তই অবুঝ শিশু হয় তবে তার অভিভাবক (পিতা , বড় ভাই, চাচা ইত্যাদি) তার পক্ষ হতে ইহরাম বাঁধবে৷ শিশুকে ইহরামের নিষিদ্ধ কাজ হতে বিরত রাখা অভিভাবকের কর্তব্য৷ কিন্তু যদি শিশু কোন নিষিদ্ধ কাজ করে ফেলে তবুও সেজন্য কোন ‘দম’ অথবা সদকা শিশু বা তার অভিভাবক কারও উপর ওয়াজিব হবেনা৷
v শিশুর ইহরাম ওয়াজিব নয়৷ সুতরাং যদি সে হজ্জের যাবতীয় কাজ ছেড়ে দেয় অথবা আংশিক ছেড়ে দেয়, তবে তার উপরে ‘দম’ অথবা সদকা এবং ক্বাযা ওয়াজিব হ েনা৷
v বুদ্ধিমান শিশু হজ্জের যে সকল কাজ নিজে সম্পাদন করতে পারে, তা নিজে নিজেই সমাপন করবে আর যা নিজে সম্পন্ন করতে পারবেনা তা তার অভিভাবকগণ সম্পন্ন করে দিবে৷ অবশ্য তাওয়াফের নফল নামাজ নিজে পড়বে৷ অভিভাবক পড়লে আদায় হবে না৷
v নিয়ত, তালবিয়াহসহ হজ্জের যেসব আমল শিশুরা করতে পারেনা সে সব আমলগুলো শিশুর পক্ষ হতে তার অভিভাবকগণ করে দিবে৷ সেলাই করা কাপড় বদলিয়ে তাকে সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করাবে৷
v অবুঝ শিশুর অভিভাবক নিজের তাওয়াফের নিয়তের সঙ্গে শিশুর পক্ষ থেকে ও নিয়ত করে নিবে৷ তারপর শিশুকে সঙ্গে নিয়ে তাওয়াফ করবে৷ এভাবে এক তাওয়াফেই উভয়ের তাওয়াফ হয়ে যাবে৷
পবিত্র মক্কায় প্রবেশ
v মক্কা মুকাররামায় প্রবেশ করার পূর্বে গোসল করা সুন্নত ৷
v যখন মক্কা শরীফ দৃষ্টিগোচর হবে তখন এ দু‘আ পড়বে- اللهم اجعل لى بها قرارا وارزقنى فيها رزقا حلالا “আল্লাহুম্মাজ আল্লি বিহা কারারান ওয়ার যুকনি ফিহা রিযকান হালালান”
v অত্যন্ত বিনয় ও নম্রতার সহিত তালবিয়াহ পাঠ করতে করতে পরিপুর্ণ আদব ও সম্মান প্রদর্শন করে মক্কায় প্রবেশ করবে৷ দিবা-ভাগে বা রাত্রি বেলা যখন ইচ্ছা মক্কা শরীফে প্রবেশ করা জায়েয৷ তবে দিনের বেলা প্রবেশ করাই উত্তম৷
মসজিদে হারামে প্রবেশ করার আদব
v বায়তুল্লাহ শরীফের মসজিদের নাম মসজিদে হারাম৷ বায়তুল্লাহ শরীফ মসজিদে হারামের ঠিক মধ্যস্থানে অবস্থিত৷ মক্কা শরীফে প্রবেশ করার সাথে সাথেই মাল-সামানা গোছিয়ে সর্বাগ্রে মসজিদে হারামে উপস্থিত হওয়া মুস্তাহাব৷
v তালবিয়াহ্ পাঠ করতে করতে অত্যন্ত বিনয় ও নম্রতার সাথে আল্লাহ তা‘আলার পাক দরবারের গৌরব ও মর্যাদার প্রতি সম্মান প্রদর্শন পূর্বক মসজিদে হারামে ‘বাবুস সালাম’ দরজা দিয়ে প্রশে করা মুস্তাহাব৷ এবং প্রথমে ডান পা ভিতরে রেখে এ দু‘আ পাঠ করবে- بسم الله والصلوة والسلام على رسول الله اللهم افتح لى ابواب رحمتك “বিসমিল্লাহি, ওয়াস সালাতু ওয়াসালামু আলা রাসুলিল্লাহি, আল্লাহুম্মাফ তাহলি আবওয়াবা রাহমাতিকা”৷ অতঃপর ই’কোফের নিয়ত করবে৷
v মসজিদে হরামের প্রবেশ করার পর যখন বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে চোখ পড়বে তখন তিনবার الله اكبر، لااله الا الله “আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু” পাঠ করবে৷ এবং বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে তাকায়ে হাত উঠায়ে দু‘আ করবে৷ দু‘আর আগে দরুদ শরীফ পাঠ করবে৷ এ সময় দু‘আ কবুল হয়৷ যে দু‘আ ইচ্ছা করতে পারবে তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দু‘আ হলো আল্লাহ তা‘আলার কাছে হেদায়াত চাওয়া এবং বিনা হিসেবে জান্নাত লাভের প্রার্থনা করা৷ এ সময় দাঁড়িয়ে দু‘আ করা মুস্তাহাব৷
v মসজিদে হারামে প্রবেশ করে “তাহিয়্যাতুল মসজিদ” পড়তে নেই, এ মসজিদের তাহিয়্যাই হচ্ছে তাওয়াফ৷ সুতরাং দু‘আর পরপরেই তাওয়াফ সম্পন্ন করবে৷
v মসজিদে হারাম পৃথিবীর সকল মসজিদ অপেক্ষা উত্তম৷ এতে নামাজ পড়ার সওয়াব অত্যন্ত বেশী৷ এক নামাজের সওয়াব এক লক্ষ নামাজের সমান৷ কিন্তু সওয়াবের আধিক্য শুধূ ফরয নামাজের সহিত নির্দিষ্ট৷ নফলের সওয়াব এত না৷ নফল নামাজ ঘরে পড়াই উত্তম৷ জামা‘আতের সাথে আদায়কৃত এক দিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব হিসাব করলে ১ কোটি ৩৫ লক্ষ নামাজের সমান হয়৷ ( এ মসজিদে এক নামাজের সওয়াব এক লক্ষ নামাজের সমান৷ আর প্রত্যেক মসজিদেই জামা‘আতের সহিত নামাজ পড়লে সাতাইশ গুন সওয়াব পাওয়া যায়৷ এভাবে জামা‘আতের সাথে আদায়কৃত একদিনের পাঁচ ওযাক্ত নামাজের সওয়াব এক কোটি ৩৫ লক্ষ হয়৷)
(২য় ফরয তাওয়াফ)
তাওয়াফের সংজ্ঞা- তাওয়াফের শাব্দিক অর্থ কোন কিছুর চারিদিকে প্রদক্ষিণ করা৷ হজ্জ/ওমরার অধ্যায়ে তাওয়াফ অর্থ কা‘বা ঘরের চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করা, অর্থাত্ হাজারে আসওয়াদ হতে ডান দিকে প্রদক্ষিণ শুরু করে হাতীমসহ কা‘বা ঘরের চতুর্দিকে ঘুরে পুনরায় হাজারে আসওয়াদ পর্যন্ত পৌঁছলে তাওয়াফের এক চক্কর বা একবার প্রদক্ষিণ করা হয়৷ এভাবে সাতবার প্রদক্ষিণ করলে এক তাওয়াফ সম্পূর্ণ হয়৷ তাই এক তাওয়াফের জন্য সাতবার প্রদক্ষিণ করতে হয়৷
তাওয়াফের ফযীলত- পবিত্র কুরআনে এসেছে, এবং আমি ইবরাহীম (আ:) ও ইসমাঈল (আ:)- েক দায়িত্ব দিলাম যে তোমরা আমার ঘর তাওয়াফকারী ও ই‘তিকাফকারীদের জন্য পবিত্র কর৷ হাদীস শরীফে উহার প্রতি বিশেষ উত্সাহ প্রদান করা হয়েছে৷
(১) নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বায়তুল্লাহ শরীফের উপর প্রত্যহ একশত বিশটি রহমত নাযিল করেন৷ তন্মধ্যে ষাটটি রহমত তাওয়াফ কারীদের জন্য, চল্লিশটি নামাজ আদায়কারীদের জন্য, এবং বিশটি বায়তুল্লাহ শরীফের দর্শনার্থীদের জন্য৷
(২) অন্য আর এক বর্ণনায় রয়েছে, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করে, তার এক কদম উঠিয়ে আরেক কদম রাখার পূর্বেই আল্লাহ তা‘আলা একটি পাপ ক্ষমা করে দিবেন এবং একটি নেকী লিখে দিবেন, আর একটি মর্যাদা বুলন্দ করেন৷
(৩) হাদীসে এসেছে , যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করল ও দু‘রাকাআত নামাজ আদায় করল, তার এ কাজ একটি গোলাম আযাদের সমতুল্য নেকী হল৷ (ইবনে মাজাহ)
(৪) হাদীসে আরো এসেছে, তুমি যখন বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করলে, পাপ থেকে এমন ভাবে বের হয়ে গেলে, যেমন নাকি আজই তোমার মাতা তোমাকে জন্ম দিলেন৷ (মুসান্নাফু আব্দির রায্যাক)
তাওয়াফ করার সুন্নত তরীকা- ওযু করে পাক-সাফ হয়ে কা‘বা শরীফে এসে প্রথমে তাওয়াফের নিয়ত এভাবে করবে: اللهم انى اريد طواف بيتك المحرم، فيسره لى وتقبله منى. উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইনী্ন উরীদু তাওয়াফা বাইতিকাল মুহাররম, ফায়ািস্সর্হু লী ওয়া তাকাব্বাল্হু মিন্নী “হে আল্লাহ! আমি তোমার সম্মানিত গৃহের তাওয়াফ করতে চাই, অতএব তুমি এটা আমার জন্য সহজ করে দাও এবং কবুল করে নাও”৷
বায়তুল্লাহর যে কোণায় হাজারে আসওয়াদ বিদ্যমান, সে কোণায় হাজারে আসওয়াদকে ডানপাশে রেখে দাঁড়াবে৷ একটু সামনে অগ্রসর হয়ে এবং হাজারে আসওয়াদকে সামনে রেখে নামাজের তাকবীরে তাহরীমার সময় যেভাবে হাত উঠাতে হয় সেভাবে কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে بسم الله الله اكبر لااله الا الله ولله الحمد والصلوة والسلام على رسول الله “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া লিল্লাহিল হাম্দ ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সলামু আলা রাসূলিল্লাহ”বলা৷ অতঃপর হাত নামিয়ে সম্ভব হলে হাজারে আসওয়াদের উপর হাত দু’াে এমনভাবে রাখবে যেমনভাবে সিজ্দার সময় রাখা হয়৷ এরপর আদবের সাথে উক্ত পাথরে চুমু দেয়া৷ সম্ভব না হলে উক্ত পাথরের দিকে হাত বা অন্য কিছু দিয়ে ইশারা করে তাতে চুমু দেয়া৷ মনে রাখতে হবে হাজারে আসওয়াদে চুমু দিতে যেয়ে কাউকে যেন কষ্ট না দেয়া হয় এবং তাড়াহুড়া না করা হয়৷ কারণ কাউকে কষ্ট দেয়া হারাম৷ অতঃপর ডানদিকে কা‘বা শরীফের দরজার দিকে অগ্রসর হবে৷ তাওয়াফের সময় রুকনে ইয়ামানী (কা‘বা ঘরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ) পৌছে তা শুধু ডান হাত দ্বারা স্পর্শ করতে হবে৷ সম্ভব না হলে এর প্রয়োজন নেই, ইশারা করার জন্য হাত উঠাতে হবে না৷ পুনরায় হাজারে আসওয়াদের দিকে চক্কর ঘুরে بسم الله الله اكبر لااله الا الله ولله الحمد والصلوة والسلام على رسول الله “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া লিল্লাহিল হাম্দ ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সলামু আলা রাসূলিল্লাহ” বলে তাতে চুমু দিবে এবং সম্ভব না হলে হাত বা হাতের তালুতে অথবা অন্য কিছূ দিয়ে ইশারা করে তাতে চুমু দিতে হবে৷ এভাবে সাত চক্কর পূর্ণ করতে হবে৷ সপ্তম চক্করের পর অষ্টমবার পূণরায় হাজারে আসওয়াদকে চুম্বন প্রদানের সহিত তাওয়াফ শেষ করবে৷ এবার এক তাওয়াফ পূর্ণ হয়ে গেলো৷ তাওয়াফের পর মাকামে ইবরাহীমের পিছনে অথবা হারাম শরীফের যে কোন স্থানে দু’রাকা‘আত ‘ওয়াজিবুত তাওয়াফ’ নামাজ আদায় কর েহবে৷ এটি প্রতি সাত চক্কর তাওয়াফের পর ওয়াজিব৷ প্রথম রাকাআ'তে সূরা কাফিরূন এবং দ্বিতীয় রাকাআ'তে সূরা ইখলাস পাঠ করবে৷ তারপর যমযমের পানি পান করে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করতঃ বাবুস্-সাফার পথে বের হয়ে সাফা-মারওয়ার সাঈ করবে৷
তাওয়াফের শর্তসমূহ- তাওয়াফের শর্ত ৬টি৷ তিনটি শুধু হজ্জের তাওয়াফেরজন্য এবং তিনটি সকল তাওয়াফের জন্য৷
তাওয়াফের রুকন/ফরযসমূহ-
(১) তাওয়াফের অধিকাংশ চক্কর পূর্ণ করা৷
(২) বায়তুল্লাহর বাইরে, মসজিদে হারামের ভিতরে তাওয়াফ করা৷
(৩) নিজে তাওয়াফ করা৷ (কোন কিছুর উপর আরোহণ করে হলেও৷)
তাওয়াফের ওয়াজিবসমূহ-
(১) তাহারাত অর্থাত্ গোসল ফরয থাকলে তা করে নেয়া এবং ওযু না থাকলে ওযু করে নেয়া৷
(২) শরীর ঢাকা৷
(৩) কোন কিছুতে আরোহণ না করে তাওয়াফ করা (মা‘যুর অর্থাত্ বৃদ্ধ, অসুস্থ ও রুগ্ন-অক্ষম ব্যক্তির জন্য অবশ্য আরোহণ করে তাওয়াফ করা জায়েয৷)
(৪) নিজের ডানদিক হতে তাওয়াফ শুরু করা৷
(৫) হাতীমসহ বায়তুল্লাহর উত্তর দিকে বায়তুল্লাহ সংলগ্ন অর্ধচক্রাকৃতি দেয়াল ঘেরা জায়গা তাওয়াফ করা৷
(৬) সবগুলো চক্কর পূর্ণ করা৷
(৭) তাওয়াফের শেষে দু’রাক‘আত নামাজ পড়া৷
ওয়াজিবের হুকুম- যদি কেউ কোন ওয়াজিব ছেড়ে দেয় ত েতাকে পুনরায় তাওয়াফ করতে হবে৷ যদি কেউ সেটা না করে তবে ‘দম’ বা কুরবানী ওয়াজিব হ৷ে
তাওয়াফের সুন্নতসমূহ- (১) হাজারে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করা৷
(২) ইজতিবা করা (অর্থাত্ ইহরামের চাঁদর ডান বগলের নীচে দিয়ে এনে বাম কাঁধে জড়ানো)
(৩) হাজারে আসওয়াদে চুমু প্রদান করা বা হাতে ইশারা করে তাতে চুমু দেয়া৷
(৪) প্রথম তিন চক্করে রমল করা (অর্থাত্ বীরদর্পে হাত দুলিয়ে দ্রুত পায়ে চলা)
(৫) বাকী চক্করগুলোতে রমল না করা৷ বরং ধীরে-সুস্থে তাওয়াফ করা৷
(৬) সাঈ ও তাওয়াফের মাঝে ইস্তিলাম (হাজারে আসওয়াদে চুমু প্রদান বা হাত কিংবা অন্য কিছু দিয়ে ইশারা করে তাতে চুমু দেয়া) করা৷ (এটা সে ব্যক্তির জন্য, যে তাওয়াফের পর সাঈ করে৷)
(৭) হাজারে আসওয়াদের সামনে দাঁড়িয়ে ‘আল্লাহু আকবর’ ব েদুই হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠানো৷
(৮) তাওয়াফের শুরুতে হাজারে আসওয়াদের দিকে মুখ করা৷ (৯) চক্করগুলো বিরতি না দিয়ে পরপর করা৷
বিঃদ্রঃ- মহিলাদের জন্য রমল ও ইযতিবা করতে হবে না৷
তাওয়াফের মুস্তাহাবসমূহ-
(১) হাজারে আসওয়াদের ডানদিক হতে তাওয়াফ শুরু করা৷
(২) হাজারে আসওয়াদে তিনবার চুমু খাওয়া৷ এবং এর উপর তিনবার সিজদা করা৷
(৩) তাওয়াফ করার সময় দু‘আ মাছুরাসমূহ পাঠ করা৷
(৪) সম্ভব হলে বায়তুল্লাহর দেয়াল ঘেঁষে তাওয়াফ করা৷
(৫) মহিলাদের রাতে তাওয়াফ করা৷
(৬) মুবাহ কথাবার্তাও বর্জন করা৷
(৭) আল্লাহর ধ্যান ও খেয়ালে তাওয়াফ করা৷
(৮) দু‘আ এবং যিকির-আযকার আস্তে আস্তে পাঠ করা৷
(৯) রুকনে ইয়ামানী সম্ভব হলে হাতে স্পর্শ করা ৷
(১০) আকর্ষণিয় বস্তু-সামগ্রী দর্শন করা হতে দৃষ্টিকে সংযত রাখা৷
তাওয়াফের মুবাহসমূহ-
(১) সালাম করা৷
(২) হাঁচি দেয়ার পর আল-হামদুলিল্লাহ্ বলা৷
(৩) শরীয়ত সম্পর্কিত মাসআলা বলে দেয়া এবং জানতে চওয়া৷
(৪) প্রয়োজনবশতঃ কথা বলা৷
(৫) কোন কিছু পান করা৷
(৬) দু‘আ তরক করা৷
(৭) ভাল ভাল কবিতা আবৃতি করা৷
(৮) পাক-পবিত্র জুতা পরিধান করে তাওয়াফ করা ৷
(৯) ওযরবশতঃ সওয়ার হয়ে তাওয়াফ করা৷
(১০) মনে মনে কুরআন তেলাওয়াত করা৷
তাওয়াফের নিষিদ্ধ কাজসমূহ- (১) জানাবাত অথবা হায়েয ও নেফাস অবস্থায় তাওয়াফ করা৷
(২) বিনা ওযরে কারও কাঁধে আরোহন করে তাওয়াফ করা৷
(৩) বিনা ওযুতে তাওয়াফ করা৷
(৪) বিনা ওযরে হাঁটুর উপর ভর করে অথবা উল্টা হয়ে তাওয়াফ করা৷
(৫) তাওয়াফ করার সময় হাতীম এবং বায়তুল্লাহর মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা দিয়ে বাহির হয়ে যাওয়া৷ অর্থাত্, হাতীমকে বাদ দিয়ে তাওয়াফ করা৷
(৬) তাওয়াফের কোন প্রদক্ষিণ অথবা উহা হতে কিছু কম তাওয়াফ ছেড়ে দেয়া৷
(৭) হাজারে আসওয়াদ ব্যতীত অন্য কোন স্থান হতে তাওয়াফ শুরু করা৷
(৮) তাওয়াফের মধ্যে বায়তুল্লাহর দিকে মুখ করা৷ অবশ্য তাওয়াফের শুরুতে হাজারে আসওয়াদকে সামনে করার সময় ইহা জায়েয আছে৷
(৯) তাওয়াফের ওয়াজিবসমূহ হতে কোন একটিকে তরক করা৷
তাওয়াফের মাকরূহ কাজসমূহ-
(১) অর্নথক কথাবার্তা বলা৷
(২) বেচা-কেনা করা৷
(৩) হাম্দ ও না‘তবিহীন কবিতা আবৃত্তি করা৷
(৪) উচ্চস্বরে দু‘আ পাঠ বা কুরআন তিলাওয়াত করা৷
(৫) অপবিত্র কাপড়ে তাওয়াফ করা৷
(৬) ওযর ব্যতীত রমল ও ইজতিবা পরিত্যাগ করা৷
(৭) হাজারে আসওয়াদের চুম্বন ছেড়ে দেয়া৷
(৮) এক চক্কর সমাধা করে পরবর্তী চক্কর দিতে অযথা বিলম্ব করা৷
(৯) তাওয়াফের শেষে দু’রাকা‘আত নামাজ আদায় না ক েপুনরায় তাওয়াফ শুরু করা৷
(১০) তাওয়াফের নিয়তের সময় তাকবীর ব্যতীত কান পর্যন্ত হাত তোলা৷
(১১) খুতবা বা নামাজের জামাআতের সময় তাওয়াফ করা৷
(১২) তাওয়াফের মাঝে পানাহার করা৷
(১৩) তাওয়াফের সময় নামাজের মত হাত বাঁধা বা কোমরে কিংবা ঘাড়ে হাত বাঁধা৷
(১৪) পেশাব-পায়খানার বেগ হওয়ার পরও তাওয়াফ করা৷
(১৫) ক্ষুধা এবং রাগের অবস্থায় তাওয়াফ করা৷
ওয়াজিব দু’টির আলোচনা
(১ম ওয়াজিব সাঈ)
সাফা ও মারওয়া হচ্ছে মসজিদে হারাম সংলগ্ন দু’টি পাহাড়৷ ইহা সেইঐতিহ্যবাহী স্থান যেখা েহযরত হাজেরাহ (আ.) পানির অন্বেষনে দৌঁড়িয়েছিলেন৷
সাঈর সংজ্ঞা- সাঈ শব্দের অর্থ দৌঁড়ান, চেষ্টা করা৷ হজ্জের অধ্যায়ে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে সাতবার দৌঁড়ানোকে সাঈ বলা হয়৷ বর্তমানে এই স্থানটুকুর কিছু অংশ সবুজ বাতি দ্বারা চিহ্নিত আছে৷ সেখানে এসে দ্রুত দৌঁড়াতে হয়৷ সাঈ করা ওয়াজিব এবং তাওয়াফ শেষ করার সাথে সাথেই এটা করা সুন্নাত৷ শায়েখ আবদুর রহমান মুরশিদী “কান্য”-এর টিকায় বর্ণনা করেনযে, সাফা ও মারওয়ার মধ্যখানের দৌঁড়ানোর স্থানটির দূরত্ব প্রায় ৭৫০ হাত৷ সুতরাং সাত চক্করের পূর্ণ সাঈ-তে ৫,২৫০ হাত দুরত্ব অতিক্রম করতে হয়৷ সাঈ-র স্থানের প্রস্থ ৩৫ হাত৷ রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে স্থানে সাঈ করতেন তার প্রস্থ আরো বেশী ছিল৷ পরবর্তীতে সেখানে বাসগৃহ নির্মিত হওয়ায় প্রস্থ কমে যায়৷ এরপর খলীফা মাহদী এসব বাসগৃহ ভূমিসাত্ করে প্রস্থ নির্দিষ্ট করে দেন৷ অদ্যাবধি সেই প্রস্থই অব্যাহত আছে৷ পরবর্তীকালে সৌদীসরকার মসজিদে হারামের সম্প্রসারন করে এবং সাঈর স্থানটি অনেক প্রশস্ত ও আধুনিক পদ্ধতিতে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে৷
সাঈর সুন্নত তরীকা- তাওয়াফের পর যমযমের পানি পান করতঃ হাজারে আসওয়াদে সম্ভব হলে সরাসরি ইস্তিলাম্ তথা চুমু দিবে আর সম্ভব না হলে হাত দিয়ে ইশারা করে হাতে বা তালুতে চুমু দিতে হবে৷ মুখে বলতে হবে بسم الله الله اكبر لااله الا الله ولله الحمد والصلوة والسلام على رسول الله“বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া লিল্লাহিল হাম্দ ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সলামু আলা রাসূলিল্লাহ”৷ অতঃপর বাবুস্-সাফা দিয়ে বের হয়ে সাফা পাহাড়ের উপর এতটুকুু আরোহণ করতে হবে যেন বায়তুল্লাহ শরীফ দৃষ্টিগোচর হয় এবং কেবলার প্রতি মুখ করে দাঁড়িয়ে সাঈ‘র নিয়ত করে বলতে হবে: “হে আল্লাহ্! আপনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সাফা-মারওয়ার সাত চক্কর সাঈ‘র নিয়ত করছি, আপনি আমার জন্য তা সহজসাধ্য করুন এবং কবুল করুন”৷ পরে দু‘আর মাধ্যমে যতটুকু হাত উঠানো হয় ততটুকু পর্যন্ত হাত উঠাতে হবে৷ তাকবীরে তাহরীমার মত কান পর্যন্ত হাত উঠাবে না৷ উচ্চস্বরে তাকবীর ও তাহলীল অর্থাত্, الله اكبر لااله الا الله “আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু” পাঠ করতে হবে এবং কাকুতি মিনতিসহকারে আল্লাহর দরবারে দু‘আ করতে হবে৷ অতঃপর যিকির তাসবিহ ও দু‘আ দরুদ পাঠ করতে করতে সাফা থেকে মারওয়ার দিকে অগ্রসর হতে হবে এবং দু’টি সবুজ চিহ্নিত স্তভের (যা বর্তমানে সবুজ রং-এর বাতি দ্বারা চিহ্নিত আছে) মধ্যবর্তী স্থানটুকু দ্রুত চলতে হবে এবং এই দু‘আ পড়বে: رب اغفر وارحم وانت الأعز الأكرم (রব্বিগ্ ফির্ ওয়ার্হাম্ ওয়া আন্তাল্ আ‘আয্যুল আক্রাম্)৷ মহিলাদের দৌঁড়াতে হবে না এবং পাহাড়ে উঠাও জরুরী নয়৷ দ্বিতীয় স্তম্ভ পার হয়ে আবার স্বাভাবিকভাবে চলতে হবে৷ মারওয়া পাহাড়ে উঠে বায়তুল্লাহর দিকে মুখ করে দাঁড়াতে এবং কাকুতি মিনতিসহ দু‘আ করতে হবে৷ এতে সাঈ‘র এক চক্কর হবে৷ পুনরায় মারওয়া থেকে সাফার দিকে চলতে হবে৷ সবুজ চিহ্নিত স্তম্ভের মধ্যবর্তী স্থান একটু দ্রুত দৌঁড়ে চলবে এবং দ্বিতীয় স্তম্ভ অতিক্রম করে স্বাভাবিকভাবে চলতে হবে৷ এ হল দ্বিতীয় চক্কর৷ এভাবে সাত চক্কর পুরণ করতে হবে৷ এভাবে সাঈ সমাধা করার পর মাথামুন্ডন করে বা চুল ছেঁটে উমরাহ পালনকারীকে ইহরাম খুলে ফেলতে হবে৷
সাঈর রুকন/ফরয- সাফা এবং মারওয়ার মধ্যবর্তী স্থানটি হলো সাঈর রুকন৷ এর বাহিরে সাঈ করলে সাঈ আদায় হবে না৷
সাঈর শর্তসমূহ- সাঈর শর্ত ছয়টি:
(১) নিজের সাঈ নিজে করা৷
(২) প্রথমে তাওয়াফ করে পরে সাঈ করা৷
(৩) সাফা থেকে শুরু করা এবং মারওয়া গিয়ে শেষ করা৷
(৪) সাঈর পূর্বে হজ্জ অথবা উমরার এহরাম বাঁধতে হবে৷
(৫) সাঈর অধিকাংশ চক্কর সম্পন্ন করা৷
(৬) সাঈর নির্ধারিত সময়ে সাঈ সম্পন্ন করা৷ এটা হজ্জের সাঈর জন্য শর্ত, উমরার সাঈর জন্য নয়৷ তবে কেরান বা তামাত্তু আদায়কারী ব্যক্তি যদি উমরাহ পালন করে, তাহলে উমরার সাঈর জন্যও নির্ধারিত সময় হওয়া শর্ত৷
সাঈর ওয়াজিবসমূহ- সাঈর ওয়াজিব ছয়টি:
(১) পায়ে চলে সাঈ করা৷ (তবে ওযরবশতঃ কোন কিছুতে আরোহণ করেও সাঈ করা যায়৷)
(২) সাত চক্কর পূর্ণ করা অর্থাত্, ফরয চার চক্করের পর আরো তিন চক্কর পূর্ণ করা৷ যদি কেউ তিন চক্কর ছেড়ে দেয়, তাহলে সাঈ শুদ্ধ হয়ে যাবে৷ কিন্তু প্রতি চক্করের বদলে পৌণেদুই-সের গম অথবা তার মূল্য সদকা করা ওয়াজিব৷
(৩) সাফা ও মারওযার মধ্যবর্তী স্থান পরিপূর্ণভাবে অতিক্রম করা৷
(৪) সাঈ সফা হতে আরম্ভ করা এবং মারওয়াতে সমাপ্ত করা৷
(৫) এমন তাওয়াফের পর সাঈ করা; যা জানাবত, হায়েয ও নেফাস হতে পবিত্র অবস্থায় সম্পন্ন করা হয়েছে৷
(৬) উমরার সাঈর ক্ষেত্রে উমরার ইহরাম সাঈ সমাপ্ত করা পর্যন্ত বহাল রাখা৷
সাঈর সুন্নতসমূহ- (১) হাজারে আসওয়াদে চুমু দিয়ে সাঈ‘র জন্য বের হওয়া৷
(২) তাওয়াফ শেষ করার সাথে সাথে সাঈ করা৷
(৩) সাফা ও মারওয়ায় আরোহণ করা৷
(৪) সাফা ও মারওয়ায় আরোহণ করে কেবলামুখী হওয়া৷
(৫) সাঈ‘র চক্করগুলো একটির পর একটি আদায় করা৷
(৬) সবুজ স্তম্ভ দু‘টির মধ্যবর্তী স্থানটি একটু দৌঁড়ে অতিক্রম করা৷
(৭) সতর ঢাকা, যদিও সর্বাস্থায়ই সতর ঢাকা ফরয৷ কিন্তু এ ক্ষেত্রে আরো বেশী গুরুত্ব প্রদান করতে হবে৷ (৮) জানাবত, হায়েয ও নেফাস হতে পবিত্র হওয়া৷
বি.দ্র.- সাঈকরা অবস্থায় যদি নামাজের জামা‘আত অথবা জানাযার নামাজ শুরু হয়ে যায়, তাহলে সাঈ পরিহার করে নামাজে শরিক হয়ে যাবে৷ নামাজের পর অবশিষ্ট চক্কর পুরা করবে৷
সাঈর মুস্তাহাবসমূহ-
(১) নিয়ত করা৷
(২)সাফা এবং মারওয়ায় দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করা৷
(৩) কাকুতি মিনতি ও বিনয়ের সঙ্গে যিকির আযকার ও দু‘আ করা৷
(৪) সাঈ সমাধা করে বায়তুল্লাহ্ শরীফে দু’রাকা‘আত নামাাজ পড়া৷ মারওয়ার উপ েএ নফল নামায আদায় করা মাকরূহ৷
(৫) সাঈর চক্করসমূহের মধ্যে যদি বিনা ওযরে খুব বেশি ব্যবধান হয়ে যায়, তাহলে নতুন করে সাঈ আরম্ভ করা৷
সাঈর মুবাহ কাজসমূহ-
১. মনকে অন্যদিকে আকৃষ্ট করে না এবং একাগ্রতার পরিপন্থি নয় -এমন সব জায়েয কথাবার্তা বলা৷
২. সাঈর চক্করসমূহের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করে না -এধরণের পানাহার৷
সাঈর মাকরূহসমূহ-
(১) বেচা-কেনা করা৷
(২) অনর্থক কথাবার্তা বলা৷
(৩) সাঈ‘র চক্করসমূহ পরপর আদায় না করা৷
(৪) সাফা ও মারওয়ায় আরোহণ না করা৷
(৫) ওযর ব্যতীত তাওয়াফের পর সাঈ করতে বিলম্ব করা৷
(৬) সবুজ চিহ্নিত স্তম্ভের মাঝে না দৌঁড়ানো৷
(২য় ওয়াজিব মাথা মুন্ডানো বা চুল ছাঁটানো)
মাথা মুন্ডানো বা চুল ছাঁটানোর পরিমান- সাঈ সমাপ্ত করে মাথা মুন্ডাবে অথবা চুল ছাঁটাবে৷ মাথার চুলের এক চতুর্থাংশ মুন্ডন করা অথবা ছাঁটা ওয়াজিব৷ ইহা না করে ইহরাম খুলা নিষেধ৷ সারা মাথা মুন্ডন করা অথবা ছাঁটা সুন্নত৷ মাথার কিছু অংশ মুন্ডন করা অথবা ছাঁটা আর কিছু অংশ ছেড়ে দেওয়া হাদীসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে৷ শুধু মাথার চর্তুথাশের চুলের উপরে যথেষ্টকরণ জায়েয৷ কিন্তু তা মাকরূহে তাহরীমী৷ চুল ছাঁটার চেয়ে মুন্ডন করাই উত্তম৷ পবিত্র কোরআনে মুন্ডন করার কথা আগে এবং ছাঁটার কথা পরে এসেছে৷
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজেও মাথা মুন্ডন করেছিলেন৷ যারা মাথা মুন্ডন করে তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রহমত ও মাগফিরাতের দু‘আ করেছেন তিনবার৷ আর যারা চুল ছাঁটে তাদের জন্য দু‘আ করেছেন একবার৷ (বাদাইউস সানায়ে ২য় খন্ড )
হাদীসে এসেছে, আর তোমার মাথা মুন্ডন কর এতে প্রত্যেক চুলের বিনিময়ে তোমার জন্য একটি করে ছাওয়াব ও একটি করে গুনাহের ক্ষমা রয়েছে৷ কসর অর্থাত্ চুল ছাঁটার অর্থ সমস্ত্র মাথা থেকে হাতের আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ চুল কেটে ফেলা৷ যাদের চুল আঙ্গুলের এক করের চেয়ে কম লম্বা তাদেরকে মুন্ডনই করতে হবে৷ নতুবা হালাল হবে না৷ (বাদাইউস সানায়ে ২য় খন্ড ৩৩০পৃষ্ঠা)
একটু-আধটু চুল কাটা ছহিহ হবেনা৷ কোন কোন হাজী সাহেব দু-চারটি চুল কেটে ইহরাম খুলে ফেলে এটা সম্পন্ন ভূল৷ কারো টাক মাথা থাকলে মাথায় ব্লেড অথবা ক্ষুর চালিয়ে দিলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে৷ (বাদাইউস সানায়ে ২য় খন্ড ৩৩০পৃষ্ঠা)
v ক্ষৌরকার্য হারামের সীমানার ভিতরে করতে হবে৷ এর বাহিরে করলে ‘দম’ ওয়াজিব হ৷ে মহিলাদের জন্য মাথা মুন্ডানো হারাম৷ হাতের আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ চুল কেটে ফেলাই যথেষ্ট৷ সমগ্র মাথার চুল একত্র করে আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ কাটা সুন্নত৷ এতটুকু কাটার নামই কসর৷ (বাদাইউস সানায়ে ২য় খন্ড ৩২৯পৃষ্ঠা)
কার দ্বারা মাথা মুন্ডাতে বা ছাঁটাতে পারবে-
পুরুষরা নাপিত অথবা যারা সাঈর দায়িত্ব থেকে ফারেগ হয়ে গেছে তাদের দ্বারা কিংবা নিজের মাথা নিজেই কামিয়ে নিতে বা ছেঁটে নিতে পারবে৷
v কোন ইহরাম বিশিষ্ট ব্যক্তি যার কেবল মাথা মন্ডানো বা ছাঁটা বাকী থাকে এবং পূর্ববর্তী সকল কাজ সম্পন্ন হয়ে যায় তখন এরূপ ইহরাম বিশিষ্ট ব্যক্তি অন্য ইহরাম বিশিষ্ট ব্যক্তির মাথা মুন্ডাতে বা ছাঁটতে পারবে৷
v মহিলারা নিজের চুল নিজেই অথবা অন্য মহিলা দ্বারা কাটাইয়া নিবে৷ v মাথা মুন্ডন অথবা চুল ছাঁটার পর নখ কাটবে এবং বগল প্রভৃতির লোম পরিস্কার করবে৷ মাথা মুন্ডানোর পূর্বে নখ ইত্যাদি কাটলে ক্ষতিপূরণ ওয়াজিব হবে৷ ক্ষৌর কার্যের পরে ইহরামের কারণে যে সব কাজ নিষিদ্ধ ছিল তা জায়েয হয়ে যায়৷ যেমন সুগন্ধি ব্যবহার করা, সেলাইযুক্ত কাপড় পরিধান করা স্থল প্রাণী শিকার করা ইত্যাদি৷ (বাদাইউস সানায়ে ২য়খন্ড ৩৩১পৃষ্ঠা)
তালবিয়াহ্ (লাব্বাইকা পুরা পাঠ করা)
لَبَّيْكَ اللّهُمَّ لَبَّيْك. لَبَّيْكَ لاَشَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْك.
اِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْك. لاَشَرِيْكَ لَك.
“লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল-হামদা ওয়ান্নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারীকা লাক৷” অর্থাত্, আমি উপস্থিত হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত৷ আমি উপস্থিত তোমার কোন শরীক নাই, আমি উপস্থিত৷ নিশ্চয় সকল প্রশংসা ও নিয়ামত তোমার এবং রাজত্বও তোমারই, তোমার কোন শরীক নাই৷
অতঃপর দরুদ শরীফ পাঠ করবে এবং যা ইচ্ছা প্রর্থনা করবে৷ তালবিয়াহ্ পাঠ করার পর এ দু‘আ করা মুস্তাহাব-
اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَسْئَلُكَ رِضَاكَ وَالْجَنَّةَ وَاَعُوْذُبِكَ مِنْ غَضَبِكَ وَالنَّارِ.
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্ আলুকা রিযাকা ওয়াল জান্নাহ ওয়া আউযুবিকামিন গাজাবিকা ওয়ান নারি”৷ অর্থাত্, হে আল্লাহ আমি তোমার সন্তুষ্টি ও জান্নাতের প্রত্যাশা করছি এবং তোমার ক্রোধ ও জাহান্নাম হতে পানাহ চাচ্ছি৷
তালবিয়াহকে চার ভাগ করে পাঠ করা মুস্তাহাব৷ চার ভাগ নিম্নরূপ-
১৷ لَبَّيْكَ اللّهُمَّ لَبَّيْك. লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক,
২৷ لَبَّيْكَ لاَشَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْك. লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইক,
৩৷ اِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْك. ইন্নাল-হামদা ওয়ান্নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুলক,
৪৷ لاَشَرِيْكَ لَك. লা-শারী-কা লাক্” (মা‘আরিফুস সুনান ৬খন্ড ৩০পৃষ্ঠা)
যখনই তালবিয়াহ পড়বে তিনবার পড়বে৷ তারপর দরুদ শরীফ পাঠ করবে৷ এবং উপরোল্লেখিত দু‘আটি পাঠ করবে৷ (মারাকিউল ফালাহ৭৩০পৃষ্ঠা)
তালবিয়াহ পাঠের হুকুম- তালবিয়াহ হজ্জ/উমরার শে‘আর বা শ্লোগান ৷ তাই তালবিয়াহ পাঠের কোন বিকল্প নাই৷ তাই হজ্জ/উমরাহ পালনেচ্ছু প্রত্যেক ব্যক্তিরই শুদ্ধভাবে তালবিয়াহ পাঠ শিক্ষা করা উচিত৷ তালবিয়াহ পাঠ ফরয, ওয়াজিব না সুন্নত এ নিয়ে ফেকাহবিদদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে৷ হানাফি মাযহাব অনুযায়ী ইহরাম বাঁধার সময় তালবিয়াহ বা অন্য কোন যিকির একবরা পাঠ করা ফরয এবং একাধিকবার পাঠ করা সুন্নত৷ (মা‘আরিফুস সুনান ৬খন্ড ২৯পৃষ্ঠা)
তালবিয়াহ বেশী বেশী পড়া মুস্তাহাব৷ দাড়িয়ে, বসে, শুয়ে, চলন্ত অবস্থায়, ওযু ও বে-ওযু সর্বাবস্থায় পড়া যায়৷ বিশেষ করে ব্যক্তির অবস্থা পরিবর্তনের সময় পড়া মুস্তাহাব৷ যেমন- দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসার সময়, বসা থেকে দাঁড়ানোর সময়, ঘর থেকে বের হওয়ার সময়, ঘরে প্রবেশের সময়, গাড়িতে উঠার সময়, গাড়ি থেকে নামার সময়, উচু স্থানে উঠূার সময়, নিচুতে নামার সময় ইত্যাদি৷ (মা‘আরিফুস সুনান ৬খন্ড ৮০-৮৪পৃষ্ঠা)
মসজিদে হারাম, মিনার মসজিদে খাইফ, আরাফার মসজিদে নামিরায়, তালবিয়াহ নিচুস্বরে পাঠ করা৷ পুরুষরা তালিবিয়াহ উচ্চঃস্বরে এবং মহিলারা নিম্নস্বরে পাঠ করবে৷
তালবিয়াহ পাঠের শুরু ও শেষ সময়- ইহরামের নিয়ত করার সময় থেকে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ শুরু করার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত৷ (মা‘আরিফুস সুনান ৬খন্ড ৮০পৃষ্টা ও বাহরুর রায়েক ২য় খন্ড ৬০৫পৃষ্ঠা)
তালবিয়াহর ফযীলত-
(১) রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন কোন মুসলামান হাজী লাব্বাইকা উচ্চারণ করতে থাকে তখন তার ডানে বামে যত পাথর, বৃক্ষ এবং কংকর থাকে সকলেই তার সঙ্গে লাব্বাইকা উচ্চারণ করতে থাকে৷ এভাবে যমীনের এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত সেই একই ধ্বনি উত্থিত হতে থাকে৷ (তিরমিযী)
(২) আর এক হাদীসে আছে, হযরত মুসা (আঃ) যথন লাব্বাইকা বলতেন, তখন আল্লাহ তা‘আলাও বলতেন: লাব্বাইকা অর্থাত্ আমিও হাজির আছি৷ (কান্য)
(৩) তালবিয়াহ পাঠকারীকে আল্লাহর পক্ষ থেকে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়৷
(৪) সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত তালবিয়াহ পড়তে থাকলে তার গুনাহ অস্তমিত হয়ে সে মায়ের গর্ভ থেকে সদ্য প্রসূত শিশুর মত নিস্পাপ হয়ে যায়৷
দু‘আ কবুলের বিশেষ স্থানসমূহ
(১) মাতাফ- অর্থাত্ তাওয়াফ করার জায়গা৷
(২) মুলতাযাম- অর্থাত্ বায়তুল্লাহর দরজা এবং হাজারে আসওয়াদের মাঝখানে বায়তুল্লাহর যে দেয়াল৷
(৩) মীযাবে রহমত- অর্থাত্ বায়তুল্লাহর পর-নালার নীচে৷
(৪) বায়তুল্লাহর অভ্যন্তরে৷
(৫) যমযম কূপের নিকটে৷
(৬) মাকামে ইবরাহীমের পিছনে৷
(৭) সাফা পাহাড়ের উপরে৷
(৮) মারওয়া পাহাড়ের উপরে৷
(৯) মাস‘আ- অর্থাত্ সাঈ (দৌঁড়ানো) করার স্থানে বিশেষ ভাবে সবুজ বাতিদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে৷
(১০) আরাফাতের ময়দানে৷
(১১) মুযদালিফায় বিশেষ ভাবে মাশ‘আরুল হারাম মসজিদে৷
(১২) মিনায়৷
(১৩) জামারাতের নিকটে (মিনায় উচা লম্বা তিনটি পাথরের স্তম্ভ)৷
(১৪) বায়তুল্লাহ্ শরীফের দিকে চোখ পড়ার সময়৷
(১৫) হাতীমের ভিতরে (বাইতুল্লাহ শরীফ সংলগ্ন উত্তরে প্রাচীর বেষ্টিত কিছু জায়গা)৷
(১৬) হাজারে আসওয়াদ এবং রুকনে ইয়ামানীর মাঝখানে৷
কোন মন্তব্য নেই:
/>