মঙ্গলবার, ২৩ জুন, ২০১৫

মা তুমিও বধূ ছিলে, বধূ তুমিও মা হবে----



পৃথিবীর ইতিহাসে যে সকল যুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে তার প্রতিটির সমাপ্তি ঘটেছে। কৌশল ও অস্ত্রের শক্তির কাছে একপক্ষ বিজয়ী হয়েছে এবং অন্যপক্ষ বিজেতার গ্লানি বহন করেছে। এ সকল যুদ্ধে কোটি কোটি মানুষের জীবনহানি, লাখ লাখ কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট কিংবা বছরের পর বছর মূল্যবান সময় ব্যয় হলেও একটি সময়ে সকল দ্বন্দের পরিসমাপ্তি হয়েছে। শত্রু মিত্রে পরিণত হয়েছে আবার মিত্র শত্রুতে রুপ নিয়েছে।

কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে একটি মাত্র লড়াই কোনদিন শেষ হবে বলে মনে হয়না। শ্বাশুড়ী-পূত্রবধুর লড়াই। কোথাও শ্বাশুড়ী-পূত্রবধুর মধ্যে সু-সম্পর্ক স্থায়ী হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত বিরল। মাঝে মাঝে এদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক দেখা গেলেও তা ক্ষনিকের মাত্র।

অজ পাড়াগাঁও থেকে অভিজাত শহর পর্যন্ত একই চিত্র ফুটে উঠেছে। শ্বাশুড়ী-পূত্রবধুর মধ্যকার এ লড়াইকে সাপে-নেউলে সম্পকের সাথে তুলনা করা চলে। সমাজের অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষিতেরও একই হাল।

ছেলেকে বিয়ে করিয়ে পূত্রবধু ঘরে এনে শ্বাশুড়ী মনে মনে ভাবে এই বার বুঝি সংসারের কর্তৃত্ব গেল! দীর্ঘদিন আগলে রাখা দায়িত্ব হঠাৎ ঘরে আসা বধূ দখল করবে এটা শ্বাশুড়ী মানতেই নারাজ। অন্যদিকে একটি মেয়ে বধূ হয়ে এসেই চিন্তা করে স্বামী-সংসার সবই তো আমার। এভাবে দু’জনের ভাবনার পার্থক্য তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করতে খুব বেশি সময় নেয় না।

অল্পদিনের ব্যবধানেই দেখা যায় শ্বাশুড়ী-পূত্রবধুর মধ্যে আন্তরিকতার চেয়ে অভিমান কিংবা সামান্য বিষয় নিয়ে ঝগড়াঝাটি বেশি হয়।

দু’প্রজন্মের দুই নারীর একজন মায়ের অধিকার এবং অন্যজন স্ত্রীর দাবী নিয়ে যখন সন্তান ও স্বামীর কাছে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায় তখন কম সন্তানই এর মীমাংসা করতে পারে।

একদিকে মায়ের প্রতি ভালোবাসা, অন্যদিকে দাম্পত্য জীবন স্থায়ী করার চিন্তায় বিভোর থাকা ছেলেটি সঠিক সমাধান দিতে পারে না। এমন সংকটময় অবস্থায় পরিবারে ভাঙ্গন ধরে। না হয় শ্বাশুড়ী-পূত্রবধুর মধ্যে সকাল সন্ধ্যা চলতে থাকে পালাক্রমে মান-অভিমান, ঝাগড়া-ঝাটি। তখন ঘরের চৌকাঠ ডিঙিয়ে সমস্যার সমাধানে পাড়া-পড়শীকে এগিয়ে আসতে হয়।

শ্বাশুড়ী-পুত্রবধুদের মধ্যে এমন বিষাদময় সম্পর্ক সৃষ্টির কারণ কি? যিনি শ্বাশুড়ী তারও মেয়ে থাকে এবং তারা বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে অন্যের ঘরে যায় এবং যে মেয়েটি বধূ হয়ে আসে সেও একটি পরিবার থেকে আসে। যেখানে দীর্ঘদিন সে মায়ের কাছে লালিত পালিত হয়ে আরেক মায়ের কাছে আশ্রয় পায়। তবে কেন গর্ভের মেয়ে ও ছেলের বউয়ের সম্পর্কে এমন বিস্তর ফারাক ?
যিনি আজ শ্বাশুড়ী হয়েছেন তিনিও এককালে বধূ ছিলেন আবার যিনি নতুন বধু হয়ে এসেছে সেও সময়ের পরিবর্তনে মা হবে। এ ভাবনা কেন দু’প্রজন্মের নারীর মধ্যে আসে না ? শ্বাশুড়ী-পূত্রবধুদের সম্পকের অবনতি হওয়ার ক্ষেত্রে তুলনামূলক ভাবে দু’পক্ষের অবস্থানই সমান দৃষ্টিতে দেখা উচিত।

আমাদের সমাজের মায়েদের ক্ষেত্রে একটি কথা খুবই প্রচলিত আছে যে, ‘ছেলে আমার মস্ত পাঁজি বৌয়ের কথায় নাচে, জামাই আমার কত্ত ভালো মেয়ের কথায় বাঁচে’। পূত্রবধু ও মেয়ের ক্ষেত্রে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টির কারণে পরিবারে অনেক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। শ্বাশুড়ী যেমন পূত্রবধূকে নিজের অধীনে রাখতে চেষ্টা করে, তেমনি মেয়েকে যে পরিবারে বিবাহ দেয় সে পরিবারে ও মেয়ে যেন কর্তৃত্ব নিয়ে থাকতে পারে তার জন্যও পরামর্শ প্রদান করেন।

পূত্রবধুরাও কম যায়না। দীর্ঘ কয়েক বছর যে মা তার ছেলেকে হাজারো কষ্ট সহ্য করে লালন পালন করল সেই ছেলেটির বউ হয়ে এসে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই যদি স্বামীকে পূর্ণভাবে নিজের করে পেতে চায় তবে কোন মায়ের পক্ষেই সহ্য করা বোধহয় সম্ভব নয়। এদেশের কম সংখ্যক ছেলে-ই মায়ের প্রতি সকল দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং স্ত্রী সকল অধিকার পূরণ করার ক্ষমতা রাখে। স্ত্রী যখন লক্ষ্য করে স্বামী তার মাকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে তার কিছু চাওয়া অপূর্ণ রাখে তখনই বাঁধে বিপত্তি। অথচ এই মেয়েটাই তার ভাইয়ের কাছ থেকে জন্মদাত্রী মায়ের প্রতি সম্পূর্ণ কর্তব্য পালিত হওয়ার আশা করে। তাতে ভাইয়ের স্ত্রীর অধিকার রক্ষা পেল কি পেল না তা নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই ।

মানসিকতার পরিবর্তনের মাধ্যমে শ্বাশুড়ী-পূত্রবধুদের দূরত্ব কমিয়ে পারিবারিক শৃঙ্খলা আনয়ণ সম্ভব। এক্ষেত্রে উভয়ের প্রতি উভয়ের ত্যাগের মানসিকতা থাকতে হবে। শ্বাশুড়ী যদি পূত্রবধুকে দাসী-বাঁদী করে রাখতে চায় কিংবা পূত্রবধুও শ্বাশুড়ীর সাজানো সংসারের পূর্ণ অধিকার নিমিষেই পেতে চায় তবে চলমান বিবাদ মীমাংসা করার সাধ্য কারো নাই।

শ্বাশুড়ী যদি পূত্রবধুকে মেয়ের স্থানে এবং পূত্রবধু যদি শ্বাশুড়ীকে মায়ের স্থানে বসাতে পারে তবেই পারিবারিক শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।


আশা করি, এ প্রজন্ম থেকেই শ্বাশুড়ী-পূত্রবধুদের দ্বন্দ বহুলাংশে বিলুপ্ত হয়ে অনাবিল শান্তি প্রবাহিত হবে। শ্বাশুড়ী ও মা এবং পূত্রবধু ও মেয়ের পার্থক্য যদি ঘুচে যায় তবেই এটা সম্ভব।
             

                         ----------------------------------------------------------------------------------

                             '' শুধু নিজে শিক্ষিত হলে হবেনা, প্রথমে বিবেকটাকে শিক্ষিত করুন। ''

কোন মন্তব্য নেই:

Comment here />

Widget ByBlogger Maruf
Widget ByBlogger Maruf