রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৩

পর্দা পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর অবশ্য কর্তব্য...


পর্দা..............................
পর্দা পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের
উপর অবশ্য কর্তব্য...
এব্যাপারে কোরআন ও হাদীসে অসংখ্য
বর্ণনা এসেছে যা প্রায় সকলের জানা আছে.

তবুও একজন ফ্যানের
অনুরোধে এব্যাপারে কিছু
আলোচনা করছি....
পর্দা বা হিজাব পালন নারী পুরুষ
উভয়ের ওপর ফরজ... বেগানা নারীর
প্রতি দৃষ্টিপাত, স্বামীর
অগোচরে স্ত্রী তার পূর্বের
প্রেমিকের সাথে অথবা স্ত্রীর
অগোচরে স্বামী তার পূর্বের
প্রেমিকার সাখে নিয়মিত যোগাযোগ
করছে এবং ফোনে,
ফেসবুকে অথবা স্কাইপিতে যৌন
উত্তেজক
কথা বা দাম্পত্য জীবনের একান্ত
ব্যক্তিগত কথা শেয়ার করাসহ সকল
অবৈধ আচরণ সম্পূর্ণ অবৈধ ও
নাজায়েজ ...
এব্যাপারে অসংখ্য আয়াত ও হাদীস
বর্ণিত হয়েছে..
আল্লাহ তায়ালা সুরা আল আহযাবের ৫৯
নং আয়াতে বলেন..
হে নবী আপনি আপনার পত্নী গনকে ও
কন্যা গনকে এবং মুমিনদের
স্ত্রীগনকে বলুন,তারা যেন তাদের
চাদরের কিয়দংশ নিজের বউপর টেনে নেয়
এতে তাদের চেনা সহজ হবে,ফলে তাদের
উত্যক্ত করা হবে না ,আল্লাহ
ক্ষমাশীল
পরম দয়ালু ।
সূরা আন নূরের ৩১
নং আয়াতে বলেছেন..
"ঈমানদার নারীদেরকে বলুন,তারা যেন
তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের
যৌনাঙ্গের হেফাজত করে
তারা যেন
যা সাধারনতঃপ্রকাশম­
ান ,তাছাড়া তাদের
সৌন্দর্য প্রকাশ
না করে এবং তারা যেন
তাদের মাথায়
ওরনা বক্ষদেশে ফেলে রাখে
এবং তারা যেন তাদের
স্বামী,পিতা,শ্বশুর ,পুত্র,স্বামীর
পুত্র,ভ্রাতা,ভ্রাতুস্পুত্র,ভগ্নি
স্ত্রীলোক অধিকার ভুক্ত বাদী,যেৌন
কামনা মুক্ত পুরুষ ও
বালক,য্রা নারীদের
গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ ,
তাদের ব্যতিত কারো কাছে তাদের
সৌন্দর্য প্রকাশ না করে ,তারা যেন
তাদের গোপন সাজ সজ্জা প্রকাশকরার
জন্য জোরে পদচারনা না করে
মুমিনগন ,তোমরা সবাই আল্লাহর
সামনে তওবা কর ,যাতে তোমরা সফলকাম
হও ।
সূরা আন নূরের ৩০নঙ আয়াতে বলেন..
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের
দৃষ্টি নত রাখে এবং যৌনাঙ্গের
হেফাজত করে ,এতে তাদের জন্য খুব
পবিত্রতা আছে..""
এমনিভাবে অসংখ্য হাদীসেও
পর্দা পালনের কথা বলা হয়েছে ১.
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
নারী হল সতর তথা আবৃত থাকার বস্ত্ত।
নিশ্চয়ই সে যখন ঘর থেকে বের হয়
তখন
শয়তান তাকে মনোযোগ
দিয়ে দেখতে থাকে। আর সে যখন
গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করে তখন
সে আল্লাহ
তাআলার সবচেয়ে বেশি নিকটে থাকে।-
আলমুজামুল আওসাত, তবারানী
এই হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে,
বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের
হওয়া উচিত
নয়।
২. আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ)
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন নেকাব ও
হাতমোজা পরিধান না করে। (সহীহ
বুখারী ৪/৬৩, হাদীস : ১৮৩৮)
কাযী আবু বকর ইবনে আরাবী বলেন,
নারীর
জন্য বোরকা দ্বারা মুখমন্ডল আবৃত
রাখা ফরয। তবে হজ্বের সময়টুকু এর
ব্যতিক্রম। কেননা, এই সময়
তারা ওড়নাটা চেহারার উপর
ঝুলিয়ে দিবে, চেহারার
সাথে মিলিয়ে রাখবে না। পরপুরুষ
থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখবে এবং পুরু
তাদের থেকে দূরে থাকবে। (আরিযাতুল
আহওয়াযী ৪/৫৬)
৩. আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ)
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
যে ব্যক্তি অহঙ্কারবশত কাপড়
ঝুলিয়ে রাখে কিয়ামতের দিন আল্লাহ
তাআলা তার দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে)
তাকাবেন না। তখন উম্মুল মুমিনীন
উম্মে সালামা (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন,
তাহলে মহিলারা তাদের কাপড়ের ঝুল
কীভাবে রাখবে? রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এক বিঘত
ঝুলিয়ে রাখবে। উম্মে সালামা বললেন,
এতে তো তাদের পা অনাবৃত থাকবে। তখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
তাহলে এক
হাত ঝুলিয়ে রাখবে, এর বেশি নয়। -
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪১১৭;
জামে তিরমিযী ৪/২২৩; সুনানে নাসাঈ
৮/২০৯; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক
১১/৮২
ইমাম তিরমিযী বলেন, এই হাদীসে নারীর
জন্য কাপড় ঝুলিয়ে রাখার অবকাশ
দেওয়া হয়েছে। কারণ এটিই তাদের
জন্য
অধিক আবৃতকারী।
৪. ওকবা ইবনে আমের জুহানী (রাঃ)-এর
সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
তোমরা নারীদের নিকট
যাওয়া থেকে বিরত থাক। এক
আনসারী সাহাবী আরয করলেন,
ইয়া রাসূলাল্লাহ! স্বামী পক্ষীয়
আত্মীয়
সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তিনি বললে,
সে তো মৃত্যু। -সহীহ বুখারী ৯/২৪২;
সহীহ
মুসলিম, হাদীস : ২১৭২; জামে তিরমিযী,
হাদীস : ১১৭১; মুসনাদে আহমাদ ৪/১৪৯,
১৫৩
এই হাদীসে বেগানা নারী-পুরুষের
একান্ত
অবস্থানকে নিষেধ করা হয়েছে এবং এ
প্রসঙ্গে স্বামী পক্ষীয় আত্মীয়-
স্বজন
যেমন দেবর-ভাসুর ইত্যাদির
সাথে অধিক
সাবধানতা অবলম্বনকে অপরিহার্য
করা হয়েছে।
৫. হযরত আয়েশা (রাঃ) ইফ্কের দীর্ঘ
হাদীসে বলেছেন-আমি আমার
স্থানে বসে ছিলাম একসময় আমার চোখ
দুটি নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল
এবং আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সফওয়ান
ইবনে মুয়াত্তাল আসসুলামী ছিল
বাহিনীর
পিছনে আগমনকারী। সে যখন আমার
অবস্থানস্থলের নিকট পৌছল তখন একজন
ঘুমন্ত মানুষের আকৃতি দেখতে পেল।
এরপর
সে আমার নিকট এলে আমাকে চিনে ফেলল।
কারণ পর্দা বিধান অবতীর্ণ হওয়ার
আগে সে আমাকে দেখেছিল। সে তখন
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি র
বলে ওঠে, যার দরুণ আমি ঘুম
থেকে জেগে উঠি এবং ওড়না দিয়ে নিজে
করে ফেলি।
অন্য রেওয়ায়েতে আছে,
আমি ওড়না দিয়ে আমার
চেহারা ঢেকে ফেলি।-সহীহ
বুখারী ৫/৩২০; সহীহ মুসলিম, হাদীস :
২৭৭০; জামে তিরমিযী, হাদীস : ৩১৭৯
৬. উম্মুল মুমিনীন
উম্মে সালামা (রাঃ)
বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছিলাম।
উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা (রাঃ) ও
সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এমন সময়
আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম
উপস্থিত
হলেন। এটি ছিল পর্দা বিধানের পরের
ঘটনা। তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
তোমরা তার
সামনে থেকে সরে যাও। আমরা বললাম,
তিনি তো অন্ধ, আমাদেরকে দেখছেন না?!
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরাও
কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখছ না? -
সুনানে আবু দাউদ ৪/৩৬১, হাদীস : ৪১১২;
জামে তিরমিযী ৫/১০২, হাদীস : ২৭৭৯;
মুসনাদে আহমাদ ৬/২৯৬; শরহুল মুসলিম,
নববী ১০/৯৭; ফাতহুল বারী ৯/২৪৮
৭. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ)
বলেন,
আমরা যখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ইহরাম
অবস্থায় ছিলাম তখন আমাদের পাশ
দিয়ে অনেক কাফেলা অতিক্রম করত।
তারা যখন আমাদের
সামনাসামনি চলে আসত তখন আমাদের
সকলেই চেহারার ওপর
ওড়না টেনে দিতাম।
তারা চলে গেলে আবার
তা সরিয়ে নিতাম।-মুসনাদে আহমাদ
৬/৩০;
ইবনে মাজাহ,
হাদীস: ২৯৩৫
এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, পরপুরুষের
সামনে চেহারা ঢেকে রাখা আবশ্যক।
৮. আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) বলেন,
আমরা পুরুষদের সামনে মুখমন্ডল আবৃত
করে রাখতাম। -মুসতাদরাকে হাকেম
১/৪৫৪
এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, সাহাবা-
যুগের সাধারণ মহিলারাও গায়র
মাহরাম
পুরুষ থেকে নিজেদের চেহারা আবৃত
করতেন। কারণ আসমা বিনতে আবি বকর রা.
এখানে বহুবচন ব্যবহার করেছেন।
যা প্রমাণ করে উম্মুল মুমিনগণ
ছাড়া অন্য
নারীরাও তাদের মুখমন্ডল আবৃত
রাখতেন।
৯. ফাতিমা বিনতে মুনযির (রাহঃ) বলেন,
আমরা আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ)-এর
সাথে ইহরাম অবস্থায়
থাকাকালে আমাদের
মুখমন্ডল ঢেকে রাখতাম।-মুয়াত্তা,
ইমাম
মালেক ১/৩২৮; মুসতাদরাকে হাকেম
১/৪৫৪
হযরত ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করেছেন-যখনই কোনো পুরুষ
কোনো নারীর সাথে একান্তে সাক্ষাত
করে তখন তাদের তৃতীয়জন হয়
শয়তান।-
জামে তিরমিযী
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) বলেন,
একজন
মহিলা পর্দার পিছন
থেকে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-
এর
হাতে একটি কাগজ দিতে চাইল।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাত
গুটিয়ে নিলেন (কাগজটি নিলেন
না এবং)
বললেন, আমি জানি না, এটা কি পুরুষের
হাত না নারীর। মহিলা আরজ করলেন,
‘নারীর হাত।’ নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
‘তুমি যদি নারী হতে তাহলে নিশ্চয়ই
নখে মেহেদী থাকত।’-সুনানে আবু দাউদ,
সুনানে নাসায়ী
এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, পীর-
মুর্শিদ ও
উস্তাদের সাথেও
পর্দা করা অপরিহার্য।
হযরত উমাইমা বিনতে রুকাইকা (রাঃ)
থেকে বাইয়াত সংক্রান্ত একটি দীর্ঘ
হাদীসে আছে যে, নারীগণ বললেন, আল্লাহ
ও তাঁর রাসূল আমাদের প্রতি আমাদের
নিজেদের চেয়েও মেহেরবান।
সুতরাং আপনার হাত মোবারক দিন,
আমরা বাইয়াত হই। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন,
আমি নারীদের সাথে হাত মিলাই না।
(যা মুখে বলেছি তা মেনে চলাই
তোমাদের
জন্য অপরিহার্য)।-মুয়াত্তা মালিক
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) বলেন,
আল্লাহর কসম! বাইয়াতের সময় তাঁর
(নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-
এর) হাত কখনো কোনো নারীর হাত স্পর্শ
করেনি। তিনি শুধু মুখে বলতেন,
তোমাকে বাইয়াত করলাম।-সহীহ
বুখারী ২/১০৭১
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
দুই শ্রেণীর দোযখী এখনও
আমি দেখিনি।
(কারণ তারা এখন নেই,
ভবিষ্যতে আত্মপ্রকাশ করবে) এক
শ্রেণী হচ্ছে ঐ সকল মানুষ, যাদের
হাতে ষাঁড়ের লেজের মতো চাবুক
থাকবে,
যা দিয়ে তারা মানুষকে প্রহার
করবে।
(দ্বিতীয় শ্রেণী হচ্ছে) ঐ সকল নারী,
যারা হবে পোশাক পরিহিতা, নগ্ন,
আকৃষ্ট ও
আকৃষ্টকারী; তাদের মাথা হবে উটের
হেলানো কুঁজের ন্যায়।
এরা জান্নাতে যাবে না এবং জান্নাতের
খুশবুও পাবে না অথচ জান্নাতের
খুশবু
তো এত এত দূর থেকে পাওয়া যাবে।-
মুসলিম
২/২০৫, হাদীস : ২১২
উপরোক্ত
আলোচনা দ্বারা পর্দা পালনের
গুরুত্ব সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে....
আল্লাহ
তায়ালা আমাদেরকে সঠিকভাবে বুঝে আমল
করার তওফিক দিন...আমিন


কোন মন্তব্য নেই:

Comment here />

Widget ByBlogger Maruf
Widget ByBlogger Maruf