বুধবার, ২৭ মে, ২০১৫

নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম

নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম



ভূমিকা

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তাআলার যিনি আমাদের জন্য দ্বীনকে করেছেন পরিপূর্ণআর আমাদের জন্য সম্পন্ন করেছেন তার অসংখ্য ও অগণিত নেয়ামতসমূহ এবং এ উম্মত তথা মুসলিম জাতিকে বানিয়েছেন সমগ্র উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম উম্মত। আমাদের থেকেই একজনকে রাসূল হিসেবে আমাদের কল্যাণের জন্য প্রেরণ করেছেনযিনি আমাদের নিকট আল্লাহ তাআলার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করেনআমাদের কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন এবং আমাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ ও সংশোধন করেন। আর সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক সে মহামানবের উপরযাকে সমগ্র জগতবাসীর জন্য রহমতস্বরূপ দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং নির্বাচন করা হয়েছে নেক আমলকারীদের জন্য আদর্শস্বরূপ। আরও সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক তার সমগ্র পরিবারবর্গ ও সাথী সঙ্গীদের উপরযারা নবীগণের পর দুনিয়াতে সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী। আমীন।


একজন মুসলিম বান্দার উপর আল্লাহ তাআলার নেয়ামত ও অনুগ্রহ এত বেশি যেদুনিয়ার কোন হিসাব-নিকাশ তা আয়ত্ত করতে পারবে না এবং হিসাব করে শেষও করা যাবে না। বিশেষ করেআল্লাহ তাআলা একজন মুসলিমকে এ মহান দ্বীনের প্রতি যে হেদায়াত দিয়েছেএর চেয়ে বড় নেয়ামত দুনিয়াতে আর কিছুই হতে পারে না। কারণআল্লাহ তাআলা নিজেই এ দ্বীনের প্রতি সন্তুষ্টি জ্ঞাপন করেছেন এবং তিনি তার বান্দাদের জন্য এ দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেছেন এবং পছন্দ করেছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন যেতার বান্দাদের থেকে এ দ্বীন ছাড়া অন্য কোন আর কিছুই তিনি কবুল করবেন না। কারণএ দ্বীনের কোন বিকল্প নাইআল্লাহ তাআলা মানবজাতির কল্যাণের জন্য এ দীনকেই বাছাই করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا .
 অর্থাৎ আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে। [সূরা: আল-মায়েদাহ্, আয়াত: ৩]
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
 إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ.
অর্থাৎ নিশ্চয় আল্লাহর নিকট মনোনীত দীন হল ইসলাম। [সূরা: আলে-ইমরান, আয়াত: ১৯]
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآَخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দীন চায়তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। [সূরা: আলে-ইমরান আয়াত: ৮৫]
মহান আল্লাহ আরও বলেন,
وَلَكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ الْإِيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ أُولَئِكَ هُمُ الرَّاشِدُونَ ﴿7﴾ فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَنِعْمَةً وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
অর্থ, আর তোমরা জেনে রাখ যে, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল রয়েছেন। সে যদি অধিকাংশ বিষয়ে তোমাদের কথা মেনে নিত, তাহলে তোমরা অবশ্যই কষ্টে পতিত হতে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের কাছে ঈমানকে প্রিয় করে দিয়েছেন এবং তা তোমাদের অন্তরে সুশোভিত করেছেন। আর তোমাদের কাছে কুফরী পাপাচার ও অবাধ্যতাকে অপছন্দনীয় করে দিয়েছেন। তারাইতো সত্য পথপ্রাপ্ত ছিলআল্লাহর পক্ষ হতে করুণা ও নিয়ামতস্বরূপ। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়। [সূরা: আল-হুজরাত, আয়াত: ৭-৮]

আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত দ্বীন এমন, যা দ্বারা আল্লাহ সংশোধন করেছেন মানব জাতির নৈতিক চরিত্র ও বিশ্বাস এবং দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনকে করেছেন সুন্দর। যারা এ দ্বীনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও আনুগত্য করবে এবং দ্বীনের নির্দেশকে যথাযথ পালন করবেআল্লাহ তাদেরকে যাবতীয় ভ্রান্তি ও গোমরাহি থেকে মুক্ত রাখবেনতারা কখনই বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট হবে না এবং কোন প্রকার গোমরাহি তাদের স্পর্শ করতে পারবে না। এ দ্বীনকে বাদ দিয়ে যারা অন্য পথে গিয়েছেতার পদে পদে বিপদের সম্মূখীন হয়েছে। তারা গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আ যাদের এ দ্বীনের প্রতি হেদায়ত দিয়েছেতারাই দুনিয়াতে আলোর সন্ধান পেয়েছে।
 মনে রাখতে হবেএ দ্বীন হলঅত্যন্ত মজবুত ও শক্তিশালী দ্বীনযার কোন বিকল্প নাইএ দ্বীনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অতীব সুদৃঢ় ও বস্তুনিষ্ঠ। এ দ্বীনের দিকে পথনির্দেশ বা আহ্বান করা যেমন মহৎঅনুরূপভাবে যারা এ দ্বীনের ডাকে সাড়া দেবেতাদের পরিণতি ও ফলাফল সবই হবে মধুর ও সুখকর।
 আরও মনে রাখতে হবেএ দ্বীনের প্রতিটি সংবাদ সঠিক ও নির্ভুল। বিধানসমূহ ইনসাফ-পূর্ণ ও বস্তুনিষ্ঠ। এমন কোন আদেশ দেয়া হয়নি যার সম্পর্কে কোন সত্যিকার জ্ঞানী ব্যক্তি বলতে পারেদ্বীনের এ আদেশটি যথার্থ বা প্রযোজ্য নয়। আবার এমন কোন নিষেধও করা হয়নিযার সম্পর্কে কোন বুদ্ধিমান বলতে পারে এ কাজটি হতে নিষেধ করা অযৌক্তিক বা এ নিষেধটি না করলে ভালো হত। দুনিয়াতে আজ পর্যন্ত এমন কোন সত্যিকার জ্ঞানের আবির্ভাব হয়নিযা দ্বারা এ দ্বীনের কোন বিধানকে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে এবং এমন কোন বিধান আজ পর্যন্ত কেউ দেখাতে পারেনি যার দ্বারা দ্বীনের কোন বিধানকে অযৌক্তিক প্রমাণ করা যেতে পারে। এ দ্বীন এমন একটি দ্বীনযা মানুষের স্বভাবের সাথে আঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এ দ্বীন মানুষকে সঠিক পথ দেখায় ও হকের সন্ধান দেয়সত্যের পতাকা তলে আশ্রয় দেয়। সততা হল এ দ্বীনের নিদর্শন, আর ইনসাফ হল এ দ্বীনের ভিত্তিহক্ব হল এ দ্বীনের খুঁটি,রহমত হল এ দ্বীনের আত্মা ও শেষ প্রান্তর এবং কল্যাণ হল এ দ্বীনের চির সাথী। সংশোধন ও সতর্ক করা এ দ্বীনের সৌন্দর্য ও কর্ম, আর উত্তম চরিত্র হল এ দ্বীনের সম্বল ও উপার্জন।
 যে ব্যক্তি এ দ্বীনকে ছেড়ে দেয় এবং এ দ্বীনের অনুকরণ হতে বিরত থাকেতার বিশ্বাস ও অবিচলতার বিলুপ্তি ঘটেচারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আর অবশিষ্ট থাকে নাউন্নত ও উৎকৃষ্ট চরিত্রের অবনতি ঘটে। ভ্রান্ত ধারণাগুলো তার মধ্যে প্রগাঢ় হয়। দুশ্চিন্তা ও নানাবিধ ভ্রান্তি তার মধ্যে জাল বুনে। তার নীতি-নৈতিকতার পতন ঘটে এবং চারিত্রিক অবনতি দৃশ্যমান হয়।
 বলা বাহুল্য যেদুনিয়াতে একজন বান্দার জন্য সবচেয়ে বড় পাওনা হল এ মহান দ্বীনের প্রতি হেদায়াত লাভ করা। আল্লাহ তাআলা যাকে এ দ্বীনের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন ও এ দ্বীনের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী চলার তাওফিক দিয়েছেনতার চেয়ে সৌভাগ্যবান ও সফল ব্যক্তি দুনিয়াতে আর কেউ হতে পারে না। সেই দুনিয়া ও আখেরাতে একজন সৌভাগ্যবান ব্যক্তি।
আর এ দ্বীনের পূর্ণতা ও সৌন্দর্য হলমুসলিম মহিলা ও নারীদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন। যারা এ দ্বীনের অনুসারী তাদের দায়িত্ব হলনারীদের ইজ্জত সম্ভ্রমের হেফাযত করতে আপ্রাণ চেষ্টা করা এবং তাদের অধিকারের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ রাখাআর তাদের প্রতি কোন প্রকার বৈষম্য না করা। কোন মুসলিম ব্যক্তি যেন কোন নারীর সাথে এমন কোন কাজ না করে, যাতে তাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয় এবং তাদের প্রতি কোন প্রকার অবমাননা হয়। এ ধরনের যে কোন কাজকে ইসলাম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাদের দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কেউ যাতে তাদের উপর কোন প্রকার যুলুম- অত্যাচার করতে না পারেতার প্রতি ইসলাম বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেছে। যে সব কাজে বা কর্মে এ ধরনের অবকাশ থাকেইসলাম সে ধরনের কাজ-কর্ম থেকে মুসলিমদের দূরে থাকা নির্দেশ দিয়েছে।
আর আল্লাহ তাআলা মুসলিম জাতির জন্য এবং বিশেষ করে যারা নারীদের সাথে বসবাস ও ঘর সংসার করে তাদের জন্য বিশেষ কিছু আইনকানুন ও নীতিমালা এবং এমন কিছু দিক নির্দেশনা দিয়েছেনযেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলেনারীদের প্রতি কোন প্রকার অসদাচরণ করার সুযোগ থাকে না। তখন তারা অবশ্যই লাভ করবে আনন্দদায়ক জীবনযথার্থ অধিকার এবং দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ।


বিশেষ মূলনীতি

এ ক্ষেত্রে একজন মুসলিমের জন্য কতক গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি অবশ্যই জানা থাকতে হবেযাতে করে সেতার জ্ঞান- বুদ্ধি অনুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে ও তদনুযায়ী নিজেকে দুনিয়ার জীবনে পরিচালনা করতে পারে। আর একজন মুসলিমকে এ কথা অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে যেএসব মূলনীতি-গুলোর আলোকে জীবনকে পরিচালনা করার দ্বারা সে সত্যিকার অর্থে সম্মানের অধিকারী হবে এবং দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় কল্যাণ অর্জন করবে। নিম্নে এ সব মূলনীতিগুলোকে সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করা হল।
এক.
 একজন মুসলিম বান্দাকে এ কথার উপর অবিচল ও অটুট বিশ্বাস রাখেতে হবে যেদুনিয়াতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দেয়া বিধানই সবচেয়ে সুন্দরসঠিকমজবুতনিখুঁত ও পরিপূর্ণ বিধান। যার মধ্যে কোন প্রকার প্রশ্ন তোলার কোন অবকাশ নাই। আর আল্লাহর বিধান ছাড়া আর যত বিধানই দুনিয়াতে আবিষ্কার হয়েছেসবই ভ্রান্ত ও ভূলেভরা। কারণআল্লাহ তাআলা হলেন, সমগ্র মখলুকের স্রষ্টা। আর স্রষ্টার বিধান সৃষ্টির জন্য নিখুঁত হবে এটাই স্বাভাবিক। স্রষ্টা অবশ্যই জানে কোন বিধান তার সৃষ্টির জন্য উপযোগী হবে আর কেন বিধান তাদের জন্য অকল্যাণ হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন ,
إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
অর্থাৎ বিধান একমাত্র আল্লাহরই। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যেতোমরা তাকে ছাড়া আর কারো ইবাদত করো না। এটিই সঠিক দীনকিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না। [সূরা ইউসূফ: ৪০]
أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ
অর্থতারা কি তবে জাহিলিয়্যাতের বিধান চায়আর নিশ্চিত বিশ্বাসী কওমের জন্য বিধান প্রদানে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক উত্তম?
أَلَيْسَ اللَّهُ بِأَحْكَمِ الْحَاكِمِينَ
অর্থআল্লাহ তাআলা কি বিচারকদের শ্রেষ্ঠ বিচারক নন? [আরাফ: আয়াত-৭ইউনুস: আয়াত- ১০৯ইউসুফ: আয়াত-৮০]
كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آَيَاتِهِ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
অর্থএভাবেই আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য তার আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন। আল্লাহ তাআলা মহা জ্ঞানী প্রজ্ঞাময়। [সূরা: নূরআয়াত- ৫৯]

দুই.
 এ কথা অবশ্যই জানা থাকতে হবেএকজন মুসলিমের যাবতীয় কল্যাণইজ্জতসম্মান ও সৌভাগ্য সবইতার প্রভুর আনুগত্যের সাথে সম্পৃক্ত। একজন মুসলিম যত বেশি তার প্রভুর আনুগত্য করবেদুনিয়া ও আখেরাতে তার ইজ্জতসম্মান ও কামিয়াবি তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহর দেয়া বিধানের প্রতি তার আনুগত্য যতই বাড়বেতার সওয়াব বা বিনিময়ও তদনুযায়ী বাড়বে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে করীমে বলেন,
إِنْ تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُدْخَلًا كَرِيمًا
অর্থাৎ তোমরা যদি সেসব কবিরা গুনাহ পরিহার করযা থেকে তোমাদের বারণ করা করা হয়েছেতাহলে আমি তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাব সম্মানজনক প্রবেশস্থলে। [সূরা নিসা: আয়াত-৩১]
إِنِّي آَمَنْتُ بِرَبِّكُمْ فَاسْمَعُونِ ﴿25﴾ قِيلَ ادْخُلِ الْجَنَّةَ قَالَ يَا لَيْتَ قَوْمِي يَعْلَمُونَ ﴿26﴾ بِمَا غَفَرَ لِي رَبِّي وَجَعَلَنِي مِنَ الْمُكْرَمِينَ ﴿27﴾
অর্থনিশ্চয় আমি তোমাদের রবের প্রতি ঈমান এনেছিঅতএব তোমরা আমার কথা শোন। তাকে বলা হলজান্নাতে প্রবেশ কর। সে বললহায়! আমার কওম যদি জানতের পারতআমার রব আমাকে কিসের বিনিময়ে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং আমাকে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। [সূরা ইয়াছিন: ২৫-২৭]
قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا ﴿9﴾ وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا ﴿10﴾
অর্থনি: সন্দেহে সে সফল কাম হয়েছেযে তাকে পরিশুদ্ধ করেছে। এবং সে ব্যর্থ হয়েছেযে তাকে কলুষিত করেছে।
يَا أَهْلَ الْكِتَابِ قَدْ جَاءَكُمْ رَسُولُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ كَثِيرًا مِمَّا كُنْتُمْ تُخْفُونَ مِنَ الْكِتَابِ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ ﴿15﴾ يَهْدِي بِهِ اللَّهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ سُبُلَ السَّلَامِ وَيُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِهِ وَيَهْدِيهِمْ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ ﴿16﴾
অর্থহে কিতাবীগণ, তোমাদের নিকট আমার রাসূল এসেছে, কিতাব থেকে যা তোমরা গোপন করতে, তার অনেক কিছু তোমাদের নিকট সে প্রকাশ করছে এবং কিছু অনেক কিছু ছেড়ে দিয়েছে। অবশ্যই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে আলো ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে।

এর মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকে শান্তির পথ দেখান, যারা তার সন্তষ্টির অনুসরণ করে এবং তার অনুমতিতে তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করেন। আর তাদেরকে সরল পথের দিকে হেদায়েত দেন। [আল মায়েদাহ্: আয়াত১৫-১৬]

তিন.
 মুসলিম জাতিকে এ কথা অবশ্যই মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে যেএ জগতে তাদের বিপক্ষে অসংখ্য- অগণিত শত্রু রয়েছেযারা সব সময় তাদের ক্ষতি করতে সচেষ্ট থাকেআপ্রাণ চেষ্টা করে কীভাবে এ জাতির ক্ষতি করা যায় এবং দুনিয়ার ইতিহাস থেকে তাদের নাম নিশানা মুছে ফেলা যায়। তাদের কাজই হলমুসলিম জাতির ইজ্জত সম্মান লাভের যাবতীয় সব পথ ও উপকরণ বন্ধ করে দেয়া এবং তাদের অগ্রগতির সব পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা। মুসলিম জাতির ইজ্জত সম্মানকে ধূলিসাৎ করতে এবং তাদের অপমান- অপদস্থ করার লক্ষে তারা তাদের যাবতীয় প্রচেষ্টাকে ব্যয় করে। এমন কোন ষড়যন্ত্র নাই যা তারা মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে না। তারা মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে যত প্রকার উপায় উপকরণ আছে সব কিছু প্রয়োগ করে। মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে তারা নানা প্রকার অপপ্রচার চালায়। কোথাও আজ তারা যাতে নিজ পায়ে দাঁড়াতে না পারেসে জন্য যেখানেই তাদের কোন উত্থান দেখে,সেখানেই তারা আক্রমণ চালিয়ে তাদের নিস্তেজ করে দেয়।
 আর এদের অগ্রভাগে রয়েছে অভিশপ্ত ও বিতাড়িত শয়তানযে শয়তান হল আল্লাহর দুশমনইসলাম ও মুমিন বান্দাদের দুশমন। আল্লাহ তাআলা যখন মুমিনদের এ দ্বীনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সম্মান দেনতখন শয়তানই সর্বাধিক বিক্ষুব্ধ হয় এবং তার শরীরে আগুন ধরে যায়। ফলে সে আল্লাহর মুমিন বান্দাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং তাদের প্রতিটি চলার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার ঘোষণা দেয়। চতুর্দিক থেকে সে তাদের ঈমান-আমল ধ্বংস করার জন্য আক্রমণ চালায়। অভিশপ্ত শয়তানের লক্ষই হলমুমিনদের ক্ষতি করাতাদের সম্মানহানি ও অপমান করা এবং আল্লাহ তাআলা মুমিনদের যে সম্মান দিয়েছেনতা নষ্ট করা। শয়তানের কাজই হলমানুষকে দুনিয়ার জীবনে ধোঁকায় ফেলার জন্য চেষ্টা চালানো। তবে আল্লাহ যাদের হেফাযত করেনশয়তান তাদের কোন ক্ষতি করতে পারে না।
 আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآَدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ قَالَ أَأَسْجُدُ لِمَنْ خَلَقْتَ طِينًا ﴿61﴾ قَالَ أَرَأَيْتَكَ هَذَا الَّذِي كَرَّمْتَ عَلَيَّ لَئِنْ أَخَّرْتَنِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَأَحْتَنِكَنَّ ذُرِّيَّتَهُ إِلَّا قَلِيلًا ﴿62﴾ قَالَ اذْهَبْ فَمَنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ فَإِنَّ جَهَنَّمَ جَزَاؤُكُمْ جَزَاءً مَوْفُورًا ﴿63﴾ وَاسْتَفْزِزْ مَنِ اسْتَطَعْتَ مِنْهُمْ بِصَوْتِكَ وَأَجْلِبْ عَلَيْهِمْ بِخَيْلِكَ وَرَجِلِكَ وَشَارِكْهُمْ فِي الْأَمْوَالِ وَالْأَولَادِ وَعِدْهُمْ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلَّا غُرُورًا ﴿64﴾
আর স্মরণ কর, যখন আমি ফেরেশ্তাদের বললাম, আদমকে সেজদা কর, তখন ইবলীস ছাড়া সকলে সিজদা করল। সে বলল, আমি কি এমন ব্যক্তিকে সিজদা করব, যাকে আপনি কাদামাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন?
সে বলল, দেখুন, এ ব্যক্তি যাকে আপনি আমার উপর সম্মান দিয়েছেন, যদি আপনি আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত সময় দেন, তবে অতি সামান্য সংখ্যক ছাড়া তার বংশধরদেরকে অবশ্যই পথভ্রষ্ট করে ছাড়বো।
তিনি বললেন, যাও, অত: পর তাদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে, জাহান্নামই হবে তোমাদের প্রতিদান, পূর্ণ প্রতিদান হিসেবে।
তোমার কন্ঠ দিয়ে তাদের মধ্যে যাকে পারো প্ররোচিত কর, তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়, তোমার আশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে এবং তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে অংশীদার হও এবং তাদেরকে ওয়াদা দাও। আর শয়তান প্রতারণা ছাড়া তাদেরকে কোন ওয়াদাই দেয় না।
إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوًّا إِنَّمَا يَدْعُو حِزْبَهُ لِيَكُونُوا مِنْ أَصْحَابِ السَّعِيرِ ﴿6﴾
নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু, অতএব তাকে শত্রু হিসেবে গণ্য কর। সে তার দলকে কেবল এ জন্যই ডাকে যাতে তারা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হয়। [সূরা ফাতির, আয়াত: ৬]

চার.
 যাবতীয় ভাল কাজের তাওফিককর্মের বিশুদ্ধতাআল্লাহর দ্বীনের উপর অবিচলতা ও সম্মান অর্জন সবকিছুই একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হাতে,যাকে আল্লাহ তাআলা সম্মান দেয় তাকে অপমান করার কেউ নেই। আর যাকে আল্লাহ তাআলা অপমান করে তাকে ইজ্জত দেয়ারও কেউ নেই। আল্লাহ যা চান তাই করেনতাকে বাধ্য করার কেউ নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَنْ يُهِنِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ مُكْرِمٍ إِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يَشَاءُ ۩
অর্থ, আল্লাহ তাআলা যাকে অপমানিত করেন তার সম্মানদাতা কেউ নাই। নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন। [সূরা আল-হাজ্জ: আয়াত: ১৮]
 সুতরাংএকজন মুমিন বান্দার জন্য কর্তব্য হলতারা যেন আল্লাহর সাথে তাদের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করে এবং তারই নিকট ইজ্জত-সম্মান প্রার্থনা করে। তার বাইরে গিয়ে ইজ্জত সম্মান তালাশ করলেতাকে অবশ্যই পদে পদে অপমানিত হতে হবে প্রতিটি ক্ষেত্রে। সুতরাং একজন মুসলিম বান্দাকে পদে পদে আল্লাহর দিকে মুখাপেক্ষী থাকতে হবে। কোনক্রমেই আল্লাহর বিধানের অবাধ্য হলে চলবে না।
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ হলতিনি দো‘আতে বলতেন,
اللهم أصلح لي ديني الذي هو عصمةُ أمري،وأصلح لي دنياي التي فيها معاشي، وأصلح لي آخرتي التي فيها معادي، واجعل الحياة زيادةً لي في كلِّ خير، والموت راحةً لي من كلِّ شرٍّ
অর্থহে আল্লাহ তুমি আমার জন্য আমার দ্বীনকে সংশোধন করযে দ্বীন হল আমার যাবতীয় কর্মের সংরক্ষক। আর আমার জন্য দুনিয়াকে উপযুক্ত করে দাওযাতে রয়েছে আমাদের জীবন-যাপন। আর আমার জন্য আমার আখিরাতকে সুন্দর করে দাও যা হল আমার শেষ পরিণতি। আর আমার হায়াতকে তুমি বাড়িয়ে দাও প্রতিটি ভালো কর্মের জন্য। আর আমার মৃত্যুকে আমার জন্য আরামদায়ক করে দাও প্রতিটি খারাপ কর্মে নিপতিত হওয়ার পূর্বে।
 এ দো‘আ দ্বারা প্রমাণিত হয়আমরা কেউ আমাদের রবের তাওফিকের বাইরে কোন প্রকার ইজ্জত সম্মান লাভ করতে পারি না এবং কোন ভালো কাজ করলেও তা আল্লাহর তাওফিকের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। আমাদের যাবতীয় কর্মের বিধায়ক কেবলই আমাদের প্রভু। তিনিই আমাদের ভালো কাজ করার তাওফিক দেন এবং খারাপ কাজ হতে বিরত রাখেন।

পাঁচ.
 একজন মুসলিমের দুনিয়াতে সব চেয়ে বড় চাহিদা যেন হয়আল্লাহ তাআলার নিকট সম্মানী হওয়া। যদি কোন বান্দা আল্লাহ তাআলার নিকট সম্মানী হয়,দুনিয়ার কোন অসম্মান তার কোন ক্ষতি করতে পারে না। আর যখন আল্লাহর দরবারে তার কোন সম্মান থাকবে নাদুনিয়ার কোন ইজ্জত-সম্মান তার কোন কাজে আসবে না। যার ফলে সে যখন আল্লাহ তাআলার নিকট সম্মানী হবেতখন নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবে। আর যখন আল্লাহর নিকট অসম্মান হবে তখন সে নিজেকে দুর্ভাগা হিসেবে বিবেচনা করবে। আল্লাহ তাআলা মুমিন বান্দাদের জন্য অনেক সম্মান প্রস্তুত করে রেখেছেন। যখন কোন মুমিন আল্লাহ তাআলা যে সব নেয়ামতরাজি প্রস্তুত রেখেছেনতা লাভ করবে তখন সে নিজেকে ধন্য ও ভাগ্যবান মনে করবে। মুমিনদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআনে করীমে ঘোষণা দিয়ে বলেন,
أُولَئِكَ فِي جَنَّاتٍ مُكْرَمُونَ ﴿35﴾
তারাই জান্নাতসমূহে সম্মানিত হবে। [সূরা আল-মা‘আরেজ, আয়াত: ৩৫]
প্রকৃতপক্ষে তারাই সম্মানী যাদের আল্লাহ সম্মান দেনআর আল্লাহ যাদের অসম্মান করেনতারা কখনোই সম্মানের অধিকারী হতে পারে না। আর আল্লাহর পক্ষ হতে সম্মান লাভ তখন হবেযখন সে প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহকে ভয় করতে থাকবে। আল্লাহর ভয়ের সাথেই ইজ্জত-সম্মানের সম্পর্ক। আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ ﴿13﴾
অর্থ: হে মানুষ আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ হতে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তোমাদের মধ্যে তাকওয়া সম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ সম্যক অবগত। [সূরা আল-হুজরাত: ১৩]
সহীহ বাখারীতে আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল,
من أكرمُ الناس؟ قال: أكرمهم أتقاهم
অর্থদুনিয়াতে মানুষের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত ব্যক্তি কেউত্তরে তিনি বললেনমানুষের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানী ব্যক্তি হলসে যে সর্বাধিক আল্লাহকে ভয় করে। [বুখারী: ৩৩৭৪]
হাদীস দ্বারা স্পষ্ট হয় যেআল্লাহর ভয়ের সাথেই ইজ্জত সম্মানের সম্পর্ক। ইজ্জত সম্মান লাভ করতে হলে তাকে অবশ্যই তাকওয়া অর্জন করতে হবে,আল্লাহকে ভয় করতে হবে। আর যে ব্যক্তি এর বাইরে গিয়ে সম্মান তালাশ করেসে মরীচিকাকেই পানি হিসেবে দেখতে পাবে। আসলে তা কোন পানি নয়তা কখনো তৃষ্ণা মেটাতে পারে না। যার ফলে সে নৈরাশ্য ও হতাশার ঘোর অন্ধকারে হাবু-ডবু খেতে থাকবে।

ছয়.
একজন নারীকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবেইসলামের বিধানগুলো সম্পূর্ণ নিখুঁততাতে কোন প্রকার খুঁত নাই। বিশেষ করে মহিলাদের সাথে সম্পৃক্ত ইসলামের বিধানগুলো আরও বেশি নিখুঁত ও সঠিক । তার মধ্যে কোন প্রকার ছিদ্র ও ফাঁক নাইযাতে কেউ আপত্তি তুলতে পারে এবং অবজ্ঞা করার বিন্দু-পরিমাণও সুযোগ নাইযাতে কেউ এড়িয়ে যেতে পারে। ইসলাম নারীদের জন্য যে বিধান দিয়েছেতা নারীদের স্বভাব ও মানসিকতার সাথে একেবারেই অভিন্ন। ইসলামের বিধানে তাদের প্রতি কোন প্রকার যুলুমনির্যাতন ও অবিচার করা হয় নাই এবং তাদের প্রতি কোন বৈষম্যও করা হয়নি।
 আর তা কীভাবে সম্ভব হতে পারেযেহেতু এ সব বিধানগুলো হল আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ বিধান। আর আল্লাহ হলেন সমগ্র জগতের স্রষ্টা ও প্রতিপালক। তিনিই এ জগতকে পরিচালনা করেন এবং পরিচালনায় তিনি মহা জ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ। আল্লাহ তার স্বীয় মাখলুক-বান্দাদের বিষয়েও অভিজ্ঞ। কোন কাজে তার বান্দাদের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ ও কামিয়াবি সে বিষয়ে তিনিই সর্বজ্ঞ। সুতরাং তিনি এমন কোন বিধান মানব জাতির জন্য দেবেন না,যাতে তাদের কোন অকল্যাণ থাকতে পারে।
 একটি কথা মনে রাখতে হবেসবচেয়ে বড় অপরাধ ও অন্যায় হলনারীদের সাথে সম্পৃক্ত বা অন্য যে বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত আল্লাহর দেয়া শরীয়তের কোন বিধান সম্পর্কে এ মন্তব্য করা যেআল্লাহর এ বিধানে তার বান্দাদের প্রতি যুলুম করা হয়েছে অথবা এ বিধানে দুর্বলতা রয়েছে অথবা এ বিধানটি বর্তমানে প্রযোজ্য নয়ইত্যাদি। এ ধরনের কথা যেই বলবেমনে রাখতে হবেঅবশ্যই সে আল্লাহ তাআলার সম্মান সম্পর্কে একেবারেই মূর্খ। আল্লাহর কুদরাত ও ক্ষমতা সম্পর্কে তার কোন কাণ্ড-জ্ঞান বলতে কিছুই নাই। সে আল্লাহকে যথাযথ সম্মান দেয়নি। তার সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
مَا لَكُمْ لَا تَرْجُونَ لِلَّهِ وَقَارًا ﴿13﴾
অর্থতোমাদের কী হলতোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের পরোয়া করছ না।? [সূরা নুহ: ১৩]
আল্লাহকে সম্মান করার অর্থ হলতার বিধানকে আঁকড়ে ধরা এবং তার দেয়া আদেশ ও নিষেধের পরিপূর্ণ আনুগত্য করা। আর এ কথা বিশ্বাস করা যে,আল্লাহর আদেশ নিষেধের আনুগত্য করার মধ্যেই দুনিয়াও আখিরাতের শান্তি ও কামিয়াবি। আর যে এ বিশ্বাসের পরিপন্থী কোন বিশ্বাস তার অন্তরে লালন করেতার চেয়ে হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ হতেই পারে না। দুনিয়া ও আখিরাতে সেই অপমান অপদস্থের জন্য একমাত্র ব্যক্তি।
 উপরে ছয়টি নীতিমালা আলোচনা করা হল। আর এগুলো হলএমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা ও আইন কানুনযা মুসলিম হিসেবে আমাদের প্রত্যেককে মেনে নিতে হবে। আর এখানে আমাদের মূল আলোচনার বিষয়টি সম্পর্কে জানার পূর্বে অবশ্যই এসব নীতিমালা সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। অন্যথায় আলোচনাটি বুঝে আসবে না। আর এগুলো শুধু নীতিমালাই নয় বরং এগুলোই হল আমাদের আলোচনার মূলভিত্তি বা উপাদান। এ নীতিমালাকে সামনে রেখেই আমাদের আলোচনাকে সাজানো হয়েছে। এগুলো ছাড়া আমাদের আলোচনা একেবারেই নিষ্ফল।

নারী কে?

নারীদের সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে নারীর সংজ্ঞা বা নারী বলতে আমর কি জানি তা আমাদের জানা থাকা আবশ্যক। المرأة শব্দটি المرء শব্দের স্ত্রী লিঙ্গ,অর্থ নারী। শব্দটি একবচনএর কোন বহুবচন হয় না। তবে অপর শব্দ থেকে এ শব্দের বহু বচন হল نساء। অর্থাৎ নারী হল তারা যাদের আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে পুরুষের অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। মূলত: আল্লাহ তাআলা নারীদের পুরুষ হতেই সৃষ্ট করেছেনযাতে তাদের পরষ্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় ও গভীর হয় এবং তাদের মধ্যে প্রেমভালোবাসা ও দয়া-অনুগ্রহ যেন হয়অতীব সুন্দর ও মধুময়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَاأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا ﴿1﴾
অর্থহে মানুষ তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করযিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফস থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করযার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আর ভয় কর রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক। [সূরা আন-নিসা: ১]
وَمِنْ آَيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ ﴿21﴾
অর্থ, আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছ যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে।
وَاللَّهُ جَعَلَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا وَجَعَلَ لَكُمْ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ بَنِينَ وَحَفَدَةً وَرَزَقَكُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ أَفَبِالْبَاطِلِ يُؤْمِنُونَ وَبِنِعْمَةِ اللَّهِ هُمْ يَكْفُرُونَ ﴿72﴾
অর্থ, আর আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য তোমাদের থেকে জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জোড়া থেকে তোমাদের জন্য পুত্র ও নাতিদের সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি তোমাদেরকে পবিত্র রিযিক দান করেছেন তারা কি বাতিলে বিশ্বাস করে এবং আল্লাহর নিআমতকে অস্বীকার করে?
 আয়াত দ্বারা এ কথা স্পষ্ট যেআল্লাহ তাআলা আদম আলাইহিসসালাম এর স্ত্রী হাওয়া আলাইহাসসালামকে তার থেকেই সৃষ্টি করেছেন। তারপর আল্লাহ তাআলা তাদের উভয় থেকে অসংখ্য নারী ও পুরুষ সৃষ্টি করেছেন। আর এসব সৃষ্টি তিনি করেছেনবিশেষ একটি পদ্ধতিতে যাকে আমরা বিবাহ বলে আখ্যায়িত করি।
 এখানে আরও একটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবেআল্লাহ তাআলা পুরুষদের সৃষ্টি করেছেন নির্ধারিত ও স্বতন্ত্র কিছু গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে,অনুরূপভাবে নারীদেরও কিছু নির্ধারিত গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। অবশ্যই তাদের উভয়কে নির্ধারিত ও স্বতন্ত্র যেসব বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি দেয়া হয়েছেতা নিয়েই তাদের জীবন যাপন করতে হবে। তারপরও যদি উভয় তাদের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হতে বের হয়ে যায়তাহলে বুঝতে হবেসে তার মূল স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য হতে দূরে সরে গেল এবং সঠিক পথ হতে ছিটকে পড়ল। বুখারী মুসলিমে আবু হুরাইরা রা. এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إنَّ المرأة خلقت من ضلع، وإنَّ أعوج شيءٍ في الضلع أعلاه، فإن ذهبتَ تقيمه كسرته، وإن استمتعتَ بها استمتعتَ بها وفيها عوج
অর্থ: নিশ্চয় নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের হাড় থেকে। আর পাঁজরের হাড়ের সবচেয়ে বাঁকা হাড় হলউপরি ভাগ। যদি তাকে ঠিক করতে যাও,তাহলে তুমি ভেঙ্গে ফেলবেআর যদি তুমি তাকে দিয়ে সংসার করতে চাওতাহলে বাঁকা অবস্থাতেই তোমাকে তার সাথে ঘর সংসার করতে হবে।
ইমাম নববী রহ. বলেনএ হাদিসটি প্রমাণ করে যেঐ সব ফুকাহাদের কথা সত্যযারা বলে আল্লাহ তাআলা আদম আলাইহিসসালাম এর পাঁজরের হাড় থেকে হাওয়া আলাইহিসসালামকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا .
অর্থতোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফস থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে। [সূরা আন-নিসা: ১]

 এতে প্রমাণিত হয় যেআল্লাহ তাআলা নারীদের সৃষ্টি করার মূল উপাদানেই তাদের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য ও বিশেষ গুণ দিয়েছেনযা পুরুষের মধ্যে দেননি এবং পরুষদেরও সৃষ্টি লগ্নে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন যা নারীদের তিনি দেননিযার ভিত্তিতেই একজন নারী জীবনের বিভিন্ন সময়প্রেক্ষাপট ও স্থানকাল পাত্র-বেধে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন হয়। কখনো সে মা হয়কোমল ও দুর্বল হয়আবার কখনো সে স্ত্রী হয়। নারীরা মনের দিক দিয়ে পুরুষদের অধিক দয়ালু হয়ে থাকে। আর তাদের অবস্থার অধিক পরিবর্তন হয়ে থাকেযা পুরুষদের বেলায় প্রযোজ্য নয়। যেমনতার মাসিক হয়গর্ভ ধারণ করে,সন্তান প্রসব করেতারা বাচ্চাদের দুধ পান করায়বাচ্চাদের লালন-পালন করেইত্যাদি। এ সব গুনগুলো হল নারীদের সাথে খাস ও তাদের একান্ত বৈশিষ্ট্যযা পুরুষদের মধ্যে চিন্তা করা যায় না। অনুরূপভাবে পুরুষেরও কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলো তাদের সাথেই খাস ও তাদের সতন্ত্র বৈশিষ্ট্যনারীদের জন্য সে গুলো কোন ক্রমেই প্রযোজ্য নয়।
 সুতরাংএক শ্রেণির জন্য যে সব গুণাবলী বা বৈশিষ্ট্য রয়েছেতার প্রতি অপর শ্রেণীর কর্ণপাত করার কোন প্রয়োজন নাই। প্রত্যকে তার নিজ নিজ দায়-দায়িত্ব যথাযথ আঞ্জাম দিতে চেষ্টা করবে। নারীরা যদি বলে আমরা যেমন সন্তান ধারণ করিঅনুরূপভাবে পুরুষদেরও সন্তান ধারণ করতে হবে! তাহলে তা কি কোন দিন সম্ভবঅনুরূপ ভাবে নারীরা যদি বলে পুরুষরা যা যা করে আমরাও তাই করবোতাও কোন দিন সম্ভব নয়। আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকেই নারী ও পরুষদের সতন্ত্র বৈশিষ্ট দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে আলাদা আলাদা যোগ্যতা দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَا تَتَمَنَّوْا مَا فَضَّلَ اللَّهُ بِهِ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ لِلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِمَّا اكْتَسَبُوا وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِمَّا اكْتَسَبْنَ وَاسْأَلُوا اللَّهَ مِنْ فَضْلِهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا ﴿32﴾
অর্থ, আর তোমরা আকাংখা করো না সে সবের যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের একজনকে অন্য জনের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। পুরষদের জন্য রয়েছে অংশ, তারা যা উপার্জন করে তা থেকে এবং নারীদের জন্য রয়েছে অংশ, যা তারা উপার্জন করে তা থেকে। আর তোমরা আল্লাহর কাছে তার অনুগ্রহ চাও। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক জ্ঞানী। [সূরা আন-নিসা: আয়াত: ৩২]
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ
 অর্থ, পরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়কএ কারণে যেআল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। [সূরা আন-নিসাআয়াত: ৩৪]
 পুরুষ নারীদের উপর ক্ষমতাধর হওয়ার বিষয়টি হলআল্লাহর অপার অনুগ্রহতিনি কতককে কতকের উপর বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। কারণআল্লাহ তাআলা পুরুষদের এমন কতক বৈশিষ্ট্য দিয়েছেনযে গুলা মহিলাদের দেয়া হয়নি। যেমনপুরুষরা জ্ঞানে পরিপূর্ণনারীদের তুলনায় অধিক ধৈর্যশীলতারা অধিক শক্তিশালীতারা ক্ষেতে খামারে কাজ করতে পারেযে কোন ভারি কাজ তারা করতে পারে ইত্যাদি। এ ছাড়াও আল্লাহ তাদের এধরনের কিছু গুন দিয়েছে যে গুলো নারীদের মধ্যে নাই। এ কারণেই আল্লাহ নারীদের পুরুষদের উপর কিছু অধিকার দিয়েছেযে গুলো তার শক্তি সামর্থ্য ও স্বভাবের সাথে একাকার ও অভিন্ন। আবার পুরুষদের জন্য নারীদের উপর কিছু অধিকার দিয়েছেনযে গুলোর সাথে তার শক্তি সামর্থ্য ও স্বভাবের সম্পূর্ণ মিল রয়েছে। নারীদের দেয়া দায়-দায়িত্ব গুলো পরুষদের দ্বারা আদায় করা কোন দিন সম্ভব নয়।
 এ ভাবেই আল্লাহ তাআলা নারী ও পুরুষের সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের উভয়ের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করেছেনযাতে দুনিয়ার নিয়ম ও ধারাবাহিকতা ঠিক থাকে এবং কোথাও যেন কোন প্রকার অসামঞ্জস্যতা এ শূন্যতা দেখা না দেয়। কিন্তু যদি আল্লাহর সৃষ্টির বাইরে গিয়ে এক শ্রেণির দায়-দায়িত্ব নিয়ে অপর শ্রেণি টান-হে-ছড়া করেতাহলে পৃথিবীর ভারসাম্য বিনষ্ট হবেমানবতা চরম অবনতির দিকে যাবে এবং মানবতার অস্তিত্ব নিয়ে শঙ্কা তৈরি হবে।

মানব জাতির প্রকৃত সম্মান কি?

 মানবজাতির জন্য প্রকৃত সম্মান কিতা আমাদের অবশ্যই জানা থাকা দরকার। আমরা অনেকেই মনে করি টাকা-পয়সাধন-দৌলতইত্যাদিতেই মানুষের প্রকৃত সম্মানআবার কেউ মনে করি ক্ষমতা ও রাজত্ব ইত্যাদিতে প্রকৃত সম্মান। কিন্তু কুরআন ও হাদিসের প্রমাণাদিতে চিন্তা-গবেষণা করলেআমরা দেখতে পাই যেমানব জাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে প্রদত্ত সম্মান দুই ধরনের হতে পারে : -

এক. সাধারণ সম্মান, যার বর্ণনা আল্লাহ তাআলা নিজেই কুরআনে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آَدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى كَثِيرٍ مِمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلًا ﴿70﴾
অর্থ, আর আমি তো আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি এবং আমি তাদেরকে স্থলে ও সমুদ্রে বাহন দিয়েছি এবং তাদেরকে দিয়েছি উত্তম রিযক। আর আমি যা সৃষ্টি করেছি তাদের থেকে অনেকের উপর আমি তাদেরকে অনেক মর্যাদা দিয়েছি। [সূরা আল-ইসরা: ৭০]
 এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. বলেনআয়াতে আল্লাহ সংবাদ দেন যেতিনি আদম সন্তানদের সুন্দর ও নিখুঁত আকৃতিতে সৃষ্টি করার মাধ্যমে তাদের শ্রেষ্ঠত্ববিশেষ সম্মান ও মহা মর্যাদা দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা মানবকে এমন আকৃতিতে তৈরি করেছেনযার কোন তুলনা অন্য কোন মাখলুকের সাথে চলে না। আল্লাহ তাআলা অন্য কোন মাখলুককে জ্ঞান দেননি। দুনিয়া পরিচালনার দায়িত্ব দেননি একমাত্র মানবই জগতের পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে।
অর্থাৎ তারা তাদের দু-পায়ের উপর দাঁড়িয়ে চলাচল করেদু হাত দিয়ে খায়কথা বলতে পারে ইত্যাদি। অথচ মানুষ ছাড়া অন্যান্য জীব জন্তু চার পায়ের উপর হাটেতারা হাতে তুলে খেতে পারে না বরং মুখ দিয়ে খায়। আর আল্লাহ তাআলা মানবজাতির জন্য চোখকান ও হাত-পা দিয়েছেনযেগুলোর মাধ্যমে তারা দেখতে ও শোনতে পায় এবং অন্তর দিয়ে বুঝতে ও অনুভব করতে পারে। তারা তাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দ্বারা উপকৃত হয়যেমনএ সব দ্বারা তারা বিভিন্ন ধরনের কাজ কর্মভালো মন্দের বিচার এবং দুনিয়া ও আখিরাতে কোনটি উপকার কোনটি ক্ষতি তা বিবেচনা করতে পারে।

দুই. বিশেষ সম্মান। এটি হল আল্লাহ তাআলা মানব জাতিকে এ দ্বীনের প্রতি হেদায়েত দেয়া এবং মহান রাব্বুল আলামীনের আনুগত্যের তাওফিক লাভ করা। আর এটিই হলপ্রকৃত সম্মানপরিপূর্ণ ইজ্জত ও দুনিয়াও আখিরাতের চিরস্থায়ী কল্যাণ। কারণইসলাম হল আল্লাহ তাআলার মনোনীত দ্বীনএ দ্বীনই হলইজ্জত- সম্মান ও মান-মর্যাদার একমাত্র মাপকাঠি। আর এ কথা দিবালোকের মত স্পষ্ট যেযাবতীয় ইজ্জত কেবল আল্লাহর জন্যতার রাসূলের জন্য এবং মুমিন বান্দাদের জন্য। আল্লাহর বড়ত্বের প্রতি বিশ্বাসতার মমত্বের প্রতি অনুগত হওয়া এবং তার আদেশ-নিষেধ মানার মধ্যেই আল্লাহ তাআলার সম্মান যে নিহিত সে কথার ঘোষণা দিয়ে পবিত্র কুরআনে বলেন,
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يَسْجُدُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ وَالنُّجُومُ وَالْجِبَالُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَابُّ وَكَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ وَكَثِيرٌ حَقَّ عَلَيْهِ الْعَذَابُ وَمَنْ يُهِنِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ مُكْرِمٍ إِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يَشَاءُ ۩
অর্থ, তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদা করে যা কিছু রয়েছে আসমানসমূহে এবং যা কিছু রয়েছে যমীনে, সুর্য, চাদ, তারকারাজী, পর্বতমালা,বৃলতা, জীবজন্তু ও মানুষের মধ্যে অনেকে। আবার অনেকের উপর শাস্তি অবধারিত হয়ে আছে। আল্লাহ যাকে অপমানিত করেন, তার সম্মানদাতা কেউ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন।

মনে রাখতে হবেযাকে আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমান আনা ও বিশ্বাসের তাওফিক দেয়া হয়নিযার ফলে রহমানের ইবাদতকে সে করনীয় মনে করেনি,সে প্রকৃত পক্ষে অপদস্থ ও অসম্মানিততার সম্মান লাভের কোন উপায় নাই। আল্লাহর পক্ষ হতে তার প্রতি কোন প্রকার সম্মান প-দর্শন করা হবে না।
দুনিয়াতে মানুষ তার ঈমান-আমলকথা-কাজ ও বিশ্বাস অনুযায়ীই ইজ্জত-সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকে। যার মধ্যে যত বেশি ঈমান আমল থাকবেসেই তত বেশি ইজ্জত সম্মানের অধিকারী হবে। দ্বীনকে বাদ দিয়ে যে ব্যক্তি ইজ্জত-সম্মান তালাশ করেসে অবশ্যই পদে পদে লাঞ্ছিত হবে। ইসলামের বাহিরে গিয়ে কেউ সম্মানের অধিকারী হতে পারে না।সুতরাং ইসলামের বাহিরে গিয়ে যে সম্মান চায়তাকে কোন সম্মান দেয়া হবে নাবরং তাকে অপমান করা হবে।
 এখানে একটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবেপ্রথম প্রকার সম্মান লাভ করা আল্লাহর তাআলার পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা মানব সৃষ্টির সাথে তাদের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য গুলো দিয়েই তৈরি করেন। তাতে মানুষের কোন দখল নাই। আর একজন যখন প্রথম প্রকার সম্মান লাভে ধন্য হয়তা তাকে বাধ্য করে যাতে সে দ্বিতীয় প্রকার সম্মানও লাভ করে। অর্থাৎ যাকে আল্লাহ তাআলা যাকে ধন-সম্পদটাকা পয়সাশক্তিসামর্থ্য ও সুস্থতা দিয়েছে,তার উপর কর্তব্য হলসে যেন তার প্রচেষ্টাকে আল্লাহ তাআলার ইবাদতে নিয়োজিত করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে যথাসাধ্য চেষ্টা করে। অন্যথায় আল্লাহ তাআলা তাকে কিয়ামতের দিন তাকে দেয় নেয়ামতগুলির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করবে। ইমাম মুসলিম স্বীয় কিতাব মুসলিম শরীফে আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণনা করেন যে, সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করল যেআমরা আমাদের প্রভুকে কিয়ামতের দিনে দেখতে পাব কিতখন তিনি বললেন,
هل تضارون في رؤية الشمس في الظهيرة ليست في سحابة؟ قالوا: لا قال: فهل تضارون في رؤية القمر ليلة البدر ليس في سحابة؟ قالوا: لا، قال: فوالذي نفسي بيده لا تضارون في رؤية ربِّكم إلاَّ كما تضارون في رؤية أحدهما، قال: فيلقى العبد فيقول: أي فُلْ ألم أُكرمْك وأُسوِّدك وأُزوِّجك وأُسخِّر لك الخيلَ والإبل وأذرك ترأس وترْبع؟ فيقول: بلى، قال: فيقول: أفظننت أنَّك ملاقيّ؟ فيقول: لا، فيقول: فإنِّي أنساك كما نسيتني، ثم يلقى الثاني فيقول: أي فل ألم أكرمك وأُسوِّدك وأُزوِّجك وأُسخِّر لك الخيلَ والإبل وأذرك ترأس وترْبع؟ فيقول: بلى أي ربّ، فيقول: أفظننت أنَّك ملاقيّ؟ فيقول: لا، فيقول: فإنِّي أنساك كما نسيتني، ثم يلقى الثالث فيقول له مثل ذلك فيقول: يا ربِّ آمنت بك وبكتابك وبرسلك، وصلّيتُ وصمت وتصدّقتُ، ويثني بخيرٍ ما استطاع، فيقول: هنا إذاً، قال: ثم يقال له: الآن نبعث شاهداً عليك، ويتفكّر في نفسه من ذا الذي يشهد عليَّ؟! فيختم على فيه ويقال لفخذه ولحمه وعظامه: أنطقي فتنطق فخذه ولحمه وعظامه بعمله، وذلك ليعذر من نفسه، وذلك المنافق، وذلك الذي يسخط اللهُ عليه
অর্থপরিষ্কার আকাশে যখন কোন মেঘের আবরণ না থাকেতখন কি তোমাদের সূর্য দেখতে কোন কষ্ট হয়তারা বললনা। তিনি আরও বললেন পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখতে কি তোমাদের কষ্ট হয়তারা বললনা। তখন তিনি বললেনপূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখতে তোমাদের যেমন কোন প্রকার কষ্ট হয় না,অনুরুপভাবে কিয়ামতে দিন আল্লাহকে দেখতেও তোমাদের কোন প্রকার কষ্ট হবে না। তারপর বান্দা আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করলেআল্লাহ তাকে ডেকে বলবেবলতো দেখিআমি কি তোমাকে সম্মান দেইনিতোমাকে ক্ষমতা দেইনিতোমাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করিনিতোমাদের জন্য উট ও ঘোড়াকে অনুগত করিনিএবং আমি কি তোমাদের স্বাধীনতা দেইনিতখন বান্দা বলবেঅবশ্যইতুমি আমাদের যাবতীয় বিষয়গুলোর ব্যাপারে ক্ষমতা দিয়েছ! তাহলে তোমরা কি এ কথা বিশ্বাস করতে যেএকদিন তোমাকে আমার সাথে সাক্ষাত করতে হবেতখন সে বলবেনা! তখন আল্লাহ তাআলা বলবে,আজকের দিন আমি তোমাকে ভূলে যাবযেমনটি তুমি আমাকে দুনিয়াতে ভুলে গিয়েছিলে! তারপর আল্লাহ অপর এক বান্দার প্রতি লক্ষ করে বলবেবলতো দেখি আমি কি তোমাকে সম্মান দেইনিতোমাকে ক্ষমতা দেইনিতোমাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করিনিতোমাদের জন্য উট ও ঘোড়াকে অনুগত করিনি,এবং আমি কি তোমাদের স্বাধীনতা দেইনিতখন বান্দা বলবেঅবশ্যইতুমি আমাদের জন্য যাবতীয় বিষয়গুলো ব্যাপারে ক্ষমতা দিয়েছ! তোমরা কি এ কথা বিশ্বাস করতে যেএকদিন তোমাকে আমার সাথে সাক্ষাত করতে হবেতখন সে বলবে না! তখন আল্লাহ তাআলা বলবেআজকের দিন আমি তোমাকে ভূলে যাবযেমনটি তুমি আমাকে ভুলে গিয়েছিলে। তারপর আল্লাহ তাআলা তৃতীয় লোকটির সাক্ষাতকার নিবে এবং তাকেও অনুরূপ প্রশ্ন করা হবেতখন সে উত্তরে বলবেহে আমার রব! আমি তোমার প্রতি বিশ্বাস করছিতোমার অবতীর্ণ কিতাব ও প্রেরিত রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছিসালাত আদায় করছিরোজা রেখেছি ও দান খয়রাত করেছি। তারপর যথাসম্ভব সে উত্তম প্রসংশা করবে। তখন সে বলবেতোমাকে ধন্যবাদ জানানো হলএরপর তাকে বলা হবেতোমার বিপক্ষে কি সাক্ষ্য উপস্থিত করবএ কথা শোনে লোকটি চিন্তায় পড়ে যাবেকে তার বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবেতখন আল্লাহ তাআলা তার মুখে তালা দিয়ে দেবে। (মূখে সে আর কোন কথা বলতে পারবে না) আর তার উরুগোস্ত ও হাড়গুলোকে বলা হবেতোমরা কথা বলতখন তারা ষতার বিপক্ষে কথা বলবেতার উরুগোস্ত ও হাড়গুলো তার কর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে। আর এ সব আল্লাহ তাআলা এ জন্য করবেনযাতে সে নিজেকে অপরাধি সাব্যস্ত করতে পারে। আর এ লোকটি হলমুনাফেক। আল্লাহ তাআলা এ লোকটির উপরই ক্ষুব্ধ। কিয়ামতের দিন তার উপর অধিক ক্ষুব্ধ হবেন। [মুসলিম: ২৯৬৮]

হাদিস দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যেআল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার বান্দাদের একজনকে যেসুস্থতাধন-সম্পদঘর-বাড়ীটাকা- পয়সা ইত্যাদি নেয়ামত দিয়েছেনসে সম্পর্কে তাকে অবশ্যই জিজ্ঞাসা করবে। কারণআল্লাহ তাআলা-তো তাকে এ সব নেয়ামত এ জন্য দিয়েছেনযাতে সে এ গুলোকে আল্লাহর বন্দেগীতে কাজে লাগায় এবং আল্লাহর রাহে তা ব্যয় করে। কিন্তু যদি সে তা না করেঅন্যায় কাজ করেআল্লাহর নাফরমানি করে এবং অন্য কোন বিপথে কাজে লাগায়তাহলে কিয়ামতের দিন তাকে অবশ্যই তার নেয়ামতের হিসাব দিতে হবে।

ইসলামে নারীর সম্মান

 একমাত্র ইসলামই মুসলিম নারীদেরকে ইসলামের নির্ভুল দিকনির্দেশনা ও বাস্তব-ধর্মী নীতি মালার মাধ্যমে তাদের যাবতীয় অসম্মান ও অবমাননা থেকে রক্ষা করেছে। ইসলাম তাদের নিরাপত্তা বিধান করেছেতাদের সম্ভ্রম রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছেতাদের যাবতীয় কল্যাণের নিশ্চয়তা দিয়েছে। দুনিয়াও আখিরাতের সফলতা লাভের জন্য সব ধরনের পথ তাদের জন্য উন্মুক্ত করেছে। ইসলামই তাদের জন্য সুন্দর ও আনন্দদায়ক জীবন নিশ্চিত করেছে। সব ধরনের ফিতনাফ্যাসাদঅন্যায় ও অনাচার থেকে ইসলাম নারীদের হেফাযত করেছে। ইসলাম তাদের প্রতি কোন প্রকার বৈষম্যযুলুম ও নির্যাতন করার সব পথকে রুদ্ধ করেছে। আর এগুলো সবই হলতার বান্দাদের প্রতি আল্লাহ তাআলা অপার অনুগ্রহবিশেষ করে নারী জাতির প্রতি। কারণতিনি তাদের জন্য এমন এক শরীয়ত নাযিল করেছেনযা তাদের কল্যাণকে নিশ্চিত করেফিতনা- ফ্যাসাদ থেকে তাদের হেফাযত করেতাদের হঠকারিতা দূর ও তাদের যাবতীয় কল্যাণ নিশ্চিত করে। আল্লাহ তাআলা ইসলামকে আমাদের জন্য এক বিশাল নেয়ামত হিসেবে দিয়েছেন। বিশেষ করেইসলামই আমাদের- এক কথায় আমাদের নারীদের জন্য নিরাপত্তা-স্থল ও আশ্রয় কেন্দ্র। যারা ইসলামের সুশীতল ছায়া তলে আশ্রয় নেবেতারাই নিরাপদে জীবন যাপন করতে পারবে। বরং ইসলাম সমাজকে সব ধরনের অন্যায়-অনাচার হতে রক্ষা করে। সমাজে যাতে কোন প্রকার বিপদ-আপদঝগড়া-বিবাদবিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়,তার জন্য ইসলামই একমাত্র গ্যারান্টি। ইসলাম এ সব থেকে সমাজকে রক্ষা করে এবং একটি উন্নত সমাজ জাতির জন্য নিশ্চিত করে।
 আর যখন সমাজ থেকে নারীদের সাথে সম্পৃক্ত বিধানগুলো বিলুপ্ত হয়ে যায়তখন সমাজে অন্যায়অনাচারঝগড়াবিবাদ ও বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পায়। নারীদের কোন নিরাপত্তা সে সমাজে অবশিষ্ট থাকে না।

আর মানবজাতির ইতিহাস হল এর জ্বলন্ত ও উৎকৃষ্ট প্রমাণকারণযে ব্যক্তি পৃথিবীর ইতিহাসের দিকে নজর দেবেসে অবশ্যই দেখতে পাবেপৃথিবীতে বড় বড় বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হলসামাজিক বিশৃঙ্খলানৈতিক পতনবেহায়াপনা ও বেলাল্লাপনার বিস্তারঅবাধে অন্যায়-অত্যাচার সংঘটিত হওয়া ইত্যাদি। আর সমাজে এ গুলো বিস্তারের পিছনে মূল কারণ হলনারীদের অবাধ চলা ফেরানারীরা পুরুষের সাথে অবাধ মেলা-মেশা করাসাজ-সজ্জা অবলম্বন-বেপর্দা হয়ে ঘর থেকে বের হওয়াঅপরিচিত লোকদের সাথে তাদের ওঠবসলোক সমাজে তারা অত্যন্ত সুন্দর কাপড় পরিধান করে কোন প্রকার লজ্জাশরম ছাড়াই বের হওয়া।
 আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেনএ কথা নি: সন্দেহে বলা যেতে পারে যেসব ধরনের অনিষ্ট ও বিপদ-আপদের মূল কারণ হলনারীদের পুরুষদের সাথে অবাধ চলা ফেরা করতে সুযোগ পাওয়া। আর এটাই হল বড় কারণদুনিয়াতে ব্যাপক হারে আযাব নাযিল হওয়ার জন্য। অনুরূপভাবে নারীদের কারণেই সর্বসাধারণ হোক কিংবা বিশেষ লোকসবার উপর বিপর্যয় নেমে আসেসবাইকে আল্লাহর আযাবে আক্রান্ত হতে হয়।
 মনে রাখতে হবেনারীদের অবাধ মেলামেশার কারণেই সমাজে অন্যায়অনাচারঅশ্লীলতাযেনা ব্যভিচার বৃদ্ধি পায়সমাজের সুনাম সুখ্যাতি বিনষ্ট হয়। আর এ সব হলসমাজের জন্য বড় ধরনের মহামারি ও আযাবের কারণ। মুসা আলাইহিসসালাম এর সৈন্যদের মধ্যে যখন নারীরা প্রবেশ করলতখন তাদের মধ্যে ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়ল এবং তারা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ল। যার ফলে আল্লাহ তাআলা তাদের উপর এমন আযাব পাঠালেনএকদিনেই তাদের সত্তর হাজার লোক একসাথে মারা গেল। এ ঘটনা তাফসীরের কিতাবসমূহে বিখ্যাত।
 ইসলামের আগমন হয়েছে মানব জাতিকে আপদ-বিপদ হতে রক্ষা করা এবং মানবতাকে চিকিৎসা ও সংশোধন করার জন্যযাতে সমাজে যে সব ফিতনা-ফ্যাসাদ দেখা দেয় এবং বিপর্যয় নেমে আসে তা থেকে মানবতাকে মুক্ত করা যায়। ইসলাম হল মূলত: এমন একটি পবিত্র শিক্ষাযা মানুষকে ধ্বংস ও অশ্লীল কার্যকলাপ হতে রক্ষা করে। এ জন্য বলাবাহুল্য যেইসলাম হল আল্লাহর পক্ষ হতে মানব জাতির জন্য বিশেষ রহমতযা দ্বারা বান্দাদের আত্ম মর্যাদার সংরক্ষণ হয় এবং তাদেরকে দুনিয়াতে অপমান অপদস্থ হওয়া ও আখিরাতের আযাব হতে রক্ষা করে।
হাদিস কুরআন পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাইনারীদের ফিতনার কারণেই দেশ ও সমাজে ফিতনা ফাসাদঅনিষ্টতা ও এমন এমন বিপর্যয় দেখা দেয়যার পরিণতি ও শাস্তি যে কত ভয়াবহতা আয়ত্ত করা কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়।
বুখারী ও মুসলিমে উসামা ইবনে যায়েদ রা. হতে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ما تركتُ بعدي فتنةً أضرَّ على الرجال من النساء
আমার পর পুরুষদের জন্য নারীদের ফিতনার চেয়ে মারাত্মক ও ক্ষতিকর আর কোন ফিতনা আমি রেখে যাইনি। [বুখারি: ৫০৯৬; মুসলিম: ২৭৪]
 এ কারণেই আল্লাহ তাআলা নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা আলাদা নীতিমালা আরোপ করেছেনযেগুলো মেনে চললে এবং সমাজে বাস্তবায়ন করলে যাবতীয় কল্যাণ ও দুনিয়া আখিরাতের সম্মান লাভ করা যাবে। সমাজ বা দেশে কোন প্রকার ফিতনাফাসাদ আর অবশিষ্ট থাকবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ ﴿30﴾ وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ
অর্থমুমিন পুরুষদের বলতারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জা-স্থানের হিফাজত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদেরকে বলতারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জা-স্থানের হিফাজত করবে। [সূরা আন-নূর, আয়াত- ৩০-৩১]
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا ﴿32﴾ وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى...
অর্থহে নবী-পত্নীগণতোমরা অন্য কোন নারীর মত নও। যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বলো না। তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছেসে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায় সংগত কথা বলবে। আর তোমরা তোমাদের নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। [সূরা আল-আহযাব: 32-33]
এ বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহের বর্ণনা অনেক। ইসলাম নারীদের বিষয়ে যে সব বিধি-নিষেধ আরোপ করেছেতা মানুষের অকল্যাণ বা তাদের স্বাধীনতা হরণ করার জন্য করে নিবরং তা করা হয়েছে সমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষাসামাজিক আত্ম-মর্যাদাবোধ ও সমাজের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষে।
ইসলাম নারীদের জন্য যে সব বিধি-নিষেধ আরোপ করেছেতা তাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার জন্য করেনিবরং তারা যাতে কোন প্রকার অন্যায় ও অশ্লীল কাজে জড়িয়ে না পড়েনিরাপত্তা-হীনতায় না পড়েসে জন্যই তাদের উপর এ সব বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আল্লাহ তাদের উপর বিধি নিষেধ আরোপ করার মাধ্যমেনারীদের অশ্লীল কাজের দিকে নিয়ে যায়এমন সব ধরনের উপায় উপকরণ বন্ধ করে দিয়েছেন। আর এটিই হল নারীদের জন্য সত্যিকার সম্মান ও মর্যাদা।

নারীদের অধিকার বিষয়ে কুরআনের দিক নির্দেশনা

 পবিত্র কুরআন, যাকে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের জন্য বিশেষ রহমত ও অনুপম আদর্শ হিসেবে দুনিয়াতে নাযিল করেছেনযদি কোন ব্যক্তি তার আয়াতসমূহে গভীরভাবে চিন্তা করেসে অবশ্যই দেখতে পাবেআল্লাহ তাআলা নারীদের বিষয়ে কতই না সুন্দর ব্যবস্থা রেখেছেন এবং নারীদের অধিকারকে তিনি কতই না গুরুত্ব দিয়েছেন এবং সমুন্নত রেখেছেন। আল্লাহ তাআলা নারীদের অধিকারকে সংরক্ষণ করার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। আর যারা নারীদের অধিকার নষ্ট করে এবং তাদের উপর যুলুম, অত্যাচার ও তাদের সাথে বিমাতা-সুলভ আচরণ করেতাদের বিষয়ে তিনি কঠিন হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। নারীদের অধিকার বিষয়ে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে অনেক আয়াত নাযিল করেছেন। এমনকি নারীদের নামে একটি সূরাও নাযিল তিনি নাযিল করেনযার নাম সূরা ‌‍আন-নিসা। যার মধ্যে এমন সব আয়াত রয়েছেযেগুলোতে আল্লাহ তাআলা নারীদের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন আহকাম আলোচনা করেন। তাদের সামাজিক মর্যাদাপুরুষদের প্রতি তাদের করণীয়নারী অধিকারবিবাহঘর-সংসারতালাক ইত্যাদি এ সূরাতে স্থান পায়। কুরআন নারীদের সাথে আচরণের বিষয়ে যে সব দিক নির্দেশনা দিয়েছে তা নিম্নে আলোচনা করা হল

এক. নারীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা:-
আল্লাহ তা‘আলা নারীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করতে আদেশ দেন এবং তাদের সাথে কোন প্রকার দুর্ব্যবহার করতে নিষেধ করেন। তাদের সাথে যেন কোন প্রকার অনিয়ম না হয় এবং আল্লাহর দেয়া বিধান ও যাবতীয় আইনকানুন মেনে চলা হয়তার জন্য তিনি বিশেষ নির্দেশ দেন। আর যারা তাদের উপর যুলুম-অত্যাচার করেআল্লাহ তাআলার বেধে দেয়া সীমা-রেখা অতিক্রম করে এবং সীমাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করেতাদের তিনি বিশেষ সতর্ক করেনযেমন- আল্লাহ তাআলা বলেন
فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِنْ بَعْدُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَنْ يَتَرَاجَعَا إِنْ ظَنَّا أَنْ يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ ﴿230﴾ وَإِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَبَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَأَمْسِكُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ أَوْ سَرِّحُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ وَلَا تُمْسِكُوهُنَّ ضِرَارًا لِتَعْتَدُوا وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهُ وَلَا تَتَّخِذُوا آَيَاتِ اللَّهِ هُزُوًا وَاذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَمَا أَنْزَلَ عَلَيْكُمْ مِنَ الْكِتَابِ وَالْحِكْمَةِ يَعِظُكُمْ بِهِ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ ﴿231﴾ وَإِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَبَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا تَعْضُلُوهُنَّ أَنْ يَنْكِحْنَ أَزْوَاجَهُنَّ إِذَا تَرَاضَوْا بَيْنَهُمْ بِالْمَعْرُوفِ ذَلِكَ يُوعَظُ بِهِ مَنْ كَانَ مِنْكُمْ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ ذَلِكُمْ أَزْكَى لَكُمْ وَأَطْهَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ﴿232﴾
অতএব যদি সে তাকে তালাক দেয় তাহলে সে পুরুষের জন্য হালাল হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ভিন্ন একজন ‎‎স্বামী সে গ্রহণ না করে। অতঃপর সে (স্বামী) যদি তাকে তালাক দেয়তাহলে তাদের উভয়ের অপরাধ হবে না যেতারা একে অপরের নিকট ফিরে আসবেযদি দৃঢ় ধারণা রাখে যেতারা আল্লাহর সীমারেখা কায়েম রাখতে পারবে। আর এটা আল্লাহর সীমারেখাতিনি তা এমন সম্প্রদায়ের জন্য স্পষ্ট করে দেনযারা বুঝে। 
আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দেবে অতঃপর তারা তাদের ইদ্দতে পৌঁছে যাবে তখন হয়তো বিধি ‎‎মোতাবেক তাদেরকে রেখে দেবে অথবা বিধি মোতাবেক তাদেরকে ছেড়ে দেবে। তবে তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সীমালঙ্ঘনের উদ্দেশ্যে তাদেরকে আটকে রেখো না। আর যে তা করবে সে তো নিজের প্রতি যুলম করবে। আর তোমরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে উপহাসরূপে গ্রহণ করো না। আর তোমরা স্মরণ কর তোমাদের উপর আল্লাহর নিআমত এবং তোমাদের উপর কিতাব ও হিকমত যা নাযিল করেছেনযার মাধ্যমে তিনি ‎‎তোমাদেরকে উপদেশ দেন। আর আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ যেনিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয় সম্পর্কে সুপরিজ্ঞাত।
আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দেবে অতঃপর তারা তাদের ইদ্দতে পৌঁছবে তখন তোমরা তাদেরকে বাধা দিয়ো না যেতারা তাদের স্বামীদেরকে বিয়ে করবে যদি তারা পরস্পরে তাদের মধ্যে বিধি মোতাবেক সম্মত হয়। এটা উপদেশ তাকে দেয়া হচ্ছেযে তোমাদের মধ্যে আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে। এটি তোমাদের জন্য অধিক শুদ্ধ ও অধিক পবিত্র। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না। [সূরা আল-বাকারাহ: ২২৯-২৩২]

দুই. নারীদের জন্য খরচা করার বিধান:-
আল্লাহ তাআলা নারীদের উপর ব্যয় করার বিষয়ে নিখুঁত একটি নীতিমালা তৈরি করে দিয়েছেন। আল্লাহর নির্দেশ হলযখন নারীদের সাথে ঘর সংসার করবেতখন তাদের যাবতীয় খরচা তোমরাই বহন করবে। আর যদি তাদের সাথে ঘর সংসার করা কোনভাবেই সম্ভব না হয়তখন তোমরা দয়া ও অনুগ্রহের সাথে তাদের ছেড়ে দেবে। কোন প্রকার বাড়াবাড়ি করবে না। আর তোমাদের এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবেতোমরা সর্বদা তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
لَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِنْ طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ مَا لَمْ تَمَسُّوهُنَّ أَوْ تَفْرِضُوا لَهُنَّ فَرِيضَةً وَمَتِّعُوهُنَّ عَلَى الْمُوسِعِ قَدَرُهُ وَعَلَى الْمُقْتِرِ قَدَرُهُ مَتَاعًا بِالْمَعْرُوفِ حَقًّا عَلَى الْمُحْسِنِينَ ﴿236﴾ وَإِنْ طَلَّقْتُمُوهُنَّ مِنْ قَبْلِ أَنْ تَمَسُّوهُنَّ وَقَدْ فَرَضْتُمْ لَهُنَّ فَرِيضَةً فَنِصْفُ مَا فَرَضْتُمْ إِلَّا أَنْ يَعْفُونَ أَوْ يَعْفُوَ الَّذِي بِيَدِهِ عُقْدَةُ النِّكَاحِ وَأَنْ تَعْفُوا أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى وَلَا تَنْسَوُا الْفَضْلَ بَيْنَكُمْ إِنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ ﴿237﴾
তোমাদের কোন অপরাধ নেই যদি তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দাও এমন অবস্থায় যেতোমরা তাদেরকে ‎‎স্পর্শ কর নি কিংবা তাদের জন্য কোন মোহর নির্ধারণ করনি। আর উত্তমভাবে তাদেরকে ভোগ-উপকরণ দিয়ে দাওধনীর উপর তার সাধ্যানুসারে এবং সংকটাপন্নের উপর তার সাধ্যানুসারে। সুকর্মশীলদের উপর এটি আবশ্যক। 
আর যদি তোমরা তাদেরকে তালাক দাওতাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বে এবং তাদের জন্য কিছু মোহর নির্ধারণ করে থাকতাহলে যা নির্ধারণ করেছতার অর্ধেক (দিয়ে দাও)। তবে স্ত্রীরা যদি মাফ করে দেয়কিংবা যার হাতে বিবাহের বন্ধন সে যদি মাফ করে দেয়। আর তোমাদের মাফ করে দেয়া তাকওয়ার অধিক নিকটতর। আর তোমরা পরস্পরের মধ্যে অনুগ্রহ ভুলে যেয়ো না। তোমরা যা করনিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা। [সূরা আল-বাকারাহ: ২৩৬-২৩৭]

তিন. স্ত্রীদের মোহরানা পরিশোধ করা ফরয:-
আল্লাহ তাআলা স্বামীদের উপর তাদের স্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত মোহরানা আদায় করাকে ফরয করে দিয়েছেন। তাদের নির্ধারিত মোহরানাতে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করাকে আল্লাহ তাআলা অবৈধ বা হারাম করে দিয়েছেন। তবে যদি স্ত্রী তার নিজের পক্ষ হতে কিছু কমিয়ে দেয় বা ক্ষমা করে দেয় সেটা হল,ভিন্ন কথা। তখন তা হতে গ্রহণ করা স্বামীর জন্য অবশ্যই হালাল হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন
وَآَتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَإِنْ طِبْنَ لَكُمْ عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَرِيئًا ﴿4﴾
আর তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়ে দাওঅতঃপর যদি তারা তোমাদের জন্য তা থেকে খুশি হয়ে কিছু ছাড় দেয়তাহলে তোমরা তা সানন্দে তৃপ্তিসহকারে খাও। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪]

চার. নারীদের জন্য মালিকানা প্রতিষ্ঠা:-
আল্লাহ তাআলা নারীদের জন্য উত্তরাধিকারী সম্পত্তিতে অংশ নির্ধারণ করেন। ফলে তাদের মাতা-পিতাসন্তানাদি বা নিকট আত্মীয় কেউ মারা গেলে তারাও পুরুষদের মত সম্পত্তির মালিক হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
لِلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ مِمَّا قَلَّ مِنْهُ أَوْ كَثُرَ نَصِيبًا مَفْرُوضًا ﴿7﴾
পুরুষদের জন্য মাতা পিতা ও নিকটাত্মীয়রা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে একটি অংশ রয়েছে। আর নারীদের জন্য রয়েছে মাতা পিতা ও নিকটাত্মীয়রা যা রেখে গিয়েছে তা থেকে একটি অংশÑ তা থেকে কম হোক বা বেশি ‎‎হোকÑ নির্ধারিত হারে। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৭]

পাঁচ. নারীদের প্রতি উদারতা প্রদর্শন করা:-
আল্লাহ তাআলা নারীদের কোন প্রকার কষ্ট দিতে এবং তাদের দেয়া মোহরানাকে ফেরত নিতে সম্পূর্ণ নিষেধ করেছেন। তাদের সদয় থাকা জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا يَحِلُّ لَكُمْ أَنْ تَرِثُوا النِّسَاءَ كَرْهًا وَلَا تَعْضُلُوهُنَّ لِتَذْهَبُوا بِبَعْضِ مَا آَتَيْتُمُوهُنَّ إِلَّا أَنْ يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُبَيِّنَةٍ وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ فَإِنْ كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا ﴿19﴾ وَإِنْ أَرَدْتُمُ اسْتِبْدَالَ زَوْجٍ مَكَانَ زَوْجٍ وَآَتَيْتُمْ إِحْدَاهُنَّ قِنْطَارًا فَلَا تَأْخُذُوا مِنْهُ شَيْئًا أَتَأْخُذُونَهُ بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُبِينًا ﴿20﴾ وَكَيْفَ تَأْخُذُونَهُ وَقَدْ أَفْضَى بَعْضُكُمْ إِلَى بَعْضٍ وَأَخَذْنَ مِنْكُمْ مِيثَاقًا غَلِيظًا ﴿21﴾
হে মুমিনগণতোমাদের জন্য হালাল নয় যেতোমরা জোর করে নারীদের ওয়ারিছ হবে। আর তোমরা তাদেরকে আবদ্ধ করে রেখো নাতাদেরকে যা দিয়েছ তা থেকে তোমরা কিছু নিয়ে নেয়ার জন্যতবে যদি তারা প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। আর তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর। আর যদি তোমরা তাদেরকে অপছন্দ করতবে এমনও হতে পারে যেতোমরা কোন কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন। 
আর যদি তোমরা এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রীকে বদলাতে চাও আর তাদের কাউকে তোমরা প্রদান করেছ প্রচুর সম্পদতবে তোমরা তা থেকে কোন কিছু নিও না। তোমরা কি তা নেবে অপবাদ এবং প্রকাশ্য গুনাহের মাধ্যমে
আর তোমরা তা কীভাবে নেবে অথচ তোমরা একে অপরের সাথে একান্তে মিলিত হয়েছআর তারা তোমাদের ‎‎থেকে নিয়েছিল দৃঢ় অঙ্গীকার?  [সূরা আন-নিসা, আয়াত১৯-২১]

ছয়. নারী ও পুরুষের স্বকীয়তা বজায় রাখা বিষয়:-
আল্লাহ তাআলা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য কতক আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে আল্লাহ পুরুষদের উপর নারীদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন আবার কিছু ক্ষেত্রে পুরুষদের নারীদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। কিন্তু কেউ যেন কারো বৈশিষ্ট্য বা অধিকার নিয়ে বিতর্কের সূচনা না করে
আল্লাহ তাআলা কুরআন করীমে এরশাদ করেন-
وَلَا تَتَمَنَّوْا مَا فَضَّلَ اللَّهُ بِهِ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ لِلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِمَّا اكْتَسَبُوا وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِمَّا اكْتَسَبْنَ وَاسْأَلُوا اللَّهَ مِنْ فَضْلِهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا ﴿32﴾
আর তোমরা আকাঙ্ক্ষা করো না সে-সবেরযার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের এক জনকে অন্য জনের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। পুরুষদের জন্য রয়েছে অংশ,তারা যা উপার্জন করে তা থেকে এবং নারীদের জন্য রয়েছে অংশযা তারা উপার্জন করে তা থেকে। আর তোমরা আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ চাও। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।  [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩২]

সাত. ইবাদতের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ সমান বিনিময়:-
আল্লাহ তাআলা নারীদেরকে ইবাদত বন্দেগী ও আল্লাহর নৈকট্য লাভে পুরুষের সঙ্গী বানিয়েছেন। তাদেরও সেই কাজের আদেশ দেয়া হয়েছেযে কাজের আদেশ পুরুষদের দেয়া হয়েছে। প্রত্যেককে তাদের ইখলাসচেষ্টা ও কর্ম অনুযায়ী কিয়ামত দিবসে সাওয়াব ও বিনিময় দেয়া হবে। তাদের কাউকে কোন প্রকার বৈষম্য করা হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِينَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِينَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِينَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِينَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّائِمِينَ وَالصَّائِمَاتِ وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا ﴿35﴾
নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও নারীমুমিন পুরুষ ও নারীঅনুগত পুরুষ ও নারীসত্যবাদী পুরুষ ও নারীধৈর্যশীল পুরুষ ও নারীবিনয়াবনত পুরুষ ও নারী,দানশীল পুরুষ ও নারীসিয়ামপালনকারী পুরুষ ও নারীনিজদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী পুরুষ ও নারীআল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী,তাদের জন্য আল্লাহ মাগফিরাত ও মহান প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৫]

আট. স্বামীর মধ্যকার বিবাধ মীমাংসা:-
আল্লাহ তাআলা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মাঝে কোন ঝগড়া-বিবাধ দেখা দিলেতা মীমাংসার জন্য কতক নীতিমালা নির্ধারণ করে দিয়েছন। স্ত্রী যদি স্বামীর অবাধ্য হয়তখন তার সাথে কি ধরনের আচরণ করতে হবেআর স্বামী যদি বাড়াবাড়ি করে তার ব্যাপারে স্ত্রীর করণীয় কি হবেতা আল্লাহ সবিস্তারে বলে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِنِ امْرَأَةٌ خَافَتْ مِنْ بَعْلِهَا نُشُوزًا أَوْ إِعْرَاضًا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَنْ يُصْلِحَا بَيْنَهُمَا صُلْحًا وَالصُّلْحُ خَيْرٌ وَأُحْضِرَتِ الْأَنْفُسُ الشُّحَّ وَإِنْ تُحْسِنُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا ﴿128﴾ وَلَنْ تَسْتَطِيعُوا أَنْ تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ فَلَا تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ فَتَذَرُوهَا كَالْمُعَلَّقَةِ وَإِنْ تُصْلِحُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا ﴿129﴾
যদি কোন নারী তার স্বামীর পক্ষ থেকে কোন দুর্ব্যবহার কিংবা উপেক্ষার আশঙ্কা করেতাহলে তারা উভয়ে ‎‎কোন মীমাংসা করলে তাদের কোন অপরাধ নেই। আর মীমাংসা কল্যাণকর এবং মানুষের মধ্যে কৃপণতা বিদ্যমান রয়েছে। আর যদি তোমরা সৎকর্ম কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর তবে আল্লাহ তোমরা যা কর সে বিষয়ে সম্যক অবগত।
আর তোমরা যতই কামনা কর না কেন তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে সমান আচরণ করতে কখনো পারবে না। সুতরাং তোমরা (একজনের প্রতি) সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়ো নাযার ফলে তোমরা (অপরকে) ঝুলন্তের মত করে রাখবে। আর যদি তোমরা মীমাংসা করে নাও এবং তাকওয়া অবলম্বন কর তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীলপরম ‎‎দয়ালু। [সূরা আন-নিসা ১২৮-১২৯]

নয়. কন্যা সন্তানদের প্রতি বৈষম্য নিরসন বিষয়ে:-
 মুশরিকরা কন্যা সন্তানদের অপছন্দ ও ঘৃণা করার কারণে আল্লাহ তাআলা তাদের ভর্ৎসনা করেন এবং তাদের তিরস্কার করেন
وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُمْ بِالْأُنْثَى ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدًّا وَهُوَ كَظِيمٌ ﴿58﴾ يَتَوَارَى مِنَ الْقَوْمِ مِنْ سُوءِ مَا بُشِّرَ بِهِ أَيُمْسِكُهُ عَلَى هُونٍ أَمْ يَدُسُّهُ فِي التُّرَابِ أَلَا سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ ﴿59﴾
আর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায়। আর সে থাকে দু:খ ভারাক্রান্ত। তাকে যে সংবাদ দেয়া হয়েছেসে দু:খে সে কওমের থেকে আত্মগোপন করে। অপমান সত্ত্বেও কি একে রেখে দেবেনা মাটিতে পূতে ফেলবেজেনে রেখতারা যা ফয়সালা করেতা কতই না মন্দ! [সূরা‌ আন-নাহ্‌ল, আয়াত: ৫৮,৫৯]

দশ. নারীদের প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেয়ার শাস্তি বিষয়:-
যারা সতী-সিদ্ধ রমণীদের অপবাদ দেয় তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন এবং তাদের ফাসেক বলে আখ্যায়িত করেনআল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاءَ فَاجْلِدُوهُمْ ثَمَانِينَ جَلْدَةً وَلَا تَقْبَلُوا لَهُمْ شَهَادَةً أَبَدًا وَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ ﴿4﴾
আর যারা সচ্চরিত্র নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করেতারপর তারা চারজন সাক্ষী নিয়ে আসে নাতবে তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত কর এবং তোমরা কখনই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করো না। আর এরাই হলো ফাসিক। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৪]

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ الْغَافِلَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ لُعِنُوا فِي الدُّنْيَا وَالْآَخِرَةِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ ﴿23﴾
যারা সচ্চরিত্রা সরলমনা মুমিন নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করেতারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত। আর তাদের জন্য রয়েছে মহা আযাব [আন-নূর,আয়াত: ২৩]

এগার. স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মুহাব্বাত আল্লাহর একটি নিদর্শন:-
 আল্লাহ তাআলা বিবাহ সম্পর্কে বলেনবিবাহ হলআল্লাহ তাআলার মহান নিদর্শনযার মাধ্যমে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের মাঝে প্রেমভালোবাসা ও পারস্পরিক অনুগ্রহ তৈরি হয়
 আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمِنْ آَيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ ﴿21﴾
আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যেতিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেনযাতে ‎‎তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে সে কওমের জন্যযারা চিন্তা করে। [সূরা আর-রূ, আয়াত:২১]

বার. তালাকের বিধান:-
যখন স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ চূড়ান্ত রূপ নেয় এবং তালাক অনিবার্য হয়ে যায়তখন তাদের করনীয় কিকতজন সাক্ষী লাগবেকতদিন ইদ্দত পালন করতে হবে এবং তাদের খরচা কত দিতে হবে ইত্যাদি বিশদভাবে আল্লাহ আলোচনা করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন
 يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَطَلِّقُوهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَأَحْصُوا الْعِدَّةَ وَاتَّقُوا اللَّهَ رَبَّكُمْ لَا تُخْرِجُوهُنَّ مِنْ بُيُوتِهِنَّ وَلَا يَخْرُجْنَ إِلَّا أَنْ يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُبَيِّنَةٍ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ وَمَنْ يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهُ لَا تَدْرِي لَعَلَّ اللَّهَ يُحْدِثُ بَعْدَ ذَلِكَ أَمْرًا ﴿1﴾ فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَأَمْسِكُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ أَوْ فَارِقُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ وَأَشْهِدُوا ذَوَيْ عَدْلٍ مِنْكُمْ وَأَقِيمُوا الشَّهَادَةَ لِلَّهِ ذَلِكُمْ يُوعَظُ بِهِ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا ﴿2﴾
হে নবী, (বল)তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দেবেতখন তাদের ইদ্দত অনুসারে তাদের তালাক দাও এবং ইদ্দত হিসাব করে রাখবে এবং তোমাদের রব আল্লাহকে ভয় করবে। তোমরা তাদেরকে তোমাদের বাড়ীÑঘর ‎‎থেকে বের করে দিয়ো না এবং তারাও বের হবে না। যদি না তারা কোন স্পষ্ট অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। আর এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। আর যে আল্লাহর (নির্ধারিত) সীমারেখাসমূহ অতিক্রম করে সে অবশ্যই তার নিজের ওপর যুলম করে। তুমি জান নাহয়তো এর পর আল্লাহ, (ফিরে আসার) কোন পথ তৈরী করে দিবেন। 
অতঃপর যখন তারা তাদের ইদ্দতের শেষ সীমায় পৌঁছবেতখন তোমরা তাদের ন্যায়ানুগ পন্থায় রেখে দেবে অথবা ন্যায়ানুগ পন্থায় তাদের পরিত্যাগ করবে এবং তোমাদের মধ্য থেকে ন্যায়পরায়ণ দুইজনকে সাক্ষী বানাবে। আর আল্লাহর জন্য সঠিক সাক্ষ্য দেবে। তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান আনে এটি দ্বারা তাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। যে আল্লাহকে ভয় করেতিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। ‎‎ [সূরা আত-তালাক,আয়াত: ১-২]
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
أَسْكِنُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنْتُمْ مِنْ وُجْدِكُمْ وَلَا تُضَارُّوهُنَّ لِتُضَيِّقُوا عَلَيْهِنَّ وَإِنْ كُنَّ أُولَاتِ حَمْلٍ فَأَنْفِقُوا عَلَيْهِنَّ حَتَّى يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ فَإِنْ أَرْضَعْنَ لَكُمْ فَآَتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ وَأْتَمِرُوا بَيْنَكُمْ بِمَعْرُوفٍ وَإِنْ تَعَاسَرْتُمْ فَسَتُرْضِعُ لَهُ أُخْرَى ﴿6﴾
তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেখানে তোমরা বসবাস কর সেখানে তাদেরকেও বাস করতে দাওতাদেরকে সঙ্কটে ‎‎ফেলার জন্য কষ্ট দিয়ো না। আর তারা গর্ভবতী হলে তাদের সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত তাদের জন্য তোমরা ব্যয় করআর তারা তোমাদের জন্য সন্তানকে দুধ পান করালে তাদের পাওনা তাদেরকে দিয়ে দাও এবং (সন্তানের কল্যাণের জন্য) সংগতভাবে তোমাদের মাঝে পরস্পর পরামর্শ কর। আর যদি তোমরা পরস্পর কঠোর হও তবে পিতার পক্ষে অন্য কোন নারী দুধপান করাবে। [সূরা আত-তালাক, আয়াত: ৬

তের. একাধিক বিবাহ সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা:-
যারা একাধিক বিবাহ করতে চায় তাদের জন্য চারজন পর্যন্ত বিবাহ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে যারা একাধিক বিবাহ করবেতাদের জন্য শর্ত হল,তারা তাদের মধ্যে ন্যায় বিচার ও ইনসাফ কায়েম করবে। অন্যথায় তাকে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَانْكِحُوا مَا طَابَ لَكُمْ مِنَ النِّسَاءِ مَثْنَى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً
এখানে পবিত্র কুরআন হতে নারীদের সাথে সম্পৃক্ত কিছু দিক নির্দেশনা এবং তাদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ বিষয়ে কেবল কতগুলো দৃষ্টান্ত পেশ করা হলএগুলো ছাড়াও আরও অনেক আয়াত রয়েছে সবগুলোর আলোচনা এখানে সম্ভব নয়

ইসলামের সুশীতল ছায়ায় নারী

 একজন নারী ইসলামী শিক্ষা ও অনুপম আদর্শের ছায়া তলে ও ইসলোমের দিক নির্দেশনার আলোকে একটি সম্মানজনক অবস্থায় জীবন যাপন করতে পারে। ইসলামী বিধানে একজন নারীসে যেদিন থেকে দুনিয়াতে আগমন করেছেসেদিন থেকেই ইসলামী বিধানে তার জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তার সম্মান ও মর্যাদাকে অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে। তাকে কন্যা হিসেবেমা হিসেবেস্ত্রী হিসেবেবোন হিসেবেখালাফুফু ইত্যাদি হিসেবতার জীবনের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ধরনের সম্মান ও অধিকার আলাদা আলাদা করে দেয়া হয়েছে। একজন নারীর জীবনে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়। ইসলামে নারীর অবস্থা বেধে একজন নারীকে বিভিন্ন ধরনের সম্মান ও অধিকার দেয়া হয়েছে। নিম্নে তার সংক্ষিপ্ত একটি আলোচনা তুলে ধরা হল।

এক. কন্যা-সন্তান হিসেবে নারীর মর্যাদা:
 কন্যা হিসেবে নারীর মর্যদা অধিক। ইসলাম কন্যা সন্তানদের প্রতি দয়া করাতাদের নৈতিক শিক্ষা দেয়াআদর যত্নসহকারে লালন-পালন করা এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে নেককার নারী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। পক্ষান্তরে জাহিলিয়্যাতের যুগে যে সব কাফের মুশরিকরা কন্যা সন্তানের জন্মকে অপছন্দ করততাদের বিরুদ্ধে ইসলাম কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُمْ بِالْأُنْثَى ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدًّا وَهُوَ كَظِيمٌ ﴿58﴾ يَتَوَارَى مِنَ الْقَوْمِ مِنْ سُوءِ مَا بُشِّرَ بِهِ أَيُمْسِكُهُ عَلَى هُونٍ أَمْ يَدُسُّهُ فِي التُّرَابِ أَلَا سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ ﴿59﴾
অর্থআর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায়। আর সে থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত।
তাকে যে সংবাদ দেয়া হয়েছেসে দুঃখে সে কওমের থেকে আত্মগোপন করে। অপমান সত্ত্বেও কি একে রেখে দেবেনা মাটিতে পূতে ফেলবেজেনে রেখ,তারা যা ফয়সালা করেতা কতই না মন্দ! [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৫৮,৫৯]
বুখারী ও মুসলিমে মুগিরা ইবনে শু‘বা রা. হতে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إنَّ الله حرّم عليكم عقوق الأمهات، ومنعاً وهات، ووأد البنات
 অর্থনিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর মাতা-পিতার নাফরমানি করাকে হারাম করেছেনভিক্ষা করা ও কন্যা সন্তানদের পুতে হত্যা করাকে হারাম করেছেন।
 হাফেজ ইবনে হাযার আসকালানী রহ. বলেনজাহিলি যুগের লোকেরা কন্যা সন্তানদের দুটি পদ্ধতিতে হত্যা করত :
এক.
 তারা তাদের স্ত্রীদের যখন সন্তান প্রসবের সময় হততখন তারা তাদের নির্দেশ দিয়ে বলততারা যেন একটি গুহার নিকট চলে যায়। তারপর যখন কোন পুত্র সন্তান জন্ম লাভ করততখন তাকে জীবিত রাখত। আর যখন কোন কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করততখন তাকে গর্তে নিক্ষেপ করে হত্যা করে ফেলত।
দুই.
 যখন তাদের কন্যা সন্তানদের বয়স ছয় বছর হততখন তারা তাদের সন্তানের মাকে বলততাকে তুমি সাজিয়ে দাও! আমি তাকে নিয়ে আমার আত্মীয়ের বাড়ীতে বেড়াতে যাব। মা তাকে সাজিয়ে দিলেতার পিতা তাকে নিয়ে গভীর বন- জঙ্গলে চলে যেত এবং কুপের নিকট এসে তাকে বলততুমি একটু নিচের দিকে তাকিয়ে দেখসে যখন নিচের দিকে তাকিয়ে দেখততখন তাকে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে কুপের মধ্যে ফেলে দিত। তারপর মাটি চাপা দিয়ে অথবা পাথর মেরে হত্যা করে ফেলত। এ ভাবেই তাদের মধ্যে কন্যা সন্তানদের হত্যা করার ধারাবাহিকতা যুগ যুগ ধরে চলছিল। ইসলামের আগমনের পর ইসলাম নারীদেরকে আল্লাহর পক্ষ হতে বড় একটি নেয়ামত হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং কন্যা সন্তানদের হত্যা করার প্রবণতা বন্ধ করে দেন এবং ঘোষণা দেন যে কন্যা সন্তান হত্যা করা জঘন্য অপরাধ। কারণকন্যা সন্তান জন্ম কোন মানুষের কর্মের ফল নয়বরং তাও আল্লাহর দান। আল্লাহ যাকে চান কন্যা সন্তান দেন আবার যাকে চান পুত্র সন্তান দেন। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন,
لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ يَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ الذُّكُورَ ﴿49﴾ أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا وَيَجْعَلُ مَنْ يَشَاءُ عَقِيمًا إِنَّهُ عَلِيمٌ قَدِيرٌ ﴿50﴾
অর্থ, আসমান সমূহ ও যমীনের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে পুত্র ও কন্যা উভয়ই দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করেন। তিনি তো সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। [সূরা আশ-শূরা, আয়াত৪৯-৫০]
মুসনাদে আহমদে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
من كانت له أنثى فلم يئدها، ولم يهنها، ولم يؤثر ولده عليها أدخله الله تعالى الجنّة
অর্থকোন ব্যক্তির যদি একজন কন্যা সন্তান থাকে এবং সে তাকে হত্যা করেনিকোন প্রকার অবহেলা করেনি এবং পুত্র সন্তানকে কন্যা সন্তানের উপর কোন প্রকার প্রাধান্য দেয়নি। আল্লাহ তাকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। [মুসনাদে আহমদ: ২২৩/১]
ইবনে মাজা উকবা ইবনে আমের হতে বর্ণনা করেন,তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিতিনি বলেন,
من كان له ثلاث بناتٍ وصبر عليهنَّ، وكساهنَّ من جِدَته، كنَّ له حجاباً من النار
অর্থযে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান থাকবে এবং সে তাদের লালন- পালনে ধৈর্য্য ধারণ করে ও তাদের ভালো কাপড় পরায়তখন তারা তার জন্য জাহান্নামের আগুনের প্রতিবন্ধক হবে। [ইবনে মাজা৩৬৬৮]
ইমাম মুসলিম তার সহীহতে বর্ণনা করেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
من عال جاريتين حتى تبلغا، جاء يوم القيامة أنا وهو كهاتين وضمَّ أصابعه
অর্থযে ব্যক্তি দুই জন কন্যা সন্তান লালন- পালন করেকিয়ামতের আমি এবং সে দুটি আঙ্গুলের মত এক সাথে মিলেই উপস্থিত হব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙ্গুল দুটি মিলিয়ে দেখান। [সহিহ মুসলিম২৬৩১]
ইমাম আহমদ রহ. বর্ণনা করেনরাসুল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
من عال ابنتين أو ثلاث بنات، أو أختين، أو ثلاث أخوات، حتى يبلغن، أو يموت عنهنَّ، أنا وهو كهاتين وأشاربأصبعه السبابة
অর্থযে ব্যক্তি দুটি অথবা তিনটি কন্যা অথবা দুটি বোন বা তিনটি বোনকে তাদের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করেঅথবা তাদের মারা যাওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করেজান্নাতে আমি ও সে দুটি আঙ্গুলের মত মিলে মিশে থাকবো। রাসূল তার শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা বৃদ্ধা আঙ্গুলের দিকে ইশারা করে দেখিয়ে দেন। [মুসনাদে আহমদ১৪৭/৩]
ইমাম বুখারী আদাবুল মুফরাদ গ্রন্থে জাবের রা. হতে বর্ণনা করেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
 من كان له ثلاث بناتٍ يؤويهنَّ، ويكفيهنَّ، ويرحمهنَّ، فقد وجبت له الجنّة البتّة، فقال رجل من بعض القوم: وثنتين يا رسول الله؟ قال: وثنتين
অর্থযে লোকের তিন জন বাচ্চা থাকবে এবং সে তাদের যথাযত বরণ- পোষণলালন-পালন ও আদর-যত্ন সহকারে ঘড়ে তুলবেআল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতকে ওয়াজিব করে দেবে। এ কথা শোনে এ লোক দাড়িয়ে বললযদি দুইজন কন্যা সন্তান থাকেতা হলে কি বিধান হে আল্লাহর রাসূলতখন রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললদুই জন হলেও একই বিধান। (অর্থাৎ সেও এ ফজিলতের অধিকারী হবে) [বুখারি আদাবুল মুফরিদ;১৭৮]
وفي الصحيحين عن عائشة رضي الله عنها قالت: جاء أعرابي إلى النَّبيِّ فقال: أتقبِّلون صبيانكم؟ فما نقبِّلهم، فقال النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم : (( أو أملك لك أن نزع الله من قبلك الرحمة)).
অর্থবুখারী মুসলিমে আয়েশা র. হতে বর্ণিততিনি বলেনএকজন গ্রাম্য লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে বললেন তোমরা কি তোমাদের বাচ্চাদের চুমু দাওআমরা আমাদের বাচ্চাদের কখনোই চুমু দেই না। এ কথা শোনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,তোমার অন্তর থেকে যদি আল্লাহ তাআলা দয়া কেড়ে নিয়ে যায়আমি তা কখনোই বাধা দিয়ে রাখতে পারব না। [বুখারি আদাবুল মুফরিদ৫৯৯৬মুসলিম;২৩১৭]

দুই. মা হিসেবে একজন নারীর মর্যাদা:
একজন নারী যখন মা হয়তখন তাকে বিশেষ সম্মান ও অধিক মর্যাদা দেয়ার জন্য ইসলাম নির্দেশ দেয়। তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করাতাদের খেদমতে সর্বদা সচেষ্ট হওয়া এবং তাদের কল্যাণের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করান আদেশ দেয়। আর তাদের কোন প্রকার কষ্ট না দেয়া। তাদের সাথে সুন্দর ও সর্বোত্তম ব্যবহার করা। একজন ভালো সাথী সঙ্গীর সাথে যে ধরনের ভালো ব্যবহার করা হয় তাদের সাথেও সে ধরনের ব্যবহার করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا حَتَّى إِذَا بَلَغَ أَشُدَّهُ وَبَلَغَ أَرْبَعِينَ سَنَةً قَالَ رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَصْلِحْ لِي فِي ذُرِّيَّتِي إِنِّي تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّي مِنَ الْمُسْلِمِينَ ﴿15﴾
অর্থ, আর আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তা মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে তাকে প্রসব করেছে। তার গর্ভধারণ ও দুধপান ছাড়ানোর সময় লাগে ত্রিশ মাস। অবশেষে যখন সে তার শক্তির পূর্ণতায় পৌছে এবং চল্লিশ বছরে উপনীত হয়, তখন সে বলে, হে আমার রব, আমাকে সামথ্য দাও, তুমি আমার উপর ও আমার মাতা-পিতার উপর যে নিআমত দান করেছ, তোমার সে নিআমতের যেন আমি শোকর আদায় করতে পারি এবং আমি যেন সতকর্ম করতে পারি, যা তুমি পছন্দ কর। আর আমার জন্য তুমি আমার বংশধরদের মধ্যে সংশোধন করে দাও। নিশ্চয় আমি তোমার কাছে তাওবা করলাম এবং নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তভূর্ক্ত। [সূরা আল-আহকাফ: ১৫]
وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا ﴿23﴾ وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا ﴿24﴾
অর্থআর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যেতোমরা তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না। এবং পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়তবে তাদেরকে উফবল না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল। আর তাদের উভয়ের জন্য দয়াপরবশ হয়ে ডানা নত করে দাও এবং বলহে আমার রবতাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন। [সূরা আল-ইসরাআয়াত: ২৩-২৪]
 বুখারি মুসলিমে আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হল,
 يا رسول الله من أبرُّ؟ قال: أُمّك، قال: ثم من؟ قال: أمَّك، قال: ثم من؟ قال أباك
অর্থহে আল্লাহর রাসূল! সবচেয়ে বেশি ভালো ব্যবহারের উপযুক্ত লোকটি কেতিনি বললেনতোমার মালোকটি বললতারপর কেবললতোমার মা,লোকটি আবারো বললতারপর কেবললতোমার পিতা। [বুখারি আদাবুল মুফরিদ৫৯৭১মুসলিম৮৫]

ইমাম আবু দাউদ ও ইবনে মাজায় আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণনা করেনতিনি বলেনএক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হিজরত করার জন্য অঙ্গিকার করতে আসে। আর সে তার মাতা পিতাকে ক্রন্দনরত অবস্থায় রেখে আসছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলল,
 ارجع إليهما وأضحكهما كما أبكيتَهما
তুমি তাদের উভয়ের নিকট ফিরে যাও এবং তাদের যেভাবে তুমি কাঁদিয়েছিলেসেভাবে তাদের খুশি করিয়ে দাও। [আবুদাউদ২৫২৮ইবনে মাজাহ্‌;২৭৮২]
এতে প্রমাণিত হয় যেমাতা পিতার অসুন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ রেখে রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে হিজরতও করতে দেয়নি।
বুখারি মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ হতে বর্ণিত তিনি বলেনআমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা আল্লাহ তাআলার নিকট সর্বাধিক পছন্দনীয় আমল কোনটিউত্তরে তিনি বললেন,
 الصلاة على وقتها، قلت: ثم أيّ؟ قال: برُّ الوالدين، قلت: ثم أيّ؟ قال: الجهاد في سبيل الله
সময় মত সালাত আদায় করাআমি বললাম তারপর কোনটিতিনি বললেনমাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করাআমি বললাম তারপর কোনটিতিনি বললেনআল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। [বুখারি৫৯৭০মুসলিম৮৫]
মাতা-পিতাকে কষ্ট দেয়ার বিষয়ে ইসলাম সবোর্চ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছেযাতে তাদের কোন প্রকার কষ্ট দেয়া না হয়। তাদের কোন প্রকার কষ্ট না দেয়ার জন্য ইসলাম কঠিন-ভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের কোন প্রকার কষ্ট দেয়াকে মাতা-পিতার নাফরমানি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছেএবং যারা তাদের মাতা-পিতাকে কষ্ট দেয়তাদের কিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসা করা হবেবরং তাদের কষ্ট দেয়াকে কবিরা গুনাহ বলেও আখ্যায়িত করা হয়েছে।
বুখারি মুসলিমে আবু বকরা রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার বললেন,
 ألا أُنبِّئكم بأكبر الكبائر؟ ثلاثاً. قالوا: بلى يا رسول الله، قال: الإشراك بالله، وعقوق الوالدين، . وجلس وكان متّكئاً فقال: ألا وقولُ الزور ما زال يكرِّرها حتى قلنا: ليته سكت
 আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেবো সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ কি? ( এ কথাটি রাসূল তিনবার বলেছেন) তারা বললেনহা হে আল্লাহর রাসূল! তখন তিনি বললেনসবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহআল্লাহর সাথে শরীক করামাতা- পিতার নাফরমানি করা, [রাসূল হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেনতারপর তিনি উঠে বসে বললেনসাবধান! মিথ্যা কথা বলা] রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি বার বার বলছিলযার ফলে আমরা চাইতেছিলাম যদি রাসূল চুপ থাকত! [বুখারি৫৯৭৬মুসলিম৮৭]
ইমাম মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থে আলী রা. হতে বর্ণনা করেনতিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
 لعن اللهُ من لعن والديه
আল্লাহ তাআলার আযাব তার উপর যে তার মাতা পিতাকে অভিশাপ দেয় বা কষ্ট দেয়। [মুসলিম১৯৭৮]

তিন: একজন স্ত্রী হিসেবে নারীর অধিকার:
ইসলাম একজন নারী যখন কারো স্ত্রী হয়তখন তাকে স্ত্রী হিসেবে যথাযথ মর্যাদা দেয়া ও তার যাবতীয় অধিকারকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য স্বামীদের নির্দেশ দেয় এবং স্বামীর উপর তার কিছু অধিকার বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়।একজন স্ত্রীর সাথে উত্তম আচরণ করালেবাস পোশাকবরণ পোষণ ইত্যাদির ব্যবস্থা করা স্বামীর দায়িত্ব। তাদের সাথে বিনম্র ও কোমল ব্যবহার করাতাদের বিষয়ে সহনশীল হওয়া এবং অহেতুক তার সাথে দুর্ব্যবহার না করা। তাদের ব্যবহারের উপর ধৈর্য্য ধারণ করা। ইসলাম ঘোষণা করে যেতোমাদের মধ্যে সেই সর্বোত্তম ব্যক্তিযে তার পরিবার তথা স্ত্রীর নিকট উত্তম। একজন স্বামীর উপর কর্তব্য হলসে তার স্ত্রীকে দ্বীন শেখাবেতার সম্ভ্রমের হেফাযত করতে যথা সাধ্য চেষ্টা করবে। তারা যাতে কোন প্রকার ঘরের বাইরে যেতে না হয়তা জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করবে। তার সাথে কোন প্রকার দুর্ব্যবহার করবে না। স্ত্রীদের অধিকার সম্বলিত কুরআনের বিশেষ আয়াত:
وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ فَإِنْ كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا ﴿19﴾
অর্থআর তোমরা তাদের সাথে সদভাবে বসবাস কর। আর যদি তোমরা তাদেরকে অপছন্দ করতবে এমনও হতে পারে যেতোমরা কোন কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ তাতে তোমাদের জন্য অনেক কল্যাণ রাখবেন। [সূরা-নিসা: আয়াত১৯]
যাতে আল্লাহ তাআলা নারীদের অধিকারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। তাদের অধিকার বিষয়ে হাদিসের সংখ্যাও অনেকযাতে তাদের বিষয়ে সতর্কতা,তাদের অধিকার সম্পর্কে গুরুত্ব ও তাদের সাথে ভালো ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমনবুখারী ও মুসলিমে আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিততিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
استوصوا بالنساء خيراً، فإنَّ المرأة خُلقت من ضلعٍ أعوج، وإنَّ أعوج شيءٍ في الضلع أعلاه، فإن ذهبت تقيمه كسرته، وإن تركته لم يزل أعوج، فاستوصوا بالنساء
অর্থআর তোমরা নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার করকারণনারীদের পাঁজরের বাম হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছেআর পাঁজরের হাড়ের সবচেয়ে বাঁকা হাড় হলউপরি ভাগ। যদি তাকে ঠিক করতে যাও তাহলে তুমি ভেঙ্গে ফেললে আর যদি তুমি তাকে দিয়ে সংসার করতে চাও তাহলে বাঁকা অবস্থাতেই তোমাকে তার সাথে ঘর সংসার করতে হবে। [বুখারি আদাবুল মুফরিদ৩৩৩১মুসলিম১৪৬৮]

ইমাম নববী রহ. বলেনএ হাদিসে নারীদের সাথে বিনম্র ব্যবহারতাদের প্রতি দয়াতাদের চারিত্রিক ত্রুটি ও অসৌজন্য মূলক আচরণের উপর ধৈর্য ধারণ,তাদের জ্ঞান ও বুদ্ধি কম হওয়ার কারণে তারা যেসব খারাব আচরণ করে তা বরদাশত করাকারণ ছাড়াই তাদের তালাক না দেয়া ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আহমদআবু-দাউদতিরমিযি আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণনা করেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
أكملُ المؤمنين إيماناً أحسنُهم خلقاً، وخيارُكم خيارُكم لنسائهم
মুমিনদের মধ্যে পুরোপুরি ঈমানদার হল তোমাদের মধ্যে যারা আখলাকের দিক দিয়ে উত্তম। আর তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তোমাদের স্ত্রীদের নিকট উত্তম। [মুসলিম৫৭/১০]
ইমাম মুসলিম তার সহিহতে জাবের রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে বলেছেন:
فاتّقوا الله في النساء، فإنَّكم أخذتموهنَّ بأمانة الله، واستحللتم فروجهنَّ بكلمة الله، ولكم عليهنَّ أن لا يوطئن فرشكم أحداً تكرهونه فإن فعلن ذلك فاضربوهنَّ ضرباً غير مبرّح، ولهنَّ رزقهنّ وكسوتهنَّ بالمعروف
অর্থাৎ নারীদের বিষয়ে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর! কারণতোমরা তাদের আল্লাহর আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছআর আল্লাহর বাণীর দ্বারাই তোমরা তাদের হালাল করেছ। তাদের উপর তোমাদের বিষয়ে দায়িত্ব হলতারা খেয়াল রাখবে যাতে তোমাদের বিছানায় এমন কোন লোক না অবস্থান করে যাকে তোমরা অপছন্দ কর। যদি তারা এ ধরনের কোন কাজ করে তোমরা তাদের প্রহার কর। তবে তা হবে সহনীয় পর্যায়ে অমানবিক নয়। তাদের জন্য তোমাদের দায়িত্ব তোমরা তাদের রিযক দেবে বরণ পোষণ দেবে উত্তম উপায়ে। [মুসলিম: ১২১৮]
ইমাম মুসলিম তার সহিহতে আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণনা করেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لا يفْرك مؤمنٌ مؤمنةً، إن كره منها خلقاً رضي منها آخر
একজন মুমিন যেন অপর মোমিনকে কোন প্রকার ঘৃণা না করে। কারণযদি তোমাদের কারো নিকট তার একটি চরিত্র খারাব লাগেতার আরও অনেকগুলো দিক আছে যেগুলোর প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া যায়। [মুসলিম: ১৪৬৯]
ইমাম আহমদ আবু দাউদ ও তিরমিযি আয়েশা রা. হতে হাদিস বর্ণনা করেন তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
 إنَّما النساء شقائق الرجال
 নারীরা পুরুষদেরই অনুরূপ। [আহমদ;২৭৭/৬আবুদাউদ;২৩৬তিরমিযি১১৩]
অর্থাৎ স্বভাব-চরিত্রে নারীরা পুরুষদের সমতুল্য। তারা তাদেরই দৃষ্টান্ত। কারণহাওয়া আলাইহিসসালাম কে আদম আলাইহিসসালাম হতেই সৃষ্টি করেছেন। এ হাদিসে নারীদের সাথে উত্তম ব্যবহারতাদের প্রতি নম্রতাদয়া ও সুন্দর মোয়ামালা করার জন্য আহ্বান করা হয়েছে ও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

চার. ফুফুখালাবোন হিসেবে নারীর মর্যাদা:
ইসলাম বোনখালা ও ফুফুদের সাথে উত্তম ব্যবহারতাদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ করা এবং তাদের অধিকার বিষয়ে অবগত হওয়ার জন্য বিশেষ নির্দেশ দেয়। তাদের সাথে ভালো ব্যবহার ও তাদের সহযোগিতা করার কারণে তাদের অনেক সওয়াব ও বিনিময় দেয়ার কথাও ইসলাম ঘোষণা করে।
ইমাম বোখারি আদাবুল মুফরাদে এবং ইবনে মাজা মিকদাম ইবনে মাদি কারাব হতে হাদিস বর্ণনা করেনতিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে শুনেছেনতিনি বলেন,
إنَّ اللهَ يوصيكم بأمّهاتكم، ثمَّ يوصيكم بأمّهاتكم، ثمَّ يوصيكم بآبائكم، ثم يوصيكم بالأقرب فالأقرب .
আল্লাহ তাআলা তোমাদের মাতাদের বিষয়ে তোমাদের সতর্ক করেনতারপর আবারো তিনি তোমাদের মাতাদের বিষয়ে উপদেশ দেনতারপর তিনি তোমাদের পিতাদের বিষয়ে উপদেশ দেন। তারপর যারা তোমাদের অতি কাছের আত্মীয় তাদের বিষয়েতারপর যারা তোমাদের কাছের আত্মীয় তাদের বিষয়ে। [বুখারি৬০ইবনে মাযা ৩৬]
ইমাম তিরমিযি ও আবু দাউদ আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে হাদিস বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لا يكون لأحدٍ ثلاث بناتٍ، أو ثلاث أخوات فيحسن إليهنَّ إلاَّ دخل الجنّة
অর্থ, যদি কোন লোকের তিনটি কন্যা সন্তান অথবা তিনজন বোন থাকেতারপর সে তাদের প্রতি দয়া অনুগ্রহ করে লালন পালন করেআল্লাহ তাআলা তাকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাবে। [তিরমিযি১৯১২আবুদাউদ ৫১৪]
বুখারি মুসলিমে আয়েশা রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
الرحم شجنةٌ من الله، من وصلها وصله الله، ومن قطعها قطعه الله
আত্মীয়তা হলআল্লাহর পক্ষ হতে একটি বন্ধনযে ব্যক্তি তার সম্পর্ককে অটুট রাখে আল্লাহ তাআলা তার সাথে সম্পর্ক অটুট রাখবে আর যে তার সম্পর্কে বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহ তাআলা তার সাথে সম্পর্ককে চিহ্ন করে। [বুখারি৫৯৮৯মুসলিম;২৫৫৫]
বুখারি মুসলিমে আনাস রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
من أحبَّ أن يبسط له في رزقه، وأن ينسأ له في أثره، فليصل رحمه
 যে ব্যক্তি চায় যেআল্লাহ তাআলা তার জন্য তার রিজিকের মধ্যে বরকত দান করুক এবং তার ধন সম্পত্তি আরও বাড়িয়ে দিকসে যেন আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখে এবং নিকট আত্মীয়দের সাথে কোন ভাবে সম্পর্ক নষ্ট না করে। [বুখারি৫৯৮২মুসলিম;২৫৫৭]

এমনকি যদি কোন নারী অপরিচিতও হয়ে থাকে- তার সাথে কোন আত্মীয় বন্ধন না থাকেসেও যখন কোন বিপদে পড়ে অথবা তার কোন প্রয়োজন দেখা দেয়তাকেও সহযোগিতা করার প্রতি ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে করীমে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাদিসে এ ধরনের অসহায় নারী ও পুরুষদের সহযোগিতা করা এবং তাদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ করার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করেন এবং নারীদের সহযোগিতা করার উপর আল্লাহ তাআলা অনেক সাওয়াব ও বিনিময় ঘোষণা করেন।
বুখারি মুসলিমে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
 الساعي على الأرملة والمسكين كالمجاهد في سبيل الله، أو كالقائم الذي لا يفتر، أو كالصائم الذي لا يفطر
অসহায় দরিদ্র লোক ও বিধবা স্ত্রীলোকের সহযোগিতা করাআল্লাহর রাহে জিহাদ করার নামান্তর। অথবা বিরামহীন রাত জেগে ইবাদত-কারীর মত। অথবা সে রোজাদারদের মত যে কখনো রোজা ভঙ্গ করে না। [বুখারি৬০০৭মুসলিম;২৯৮২]
 এখানে ইসলাম নারীদের যে মান-মর্যাদা ও অধিকার দিয়েছেসে সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা কুরআন ও হাদিসের আলোকে তুলে ধরা হল। আর মনে রাখতে হবেইসলাম নারীদের যে অধিকার দিয়েছেতাদের প্রতি সহযোগিতাসহমর্মিতা ও সহানুভূতির যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেতার নূন্যতম অধিকারও অন্য কোন ধর্ম বা মতবাদে পাওয়া যায় না। যদি আল্লাহর এ মহান দ্বীন ছাড়া অন্য কোন ধর্মে এর সামান্যও নারীদের অধিকার দেয়া হত,তাহলেও আমরা আমাদের মনকে বুঝ দিতে পারতাম।

মুসলিম নারীদের বিষয়ে আত্ম-মর্যাদাবোধ

 ইসলাম মুসলিম নারীদের যে সম্মান দিয়েছেতার জ্বলন্ত প্রমাণ হলমুসলিমদের অন্তরে তাদের মেয়েদের বিষয়ে অত্যধিক আত্মসম্মানবোধকে সুদৃঢ় করে দিয়েছেন। বলা বাহুল্য যেএটি অবশ্যই একটি পছন্দনীয় ও মহান চরিত্রযা আল্লাহ তাআলা নিজেই একজন মুসলিমের অন্তরে গেঁথে দিয়েছেনযার ফলে একজন মুসলিম তাদের মেয়েদেরকে ঘর থেকে বের হতে ও একা একা সফর করতে ঘৃণার চোখে দেখে এবং তাদের পর্দা-হীনতাকে কোন ক্রমেই মেনে নেয় না। তারা তাদের নারীদের পুরুষদের সামনে যেতে ও তাদের সাথে অবাধ মেলা-মেশা করতে নিষেধ করে। নারীদের ইজ্জত সম্মান রক্ষায় তারা তাদের জীবনকে উৎসর্গ করতেও কোন প্রকার কুণ্ঠাবোধ করে না।
অপর দিকে যারা তাদের মা-বোনদের ইজ্জত সম্মান রক্ষার জন্য শত্রুর মোকাবেলা করেতাদের জন্য রক্ত বা জীবন দেয়ইসলাম তাদেরকে মুজাহিদ বলে আখ্যা দিয়েছে এবং যারা এ ধরনের কাজে নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেবে তাকে শহীদের মর্যাদা দেয়া হবে বলে ইসলাম জানিয়ে দিয়েছে। কারণ সাঈদ ইবনে যায়েদ হতে বর্ণিত তিনি বলেনআমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিতিনি বলেন,
 من قُتل دون ماله فهو شهيد، ومن قُتل دون دمه فهو شهيد، ومن قُتل دون دينه فهو شهيد، ومن قُتل دون أهله فهو شهيد
“যে ব্যক্তি তার সম্পদকে রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায় সে অবশ্যই শহীদআর যে ব্যক্তি তার দ্বীনের জন্য মারা যায়সেও শহীদ। আর যে ব্যক্তি তার পরিবারের হেফাযত করতে গিয়ে মারা যায় সেও শহীদ।” [আবু দাউদ৪৭৭২তিরমিযি ১৪২০]
শুধু তাই নয় বরং ইসলাম আত্মসম্মানবোধকে ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বলে আখ্যায়িত করেছে। মুগিরা ইবনে শুবা রা. হতে বর্ণিততিনি বলেন,সাঈদ ইবনে ওবাদা বলেনযদি আমি আমার স্ত্রীর সাথে কোন অপরিচিত পুরুষ দেখিতাহলে আমি কোন প্রকার কালক্ষেপণ না করে তাকে সাথে সাথে হত্যা করে ফেলব। তার কথাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে পৌছলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
تعجبون من غيرة سعد؟ لأنا أغير منه، واللهُ أغير مني، ومن أجل غيرة الله حرّم الفواحش ما ظهر منها وما بطن متفق عليه
“তোমরা সা‘আদ রা. এর আত্মসম্মান দেখে আশ্চর্য হচ্ছমনে রাখবে আমি তার চেয়েও বেশি আত্মসম্মানের অধিকারী। আল্লাহ তাআলা আমার চেয়ে আরও বেশি আত্মসম্মানের অধিকারী। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা প্রকাশ্য ও গোপনীয় যাবতীয় সকল অশ্লীল কাজকে হারাম করেছেন।” [বুখারি২৮৪৬মুসলিম;১৪৯৯]
 আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
إنَّ الله يغار، وإنَّ المؤمن. يغار، وإنَّ من غيرة الله أن يأتي المؤمن ما حرّم الله عليه متفق عليه
“আল্লাহ তাআলা আত্মসম্মানবোধের কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে থাকেন এবং একজন ঈমানদারও প্রতিবাদী হয়ে থাকে। আল্লাহর বিক্ষুব্ধতা বা ঘৃণার কারণ হল,একজন মুমিন বান্দা আল্লাহ তাআলা যা হারাম করেছেন তাতে লিপ্ত হয়ে পড়া।” [বুখারি৫২২৩মুসলিম;২৭৬১]
যাদের মধ্যে আত্মসম্মান ও আত্ম-মর্যাদাবোধ বলতে কিছু নেইতাদেরকে হাদিসের ভাষায় দাইয়ূস বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ যে তার পরিবারকে পরপুরুষের সাথে অন্যায় করতে দেখে তা স্বীকৃতি দেয়কোন প্রকার প্রতিবাদ করে না। এ ধরনের লোকদের বিষয়ে হাদিসে কঠিন হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। যেমন- আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিতরসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
 ثلاثةٌ لا ينظرالله عزّ وجلَّ إليهم يوم القيامة: العاقُّ لوالديه، والمرأة المترجّلة، والديوث رواه أحمد وغيره.
“আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির দিক কোন প্রকার ভ্রক্ষেপ করবেন নাএক- যে মাতা-পিতার নাফরমানি করেদুই-পর্দাহীন মহিলাতিন-যে পুরুষ তার স্ত্রীর অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়।” [মুসনাদে আহমদ১২৭]
ইতিহাসে অনেক ঘটনা পাওয়া যায়যাতে একজন মুসলিম তার মা বোনদের ইজ্জত রক্ষায় কি ধরনের আত্মসম্মানের পরিচয় দিয়েছে তার প্রমাণ মিলে। তাদের বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে কি ধরনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হততার অনেক দৃষ্টান্ত ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
এ বিষয়ে একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা আল্লামা ইবনুল জাওযী রহ. তার আল-মুন্তাযাম কিতাবে মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল-কাযী থেকে উল্লেখ করেন। তিনি বলেনদুইশত ছিয়াশি হিজরিতে আমি রাঈ নগরে মুসা ইবনে ইসহাকের মজলিসে উপস্থিত হই। তখন তার মজলিশে একজন মহিলা তার অভিভাবকদের নিয়ে উপস্থিত হল এবং অভিভাবকরা মহিলাটির স্বামীর নিকট মোহরানা হিসেবে পাঁচশত দিনার পাবে বলে দাবি করে। কিন্তু মহিলার স্বামী তা অস্বীকার করল। বিচারক মহিলার অভিভাবকদের বললতোমরা তোমাদের দাবির পক্ষে সাক্ষীদের উপস্থিত কর। তখন তারা বললহা আমরা সাক্ষী নিয়ে আসছি। সাক্ষীদের মধ্য হতে একজন সাক্ষী দাবি করলসে মহিলাটিকে দেখবেযাতে সাক্ষ্য দেয়ার সময় মহিলার দিকে ইশারা করে কথা বলতে পারে। ফলে একজন সাক্ষী দাড়িয়ে মহিলাকে সম্বোধন করে বললতুমি দাড়াও এবং সবার সামনে এসে যাও। এ কথা শোনে মহিলাটির স্বামী দাড়িয়ে বললতোমরা কি বলছসে বললতারা তোমার স্ত্রীকে দেখবেযাতে তারা যার পক্ষে সাক্ষী দিচ্ছেতাকে ভালোভাবে চিনতে পারে। তখন স্বামী বললহে কাজী সাহেব আমি সাক্ষী দিচ্ছি যেআমার স্ত্রী আমার নিকট যে মোহর দাবি করছেসত্যি সত্যি সে আমার নিকট তা পাবে। আমি তার দাবি অনুযায়ী অল্পদিনের মধ্যে তার দেনা দিয়ে দেব। তবে সে তার চেহারা খুলবে না এবং লোক সম্মুখে সে উপস্থিত হবে না। তারপর মহিলাটি তার স্বামীর বিষয়ে সত্য কথাটি বললএবং জানিয়ে দিয়ে বলল যেআমি কাজীকে সাক্ষ্য রেখে বলছিআমি আমার পাওনা মোহরানা আমার স্বামীকে দান করে দিলাম এবং দুনিয়াও আখেরাতে আমি তাকে দায়মুক্ত বলে ঘোষণা করলাম। এ দৃশ্য দেখে কাজী-বিচারক বললএ ঘটনাকে ইতিহাসে উন্নত চরিত্রের অন্যতম দৃষ্টান্ত হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হবে।
মূলত ঘটনাটি উন্নত চরিত্রের অন্যতম একটি দৃষ্টান্তউন্নত শিষ্টাচার ও মূল্যবান উপদেশমূলক। আমরা বলব তারা কোথায় আজ যারা তাদের মা বোনদের ইজ্জত রক্ষায় এগিয়ে আসছে না এবং তাদের পরিবারের লোকেরা যখন অন্যায় অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয়তখন তারা তার কোন প্রতিবাদ করে না।

ইসলাম নারীদের মুক্তিদাতা

যারা ইসলামের বিধি-বিধান ও ইসলামি আদর্শ সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করবেসে অবশ্যই দেখতে পাবে যে মূলত: ইসলামই নারীদের যুলুম- নির্যাতন থেকে রক্ষা করছে ও তাদের ফিতনা- ফ্যাসাদ হতে মুক্তি দিয়েছে। একজন নারী ইসলামের অনুশাসনের আওতায় ও ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে অত্যন্ত পবিত্রউন্নত ও সন্তোষজনক জীবন যাপন করে। ইসলামী অনুশাসন মেনে যারা জীবন যাপন করবে তাদের জীবন হবে সুন্দরক্লেশ-মুক্ত ও পরিচ্ছন্ন। থাকবে না কোন অশান্তিবিশৃঙ্খলা ও দূষণ। কোন ষড়যন্ত্র তাদের স্পর্শ করতে পারবে না। ইসলামের পূর্বে জাহিলিয়্যাতের যুগের নারীদের অবস্থা কেমন ছিলইসলামের যুগের নারীদের অবস্থা সম্পর্কে পর্যালোচনা করলে দুয়ের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হবে।
ইমাম বুখারী তার সহিহতে ওরওয়া ইবনে যুবাইর রা. হতে বর্ণনা করেন যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী আয়েশা রা. বলেন,
روى البخاري في صحيحه عن عروة بن الزبير: أنَّ عائشة رضي الله عنها زوج النَّبيِّ أخبرته: أنَّ النكاح في الجاهلية كان على أربعة أنحاء: فنكاح منها نكاح الناس اليوم، يخطب الرَّجلُ إلى الرَّجل وليته أو ابنته فيصدقها ثم ينكحها، ونكاح آخر كان الرجل يقول لامرأته إذا طهرت من طمثها: أرسلي إلى فلان فاستبضعي منه، ويعتزلها زوجها ولا يمسُّها أبداً حتى يتبين حملها من ذلك الرجل الذي تستبضع منه، فإذا تبين حملُها أصابها زوجها إذا أحبَّ، وإنَّما يفعل ذلك رغبة في نجابة الولد، فكان هذا النكاح نكاحَ الاستبضاع، ونكاح آخر يجتمع الرَّهط دون العشرة، فيدخلون على المرأة كلُّهم يصيبها، فإذا حملت ووضعت ومرَّ ليل بعد أن تضع حملها أرسلت إليهم، فلم يستطع رجل منهم أن يمتنع، حتى يجتمعوا عندها تقول لهم: قد عرفتم الذي كان من أمركم، وقد ولدت، فهو ابنك يا فلان، تسمِّي من أحبَّت باسمه، فيلحق به ولدها، ولا يستطيع أن يمتنع عنه الرجل، والنكاح الرابع يجتمع الناس الكثيرون، فيدخلون على المرأة لا تمنع من جاءها وهنَّ البغايا، كنَّ ينصبن على أبوابهنَّ الرايات تكون علَماً، فمَن أرادهنَّ دخل عليهنَّ، فإذا حملت إحداهنَّ ووضعت حملها جمعوا لها، ودعوا لهم القافة، ثم ألحَقوا ولدَها بالذي يرون، فالتاطته به، ودُعي ابنه لا يمتنع من ذلك، فلمَّا بُعث محمد بالحقِّ هدم نكاح الجاهلية كلِّه إلاَّ نكاح الناس اليوم
“জাহিলিয়্যাতের যুগে বিবাহ ছিল চার প্রকার: -
এক- বর্তমানে মানুষ যেভাবে বিবাহ করে- কোন ব্যক্তি কারো অভিভাবক অথবা কোন মেয়ের নিকট বিবাহের প্রস্তাব করে। তারপর সে তাকে মোহরানা দিয়ে বিবাহ করে।
দুই- স্বামী তার স্ত্রীকে বলততুমি তোমার অপবিত্রতা হতে পবিত্র হলে অমুকের নিকট গিয়ে তার কাছ থেকে তুমি উপভোগ করার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ কর। তারপর তার স্বামী তাকে সম্পূর্ণ আলাদা করে রাখত এবং যতদিন পর্যন্ত ঐ লোক যার সাথে সে যৌনাচারে লিপ্ত হয়েছিলতার থেকে গর্ভধারণ না করা পর্যন্ত সে তাকে স্পর্শ করত না। আর যখন সে গর্ভধারণ করততখন চাইলে সে তার সাথে সংসার করত। অথবা ইচ্ছা করলে সে নাও করতে পারত। আর তাদের এ ধরনের অনৈতিক কাজ করার উদ্দেশ্য হলযাতে তাদের গর্ভে যে সন্তান আসবে তা যেন মোটা তাজা ও সুঠাম দেহের অধিকারী হয়। এ বিবাহকে জাহিলি যুগে নিকাহে ইস্তেবযা বলে আখ্যায়িত করা হত।
তিন- দশজনের চেয়ে কম সংখ্যক লোক একত্র হততারা সকলেই পালাক্রমে একজন মহিলার সাতে সঙ্গম করত। সে তাদের থেকে গর্ভধারণ করার পর যখন সন্তান প্রসব করত এবং কয়েকদিন অতিবাহিত হততখন সে প্রতিটি লোকের নিকট তার কাছে উপস্থিত হওয়ার জন্য খবর পাঠাত।
 নিয়ম হলসে যাদের নিকট সংবাদ পাঠাতো। নিয়ম হল সে যাদের নিকট সংবাদ পাঠাতো তাদের কেউ তা অস্বীকার করতে পারতো না। ফলে তারা সকলে তার সামনে একত্র হত। তখন সে তাদের বলত তোমরা অবশ্যই তোমাদের বিষয়ে অবগত আছ। আমি এখন সন্তান প্রসব করছি এর দায়িত্ব তোমাদের যে কোন একজনকে নিতে হবে। তারপর সে যাকে পছন্দ করত তার নাম ধরে তাকে বলত এটি তোমার সন্তান। এ ভাবেই সে তার সন্তানকে তাদের একজনের সাথে সম্পৃক্ত করে দিত। তখন লোকটি তাকে কোন ভাবেই নিষেধ করতে পারত না।
চার- অসংখ্য মানুষ কোন এক মহিলার সাথে যৌন কর্মে মিলিত হত। তার অভ্যাস ছিল যেইতার নিকট আসতো সে কাউকে নিষেধ বা বাধা দিত না। এ ধরনের মহিলারা হলব্যভিচারী মহিলা। তারা তাদের দরজায় নিদর্শন স্থাপন করতযাতে মানুষ বুঝতে পারত যেএখানে কোন যৌনাচারই মহিলা আছে যে কেউ ইচ্ছা করে সে তার নিকট প্রবেশ করতে পারে। তারপর যখন তারা গর্ভবতী হত এবং সন্তান প্রসব করততারা সবাই তার নিকট একত্র হত,এবং একজন গণককে ডাকা হত। সে যাকে ভালো মনে করততার সাথে সন্তানটিকে সম্পৃক্ত করে দিত এবং তাকে তার ছেলে বলে আখ্যায়িত করা হতো। নিয়ম হল গণক যাকে পছন্দ করবে সে তাকে অস্বীকার করতে পারতো না।
এভাবেই চলতে ছিল আরবদের সামাজিক অবস্থা ও তাদের নারীদের করুণ পরিণতি। তারপর যখন রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সত্যের বাণী দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করা হলরাসূল জাহিলিয়্যাতের যুগের সব বিবাহ প্রথাকে বাদ দিলেন এবং একমাত্র বর্তমানে প্রচলিত বিবাহকে তিনি স্বীকৃতি দিলেন।” [বুখারি৫১২৭]
এ ছাড়াও জাহিলি যুগে নারীদের চতুষ্পদ জন্তু ও পণ্যের মত বাজারে বিক্রি করা হততাদের ব্যভিচার ও অনাচারের উপর বাধ্য করা হততাদের সম্পদের মালিক হত কিন্তু তারা মালিক হত নাতারা নিজেরা অন্যের মালিকানায় থাকত কিন্তু তারা নিজেরা মালিক হত না। তাদের স্বামীরা তাদের ধন সম্পত্তিতে ব্যয় করতে পারত কিন্তু তারা তাদের স্বামীদের সম্পত্তিতে কোন প্রকার ব্যয় করতে পারতো না। এমন কি বিভিন্ন দেশে পুরুষরা এ নিয়ে মতবিরোধ করতো যেনারীরা কি রক্তে মাংসে গড়া পুরুষের মতই মানুষ না অন্য কোন বস্তুতাদের এ তাদের এ মতবিরোধের প্রেক্ষাপট পারস্যের একজন সমাজ বিজ্ঞানী এ সিদ্ধান্ত দেন যেনারীরা কোন মানুষ নয় তারা এক প্রকার জীব যাদের কোন আত্মা বা স্থায়িত্ব বলতে কিছু নাই। তবে তাদেরও গোলামী করা ও খেদমত করা কর্তব্য। তারা তাদের বোবা উট ও কুকুরের মত বোবা বানিয়ে রাখতো যাতে তারা কোন কথা বলতে না পারে এবং হাসা হাসি করতে না পারে। কারণতারা হল শয়তানের মন্ত্র।
তাদের নিয়মের সবচেয়ে মারাত্মক দিক হলবাব তার মেয়েকে বিক্রি করতএর চেয়ে আরও আশ্চর্য হলপিতার জন্য তার মেয়েকে হত্যা করা এমনকি জীবন্ত প্রোথিত করারও অধিকার আছে। তাদের মধ্যে কতক আরবদের বিধান ছিল নারীদের যদি হত্যা করা হয়তাহলে পুরুষের উপর কোন কিসাস বা দিয়াত দিতে হবে। তাদের সমাজে নারীদের প্রতি এত বেশি যুলুম নির্যাতন করা হততাতে নারীদের জীবনের কোন মূল্য ছিল না তাদের জীবনটা ছিল বিষাক্ত এবং তিক্ততাপূর্ণ। এখন পর্যন্ত ইসলামের আদর্শের বাহিরে গিয়ে যারা জীবন যাপন করছেবর্তমানে তারা অসহনীয় এক যন্ত্রণার মধ্যে জীবন যাপন করছে। তারা অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে আছে। যার ফলে অমুসলিম নারীরা তাদের জীবনের প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে এ কামনা করছে যেযদি আমরা মুসলিম সমাজে বসবাস করতে পারতাম।
একজন বিখ্যাত লেখক মাস আতুরদবলেআমাদের মেয়েদের জন্য ঘরের বাহিরে গিয়ে বিভিন্ন কল কারখানায় কাজ করা হতে তারা তাদের নিজ গৃহে অবস্থান করে ঘরের কাজকর্ম সমাধান করা অনেক উত্তম। কারণনারীরা যখন ঘরের বাহিরে যায় তখন তাদের জীবনের সৌন্দর্য চিরতরে ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি আরও বলেনআফসোস যদি আমাদের দেশ মুসলিম দেশের মত হততাহলে কতনা ভালো হত! মুসলিম দেশে নারীরা পবিত্র ও ইজ্জত-সম্মানের অধিকারী। তাদের ইজ্জত সম্মানের উপর কোন আঘাত আসে না। তাদের সাথে ঘরের সন্তানদের সাথে যে ধরনের আচরণ করা তাই করা হয়ে থাকে। আমাদের ইংলিশ দেশের জন্য এর চেয়ে খারাব আর কি হতে পারে আমরা আমাদের নারীদের নাপাকের দৃষ্টান্ত বানিয়ে রেখেছিলাম। আমাদের এ ধরনের করুণ পরিণতি কেনআমরা কেন আমাদের মেয়েদের জন্য এমন ধরনের কাজ নির্ধারণ করি না যা তাদের স্বভাবের সাথে মিলে। যেমন তারা ঘরের কাজগুলো আঞ্জাম দেবেবাচ্চাদের লালন পালন করবেপুরুষদের খেদমত করবে ইত্যাদি এবং পুরুষরা যেসব কাজ করে তা হতে তারা সম্পূর্ণ বিরত থাকবে। এতে তাদের ইজ্জত সম্মান ঠিক থাকবে এবং তাদের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকবে।

ইসলাম নারীদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি

 ইসলাম নারীদের জন্য এমন সব নিয়মনীতি ও বিধি নিষেধ দিয়েছেনযা পালন করলে একজন নারী তার পবিত্রতা রক্ষা করতে সক্ষম হয়সতীত্ব ঠিক থাকে এবং ইজ্জত সম্মান রক্ষা পায়। আল্লাহ তাআলা নারীদের পর্দা করার নির্দেশ দেনতাদের ঘরে অবস্থান করার নির্দেশ দেনতাদের নগ্ন-পর্দাহীন,সুগন্ধি লাগিয়ে ও সেজে-গুজে ঘর থেকে বের হতে ও কোথা সফর করতে নিষেধ করে। এছাড়াও নারী পুরুষের এক সাথে মেলা মেশাতাদের সাথে পর্দাহীন কথাবার্তা থেকে নিষেধ করেন।
আর এসব আদেশ নিষেধ ও বিধি-বিধান এ জন্য রাখা হয়েছে যাতে নারীরা তাদের ফিতনা ফ্যাসাদঅশ্লীল কার্যকলাপহতে রক্ষা করতে পারে। তাদের সতীত্বের উপর যাতে কোন প্রকার আঘাত না আসে। আল্লাহ তাআলা নারীদের সম্ভ্রম রক্ষায় যে সব বিধি বিধান আরোপ করেছে তা নিম্নরূপ:

এক. পর্দা:
এর অর্থ হলনারীরা তাদের পুরো শরীর ও হাত-পা চেহারা ডেকে রাখবেযাতে অপরিচিত কোন লোক তাদের শরীরের কোন অঙ্গ দেখতে না পায়। তাদের সৌন্দর্য অবলোকন করতে না পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا ﴿59﴾
অর্থ, হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে কন্যাদেরকে ও মুমিনদেরকে মুমিনদের নারীদেরকে বল, তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [আহযাব: আয়াত, ৫৯]
وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ وَمَا كَانَ لَكُمْ أَنْ تُؤْذُوا رَسُولَ اللَّهِ وَلَا أَنْ تَنْكِحُوا أَزْوَاجَهُ مِنْ بَعْدِهِ أَبَدًا إِنَّ ذَلِكُمْ كَانَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمًا ﴿53﴾
অর্থআর যখন নবীপত্নীদের কাছে তোমরা কোন সামগ্রী চাইবেতখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবেএটি তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র। আর আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তার (মৃত্যুর) পর তার স্ত্রীদেরকে বিয়ে করা কখনো তোমাদের জন্য সঙ্গত নয়। নিশ্চয় এটি আল্লাহর কাছে গুরুতর অপরাধ। [আহযাব আয়াত ৫৩]

দুই. কোন প্রকার প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাহিরে যাওয়া নিষিদ্ধ:
আল্লাহ তাআলা বলেন,
 وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى الأحزاب، آية ٣٣
অর্থ, আর তোমরা তোমাদের নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না।
ইমাম তিরমিযি তার সূনানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেনতিনি বলেন,
المرأة عورة، فإذا خرجت استشرفها الشيطان
অর্থনারীরা হললজ্জাবতী তারা যখন ঘর থেকে বের হয় শয়তান তাদের দিকে মাথা উচু করে দেখে। [তিরমিযি: ১১৭৩]

তিন. কোন প্রয়োজনে কারো সাথে কথা বলতে হলে যেন কর্কশ ভাষায় কথা বলেতাদের সাথে নরম ও কোমল ভাষায় কথা বলবে না:
আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا ﴿32﴾
তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বল না। তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায় সংগত কথা বলবে। [আহযাব;৩২]

চার. কোন পুরুষের সাথে একান্ত হতে পারবে না:
বুখারি মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
 لايخلونَّ رجل بامرأة إلاَّ مع ذي محرم
অর্থকোন পুরুষ যেন কোন মহিলার সাথে মুহরিম ছাড়া একাকার না হয়। [বুখারি৫২৩৩ ও মুসলিম১৩৪১]

পাঁচ. পুরুষদের সাথে মেলা-মেশা করা হতে বিরত থাকবে:
 হাদিস দ্বারা প্রমাণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
 خير صفوف النساء آخرها، وشرُّها أولها
অর্থমহিলাদের জন্য উত্তম কাতার হলশেষ কাতার আর ক্ষতিকর কাতার হলপ্রথম কাতার। [মুসলিম৪৪০]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত আদায় করতে মসজিদে যায় তখন আদেশ দেন যাতে তারা পুরুষদের সাথে মিশে। সুতরাং মসজিদের বাইরে তাদের সাথে মেশার কোন অবকাশই থাকে না। নারীর পুরুষের সাথে মেলা-মেশা করলে অনেক ক্ষতি ও বিপদের সম্ভাবনা থাকে। পূর্বে এ বিষয়ে কিছু আলোচনা করা হয়েছে।

ছয়. মুহরিম ছাড়া কোথাও সফর করতে যাবে না:
ছহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لا يحلُّ لامرأة أن تسافر إلاَّ ومعها ذو محرم منها
অর্থএকজন নারীর জন্য তার মুহরিম ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া হালাল নয়। [মুসলিম১৩৩৮]

সাত. ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সাজ সজ্জা ও সুগন্ধি লাগিয়ে বের হবে না:
 ইমাম মুসলিম তার সহিহতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেনতিনি বলেন,
إذا شهدت إحداكنَّ المسجدَ فلا تَمسَّ طيباً
তোমাদের নারীদের থেকে কেউ যদি মসজিদে আসে সে যেন কোন ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার না করে। [মুসলিম৪৪৩]
ইমাম আহমদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেনতিনি বলেন,
أيما امرأة استعطرت ثم خرجت،فمرَّت على قوم ليجدوا ريحها فهي زانية، وكلُّ عين زانية
যদি কোন নারী সুগন্ধি ব্যবহার করে ঘর থেকে বের হয়অত: পর সে মানুষ যাতে তার থেকে সুগন্ধি অনভব করে সে জন্য সে মানুষের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেতা হলে সেও একজন ব্যভিচারিনী। এবং তার প্রতিটি দৃষ্টি ব্যভিচারী। [আহমাদ৪১৮]

আট. তার দিকে কোন পুরুষলোক তাকালে তার প্রতি কোন ভ্রূক্ষেপ করবে না:
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরানে বলেন,
وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ
আর তারা যে নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পাদচারণা না করে। [সূরা আন-নূর: ৩১]

নয়. পুরুষদের দিকে তাকানোর থেকে দৃষ্টি অবনত রাখবে:
নারীরা পুরুষদের দিকে তাকাবে না। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারিমে এরশাদ করেন,
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا )
আর মুমিন নারীদেরকে বলতারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জা-স্থানের হিফাজত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। [সূরা আন-নূর: ৩১]

দশ. আল্লাহর ইবাদত ও তার নির্দেশাবলীর হেফাযত করবে।
وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآَتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا ﴿33﴾
আর তোমরা সালাত কায়েম করযাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর। হে নবী পরিবারআল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। [সূরা আন-নূর: ৩৩]

আল্লাহ তাআলা নারীদের জন্য যেসব বিধি-বিধান দিয়েছেতা সবই নারীদের নিরাপত্তা ও তাদের মান সম্মানের হেফাযত করার জন্যই দিয়েছেন। সুতরাং,এ কথা বলা বাহুল্য যেআল্লাহ তাআলার নেয়ামত অনুগ্রহ নারীদের উপর অসংখ্য ও অনেক বেশি। ফলে ইসলামের মধ্যেই তাদের জন্য নিহিত রয়েছে তাদের কল্যাণ। একমাত্র ইসলামই নিশ্চিত করছে তাদের নিরাপত্তা এবং গ্যারান্টি দিয়েছে তাদের মান মর্যাদা রক্ষার। ইসলাম নারীদের থেকে যাবতীয় ফিতনা ফ্যাসাদ দূর করেছেযাতে তারা দুনিয়াতে পুত-পবিত্র জীবন যাপন করতে পারে এবং তারা যাতে কোন প্রকার ধ্বংস বিপদ ও নিরাপত্তা হীনতার সম্মুখীন না হতে হয়। ইসলাম তাদের রক্ষা করে সব ধরনের ভ্রান্তিবিকৃতি ও ভ্রষ্টতা হতে।

হাঁইসলাম একজন মুসলিম নারীকে সর্বাধিক সম্মানে ভূষিত করেছেতাকে সর্বোত্তম নিরাপত্তা দিয়েছে এবং ইসলাম তার জন্য পুত-পবিত্র জীবনের দায়িত্ব নিয়েছে। তার নিদর্শন হলপবিত্রতাআলামত হলপরিশুদ্ধতা আর ঝাণ্ডা হলউত্তম চরিত্র ও উন্নত সংস্কৃতি। একজন নারী যতক্ষণ পর্যন্ত দ্বীন ইসলামকে আঁকড়ে ধরে রাখবেআল্লাহর দেয়া বিধান মেনে চলবেনবীর অনুকরণ করবেইসলাম ও শরীয়তের বিধানের উপর অটল বিশ্বাস রাখবেততক্ষণ পর্যন্ত সে আত্ম-মর্যদাশীলউন্নত চরিত্রের অধিকারী ও উত্তম জাতি হিসেবেই পরিগণিত হবে। এতে সে দুনিয়াতে সফলতা ও প্রশান্তি লাভ করবে আর কিয়ামতের দিন মহান ছাওয়াব ও বিনিময়ের অধিকারী হবে। ইমাম আহমদ আব্দুর রহমান ইবনে আওফ হতে বর্ণনা নকল করেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إذا صلَّت المرأة خَمسَها، وصامت شهرها، وحصنت فرجها، وأطاعت بعلَها، دخلت من أيِّ أبواب الجنَّة شاءت
অর্থনারীরা যখন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবেরমযানের রোজা রাখবেলজ্জা স্থানের সংরক্ষণ করবেএবং স্বামীর অনুকরণ করবেজান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে চায়সে প্রবেশ করতে পারবে। [সহীহ ইবন হিব্বান৪১৬৩]

 হাদিসে নারীদের জন্য জান্নাতের পথকে কতই না সহজ করা হয়েছে। একজন নারী যখন উল্লেখিত দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন যাপন করবেতখন তার জন্য জান্নাতের সব দরজাগুলো খুলে দেয়া হবে।
وَاللَّهُ يُرِيدُ أَنْ يَتُوبَ عَلَيْكُمْ وَيُرِيدُ الَّذِينَ يَتَّبِعُونَ الشَّهَوَاتِ أَنْ تَمِيلُوا مَيْلًا عَظِيمًا ﴿27﴾
আর আল্লাহ চান তোমাদের তওবা কবুল করতে। আর যারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তারা চায় যেতোমরা প্রবলভাবে (সত্য পথ থেকে) বিচ্যুত হও। [সূরা আন-নিসা: আয়াত-২৭]

 অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলবর্তমান যুগে মুসলিম নারীরা গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার। ইসলামের শত্রুরা আজ তাদেরকে ষড়যন্ত্রের জাল হিসেবে ব্যবহার করছে। প্রগতিবাদনারী-স্বাধীনতাসমান অধিকার ইত্যাদি ভুয়া শ্লোগান তুলে নারীদেরকে তাদের লক্ষবস্তুতে পরিণত করছে। তাদের ইজ্জতসম্মান,আত্মমর্যাদা ও পবিত্রতা ধ্বংসের নিমিত্তেতারা ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে নানাবিধ অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা আজ পর্দার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে,নারীদের ঘর থেকে বের করে রাস্তায় নামিয়ে নারী ও পুরুষের অবাধ মেলামেশাকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমপেপার পত্রিকাবাদ্যযন্ত্র,ইত্যাদিতে নারীদের বিভিন্ন ধরনের উলঙ্গ ও নোংরা ছবি প্রদর্শন করার মাধ্যমে আজ তাদের কলঙ্কিত করছে। এসব দেখে মুসলিম নারীরাও আজ ঘরে থাকতে অনীহা প্রকাশ করছে। তারা বিজাতিইয়াহুদি ও খৃষ্টানদের অনুকরণ করতে আরম্ভ করছে। পর্দাকে তারা আজ তাদের উন্নতির পথে বাধা এবং আল্লাহর দেয়া বিধানকে তারা তাদের জন্য জেলখানার শিকল মনে করছে। এর পরিণতি যে কত খারাব হচ্ছেতা যে কোন সুবিবেচক বলতেই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।

বিশেষ সতর্কতা

 বর্তমানে যারা আল্লাহর দেয়া বিধি-বিধান— যাতে নারীদের জন্য রয়েছে শুধুই কল্যাণইজ্জত-সম্মান রক্ষার পুরোপুরি গ্যারান্টি ও সুখী সমৃদ্ধ জীবনের সম্পূর্ণ নিশ্চয়তা— তার কোন তওয়াক্কা না করেষড়যন্ত্রকারীরা নারীদের কোমলতাসরলতা ও জ্ঞান-বুদ্ধির দুর্বলতাকে পুঁজি করেতাদের ঘর থেকে বের করে আনছেতাদের রাস্তায় নামিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং তাদের ক্ষমতার বাইরে কিছু দায়িত্ব তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। তাদের এমন বিপর্যয়ের দিকে টেনে আনা হচ্ছেযার ভয়াবহতাকরুণ পরিণতি ও ক্ষতি সম্পর্কে তারা আদৌ অবগত নয়।
বর্তমানে আলেম-ওলামাসত্যিকার দা‘য়ী ও সত্যবাদীরা নারীদের এ সব বিপর্যয় ও মহামারি হতে রক্ষা করার জন্য তাদের কোমর চেপে ধরছে এবং তাদের বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নারীরা যাতে তাদের স্বকীয়তা ও ঐতিহ্য বজায় রাখতে পারে এবং মারাত্মক অবনতি হতে নিরাপদ থাকেসে জন্য তারা নিরলস-ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের গবেষণা ও ফতওয়া বিভাগ থেকে ২৫/১/১৪২০ হি.-তে নারীদের উদ্দেশ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা প্রকাশ করা হয়েছে। নারীদের প্রবন্ধটির বিষয়বস্তুটি জানা থাকাটা খুবই জরুরি। তাই তাদের ফতওয়াটিকে এখানে উল্লেখ করা উপযুক্ত মনে করছি :—

“সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য এবং সালাত ও সালাম আল্লাহর প্রেরিত রাসূলের উপর ও তার পরিবারবর্গসাহাবীদের উপর যারা ছিল তার নির্দেশিত পথের পথিক ও এ দীনের ধারক বাহক।
“এ কথা আমাদের কারোই অজানা নয় যেনারীরা ইসলামের ছায়াতলে কী-রকম জীবন যাপন করছে এবং তারা যে কতটা নিরাপদে আছে। বিশেষ করে আমাদের এ-দেশে (সৌদি আরবে) নারীদের যথেষ্ট সম্মান দেয়া হয়ে থাকেআমাদের এখানে তাদের জন্য উপযুক্ত কাজের ব্যবস্থা আছে এবং শরী‘আত অনুমোদিত সব ধরনের অধিকার তারা ভোগ করতে থাকে। পক্ষান্তরে নারীরা জাহেলি যুগে যে কতটা অমানবিক ও অসহনীয় নির্যাতনের স্বীকার হততা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। বর্তমান অমুসলিম রাষ্ট্রেও নারীরা অত্যন্ত নির্মমঅমানবিক ও অসহায় অবস্থায় জীবন যাপন করে।
“এটি আল্লাহ তাআলার বড় একটি নেয়ামত যার উপর আমাদের শুকরিয়া আদায় করা উচিত। আমাদের কর্তব্য হলআল্লাহর দেয়া নেয়ামতের যথার্থ মূল্যায়ন করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলবর্তমানে এক শ্রেণির লোক আছেযাদের চিন্তা চেতনা পশ্চিমাদের চিন্তা চেতনারই ধারক-বাহক এবং তাদের সভ্যতা-সংস্কৃতির অন্ধ-অনুসারী। তারা আমাদের দেশের নারীরা যেভাবে পর্দাশীললজ্জাবতীও নিরাপদে থাকে তার উপর তারা সন্তুষ্ট নয়। তারা চায় যে,আমাদের দেশের নারীরাও যেন পশ্চিমাধর্মহীন ও বিধর্মী দেশের নারীদের মত রাস্তায় বের হোকবেপর্দা হয়ে ঘুরে বেড়াক এবং পুরুষদের সাথে অবাধে চলাফেরা করুক। ফলে তারা বিভিন্ন পেপার-পত্রিকায় নারীদের নিয়ে অশালীন লেখালেখি করে এবং নারীদের নামে তারা বিভিন্ন ধরনের দাবি দাওয়া উত্থাপন করে। নিম্নে এর কয়েকটি বিষয় আলোচনা করা হল,

এক. পর্দার বিরোধিতা করা : 
আল্লাহ নারীদের পর্দা করার যে নির্দেশ দিয়েছে তারা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। পর্দা যা নারীদের সম্ভ্রম ও ইজ্জতের গ্যারান্টি তার বিরুদ্ধে তারা অব্যাহত অপপ্রচার চালায় এবং পর্দা করা যাতে মুসলিম সমাজে না থাকে তার বিরুদ্ধে তারা নানাবিধ শ্লোগান আবিষ্কার করছে। পর্দা করা যেফরয তা কুরআন ও হাদিস দ্বারাই প্রমাণিত। আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا
 হে নবীতুমি তোমার স্ত্রীদেরকে কন্যাদেরকে ও মুমিনদেরকে বলতারা যেন তাদের জিল-বাবের কিছু অংশ নিজদের উপর ঝুলিয়ে দেয়তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে।ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। [সূরা আল-আহযাব: ৫৯]
وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ وَمَا كَانَ لَكُمْ أَنْ تُؤْذُوا رَسُولَ اللَّهِ وَلَا أَنْ تَنْكِحُوا أَزْوَاجَهُ مِنْ بَعْدِهِ أَبَدًا إِنَّ ذَلِكُمْ كَانَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمًا ﴿53﴾
আর যখন নবী পত্নীদের কাছে তোমরা কোন সামগ্রী চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবেএটি তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র। আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তার (মৃত্যুর) পর তার স্ত্রীদেরকে বিয়ে করা কখনো তোমাদের জন্য সঙ্গত নয়। নিশ্চয় এটি আল্লাহর কাছে গুরুতর পাপ। [সূরা আল-আহযাব৫৩]
আয়েশা রা. কথাবনী মুস্তালাকের যুদ্ধে যখন তিনি সৈন্যদের থেকে পিছু হটলেন এবং সাফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছেতা জানতে পেরেসাথে সাথে চেহারা ডেকে ফেলেন। তারপর তিনি বলেনসে আমাকে পর্দা ফরয ওয়ার পূর্বে দেখেছিল। তার এ কথা দ্বারা বুঝা যায় যে,পর্দা করা ফরয এবং চেহারাও পর্দার অন্তর্ভুক্ত।
“তার অপর একটি বাক্য দ্বারাও পর্দা যে ফরয তা প্রমাণিত হয়তিনি বলেন আমরা নারীরা নবী করীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলামআর যখন আমাদের সাথে পুরুষরা অতিক্রম করত তখন আমরা আমাদের ওড়না দিয়ে চেহারা ডেকে রাখতাম আর যখন আমরা তাদের অতিক্রম করে ফেলতাম তখন আবার চেহারা খুলে ফেলতাম। এ ধরনের আরও অনেক হাদিস কুরআন রয়েছে যা-দ্বারা মুসলিম নারীদের জন্য পর্দা করা যে ফরয তা প্রমাণিত হয়।
“তা সত্ত্বেও ষড়যন্ত্রকারীরা আল্লাহর কিতাব ও নবীর সুন্নাতের বিরোধিতা করে আল্লাহর বিধান পর্দার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। যার ফলে নারীরা যখন ঘর থেকে বের হয়তখন যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে বা যারা দুশ্চরিত্র তারা তাদের দিকে তাকিয়ে উপভোগ করতে থাকে।

“দুই. নারীদের জন্য গাড়ী চালানোর অনুমতি দাবি : 
নারীদের জন্য গাড়ী চালানোর ক্ষমতা দেয়ার দাবি করে। অথচ নারীরা যখন গাড়ী চালানোর জন্য রাস্তায় বের হবেতখন তাদের জন্য অনেক ক্ষতি ও বিপদের আশঙ্কা রয়েছেযা একজন জ্ঞানী বলতেই অনুভব করতে পারে। যেমনি ভাবে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে অনুরূপভাবে যখন একজন নারী একাকার হবে তখন সে অবশ্যই বিপদে পড়তে পারে।

“তিন. নারীদের ছবি তোলা 
এ বিরুদ্ধবাদীরা নারীদের ছবি বিভিন্ন ধরনের কার্ড ইত্যাদিতে লাগিয়ে রাখার দাবি তোলে। অথচ যখন তার ছবিটি কার্ডে লাগানো হয় তখন তার এ কার্ডটি অনেক লোকজনরে হাতে যাবে। তখন যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে বা দুশ্চরিত্র তারা সুযোগ পেয়ে যাবে। আর এতে যেনারীরা বেপর্দা হবে এবং সংকটে পড়বে তাতে সন্দেহ করার কোন অবকাশ নাই।

“চার. নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশার দাবি : 
তারা নারী ও পুরুষের অবাধ মেলা-মেশার দাবি করে এবং যে সব কাজ পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য তা নারীদেরও করতে দেয়ার জন্য সুযোগ দেয়ার দাবি করে। অথচতাদের জন্য যে সব কাজ প্রযোজ্য এবং তাদের স্বভাবের সাথে যে কাজের সম্পর্ক রয়েছেসে কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকাকে তারা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা বলে দাবি করে।
“এতে কোন সন্দেহ নাই যেতাদের এ দাবি সম্পূর্ণ বাস্তবতার পরিপন্থী ও অবান্তর। কারণতাদের জন্য যে কাজ উপযুক্ত নয়তাদের সে কাজের দায়িত্ব দেয়াই হলপ্রকৃত পক্ষে তাদের বেকার বানিয়ে দেয়া। ইসলামী শরিয়ত নারী পুরুষদের অবাধ মেলা-মেশাঅপরিচিত পুরুষদের সাথে একজন নারীর একান্ত হওয়া এবং নারীদের একাকী সফর করা ইত্যাদিকে যেহারাম করেছে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া। কারণএর ফলে যে সব ক্ষতি বা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে তা কখনই প্রশংসনীয় হতে পারে না। অথচ আল্লাহ তাআলা ইবাদতের স্থানেও নারীদের পুরুষের সাথে একসাথে ইবাদত করতে নিষেধ করছে। ফলে ইসলামের বিধান হলসালাতে নারীদের কাতার পুরুষদের কাতারের পিছনে হবে এবং নারীদেরকে তাদের ঘরে সালাত আদায়ের জন্য উৎসাহ দেয়া হয়েছে। কারণরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لا تمنعوا إماء الله مساجد الله وبيوتهن خير لهن
 তোমরা আল্লাহর বান্দিদের মসজিদে গমন করতে বাধা দিও না। আর তাদের ঘরসমূহ তাদের জন্য অতি উত্তম।
“এখানে একটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যেযদি নারীরা মসজিদের গমন করে সালাত আদায় করতে চায়তাতে তাদের নিষেধ করা যাবে না। কিন্তু তাদের জন্য ঘরে সালাত আদায় করাই উত্তম। কারণবর্তমান ফিতনা-ফাসাদের যুগে নারীদের ঘর থেকে বের হতে না দেয়ার মধ্যেই নিরাপত্তা।
“আর ইসলাম এসব আদেশ এ জন্য দিয়েছে যাতে নারীদের সম্মান-হানি না ঘটে এবং তাদের যাবতীয় ফিতনার কারণ হতে দূরে রাখা যায়। সুতরাং মুসলিমদের উপর কর্তব্য হলতারা যেন তাদের নারীদের সম্মান রক্ষায় মনোযোগী হয় এবং ষড়যন্ত্রকারীদের অবান্তর দাবীগুলোর প্রতি কোন প্রকার ভ্রূক্ষেপ না করে। আর তাদের অবশ্যই উপদেশে গ্রহণ করতে হবেসে সব দেশের নারীদের করুণ পরিণতি হতেযারা এ সব অবান্তরমিথ্যা ও ভ্রান্ত দাবিগুলোকে গ্রহণ করে বিপদে পড়ছে এবং ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রের বেড়া ঝালে পা দিয়েচরম অশান্তিতে কালাতিপাত করছে। পশ্চিমা দেশের নারীদের অবস্থা দেখে আমাদের দেশের নারীরা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। তাদের যে কি করুণ পরিণতি তার বাস্তব চিত্র দেখলে আমরা অতি সহজে অনুমান করতে পারি যে আমাদের দেশের নারীরা তাদের তুলনায় কত যে শান্তিতে আছে। সৌভাগ্যবান সেই যে অন্যের থেকে উপদেশ গ্রহণ করে। আমাদের দেশের ক্ষমতাশীলদের উচিত হলতারা যেন এ সব আহমকদের দাবি দাওয়া গ্রহণ করা হতে বিরত থাকে। সমাজকে তাদের মন্দ প্রভাব ও ভয়ানক পরিণতি হতে রক্ষা করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীদের চিন্তাধারা যাতে সমাজে প্রচার না পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
قال النَّبيُّ : (( ما تركت بعدي فتنة أضرّ على الرجال من النساء))
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনআমি পুরুষদের জন্য নারীদের ফিতনার চেয়ে অধিক ক্ষতিকর আর কোন ফিতনা রেখে আসি নি।
وقال عليه الصلاة والسلام: (( واستوصوا بالنساء خيراً))
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলো বলেনতোমরা নারীদের কল্যাণকর উপদেশ দাও।
“নারীদের কল্যাণ দ্বারা উদ্দেশ্য হলতাদের সম্মানসম্ভ্রম ও ইজ্জতের সংরক্ষণ করা এবং তাদের ফিতনার কারণ সমূহ হতে দূরে রাখা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সে সব কাজ করার তাওফিক দিন যাতে রয়েছে তাদের জন্য দুনিয়াও আখিরাতের কল্যাণ 

 ঘোষণাটিতে শাইখ আব্দুল আযীয ইবনে বায রহ. শাইখ আব্দুল আযীয আল-শাইখ. শাইখ আব্দুল্লাহ আল-গুদাইয়ান, শাইখ বকর আবু যায়েদ ও শাইখ সালেহ আল-ফাওযান সবাই স্বাক্ষর করেন। আল্লাহ তাআলা তাদের সবাইকে উত্তম প্রতিদান দিন।

এই ঘোষণা বা বিবৃতিটি প্রকাশিত হয়েছে ২৫/১/১৪২০ হিজরিতে অর্থাৎ শাইখ ইবনে বাযের মৃত্যুর দুইদিন পূর্বে; এর মাধ্যমে বিষয়টির গুরুত্ব আরও সহজে অনুমান করা যায়। এ বর্ণনা দিয়েই আমি আমার সংক্ষিপ্ত গ্রন্থটির সমাপ্তি টানছি। আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করি যেআল্লাহ যেন আমাদের মুসলিম নারী ও তাদের মেয়েদের অবস্থার সংশোধন করে দেয় এবং প্রকাশ্য ও গোপন সব ধরনের ফিতনা-ফাসাদ থেকে যেন তাদের দূরে সরিয়ে রাখে ।
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين، وصلى الله وسلم على نبينا محمد وعلى آله وأصحابه أجمعين.



সূচিপত্র
১। ভূমিকা
২। বিশেষ মূলনীতি
৩। নারী কে?
৪। মানব জাতির প্রকৃত সম্মান কি?
৫। ইসলামে নারীর সম্মান
৬। ইসলামের সুশীতল ছায়ায় নারী
৭। মুসলিম নারীদের বিষয়ে আত্ম-মর্যাদাবোধ
৮। ইসলাম নারীদের মুক্তিদাতা
৯। ইসলাম নারীদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি
১০। বিশেষ সতর্কতা

                       ----------------------------------------------------------------------------------

                            '' শুধু নিজে শিক্ষিত হলে হবেনা, প্রথমে বিবেকটাকে শিক্ষিত করুন। ''

কোন মন্তব্য নেই:

Comment here />

Widget ByBlogger Maruf
Widget ByBlogger Maruf