শয়তানের প্রবেশপথ
শয়তানের প্রবেশপথ (পর্ব:১)
আল্লাহ তাআলা যখন তার নবী আদম আ.-কে সৃষ্টি করেছেন, তিনি আদমকে সেজদা করতে ফেরেশতাদের হুকুম করেন। অত:পর সব ফেরেশতা সেজদায় অবনমিত হল একমাত্র ইবলিস ছাড়া, সে ছিল জিনদের অন্তর্ভুক্ত। সে তার প্রভুর নির্দেশ অমান্য করল, এবং অস্বীকার ও অহংকার প্রদর্শন করল। এবং সে ছিল কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,
قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ أَسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنْتَ مِنَ الْعَالِينَ. قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِنْهُ خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِينٍ. قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ. وَإِنَّ عَلَيْكَ لَعْنَتِي إِلَى يَوْمِ الدِّينِ. قَالَ رَبِّ فَأَنْظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ. قَالَ فَإِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِينَ. إِلَى يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ. قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ. إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ. قَالَ فَالْحَقُّ وَالْحَقَّ أَقُولُ. لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنْكَ وَمِمَّنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ أَجْمَعِينَ. ﴿ص : ৭৫-৮৫﴾
'আল্লাহ তাআলা বললেন, হে ইবলিস, তোমাকে কোন্ জিনিস তাকে সেজদা করা থেকে বিরত রাখল যাকে আমি স্বয়ং নিজের হাত দিয়ে বানিয়েছি, তুমি কি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলে, না তুমি কোনো উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন কেউ? 'সে বলল (হ্যাঁ), আমি তো তার চাইতে শ্রেষ্ঠ, তুমি আমাকে আগুন থেকে বানিয়েছ আর তাকে বানিয়েছ মাটি থেকে। তখন আল্লাহ তাআলা বললেন, তুমি এখান থেকে এখনই বের হয়ে যাও, কেননা তুমি হচ্ছ অভিশপ্ত। 'তোমার ওপর আমার অভিশাপ থাকবে শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত।' সে বলল, (হ্যাঁ) আমি বেরিয়ে যাচ্ছি, তবে হে আমার মালিক ! তুমি আমাকে সে দিন পর্যন্ত অবকাশ দাও যে দিন সব মানুষকে (দ্বিতীয়বার) জীবিত করে তোলা হবে। 'আল্লাহ তাআলা বললেন, (হ্যাঁ, যাও) যাদের অবকাশ দেয়া হয়েছে তুমিও তাদের অন্তর্ভুক্ত। 'অবধারিত সময়টি আসার সে নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত (তুমি থাকবে) সে বলল (হ্যাঁ) তোমার ক্ষমতার কসম (করে আমি বলছি) আমি তাদের সবাইকে বিপদগামী করে ছাড়ব। তবে তাদের মধ্যে যারা তোমার একনিষ্ঠ বান্দা তাদের ছাড়া। আল্লাহ তাআলা বললেন, (এ হচ্ছে) চূড়ান্ত সত্য, আর আমি এ সত্য কথাটাই বলছ্তি'তোমার ও তোমার অনুসারীদের সবাইকে দিয়ে আমি জাহান্নাম পূর্ণ করবই।[১]
প্রকৃতপক্ষে শয়তান শত্রুতা পোষণেরই উপযুক্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوًّا إِنَّمَا يَدْعُو حِزْبَهُ لِيَكُونُوا مِنْ أَصْحَابِ السَّعِيرِ الفاطر ৬
'শয়তান হচ্ছে তোমাদের শত্রু, অতএব তোমরা তাকে শত্রু হিসেবেই গ্রহণ করো, সে তার দলবলদের এ জন্যেই আহ্বান করে যেন তারা তার আনুগত্য করে জাহান্নামের বাসিন্দা হয়ে যেতে পারে।'[২]
মানুষের কাছে এ বিষয়টি অস্পষ্ট নয় যে, শয়তান মানুষের প্রত্যক্ষ দুশমন। তবে তাদের সংখ্যা খুবই অল্প যারা শয়তানকে শত্রু জ্ঞান করে। মানুষ শয়তানকে শত্রু হিসেবে ততক্ষণ গ্রহণ করতে পারবে না যাবৎ না সে শয়তানের মানুষকে সত্য থেকে বিভ্রান্ত করার সমূহ পথ ও পদ্ধতি থেকে মানুষকে ভ্রান্ত পথে নিক্ষিপ্ত করার কলাকৌশল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না হবে। এবং পাশাপাশি সে শয়তানের কূট-চাল থেকে মুক্তির উপায় ও পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত না হবে। আলোচ্য অধ্যায়ে এ বিষয়ে বিশ্লেষণ উপস্থাপিত হবে।
মানুষকে বিভ্রান্ত করার শয়তানের পদক্ষেপ সমূহ
সর্বক্ষেত্রে শয়তানের ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টা হচ্ছে মানুষকে স্বধর্ম থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া। যদি কোন কোন ক্ষেত্রে শয়তান এ বিষয়ে অকৃতকার্য হয়, তবে তাকে অপরাধ ও শাস্তিতে নিক্ষেপ করা বা তার প্রতিদান কমিয়ে দেওয়া বা তাকে উত্তম কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখা- ইত্যাদিতে জড়িয়ে ফেলা হয়। এরকম সাতটি স্তর রয়েছে:
(১) আল্লাহকে অস্বীকার করার ধাপ বা সিঁড়ি।
এমনটি হলে তাকে সঙ্গে নিয়ে জাহান্নামে একত্রিত হবে।
এমনটি হলে তাকে সঙ্গে নিয়ে জাহান্নামে একত্রিত হবে।
(২) বেদআতের স্তর বা ধাপ :
এই স্তরটি ইবলিসের নিকট গুনাহের চেয়েও অধিক প্রিয়। কারণ, বেদআতকারী এ কথা মনে করে না যে, সে ভ্রান্তির মাঝে রয়েছে, তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে সে তা থেকে তাওবা করবে না। উপরন্তু দ্বীনের বিষয়ে এটি একটি জঘন্যতম উপসর্গ, বরং, বরং বলা যায়, দ্বীনের বিকৃতি।
(৩) কবিরা গুনাহের স্তর :
আল্লাহর তাআলা বলেন,
আল্লাহর তাআলা বলেন,
إِنْ تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُدْخَلًا كَرِيمًا. النساء : ৩১
'যদি তোমরা সে সমস্ত বড়ো বড়ো গুনাহ থেকে বেঁচে থাকো, যা থেকে বেঁচে থাকার জন্যে তোমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাহলে তোমাদের ছোট-খাটো গুনাহ আমি (এমনিতেই তোমাদের হিসাব) থেকে মুছে দেবো এবং অত্যন্ত সম্মানজনক স্থানে আমি তোমাদের পৌঁছে দেবো।[৩]
(৪) সগীরা গুনাহের স্তর :
মানুষ সাধারণত: একে তুচ্ছজ্ঞান করে। ফলে তা পুঞ্জীভূত হয়ে তাকে ধ্বংসে নিপতিত করে।
মানুষ সাধারণত: একে তুচ্ছজ্ঞান করে। ফলে তা পুঞ্জীভূত হয়ে তাকে ধ্বংসে নিপতিত করে।
(৫) মুবাহের স্তর :
মুবাহের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর অধিক আনুগত্য ও আখেরাতের জন্য পাথেয় অর্জন বাধা সৃষ্টি করে। মুবাহ কাজের সাথে সম্পৃক্ততা দুনিয়ার মুহব্বত ও গুনাহে লিপ্ত হওয়ার অন্যতম কারণ।
মুবাহের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর অধিক আনুগত্য ও আখেরাতের জন্য পাথেয় অর্জন বাধা সৃষ্টি করে। মুবাহ কাজের সাথে সম্পৃক্ততা দুনিয়ার মুহব্বত ও গুনাহে লিপ্ত হওয়ার অন্যতম কারণ।
(৬) অনুত্তম ও অপ্রধান কাজের স্তর :
অনুত্তম কাজের মাধ্যমে উত্তম কাজে এবং অপ্রধান কাজের মাধ্যমে প্রধান কাজ থেকে বিরত রাখে। ফলে তার প্রতিদান কমে যায় এবং পুণ্য ত্রুটিপূর্ণ হয়ে পড়ে।
অনুত্তম কাজের মাধ্যমে উত্তম কাজে এবং অপ্রধান কাজের মাধ্যমে প্রধান কাজ থেকে বিরত রাখে। ফলে তার প্রতিদান কমে যায় এবং পুণ্য ত্রুটিপূর্ণ হয়ে পড়ে।
(৭) শয়তান তার কর্মী বাহিনীর মাধ্যমে মানুষের ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভের স্তর :
এই সত্য সমূহের কোন একটিতে নিক্ষেপ করার মাধ্যমেই শয়তানের ষড়যন্ত্র থেমে থাকে না বরং সে কখনো মানুষকে বেদআতে নিক্ষেপ করে, যেমন জন্ম দিবস ও নির্দিষ্ট আনন্দ উপভোগের বেদআত। তাছাড়া অন্যান্য বেদআত বা ভিন্ন প্রকৃতির কবিরা গুনাহে নিক্ষিপ্ত করে। যেমন নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে নামাজ দেরি করা অথবা পরিপূর্ণ পবিত্রতা অর্জন না করা।
এই সত্য সমূহের কোন একটিতে নিক্ষেপ করার মাধ্যমেই শয়তানের ষড়যন্ত্র থেমে থাকে না বরং সে কখনো মানুষকে বেদআতে নিক্ষেপ করে, যেমন জন্ম দিবস ও নির্দিষ্ট আনন্দ উপভোগের বেদআত। তাছাড়া অন্যান্য বেদআত বা ভিন্ন প্রকৃতির কবিরা গুনাহে নিক্ষিপ্ত করে। যেমন নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে নামাজ দেরি করা অথবা পরিপূর্ণ পবিত্রতা অর্জন না করা।
এমনিভাবে শয়তান মানুষের হৃদয়ে স্থান করে তাকে হিংসা, রিয়া অথবা আল্লাহর প্রতি মুহব্বত, আশা ও নির্ভরতার দুর্বলতায় নিক্ষেপ করে। এবং মানুষের বাকশক্তি নিয়ন্ত্রণ করে তাকে মিথ্যায় প্ররোচিত করে। যদি তাতে অক্ষম হয়ে পড়ে তবে অর্থহীন অঠিক কথাবার্তায় নিক্ষেপ করে, যাতে সে গিবত-পরনিন্দায় লিপ্ত হয়। অত:পর তার চেয়েও কঠিন বিষয়ের দিকে আকৃষ্ট হয় এবং এভাবেই চলতে থাকে।
মানুষের কাছে শয়তানের প্রবেশ পথসমূহ
মানুষের কাছে বিভ্রান্ত ও সম্মানোচ্যুত করার ক্ষেত্রে শয়তান সব ধরনের পথ ও পন্থা অবলম্বন করে। তাদের নিকট সে এমন সব পথে প্রবেশ করে যে, অধিকাংশ মানুষ সে সম্পর্কে বেখবর হয় অথচ সে তা অনুভব করতে পারে না। এভাবেই শয়তান আমাদের আদি পিতা ও মাতা আদম হাওয়া আ.-কে পথ-চ্যুত করেছে।
فَأَزَلَّهُمَا الشَّيْطَانُ. ﴿البقرة : ৩৬﴾
'অত:পর শয়তান তাদের উভয়কে পথ-চ্যুত করেছে।'[৪] শয়তান মানুষকে তাদের একাংশের কৃতকর্মের জন্য পদস্খলন ঘটিয়ে ছিল অত:পর তারা ভয়ে পলায়ন করে।
إِنَّ الَّذِينَ تَوَلَّوْا مِنْكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ إِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوا.
দু'টি বাহিনী সেদিন (সম্মুখ সমরে) একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল, সে দিন যারা (ময়দান থেকে) পালিয়ে গিয়েছিল তাদের একাংশের অর্জিত কাজের জন্য শয়তানই তাদের পদস্খলন ঘটিয়ে দিয়েছিল।[৫] শয়তানের প্রবেশের পথসমূহ বন্ধের জন্য সবচে' ফলপ্রসূ পদ্ধতি হচ্ছে সে প্রবেশপথ সমূহের পরিচয় লাভ করা। এই পথ সমূহ বন্ধের উপকরণ সমূহ ব্যবহার করা।
শয়তানের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ পথসমূহের অন্যতম হচ্ছে-
শয়তানের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ পথসমূহের অন্যতম হচ্ছে-
(১) সৌন্দর্য সৃষ্টির মাধ্যমে আকর্ষণ ও প্রতারণা :
আদম আ.-এর ঘটনায় শয়তান তার জন্য গুনাহকে সুশোভিত, সুসজ্জিত করে উপস্থাপন করেছে।
আদম আ.-এর ঘটনায় শয়তান তার জন্য গুনাহকে সুশোভিত, সুসজ্জিত করে উপস্থাপন করেছে।
قَالَ يَا آَدَمُ هَلْ أَدُلُّكَ عَلَى شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَمُلْكٍ لَا يَبْلَى. ﴿طه :১২০﴾
'সে (তাকে বলল হে আদম, আমি কি তোমাকে অনন্ত জীবনদায়িনী একটি বৃক্ষের কথা বলব (যার ফল খেলে তুমি এখানে চিরকাল জীবিত থাকতে পারবে) এবং বলব এমন রাজত্বের কথা, যার কখনো পতন হবে না ?[৬]
وَقَالَ مَا نَهَاكُمَا رَبُّكُمَا عَنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ إِلَّا أَنْ تَكُونَا مَلَكَيْنِ أَوْ تَكُونَا مِنَ الْخَالِدِينَ
'সে তাদের আরো বলল, তোমাদের মালিক তোমাদের এ বৃক্ষের (কাছে যাওয়া) থেকে তোমাদের যে বারণ করেছেন, তার উদ্দেশ্যে এ ছাড়া আর কিছুই নয় যে, (সেখানে গেলে) তোমরা উভয়েই ফেরেশতা হয়ে যাবে, অথবা (এর ফলে) তোমরা জান্নাতে চিরস্থায়ী হয়ে যাবে।[৭] বদর যুদ্ধে শয়তান মুশরিকদের জন্য তাদের কাজকে সুশোভিত করে দেখিয়েছ্তে
وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ خَرَجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ بَطَرًا وَرِئَاءَ النَّاسِ وَيَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ وَاللَّهُ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ ﴿৪৭﴾ وَإِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَإِنِّي جَارٌ لَكُمْ فَلَمَّا تَرَاءَتِ الْفِئَتَانِ نَكَصَ عَلَى عَقِبَيْهِ وَقَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِنْكُمْ إِنِّي أَرَى مَا لَا تَرَوْنَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ وَاللَّهُ شَدِيدُ الْعِقَابِ. ﴿الأنفال : ৪৮﴾
'তোমরা (কখনো) তাদের মতো হয়ও না, যারা অহংকার ও লোকদের (নিজেদের শান-শওকত) দেখানোর জন্যে সাধারণ মানুষদেরকে যারা আল্লাহ তাআলার পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে, (মূলত) তাদের সমুদয় কার্যকলাপেই আল্লাহ তাআলা পরিবেষ্টন করে আছেন। যখন শয়তান তাদের কাজগুলোকে তাদের সামনে খুব চাকচিক্যময় করে পেশ করেছিল এবং সে তাদের বলেছিল, আজ মানুষের মাঝে কেউই তোমাদের ওপর বিজয়ী হতে পারবে না। এবং আমি তো তোমাদের পাশেই আছি, অত:পর যখন উভয় দল সম্মুখ সমরে ঝাঁপিয়ে পড়ল, তখন সে কেটে পড়ল এবং বলল, তোমাদের সাথে আমার কোনই সম্পর্ক নেই। আমি এমন কিছু দেখতে পাচ্ছি যা তোমরা দেখতে পাও না। আমি অবশ্যই আল্লাহ তাআলাকে ভয় করি এবং (আমি জানি) আল্লাহ তাআলা হচ্ছেন কঠোর শাস্তিদাতা।[৮]
শয়তানের এই সুন্দর সুশোভন প্রক্রিয়া ছলচাতুরতায় পরিপূর্ণ। কেননা, তার প্রতারণা কিছু উপদেশ, আন্তরিকতা ও ভালোবাসার আড়ালে লুক্কায়িত থাকে। তাই সে আদম আ.-কে ও তার বিবি হাওয়াকে শপথ করে জানিয়েছিল যে সে বিশ্বস্ত শুভাকাঙ্ক্ষী।
وَقَاسَمَهُمَا إِنِّي لَكُمَا لَمِنَ النَّاصِحِينَ. ﴿الأعراف : ২১﴾
'সে তাদের কাছে কসম করে বলল, আমি অবশ্যই তোমাদের উভয়ের জন্যে হিতাকাঙ্ক্ষীদের একজন।[৯]
এবং সে আদ ও সামুদ সম্প্রদায়ের জন্য তাদের কাজকে সুশোভিত করে প্রদর্শন করেছে।
وَعَادًا وَثَمُودَ وَقَدْ تَبَيَّنَ لَكُمْ مِنْ مَسَاكِنِهِمْ وَزَيَّنَ لَهُمَ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيلِ وَكَانُوا مُسْتَبْصِرِينَ. ﴿العنكبوت : ৩৮﴾
'আদ এবং সামুদকেও (আমি ধ্বংস করেছিলাম), তাদের (ধ্বংসপ্রাপ্ত) বসতি থেকেই তো তোমাদের কাছে (আজাবের সত্যতা) প্রমাণিত হয়ে গেছে। শয়তান তাদের কাজ (তাদের সামনে শোভন করে রেখেছিল এবং (এ কৌশল) সে তাদের (সঠিক) রাস্তা থেকে ফিরিয়ে রেখেছিল, অথচ তারা (তাদের অন্য সব ব্যাপারে) ছিল দারুণ বিচক্ষণ।'[১০] এমনিভাবে সাবা সম্প্রদায়ের জন্যও সুশোভন করেছিল।
وَجَدْتُهَا وَقَوْمَهَا يَسْجُدُونَ لِلشَّمْسِ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيلِ فَهُمْ لَا يَهْتَدُونَ. ﴿النمل : ২৪﴾
'আমি তাকে এবং তার জাতিকে দেখলাম, তারা আল্লাহ তাআলাকে বাদ দিয়ে সূর্যকে সেজদা করছে, (মূলে) শয়তান তাদের (এ সব পার্থিব) কর্মকাণ্ড তাদের জন্যে শোভন করে রেখেছে এবং সে তাদের (সৎ) পথ থেকেও নিবৃত্ত করেছে, ফলে ওরা হেদায়াত লাভ করতে পারছে না।[১১] আল্লাহ তাআলা বলেন,
تَاللَّهِ لَقَدْ أَرْسَلْنَا إِلَى أُمَمٍ مِنْ قَبْلِكَ فَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَهُوَ وَلِيُّهُمُ الْيَوْمَ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ. ﴿النحل : ৬৩﴾
(হে নবী,) আল্লাহর শপথ, তোমার আগেও আমি জাতি সমূহের কাছে নবী পাঠিয়ে ছিলাম, অত:পর শয়তান তাদের (খারাপ) কাজ সমূহ তাদের জন্যে শোভনীয় করে দিয়েছিল, সে (শয়তান) আজও তাদের বন্ধু হিসেবেই (হাজির) আছে, তাদের (সবার) জন্যেই রয়েছে কঠোর আজাব।[১২] মহান আল্লাহ বলেন,
قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ. إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ. ﴿الحجر :৩৯-৪০﴾
সে বলল, হে আমার মালিক, তুমি যেভাবে (আজ) আমাকে পথভ্রষ্ট করে দিলে (আমিও তোমার শপথ করে বলছি) আমি মানুষদের জন্যে পৃথিবীতে তাদের (গুনাহের কাজ সমূহ) শোভন করে তুলব এবং তাদের সবাইকে আমি পথভ্রষ্ট করে ছাড়ব। তবে তাদের মধ্যে যারা তোমার খাটি বান্দা তাদের কথা আলাদা।'[১৩] এবং আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا إِلَى أُمَمٍ مِنْ قَبْلِكَ فَأَخَذْنَاهُمْ بِالْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ لَعَلَّهُمْ يَتَضَرَّعُونَ. فَلَوْلَا إِذْ جَاءَهُمْ بَأْسُنَا تَضَرَّعُوا وَلَكِنْ قَسَتْ قُلُوبُهُمْ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ. فَلَمَّا نَسُوا مَا ذُكِّرُوا بِهِ فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ أَبْوَابَ كُلِّ شَيْءٍ حَتَّى إِذَا فَرِحُوا بِمَا أُوتُوا أَخَذْنَاهُمْ بَغْتَةً فَإِذَا هُمْ مُبْلِسُونَ. فَقُطِعَ دَابِرُ الْقَوْمِ الَّذِينَ ظَلَمُوا وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ. ﴿الأنعام : ৪৫﴾
'তোমাদের আগের জাতি সমূহের কাছে আমি আমার রাসূল পাঠিয়েছিলাম, তাদের আমি দু:খ-কষ্ট ও বিপর্যয়ে (জালে) আটক রেখেছিলাম, যাতে করে তার বিনয়ের সাথে নতি স্বীকার করে। কিন্তু সত্যিই যখন তাদের (কাফের দলের) উপর আমার বিপর্যয় এসে আপতিত হলো, তখনও তারা বিনীত হলো না, অধিকন্তু তাদের অন্তর আরো শক্ত হয়ে গেলো এবং তারা যা করে যাচ্ছিল, শয়তান তাদের কাছে তা আকর্ষণীয় করে তুলে ধরলো। অত:পর তারা সে সব কিছুই ভুলো গেলো, যা তাদের (বারবার) স্মরণ করানো হয়েছিল, তারপরও আমি তাদের ওপর (স্বচ্ছলতার সবকটি দুয়ারই খুলে দিলাম, শেষ পর্যন্ত যখন তারা তাতে মত্ত হয়ে গেলো যা তাদের দেয়া হয়ে ছিল, তখন আমি তাদের হঠাৎ পাকড়াও করে নিলাম, ফলে তারা নিরাশ হয়ে পড়ল। (এভাবেই) যারা (আল্লাহ তাআলার ব্যাপারে) জুলুম করেছে, তাদের মূলোচ্ছেদ করে দেয়া হয়েছে, আর সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্যে, যিনি সৃষ্টিকুলের মালিক।'[১৪] শয়তান সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيهِمْ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلَّا غُرُورًا. ﴿النساء :১২০﴾
সে (অভিশপ্ত শয়তান) তাদের (নানা) প্রতিশ্রুতি দেয়, তাদের (সামনে) যা প্রতিশ্রুতি দেয় তা হচ্ছে প্রতারণা মাত্র।[১৫] ইবনুল কায়্যিম বর্ণনা করেন, শয়তানের প্রতিশ্রুতি যা মানুষের হৃদয় পর্যন্ত পৌছ্তেযথা : তুমি দীর্ঘজীবী হবে, তুমি পার্থিব ভোগ-বিলাস অর্জন করবে, তুমি তোমার সতীর্থদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করবে, এবং তোমার শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করবে এবং দুনিয়ার কর্তৃত্ব তোমার অর্জিত হবে যেরূপ অন্যের ছিল্তএমনিভাবে সে তার আশাকে প্রলম্বিত করে এবং তাকে গুনাহ ও শিরক করার ভিত্তিতে কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দেয়। উপরন্তু তাকে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা, অলীক স্বপ্ন ও আশা দিয়ে রাখে। তার প্রতিশ্রুতি ও প্রত্যাশার মাঝে পার্থক্য হল সে অবাস্তব, ভিত্তিহীন প্রতিশ্রুতি দেয়, এবং অসম্ভব বিষয়ের প্রত্যাশা দিয়ে থাকে, আর অক্ষম, দুর্বল আত্মা তার প্রতিশ্রুতি ও স্বপ্নের প্রলোভনে নিজেদের খুইয়ে ফেলে। যেমন জনৈক বক্তা বলেছেন,
وإلا فقد عشنا بها زمنا رغدا
منى إن تكن حقا أحسن المنى
আশা ও স্বপ্ন যদি বাস্তবানুগ হয় তবে তা হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট স্বপ্ন, অন্যথায় এর অর্থ হবে কিছু কাল সুখ স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকা। তাই বিনষ্ট রুগ্ণ প্রকৃতির প্রবৃত্তি অসার আশা ও মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে স্বাদ পায় ও আনন্দ লাভ করে।
ইবনুল কায়্যিম রহ. আরো উল্লেখ করেছেন, অসার কথাবার্তার উৎস হচ্ছে শয়তানের প্রতিশ্রুতি ও অলীক স্বপ্ন দেখানো। কেননা শয়তান তার সহচরদেরকে সত্য অর্জন ও তার মাধ্যম বিজয় লাভের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করে। এবং তাদেরকে অনিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সত্যে পৌঁছার প্রতিশ্রুতি দেয়।
يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيهِمْ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلَّا غُرُورًا. ﴿النساء :১২০﴾
(অতএব, প্রত্যেক অসার কাজে আল্লাহর এই বাণী প্রতিফলিত যে তাদের সামনে) সে প্রতিশ্রুতি দেয় আর মিথ্যা-বাসনার (মায়াজাল) সৃষ্টি করে, আর শয়তান যা প্রতিশ্রুতি দেয় তা হচ্ছে প্রতারণা মাত্র।[১৬] উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় শাইখ আস-সাদি উল্লেখ করেছেন, এই প্রতিশ্রুতিতে ভীতি প্রদর্শনও অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন,
الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَاءِ وَاللَّهُ يَعِدُكُمْ مَغْفِرَةً مِنْهُ وَفَضْلًا وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ. ﴿البقرة : ২৬৮﴾
'শয়তান সব সময়ই তোমাদের অভাব অনটনের ভয় দেখাবে এবং সে (নানাবিধ) অশ্লীল কর্মকাণ্ডের আদেশ দেবে, আর আল্লাহ তাআলা তোমাদের তার কাছে থেকে অসীম বরকত ও ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন (এবং সে দিকেই তিনি তোমাদের ডাকছেন) আল্লাহ তাআলা প্রাচুর্যময় সম্যক অবগত।[১৭] কেননা, সে মানুষকে প্রতিশ্রুতি দেয় যখন তারা আল্লাহর পথে খরচ করবে তারা গরিব-দরিদ্র হয়ে যাবে। তারা যখন জেহাদ করে তাদের ভয় দেখায়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
إِنَّمَا ذَلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ أَوْلِيَاءَهُ فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ. آل عمران : ১৭৫
এই হচ্ছে তোমাদের (প্ররোচনাদানকারী) শয়তান তারা (শত্রু পক্ষের অতিরঞ্জিত শক্তির কথা বলে) তাদের আপনজনদের ভয় দেখাচ্ছিল, তোমরা কোনো অবস্থায়ই তাদের (এ হুমকিকে) ভয় করবে না, বরং আমাকেই ভয় করো, যদি তোমরা (সত্যিকার অর্থে) ঈমানদার হও।[১৮] সে মানুষকে ভীতি প্রদর্শন করে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেওয়ার সময়। সম্ভব ও অসম্ভব সকল উপায়ে সে তাদের বুদ্ধিতে এটা প্রবেশ করায় যেন তারা কল্যাণময় কাজ থেকে বিরত থাকে।[১৯]
[১] সূরা সোয়াদ : ৭৬৫-৮৫।
[২][২] ফাতের : ৬।
[৩] আন-নিসিা : ৩১।
[৪] আল-বাক্বারা : ৩৬।
[৫] আল-ইমরান : ১৫৫।
[৬] ত্বহা : ১২০।
[৭] আল-আরাফ : ২০।
[৮] আল-আনফাল : ৪৭-৪৮।
[৯] আল-আরাফ : ২১।
[১০] আল-আনকাবুত : ৩৮।
[১১] আন-নামল : ২৪।
[১২] আন-নাহল : ৬৩।
[১৩] আল-হাজার : ৩৯-৪০।
[১৪] আল-আনআম : ৪২-৪৫।
[১৫] আন-নিসা : ১২০।
[১৬] আন-নিসা : ১২০।
[১৭] আল-বাকারা : ২৬৮।
[১৮] আল-ইমরান : ১৭৫।
[১৯] তাইসিরুল কারিমির রহমান ফি তাফসিরে কালামিল মান্নান : পৃ : ১৬৮।
শয়তানের প্রবেশপথ (পর্ব:২)
(২) সময় ক্ষেপণ ও মিথ্যা আশ্বাস প্রদান
শয়তান মানুষকে এমনভাবে আশ্বস্ত করে যে, তার জীবন অনেক দীর্ঘ এবং তার কাছে সৎকর্ম ও তওবা করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তাই সে যখন নামাজ পড়ার ইচ্ছা পোষণ করে শয়তান তাকে বলে, তুমি তো এখনও সেই ছোট রয়ে গেছ, যখন বড় হবে নামাজ পড়বে। এবং যখন আত্মশুদ্ধিকারী ব্যক্তি আত্মশুদ্ধি করতে চায় শয়তান তাকে বলে এটাতো তোমার প্রথম মওসুম : আগামী বৎসরের জন্যে তুমি অপেক্ষা কর। আর যখন কোন মানুষ কোরআন পড়তে চায় শয়তান তাকে বলে তুমি সন্ধ্যায় পড়বে। এবং সন্ধ্যা হলে বলে তুমি আগামীকাল পড়বে। এবং আগামীকাল বলে তুমি পরশু পড়বে, এভাবে মৃত্যু পর্যন্ত অপরাধকারী তার পাপের ওপর অবশিষ্ট থাকবে। আর এই প্রক্রিয়ায় শয়তান কিছু কাফেরকে ইসলাম থেকে নিবৃত্ত করে রাখে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
إِنَّ الَّذِينَ ارْتَدُّوا عَلَى أَدْبَارِهِمْ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَى الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْ وَأَمْلَى لَهُمْ. ﴿محمد : ২৫﴾
'যাদের কাছে হেদায়াতের পথ পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পরও তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, শয়তান এদের মন্দ কাজগুলো (ভালো লেবাস দিয়ে) শোভনীয় করে পেশ করে এবং তাদের জন্যে নানা মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে রাখে।[১] তাই বলা হয়, এর অর্থ হচ্ছে শয়তান তাদের উদ্দেশ্যে আশাকে সম্প্রসারিত করেছে এবং তাদেরকে দীর্ঘায়ুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া ভিন্ন অর্থের মতও রয়েছে। কতক ঊলামায়ে কেরাম বলেছেন,
أنذركم سوف فإنها أكبر جنود إبليس. تلبيس إبليس لابن الجوزي ص (৩৯০).
আমি তোমাদেরকে 'সাওফা' তথা 'এই করছি', 'এখনও সময় আছে', 'ভবিষ্যতে করব', 'কিছুটা ঝামেলা মুক্ত হয়েই করা শুরু করব।' এমন সব ভবিষ্যৎ অর্থবোধক শব্দ হতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।[২]
এবং এই অভিন্ন আচরণ করে থাকে যখন তারা আনুগত্য প্রদর্শন করার ইচ্ছা ব্যক্ত করে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল বলেন,
يعقد الشيطان على قافية رأس أحدكم إذا هو نام ثلاث عقد، يضرب كل عقدة عليك ليل طويل فارقد، فإن استيقظ فذكر الله انحلت عقدة، فإن توضأ انحلت عقدة، فإن صلى انحلت عقدة فأصبح نشيطا طيب النفس، وإلا أصبح خبيث النفس كسلان.
যখন তোমাদের কেউ ঘুমায়, শয়তান তার মাথায় তিনটি গিঁট দেয়। সারারাত ব্যাপী প্রতিটি গিঁট দিয়ে রাখে। অত:পর সে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। অত:পর যখন মানুষ ঘুম থেকে জেগে আল্লাহর স্মরণ করে একটি গিঁট খুলে যায়। তারপর যখন সে নামাজ পড়ে আরেকটি গিঁট খুলে যায়। অত:পর সে উদ্যম ও প্রাণবন্ত মন নিয়ে সকাল কাটায়। আর যদি এমনটি না করে তবে সে নিরানন্দ, উদ্যমহীন অলস সকাল কাটায়। এ কারণেই উল্লিখিত হাদিসে আমাদের প্রিয় নবী সা. আগে আগে ঘুম থেকে জাগা এবং জিকির ও নামাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। ঐ দুই ব্যক্তির অবস্থা কতইনা সুন্দর যাদের সম্পর্কে রাসূল এভাবে আলোচনা করেছেন,
عجب ربنا عزوجل من رجلين : رجل ثار عن وطائه ولحافه، من بين أهله وحيه إلى صلاته، فيقول ربنا: أيا ملائكتي، انظروا إلى عبدي، ثار من فراشه ووطائه، ومن بين حيه وأهله إلى صلاته، رغبة فيما عندي، وشفقة مما عندي. ورجل غزا في سبيل الله عز وجل...(المسند:১/৪১৬، وابن حبان(الإحسان ৬/২৯৭) وحسن المحقق إسناده.
আমাদের প্রভু দুই রকম ব্যক্তি দ্বারা আনন্দিত বোধ করেন। ঐ ব্যক্তি যে তার শয্যা-বাস ও চাদর ছেড়ে এবং পরিবার-পরিজন ও মহল্লা মধ্য থেকে নামাজের দিকে ধাবিত হয়েছে। অত:পর তা দেখে আমাদের প্রভু বলবেন, হে আমার ফেরেশতারা ! তোমরা আমার বান্দার দিকে তাকাও সে তোর বিছানা ও শয্যা ছেড়ে এবং তার মহল্লা ও পরিবার পরিজনদের মধ্য থেকে নামাজের দিকে ধাবিত হয়েছে আমার দয়া ও অনুগ্রহের প্রত্যাশায়। আরেক ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করেছেন...।[৩]
আল্লাহর আদেশের প্রতি দ্রুত সাড়া দেওয়ায় এবং আনুগত্য স্বীকার করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ায় এই বাস্তব চিত্রই আল্লাহর বাণীতে ব্যক্ত হয়েছে,
وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ. ﴿آل عمران : ১৩৩﴾
'তোমরা তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে ক্ষমা পাওয়ার কাজে প্রতিযোগিতা করো, আর সেই জান্নাতের জন্যেও (প্রতিযোগিতা করো) যার প্রশস্ততা আকাশ ও পৃথিবী সমান, আর এই (বিশাল) জান্নাত প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে সে সব (ভাগ্যবান) লোকদের জন্যে, যারা আল্লাহকে ভয় করে।[৪] আল্লাহ তাআলা বলেন,
سَابِقُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أُعِدَّتْ لِلَّذِينَ آَمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ذَلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ. ﴿الحديد : ২১﴾
(অতএব, এসব অর্থহীন প্রতিযোগিতা বাদ দিয়ে) তোমরা তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে সেই (প্রতিশ্রুত) ক্ষমা ও চিরন্তন জান্নাত পাওয়ার জন্যে এগিয়ে যাও, (এমন জান্নাত) যার আয়তন আসমান জমিনের সমান প্রশস্ত, তা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে সে সব মানুষদের জন্যে যারা আল্লাহ তাআলা ও তার (পাঠানো) রাসূলের ওপর ঈমান এনেছে, (মূলত) এ হচ্ছে আল্লাহ তাআলার এক অনুগ্রহ। যাকে তিনি চান তাকে তিনি এ অনুগ্রহ প্রদান করেন। আর আল্লাহ তাআলা হচ্ছেন মহা অনুগ্রহশীল।[৫] নবী সা. তার কিছু সাহাবাকে উপদেশ দিয়েছেন,
إذا قمت في صلاتك فصل صلاة مودع
তুমি নামাজের জন্য দণ্ডায়মান হলে বিদায়ীর নামাজ হিসেবে পড়বে।[৬]
(৩) প্ররোচনা ও সন্দেহ সৃষ্টি :
শয়তান চেষ্টা করে মানুষকে এবাদত-আনুগত্য থেকে বাধা দিতে। অত:পর যখন সে তার আগ্রহ ও লোভ প্রত্যক্ষ করে, তখন এই লোভের দরজা দিয়ে তার কাছে প্রবেশ করে। এই প্রক্রিয়ায় যে, সে তাকে এবাদতের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কঠোর বানিয়ে দেয়। এবং কখনো কখনো তাকে গুনাহের মাঝে নিক্ষেপ করে। আবার কখনো ভালো কাজ ছুটে যাওয়ার মাধ্যমে গুনাহে লিপ্ত করে। যেমন কোন ব্যক্তি ইসতিনজা ও ওজুর ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সে অঙ্গ সমূহকে তিনবারের অধিক ধৌত করে এবং খুব ভালো ভাবে ঘষামাজা করে, ফলে কখনো এ কারণে নামাজে বিলম্ব হয়। অথবা নামাজে ফাতেহা পাঠ, তাকবীর ও তাসবীহ সমূহ বারবার পাঠ করে, ফলে ইমামের অনুসরণ থেকে সে পিছিয়ে পড়ে। অত:পর সে এর কারণে জামাত ত্যাগ করে। অথবা তাহারাত ও সালাতের নিয়তে সে সন্দেহে পোষণ করে, তারপর সে নামাজ বা ওজু পুনরায় আদায় করে ; এভাবে তার উপর নামাজ কঠিন ও বোঝা স্বরূপ হয়ে পড়ে, এমনকি সে নামাজ ছেড়ে দেয়। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন। এভাবেই কঠোরতা অবলম্বনকারীরা ধ্বংস হয়। রাসূল সা. বলেছেন,
هلك المتنطعون. قالها ثلاثا. رواه مسلم (২৬৭০)
চরমপন্থীরা ধ্বংস হয়েছ্তেতিন বার বলেছেন।[৭]
মুক্তির পথ ও উপায়
মুসলমানকে শয়তানের প্রবেশ পথ সম্পর্কে জানতে হবে, এবং এও জানতে হবে এই কাজগুলো শরিয়তের দৃষ্টিতে জায়েজ নয়। যে ব্যক্তি ওজুতে তিন বারের অধিক ধৌত করে তার সম্পর্কে রাসূল সা. বলেন,
فمن زاد فقد أساء وتعدى وظلم.
যে অতিরিক্ত করল সে মন্দ কাজ করল এবং জুলুম করল।[৮]
অতএব সওয়াব প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সে তিরস্কার ও দুর্ভোগের শিকার হবে। স্বাভাবিকভাবে মানুষের এবাদত পালনের ক্ষেত্রে ভুল ও ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটতে পারে। তবে তা নিয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া জায়েজ নেই। যদি তা নিছক ধারণা হয়ে থাকে বা কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে এর পুনরাবৃত্তি ঘটে, অথবা যদি এমনটি এবাদতের পরে হয়ে থাকে। তাবে যদি মজবুত ভাবে সন্দিহান হয়ে থাকে যে, সে দুই সেজদা আদায় করেছে না এক সেজদ্তাএক্ষেত্রে তার কাছে যে ধারণাটি প্রাধান্য পাবে সেটাকেই গ্রহণ করবে। আর যদি কোন ধারণা প্রাধান্য না পায় তবে নিশ্চিত বিষয় তথা এক সেজদা হিসেবে আমল করবে। অত:পর দ্বিতীয় সেজদা আদায় করবে। তার নামাজের পূর্ণতা ও শয়তানের শাস্তি স্বরূপ এতটুকুই যথেষ্ট।[৯] ওয়াসওসায় আক্রান্ত ব্যক্তির এতটুকু জানা যথেষ্ট যে, নবী সা. কীভাবে ওজু ও গোসল করতেন। এবং কীভাবে আপন প্রভুর এবাদত করতেন ? তিনি এক মুদ দিয়ে ওজু করতেন। মুদ হল মধ্যম গড়নের ব্যক্তির দুই তালুর সমপরিমাণ ; এবং এক সা' দিয়ে গোসল সারতেন। এক সা' হল চার মুদের সমপরিমাণ। ফকিহ আলেমগণ মানুষের জন্যে বেঁচে থাকা কঠিন বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে সহজ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। যেমন পথ-ঘাটের কাদা যা সাধারণত নাপাক থাকে তা থেকে কাপড় ধোয়া জরুরি নয়। এমনিভাবে ঘরের ছাদ থেকে গড়িয়ে পড়া পান্তিযদি সেখানে না-পাকি না থাকার সম্পর্কে জানা থেকে। ইসলামের বিধান হল সহজীকরণ ও অসুবিধা দূরীকরন,
يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ. ﴿البقرة : ১৮৫﴾
'আল্লাহ তাআলা তোমাদের (জীবন) আসান করে দিতে চান, আল্লাহ তাআলা কখনোই তোমাদের জন্য কঠোর করে দিতে চান না।[১০]
وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ. ﴿الحج : ৭৮﴾
এবং এ জীবন বিধানের ব্যাপারে তিনি তোমাদের ওপর কোনো সংকীর্ণতা রাখেননি।[১১] আর সর্বাধিক ক্ষতিকর ওয়াসওয়াসা ও সন্দেহ হচ্ছে যা আক্বীদা ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। তাই এ থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা জরুরি। রাসূল সা. বলেছেন,
يأتي الشيطان أحدكم فيقول: من خلق كذا؟ من خلق كذا؟ حتى يقول: من خلق ربك؟ فإذا بلغه فليستعذ بالله ولينته. رواه البخاري (৩২৭৬)، ومسلم (১৩৪).
তোমাদের কারো নিকট শয়তান এসে বলে, এটা কে সৃষ্টি করেছেন ? ওটা কে সৃষ্টি করেছেন ? এভাবে এক পর্যায়ে সে জিজ্ঞাসা করে তোমার রবকে কে সৃষ্টি করেছেন ? যখন কেউ এ পর্যন্ত পৌঁছে যায় সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবে এবং নিজেকে বিরত রাখবে।[১২] এসব ভাব-কল্পনা থেকে কেউই তেমন নিরাপদ নয়। সাহাবায়ে কেরাম রা.-ও এ জাতীয় কল্পনায় নিমজ্জিত হতেন। তাই তারা খুব ভয় পেতেন এবং এ বিষয়ে কোন কথাই বলতেন না। এবং তারা রাসূলের সা.-এর কাছে এ বলে অভিযোগ করতেন,
إنأ نجد في أنفسنا ما يتعاظم أحدنا أن يتكلم به، قال: وقد وجدتموه؟ قالوا: نعم، قال ذاك صريح الإيمان. أخرجه مسلم(১৩২)، وفي رواية قال: الله أكبر الحمد لله الذي رد أمره إلى الوسوسوة. ابن حبان (الإحسان১৪৭)، وصحح المحقق شعيب الأرناوط إسناده.
আমরা আমাদের হৃদয়ে এমন ভাব-কল্পনা অনুভব করি যা বলা আমাদের কেউ কেউ সাংঘাতিক মনে করে। তিনি বললেন, তোমরা এমন পেয়েছ ? তারা বলল হ্যাঁ। তিনি বললেন, এটাই হচ্ছে সুস্পষ্ট ঈমান। ভিন্ন আরেক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেছেন, আল্লাহু আকবার ! সকল প্রশংসা ঐ সত্তার যিনি তার বিষয়কে ওয়াসওয়াসার দিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।'[১৩] এসব প্ররোচনা যখন মানুষের মনকে প্রভাবিত করা সত্ত্বেও এ বিষয়ে সে কথা বলবে না এটাই প্রমাণ করবে যে শয়তান তার চক্রান্তে ব্যর্থ, অসফল হয়েছে। অত:পর মানুষ যখন এই ওয়াসওয়াসাকে প্রতিহত করবে আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়ার মাধ্যমে, এবং জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে ও সমস্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার মাধ্যমে এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় ও ঈমানকে নতুন করার মাধ্যমে অথবা আল্লাহর নিকট দোয়া ও শয়তানের চক্রান্ত থেকে হেফাজত করার আবেদনের মাধ্যমে, তখন শয়তান তাকে কোন ক্ষতি করতে পারবে না। বরং তা তার ঈমান ও সওয়াব বৃদ্ধির কারণ হিসেবে পরিগণিত হবে। অতএব সমস্ত প্রশংসা মহামহিম আল্লাহর জন্য।
(৪) ভুলিয়ে দেওয়া :
মানুষকে ভালো কাজ ভুলিয়ে দিয়ে এবং মন্দ-কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শয়তান মানুষকে পাপে লিপ্ত করে। অথবা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ভুলিয়ে অর্থহীন কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যেন তাতে গুরুত্ব দিয়ে তার ওপর আমল করে।
কেবল ওইসব লোকেরা প্রায়শই তাতে লিপ্ত হয় যারা শয়তানের পদক্ষেপে সাড়া দেয় ও তার বেশি আনুগত্য করে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَأَنْسَاهُمْ ذِكْرَ اللَّهِ أُولَئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُونَ. ﴿المجادلة : ১৯﴾
'(আসলে) শয়তান এদের ওপর পুরোপুরি প্রভাব বিস্তার করে নিয়েছে, শয়তান এদের আল্লাহর স্মরণ (সম্পূর্ণ) ভুলিয়ে দিয়েছে, এরা হচ্ছে শয়তানের দল, হে রাসূল তুমি জেনে রাখো, শয়তানের দলের ধ্বংস অনিবার্য।'[১৪]
এইসব ব্যাধির চিকিৎসা হচ্ছে মানুষ বেশি বেশি আল্লাহর স্মরণ করবে এবং পাপাচার থেকে দ্রুত তাওবা করবে। কল্যাণের দিকে এগিয়ে যাবে এবং মন্দ ও অকল্যাণ থেকে বেঁচে থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন
وَإِذَا رَأَيْتَ الَّذِينَ يَخُوضُونَ فِي آَيَاتِنَا فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ حَتَّى يَخُوضُوا فِي حَدِيثٍ غَيْرِهِ وَإِمَّا يُنْسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرَى مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ. ﴿الأنعام : ৬৮﴾
'তুমি যখন এমন লোককে দেখতে পাও যারা আমার আয়াত সমূহকে নিয়ে হাসি বিদ্রূপ করছে, তাহলে তুমি তাদের কাছ থেকে সরে এসো, যতক্ষণ না তারা অন্য কিছু বলতে শুরু করে, যদি কখনো, শয়তান তোমাকে ভুলিয়ে সেখানে বসিয়ে) রাখে, তাহলে মনে পড়ার পর জালেম সম্প্রদায়ের সাথে আর বসে থেকো না।[১৫]
(৫) ভীতি প্রদর্শন :
শয়তান তার কাফের ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী দল ও বাহিনী থেকে মুমিনদের ভয় দেখায়। এবং তাদেরকে নিজেদের শক্তি ও কঠোরতা বিষয়ে সতর্ক করে দেয়। যেন মানুষ শয়তানের বাহিনীর আনুগত্য করেও তাদের অপছন্দ এবাদত ও আনুগত্য ছেড়ে দেয়া। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা তা থেকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
إِنَّمَا ذَلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ أَوْلِيَاءَهُ فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ. ﴿آل عمران : ১৭৫﴾
'এই হচ্ছে তোমাদের (প্ররোচনাদানকারী) শয়তান, তারা (শত্রুপক্ষের অতিরঞ্জিত শক্তির কথা বলে) তাদের আপন জনদের ভয় দেখাচ্ছিল, তোমরা কোন অবস্থায়ই তাদের (এ হুমকিকে) ভয় করবে না, বরং আমাকেই ভয় করো, যদি তোমরা (সত্যিকার অর্থে) ঈমানদার হও।[১৬] বিভিন্ন ভীতিকর স্বপ্ন ও ক্লান্তিকর চিন্তা-ভাবনা উসকে দেওয়ার মাধ্যমে এই ভয় দেখানো হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
الرؤيا الصالحة من الله والحلم من الشيطان، فإذا حلم أحدكم حلما يخافه فليبصق عن يساره وليتعوذ بالله من شرها فإنها لا تضره. (رواه البخاري(৩২৯২)، ومسلم (২২৬১)وفيه أن البصق يكون ثلاثا.
'সুন্দর ও কল্যাণময় স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে আর স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে। তোমাদের কেউ যখন ভয়ংকর স্বপ্ন দেখে সে যেন তার বাম পার্শ্বে থু-থু নিক্ষেপ করে এবং তার অকল্যাণ হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায় ফলে তাকে কোন ক্ষতি করতে পারবে না।[১৭]
(৬) দুশ্চিন্তায় নিক্ষেপ:
শয়তান সর্বাত্মক চেষ্টা করে আদম সন্তানকে ক্ষতি ও বিপদে নিক্ষেপ করতে এবং ঐ সময়টাতে সে ঐ কাজের পরিণতি সম্পর্কে তাকে অন্ধকরে রাখে ফলে বনী আদম ঐ কাজটি করে। অত:পর যখন সে ক্ষতি গ্রস্ত হয়ে শয়তান তার থেকো মুক্ত হেয় যায়। তার পর সে কাজের ফলাফল প্রকাশ পেলে বনী আদম একাই তার দায়ভার বহন কারে। শয়তান নিজেকে দোষমুক্ত করে রাখে।
كَمَثَلِ الشَّيْطَانِ إِذْ قَالَ لِلْإِنْسَانِ اكْفُرْ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِنْكَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ رَبَّ الْعَالَمِينَ. فَكَانَ عَاقِبَتَهُمَا أَنَّهُمَا فِي النَّارِ خَالِدَيْنِ فِيهَا وَذَلِكَ جَزَاءُ الظَّالِمِينَ. ﴿الحشر : ১৭﴾
এদের (আরেকটি) তুলনা হচ্ছে শয়তানের মতো, শয়তান এসে যখন মানুষদের বলে, (প্রথমে) আল্লাহকে অস্বীকার করো, অত:পর (সত্যিই) যখন সে (আল্লাহকে) অস্বীকার করে তখন (মুহূর্তেই) সে (বোল পালটে ফেলে এবং) বলে এখন আমার সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই, আমি (নিজে) সৃষ্টি লোকের মালিক আল্লাহকে ভয় করি, অত:পর (শয়তান ও তার অনুসারী) এ দু'জনের পরিণাম হবে জাহান্নাম, সেখানে তারা চিরদিন থাকবে, আর এটাই হচ্ছে জালেমদের শাস্তি।[১৮] মানুষের অধিকাংশ আচার-আচরণের ক্ষেত্রে এ দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়। একবার মেকদাদ রা. এর ক্ষেত্রেও অনুরূপ ঘটেছিল। তিনি এই মনে করে সমস্ত দুধ পান করে ফেললেন, নবী সা. আনসারদের নিকট পানাহার করবেন। অত:পর তিনি সঙ্গে সঙ্গে লজ্জিত বোধ করেন।[১৯]
মুমিন ব্যক্তি মাত্রই ধীমান, দূরদর্শী ও বুদ্ধিমান হয়ে থাকে, তাই সে শয়তানের চক্রান্ত থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে পারে। যদিও শয়তান তাকে একবার চক্রান্ত জালে নিক্ষেপ কারে, তার পর থেকে সে সম্পূর্ণ সতর্ক ও সজাগ হয়ে পায়। এ কারণেই মুস্তফা সা. বলেছেন,
لا يلدغ المؤمن من جحر واحد مرتين. رواه البخاري(৬১৩৩)، ومسلم(২৯৯৮).
মুমিন এক গর্তে দু'বার দংশিত হয় না।[২০] শয়তান মানুষকে দুশ্চিন্তায় নিক্ষেপ করার ভয় থেকেই মানুষকে তার অপর ভাইয়ের সঙ্গে চুপিসারে কথা বলা থেকে নিষেধ করা হয়েছে, যেখানে তাদের উভয়ের সঙ্গে তৃতীয় আরেকজন উপস্থিত তাকে।
إذاكانوا ثلاثة فلا يتناجى اثنان دون ثالث فإن ذلك يحزنه.
যখন তারা তিনজন থাকবে, তৃতীয়জনকে বাদ রেখে দু'জন কানাকানি কথাবার্তা বলবেন না, কেননা তা অপরজনকে দুশ্চিন্তায় ফেলবে।[২১] যেমন শয়তান সব সময় অব্যাহত ভাবে চেষ্টা করে কাফের ও ফাসেক ব্যক্তিদেরকে মুমিনদের দু:খ কষ্ট দেওয়ার কাজে ব্যবহার করতে। যেমন তারা মুমিনদের ব্যাপারে কানাঘুসার মাধ্যমে ষড়যন্ত্র করে।
إِنَّمَا النَّجْوَى مِنَ الشَّيْطَانِ لِيَحْزُنَ الَّذِينَ آَمَنُوا وَلَيْسَ بِضَارِّهِمْ شَيْئًا إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ. ﴿المجادلة :১০﴾
'(আসলে) এদের গোপন সলাপরামর্শ তো হচ্ছে একটা শয়তানি প্ররোচনা, যার একমাত্র) উদ্দেশ্য হচ্ছে ঈমানদার লোকদের কষ্ট দেয়া (অথচ এরা জানে না) আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা ব্যতিরেকে তার ঈমানদারদের বিন্দুমাত্রও কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না,(তাই) ঈমানদারদের উচিত (হামেশা) আল্লাহর ওপরই নির্ভর করা।)[২২] তাই মানুষের জন্য উচিত হচ্ছে এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকা। এবং এমন বস্তু থেকে বিরত থাকা যা তার মুসলমান ভাইদের কষ্টের কারণ হয়। আর যখন তার ওপর এমন দুশ্চিন্তা পতিত হবে সওয়াবের আশায় সে ধৈর্য ধারণ করবে। অত:পর সে পুরস্কৃত হবে। তবে এখানে বিশেষ গুরুত্বের কথা হচ্ছে, এই দু:খ বেদনা ও দুশ্চিন্তা যেন হতাশা ও দুনিয়া আখেরাতের কাজ ত্যাগের কারণ না হয়। এবং দুনিয়ার যে প্রাপ্তি খোয়া গেছে তাতে যেন অধিক আফসোস সৃষ্টি না হয়, এবং দ্বীন থেকে যা ছুটে গেছে তার জন্য তাওবা করবে এবং তার ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য শিক্ষা গ্রহণ করবে। যাতে একই ভুল দ্বিতীয় বার পুনরাবৃত্তি না হয়। এ বিষয়ে নবী সা.-এর দিক নির্দেশনা কতইনা সুন্দর।
المؤمن القوي خير وأحب إلى الله من المؤمن الضعيف، وفي كل خير. احرص على ما ينفعك، واستعن بالله ولا تعجز، وإن أصابك شيئ فلا تقل: لو أني فعلت كان كذا وكذا، ولكن قل: قدر الله وما شاء فعل، فإن لو تفتح عمل الشيطان. رواه مسلم(২৬৬৪).
'আল্লাহর নিকট শক্তিমান মুমিন দুর্বল মুমিন অপেক্ষা অধিক উত্তম এবং সকল ভাল কাজে যা তোমার উপকারে আসবে এমন বস্তুর প্রতি লালায়িত হও। এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করও অক্ষম হয়োনা। তবে যদি কোন মুসিবত এসে যায় তাহলে বলো না, আমি যদি এমন টি করতাম তাহলে এমন হতো, বরং বলো, আল্লাহ তাআলা তাকদীরে যা রেখেছেন ও চেয়েছেন তাই করেছেন, কেননা যদি শয়তানের কাজ উন্মুক্ত করে দেয়।[২৩]
(৭) প্রবৃত্তর ফেতনা সমূহ :
প্রবৃত্তির অনেক ফেতনা রয়েছে। তবে সর্বাধিক কঠিন ও বিপজ্জনক হচ্ছে বিত্ত, প্রতিপত্তি ও নারীর প্রতি লোভ লালসা।
সম্পদ ও খ্যাতির মোহ সম্পর্কে রাসূল সা. বলেছেন,
ما ذئبان جائعان أرسلا في غنم بأفسد لها من حرص المرء على الشرف والمال لدينه. رواه الترمذي (২৩৭৬)، وصححه الألباني في صحيح الجامع(১৯৩৫).
দু'টি ক্ষুধার্ত বাঘকে একটি বকরির কাছে ছেড়ে দেওয়ার চেয়েও অধিক ক্ষতিকর হচ্ছে সম্পদও খ্যাতির প্রতি মানুষের লোভ লালসা, তার দ্বীনের জন্য।[২৪] সম্পদের লোভ থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ হচ্ছে, শরিয়ত সম্মত উপায়ে ধন-সম্পদ অর্জনের আকাঙ্ক্ষা তবে তা হবে অন্যান্য করণীয় দায়িত্বে অবহেলা ও অলসতা ছাড়া মধ্যম পন্থায়। পাশাপাশি অর্জিত সম্পদের জাকাতসহ বিভিন্ন হক আদায়ের মাধ্যমে। ধৈর্য উদ্দেশ্যও নিজের প্রয়োজনে কার্পণ্য ও অপচয় করবে না।
নারী সম্পর্কে প্রিয় নবী সা. বলেছেন,
إن الدنيا حلوة حضرة، وإن الله مستخلفكم فيها فينظر كيف تعلمون، فاتقوا الدنيا، واتقوا النساء، فإن أول فتنة بني إسرائيل كانت في النساء، رواه مسلم (২৭৪২).
নি:সন্দেহে দুনিয়া হচ্ছে সজীবও ভোগ্য বস্তু, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে দুনিয়ায় প্রতিনিধি বানাবেন, অত:পর তিনি লক্ষ্য করবেন তোমরা কেমন কাজ কর। তোমরা দুনিয়াকে ভয় করো এবং নারীকে। কেননা বনী ইসরাইলের প্রথম ফেতনা নারীদের মধ্যে ছিল।[২৫]
একারণেই এই ফেতনা সমূলে বন্ধ করার জন্যে শরিয়তের অনেক সতর্ক মূলক বিধান আরোপিত হয়েছে।
সেই আলোকে এবং নিম্নমুখী রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এবং একাকিত্বও মেলামেশা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উপরন্তু মহিলাদের প্রকাশমান হওয়া ও সৌন্দর্য প্রকাশ থেকে নিষেধ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাসূল সা.-এর বাণী,
ألا لايخلون رجل بامرأة إلا أن كان ثالهما الشيطان، رواه الترمذي (১১৭৩). وقال: هذا حديث حسن صحيح غريب، وصححه الألباني في صحيح سنن الترمذي (৯৩৬).
খবরদার! কোন পুরুষ যেন কোন নারীর সঙ্গে একাকিত্বে রাত না কাটায়। তাহলে তাদের তৃতীয় জন হবে শয়তান। আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেন,
المرأة عورة فإذا خرجت استشرفها الشيطان، رواه الترمذي (১১৭৩) وقال: هذا حديث حسن صحيح غريب، وصححه الألباني في صحيح سنن الترمذي(৯৩৬).
'মহিলা হচ্ছে আবৃত, অত:পর সে যখন বের হয় শয়তান তাকে উঁকিঝুকি দিয়ে দেখে।[২৬] মুবারকপুরী এই শব্দের অর্থ করেছেন, পুরুষদের দৃষ্টিতে তাকে সুন্দর শোভন করে পেশ করা হয়। অথবা শয়তান তাকে দেখে তার মাধ্যমে অন্যকে অথবা তাকে বিভ্রান্ত করার জন্যে।[২৭]
(৮) মুসলমানদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি এবং একে অপরের প্রতি মন্দ-ধারণা সৃষ্টি করা।
রাসূল সা. বলেছেন,
إن الشيطان قد أيس أن يعبده المصلون في جزيرة العرب، ولكن في التحريش بينهم، رواه مسلم(২৮১২).
শয়তান এই বিষয়ে আশা হত হয়েছে আরব উপদ্বীপে মুসল্লিরা তার উপাসনা করবে তবে তাদের মাঝে দ্বন্দ্ব, সংঘাত সৃষ্টিতে নয়।[২৮] এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, আরব উপদ্বীপের অধিবাসীর তার এবাদত করবে এ বিষয়ে সে হতাশ। তবে সে তাদের মধ্যে বিবাদ বিসংবাদ কৃপণতা, হিংসা, যুদ্ধ ও ফেতনার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করবে।[২৯]
[১] মুহাম্মদ : ২৫।
[২] তালবিসে ইবলিস : পৃ : ৩৯০।
[৩] আল-মুসনাদ : ১/৪১৬, ইবনে হিব্বান : ইহসান অধ্যায় : ৬/২৯৭।
[৪] আল-ইমরান : ১৩৩।
[৫] আল-হাদীদ : ২১
[৬] ইবনে মাজা : ৪১৭১, আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন
[৭] মুসলিম : ২৬৭০
[৮] নাসায়ী : ১৪০, ইবনে মাজাহ : ৪২২। সহিহ নাসায়ী লিল আলবানি : ১৩৬
[৯] মুসলিম : ৫৭১
[১০] আর-বাকারা : ২৮৫
[১১] আল-হজ্জ : ৭৮
[১২] বোখারী : ৩২৭৬। মুসলিম : ১৩৪
[১৩] ইবনে হিব্বান : ইসান অধ্যায় : ১৪৭
[১৪] মুজাদালা : ১৯
[১৫] আল-আনআম : ৬৮
[১৬] আল-ইমরান : ১৭৫
[১৭] বোখারী : ৩২৯২। মুসলিম : ২২৬১
[১৮] আল হাশর : ১৬-১৭।
[১৯] মুসলিম : ২০৫৫।
[২০] বোখারী : ৬১৩৩। মুসলিম : ২৯৯৮।
[২১] বোখারী : ৬২৮৮। মুসলিম :২১৮৩।
[২২] আল-মোযাদালাহ : ১০।
[২৩] মুসলিম : ২৬৬৪।
[২৪] তিরমিজি : ২৩৭৬। সহিহ আল-জামে : ১৯৩৫।
[২৫] মুসলিম : ২৭৪২।
[২৬] তিরমিজি : ১১৭৩। সহিহ সুনানে তিরমিজি : ৯৩৬।
[২৭] তুহফাতুল আহওয়াজি : ৪/২২৭।
[২৮] মুসলিম : ২৮১২।
[২৯] নববী মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যা গ্রহন্থ : ১৭/২২৮।
শয়তানের প্রবেশপথ (পর্ব:৩)
কতিপয় হাদিসে উল্লেখিত তাহরীশের কিছু উদাহরণ
সোলাইমান বিন সারদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলের সা. সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলাম, ইতিমধ্যে দু'জন লোক পরস্পরকে গালমন্দ করছে। তাদের একজনের চেহারার রক্তিম হয়ে গেল এবং তার শিরা সমূহ ফুলে গেল। অত:পর নবী সা. বললেন,
إني لأعلم كلمة لو قالها ذهب عنه ما يجد، لو قال: أعوذ بالله من الشيطان ذهب عنه ما يجد، فقالوا له إن النبي صلى الله عليه وسلم قال : تعوذ بالله من الشيطان، فقال : وهل بي جنون؟ ذكر النبووي أن (الحديث فيه أن الغضب في غير الله تعالى من نزع الشيطان. شرح النووي على مسلم (১৬/২৪৬)
আমি এমন একটি শব্দ জানি যদি সে তা উচ্চারণ করে তার উপলব্ধি দূর হয়ে যাবে। যদি সে বলে আমি আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে পানাহ চাই তবে তার ক্ষোভ পড়ে যাবে। অত:পর সবাই তাকে বলল নবী সা. বলেছেন, তুমি আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় চাও, সে বলল আমার মধ্যে কি উন্মাদনার লক্ষণ আছে? নববী উল্লেখ করেছেন, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুতে ক্রোধ শয়তানের প্রভাব থেকে।[১] এবং নবী সা. ঐ রাত্রিতে ভয় পেয়েছিলেন, যেদিন শয়তান দু'জনের সাহাবির অন্তরে কিছু কুমন্ত্রণা দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিল। আলী ইবনে হুনাইন হতে বর্ণিত, নবী সা.-এর স্ত্রী সাফিয়্যা বনিতে হুয়াই তাকে সংবাদ দিয়েছে,
أنها جاءت رسول الله صلى الله عليه وسلم تزوره وهو معتكف في المسجد في العشرالغوابر من رمضان فتحدثت عنده ساعة من العشاء، ثم قامت تنقلب فقام معها النبي صلى الله يقلبها، حتى إذا بلغت باب المسجد الذي عند مسكن أم سلمة زوج النبي صلى الله عليه وسلم مر بهما رجلان من الأنصار فسلما على رسول الله ثم نفذا، فقال لهما رسول الله صلى الله عليه وسلم: على رسلكما إنما هي الصفية بنت حيي، قالا: سبحان الله يا رسول الله، وكبر عليهما ما قال، قال: إن الشيطان يجري من ابن آدم مبلغ الدم، وإني خشيت أن يقذف في قلوبكما. رواه البخاري(৬২১৯)، ومسلم(২১৭৫)
তিনি রাসূলের সা. সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছেন। ঐ মুহূর্তে তিনি মসজিদে রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ অবস্থায় ছিলেন। অত:পর তিনি তার সঙ্গে রাতে কিছুক্ষণ কথা বললেন, তার পর তিনি ফিরে আসার জন্য দাঁড়ালেন। তার পর নবী সা. তাকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য তার সঙ্গে উঠে দাঁড়ালেন। তার পর যখন সাফিয়্যাহ বিনতে হুয়াই যখন নবী সা.-এর স্ত্রী উম্মে সালমার আবাস্থলে এর নিকট মসজিদের দরজায় পৌঁছোলেন, উভয়ের পাশ দিয়ে আনসারদের দু'জন ব্যক্তি অতিক্রম করল। উভয়ে রাসূল কে সালাম দিল। অত:পর রাসূল সা. তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, সে হল সাফিয়্যাহ বিনতে হুয়াই। উভয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল সা. সুবহানাল্লাহ! রাসূল এর কথা উভয়ের কাছে বড় মনে হল। তিনি বললেন, নি:সন্দেহ শয়তান আদম সন্তানের রক্তের শিরায় উপশিরায় প্রবাহিত হয়। আমি ভয় করছি যে তোমাদের অন্তরে মন্দ ধরনা সৃষ্টি করে। ইবনে হাজর রহ. বলেন, নবী সা. তাদের উভয়ের মন্দ ধারণার কথা বলেন নি। কারণ তিনি উভয়ের ঈমানের দৃঢ়তার ব্যাপারে নিশ্চিত। তবে উভয়ের ক্ষেত্রে এ আশঙ্কা পোষণ করেছেন, শয়তান তাদেরকে এ ব্যাপারে প্ররোচিত করতে পারে। কেননা, তারা নিষ্পাপ নন। এ মন্দ ধারণা তাদের ধ্বংসের দিকে ধাবিত করতে পারে। তাই বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য এবং এরকম ঘটনায় তাদের পরবর্তীদের জন্য শিক্ষা স্বরূপ তিনি উভয়কে সঙ্গে সঙ্গে অবগত করালেন।[২] হাদিসে এসেছে,
التحرز من التعرض لسوء الظن. فتح الباري لابن حجر(৪/৩২৯)
মন্দ ধারণার শিকার হওয়া থেকে বেঁচে থাকতে হবে।[৩] জাবের রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেন,
إن إبليس يضع عرشه على الماء ثم يبعث سراياه فأدناهم منه منزلته أعظمهم فتنة، يجيئ أحدهم فيقول: فعلت كذا وكذا، فيقول: ما صنعت شيئا، قال: ثم يجيئ أحدهم فيقول: ما تركته حتى فرقت بينه وبين امرأته، قال: فيدنيه منه ويقول: نعم أنت. قال الأعمش: أراه قال: فيلتزمه. رواه مسلم(২৮১৩).
শয়তান তার সিংহাসন পানির উপর স্থাপন করে, অত:পর তার বাহিনী প্রেরণ করে। তাদের মধ্যে মর্যাদায় সর্বনিম্ম যে সে সবচে' বড় ফেতনা সৃষ্টিকারী। তাদের একজন আসে এবং বলে, আমি এই কাজ করেছি ওটা করেছি। শয়তান তাকে বলে, তুমি কিছুই করোনি। অত:পর তাদের আরেকজন এসে বলে আমি কোন কিছুই ছাড়িনি। এমনকি অমুক ও তার স্ত্রীর মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করেছি। অত:পর শয়তান তার নিকটে যাবে এবং বলবে হ্যাঁ, তুমিই আসল কাজ করেছ। অত:পর সে তাকে জড়িয়ে ধরবে।[৪]
عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: لايشير أحدكم على أخيه بالسلاح فإنه لا يدري لعل الشيطان ينزع في يده فيقع في حفرة من النار. رواه البخاري (৭০৭২)
রাসূল সা. বলেছেন, তোমাদের কেউ স্বীয় ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র দিয়ে ইঙ্গিত করবে না। হতে পারে, অজান্তেই শয়তান হাত থেকে অস্ত্র নিয়ে নিবে। যার ফলশ্রুতিতে সে জাহান্নামের অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হবে।[৫] নবী সা.-এর স্ত্রী আয়েশা রা. বর্ণনা করেন,
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم خرج من عندها ليلا، قالت: فغرت عليه فجاء فرأى ما أصنع، فقال: ما لك يا عائشة؟ أغرت؟ فقلت: وما لي لا يغار مثلي على مثلك؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم:أقد جاءك شيطانك؟ قالت: يا رسول الله أو معي شيطان؟ قال: نعم، قلت: ومع كل إنسان؟ قال: نعم، قلت: ومعك يا رسول الله؟ قال:نعم، ولكن ربي أعانني عليه حتى أسلم. رواه مسلم(২৮১৫)
রাসূলুল্লাহ সা. একরাতে তার কাছে থেকে বের হয়েছেন। তিনি বলেন, অত:পর তার উপর অভিমান করি। অত:পর তিনি আসলেন, ও আমাকে দেখলেন আমি কি করছি। অত:পর বললেন, হে আয়েশা ! তোমার কি হয়েছে? তুমি কি অভিমান করেছ? তার পর আমি বললাম, আমার মত নারী আপনার ওপর অভিমান করবে না তো কি হবে? অত:পর রাসূল সা. বলেছেন তোমাকে কি শয়তান আক্রান্ত করেছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহর রাসূল আমার সঙ্গে ও কি শয়তান আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আছে। আমি বললাম, প্রত্যেক মানুষের সঙ্গেই কি শয়তান আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সা. আপনার প্রভু আমাকে তার বিরুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন, ফলে সে মুসলমান হয়ে গেছে।[৬](৯) এবাদত সমূহকে বিনষ্ট বা ক্ষতি সাধনের প্রয়াস:
যেমন এদিক সেদিক তাকানোর মাধ্যমে নামাজের মনোযোগ নষ্ট করাও নামাজে কুমন্ত্রণা দেওয়া। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
هو اختلا س يختلسه الشيطان من صلاة العبد. رواه البخاري(৭৫১)
এটা ও এক প্রকার চুরি। শয়তান মানুষের নামাজ থেকে তা চুরি করে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল বলেছেন,
إذا نودي للصلاة أدبر الشيطان وله ضراط حتى لا يسمع التأذين، فإذا قضى النداء أقبل، حتى إذا ثوب بالصلاة أدبر، حتى إذا قضى التثويب أقبل حتى يخطر بين المرء ونفسه، يقول:اذكر كذا، اذكر كذا، لما لم يكن يذكر، حتى يظل الرجل لا يدري كم صلى؟ رواه البخاري (৬০৮) ومسلم (৩৮৯)
যখন নামাজের জন্যে আহ্বান করা হয়, শয়তান পিঠ-পিছে দৌড়ে যতক্ষণ না সে আজান শুনতে পায়। যখন আজান শেষ হয় সে সামনে অগ্রসর হয়। যখন নামাজের কাতার সোজা করা হয় সে পিঠ ফিরে চলে যায়। অত:পর যখন একামাত শেষ হয় সে মানুষকে ও তার প্রবৃত্তিকে ধোঁকা দেয়, সে বলে, তুমি অমুক জিনিস, স্মরণ কর, ওটা মনে কর, যা সে ইতি পূর্বে মনে করতে পার ছিল না। এভাবে মানুষ কত রাকাত নামাজ পড়েছিল তা বলতে পারে না।[৭](১০) কাফের ও ফাসেক বন্ধুদের প্রতি মন্দ চিন্তা ভাবনা, অশ্লীল কথাবার্তা ও ত্রুটি পূর্ণ কাজের মাধ্যমে ম্যাসেজ প্রদান:
তারা এ পদ্ধতিতে মুমিনকে তার এবাদতের প্রতি দৃঢ় আস্থা থেকে বিচ্যুতি, আল্লাহর শরিয়ত, বিধি-বিধান ও ওয়াদায় সন্দেহ সৃষ্টির অপচেষ্টা লিপ্ত হয়। শয়তান মন্দ কাজের প্রতি ভালোবাসা ও কল্যাণময় কাজের প্রতি বিদ্বেষ সৃষ্টির চেষ্টা করে।
وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ وَإِنَّ الشَّيَاطِينَ لَيُوحُونَ إِلَى أَوْلِيَائِهِمْ لِيُجَادِلُوكُمْ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ. ﴿الأنعام : ১২১﴾
'(জবেহের সময়) যার ওপর আল্লাহ তাআলার নাম নেয়া হয়নি, সে (জন্তুর গোশত) তোমরা কখনো খাবে না, (কেননা) তা হচ্ছে জঘন্য গুনাহের কাজ। শয়তানের (কাজই হচ্ছে) তার সঙ্গী সাথিদের মনে প্ররোচনা দেয়া, যেন তারা তোমাদের সাথে (এ নিয়ে) ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়, যদি তোমরা তাদের কথা মেনে চলো, তাহলে অবশ্যই তোমরা মুশরিক হয়ে পড়বে।[৮] মহান আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
أَلَمْ تَرَ أَنَّا أَرْسَلْنَا الشَّيَاطِينَ عَلَى الْكَافِرِينَ تَؤُزُّهُمْ أَزًّا ﴿مريم : ৮৩﴾
হে নবী তুমি কি (এবিষয়টির প্রতি লক্ষ্য করোনি, আমি (ঠিকভাবে) কাফেরদের ওপর শয়তানদের ছেড়ে দিয়ে রেখেছি, তারা (আল্লাহ তাআলার বিরুদ্ধে) তাদের ক্রমাগত উৎসাহ দান করছে।[৯]শয়তান যখন মানুষের অন্তরের ওপর ক্ষমতাবান হয়, সে তাকে গুনাহ, পাপাচারের প্রতি আসক্ত করে এবং তাকে মন্দের দিকে টেনে নিয়ে যায়। আর যখনই গুনাহ মেষ হয় সে তার কাছে ফিরে আসে। এভাবে তার প্রবৃত্ত কখনোই পাপাচার ও অন্যায় থেকে পরিতৃপ্ত হয় না। দুনিয়াতে এটাই হচ্ছে তার জন্য ছোট শাস্তি। আর পরকালের শাস্তি তো কঠিন, ও চিরস্থায়ী।
(১১) এক স্তর থেকে অন্য স্তরে মানুষের স্থানান্তরের ক্রমধারা.
শয়তান মানুষের মধ্যে সবচে' ভাল ব্যক্তিকে একবার কুফরের প্রতি স্থানান্তরের জন্য খুবই লালায়িত। কিন্তু একাজটি সহজসাধ্য নয়। তাই সে পদে পদে তাকে নিয়ে অগ্রসর হয়। এক্ষেত্রে সে নানা পদ্ধতি প্রয়োগ করে থাকে। এবাদত ও কল্যাণ মূলক কাজের ক্ষেত্রে সে যে পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে, তা হচ্ছে,এবাদতকে কষ্ট সাধ্য করে তোলা ও তা থেকে অনীহা সৃষ্টি করা যাতে মানুষ এবাদতের ক্ষেত্রে অলসতা করে। এ কারণেই আমাদেরকে প্রতি প্রত্যুষে অলসতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা সকাল কাটিয়েছি এবং গোটা রাজত্ব আল্লাহর, হে প্রভু আমি তোমার কাছে অলসতা থেকে পানাহ চাই। যখন এবাদতের ক্ষেত্রে অলসতা করবে সে তা ছেড়ে দেবে। অথবা তাকে দেরিতে আদায় করবে, আমরা বিলম্বে ক্ষতি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। মন্দ পাপের বিষয়ে সে এগুলোকে মানুষের কাছে সুন্দর, সুশোভন ও পছন্দনীয় করে উপস্থাপন করে। এবং তার কাছে বিষয়টি হালকা করে পেশ করে ফলে সে গুনাহের ক্ষতি সম্পর্কে আন্দাজ করতে পারে না। আর যদি মানুষ গুনাহ থেকে নিবৃত্ত থাকে তবে সে গুনাহকে সত্যের সাথে গুলিয়ে ফেলে এবং বিষয়টিকে তার কাছে অস্বচ্ছ রাখে। এবং তার জন্য দোষমুক্ত হওয়ার নানা উপায় তৈরি করে, যাতে সে প্রথমবার পাপাচারে লিপ্ত হয়। এভাবে পরবর্তী মুহূর্তে তার পক্ষে তা অনেক সহজ মনে হয়।
তার পর সে যখন গুনাহ থেকে ফেরার বা তাওবা ইচ্ছা পোষণ করে, শয়তান তাকে বলে, তুমি তো কিছু করোনি, তুমি এখনও যুবক রয়েছ, যাতে সে আল্লাহর কৌশল থেকে নিশ্চিন্ত থাকে।
আর যদি সে তাওবার জন্য খুব বিচলিত বোধ করে শয়তান তাকে বলে, তুমি এটা করেছে, ওটা করেছ, তাকে সমস্ত গুনাহ ও অপরাধের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ফলে সে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়ে শয়তানের প্রথম পদক্ষেপ থেকে বেঁচে থাকা ছাড়া মানুষের পক্ষে কোন কল্যাণ আসবে না, মানুষের থেকে কখনো এমন কথাও শোনা যায় যা গুনাহকে সহজ করে দেয় ও এবাদতের ক্ষেত্রে নিরাসক্তি বিরাগ করে রাখে।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ وَمَنْ يَتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهُ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ مَا زَكَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ أَبَدًا وَلَكِنَّ اللَّهَ يُزَكِّي مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ. ﴿النور : ২১﴾
'হে মানুষ তোমরা যারা ঈমান এনেছ, তার কখনো শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না, তোমাদের মধ্যে যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সে যেন জেনে রাখে যে (অভিশপ্ত শয়তান) তো তাকে অশ্লীলতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ দেবে, যদি তোমাদের ওপর আল্লাহ তাআলার দয়া ও অনুগ্রহ না থাকে, তাহলে তোমাদের মধ্যে কেউই কখনো পাক পবিত্র হতে পারতো না। কিন্তু আল্লাহ তাআলা যাকে চান তাকে পবিত্র করেন এবং আল্লাহ তাআলা (সবকিছু) শোনেন, তিনি (সবকিছু) জানেন।[১০] তাই শয়তানের পদক্ষেপ সমূহ, চেষ্টা, উপায় ও পথ সম্পর্কে জানা একান্ত আবশ্যক। তাহলেই তার ফাঁদে পড়ে গেলে সেখান থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব। আর পথের শুরু থেকেই বিচ্যুতি থেকে বেচে থাকা পরবর্তী সময়ের তুলনায় অনেক সহজ।শয়তানের প্রবেশ পথ থেকে বাচার উপায় :
শয়তানের প্রতিটি পথ সমূহ থেকে মুক্তি লাভের উপযুক্ত চিকিৎসা, ঔষধ রয়েছে, আল্লাহর রহমতে যা প্রয়োগ করে মুক্তি লাভ করা যায়। ইতিপূর্বে এই বিষয়ে কিছু আলোচনা উপস্থাপিত হয়েছে। এখানে শয়তানের সকল চক্রান্ত থেকে পরিত্রাণ লাভের সাধারণ উপকারী কিছু পথ নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
প্রথমত: আল্লাহ ভীতি তার আনুগত্য করা এবং তার নাফরমানি থেকে বেঁচে থাকা:
এটা এমন একটি প্রতিরক্ষা কবচ যা শয়তানের সমূহ ষড়যন্ত্রকে সমূলৎপাটন করে। অত:পর মানুষ যখন কোন দুর্বল অবস্থায় পতিত হয়, তখন তাওবা, আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ ও গুনাহ থেকে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে আল্লাহর দিকে অগ্রসর হওয়া শয়তানের ষড়যন্ত্র ও কূট চালের সমস্ত প্রভাব দূর করে দেয়। আর শয়তান আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দাদের এবাদত বিঘ্ন সৃষ্টির ক্ষেত্রে অক্ষমতা, ও দুর্বলতা সম্পর্কে নিজেই স্বীকারোক্তি দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইবলিসের ঘটনায় বলেন,
قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ. إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ. ﴿الحجر :৪০﴾
'সে বলল, আমার মালিক, তুমি যেভাবে (আজ) আমাকে পথভ্রষ্ট করে দিলে (আমি ও তোমার শপথ করে বলছি) আমি মানুষদের জন্য পৃথিবীতে তাদের (গুনাহের কাজ সমূহ) শোভন করে তুলব এবং তাদের সবাইকে আমি পথভ্রষ্ট করে ছাড়ব তবে তাদের মধ্যে যারা তোমার খাটি বান্দা তাদের কথা আলাদা।[১১]আল্লাহ তাআলা শয়তান সম্পর্কে আলোচনা করে বলেন,
قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ. إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ. ﴿ص : ৮৩﴾
'সে বলল, (হ্যাঁ), তোমার ক্ষমতার কসম (করে আমি বলছি) আমি তাদের সবাইকে বিপথ গামী করে ছাড়ব, তবে তাদের মধ্যে যারা তোমার একনিষ্ঠ বান্দা তাদের ছাড়া।[১২] অতএব যে ব্যক্তি শয়তানের ভ্রষ্টচারিতায় আক্রান্ত হবে, আল্লাহর ভয় ভীতি, পর্যবেক্ষণ এসব কিছু তাকে অলসতা থেকে জাগ্রত করবে এবং খোদাভীরুদের স্মরণ করিয়ে দেবে। অত:পর যখন তারা স্মরণ করবে তাদের দৃষ্টি খুলে যাবে এবং দৃষ্টি থেকে আবরণ সরে যাবে, অত:পর তারা হয়ে যাবে দৃষ্টিমান।আল্লাহ তাআলা বলেন
إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُمْ مُبْصِرُونَ ﴿الأعراف : ২০১﴾
'আল্লাহ তাআলাকে যারা ভয় করে তাদের যদি কখনো শয়তানের পক্ষ থেকে কুমন্ত্রণা স্পর্শ করে, তবে তারা (সাথে সাথেই) আত্মসচেতন হয়ে পড়ে, তৎক্ষণাৎ তাদের চোখ খুলে যায়।[১৩]দ্বিতীয়ত: জামাতের প্রতি লোভ:
ইসলাম জামাতের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করে। কেননা তা শয়তানকে বিতাড়িত করে।
ইসলামের অধিকাংশ এবাদত ও মুআমালাত এই ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। শয়তানের ষড়যন্ত্রে থেকে সুরক্ষায় এর প্রভাব সুস্পষ্ট।
(১) জামাতের সঙ্গে নামাজ :
রাসূল সা. বলেছেন,
ما من ثلاثة في قرية، ولابدو، لاتقام فيهم الصلاة، إلا قد استحوذ عليهم الشيطان، فعليك بالجماعة، فإنما يأكل الذئب القاصية. رواه أبوداود(৫৪৭)، والناسائي (৮৪৭)،وحسنه الألباني في صحيح سنن أبي داود(৫১১).
যে গ্রামে বা পল্লিতে তিনজন একত্রে আছে, অথচ তাদের মধ্যে জামাত কায়েম হয় না, শয়তান তাদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে। হে প্রিয় বন্ধু! তুমি কিন্তু জামাতের প্রতি গুরুত্ব দেবে। কারণ, ছাড়া বকরি বাঘে খায়।[১৪] তাই জামাতের গুরুত্ব দিতে হবে।(২) সফরে জামাত :
রাসূল সা. বলেছেন,
الراكب شيطان، ولاركبان شيطانان، والثلاثة ركب. رواه أبوداود(২৬০৭)، والترمذي (১৬৭৪)،و حسنه الألباني في صحيح سنن أبي داود(২২৭১).
একজন মুসাফির শয়তান, দু'জন মুসাফির দু'ই শয়তান, তিনজন মিলে একটি মুসাফির দল।[১৫](৩) বাড়িতে একত্র সমাবেশ :
আবু ছালাবা আল খাশানী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. যখন কোন বাড়িতে অবস্থান নিতেন লোকেরা বিভিন্ন উপত্যকা ও ঘাটিতে পৃথক হয়ে যেত। অত:পর রাসূল সা. বলেছেন,
إن تفرقكم في هذه الشعاب والأودية إنما ذلكم من الشيطان، فلم ينزل بعد ذلك منزلا إلا انضم بعضهم إلى بعض، حتى يقال: لو بسط عليهم ثوب لعمهم. رواه أبوداود(২৬২৮)،وصححه الألباني في صحيح سنن أبي داود (২২৮৮).
বিভিন্ন ঘাটি ও উপত্যকায় তোমাদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। অত:পর যখনই তিনি কোন বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন একে অপরের সাথে মিলে মিশে থাকত। বলা হয় যদি তাদের ওপর কাপড় বিছিয়ে দেয়া হত সবাইকে তা ঢেকে ফেলত।[১] মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রহন্থ : ১৭/২২৮।
[২] ফাতহুল বারি : ৪/৩২৮।
[৩] ফাতহুল বারি : ৪/৩২৯।
[৪] মুসলিম : ২৮১৩।
[৫] বোখারী : ৭০৭২।
[৬] মুসলিম : ২৮১৫।
[৭] বোখারী : ৬০৮। মুসলিম : ৩৮৯।
[৮] আল আনআম : ১২১।
[৯] মারইয়াম : ৮৩।
[১০] আন-নূর : ২১।
[১১] আল-হিজর : ৩৯-৪০।
[১২] সোয়াদ : ৮২-৮৩।
[১৩] আল-আরাফ : ২০১।
[১৪] আবু দাউদ : ৩৪৭। নাসায়ী : ৮৪৭। সহিহ সুনানে আবু দাউদ : ৫১১।
[১৫] আবু-দাউদ : ২৬০৭। তিরমিজি : ১৬৭৪। সুনানে আবু দাউদ : ২২৭১।
শয়তানের প্রবেশপথ (পর্ব:৪)
তৃতীয়ত: বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া :
আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন বিষয়ে শয়তান থেকে আশ্রয় লাভের নির্দেশ দিয়েছেন। তার কাছে থেকে আশ্রয় লাভের অধিক গুরুত্বের তাগিদ থেকেই এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
(১) কোরআন তেলাওয়াতের সময় :
فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآَنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ. ﴿النحل : ৯৮﴾
'অত:পর যখন তুমি কোরআন পাঠ করবে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে।[১](২) জাদু ও জাদুর প্রভাব থেকে সুরক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ. مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ. وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ. وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ. وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ. ﴿الفلق : ১-৫﴾
(১) হে নবী তুমি বলো, আমি উজ্জ্বল প্রভাতের মালিকের কাছে আশ্রয় চাই। (২) আশ্রয় চাই তার সৃষ্টি করা (প্রতিটি জিনিসের) অনিষ্ট থেকে। (৩) আমি আশ্রয় চাই রাতের (রাতের অন্ধকারে সংঘটিত) অনিষ্ট থেকে, (বিশেষ করে) যখন রাত তার অন্ধকার বিছিয়ে দেয়। (৪) (আমি আশ্রয় চাই) গিরায় ফুঁক দিয়ে জাদু টোনা কারিণীদের, অনিষ্ট থেকে। (৫) হিংসুক ব্যক্তির (সব ধরনের হিংসার) অনিষ্ট থেকেও (আমি তোমার আশ্রয় চাই) যখন সে হিংসার করে।[২](৩) মসজিদ প্রবেশের মুহূর্তে :
আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আছ, নবী সা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন বলতেন,
أعوذ بالله العظيم، وبوجهه الكريم، وسلاطانه القديم، من الشيطان الرجيم، وفيه : فإذا قلت ذلك، قال الشيطان: حفظ مني سائر اليوم. رواه أبوداود(৪৬৬)، وصححه الألباني في صحيح سنن أبي داود(৪৪১).
মহান আল্লাহ তার মহিমান্বিত সত্তা ও তার প্রাচীন ক্ষমতার অসীলায় বিতাড়িত শয়তান থেকে পানাহ চাচ্ছি। এ হাদিসে অতিরিক্ত বর্ণনা এও এসেছে, যখন তুমি এ দোয়া পড়বে, শয়তান বলে, সে সারা দিনের জন্য আমার থেকে নিরাপদ হয়ে গেল।[৩](৪) নামাজে ওয়াসওয়াসা বা প্ররোচনা দেওয়ার মুহূর্তে :
একবার উসমান ইবনে আছ, নবী সা.এর কাছে আসলেন, অত:পর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সা. শয়তান আমার তেলাওয়াত, নামাজ এবং আমার মাঝে বসে রয়েছে, সে আমার কাছে এগুলোকে সন্দিহান করে তোলে। রাসূল সা. বললেন,
ذاك شيطان يقال له خترب، فإذا أحسسته فتعوذ بالله منه، واتفل على يسارك ثلاثا، قال: ففعلت ذلك، فأذهبه الله عني. رواه مسلم(২২০৩).
ঐটা শয়তান। তাকে খাতরাব বলা হয়। যখন তুমি তাকে উপলব্ধি কর আল্লাহর নামে তার কাছ থেকে আশ্রয় চাইবে। এবং বাম দিকে তিন বার থুক ফেলবে। তিনি বলেন, আমি এমনটি করেছি, তারপর আল্লাহ তাআলা তাকে আমার থেকে দূর করে দিয়েছেন।[৪]৫ রাগ, ক্রোধের সময় :
সোলাইমান ইবনে সারদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সা.-এর সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলাম, এমতাবস্থায় দু'জন লোক পরস্পর গালাগাল করছিল, তাদের একজনের চেহারা রক্ত বর্ণ ধারণ করল। এবং শিরা উপশিরা ফুল উঠল। অত:পর নবী সা. বললেন,
إني لأعلم كلمة لو قالها ذهب عنه ما يجد، لو قال: أعوذ بالله من الشيطان، ذهب عنه ما يجد، فقالوا له: إن النبي قال: تعوذ بالله من الشيطان. فقال: وهل بي جنون؟! رواه البخاري(৩২৮২)،ومسلم(২৬১০).
আমি এমন একটি কথা জানি যদি সে তা বলে তার ক্ষোভ প্রশমিত হয়ে যাবে। যদি সে বলে আমি শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই তাহলে তার ক্রোধ মিটে যাবে। অত:পর তারা তাকে বলল, রাসূল সা., বলেছেন তুমি শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। অত:পর সে বলল, আমার কি কোন পাগলামি আছে?[৫] শয়তানের প্ররোচনা, প্রবঞ্চনা থেকে সুরক্ষিত দুর্গ হচ্ছে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।
وَقُلْ رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ. ﴿المؤمنون : ৯৭﴾
'(সে ব্যাপারে উদ্বিগ্ন না হয়ে) তুমি (বরং) বলো, হে আমার মালিক শয়তানদের যাবতীয় ওয়াসওয়াসা থেকে আমি তোমার পানাহ চাই।[৬]
وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ. ﴿فصلت : ৩৬﴾
'আল্লাহ তাআলা বলেন, শয়তানের পক্ষ থেকে তোমাকে কোন অনিষ্ট পৌঁছোলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবে, নিশ্চয় তিনি সর্বদ্রষ্টা, সর্বজ্ঞাত।[৭]এই অন্তরের সৃষ্টি কর্তা তার সব অলিগলি, পথ ও গন্তব্য সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিবহাল। এবং তিনি তার শক্তি ও ক্ষমতাকে নির্দিষ্ট করেন। তিনি মুসলমানের অন্তরকে ক্রোধের ক্ষতি ও শয়তানের প্ররোচনা থেকে সংরক্ষণ করেন। তাই মুসলমানের জন্য শোভনীয় হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশ মান্য করা। হে আল্লাহ অনুগত বান্দা তোমার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা সর্বদ্রষ্টা, সর্ব-শ্রোতা, মূর্খদের মূর্খতা ও বোকামি শুনেন এবং তাদের প্রবৃত্তির কষ্টের বিষয়ে তিনি জানেন, আর এতেই রয়েছে। অন্তরের তুষ্টি ও প্রবৃত্তির প্রশান্তি। উভয়ের জন্য তৃপ্তির বিষয় হচ্ছে, সর্ব-শ্রোতা ও সর্বজ্ঞ শুনছেন ও জানছেন। আল্লাহর শোনা ও সব মূর্খতা, বোকামি জানার পরে হে মুসলিম তোমার জন্য আর কি চাওয়ার থাকতে পারে ? অতএব তুমি জাহেলদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও।
(৬) স্বপ্নে মানুষেরে অপ্রীতিকর কিছু দেখার মুহূর্তে :
রাসূল সা. বলেছেন,
الرؤيا الحسنة من الله، فإذا رأى أحدكم ما يحب فلا يحدث به إلا من يحب، وإذا رأى ما يكره، فليتعو১ بالله من شرها، ومن شر الشيطان، وليتفل ثلاثا، ولا يحدث بها أحدا، فإنها لن تضره. رواه البخاري(৭০৪৪)، ومسلم(২২৬১).
সুন্দর স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে, তোমাদের কেউ যদি স্বপ্নে আনন্দদায়ক কিছু দেখে তবে তার জন্য আনন্দের বিষয় ঘটবে। আর যদি অপছন্দনীয় কিছু দেখে, তাহলে তার অমঙ্গল থেকে এবং শয়তানের অনিষ্ঠ থেকে আশ্রয় চাইবে। এবং তিনবার থুতু ফেলবে। এবং কারো কাছে তা আলোচনা করবে না। তবে তার কোন ক্ষতি সাধন করবে না।[৮](৭) চক্ষু ওঠার সময় :
নবী সা. হাসান এবং হুসাইন কে তাআউয পড়াতেন, তিনি বলতেন,
إن أباكما كان يعوذ بها إسماعيل وإسحاق، أعوذ بكلمات الله التامة من كل شيطان وهامة، ومن كل عين لامة. رواه البخاري(৩৩৭১).
তোমাদের পিতা ইব্রাহীম আ., ইসমাইল এবং ইসহাককে তাআউয পড়াতেন।[৯]চতুর্থত: বিসমিল্লাহ পড়া :
প্রজ্ঞাময়, শরিয়তের বিধায়ক অনেক বিষয়ে বিসমিল্লাহ পাঠের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন, শয়তানকে পরাভূত করার জন্য।
(১) যখন বাহন পিছলে যায় :
জনৈক সাহাবি বলেছেন,
كنت رديف النبي صلى الله عليه وسلم، فعثرت دابته،فقلت تعس الشيطان، فقال: لا تقل تعس الشيطان، فإنك إذا قلت ذلك تعاظم حتى يكون مثل البيت، ويقول: بقوتي، ولكن قل: بسم الله، فإنك إذا قلت ذلك تصاغر حتى يكون مثل الذباب. رواه أبوداود(৪৯৮২)، وصححه الألباني في صحيح سنن أبي داود(৪১৬৮)
আমি নবী সা.-এর সহযাত্রী ছিলাম। তার বাহনটি পিছলে যায়। তাই আমি বললাম, শয়তান ধ্বংস হোক। তিনি বললেন শয়তান ধ্বংস হোক, একথা বলো না। কেননা তুমি যখন তা বলবে, সে নিজেকে বড় মনে করবে যেন সে ঘরের মত। এবং বলবে আমার শক্তিতে তা হয়েছে। বরং তুমি বল, বিসমিল্লাহ। কেননা তুমি যদি তা পড় তবে শয়তান মাছির মত নিজেকে ছোট মনে করবে।[১০](২) বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় :
রাসূল সা. বলেছেন, যখন কোন লোক তার বাড়ি থেকে বের হয় এবং বলে,
إذا خرج الرجل من بيته فقال: بسم الله، توكلت على الله، لاحول ولا قوة إلا بالله، قال: يقال له حينئذ: هديت، وكفيت، ووقيت، فتنحى له الشياطين، فيقول شيطان آخر: كيف لك برجل قد هدي، وكفي، ووقي.
আল্লাহর নামে আল্লাহর ওপরই আমি ভরসা করছি, আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কেউ ক্ষমতার মালিক নন। তিনি বললেন, তখন তাকে বলা হবে তুমি হেদায়াত প্রাপ্ত হয়েছ, এবং যথেষ্ট করেছ ও পরিত্রাণ লাভ করেছ। অত:পর শয়তান তার জন্য সরে দাঁড়ায়। অপর শয়তান বলে, তোমার অমুক ব্যক্তির ব্যাপারে কি সংবাদ ? সে হেদায়াত পেল ও পরিত্রাণ লাভ করল।[১১](৩) সহবাসের মুহূর্তে :
নবী সা. বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন তার পরিবারের নিকট গমন করে এবং বলে,
بسم الله اللهم جنبنا الشيطان وجنب الشيطان مارزقتنا، فرزقا ولدا، لم يضره الشيطان. رواه البخاري(৩২৭১).
উভয়কে এমন সন্তান দান করা হয় যাকে শয়তান কোন প্রকার ক্ষতি করতে পারে না।পঞ্চম : কোরআন পাঠ :
দিবা-রাত্রি সর্ব মুহূর্তে আল্লাহর কিতাব পাঠ শয়তানকে তাড়িয়ে দেয়। উমর রা. উচ্চ স্বরে কোরআন তেলাওয়াত করে নামাজ পড়লেন, অত:পর (সকাল হলে) নবী সা.-এর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সা. আমি এর মাধ্যমে শয়তানকে বিতাড়িত করছিলাম। নবী সা. তাকে (পরবর্তীতে নামাজের সময়) আওয়াজ সামান্য নিচু করার নির্দেশ দিলেন। মহান প্রজ্ঞাময় শরিয়ত প্রবর্তক এই বিষয়ের কিছু সুরা ও আয়াত নির্দিষ্ট করেছেন, তন্মধ্যে:
(১) সুরা আল বাকারা
রাসূল সা. বলেছেন,
لاتجعلوا بيوتكم مقابر، إن الشيطان ينفر من البيت الذي تقرأ فيه سورة البقرة. رواه مسلم(৭৮০)
তোমরা তোমাদের কবরকে বাড়ি বানিয়ো না, নি:সন্দেহে শয়তান ঐ বাড়ির থেকে পালিয়ে বেড়ায় যেখানে সুরা আল বাকারা পাঠ করা হয়।[১২](২) আয়াতুল কুরসি :
শয়তানের চক্রান্ত থেকে মুক্ত থাকার জন্য আয়াতুল কুরসি পাঠ অনেক উপকারী। শয়তান আবু হুরায়রা রা. কে এই আয়াত শিখিয়েছে, সে তার কাছে ব্যাখ্যা করেছে যে এই আয়াত পাঠ করবে,আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য সর্বদা হেফাজতকারী থাকবে, সকল হওয়ার আগ মুহূর্তে পর্যন্ত শয়তান তার কাছেও ঘেঁষবে না। অত:পর রাসূল আবু হুরায়রাকে বললেন,
صدقك وهو كذوب. علقه البخاري في صحيحه بصيغة الجزم.
সে তোমাকে সত্য বলেছে, অথচ সে মিথ্যুক।[১৩]ষষ্ঠ : মন্দের উৎসকে উপড়ে ফেলা এবং তর পথ বন্ধ করে দেওয়া:
ঐ দু'জন সাহাবিকে রাসূলের বক্তব্য প্রমাণ করে যারা তাকে তার বিবি সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই এর সঙ্গে দেখেছিল, তিনি তো সাফিয়্যাহ বিনতে হুয়াই। নবী সা. আরো বলেন,
لايشير أحدكم على أخيه بالسلاح فإنه لا يدري لعل الشيطان ينزع في يده فيقع في حفرة من النار.
তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র উঁচিয়ে ইঙ্গিত করবে না। কেননা সে জানে না হয়ত শয়তান নিজের হাতে নিয়ে যাবে অত:পর সে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে।[১৪]সপ্তম : শয়তানের কুমন্ত্রণা ও পদক্ষেপে সাড়া দেওয়া এবং তার সঙ্গে ছাড় দেওয়া থেকে বেঁচে থাকা।
এ বিষয়ে দু'টি হাদিসের বক্তব্য প্রমাণ করে :
প্রথমত:
রাসূল সা. বলেছেন,
يعقد الشيطان على قافية رأس أحدكم إذا هو نام ثلاث عقد، يضرب كل عقدة عليك ليل طويل فارقد، فإن استيقظ فذكر الله انحلت عقدة، فإن توضأ انحلت عقدة، فإن صلى انحلت عقدة فأصبح نشيطا طيب النفس، وإلا أصبح خبيث النفس كسلان.
শয়তান তোমাদের মাথার অগ্রভাগে। তিনটি গিঁট দেয়, যখন সে ঘুমায়। সে সারারাত ব্যাপী তোমার ওপর গিঁট দিয়ে রাখবে এবং ঘুমিয়ে দেবে, যখন সে জাগ্রত হবে ও আল্লাহকে স্মরণ করবে, তার একটি গেড়ো খুলে যাবে, অত:পর যদি সে ওজু করে আরেকটি গেড়ো খুলে যাবে। তারপর যদি সে নামাজ পরে আরেকটি গেড়ো খুলে যাবে। অত:পর সে সুস্থ মন ও কর্মোদ্যমী উৎসাহী হয়ে যাবে। অন্যথায় সে অলস ও বিষাদগ্রস্ত মনের অধিকারী হয়ে যাবে।[১৫] দ্বিতীয়টি হচ্ছে :
রাসূল বলেছেন,
يأتي الشيطان أحدكم فيقول: من خلق كذا؟ من خلق كذا؟ حتى يقول: من خلق ربك؟، فإذا بلغه فليستعذ بالله ولينته. رواه البخاري(৩২৭৬)، ومسلم(১৩৪)
শয়তান তোমাদের কারো কাছে এসে বলে এটা কে সৃষ্টি করেছে, আর ওটা কে? এক পর্যায়ে সে বলে তোমার রবকে সৃষ্টি করেছে কে? অত:পর সে যখন এই স্তরে পৌঁছায় আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবে এবং লাগাম টেনে ধরবে।[১৬][১] আল-নাহল : ৯৮।
[২] আল-ফালাক।
[৩] আবু দাউদ : ৪৬৬। সুনানে আবু দাউদ : ৪৪১।
[৪] মুসলিম : ২২০৩।
[৫] বোখারী : ৩২৮২। মুসলিম : ২৬১০।
[৬] আল-মোমেনুন : ৯৭।
[৭] ফুসসিলাত : ৩৬।
[৮] বোখরী : ৭০৪৪। মুসলিম : ২২৬১।
[৯] বোখারী : ৩৩৭১।
[১০] আবু দাউদ : ৪৯৮২। সহিহ সুনানে আবু দাউদ : ৪১৬৮।
[১১] আবু দাউদ : ৫০৯৫। সহিহ সুনানে আবু দাউদ : ৪২৪৯।
[১২] মুসলিম : ৭৮০।
[১৩] সহিহ বোখারী : ২৩১১,২৩৭৫,৫০১০।
[১৪] বোখারী : ৭০৭২।
[১৫] বোখারী : ১১৪২। মুসলিম : ৭৭৬।
[১৬] বোখারী : ৩২৭৬। মুসলিম : ১৩৪।
----------------------------------------------------------------------------------
'' শুধু নিজে শিক্ষিত হলে হবেনা, প্রথমে বিবেকটাকে শিক্ষিত করুন। ''
কোন মন্তব্য নেই:
/>