বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৩

নিজেদেরকে ইসলামের আসল শত্রুদের বিরুদ্ধে নিয়োজিত করা !!!

নিজেদের ভিতর এসব দ্বন্দ্ব সংঘাত নিরসনের সর্বোত্তম উপায় হলো নিজেদেরকে ইসলামের আসল শত্রুদের বিরুদ্ধে নিয়োজিত করা এবং আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার জন্য ঝাপিয়ে পড়া। এতে মুনাফিকরা লেজ গুটিয়ে পালাবে আর ঈমান




গত সপ্তাহে একটি প্রোগ্রামে গিয়েছিলাম। দেশের সালাফী ঘরানার প্রায় সকল আলিমগণ, প্রায় সকল ইসলামিক মিডিয়া পারসোনাল উপস্থিত ছিলেন সেখানে। আহলে হাদীস ঘরানারও অনেকে ছিলেন এবং হানাফীদের মধ্য থেকেও বেশ কয়েকজন এসেছিলেন।



আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো ‘দাওয়াত ও দা’ঈঃ সঙ্কট ও সম্ভাবনা’ আলোচনা চলছিলো বেশ জ্ঞান গর্ভ। সময় অত্যন্ত স্বল্প কিন্তু সবাই হলেন স্বনামধন্য স্পীকার। সবারই বেশ সমস্যা হচ্ছিলো টাইম মেনটেইন করতে।

মূল বিষয়বস্তু ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হলো আহ্‌লে হাদিস ও সালাফী বনাম হানাফী দ্বন্দ্বের কারণ ও সমাধান। তারাবীহ আট রাকাত না বারো, হাত বুকে না নাভিতে, রাফ’য়ে ইয়াদাইন লাগবে কি লাগবে না, এক তালাক না তিন তালাক ইত্যাদি মতপার্থক্যপুর্ণ মাসআলায় সকল পক্ষ যেন সংযত আচরণ করেন সে বিষয়ে সকলে জ্ঞানগর্ভ নসীহত দিলেন। নানা কৌশল ও উপায় বতলালেন এই সংকট সমাধানের।

এক পর্যায়ে আমার পালা আসলো কথা বলার। এতো সিনিয়র এবং বিজ্ঞ আলিমগনের উপস্থিতিতে আমি কথা বলতে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছিলাম। আমিই বোধ হয় ছিলাম এই মজলিসের সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি। তাই মুরব্বীদের সামনে জ্ঞানী জ্ঞানী কথা বার্তা না বলে অত্যন্ত সংক্ষেপে আমি আমার একটি মনের কথা ব্যক্ত করলাম। আমি যা বলেছিলাম তাঁর সারমর্ম হলো,

মুসলিম জাতির মধ্যে প্রতিবাদ করার, প্রতিরোধ করার, যুদ্ধ জিহাদ করার একটা স্বাভাবিক প্রবনতা আছে। একটি চিরন্তন সত্য আদর্শকেন্দ্রিক জাতি হওয়ার কারণে এটা তাদের মজ্জাগত বৈশিষ্ট্য। এখন তাদের এই যুদ্ধ জিহাদ, প্রতিরোধ প্রতিবাদ যদি সঠিক ধারায় পরিচালিত না হয়; অর্থাৎ তারা যদি তাদের আসল শত্রু কাফির মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জিহাদ ও লড়াই সংগ্রাম বন্ধ করে দেয় তাহলে তাদের এই শক্তি তারা আপন মুসলিম ভাইদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে আরম্ভ করে দেয়।

যতো প্রোগ্রাম আর সভা সেমিনারই করা হোক না কেন তা নিজেদের মধ্যকার এই চুলোচুলি বন্ধে তেমন কার্যকর কোনো কাজেই লাগবে না, যতোক্ষন না তারা তাদের আসল শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রামে নিজেদেরকে নিয়োজিত না করবে। রুহামা-উ বাইনাহুম বাড়াতে হলে আশিদ্দা-উ আলাল কুফফার বাড়তে হবে।

এর সবচেয়ে নিকটতম উদাহরণ হলো আফগানিস্তান। এখানে হাজার হাজার সালাফী ভাইয়েরা এসে হানাফীদের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে কাফিরদের বিরুদ্ধে বছরকে বছর লড়াই করেছেন এবং করছেন। কিন্তু আমরা আজও পর্যন্ত তাদের মধ্যে কোনো রকম ঝগড়া বিবাদ শুনতে পাইনি। আসলে যারা সত্যিকার কাজে ব্যস্ত থাকেন, তাদের এসব ফালতু কাজের সময়ই থাকে না।

শায়খ আব্দুল্লাহ আযযাম (রহ.) সালাফী ঘরানার আলিম হওয়া সত্ত্বেও তাঁর তাফসীরে সূরা আত তাওবা এদেশের হানাফী উলামায়ে কেরামগন অনুবাদ করে প্রকাশ করেছেন। এর কারণ হলো শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম এ উভয় শ্রেনীকে ইসলামী ভ্রাতৃত্বের মজবুত বন্ধনে আবদ্ধ করে ফেলেছে। সকল মতপার্থক্য ছাপিয়ে দ্বীনী ভ্রাতৃত্ব বন্ধন তাই বিজয় লাভ করেছে।

অতএব নিজেদের ভিতর এসব দ্বন্দ্ব সংঘাত নিরসনের সর্বোত্তম উপায় হলো নিজেদেরকে ইসলামের আসল শত্রুদের বিরুদ্ধে নিয়োজিত করা এবং আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার জন্য ঝাপিয়ে পড়া। এতে মুনাফিকরা লেজ গুটিয়ে পালাবে আর ঈমানদারদের মধ্যে রচিত হবে ঐক্যের বন্ধন।

এটুকুই ছিলো আমার চার পাঁচ মিনিটের বক্তব্যের সারমর্ম। আমার কথায় কারও কারও গাত্রদাহ হতেও পারে, তবে পরবর্তি বেশ কয়েকজন আলোচক বিষয়টিকে যথার্থ বলে মন্তব্য করেছেন। বাকী আল্লাহই ভালো জানেন।

আল্লাহ আমাদেরকে সত্য উপলব্ধি করার তাওফিক দান করুন।

কোন মন্তব্য নেই:

Comment here />

Widget ByBlogger Maruf
Widget ByBlogger Maruf